নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

culture and heritage activiti

কাজী চপল

সংষ্কৃতিকর্মী

কাজী চপল › বিস্তারিত পোস্টঃ

সহজ নন্দনতত্ত্ব

০৯ ই এপ্রিল, ২০১৬ সকাল ১০:১৯

নন্দনতত্ত্বকে একবারে সহজতম করে বলা যায় সৌন্দর্যতত্ত্ব, ইংরেজিতে একে বলে Aesthetics। শিল্পকলা সৃষ্টির সমসাময়িক হচ্ছে নন্দনতত্ত্ব। সৃষ্টি মানেই শিল্প, আর শিল্প মানেই সৃষ্টি, এক অর্থে নন্দনতত্ত্ব ভীষণ প্রাচীন এক শাস্ত্র। আমাদের বস্তু জগতের যা কিছু দেখার ব্যাঞ্জনা যোগায়, তা দেখা, এর চরিত্র, রূপ রস অনুধাবন করা এবং এর সূক্ষ্ম সৌন্দর্য ও সম্পর্ক সমূহ তলিয়ে দেখতে নন্দনতত্ত্বের উপযোগিতা বলাই বাহুল্য। সৌন্দর্য-অনুভূতির ওপর ভিত্তি করে তার মূল্য নিরূপিত হয়। নন্দনতত্ত্ব শিল্পবিচারের মনস্তাত্ত্বিক এক মহান অনুভব।

নন্দনতত্ত্ব শিল্পবিচারের যে ভিত্তি নির্মাণ করে তা পরিমাপ করে আমরা শিল্পবিচার করি, তাকে পরিমাপ, পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রণ করি। শিল্পবিচার ও অধ্যয়নের জন্য কাঠামোগত নন্দনতত্ত্ব রয়েছে। আর্ট বা শিল্প সংষ্কৃতি, জীবনের উপভোগ্য যাবতীয় সৌন্দর্য আর তার যথার্থ কল্যাণকর ও মানবিক অনুধাবনই নন্দনতত্ত্বের মূল কথা।

মুল্যবোধ ও শিল্পবোধ
মানুষের শিল্প জিজ্ঞাসা ও জীবন জিজ্ঞাসা ওতপ্রোতভাবে জড়িত। এই জিজ্ঞাসা মানুষের মুল্যবোধকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হয়। মুল্যবোধ অনুশীলনের ফল। এই অনুশীলন প্রবৃত্তিই মানষের কৃষ্টিকে ধারণ ও বহন করছে। মানব সভ্যতার পরিশীলিত রুপ হল এই কৃষ্টি। মানুষের মুল্যবোধই হল তার শিল্প, তার সভ্যতা, তার কৃষ্টির নিয়ামক। মুল্যবোধই মানুষের সংস্কৃতি। মানুষের নৈতিক মুল্যবোধের মহত্তম পরিকল্পনায় সুন্দরকে অবশ্য অন্তর্ভুক্ত করে। শিল্প কখনোই অনৈতিকতার প্রশ্রয় দেবে না। নৈতিক হবার জন্য মানুষের মনে যে প্রেরণা ও মহৎ ক্ষুধার সঞ্চার হয় তা সুন্দরকে সৃষ্টি করার প্রয়াসী হয়। তাই শিল্পকে অবশ্যই হতে হবে নৈতিক।

নোট- যস্মিন দেশে যদাচার! তা বটে। বিশ্ব নিখিল জানব, বুঝব, অনুভব করব তা বলে তা নিশ্চয় অনুশীলন করবনা আবার আমার নিজের সৃষ্টির আধার করবনা।

শিল্পে সার্বিকতা
সত্যিকারের শিল্পবোধ আত্ম-অনুভুতিকে আত্ম স্বতন্ত্র রুপে প্রত্যক্ষ করে গড়ে ওঠে। শিল্প তো তাই। শিল্পীর সাধনায় তা সৃষ্ট হয়। শিল্পীর সাধনা হল প্রকাশের অনন্ত প্রয়াস। শিল্পী মন প্রকাশের পথ খোঁজে। শিল্পের আবেদন হবে সকল মানুষের মনিকোঠায়। তাই শিল্প হবে বিশ্বমানবের অধিগম্য। দেশ ও কালের সীমা ছাড়িয়ে শিল্পের আবেদন পৌঁছাবে সর্বত্র। শিল্প তাই ইউনিভার্সাল। সর্বজন অধিগম্যতাই হবে শিল্পের উদ্দেশ্য। মানুষের রুচি ভিন্নধর্মী তাই শিল্পের সার্বিকতা নিয়ে প্রশ্ন থেকে যায়। শিল্পের আবেদন শিল্পবোদ্ধার রসবোধের উপরও নির্ভরশীল

শিল্পে অধিকারবোধ
শিল্পের ধর্ম হল সুষ্ঠু প্রকাশে। প্রকাশহীন যে শিল্প তার সৌন্দর্য কেবল একটি মনের জন্য। বহু মনের দ্বারে সে উপেক্ষিত। শিল্পী যে আঙ্গিকের সহায়তায় বিশ্বজনের মনের কাছে তার মনের কথাটি তুলে ধরে, সেই আঙ্গিকই তাকে সৃজনধর্মী শিল্পী করে তোলে। জাতিগত, বর্নগত বা যে কোন বৈশিষ্ঠের উর্ধে ব্যত্কি গড়ে শিল্প। শিল্পে অধিকার নিজে অর্জন করতে হয়। পুরুষানক্রমে প্রাপ্ত ধনের মত তা অর্জিত হয় না। শিল্পে অধিকার তাই অর্জনগত। সাধনা দিয়ে তাকে অর্জন করতে হয়। সাধনার দীনতায় শিল্পী শিল্পে তার অধিকার হারায়। সুকঠোর পরিশ্রম শিল্পীকে শিল্প অধিকার দেয়।

