নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সবার উপরে মানুষ সত্য, তার উপরে আল্লাহ! সঠিক বিচারের মালিক, সর্বশক্তিমান, মহা ক্ষমাশীল।

মোঃ ছিদ্দিকুর রহমান

আমি এক জন্ স্বাধীন চেতা মানুষ, ছাত্র জীবনে ছাত্র ইউনিয়নের সদস্য ছিলাম, কর্ম জীবনে একজন সরকারী কর্মচারী (অব:), বর্তমানে একটি বেসরকারী কোম্পানীতে হিসাব রক্ষন কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োজিত আছি।

মোঃ ছিদ্দিকুর রহমান › বিস্তারিত পোস্টঃ

নারিকেল-সমুদ্র তীরের ফসল।

২৭ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৩:২৬

বাংলাদেশে এমন লোক খুবই কম আছে যিনি নারিকেল এর সাথে পরিচিত নয়। সকালে নারিকেল মিঠাই দিয়া পান্তা ভাত যে শুধু আমার প্রিয় সে কথা আমি কিন্তু একবারও বলতে চাই না। তবে বাংলাদেশের দক্ষিনের সকল লোকেরই কিন্তু প্রিয় তা আমি হলোফ করে বলতে পারি। আর ভাদ্র আশ্বিন মাস একটু একটু বৃষ্টি হচ্ছে এমন সময় যদি খই আর নারিকেলের সাথে একটু মিঠাই হয় তবে আর কোন কথাই নাই। মনে হয় এমন কোন লোক আমি পাবো কিনা যে জিভে পানি না আসবে।

আমি যদি নারিকেলের পিঠার কথা বলি কখন সবাইর জিভে পানি আসবে তা বলার অপেক্ষা রাখে না, আমাদের এলাকায় অর্থাৎ সমুদ্র তীরের লোকগুলো নারিকেল দিয়ে ইলিশ রান্না হলে তা সবাই খুশিই হয় বটে।

আজ আমরা জানবো এই ফলের কিছু জরুরী কথা, যাতে প্রত্যেক পরিবার এর ব্যবহার চাষ ও রক্ষনাবেক্ষন সম্ভব হয় -

পুষ্টি মূল্য: ডাবের পানিতে ক্যালসিয়াম, ফসফরাস ও অন্যান্য পুষ্টি উপাদান রয়েছে। নারিকেলের শাঁসে স্নেহ জাতীয় পদার্থের পরিমান বেশি থাকে।

ভেষজ গুণ: এটি পিত্তনাশক ও কৃমিনাশক। ফলের মালা/আইচা পুড়িয়ে পাথরবাটি চাপা দিয়ে পাথরের গায়ে যে গাম/ কাই হয় তা দাদ রোগের জন্য মহৌষোধ।

ব্যবহার: পানীয় হিসেবে ব্যবহারের পাশাপাশি নারিকেল গাছের প্রতিটি অঙ্গই কোন না কোন কাজে লাগে।

উপযুক্ত জমি ও মাটি: নারিকেল গাছের জন্য নিকাশযুক্ত দোআঁশ থেকে পলি দোআঁশ মাটি উত্তম।

জাত পরিচিতি:

বারি নারিকেল-১: গাছ মধ্যম আকৃতির এবং সারা বছর ফল ধরে। পূর্ণ বয়ষ্ক প্রতিটি গাছে ফলের সংখ্যা ৬৫-৭৫ টি। এ জাতটি কান্ড ঝরা রোগ সহনশীল। তেলের পরিমান ৫৫-৬০%।

বারি নারিকেল-২: এটি সারা দেশে চাষযোগ্য একটি উচ্চ ফলনশীল জাত। পূর্ণ বয়ষ্ক প্রতিটি গাছে ফলের সংখ্যা ৬৫-৭৫ টি। ফলের আকৃতি প্রায় ডিম্বাকার। তেলের পরিমান ৫০-৫৫%। পাতায় দাগ রোগ সহনশীল। দেশের দক্ষিণাঞ্চলের জন্য এ জাত বেশি উপযোগী।

চারা তৈরি: নারিকেল হতে বীজ নারিকেল তৈরি করা হয়।

চারা রোপণ: মধ্য জ্যৈষ্ঠ থেকে মধ্য আশ্বিন মাস চারা রোপনের জন্য উপযুক্ত সময়। লাইন থেকে লাইন এবং গাছ থেকে গাছের দূরত্ব ৮ মিটার করে রাখা দরকার। প্রতি একরে ৬৩ টি চারা রোপণ করা যায়।

