নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সত্য ও ন্যায়ের কথা সহজ করে বলি

সরল কথা

সহজ করে বলি

সরল কথা › বিস্তারিত পোস্টঃ

খালেদা আসলে হাসিনা নন।

২১ শে নভেম্বর, ২০১৫ সকাল ১০:৪১


নানা জল্পনা কল্পনার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে বিরোধীদলীয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ঢাকার উদ্যেশ্যে রওয়ানা হয়েছেন।

একজন নেত্রী যিনি এক এগারোর সময় নানা প্রলোভন ও চাপ সত্ত্বেও আপন মাতৃভুমি ত্যাগ করে বিদেশে প্রিয় সন্তানদের কাছে পর্যন্ত যাননি। যিনি কখনোই অপশক্তির সাথে আপোষ করেননি। তাকে নিয়ে যখন নোংরা গুজব রটে যায় তখন দেশের একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে অত্যন্ত লজ্জিতবোধ করি।

ভাল লাগছে তিনি দেশে ফিরছেন। রাজনৈতিক মাঠে সফলতা বিফলতা পরের কথা কিন্তু দেশের বৃহত্তম জনসমর্থিত একটি দলের নেত্রী সেচ্ছায় নির্বাসিত জীবন বেছে নিবেন এটা ভাবতেই খারাপ লাগে। আর যায়হোক উনি হাসিনা নন এটা রুচিশীল রাজনীতি সচেতন নাগরিকরা ভালই জানেন।

মজার ব্যাপার হচ্ছে উনি যখন ফিরছেন তখনো আকাশে বাতাসে নানান গুজব ছড়িয়ে পড়েছে। কেউ বলছেন এসেই পাল্টে যাবে পরিস্থিতি, কেউ বলছেন উনি গ্রেফতার হবেন, কেউ বলছেন উনি সেচ্ছায় আত্মসমর্পন করবেন। আবার কেউ কেউ অত্যন্ত বাড়িয়ে সেনাবাহিনীকে জড়িয়ে নানান গুজোব রটাতে শুরু করেছেন।

আমি গুজবে বিশ্বাসী নয়। আমি প্রত্যাশা করি বেগম খালেদা জিয়ার দির্ঘ্য চিকিৎসা ও অবকাশ যাপন শেষে স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের মাধ্যমে দেশে, দেশের রাজনীতিতে এবং তার নিজ দল বিএনপিতে একটি গুনগত পরিবর্তনের সুচনা হবে। বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে বিএনপি ও খালেদা জিয়ার শক্তিশালী ভুমিকা বিলিন প্রায় গনতন্ত্র পুনরুদ্ধার করবে আশাকরি।

মন্তব্য ৩৯ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৩৯) মন্তব্য লিখুন

১| ২১ শে নভেম্বর, ২০১৫ সকাল ১০:৫২

কলাবাগান১ বলেছেন: "বিলিন প্রায় গনতন্ত্র" তে কিভাবে এই লিখা লিখলেন?

আমার তো মনে হয় গনত্ন্ত্র থাকাতেই যে যা খুশী লিখছে....মনের কথা প্রকাশ করছে

২| ২১ শে নভেম্বর, ২০১৫ সকাল ১১:০১

আমি মিন্টু বলেছেন: @কলাবাগান ১ পুরো দেশের কোথাও দেখাতে পারবেন গনথন্ত্র বলে কিছু আছে ? :(

৩| ২১ শে নভেম্বর, ২০১৫ সকাল ১১:০৯

কলাবাগান১ বলেছেন: রাজাকারের গাড়িতে পতাকা না উঠা পর্যন্ত্য আবার গনতন্ত্র প্রতস্ঠিত হবে না -আপনাদের মতে

৪| ২১ শে নভেম্বর, ২০১৫ সকাল ১১:৩৬

বিচার মানি তালগাছ আমার বলেছেন: হানিফ, কামরুল, হাসানের চেহারা দেখতে ইচ্ছে করছে....

৫| ২১ শে নভেম্বর, ২০১৫ সকাল ১১:৪৩

জহির উদদীন বলেছেন: আর যাই হোক উনি হাসিনা নন এটা রুচিশীল রাজনীতি সচেতন নাগরিকরা ভালই জানেন কিন্তু দালাল আর বিক্রীত বুদ্ধিজীবিরা টিনের চশমা পড়ে আছেন তাই তারা সেটা দেখতে পান না....

৬| ২১ শে নভেম্বর, ২০১৫ সকাল ১১:৪৫

সাদী ফেরদৌস বলেছেন: জয় খালেদা , জয় গণতন্ত্র :) :) আহা =p~


৭| ২১ শে নভেম্বর, ২০১৫ সকাল ১১:৪৫

সাদী ফেরদৌস বলেছেন:

৮| ২১ শে নভেম্বর, ২০১৫ সকাল ১১:৪৬

সাদী ফেরদৌস বলেছেন:

৯| ২১ শে নভেম্বর, ২০১৫ সকাল ১১:৪৬

সাদী ফেরদৌস বলেছেন:

১০| ২১ শে নভেম্বর, ২০১৫ সকাল ১১:৪৬

সাদী ফেরদৌস বলেছেন:

১১| ২১ শে নভেম্বর, ২০১৫ সকাল ১১:৪৭

সাদী ফেরদৌস বলেছেন:

১২| ২১ শে নভেম্বর, ২০১৫ সকাল ১১:৪৭

সাদী ফেরদৌস বলেছেন:

১৩| ২১ শে নভেম্বর, ২০১৫ সকাল ১১:৪৭

সাদী ফেরদৌস বলেছেন:

১৪| ২১ শে নভেম্বর, ২০১৫ সকাল ১১:৪৮

সাদী ফেরদৌস বলেছেন:

১৫| ২১ শে নভেম্বর, ২০১৫ সকাল ১১:৪৯

সাদী ফেরদৌস বলেছেন:

১৬| ২১ শে নভেম্বর, ২০১৫ সকাল ১১:৪৯

সাদী ফেরদৌস বলেছেন:

১৭| ২১ শে নভেম্বর, ২০১৫ সকাল ১১:৪৯

সাদী ফেরদৌস বলেছেন:

১৮| ২১ শে নভেম্বর, ২০১৫ সকাল ১১:৫০

সাদী ফেরদৌস বলেছেন:

১৯| ২১ শে নভেম্বর, ২০১৫ সকাল ১১:৫০

সাদী ফেরদৌস বলেছেন:

২০| ২১ শে নভেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১২:০১

সাদী ফেরদৌস বলেছেন:
উপরের কিছু ছবিতে হাসিনা খালেদার পার্থক্য বুঝাইলাম , পরিশেষে কিছু হ্যাপিএণ্ডিং ছবি দিয়া শেষ করি :) :) জ্ঞানীরা বুইঝা লও হাসিনা আর খালেদার পার্থক্য =p~ =p~ =p~ =p~ =p~ =p~ =p~ :) :) :)





২১| ২১ শে নভেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১২:০৩

আস্তিক এলিয়েন বলেছেন: সাদী ফেরদৌস সাহেব এগুলানও একটু দেইখেন........