শিল্পীর বৈরাগ্য
সুন্দরের সঙ্গে সৌন্দর্য ধ্যানীর একাত্মতা বর্জনীয়। সৌন্দর্য রসাস্বাদনের মধ্যে লালসা নেই, আসক্তি নেই। আসক্তি শিল্পীকে অন্ধ করে, তার বিবেচনাবোধকে পঙ্গু করে। শিল্প সৃষ্টির পর তার প্রতি বৈরাগ্য জন্মানো প্রয়োজন। কেননা শিল্পীর কাছে তার শিল্প কখনই ভোগের বিষয় হবে না। রসাস্বাদনের জন্য মানসিক দুরত্ব অপরিহার্য। শিল্পী ভোগ করবেন বটে তবে সে ভোগের মধ্যে সন্ন্যাসীর নির্লিপ্ততা থাকবে। কোন উদ্দেশ্য বা কোন স্বার্থ সিদ্ধি শিল্পের অপমৃত্যু ঘটায়। মানুষের মধ্যেকার শিল্পীটা হল বৈরাগী। সে রসে নেশা আছে, তবু নেই আসক্তি।

শিল্পে প্রয়োজনবাদ
যে প্রয়োজন শিল্পের অন্তরলোকের প্রয়োজন সেই প্রয়োজনেই যথার্থ শিল্পের উৎপত্তি ঘটে। শিল্পীর প্রয়োজনের কোন নির্দিষ্ট লক্ষ্য নেই। এই লক্ষ্য অনির্দিষ্টতাই শিল্পীর প্রয়োজনকে ব্যবহারগত প্রয়োজন থেকে স্বতন্ত্র এবং পৃথক করেছে। সার্থক সৃষ্টি শিল্পী মানসে যে আনন্দ সৃষ্টি করে তা বিমল আনন্দ। শিল্পী মানসে যে রুপভাব থেকে শিল্প সৃষ্টি হয় তা শিল্পী মনের নিত্য সহচর। চারূকলা প্রয়োজনে কারুকর্মে পর্যবসিত হয়। প্রয়োজন শিল্পীকে দাসত্ব করায়। প্রয়োজনের নিমিত্তে যে শিল্প তা রসোত্তীর্ণ ও কালোত্তীর্ণ নয়। প্রয়োজন অপূর্ব বস্তু সৃষ্টি করায় না। শিল্পকে বিকৃত করে প্রয়োজন।

শিল্প ও আনন্দ
শিল্প আনন্দ দেয়, তা তার বিষয় বস্তু যাই হোক না কেন। একথা সর্বজন স্বীকৃত। শিল্পবস্তু যাই হোক না কেন তা থেকে রস আহরণ করাই হর রসিকের কাজ। রসিক জনের বৃত্তি। শিল্পের স্বরূপ লক্ষণ হল আনন্দ। শিল্প শিল্পীকে আনন্দ দেয়। রস ও আনন্দ এখানে সমার্থক। আনন্দ থেকেই শিল্পী শিল্প সৃষ্টি করেন। শিল্পীর সুখানুভ’তি তাকে তার কাজে প্রেরণা দেয়। অভাববোধ থেকে শিল্পী শুরু করেন এবং শেষ করেন সেই অভাব পুরনের মনোজাগতিক অসীম আনন্দের এই সুখানুভ’তি নিয়ে।

শিল্প ও কল্পনা
কল্পনার কোন বেড়া নেই, এখানে অসম্ভবও সম্ভাব্যতার সীমানায় ধরা দেয়। শিল্পীর এই কল্পনাশ্রিত সৃষ্টি শক্তিকে প্রতিভা বলা হয়। একে বলা হয় অপূর্ব বস্তু নির্মানক্ষম প্রজ্ঞা। শিল্পের বৈশিষ্ট জাত হয় শিল্পীর কল্পনা থেকে। সঙ্গতিপূর্ণ কল্পনা হল শিল্পের প্রাণ। কল্পনার তুলি বাস্তবকে পরিপুর্ণ করে তোলে, তার ব্যাঞ্জনা সৃষ্টি করে। কল্পনা একদিকে যেমন শিল্পকে সৃষ্টি করে অন্যদিকে আবার তা শিল্প দেউলে প্রতিষ্ঠিত সুন্দরকেও রুপ দেয়। কল্পনার রঙ দিয়ে শিল্পী তার শিল্প আরাদ্ধকে নানাভাবে রঙিন করে তোলে।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ০৯ ই এপ্রিল, ২০১৬ বিকাল ৪:৪৩

অলওয়েজ ড্রিম বলেছেন: কিছু পয়েন্ট নিয়ে আমার মতভেদ আছে, যেমন -
শিল্পীর বৈরাগ্য: যতটা জানি নিজের সৃষ্টি প্রত্যেক শিল্পীর কাছে সন্তানের মতো। সুতরাং স্বীয় সৃষ্টির প্রতি বৈরাগ্য কিভাবে আসবে?


চমৎকার একটি লেখা পড়লাম নি:সন্দেহে।

২| ০৯ ই এপ্রিল, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:২৫

পুলহ বলেছেন: একবার পড়েছি ইতিমধ্যে, আরো বারকয়েক পড়তে হবে। সংগ্রহে রেখে দিলাম।
লেখককে ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.