সার ব্যবস্থাপনা: রোপণের আগে চারিদিকে ১ মিটার করে গর্ত তৈরি করে নিয়ে প্রতি গর্তে টিএসপি সার ২৫০ গ্রাম, এমওপি সার ৪০০ গ্রাম ও গোবর ১০ কেজি প্রয়োগ করতে হয়। তবে পূর্ণবয়স্ক গাছের ক্ষেত্রে সারের পরিমান বাড়াতে হবে। প্রতি বছর ১০ কেজি পরিমান গোবর সার প্রয়োগ করতে হয়। সমস্ত সার দুইভাগে প্রয়োগ করতে হয়। এক ভাগ মধ্য বৈশাখ থেকে মধ্য আষাঢ় ও অন্যভাগ মধ্য ভাদ্র থেকে মধ্য কার্তিক মাসে প্রয়োগ করতে হয়। গাছের গোড়া থেকে অন্তত: ১.৭৫মি: দূরে বৃত্তাকার রিং করে সার প্রয়োগ করতে হয়। গাছে পটাশিয়াম ও বোরণের অভাব হলে ফল ঝরে পড়ে।

সেচ ও আগাছা ব্যবস্থাপনা: শুকনো মৌসুমে ১৫ দিন পরপর ২-৩ বার সেচ দেওয়া উত্তম। তবে বর্ষা মৌসুমে পানি নিকাশ করা দরকার।
ফসল তোলা: ফুল ফোটার পর ১১-১২ মাস পর ফল সংগ্রহের উপযুক্ত হয়। পাকা অবস্থায় নারকেলেরর রঙ সবুজ থেকে বাদামি/ খয়েরি রঙ ধারণ করে।

নারিকেল গাছের পরিচর্যা

নারিকেল বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান অর্থকরী ফসল। ইংরেজি নাম Coconut, বৈজ্ঞানিক নাম Cocos nucifera বহুবিধ ব্যবহারের জন্য নারিকেল গাছকে কল্পবৃক্ষ বা স্বর্গীয় গাছ বলা হয়। গাছের প্রতিটি অংশ মানুষের কাজে লাগে। বসতবাড়ি পুকুরপাড়, সড়ক-মহাসড়ক, স্কুল-কলেজ প্রাঙ্গণ, মাঠঘাট প্রভৃতি স্থানে এ গাছ লাগানো যায়। একটি গাছ থেকে ৬০ থেকে ৭০ বছর পর্যন্ত ফল পাওয়া যায়। ঔষধি গুণসম্পন্ন পানীয় হিসেবে ব্যবহারের পাশাপাশি নারিকেল দিয়ে বিভিন্ন রকম সুস্বাদু খাদ্য তৈরি হয় যেমন- পিঠা, মোয়া প্রভৃতি। তাই পানীয় ও খাদ্য হিসেবে বাজারে প্রচুর চাহিদা আছে। বাজারে প্রতিটি ডাবের বর্তমান মূল্য ৪০ থেকে ৮০ টাকা পর্যন্ত দেখা যায়। বাংলাদেশের আবহাওয়ায় সব জেলাতেই কমবেশি নারিকেল জন্মে। তবে উপকূলীয় জেলাগুলো বিশেষ করে খুলনা, বরিশাল, ফরিদপুর, পটুয়াখালী, নোয়াখালী, ভোলা, চট্টগ্রাম ও যশোর জেলায় নারিকেলের উৎপাদান বেশি। সঠিক পরিচর্যার মাধ্যমে এ ফলন আরও বাড়ান সম্ভব।
জাতের নাম ফলের ওজন পানির পরিমাণ শাঁসের ওজন তেলের পরিমাণ বালাই প্রতিরোধক
বারি নারিকলে-১ ২৭০-১৪০০ গ্রাম ২৭০-২৯০ মিলি ৩৭০-৩৯০ গ্রাম ৫৫-৬০% জাতটি কাণ্ড ঝরা রোগ সহনশীল
৬৫-৭৫ টি/বছর
বারি নারিকেল-২ ১.৫-১.৭ কেজি ৩৩০-৩৪৫ মিলি ৩৫০-৩৭০ গ্রাম ৫০-৫৫% পাতায় দাগ রোগ সহনশীল
৬৫-৭৫ টি/বছর
পুষ্টিগুণ : নারিকেলের শাঁসে প্রচুর পরিমাণে আমিষ, চর্বি, শর্করা ও ক্যালসিয়াম পাওয়া যায়। এছাড়া ডাবের পানিতে ক্যালসিয়াম, ফসফরাস ও অন্যান্য পুষ্টি উপাদান আছে, যা পুষ্টিকর ও সুস্বাদু। এর কিছু ঔষধি গুণও আছে যেমন- বিভিন্ন রকম পেটের সমস্যায় ডাবের পানি খুবই উপকারী। তাছাড়া এটি পিত্তনাশক ও কৃমিনাশক। ফলের মালা বা আইচা পুড়িয়ে পাথরবাটি চাপা দিয়ে পাথরের গায়ে যে গাম বা কাই হয় তা দাদ রোগের জন্য মহৌষধি হিসেবে কাজ করে। শ্রীলঙ্কার নারিকেল তেল ভোজ্যতেল হিসেবে ব্যবহার করা হয়।