২২| ২১ শে নভেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১২:১৩

আস্তিক এলিয়েন বলেছেন: সাদী ফেরদৌস সাহেব

২৩| ২১ শে নভেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১২:১৫

আস্তিক এলিয়েন বলেছেন: আওয়ামী সিটি নির্বাচন ২০১৫

২৪| ২১ শে নভেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১২:১৫

ইকবালবিডি০৯ বলেছেন: যতকিছুই বলেন বা দেন এগুলো হচ্চে তাহাদের দৈনদিন কর্মকান্ড।

২৫| ২১ শে নভেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১২:১৫

আব্দুল্লাহ রিফাত বলেছেন: আপনার মত আমিও একই অপেক্ষায় আছি।দেখি কি হয়_______

২৬| ২১ শে নভেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১২:১৬

ইকবালবিডি০৯ বলেছেন: কেই ভাল নয় সবাই ৩৫/৩৫ ইহা তাহাদের একমাত্র কাজ।

২৭| ২১ শে নভেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১২:১৭

আস্তিক এলিয়েন বলেছেন: আওয়ামী সিটি ভোট ডাকাতি ২০১৫

২৮| ২১ শে নভেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১২:১৭

লাজুক লতা আমি বলেছেন: যারা পাচাটা গোলাম এজ লাইক সাদ তারা কখনওই নিজের দলের ভুল দেখতে পান না।

২৯| ২১ শে নভেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১২:২৬

আস্তিক এলিয়েন বলেছেন: লাজুক লতা আমি বলেছেন: যারা পাচাটা গোলাম এজ লাইক সাদ তারা কখনওই নিজের দলের ভুল দেখতে পান না।

একশভাগ সহমত।

৩০| ২১ শে নভেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১:২১

বিচার মানি তালগাছ আমার বলেছেন: অন্ধরা হাতির পাছারে মুখ মনে করে....

৩১| ২১ শে নভেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১:৩২

সাদী ফেরদৌস বলেছেন: জনাব এলিয়েন , ইট মারলে পাটকেল খেতে হয় , বি এন পি ইট মারতেছে আওয়ামীলীগ তাই পাটকেল মারতেছে , ভোট কারছুপি বি এন পি প্রথম শুরু করছে , প্রথম বিজয় মিছিলে গুল্লি করার কৃতিত্ব ও তোমগোর । :) :) :)
বোমা মাইরা জায়গায় ২১ জন প্রধান নেতা কর্মীরে মারছ , গুল্লি কইরা মারছ কিব্রিয়া আর মাস্টাররে ।
রাব গঠন কইরা হাজার হাজার নেতা করমি গুম করার কালচার তোমারা শুরু করছিলা ।

বিনিময়ে তো তোমরা আর জামাই আদর আশা করতে পার না :) :) :) =p~
=p~
আর একটা কথা কই , বি এন পি করে এখন তোমাদের মতো এলিয়েন রা , এখানে এখন মনুষ্য নাই :) :) :) :) =p~ =p~ =p~ =p~ =p~ =p~ =p~ =p~ =p~ =p~

৩২| ২১ শে নভেম্বর, ২০১৫ দুপুর ২:০১

রাহমান বিপ্লব. বলেছেন: অবশেষে সাকী ফেরদৌস প্রমাণ করিলেন, খালেদা জিয়া আসলে আসিতেছেন না। সবই গুজব। আর তিনি লীগের পক্ষ হইয়া 'গুজবের ইট' প্রতীরোধে পাটকেল মারিতেছেন। :-P B:-/ =p~

৩৩| ২১ শে নভেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৩:২২

কমরেড ফারুক ২ বলেছেন: হুম

৩৪| ২১ শে নভেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৩:৫৫

আস্তিক এলিয়েন বলেছেন: জনাব সাদী ফেরদৌস, বিএনপির মত নপুংষকের দল আমি করিনা। তবে কে যেনো কইছিলো বিএনপিতে একমাত্র পুরুষ(রুপকার্থে) থাকলে খালেদাই আছে। সেই খালেদাকেই কিছুটা সাপোর্ট করি।
ইটটি মারলে ফাটকেলটি খেতে হয় মানে কি বিএনপি যত অন্যায় করেছে আপনারাও তাই করবেন?? শুধু তাই নয় তার চেয়ে দশ গুণ বেশি করছেন আপনারা। আপনারা তো তাইলে তাদের চাইতে দশগুণ খারাপ হয়ে গেলেন। এটাই কি হাসিনার সেই রাজনীতি?? যেই রাজনীতি শিখতে খালেদার ৫০ বছর লাগবে বলছেন?? ধিক্কার জানাই এমন অপরাজনীতির। আর আপনার নেত্রীর রাজনীতির স্বরুপটা আরো ভালো জানতে মুক্তিযোদ্ধা মতিউর রহমান রেন্টুর ‘আমার ফাঁসি চাই’ বইটা পড়ে নিবেন প্লীজ..... কুট রাজনীতি কত প্রকার ও কি কি উদাহরনসহ জানতে পারবেন জনাব।

৩৫| ২১ শে নভেম্বর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:০০

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: @সাদী ভাইয়ের জন্য ;)

ইতিহাসের পাতা থেকে...

বিদেশী পত্রিকায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের শাসনামল

১৯৭৪ সালের ৩০ শে মার্চ গার্ডিয়ান পত্রিকা লিখেছিল, “আলীমুদ্দিন ক্ষুধার্ত। সে ছেঁড়া ছাতা মেরামত করে। বলল, যেদিন বেশী কাজ মেলে, সেদিন এক বেলা ভাত খাই। যেদিন তেমন কাজ পাই না সেদিন ভাতের বদলে চাপাতি খাই। আর এমন অনেক দিন যায় যেদিন কিছুই খেতে পাই না।” তার দিকে এক নজর তাকালে বুঝা যায় সে সত্য কথাই বলছে। সবুজ লুঙ্গির নীচে তার পা দু'টিতে মাংস আছে বলে মনে হয় না।

ঢাকার ৪০ মাইল উত্তরে মহকুমা শহর মানিকগঞ্জ। ১৫ হাজার লোকের বসতি। তাদের মধ্যে আলীমুদ্দিনের মত আরো অনেকে আছে। কোথাও একজন মোটা মানুষ চোখে পড়ে না। কালু বিশ্বাস বলল, “আমাদের মেয়েরা লজ্জায় বের হয় না-তারা নগ্ন।” আলীমুদ্দিনের কাহিনী গোটা মানিকগঞ্জের কাহিনী। বাংলাদেশের লক্ষ লক্ষ মানুষের কাহিনী,শত শত শহর বন্দরের কাহিনী। এ পর্যন্ত বিদেশ থেকে ৫০ লাখ টনেরও বেশী খাদ্যশস্য বাংলাদেশে পাঠানো হয়েছে। কিন্তু যাদের জন্য পাঠানো হয়েছে তারা পায়নি।”

১৯৭৪ সালের ২৭ সেপ্টম্বর তারিখে লন্ডনের নিউ স্টেট্সম্যান লিখেছিল,

“বাংলাদেশ আজ বিপদজনক ভাবে অরাজকতার মুখোমুখি। লাখ লাখ লোক ক্ষুধার্ত। অনেকে না খেতে পেয়ে মারা যাচ্ছে। .. ক্ষুধার্ত মানুষের ভীড়ে ঢাকায় দম বন্ধ হয়ে আসে।.. বাংলাদেশ আজ দেউলিয়া। গত আঠার মাসে চালের দাম চারগুণ বেড়েছে। সরকারি কর্মচারিদের মাইনের সবটুকু চলে যায় খাদ্য-সামগ্রী কিনতে। আর গরীবরা থাকে অনাহারে। কিন্তু বিপদ যতই ঘনিয়ে আসছে শেখ মুজিব ততই মনগড়া জগতে আশ্রয় নিচ্ছেন। ভাবছেন, দেশের লোক এখনও তাঁকে ভালবাসে;সমস্ত মুসিবতের জন্য পাকিস্তানই দায়ী। আরো ভাবছেন, বাইরের দুনিয়ী তাঁর সাহায্যে এগিয়ে আসবে এবং বাংলাদেশ উদ্ধার পাবে। নিছক দিবাস্বপ্ন.. দেশ যখন বিপর্যয়ের দিকে যাচ্ছে,তখনও তিনি দিনের অর্ধেক ভাগ আওয়ামী লীগের চাঁইদের সাথে ঘরোয়া আলাপে কাটাচ্ছেন। .. তিনি আজ আত্মম্ভরিতার মধ্যে কয়েদী হয়ে চাটুকার ও পরগাছা পরিবেষ্টিত হয়ে আছেন।.. সদ্য ফুলে-ফেঁপে ওঠা তরুণ বাঙালীরা হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের শরাবখানায় ভীড় জমায়। তারা বেশ ভালই আছে। এরাই ছিল মুক্তিযোদ্ধা- বাংলাদেশের বীর বাহিনী। .. এরাই হচ্ছে আওয়ামী লীগের বাছাই করা পোষ্য। আওয়ামী লীগের ওপর তলায় যারা আছেন তারা আরো জঘন্য। .. শুনতে রূঢ় হলেও কিসিঞ্জার ঠিকই বলেছেনঃ “বাংলাদেশ একটা আন্তর্জাতিক ভিক্ষার ঝুলি।”

