নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

culture and heritage activiti

কাজী চপল

সংষ্কৃতিকর্মী

কাজী চপল › বিস্তারিত পোস্টঃ

কামরুল হাসান ভূঁইয়া: মুক্তিযুদ্ধের জীবন্ত এনসাইক্লোপিডিয়া

০২ রা মে, ২০১৬ বিকাল ৩:৫২

মেজর (অব.) কামরুল হাসান ভূঁইয়া একাত্তরের অকুতোভয় মুক্তিযোদ্ধা। তিনি বলতেন, একটা সময় যাবে এই জাতি হাজার মাথা ঠুকলেও একজন প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা খুঁজে পাবেনা যুদ্ধের প্রত্যক্ষ ইতিহাস শুনবার জন্য। তাই তিনি শুধু ঘুরে ঘুরে গণমানুষের কাহিনী লিপিবদ্ধ করতেন তার বইতে। অথচ সেই মানুষটির কন্ঠই আজ রুদ্ধ। আইসিইউর হরেক রকমের যন্ত্রপাতি মাঝে কাটছে তার জীবন।

আমার সঙ্গে কামরুল হাসান ভূঁইয়ার পরিচয় একুশের বই মেলার একটি স্টলে। তাকে দেখেই চিনে ফেলি আমি, তার বই কিনে অটোগ্রাফ চেয়ে নিলাম। আমন্ত্রণ জানালাম আমার একটি অনুষ্ঠানের জন্য। আমি তখন চ্যানেল ওয়ানে ফেব্রুয়ারী জুড়ে বই মেলা নিয়ে একটি অনুষ্ঠান করছিলাম। ২০০৮ সালের কথা, তারপর তার সাথে বলা যায় এক ধরনের সখ্যতা গড়ে ওঠে। সম্প্রতি ফেসবুকে তার মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে লেখা বিভিন্ন ঘটনাগুলো মন্ত্রমুগ্ধের মত পড়ে ফেলি। সেই প্রাণবন্ত কামরুল ভাই আজ অসুস্থ হয়ে পড়ে আছেন হাসপাতালের বিছানায়। মুক্তিযুদ্ধের অনেক অজানা তথ্য আর ঘটনা এখনও আমাদের জানা বাকী রইল কামরুল ভাই।

রণাঙ্গনে সেক্টর কমান্ডার খালেদ মোশাররফের বিশেষ স্নেহভাজন ছিলেন মেজর (অব.) কামরুল হাসান ভূঁইয়া। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর সামরিক বাহিনীেতে যোগ দিলেও মুক্তিযুদ্ধকে তিনি ‘জনযুদ্ধ’ বলেই জেনে এসেছেন। মুক্তিযুদ্ধ কামরুল ভাইয়ের শিরা ও ধমনীতে প্রবহমান এক নদী। তাই, দেশ স্বাধীন হলেও তার যুদ্ধ শেষ হয়নি। অসাধারণভাবে সাধারণ মুক্তিযোদ্ধাদের তুলে এনে নিরলসভাবে রচনা করে গেছেন একাত্তরের শোকগাঁথা।

মুক্তিযুদ্ধের গবেষক হিসেবে তাঁকে এক নামে চেনেন সবাই। অনেকে ‘মুক্তিযুদ্ধের জীবন্ত এনসাইক্লোপিডিয়া’ও বলেন। ভারতীয় মিত্র বাহিনীর পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ডার জেনারেল জ্যাকবের বইয়ের একটি তথ্যপ্রমান ধরিয়ে দিলে মিত্রসেনাপতি কামরুল ভাইকে তার যুদ্ধকালীন হ্যাটটি উপহার দিয়ে যান বাংলাদেশ সফরকালে। ঢাকা সেনানিবাসের অভ্যন্তরে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিশালা গড়ার পেছনেও কামরুল ভাইয়ের বিশাল অবদান আছে। উল্লেখ্য, সেনাবাহিনী তাকে দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস রচনা করিয়ে নিয়েছে। সোহরাওয়ার্দি উদ্যানে শিখা চিরন্তন উদ্বোধনকালে ত্রিশ হাজার মুক্তিযোদ্ধার সমাবেশ ঘটিয়েছিলেন মুজিবকন্যা শেখ হাসিনা। জেনারেল সাঈদের সম্পাদনায় একটি অনন্য সংকলন প্রকাশিত হয়েছিল সেইসময়। প্রত্যেক মুক্তিযোদ্ধাকে একটি করে সৌজন্য কপি দেওয়া হয়েছিল। কামরুল ভাই ছিলেন সেই সংকলনের মুখ্য সম্পাদক। এমন অজস্র আখ্যানের ভাঁড়ার মেজর (অব.) কামরুল হাসান ভূঁইয়া। বলে শেষ করা যাবে না।
ফিরে আসুন, কামরুল ভাই। আমি ‘নামমাত্র’ হলেও আপনি নন। আরও কিছুকাল বাঁচুন। দেশকে আরও কিছু দিয়ে যান।