জাত : নারিকেলের অনেকগুলো স্থানীয় ও উচ্চফলনশীল জাত আছে। এর মধ্যে প্রধান উচ্চফলনশীল জাতগুলো হলো- বারি নারিকেল-১ ও বারি নারিকেল-২। স্থানীয় জাতের মধ্যে আছে টিপিকা সবুজ, টিপিকা বাদামি ও দুধে প্রভৃতি। এর ফলন তুলনামূলক অনেক কম।

পরিচর্যা : নারিকেল গাছের কিছু নিয়মিত পরিচর্যা করলে গাছের পুষ্টি উপাদানে ভারসাম্য আসে, পোকা ও রোগবালাই কম হয় এবং ফলন বৃদ্ধি পায়। এর মধ্যে আছে নিয়মিত নারিকেল গাছ বাছাই বা ঝোড়া, সুষম সার ও সেচ প্রয়োগ, ইঁদুর দমন এবং সমন্বিত বালাইব্যবস্থাপনা অনুসরণ করা। সুষম সার ও সেচ প্রয়োগ : গাছের গোড়ায় মাটিতে পানি ও খাবার কম থাকলে কচি ডাব ঝরে পড়ে। বিশেষ করে পটাশিয়ামের অভাবে কচি ডাব বেশি ঝরে। এক্ষেত্রে মাটিতে পটাশিয়াম ও নাইট্রোজেন জাতীয় সার ব্যবহার করতে হবে। নারিকেল গাছের গোড়ায় চারদিকে ১.৮ মিটার দূরে বৃত্তাকার গর্ত করে ইউরিয়া ৪ কেজি, এমপি ৬ কেজি, টিএসপি ১ কেজি এবং এর সাথে ২ কেজি লবণ দেয়া উচিত তবে লবণাক্ত এলাকায় লবণের প্রয়োজন হয় না। সার দেয়ার পর সেচ দিতে হবে।

নারিকেল গাছ বাছাই : ঝুনা নারিকেল বা ডাব সংগ্রহের সময় গাছের মাথা পরিষ্কার করে দেয়া ভালো। সাথে সাথে মরা ও হলুদ পাতা ফেলে দিতে হবে। এতে গাছের পুষ্টি উপাদানে ভারসাম্য আসে, পোকা ও রোগবালাই কম হয় এবং ফলন বৃদ্ধি পায়।

সমন্বিত বালাই ব্যবস্থাপনা : নারিকেল গাছের ও ফলের প্রধান ক্ষতিকর বালাই হলো পোকামাকড়, রোগবালাই ও ইঁদুর। পোকামাকড়ের মধ্যে আছে প্রধানত গণ্ডার পোকা, লাল কেড়ি পোকা ও উঁইপোকা। গণ্ডার পোকা ও লাল কেড়ি পোকা গাছের মাথায় আক্রমণ করে কচি অংশে ছিদ্র করে ভেতরের নরম অংশ খেতে থাকে। ফলে গাছের মাথায় অসংখ্য ছিদ্র দেখা যায়। আক্রমণ বেশি হলে গাছের মাথা শুকিয়ে যায় ও গাছ মারা যায়। লাল কেড়ি পোকার ছিদ্রের মুখে বাদামি চটচটে গদের আঠার মতো রস গড়িয়ে পড়ে ও চিবানো কাঠের গুঁড়া দেখা যায়। কাণ্ডের গায়ে কান পাতলে কঁড় কঁড় শব্দ শোনা যায়। সামান্য বাতাসে গাছ ভেঙে পড়ে। বছরের যে কোনো সময় এসব পোকা আক্রমণ করতে পারে। তবে উঁইপোকা চারার জন্য লাগানো নারিকেল ও কচি গাছকে বেশি আক্রমণ করে। অনেক সময় নারিকেল গাছের কাণ্ডে ঢিবি তৈরি করে কাণ্ডের যে অংশে ঢিবি করে সেই জায়গা খেয়ে ফেলে ও সেই অংশ দুর্বল হয়ে গাছ ভেঙে যায়।