১৯৭৪ সালে ২রা অক্টোবর,লন্ডনের গার্ডিয়ান পত্রিকায় জেকুইস লেসলী লিখেছিলেন,

“একজন মা ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে,আর অসহায় দুষ্টিতে তার মরণ-যন্ত্রণাকাতর চর্মসার শিশুটির দিকে তাকিয়ে আছে। বিশ্বাস হতে চায় না, তাই কথাটি বোঝাবার জন্য জোর দিয়ে মাথা নেড়ে একজন ইউরোপীয়ান বললেন, সকালে তিনি অফিসে যাচ্ছিলেন,এমন সময় এক ভিখারি এসে হাজির। কোলে তার মৃত শিশু। ..বহু বিদেশি পর্যবেক্ষক মনে করেন বর্তমান দুর্ভিক্ষের জন্য বর্তমান সরকারই দায়ী। “দুর্ভিক্ষ বন্যার ফল ততটা নয়,যতটা মজুতদারী চোরাচালানের ফল”-বললেন স্থানীয় একজন অর্থনীতিবিদ।.. প্রতি বছর যে চাউল চোরাচালন হয়ে (ভারতে) যায় তার পরিমাণ ১০ লাখ টন।”

১৯৭৪ সালের ২৫ অক্টোবর হংকং থেকে প্রকাশিত ফার ইষ্টার্ণ ইকনমিক রিভিয়্যূ পত্রিকায় লরেন্স লিফঅসুলজ লিখেছিলেন,

সেপ্টেম্বর তৃতীয় সপ্তাহে হঠাৎ করে চাউলের দাম মণ প্রতি ৪০০ টাকায় উঠে গেল। অর্থাৎ তিন বছরে আগে -স্বাধীনতার পূর্বে যে দাম ছিল - এই দাম তার দশ গুণ। এই মূল্যবৃদ্ধিকে এভাবে তুলনা করা যায় যে, এক মার্কিন পরিবার তিন বছর আগে যে রুটি ৪০ সেন্ট দিয়ে কিনেছে,তা আজ কিনছে ৪ পাউন্ড দিয়ে। কালোবাজারী অর্থনীতির কারসাজিতেই এই অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি ঘটে।.. ২৩শে সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্র সফরে যাওয়ার প্রাক্কালে শেখ মুজিব ঘোষণা করলেন, “প্রতি ইউনিয়নে একটি করে মোট ৪,৩০০ লঙ্গরখানা খোলা হবে।" প্রতি ইউনিয়নের জন্য রোজ বরাদ্দ হল মাত্র দুমন ময়দা। যা এক হাজার লোকের প্রতিদিনের জন্য মাথাপিছু একটি রুটির জন্যও যথেষ্ট নয়।”

নিউয়র্ক টাইমস পত্রিকা ১৯৭৪ সালের ১৩ ডিসেম্বর তারিখে লিখেছিলঃ

জনৈক কেবিনেট মন্ত্রীর কথা বলতে গিয়ে একজন বাংলাদেশী অর্থনীতিবিদ বললেন,“যুদ্ধের পর তাঁকে (ঐ মন্ত্রীকে) মাত্র দুই বাক্স বিদেশি সিগারেট দিলেই কাজ হাসিল হয়ে যেত, এখন দিতে হয় অন্ততঃ এক লাখ টাকা।” ব্যবসার পারমিট ও পরিত্যক্ত সম্পত্তি উদ্ধারের জন্য আওয়ামী লীগারদের ঘুষ দিতে হয়। সম্প্রতি জনৈক অবাঙ্গালী শিল্পপতী ভারত থেকে ফিরে আসেন এবং শেখ মুজিবের কাছ থেকে তার পরিত্যক্ত ফার্মাসিউটিক্যাল কারখানাটি পুরনরায় চাল করার অনুমোদন লাভ করেন। শেখ মুজিবের ভাগিনা শেখ মনি -যিনি ঐ কারখানাটি দখল করে আছেন-হুকুম জারি করলেন যে তাকে ৩০ হাজার ডলার দিতে হবে। শেখ মুজিবকে ভাল করে জানেন এমন একজন বাংলাদেশী আমাকে বললেন, “লোকজন তাকে পায়ে হাত দিয়ে সালাম করুক, এটা তিনি পছন্দ করেন। তাঁর আনুগত্য নিজের পরিবার ও আওয়ামী লীগের প্রতি। তিনি বিশ্বাসই করেন না যে, তারা দুর্নীতিবাজ হতে পারে কিংবা তার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করতে পারে।”

দেখা যাক, প্রখ্যাত তথ্য-অনুসন্ধানী সাংবাদিক জন পিলজার ১৯৭৪ সালে বাংলাদেশ সম্পর্কে কি বলেছিলেন। তিনি ১৯৭৪ সালের ১৭ই ডিসেম্বর লন্ডনের ডেইলী মিরর পত্রিকায় লিখেছেনঃ

“একটি তিন বছরের শিশু -এত শুকনো যে মনে হল যেন মায়ের পেটে থাকাকালীন অবস্থায় ফিরে গেছে। আমি তার হাতটা ধরলাম। মনে হল তার চামড়া আমার আঙ্গুলে মোমের মত লেগে গেছে। এই দুর্ভিক্ষের আর একটি ভয়ঙ্কর পরিসংখ্যান এই যে, বিশ্বস্বাস্থ্ সংস্থার মতে ৫০ লাখ মহিলা আজ নগ্ন দেহ। পরিধেয় বস্ত্র বিক্রি করে তারা চাল কিনে খেয়েছে।”

পিলজারের সে বক্তব্য এবং বিশ্বস্বাস্থ সংস্থার সে অভিমতের প্রমাণ মেলে ইত্তেফাকের একটি রিপোর্টে। উত্তর বংগের এক জেলেপাড়ার বস্ত্রহীন বাসন্তি জাল পড়ে লজ্জা ঢেকেছিল। সে ছবি ইত্তেফাক ছেপেছিল। পিলজার আরো লিখেছেন,

“সন্ধা ঘনিয়ে আসছে এবং গাড়ী আঞ্জুমানে মফিদুল ইসলাম-এর লরীর পিছনে পিছনে চলেছে। এই সমিতি ঢাকার রাস্তা থেকে দুর্ভিক্ষের শেষ শিকারটিকে কুড়িয়ে তুলে নেয়। সমিতির ডাইরেক্টর ডাঃ আব্দুল ওয়াহিদ জানালেন,“স্বাভাবিক সময়ে আমরা হয়ত কয়েক জন ভিখারীর মৃতদেহ কুড়িয়ে থাকি। কিন্তু এখন মাসে অন্ততঃ ৬০০ লাশ কুড়াচ্ছি- সবই অনাহার জনিত মৃত্যু।”

