নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সবার উপরে মানুষ সত্য, তার উপরে আল্লাহ! সঠিক বিচারের মালিক, সর্বশক্তিমান, মহা ক্ষমাশীল।

মোঃ ছিদ্দিকুর রহমান

আমি এক জন্ স্বাধীন চেতা মানুষ, ছাত্র জীবনে ছাত্র ইউনিয়নের সদস্য ছিলাম, কর্ম জীবনে একজন সরকারী কর্মচারী (অব:), বর্তমানে একটি বেসরকারী কোম্পানীতে হিসাব রক্ষন কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োজিত আছি।

মোঃ ছিদ্দিকুর রহমান › বিস্তারিত পোস্টঃ

সৃষ্টির খেলা বড়ই অদ্ভূত

১০ ই জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ১০:৪৪

রাস্তা দিয়ে একমনে হাটতেছিলাম, হঠাৎ আমার ছোটবেলার এক বন্দুর সাথে দেখা, সে আমাকে দেখা মাত্রই বলে উঠলেন, বন্দু কেমন আছ? আমি হতবাক, অর্থাৎ আমাকে তার কথার জবাব দিতে খানিকটা সময়ে নিতে হয়েছে, সে আমার মনের অবস্থা চিন্তা করে ছোট্ট বেলা স্মৃতিগুলো আওরাতে মোটেও সময় নিলেন না। পরে বুঝতে পরলাম আমার স্মৃতির পাতা এতোই দুর্বল হয়েছে যে, আমি তাকে মনে রাখতে না পারলেও সে ঠিকই আমাকে তাহার মনের খাতায় লিখে রেখেছেন এবং হিসাব কষে চিনে নিয়েছেন।

দু'জনে আলাপ আলোচনা হলো, বসে চা পান করলাম, ছেলে মেয়েদের কথা বলা বলি করলাম, সে আমার তুলনায় বেশ সবলই রইল। কিন্তু আমি সময়ের তালে তালে বুড়ো হয়ে গেছি। যদি ও আমার মা বেচে আছে, অনেক কথা ও অনেক গল্প বলাবলি হলো, আমি বড় ছেলেকে বিয়ে দেওয়ার জন্য গ্রামের বাড়ীতে এসেছি । জীবনের বেশীর ভাগ সময় শহরে থেকেছি, গ্রামের মানুষের সাথে সময় কাটাবার মত সময় ভাগ্যে জোটেনি। সংসারের ঝাতা কলে পিশে একাকার হয়ে গেছি। কি ভাবে যে বছর গুলো কেছে গেছে বুঝতেই পারিনি। আমার মনে হয় এই তো সেদিন মেট্রিক পাশ করে বেড়িয়ে এলাম, কখন চাকুরি হলো আবার সেই চাকুরী হতে অবসর নিলাম্। এ যেন সময়ের তালের একটি গল্প মাত্র।

আমি গগন মেমোরিয়াল হাই স্কুল থেকে মেট্রিক পাশ করেছি মাত্র।
আমার বন্ধু এবং সবচাইতে প্রিয় মানুষ যার সাথে জীবনের গুরুত্বপূর্ণ সময় কাটিয়েছি। এই সাথে থেকে একই বিছানায় ঘুমিয়ে সেই মধুময় সময় গুলো পার করেছি, অভাব কি তা বুঝার সময় হয়নি। এমন এক পরিবারে থেকে বড় হয়েছি, যেখানে হিংসা, নিন্ধা, অবহেলা, কিছুই দেখতে পেতাম না। মাঝে মাঝে মনে হতো এটাকি লজিং বাড়ী না কি আমার নিজের বাড়ী ? ভূল করে ফেলতাম, তবে এক মহান মনের মানুষ ছিলেন রাংগা ভাই, যখন আমাকে ডাকতেন কখন তার মুখে একটা হাসির রেখা দেখা যেত, সে আমার প্রতিটা কাজে আনন্দই পেতেন। কিন্তু অন্যরা কিছুটা বিরক্ত হলেও রাংগা ভাইয়ের ভয়ে কিছুই বলতেন না। আমার কোন জামা-কাপড় ছিল না। আমি তাদেরই জামা পড়তাম, জুতো পড়তাম, তাদের বই খাতা কলম দিয়ে লেখা পড়া করতাম।

একজন অসাধারন মানুষ, পেষায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক, সদা হাস্যউজ্জল মুখ, সারামাসের বেতনের টাকা একত্র করে, ধান বিক্রয় করে, এবং আরও টাকা ধার করে (বরগুনা একটা মুদি দোকান থেকে) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠাতো, তার তিন তিনটি চোট ভাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনা করতেন এবং একজন ভাই ডক্টরেট করার জন্য দেশের বাইরে থাকতেন। একমাত্র আয়ে রোজগার করতেন তিনিই। এতবড়, এককথায় বিশাল একটা নংগোর খানা কেমন করে যে চলতো তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। আমার অনেক ক্লাশমেড আসতো তাদের বাড়ীর খানা খাইতো যাদেরকে হয়তো আমি আজ আর চিনতে পারবো বলে মনে হয় না।