দমনের উপায় : বাগান সব সময় পরিষ্কার রাখতে হবে বিশেষ করে গোবরের গাদা ও ময়লার স্তূপ পরিষ্কার করে সেখানে ৬০ সেন্টিমিটার (২৪ ইঞ্চি বা ১ ফুট) গভীর করে কুপিয়ে ফুরাডান ও জি ১০ থেকে ১২ গ্রাম দিলে গণ্ডার পোকা বা লাল কেড়ি পোকা দমন হয়। আক্রান্ত গাছের ছিদ্রে শিক ঢুকিয়ে বা খুচিয়ে পোকা মারতে হবে। ছিদ্রে আলকাতরা বা তারপিন ঢেলে কাদা দিয়ে ছিদ্র মুখ বন্ধ করে দিলে ভেতরের পোকা মারা যায়। কাজ না হলে ২ মিলিলিটার (৪ ফোঁটা) ডাইমক্রেন ১০০ ইসি ১ লিটার পানিতে মিশিয়ে বা ৫.৭ সিসি (১১ ফোঁটা) বাইড্রিন ৮.৫ ডব্লিউপি ৬ লিটার পানির সাথে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে। উঁইপোকার জন্য কড়া রোদ উঠলে নারিকেলের বীজতলার মাটি উল্টেপাল্টে দিতে হবে বা নারিকেল বাগানে উঁইয়ের আক্রমণ দেখা দিলে জমি প্লাবিত করে রাখলে উঁইপোকা মারা যায়। অথবা নারিকেলের বীজতলায় লাগানোর সময় ও মূল জমিতে নারিকেলের চারা লাগানোর আগে ১ শতাংশ জমির মাটির সাথে ৪ গ্রাম বাইফেনথ্রিন ২০ ডব্লিউপি বা ১.৫ গ্রাম সাইরেন ৫০ ডব্লিউপি ভালোভাবে মিশিয়ে দিলে উঁইপোকার আক্রমণ কম হয়।

রোগ নিরাময় : নারিকেলের প্রধান রোগের মধ্যে আছে কুঁড়ি পচা, কাণ্ডের রস ঝরা ও পাতায় দাগ পড়া। কুঁড়ি পচা রোগ হলে গাছের মাথার সবচেয়ে কচিপাতাগুলো শুকিয়ে যায়। পাতা প্রথমে ধূসর বাদামি ও পরে গাঢ় বাদামি হয়ে গোড়ার দিকে ভেঙে পড়ে। আক্রান্ত জায়গা থেকে পচা দুর্গন্ধ বের হয় এবং জায়গাটি আঠার মতো দগদগে দেখায়। গাছের আগার একেবারে মাঝের নরম কুঁড়ি পাতাটি পচে যায়, অবশেষে গাছ মরে যায়। একইভাবে নারিকেল, কাঁদি, কুঁড়ি প্রভৃতির গোড়া আক্রান্ত হয় ও ভেঙে পড়ে। কাণ্ডের রস ঝরা রোগে গাছের কা- লম্বালম্বিভাবে ফেটে যায়। ওই ফাটা জায়গা দিয়ে লালচে বাদামি রঙের রস ঝরতে থাকে। রস ঝরার কিছু দিনের মধ্যে আবার তা শুকিয়ে কালো হয়ে যায়। এই ফাটা জায়গা আস্তে আস্তে পচতে শুরু করে। এছাড়া পাতার দাগ পড়া রোগে নারিকেলের পাতায় বিভিন্ন আকারের ধূসর-সাদা দাগ পড়ে। কয়েকটি দাগ মিলে বড় দাগ সৃষ্টি হয়। আক্রমণ বেশি হলে পাতা শুকিয়ে যায়। কুঁড়ি পচা বা পাতার দাগ দেখা দিলে গাছের মাথা পরিষ্কার করে মাথায় বোর্দো মিশ্রণ ছিটাতে হবে অথবা ৪০ গ্রাম ডায়থেন এম ৪৫ বা কপার অক্সিক্লোরাইড (কুপ্রাভিট ৫০ ডব্লিউপি) ১২ লিটার পানির সাথে মিশিয়ে স্প্রে করলে সুফল পাওয়া যায়। কান্ডের রস ঝরলে ফাটা ও পচা অংশ পরিষ্কার করে বোর্দো মিশ্রণ ১০ থেকে ১৫ দিন পর পর লাগাতে হবে। মিশ্রণের সাথে যে কোনো কীটনাশক মিশিয়ে ফাটা অংশে লাগালে ভালো হয়। রস ঝরা বন্ধ হলে ফাটা আলকাতরা লাগিয়ে দিতে হবে।