লন্ডনের “ডেইলী টেলিগ্রাফ” ১৯৭৫ সালের ৬ই জানুয়ারী ছেপেছিল,

“গ্রাম বাংলায় প্রচুর ফসল হওয়া সত্ত্বেও একটি ইসলামিক কল্যাণ সমিতি (আঞ্জুমানে মফিদুল ইসলাম) গত মাসে ঢাকার রাস্তা,রেল স্টেশন ও হাসাপাতালগুলোর মর্গ থেকে মোট ৮৭৯টি মৃতদেহ কুড়িয়ে দাফন করেছে। এরা সবাই অনাহারে মরেছে। সমিতিটি ১৯৭৪ সালের শেষার্ধে ২৫৪৩টি লাশ কুড়িয়েছে- সবগুলি বেওয়ারিশ। এগুলোর মধ্যে দেড় হাজারেরও বেশী রাস্তা থেকে কুড়ানো। ডিসেম্বরের মৃতের সংখ্যা জুলাইয়ের সংখ্যার সাতগুণ।.. শেখ মুজিবকে আজ বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বোঝা বলে আখ্যায়ীত হচ্ছে। ছোট-খাটো স্বজনপ্রাতির ব্যাপারে তিনি ভারী আসক্তি দেখান। ফলে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া বাকী পড়ে থাকে।.. অধিকাংশ পর্যবেক্ষকদের বিশ্বাস, আর্থিক ও রাজনৈতিক সংকট রোধ করার কোন সুনির্দিষ্ট কার্যক্রম এ সরকারের নেই। রাজনৈতিক মহল মনে করেন, মুজিব খুব শীঘ্রই বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক বুনিয়াদ আরো নষ্ট করে দেবেন। তিনি নিজেকে প্রেসিডেন্ট ঘোষণা করার পরিকল্পনা করছেন। ডেইলী টেলিগ্রাফের আশংকা সত্য প্রমাণিত হয়েছিল। শেখ মুজিব প্রধানমন্ত্রীর পদ ছেড়ে প্রেসিডেন্ট হয়েছেন। জরুরী অবস্থা জারি করেছেন, আরো বেশী ক্ষমতা কুক্ষিগত করেছেন। অবশেষে তাতেও খুশি হননি, সকল রাজনৈতিক দলগুলোকে নিষিদ্ধ করে তিনি একদলীয় শাসন প্রতিষ্ঠা করেছেন। আওয়ামী লীগ যাকে নিয়ে গর্ব করে, এ হল তার অবদান।

১৯৭৫ সালের ২১শে মার্চ বিলেতের ব্রাডফোর্ডশায়র লিখেছিল,

“বাংলাদেশ যেন বিরাট ভূল। একে যদি ভেঙ্গে-চুরে আবার ঠিক করা যেত। জাতিসংঘের তালিকায় বাংলাদেশ অতি গরীব দেশ। ১৯৭০ সালের শেষ দিকে যখন বন্যা ও সামুদ্রিক জলোচ্ছ্বাসে দেশের দক্ষিণ অঞ্চল ডুবে যায় তখন দুনিয়ার দৃষ্টি এ দেশের দিকে - অর্থাৎ তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তানের দিকে নিবদ্ধ হয়। রিলিফের বিরাট কাজ সবে শুরু হয়েছিল। এমনি সময়ে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের আগুণ জ্বলে উঠল। --কিন্তু পশ্চিম পাকিস্তানের বিরুদ্ধে তাদের বিদ্রোহ যখন শুরু হল, তখন জয়ের কোন সম্ভাবনাই ছিল না। একমাত্র ভারতের সাগ্রহ সামরিক হস্তক্ষেপের ফলেই স্বল্পস্থায়ী-কিন্তু ভয়াবহ ও রক্তক্ষয়ী- যুদ্ধের পর পাকিস্তানের পরাজয় ঘটে এবং বাংলাদেশের সৃষ্টি হয়।” পত্রিকাটি লিখেছে, “উড়োজাহাজ থেকে মনে হয়, যে কোন প্রধান শহরের ন্যায় রাজধানী ঢাকাতেও বহু আধুনিক অট্রালিকা আছে। কিন্তু বিমান বন্দরে অবতরণ করা মাত্রই সে ধারণা চুর্ণ-বিচুর্ণ হয়ে যায়। টার্মিনাল বিল্ডিং-এর রেলিং ঘেঁষে শত শত লোক সেখানে দাঁড়িয়ে আছে,কেননা তাদের অন্য কিছু করার নাই। আর যেহেতু বিমান বন্দর ভিক্ষা করবার জন্য বরাবরই উত্তম জায়গা।”

পত্রিকাটি আরো লিখেছে,“আমাকে বলা হয়েছে,অমুক গ্রামে কেউ গান গায়না। কেননা তারা কি গাইবে? আমি দেখেছি, একটি শিশু তার চোখে আগ্রহ নেই,গায়ে মাংস নেই। মাথায় চুল নাই। পায়ে জোর নাই। অতীতে তার আনন্দ ছিল না, বর্তমান সম্পর্কে তার সচেতনতা নাই এবং ভবিষ্যতে মৃত্যু ছাড়া আর কিছু ভাবতে পারে না সে।”

দেশে তখন প্রচন্ড দুর্ভিক্ষ চলছিল। হাজার হাজার মানুষ তখন খাদ্যের অভাবে মারা যাচ্ছিল। মেক্সিকোর “একসেলসিয়র” পত্রিকার সাথে এক সাক্ষাৎকারে শেখ মুজিবকে যখন প্রশ্ন করা হল, খাদ্যশস্যের অভাবের ফলে দেশে মৃত্যুর হার ভয়াবহ হতে পারে কিনা,শেখ মুজিব জবাব দিলেন,
“এমন কোন আশংকা নেই।”
প্রশ্ন করা হল, “মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, পার্লামেন্টে বিরোধীদল বলেন যে, ইতিমধ্যেই ১৫ হাজার মানুষ মারা গেছে।”
তিনি জবাব দিলেন, “তারা মিথ্যা বলেন।”
তাঁকে বলা হল,“ঢাকার বিদেশি মহল মৃত্যু সংখ্যা আরও বেশী বলে উল্লেখ করেন।” শেখ মুজিব জবাব দিলেন,
“তারা মিথ্যা বলেন।”
প্রশ্ন করা হল, দূর্নীতির কথা কি সত্য নয়? ভূখাদের জন্য প্রেরিত খাদ্য কি কালোবাজারে বিক্রী হয় না..?
শেখ বললেন, “না। এর কোনটাই সত্য নয়।”(এন্টার প্রাইজ,রিভার সাইড,ক্যালিফোর্নিয়া, ২৯/০১/৭৫)

বাংলাদেশ যে কতবড় মিথ্যাবাদী ও নিষ্ঠুর ব্যক্তির কবলে পড়েছিল এ হল তার নমুনা। দেশে দুর্ভিক্ষ চলছে,সে দুর্ভিক্ষে হাজার মানুষ মরছে সেটি তিনি মানতে রাজী নন। দেশে কালোবাজারী চলছে, বিদেশ থেকে পাওয়া রিলিফের মাল সীমান্ত পথে ভারতে পাড়ী জমাচ্ছে এবং সীমাহীন দূর্নীতি চলছে সেটি বিশ্ববাসী মানলেও তিনি মানতে চাননি। অবশেষে পত্রিকাটি লিখেছে,