একরাতে গান গাইতে সাবাই একত্রিত হয়েছে, তবে আমার ভাগেও গানের পালা আসলো, গাইলাম, তবে কখন যে ঘুমের রাজ্যে প্রবেশ করলাম তা আমি নিজেও জানতে পারি নাই মুয়াজিনের আজানের সুরে যখন ঘুম ভাঙলো তখন দেখলাম রাঙগা ভাইয়ের বিছানায় ঘুমিয়ে আছি। পৃথিবীতে মা-বাবার ভালবাসা এক আলাদা জিনিস তার সাথে কোন কিছুরই তুলনা করবো না। তবে তাদের ভাল বাসা আমার মনকে অন্য এক ধরনের পরশ দিয়েছে, যা সারা জীবন আমার মনকে আন্দোলিত করবে। আমি তাদের পরিবার থেকে শেখা আদর্শ জীবনের প্রতিটা ক্ষনে প্রয়োগ করতে পারায়, ছোট ভাই বোনদেরকে একটা ভাল পর্যায় নিয়ে আসার মতো সাহস পেয়েছি। দায়িত্ব কর্তব্য যে কি নিষ্ঠুর তা আমি ওদের কাছ থেকে শিক্ষা গ্রহন করেছি। ছোট ভাই-বোন আজ আমাকে তাদের সর্বউচ্চ মর্যদার আসনে বসায়ে রাখছে, যা আমি অন্য সবার কাছে শুনতে পাই। এই শিক্ষা আমি ঐ পরিবার থেকে পেয়েছি। তাই ঐ পরিবারের কাছে শুধুই ঋৃনি থাকবো। এ পরিবারের সেই সকল সু-চরিত্রের লোক গুলো আজ আর নেই, কিন্তু তাদের কাজ, ব্যবহার, ভালবাসা কোন কিছুই আমি ভুলতে পারছি না।

গত দু'মাস আগে ফেজবুকে একটি আটিকেল লিখেছিলাম সেই আটিকেল টি বরগুনার এলাহী চৌধুরী নামক একটি ছেলে পড়ার পড়ে সে আমাকে মোবাইল ফোনে কল করলো ধন্যবাদ জানাবার জন্য। তখন আমার সেই ফেলে আসা দিনগুলোর কথা মনে হতে লাগলো, যেখানে ঘুমিয়ে আছে আমার ছেলেবেলা, মন কেদেঁ উঠলো রাঙগা ভাই ও আমার প্রিয় সেই মানুষটি গাজী মো: আবদুর রব এর কথা, আমি তাকে সুধুই একটু কথা বলার জন্য খুজতে ছিলাম। এলাহি চৌধুরী ছাত্র মানুষ এবং সে তার বাবার দোকানের কাজে প্রায়ই সাহায্য করে থাকেন। সে তিন দিনের মাথায় আমাকে জি এম এ রব সাহেবের ফোন নম্বর টি দিল কিন্তু ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস, আমি যাকে সারপ্রাইজ দিব, আমার সাফল্যের সংবাদ জানাবো যে, আমার ছেলে এই বছর বিএসসি সিভিল-এ পড়াশুনা শেষ করেছে, তোর কি খবর কিন্তু সেই আমাকে সারপ্রাইজ দিয়া দিল, আমার এই খবর শুনার এক বছর আছে, ঠিক এই একই সময়ে কথা না বলার দেশে চলে গেছে, সেখানে বসে শুধুই কথা শুনা যায় কিন্তু বলা যায় না। তার এই অকাল প্রত্যাগমনের জন্য আমার হৃদয়ের কোণে একটা কালো মেঘ জমে, কিছু বৃস্টি হলো, হৃদয়কে কর্দমাক্ত করে কিছু সময়ের জন্য আমাকে বাকরুদ্ধ করে দিল। আমার বাবার মৃতুতে আমি কাঁদতে পারি নাই, কিন্তু তার মৃতুতে আমাকে বেশি কষ্ট দিয়েছে। বেশি বেদনা সৃষ্টি করেছে তাদের এই স্মৃতিগুলো, যে স্মৃতিগুলো সব সময় আমার আশে পাশে থাকে, বিরাজ করে।

মেট্রিক পরীক্ষার সবাই জন্ম তারিখ নিয়া জল্পনা-কল্পনা কে কখন চাকুরী পাবে কত দিন চাকুরী করতে পারবে, এই নিয়া যখন কথা হচ্ছে, তখন আমার জন্ম দিন নিয়া সবার চিন্তা এবং ঠিক ও করলো, তখন আমি হাসতে হাসতে বললাম আরে ভাই জন্ম দিন তো পালটায়ে দিলা, যদি মৃত্য তারিখটা একটু পালটাতে পারতা তবেই হতো, সবাই আমাকে জঞ্জাল বলে একটা উপহাসের হাসি ছাড়া আর কিছুই পেলাম না। আমি সুধুই ঝামেলা সৃষ্টি করি, আর ঝামেলার কথা্ বলে থাকি।কিন্তু আমার কথার অর্থ আমি একাই বুঝতাম অন্য কাউকে বুঝাতাম না আর বুঝাবার চেষ্টাও করতাম না।