ইঁদুরের আক্রমণ : প্রতি বছর ইঁদুরের আক্রমণে আমাদের দেশে প্রচুর নারিকেল নষ্ট হয়। নারিকেল গাছ যদি ঘন করে লাগানো হয় এবং বাগানের যত্ন না নেয়া হয় তবে গাছে ইঁদুরের আক্রমণ বেশি দেখা যায়। ইঁদুর কচি নারিকেল (কড়া) ছিদ্র করে ফেলে। এর ফলে কড়া বড় হতে পারে না। ইঁদুরের আক্রমণ থেকে বাঁচতে গাছের গোড়া থেকে তিন ফুট ওপরে কাণ্ডের চারপাশে ৫০ সেমি টিনের পাত দিলে ইঁদুর মাটি থেকে গাছের ওপর উঠতে পারে না। এছাড়া রেকুমিন বা জিংক ফসফাইড বিষটোপ দিয়ে ইঁদুর মার যায়।

ফল সংগ্রহ : ফুল ফোটার ১২ থেকে ১৩ মাস পর নারিকেল সংগ্রহ করা যায়। গাছে উঠে ঝুনা নারিকেলের কাঁদি কেটে রশিতে বেঁধে নিচে নামাতে হবে। আমাদের দেশে অধিকাংশ সময় গাছের মাথা থেকে নারিকেল নিচে ফেলে দেয়া হয়। এভাবে পাড়লে নারিকেল ফেটে নষ্ট হয়। ডাব পাড়তে হলে ৪ থেকে ৫ মাস বয়স্ক সবুজ রঙের ডাবই পাড়া উচিত।

ফলন : বাংলাদেশে নারিকেলের ফলন অত্যন্ত কম। বারি নারিকেল-১ এবং বারি নারিকেল-২ এর পূর্ণবয়স্ক প্রতিটি গাছে ফলের সংখ্যা ৬৫ থেকে ৭৫টি। প্রতি বিঘা জমিতে বছরে গড়ে প্রায় ৪০০ কেজি নারিকেলের ফলন হয়। বরিশাল, খুলনা, পটুয়াখালী প্রভৃতি এলাকায় গাছপ্রতি বছরে গড়ে ৬০টি ফল পাওয়া গেলেও উত্তরবঙ্গে মাত্র গড়ে ৭-১০টি ফল পাওয়া যায়। এজন্যই বাংলাদেশে গড় ফলন মাত্র গাছপ্রতি বছরে ১৬ থেকে ১৭টি। তবে সঠিক পরিচর্যার মাধ্যমে ফলন বৃদ্ধি করা সম্ভব। এ ছাড়া যে কোনো সমস্যার পরামর্শ বা তথ্যের জন্য কৃষি সম্প্রসারণ কর্মীর সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

নারিকেল বাংলাদেশের একটি অন্যতম অর্থকরী ফসল। দেশের সর্বত্র নারিকেল জন্মালেও বরিশাল, খুলনা, পটুয়াখালী, ভোলা, নোয়াখালী, চট্টগ্রাম, ফরিদপুর, নাটোর, রাজশাহী ও যশোর এলাকায় অধিক পরিমাণে নারিকেল উৎপন্ন হয়। খাদ্য ও পানীয় থেকে শুরু করে গৃহনির্মাণ সামগ্রী নারিকেল গাছ থেকে পাওয়া যায়। বসতবাড়ি, পুকুরপাড়, রাস্তাঘাট, স্কুল-কলেজ, অফিস-আদালত প্রভৃতির আশপাশে এ গাছ লাগিয়ে বাড়তি আয়ের ব্যবস্থা করা যায়।