"যে সব সমস্যা তার দেশকে বিপর্যস্ত করত সে সবের কোন জবাব না থাকায় শেখের একমাত্র জবাব হচ্ছে তাঁর নিজের একচ্ছত্র ক্ষমতা বৃদ্ধি। জনসাধারণের জন্য খাদ্য না হোক,তার অহমিকার খোরাক চাই।" (এন্টার প্রাইজ,রিভার সাইড, ক্যালিফোর্নিয়া, ২৯/০১/৭৫)

শেখ মুজিব যখন বাকশাল প্রতিষ্ঠা করেন তখন লন্ডনের ডেইলী টেলিগ্রাফে পীটার গীল লিখেছিলেন,

“বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর দেশ থেকে পার্লামেন্টারী গণতন্ত্রের শেষ চিহ্নটুকু লাথি মেরে ফেলে দিয়েছেন। গত শনিবার ঢাকার পার্লামেন্টের (মাত্র) এক ঘন্টা স্থায়ী অধিবেশনে ক্ষমতাশীন আওয়ামী লীগ বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে শেখ মুজিবকে প্রেসিডেন্ট ঘোষণা করেছে এবং একদলীয় শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য তাঁকে ক্ষমতা অর্পণ করেছে। অনেকটা নিঃশব্দে গণতন্ত্রের কবর দেওয়া হয়েছে। বিরোধীদল দাবী করেছিল,এ ধরণের ব্যাপক শাসনতান্ত্রিক পরিবর্তনের ব্যাপারে আলোচনার জন্য তিন দিন সময় দেওয়া উচিত। জবাবে সরকার এক প্রস্তাব পাশ করলেন যে,এ ব্যাপারের কোন বিতর্ক চলবে না। .. শেখ মুজিব এম.পি.দের বললেন, পার্লামেন্টারী গণতন্ত্র ছিল “ঔপনিবেশিক শাসনের অবদান”। তিনি দেশের স্বাধীন আদালতকে “ঔপনিবেশিক ও দ্রুত বিচার ব্যহতকারী” বলে অভিযুক্ত করলেন।”

অথচ পাকিস্তান আমলে শেখ মুজিব ও তাঁর আওয়ামী লীগ পার্লামেন্টারী পদ্ধতির গণতন্ত্রের জন্য কতই না চিৎকার করেছেন। তখন পাকিস্তানে আইউবের প্রেসিডেন্ট পদ্ধতির গনতন্ত্রই তো ছিল। গণতন্ত্রের নামে আওয়ামী লীগের পতাকা তলে যে কতটা মেরুদন্ডহীন ও নীতিহীন মানুষের ভীড় জমেছিল সেটিও সেদিন প্রমাণিত হয়েছিল। এত দিন যারা গণতন্ত্রের জন্য মাঠঘাট প্রকম্পিত করত তারা সেদিন একদলীয় স্বৈরাচারি শাসন প্রবর্তনের কোন রূপ বিরোধীতাই করল না। বরং বিরোধী দলের পক্ষ থেকে এতবড় গুরুতর বিষয়ে যখন সামান্য তিন দিনের আলোচনার দাবী উঠল তখন সেটিরও তারা বিরোধীতা করল। সামান্য এক ঘন্টার মধ্যে এতবড় একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিল। অথচ গণতান্ত্রিক দেশগুলিতে এক টাকা ট্যাক্স বৃদ্ধি হলে সে প্রসঙ্গেও বহু ঘন্টা আলোচনা হয়। ভেড়ার পালের সব ভেড়া যেমন দল বেঁধে এবং কোন রুপ বিচার বিবেচনা না করে প্রথম ভেড়াটির অনুসরণ করে তারাও সেদিন তাই করেছিল। আওয়ামী লীগের গণতন্ত্রের দাবী যে কতটা মেকী,সেটির প্রমাণ তারা এভাবেই সেদিন দিয়েছিল। দলটির নেতাকর্মীরা সেদিন দলে দলে বাকশালে যোগ দিয়েছিল,এরকম একদলীয় স্বৈরচারি শাসন প্রতিষ্ঠায় তাদের বিবেকে সামান্যতম দংশনও হয়নি।

১৯৭৪ সালে ১৮ অক্টোবর বোষ্টনের ক্রিশ্চিয়ান সায়েন্স মনিটরে ডানিয়েল সাদারল্যান্ড লিখেছিলেন,

“গত দুই মাসে যে ক্ষুধার্ত জনতা স্রোতের মত ঢাকায় প্রবেশ করেছে,তাদের মধ্যে সরকারের সমর্থক একজনও নেই। বন্যা আর খাদ্যাভাবের জন্য গ্রামাঞ্চল ছেড়ে এরা ক্রমেই রাজধানী ঢাকার রাস্তায় ভিক্ষাবৃত্তির আশ্রয় নিচ্ছে। কিন্তু মনে হচ্ছে সরকার এদেরকে রাজপথের ত্রিসীমানার মধ্যে ঢুকতে না দিতে বদ্ধপরিকর। এরই মধ্যে বেশ কিছু সংখ্যককে বন্দুকের ভয় দেখিয়ে ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সেখানে সারাদিন দুই এক টুকরা রুটি খেতে পাওয়া যায, মাঝে মাঝে দুই-একটা পিঁয়াজ ও একটু-আধটু দুধ মেলে। ক্যাম্পে ঢুকলে আর বের হওয়া যায় না। “যে দেশে মানুষকে এমন খাঁচাবদ্ধ করে রাখা হয় সেটা কি ধরনের স্বাধীন দেশ”- ক্রোধের সাথে বলল ক্যাম্পবাসীদেরই একজন। ক্যাম্পের ব্লাকবোর্ডে খড়িমাটি দিয়ে জনৈক কর্মকর্তা আমার সুবিধার্থে প্রত্যেকের রুটি খাওয়ার সময়সূচীর তালিকা লিখে রেখেছেন। “তালিকায় বিশ্বাস করবেন না”-ক্যাম্পের অনেকেই বলল। তারা অভিযোগ করল যে, রোজ তারা এক বেলা খেতে পায়- এক কি দুই টুকরা রুটি। কোন এক ক্যাম্পের জনৈক স্বেচ্ছাসেবক রিলিফকর্মী জানাল যে, “সরকারী কর্মচারীরা জনসাধারণের কোন তোয়াক্কা করে না। তারা বাইরের জগতে সরকারের মান বজায় রাখতে ব্যস্ত। এ কারণেই তারা লোকদেরকে রাস্তা থেকে ধরে নিয়ে যাচেছ। বিদেশিরা ভূখা-জনতাকে রাস্তায় দেখুক এটা তারা চায় না।”