যুদ্ধ শেষ হলো। জীবন-জীবিকার তাগিদে চাকরীতে, ব্যবসায় ব্যস্ত হলো সকলে। কিন্তু মেজর কামরুল হাসান যেন পড়ে রইলেন সে একাত্তরে। গোল্ডফিশ মেমোরীর এই জাতির সামনে প্রতিটি সুযোগ, প্রতিটি মূহূর্তে কেবলই বলে বেড়াতে লাগলেন একাত্তরের রণাঙ্গনে বিস্মৃত জনযোদ্ধাদের কথা।

কিন্তু আমার দৃঢ় বিশ্বাস স্যার ফিরে আসবেন এই যুদ্ধে জিতেও। আবার আরেকটি যুদ্ধে জিতে, আবার তার লেখালেখির মধ্য দিয়ে। কারণ এই দুঃসময়ে একজন কামরুল হাসানকে এই দূর্ভাগা জাতির আজ বড় প্রয়োজন।

শনিবার সি,এম,এইচ থেকে বাসায় এসে সেইদিনই ফ্লুতে আক্রান্ত হয়ে কী দারুণ অসুস্থ্য হয়ে পড়েছিলো কামরুল ভাই। আবারও সি,এম,এইচ-এ ভর্তি হতে হল। আশার কথা আজ তিনি কিছুটা সুস্থ্য |
মেজর (অব.) কামরুল হাসান ভূঁইয়া

জন্ম : ২৪ জুলাই ১৯৫২, কুমিল্লা। শিক্ষা : যশোর জিলা স্কুল এবং ঝিনাইদহ ক্যাডেট কলেজ। একাত্তরের ১৩ এপ্রিল এইচএসসি পরীক্ষার আঠারো দিন আগে ২৫ মার্চ বর্বর পাকিস্তানি বাহিনী বাঙালিদের ওপর অতর্কিত আক্রমণ করলে যোগ দেন মুক্তিযুদ্ধে-২ নম্বর সেক্টর। ১৯৭৪-এর ৯ জানুয়ারি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়ে পরের বছর ১১ জানুয়ারি ৪র্থ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট-এ কমিশন লাভ করেন। ১২ জুলাই ১৯৯৬ সালে স্বেচ্ছায় অবসর নেন। ১৯৮৩ সালে বেইজিং ভাষা ও সংস্কৃতি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে চিনা ভাষায় স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক তার বইয়ের সংখ্যা ২৩টি, সামরিক ইতিহাসের ওপর লেখা ১টি এবং শিশুতোষ গ্রন্থ ৩টি।

বর্তমানে তিনি ‘সেন্টার ফর বাংলাদেশ লিবারেশন ওয়ার স্টাডিজ’-এর চেয়ারম্যান ও প্রধান গবেষক।
প্রকাশিত গ্রন্থ :
১. জনযুদ্ধের গণযোদ্ধা। ২. বিজয়ী হয়ে ফিরব নইলে ফিরবই না। ৩. ২ নম্বর সেক্টর এবং কে ফোর্স কমান্ডার-খালেদের কথা (সম্পাদিত) ৪. একাত্তরের কন্যা, জায়া, জননীরা। ৫. পতাকার প্রতি প্রণোদনা। ৬. মুক্তিযুদ্ধে শিশু-কিশোরদের অবদান। ৭. একাত্তরের দিনপঞ্জি। ৮. বিহঙ্গের ডানা- মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশ বিমান বাহিনী। ৯. মুক্তিযুদ্ধের তথ্য কনিকা। ১০. Handbook of Bangladesh Liberation War ১১. মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক বই। ১২. স্বাধীনতা (প্রথম খণ্ড থেকে পঞ্চম খণ্ড)। ১৭. আঁখি জলে ভাসি (মুক্তিযুদ্ধে শহীদ সেনা অফিসার ও প্রাসঙ্গিক কথা)
মুক্তিযুদ্ধের শিশুতোষ বই :
১. আমার নাতনী ইউসরা। ২. শিশুযোদ্ধা নুরু। ৪. বীরযোদ্ধা কিশোর রমজান। ৫. বীরযোদ্ধা ইমান আলী। ৬. মুক্তিযোদ্ধা মাঝি আব্বাস।

শিশুতোষ বই :
১. আমার নাতনী ইউসরা ২. পায়ের নিচে।

সামরিক ইতিহাস :
১. History of Bangladesh Army Ordnance Corps
বিবিধ :
১. অন্য হুমায়ুন অনন্য হুমায়ুন
(আবু হাসান শাহরিয়ার, সাদমান সাদেক এবং রিফাত নিগার শাপলার লেখা গুলো থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে লেখা)
view this linkview this link

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.