নারিকেল রোপণের কলাকৌশল

উৎপাদন : বাংলাদেশে প্রায় ৩৫ হাজার হেক্টর জমিতে নারিকেলের চাষ হয় এবং বছরে নারিকেল উৎপাদন হয় প্রায় ১ লাখ মেট্রিক টন।

ঔষধিগুণ : ডাবের পানিতে ক্যালসিয়াম, ফসফরাস ও অন্যান্য পুষ্টি উপাদান রয়েছে। ঘন ঘন পাতলা পায়খানা ও বমির ফলে দেহের যে পরিমাণ পানির অভাব ঘটে, তা পূরণে ডাবের পানি খুবই কার্যকরী। এটি পিত্তনাশক ও কৃমিনাশক। নারিকেলের শাঁস দিয়ে নানা রকম পিঠা, পুলি, নাড়ু ও তক্তি তৈরি করা হয়। পৃথিবীর অনেক দেশে ভোজ্যতেল হিসেবে নারিকেল তেল ব্যবহার করা হয়। চুলের যত্নে নারিকেল তেলের কোনো জুড়ি নেই। নারিকেল তেল স্বাস্থ্যের জন্যও উপকারী। এটি মানুষকে বুড়িয়ে যাওয়ার গতি কমিয়ে দেয় এবং শরীরের কোষকে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার হাত থেকে রক্ষা করে। নারিকেল তেলের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হৃদরোগের সম্ভাবনা দূর করে। নারিকেল তেল শুধু ত্বকের সজীবতাই ধরে রাখে না, এটি ত্বকের আর্দ্রতা রক্ষায় অত্যন্ত কার্যকর।

জাত : নারিকেলের অনেক স্থানীয় ও উচ্চফলনশীল জাত আছে। এসব জাতের মধ্যে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট উদ্ভাবিত বারি নারিকলে-১ ও বারি নারিকেল-২ উল্লেখযোগ্য। এছাড়া স্থানীয় জাতের মধ্যে রয়েছে- টিপিকা সবুজ, টিপিকা বাদামি ও দুধে প্রভৃতি। এসব জাতের ফলন তুলনামূলকভাবে অনেক কম।

বারি নারিকেল-১ : এ গাছ মধ্যম আকৃতির এবং সারা বছর ফল ধরে। পূর্ণবয়স্ক প্রতিটি গাছে ফলের সংখ্যা প্রায় ৬০ থেকে ৭৫টি। ফল ডিম্বাকার ও প্রতিটি ফলের ওজন প্রায় ১ হাজার ৪০০ গ্রাম ও খোসার ওজন ৪০০ থেকে ৫০০ গ্রাম। পানির পরিমাণ ২৭০ থেকে ২৯০ মিলি ও শাঁসের ওজন ৩৭০ থেকে ৩৯০ গ্রাম। তেলের পরিমাণ ৫৫ থেকে ৬০ শতাংশ। এ জাতটি কা-ের রস ঝরা রোগ সহনশীল।

বারি নারিকেল-২ : নারিকেলের এ জাতটি উচ্চফলনশীল এবং সারা বছরই গাছে ফল ধরে। পূর্ণবয়স্ক গাছপ্রতি ফলের সংখ্যা ৬৫ থেকে ৭৫টি। এ ফলের আকৃতি প্রায় ডিম্বাকার। প্রতিটি ফলের ওজন ১.৫ থেকে ১.৭ কেজি ও পানির পরিমাণ ৩৩০ থেকে ৩৪৫ মিলি। ফলের শাঁসের পুরুত্ব ১০ থেকে ১২ মিলি। এতে তেলের পরিমাণ ৫০ থেকে ৫৫ শতাংশ। এ জাতের গাছটি পাতার দাগ সহনশীল। এ জাতটি বাংলাদেশের সর্বত্রই চাষ উপযোগী।

আবহাওয়া : উষ্ণ ও আর্দ্র আবহাওয়ায় নারিকেল গাছ ভালো জন্মে। নারিকেল চাষের জন্য বছরে ১০০ থেকে ৩০০ সেন্টিমিটার সুষম বৃষ্টিপাতের দরকার। বার্ষিক গড় তাপমাত্রা প্রয়োজন ২৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সমুদ্র উপকূলে দিন ও রাত্রির তারতম্য কম থাকায় এবং আবহাওয়া উষ্ণ ও আর্দ্র থাকায় নারিকেলের উৎপাদন ভালো হয়।