১৯৭৪ সালে ৩০ অক্টোবর লন্ডনের গার্ডিয়ান পত্রিকায় পিটার প্রেসটন লিখেছিলেন,

“এই সেদিনের একটি ছবি বাংলাদেশের দৃশ্যপট তুলে ধরেছে। এক যুবতি মা -তার স্তন শুকিয়ে হাঁড়ে গিয়ে লেগেছে,ক্ষুধায় চোখ জ্বলছে - অনড় হয়ে পড়ে আছে ঢাকার কোন একটি শেডের নীচে,কচি মেয়েটি তার দেহের উপর বসে আছে গভীর নৈরাশ্যে। দু’জনাই মৃত্যুর পথযাত্রী। ছবিটি নতুন,কিন্তু চিরন্তন। স্বাধীনতার পর থেকে ঢাকা দুনিয়ার সবচেয়ে -কলিকাতার চেয়েও -বীভৎস শহরে পরিণত হয়েছে। সমস্ত বীভৎসতা সত্ত্বেও কোলকাতায় ভীড় করা মানুষের যেন প্রাণ আছে, ঢাকায় তার কিছুই নাই। ঢাকা নগরী যেন একটি বিরাট শরাণার্থী-ক্যাম্প। একটি প্রাদেশিক শহর ঢাকা লাখ লাখ জীর্ণ কুটীর, নির্জীব মানুষ আর লঙ্গরখানায় মানুষের সারিতে ছেয়ে গেছে। গ্রামাঞ্চলে যখন খাদ্যাভাব দেখা দেয়, ভূখা মানুষ ঢাকার দিকে ছুটে আসে। ঢাকায় তাদের জন্য খাদ্য নেই। তারা খাদ্যের জন্য হাতড়ে বেড়ায়, অবশেষে মিলিয়ে যায়। গেল সপ্তাহে একটি মহলের মতে শুধুমাত্র ঢাকা শহরেই মাসে ৫০০ লোক অনাহারে মারা যাচ্ছে। এর বেশীও হতে পারে, কমও হতে পারে। নিশ্চিত করে বলার মত প্রশাসনিক যন্ত্র নাই।.. জন্মের পর পর বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক সাহায্যের এক অভূতপূর্ব ফসল কুড়িয়েছিলঃ ৫০০ মিলিয়ন পাউন্ড। আজ সবই ফুরিয়ে গেছে। কোন চিহ্ন পর্যন্ত নেই। রাজনীতিবিদ, পর্যবেক্ষক, দাতব্য প্রতিষ্ঠান -সবাই একই যুক্তি পেশ করছে যা অপরাধকে নিরাপদ করছে, দায়িত্বকে করছে অকেজো। তাদের মোদ্দা যুক্তি হল এই যে, বাংলাদেশের ঝুলিতে মারাত্মক ফুটো আছে। যত সাহায্য দেওয়া হোক না কেন, দূর্নীতি, আলসেমী ও সরকারী আমলাদের আত্মঅহমিকার ফলে অপচয়ে ফুরিয়ে যাবে। বেশী দেওয়া মানেই বেশী লোকসান।”

পাত্রের তলায় ফুটো থাকলে পাত্রের মালামাল বেড়িয়ে যায়,তবে তা বেশী দূর যায় না। আশে পাশের জায়গায় গিয়ে পড়ে। তেমনি বাংলাদেশের তলা দিয়ে বেড়িয়ে যাওয়া সম্পদ হাজার মাইল দূরের কোন দেশে গিয়ে উঠেনি,উঠেছিল প্রতিবেশী ভারতে। আর এ ফুটোগুলো গড়ায় ভারতীয় পরিকল্পনার কথা কি অস্বীকার করা যায়? শেখ মুজিব সীমান্ত দিয়ে চোরাকারবারি বন্ধ না করে ভারতের সাথে চুক্তি করে সীমান্ত জুড়ে বাণিজ্য শুরু করেন। এভাবে সীমান্ত বাণিজ্যের নামে দেশের তলায় শুধু ফুটো নয়, সে তলাটিই ধ্বসিয়ে দিলেন। তলা দিয়ে হারিয়ে যাওয়া সম্পদ তখন ভারতে গিয়ে উঠল। ভারত বস্তুতঃ তেমন একটি লক্ষ্য হাছিলের কথা ভেবেই সীমান্ত বাণিজ্যের প্রস্তাব করেছিল। মুজিব সেটাই বিনা দ্বিধায় ভারতের হাতে তুলে দিলেন। বাংলাদেশের বাজারে তখন আর রাতের আঁধারে চোরাচলানকারী পাঠানোর প্রয়োজন পড়েনি। দিনদুপুরে ট্রাক-ভর্তি করে বাংলাদেশের বাজার থেকে সম্পদ তুলে নিয়ে যায়। দুর্বৃত্তরা তখন পাকিস্তান আমলে প্রতিষ্ঠিত কলকারখানার যন্ত্রাংশ খুলে নামে মাত্র মূল্যে ভারতীয়দের হাতে তুলে দেয়। তলাহীন পাত্র থেকে পানি বেরুতে সময় লাগে না, তেমনি দেশের তলা ধ্বসে গেলে সময় লাগে না সে দেশকে সম্পদহীন হতে। ভারতের সাথে সীমান্ত বাণিজ্যের দাড়িয়েছিল,ত্বরিৎ বেগে দূর্ভিক্ষ নেমে এসেছিল বাংলাদেশে।

পোষ্টের লিংক

খালেদার ইতিহাসেতো এমন ব্যার্থতা, লুটপাট দু:শাসনের অতীত নেই!
লেজকাটা শেয়ার মতো চেতনাধারীরা নিজেদের কাটা লেজের দু:খ ঢঅকতেই অন্যের নামে মিথ্যা আর কুৎসা গেয়ে বেড়ায়! আসল কথাটি বলে না! ;)

৩৬| ২১ শে নভেম্বর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:০৩

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: @সাদী ভাইয়ের জন্য ;)

ইতিহাসের পাতা থেকে...
আজ ১ জানুয়ারি। ১৯৭৩ সালের এই দিনে স্বাধীন বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো ছাত্র, জনতা এবং সাংবাদিকের রক্তে রঞ্জিত হয় ঢাকার রাজপথ। রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীনতা লাভের বছরকাল পার না হতেই বিরোধী দমনে শুরু হয় রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস। এদিন শান্তিপূর্ণ মিছিলের ওপর পুলিশ বেপরোয়া ও নৃশংসভাবে গুলি চালিয়ে ছাত্র ইউনিয়ন কর্মী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের তৃতীয় বর্ষ অনার্সের ছাত্র মতিউল ইসলাম এবং ঢাকা কলেজের প্রথমবর্ষের ছাত্র মির্জা কাদেরকে হত্যা করে। এ সময় গুরুতর আহত হন প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের সহ-সভাপতি আবুল কাশেম, দৈনিক বাংলার বাণীর ফটোসাংবাদিক রফিকুর রহমানসহ ৬ জন। বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন আহূত দেশব্যাপী ‘ভিয়েতনাম দিবস’-এর কর্মসূচি অনুযায়ী ঢাকায় সংগ্রামী ছাত্রসমাজ ভিয়েতনামের মার্কিনীদের বর্বর বোমাবর্ষণের প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল বের করলে পুলিশ বেলা সোয়া ১২টায় মার্কিন তথ্যকেন্দ্রের সামনে ছাত্রদের ওপর বিনা প্ররোচনায়