ইসলামকে ছোট্ট বেলা থেকেই বুঝার মত মনও ছিল এবং শিক্ষাও পেয়ে ছিলাম। তার সাথে সাথে কিছু মারফতের শিক্ষা গ্রহন করার মত সময় ও সুযোগ এসেছে। মোটামুটি বেশ কিছু শুফি লোকের সাহচার্য্যে আসার সৌভাগ্যে ঘটেছে।

আমি আমার বড় ছেলের জন্য কণে খুজতে ছিলাম। পর্যায় ক্রমে জানতে পারলাম জি এম এ রব সাহেবের কন্যাই বিবাহ যোগ্য। বিএ (অনার্স) বাংলায় দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী। আমার ছাত্রী দুলুর কাছে বিবাহের কথা বলাম, সে এককথায় রাজি হয়ে গেছে, কারন আমি তার ভাইয়ের বন্ধু, এখন সে আগ্রহী হয়ে এই মেয়ের সাথে আমার ছেলের বিবাহ দিয়ে দিল।

আমি বিনা বাক্যে রাজি হয়ে গেলাম, কারন কিছুই না হোক কিছুটা হলেও বন্ধুর ঋৃণ যদি শোধ করার সুযোগ আসে, তাই সেই সুযোগটা আর হাত ছাড়া করতে চাইলাম না। যদিও প্রত্যেকটা পরিবারের কিছুটা গোপন রহস্য থাকে। কিন্তু আমি ঐসব কিছুই ভাবার মত সময় নেই নি, কারন আমার কোন দেনা পাওনা ছিল না। মেয়ে আনবো ছেলের জন্য কেন যৌতুন আনবো? আমি ছোট বেলা থেকেই যৌতুকের ঘোর বিরোধী ছিলাম। তবে একটি কথা ছিল যে, আমি গাজী বাড়ী থেকে মেয়েকে তুলে আনবো। তাতে আমার বেয়াইন সাহেবার একটু খরচ বেশী হয়েছে, যার জন্য আমি বর্তমানে মনে মনে কষ্ট পেতেছি। যদিও তার জন্য বর্তমানে আমাকে কিছুই করার নাই।

"বন্ধু আজ তুমি এই পৃথিবী নামক স্থানে নাই কিন্তু তোমার আমার সন্তানরা এক সুখের নীড় গড়ার সপ্নে বিভোর, সুধু তুমি দোয়া করো তারা যেন সুখি হয়। তাদের ঐ সুখের নীড়ের হয়তো কয়েক দিনের জন্য আমি আর স্ত্রী মেহমান মাত্র। পৃথিবীর মায়া কাটাতে তো হবেই কিন্তু সেটা একমাত্র আল্লাহুর হুকুমের অপেক্ষা। আমি তোমার জন্য দোয়া করি, তোমাকে আল্লাহু বেহেস্তের সর্ব উচ্চ মাকাম দান কুরুন। আমিন।।।"

সৃষ্টির এ কোন খেলা, সৃষ্টির কোন অমক রহস্য বুঝার কোন সধ্য কারো আছে কিনা আমার জানা নাই। সময়ের তালে আবার দেখা হলো তোমার সাথে কিন্তু তুমি চলে গেলে না ফেরার দেশে। তোমার কবরের পাশ্বে দাড়িয়ে সুধুই তোমার স্মৃতিগুলো মনে পড়ে, বাড়ীতে পা রাখার পর থেকে অনেক কথা শুনি অনেক গল্প শুনি, সুধু তুমি ছাড়া সব কিছুই ফিকে মনে হয়, আমাকে যে লোকটা বেশী বুঝতো, ভালবাসতো সে ঐ একজনই, যে আজ গাজী বাড়ীতে নেই। তোমার মুখের কথার ভাবধারা, হাসি, চাহনি, এ যেন তোমার রুপেই গড়া এক প্রতিরুপ।

আমি ছোট বেলা থেকেই পরের সম্পদ এর প্রতি কোন আগ্রহ ছিল না বা বর্তমানেও নাই আর ভবিষত্যে হতে পারে কিনা আমার জানা নাই। তবে আমার চরিত্রে প্রতি যতটা দখল আছে তাতে আমি বলতে পারি এরকম কোন ঘটনা ঘটবে না, আমি পরের সম্পদ নেব না। আল্লাহু তায়ালা আমাকে আমার সন্তানকে পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন, আমাদের জন্য পর্যাপ্ত পরিমান নেয়ামত দান করেছেন, আমিন।

আমি মহান আল্লাহুর কাছে যেসময় যে নেয়ামত পেতে চেয়েছি, তিন দান করেছেন। আমিন।

আমি আমার ছেলেও বৌমার জন্য দোয়া কমনা করছি।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.