মাটি : নারিকেল গাছের আবাদের জন্য সুনিকাশিত দোঅাঁশ থেকে পলি দোঅাঁশ মাটি উত্তম।

রোপণ সময় : মধ্য জ্যৈষ্ঠ থেকে মধ্য আশ্বিন মাস হলো নারিকেলের চারা রোপণের উপযুক্ত সময়।

রোপণ দূরত্ব : পুকুর পাড়ে কিংবা রাস্তার ধারে এক সারি গাছ রোপণের জন্য লম্বা জাতের ক্ষেত্রে চারা থেকে চারার দূরত্ব ৬ মিটার দিতে হবে। বর্গকার বা ত্রিকোণাকার পদ্ধতিতে চাষ করার ক্ষেত্রে চারা থেকে চারার এবং সারি থেকে সারির দূরত্ব ৮ মিটার দিতে হবে। খাটো-বেঁটে জাতের বেলায় চারা ৫ থেকে ৬ মিটার দূরত্বে রোপণ করতে হবে।

গর্ত তৈরি : নারিকেলের চারা রোপণের জন্য এক মিটার দৈর্ঘ্য, এক মিটার প্রস্থ ও এক মিটার গভীর করে গর্ত তৈরি করতে হবে।

সারের পরিমাণ : নারিকেলের আবাদের জন্য গর্তপ্রতি ১০ কেজি গোবর, ২৫০ গ্রাম টিএসপি এবং ৪০০ গ্রাম এমওপি সার চারা রোপণের ১০ থেকে ১৫ দিন আগে গর্তের মাটির সঙ্গে ভালোভাবে মিশিয়ে দিতে হবে। একটি ফলন্ত গাছের জন্য বছরে দুইবার বর্ষার আগে এবং পরে ১.৫ কেজি ইউরিয়া, ১.০০ কেজি টিএসপি, ১.৭৫ কেজি এমওপি, ৫০০ গ্রাম জিপসাম, ২০০ গ্রাম জিঙ্ক সালফেট ও ১০০ গ্রাম বোরন প্রয়োগ করতে হবে।

চারা রোপণ : গর্তের মাঝখানে চারা রোপণ করতে হবে এবং প্রয়োজনে খুঁটি ও বেড়ার ব্যবস্থা করতে হবে।

সেচ প্রয়োগ : শুষ্ক মৌসুমে ১৫ দিন পরপর ২ থেকে ৩ বার সেচ দেয়া উচিত। তবে বর্ষা মৌসুমে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করা দরকার।

পোকা দমন : বাগান সব সময় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। বিশেষ করে গোবরের গাদা ও ময়লার স্তূপ পরিষ্কার করে সেখানে ৬০ সেন্টিমিটার গভীর করে কুপিয়ে ফুরাডান ৫জি ১০ থেকে ১৫ গ্রাম দিলে গন্ডার পোকা বা লাল কেরি পোকা দমন হয়। আক্রান্ত গাছের ছিদ্রে শিক ঢুকিয়ে বা খুঁচিয়ে পোকা মারতে হবে। ছিদ্রে আলকাতরা বা তারপিন ঢেলে কাদা দিয়ে ছিদ্রের মুখ বন্ধ করে দিলে ভেতরের পোকা মারা যায়। বীজতলায় বা গাছে উইপোকার আক্রমণ দেখা দিলে প্রতি লিটার পানিতে তিন মিলি ডারসবান ২০ ইসি বা পাইরিফস ৪০ ইসি মিশিয়ে আক্রান্ত বীজতলা বা গাছে স্প্রে কতে হবে। এছাড়া এক ধরনের সাদা মাকড়ের আক্রমণের কারণে নারিকেলের ফলন ব্যাপক হ্রাস পায়। মাকড়ের আক্রমণে কচি ডাবের বোটার কাছে বা খোলের ওপর বাদামি দাগ পড়ে এবং নারিকেল বড় হওয়ার আগে ঝরে পড়ে।