গুলি চালায়। গুলির আগে পুলিশ কোনো রকম হুশিয়ারি দেয়নি। লাঠিচার্জ বা ফাঁকা গুলিও করেনি। ছাত্রহত্যার খবর দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে পুরো রাজধানীর দোকানপাট স্বতঃস্ফূর্তভাবে বন্ধ হয়ে যেতে থাকে। অফিস আদালতের লোকজন রাস্তায় নেমে আসে। চাপা উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে সর্বত্র। তারা সোচ্চার কণ্ঠে হত্যার বিরুদ্ধে স্লোগান দেয়। বিক্ষোভ মিছিলে উচ্চারিত স্লোগানগুলো হচ্ছে—‘নিক্সন-মুজিব ভাই ভাই,— এক রশিতে ফাঁসি চাই,’ ‘শহীদ মতিউল-কাদেরের রক্ত— বৃথা যেতে দেব না,’ ‘খুনি মান্নানের— ফাঁসি চাই,’ ‘খুনিশাহী মুজিবশাহী ধ্বংস হোক,’ নিক্সনের দালালি করা চলবে না,’ ‘বাংলার মীরজাফর শেখ মুজিব। ছাত্রহত্যার প্রতিবাদে পরদিন অর্থাত্ ২ জানুয়ারি (১৯৭৩) স্বাধীন বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো দেশব্যাপী হরতাল পালিত হয়। আর এদিন পল্টন ময়দানে আয়োজিত এক সমাবেশে ডাকসুর পক্ষ থেকে তত্কালীন সহ-সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাস সেলিম আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ মুজিবুর রহমানকে দেয়া জাতির পিতা ও বঙ্গবন্ধু উপাধি প্রত্যাহার করে নেন এবং ‘ডাকসু’র আজীবন সদস্য পদ বাতিল করেন। এসব ঘটনা ওই সময়ের বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে গুরুত্বের সঙ্গে প্রকাশিত হয়। ঘটনার পরদিন দৈনিক গণকণ্ঠ প্রথম পৃষ্ঠায় ‘অশ্বমেধের লালঘোড়া’ শিরোনামে সম্পাদকীয় প্রকাশ করে। এ সম্পাদকীয়টিসহ দৈনিক সংবাদে প্রকাশিত কয়েকটি প্রতিবেদন তুলে ধরা হলো— অশ্বমেধের ‘লালঘোড়া’ ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার দেশেপ্রেমিক ছাত্র-যুবকের বুকের তাজা রক্তপাতের মধ্যে দিয়ে তাদের নববর্ষের যাত্রা শুরু করেছে। বিশ্বের প্রতিবাদী মানুষ যখন ভিয়েতনামে সাম্রাজ্যবাদী মার্কিন দস্যুদের নির্বিচার হত্যালীলায় ঘৃণায় ক্ষোভে চিত্কার করতে করতে পৃথিবীর প্রতিটি শহর বন্দরের রাজপথে বিক্ষোভ মিছিলে নেমে এসেছে, তখন বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন দল ঢাকা শহরের রাজপথে তেমনি একটি মিছিলের ওপর মানবতার বক্ষস্থলকে নিশানায় এনে তাদের পূর্বে কথিত ‘লালঘোড়ার’ অশ্বমেধ যজ্ঞ শুরু করেছে। বিশ্ব মানবতার পক্ষে দাঁড়িয়ে ভিয়েতনামে মার্কিন হত্যালীলার প্রতিবাদে বাংলাদেশের ছাত্র-যুবারা যখন একটি শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ মিছিল নিয়ে তোপখানা রোড ধরে এগিয়ে যাচ্ছিল, ঠিক তখনি অতর্কিত এই গুলিবর্ষণ। এই গুলিবর্ষণের ফলে ঘটনাস্থলেই দু’জন ছাত্রযুবা শহীদ হয়েছেন এবং ৬ জন মারাত্মকভাবে জখম হয়ে হাসপাতালে স্থানান্তরিত হয়েছেন। এই ঘটনার সঙ্গে সঙ্গেই বিভিন্ন শহর বিক্ষোভ ও ধিক্কার ধ্বনিতে ফেটে পড়ে। শহরের রাজপথ বিক্ষুব্ধ মানুষের মিছিলে প্রকম্পিত হতে থাকে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের সত্যিকারের স্বরূপ উপলব্ধি করে ঢাকায় জনসাধারণ যেত হতচকিত হয়ে। তাহলে কি আওয়ামী লীগের অশ্বমেধের লালঘোড়া নিরীহ ছাত্র-যুবাদের ওপর দিয়ে এভাবেই চলতে শুরু করল? এত তাড়াতাড়ি? কিন্তু বোকা শাসকরা কি জানে না যে, সদ্য উত্থিত এই জাতি রক্তের লালপথ ধরে আজ এতদূর উঠে এসেছে। রক্তের বন্যায় তারা সর্বধরনের অন্যায়কে ভাসিয়ে দিতে দিতে এগিয়ে চলেছে। তাদের পেছনে পড়ে আছে নূরুল আমীন-আইয়ুব-ইয়াহিয়া-মোনেমের বন্দুক কামানের মুহুর্মুহু গর্জন আর রাজপথ ভরা চাপ চাপ রক্তের দাগ। এ চলা থামবে না। বর্তমান ক্ষমতাসীনদের রাইফেলের গর্জন যত বাড়বে, ততই এ চলা দুর্দম হয়ে উঠবে। আর ইতিহাসের আঁস্তাকুড়ে নিক্ষিপ্ত হবে আজকের ক্ষমতাদর্পী গুলিবর্ষণকারীরা। কোনো সাম্রাজ্যবাদই তাদের পুতুলদের দাঁড় করিয়ে রাখতে পারবে না। (দৈনিক গণকণ্ঠ : ০২ জানুয়ারি ১৯৭৩) পল্টনের ঘোষণা (নিজস্ব বার্তা পরিবেশক)গতকাল মঙ্গলবার পল্টন ময়দানের জনসমাবেশে শহীদ মতিউল ইসলাম ও শহীদ মির্জা কাদিরুল ইসলামের লাশকে সামনে রেখে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের সহ-সভাপতি ও বাংলাদেশে ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম নিম্নোক্ত ঘোষণা পাঠ করেন। এই সমাবেশের সামনে ডাকসুর পক্ষ থেকে আমরা ঘোষণা করছি যে, বিগত ১৯৬৯ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি ঐতিহাসিক রেসকোর্স ময়দানে শেখ মুজিবুর রহমানকে ডাকসু’র পক্ষ থেকে আমরা যে ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধি দিয়েছিলাম ছাত্র হত্যার প্রতিবাদে আজ সেই বঙ্গবন্ধু উপাধি প্রত্যাহার করে নিলাম। আমরা দেশের আপামর জনসাধারণ, সংবাদপত্র, রেডিও ও টেলিভিশনের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি যে আজ থেকে শেখ মুজিবুর রহমানের নামের আগে তার বঙ্গবন্ধু বিশেষণ ব্যবহার করবেন না। একদিন ডাকসুর পক্ষ থেকে আমরা শেখ মুজিবকে জাতির পিতা আখ্যা দিয়েছিলাম। কিন্তু স্বাধীন বাংলাদেশের মাটিতে আবার ছাত্রের রক্তে তার হাত কলঙ্কিত করায় আমরা ছাত্র সমাজের পক্ষ থেকে ঘোষণা করছি, আজ থেকে কেউ আর জাতির পিতা বলবেন না। শেখ মুজিবুর রহমানকে একদিন ডাকসু’র আজীবন সদস্যপদ দেয়া হয়েছিল। আজকের এই সমাবেশ থেকে ডাকসু’র পক্ষ থেকে আমরা ঘোষণা করছি, আজ থেকে শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকসু’র আজীবন সদস্যপদ বাতিল করে দেয়া হলো। ( দৈনিক সংবাদ : ০৩ জানুয়ারি ১৯৭৩) পুলিশের গুলিবর্ষণ ও ছাত্রহত্যার প্রতিবাদে ঢাকাসহ দেশের সর্বত্র হরতাল, বিক্ষোভ, মিছিল, সমাবেশ খুনিদের ফাঁসি চাই : পল্টনের দাবি নিজস্ব বার্তা পরিবেশক : শহীদ মতিউল ও শহীদ কাদিরুলের পবিত্র লাশ সামনে রেখে এদেশে সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী সংগ্রামের নতুন ইতিহাস সৃষ্টিকারী বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন ও ডাকসুর নেতারা গতকাল (মঙ্গলবার) পল্টনের বিরাট সমাবেশে ছাত্রহত্যার জন্য দায়ী খুনিদের ফাঁসি দাবি করছেন— সেই খুনি প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু যে কোনো মন্ত্রী বা আমলাই হোক না কেন। বিকাল ৩টায় ‘ডাকসু’ সহ-সভাপতি ও বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ওই শোক বিধুর অথচ বিক্ষুব্ধ সমাবেশে বক্তৃতা করেন বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের সহ-সভাপতি নূহউল আলম লেনিন, সাধারণ সম্পাদক আবদুল কাইয়ুম মুকুল, সহ-সম্পাদক কামরুল আহসান ও ডাকসু সম্পাদক মাহবুব জামান। মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম : ডাকসুর সহ-সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, আজ যেন শোকের দিন। তিনি ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের ঘটনার উল্লেখ করে বলেন যে, পাকিস্তান আমলেও পাঁচ বছর পর ছাত্রদের ওপর গুলি ছোড়া হয়েছিল। আর মুজিব এক বছরও যেতে দিলেন না। শেখ মুজিব আজ নুরুল আমিনের পদাঙ্ক অনুস্মরণ করে তারই সমপর্যায়ে চলে গেছেন। ১৯৫৪ সালে যেমন ছাত্র হত্যাকারী নুরুল আমীন ইতিহাসের আস্তাকুঁড়ে নিক্ষিপ্ত হয়েছে তেমনি আগামী নির্বাচনে মুজিবও নিক্ষিপ্ত হবে। কুলাঙ্গার তোফায়েল : ১ জানুয়ারি ঘটনা উল্লেখ করে সেলিম বলেন যে, লজ্জার বিষয় যখন মার্কিন তথ্যকেন্দ্রের সামনে ছাত্রদের হত্যা করা হচ্ছিল তখন একদা ছাত্রনেতা জনাব তোফায়েল আহমদ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মান্নান ও পুলিশের আইজির সঙ্গে সেক্রেটারিয়েটে বসে ছাত্র হত্যার পরিকল্পনা করছিলেন। আজ থেকে আমরা তাকে ‘ছাত্র সমাজের কুলাঙ্গার’ হিসেবে অভিহিত করতে চাই। লাশের ওপর ঢিল : সেলিম বলেন, শেখ মুজিবের চেলাচামুণ্ডাদের ঔদ্ধত্য সীমা ছাড়িয়ে গেছে। আজ আমরা যখন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শহীদ কাদিরের লাশ নিয়ে আসছিলাম তখন মুজিববাদী ছাত্রলীগ লাশের ওপর ঢিল ছুড়ে, মিছিলের ওপর হামলা চালায়। তিনি বলেন যে আজ থেকে ছাত্রদের রক্তে রঞ্জিত ‘মুজিববাদ’ ছাত্র সমাজ থেকে পরিত্যক্ত হলো। লাল ঘোড়া : ডাকসুর সহ-সভাপতি প্রধানমন্ত্রীর লালঘোড়া দাবড়ানোর কথা উল্লেখ করে বলেন যে, তিনি ছাত্র সমাজের ওপর দিয়েই তা চালু করলেন। তিনি বর্তমান সরকারকে হুশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, ছাত্রসমাজ শুধু গড়তেই জানে না ভাংতেও জানে। কী করে খুনি জালেম সরকারকে উত্খাত করে বঙ্গোপসাগরে ভাসিয়ে দিতে হয় ছাত্র সমাজ তা জানে। আগামী দিনে ছাত্র জনগণকে সঙ্গে নিয়ে দেশব্যাপী দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলবে এবং তা শুধু হরতাল মিছিলেই সীমাবদ্ধ থাকবে না। আবদুল কাইয়ুম মুকুল : ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আবদুল কাইয়ুম মুকুল সরকারী প্রেসনোট টুকরো টুকরো ছিড়ে ফেলে বলেন যে, এমন মিথ্যা ভাওতা জনগণ ঔপনিবেশিক আমলেই ডাস্টবিনে নিক্ষেপ করেছে। তিনি প্রধানমন্ত্রীর দুঃখ প্রকাশের ঘটনা উল্লেখ করে বলেন যে খুনির দুঃখ প্রকাশের কোনো অধিকার নেই। (দৈনিক সংবাদ : ৩ জানুয়ারি ১৯৭৩) শহীদদের লাশ নিয়ে মিছিল বটতলার প্রতিবাদ সভায় ধিক্কার নিজস্ব বার্তা পরিবেশক গতকাল বিকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বটতলায় পুলিশের বর্বর গুলি ও ছাত্র হত্যার প্রতিবাদে এক বিক্ষোভ সভা অনুষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম এতে সভাপতিত্ব করেন। সভাশেষে ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগ সরকারের নির্মম গুলির শিকার শহীদ মতিউল ইসলাম ও মির্জা কাদেরের লাশ নিয়ে এক বিরাট বিক্ষোভ মিছিল বের হয়। বিক্ষোভ মিছিল বিভিন্ন শ্লোগান সহকারে শহরের প্রধান রাজপথগুলো প্রদক্ষিণ করে বায়তুল মোকাররমে এসে সমাপ্ত হয়। বায়তুল মোকাররমে এক বিক্ষোভ সভায় বক্তৃতা করেন ন্যাপ প্রধান অধ্যাপক মোজাফফর আহমদ, ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি ও ডাকসুর সহ সভাপতি জনাব মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম। বিক্ষোভ মিছিলে ছাত্রছাত্রী ছাড়াও শ্রমিক জনতা যোগদান করে। তারা সোচ্চার কণ্ঠে হত্যার বিরুদ্ধে শ্লোগান দেয়। বিক্ষোভ মিছিলে উচ্চারিত শ্লোগানগুলো হচ্ছে—‘নিক্সন-মুজিব ভাই ভাই,—এক রশিতে ফাঁসি চাই,’ ‘সাম্রাজ্যবাদের মরণ ফাঁদ—১৯৭৩ সাল,’ ‘শহীদ মতিউল-কাদেরের রক্ত বৃথা যেতে দেব না,’ ‘খুনি মান্নানের— ফাঁসি চাই,’ ‘ভিয়েতনামের বদলা নেব, বাংলাদেশের মাটিতে, ‘আগামীকাল হরতাল, গাড়ির চাকা ঘুরবে না, খুিনশাহী মুজিবশাহী ধ্বংস হোক, ‘নিক্সনের দালালি করা চলবে না,’ ‘সমাজতন্ত্রের নামে ভাওতা দেয়া চলবে না,’ ‘বাংলার মীরজাফর শেখ মুজিব।’

(দৈনিক সংবাদ : ২ জানুয়ারি ১৯৭৩)

৩৭| ২২ শে নভেম্বর, ২০১৫ রাত ১২:১৭

লাজুক লতা আমি বলেছেন: এর দ্বারা প্রমাণিত হলো তারা রাজাকার ছিল- খাদ্য মন্ত্রী

ছি ছি আমার ভাবতেও লজ্জা লাগে খালেদাজিয়া এই রাজাকার দের মন্ত্রী বানিয়ে ছিল__ এরশাদ চাচা


আমার বাবা কোন ভাবেই প্রাণ ভিক্ষা চাইতে পারে না ___ মুজাহিদ পোলা

প্রাণ ভিক্ষা চাওয়ার ব্যাপারে যে প্রচার করা হচ্ছে তা মিথ্যাচার __ জামাতে ইসলাম




মাননীয় স্পিকার আমরা সাধারণ জনগণ সারা জীবন চোদনা ই থেকে গেলাম। ভালোমন্দ কিছুই দেখি না।

৩৮| ২২ শে নভেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৪:২৩

সজিব হাওলাদার বলেছেন: দেশে যদি এখন গনতন্ত্র থাকে তাহলে সৈরতন্ত্র কাকে বলে?

৩৯| ২২ শে নভেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৪:৩৫

মিথুন আহমেদ বলেছেন: আফসোস, আওয়ামির মত মিডিয়া আমরা তৈরি করতে পারি নাই । না হলে পেপার কাটিং দিতে দিতে এই ব্লগ জ্যাম হয়ে যেত।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.