মাকড় দমন : নারিকেল গাছে বোরনসহ সুষম মাত্রায় সার দিতে হবে। আক্রান্ত ফল তাড়াতাড়ি পেড়ে মাটিতে পুঁতে ফেলতে হবে। প্রতি বছর নিয়মিতভাবে গাছ পরিষ্কার করতে হবে। গাছের মাথা পরিষ্কার করার পর অনুমোদিত মাত্রায় মাকড়নাশক ফুট পাম্পের মাধ্যমে কাঁদিসংলগ্ন অংশে স্প্রে করতে হবে।

রোগবালাই : নারিকেলের রোগবালাইয়ের মধ্যে কুঁড়িপচা, কান্ডের রস ঝরা ও পাতার দাগ অন্যতম।

কুঁড়ি পচা রোগ হলে গাছের মাথার সবচেয়ে কচি পাতাগুলো শুকিয়ে যায়। আক্রান্ত কুঁড়ি পাতাটি পচে যায়, অবশেষে গাছ মরে যায়। কান্ডে রস ঝরা রোগে গাছের কান্ড লম্বালম্বিভাবে ফেটে যায়। ওই ফাটা জায়গা দিয়ে লালচে বাদামি রঙের রস ঝরতে থাকে। এ ফাটা জায়গা আস্তে আস্তে পচতে শুরু করে। এছাড়া পাতার দাগ পড়া রোগে নারিকেলের পাতায় বিভিন্ন আকারের ধূসর সাদা দাগ পড়ে। আক্রমণ বেশি হলে পাতা শুকিয়ে যায়।

প্রতিকার : কুঁড়ি পচা বা পাতার দাগ দেখা দিলে গাছের মাথা পরিষ্কার করে বর্দো মিশ্রণ ছিটাতে হবে অথবা ৪০ গ্রাম ডাইথেন এম ৪৫ বা কপার অক্সিক্লারাইড ১২ লিটার পানির সঙ্গে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে। কান্ডের রস ঝরলে ফাটা ও পচা অংশ পরিষ্কার করে বোর্দো মিশ্রণ ১০ থেকে ১৫ দিন পর পর লাগাতে হবে। মিশ্রণের সঙ্গে যে কোনো কীটনাশক মিশিয়ে ফাটা অংশে আলকাতরা লাগিয়ে দিতে হবে।

ফল সংগ্রহ : ফুল ফোটার ১১ থেকে ১২ মাস পর ফল সংগ্রহের উপযুক্ত হয় এবং ডাবের জন্য ৪ থেকে ৫ মাস বয়সের সবুজ ফল পাড়া উচিত।

ফলন : বাংলাদেশে নারিকেলের ফলন খুবই কম। বিঘাপ্রতি গড়ে মাত্র ৪০০ কেজি। উন্নত কলাকৌশল ও উচ্চফলনশীল জাতের চারা রোপণের মাধ্যমে এ ফলন বহুলাংশে বাড়ানো সম্ভব

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ২৭ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৪:১১

শাহাদাত হোসেন বলেছেন: চমৎকার পোস্ট ।++

০৪ ঠা মার্চ, ২০১৬ দুপুর ১২:০১

মোঃ ছিদ্দিকুর রহমান বলেছেন: আপনাকে ধন্যবাদৎ।

২| ২৭ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৫:১৪

রেজওয়ানা আলী তনিমা বলেছেন: তথ্যপূর্ণ পোস্ট। অনেক ভালোলাগা ও ধন্যবাদ।

০৪ ঠা মার্চ, ২০১৬ দুপুর ১২:০৪

মোঃ ছিদ্দিকুর রহমান বলেছেন: আমি আমার মাতৃভূমিকে ভালবাসি, তাই মা ও মাটির কথা লিখলাম, আপনাকে দন্যবাদ

৩| ২৮ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ দুপুর ১২:১৭

আরণ্যক রাখাল বলেছেন: চমৎকার একটা পোস্ট।
নারিকেলের পানি দেয়ে পান্তাও খাওয়া যায় নাকি? খাইনি তো। একবার টেস্ট করে দেখতে হবে।
সব হাইব্রিড জাতের ফর্দ দিলেন। দেশি কয়েকটা নারিকেলের জাতের নাম দিতে পারবেন? কৌতূহল জাগাল ব্যপারটা।

০৪ ঠা মার্চ, ২০১৬ দুপুর ১২:০৭

মোঃ ছিদ্দিকুর রহমান বলেছেন: নারিকেল যে কি জিনিস তা একমাত্র দক্ষিন বাংলার লোক গুলোই একটু বেশী বুঝে বলে আমার মনে হয়। আপনাকে ধন্যবাদ

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.