নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সবার উপরে মানুষ সত্য, তার উপরে আল্লাহ! সঠিক বিচারের মালিক, সর্বশক্তিমান, মহা ক্ষমাশীল।

মোঃ ছিদ্দিকুর রহমান

আমি এক জন্ স্বাধীন চেতা মানুষ, ছাত্র জীবনে ছাত্র ইউনিয়নের সদস্য ছিলাম, কর্ম জীবনে একজন সরকারী কর্মচারী (অব:), বর্তমানে একটি বেসরকারী কোম্পানীতে হিসাব রক্ষন কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োজিত আছি।

মোঃ ছিদ্দিকুর রহমান › বিস্তারিত পোস্টঃ

গানের কথাগুলো হৃদয় স্পর্শ করে।।

০৩ রা জুলাই, ২০১৬ বিকাল ৫:৫৬

অনেক দিন পর অফিস ছুটি তাই স্ত্রীর সাথে গল্প করছিলাম, এমন সময় দীপ্ত চ্যানেলে একটি সাদা কালো সিনেমা দেখলাম। গানের কথা গুলো আমার হৃদয়ে সরাসরি আঘাত হানলো-

তুমি কি দেখেছ কভু , জীবনের পরাজয়
দুঃখের দহনে করুন রোধনে, তিলে তিলে তার ক্ষয়।।
তিলে তিলে তার ক্ষয়।।

আমি তো দেখেছি কত যে স্বপ্ন মুকুলেই ঝড়ে যায়,
শুকনো পাতার মরমড়ে বাজে কত সুর বেদনায়,
আকাশে বাতাসে নিষ্ফল আশা হাহাকার হয়ে রয়।।

প্রতি দিন কত খবর আসে যে কাগজের পাতা ভরে
জীবন পাতার অনেক খবর রয়ে যায় অগোচরে
কেউ তো জানেনা প্রাণের আকুতি বারে বারে সে কি চায়
স্বার্থে টানে প্রিয়জন কেন দুরে সড়ে চলে যায়।
ধরনির বুকে পাশা-পাশি তবু কেউ বুঝি কারো নয়।।

দুঃখের দহনে করুন রোধনে, তিলে তিলে তার ক্ষয়।।

অনেক আগের সিনেমা, একবার সিনেমা হলে দেখে ছিলম, আমি অনেক কেঁদে ছিলাম, যদিও এই সিনেমা টি দেখার পর আর লেখা পড়া করতে পারিনি, তবু আপনজনকে অক্টোপাসের মত জড়িয়ে ধরে রাখতে পেরে ছিলাম। আমরা সবাই গান শুনি কিন্তু এর কথা গুলো যদি একবার বিচার বিশ্লেষন করি তবে নিজেকে সঠিক যায়গায় দাড় করানোটা বেশী একটা কষ্ট হবে না। শুধু একজন লোকের আত্মত্যাগই দিতে পারে শান্তি একটি পরিবারের। আমি দেখেছি, একটি লোকের জন্য একটি পরিবার তার সুখ, শান্তি চির তরে হারিয়ে যায়। আমি তা নিজের জীবন দিয়ে প্রমান পেয়েছি।

আমি আমার পরিবারের সুখ দেখেছি, সমৃদ্ধি দেখেছি, আমাদের গোলায় ভর্তি ধান ছিল, গোয়ালে গরু ছিল, কাজের লোক ছিল, কোন কিছুরই অভাব ছিল না। চাওয়ার আগেই পেয়ে গেছি। আমাকে দেখাশুনা করার জন্য একটি মেয়েকে আনা হয়েছিল, সেই মেয়েটা ডায়রিয়া আক্রান্ত হলো, সে সময় চিকিৎসার তেমন কোন ভাল ব্যবস্থা ছিল না। গ্রামের ডাক্তার ডাকা হলো তিনি কিছুই করতে পারলো না, মেয়েটি মারা গেল এবং আমাদের প্রতিবেশী দুষ্ট লোক গুলো মামলা করে, আমাদেরকে অনেক কষ্ট দিল, বাবার অনেক টাকা খরচ হয়েছে কিন্তু মেয়েটি বাবা-মা কিছুই করতে চায়নি। সে বৎসর ডায়রিয়ার প্রকোপে প্রচুর লোক মারা গিয়াছিল।

আমার বাবা খুবই অসুস্থ্য ছিলেন, তার মধ্যে সংসার টি মোটামুটি বড় ছিল, গ্রামো রাজনীতি ও সততার জন্য অনেক শত্রু তৈরি হয়ে ছিল। কিছু জমি জমা বিত্রুয় করে, আমাদের লেখা পড়া, বাবার চিকিৎসা, তার উপর প্রায়ই আমাদের এলাকায় বন্যা দেখা দিত। প্রায় নিরুপায় হয়ে এসেছি। আমাদের নানা ভাই প্রায়ই আমাদেরকে সাহায্য করে থাকতো। তাই তেমন কষ্ট হতো না বলেই চলে, ইতিমধ্যে নানাভাই মারা গেলেন, মামারা অতোটা ভাল জানতেন না্।

বড় দুই ভাইকে বিয়ে দিল, কিছু দিন পরে তার তাদের স্ত্রীদের কে নিয়ে আলাদা হয়ে গেল, এখন সংসারে আয় করার আর কেউ থকলো না। ঘরে খাবার কিছুই অবশিষ্ট থাকলো না। সবে মাত্র এস এস সি পরীক্ষা দিয়েছি মাত্র। রাতের অন্ধকারে ছুটলাম কাজের সন্ধানে, গলাচিপা নামক একটি জেলে নৌকাতে কাজ নিলাম, পায়সার পরিমানটা একটু বেশীই দিবে, কথা ছিল প্রতি সপ্তাহে আমাকে একদিন ছুটি দিবে। ছুটির দিন বেতনের টাকা নিয়া বাড়িতে দিয়া আবার নৌকাতে ফিরে গেলাম। এমনি করে তিন মাস অতিবাহিত হলো, পরীক্ষার ফল বাহির হলো ভাল রেজাল্ট করলাম কিন্ত কলেজে ভর্তি হতে হবে, টাকা নাই । বড় ভাই ও মেঝ ভা্ইর কাছে টাকা চাইলাম তারা আমার সাথে যথেষ্ট খারাপ আচারন করলো এমন কি আমাকে পিটাতেও দিধা করলো না।

কষ্টে মন ভরে গেল রাতের অন্ধকারে বাড়ি থেকে বাহির হলাম এবং ছোট বোনের বাড়ীতে গেলাম, ওকে বুঝতে দিলাম না যে আমি বাড়ী থেকে পালিয়ে এসেছি, ভোর হতে না হতেই আবার রওয়ানা দিলাম, অজানার উদ্যেশে, গন্তব্যহীন যাত্রা। বরিশাল আসলাম, একজন রিক্সাওয়ালা আমাকে পথ দেখালেন, আমি মনে করি ঐ রিক্সাওয়ালা আমার জীবনের পথ প্রদর্শক হিসাবে কাজ করেছে। সে তার কাছে থাককে দিল এবং খাইতে দিল, কাজ শিখতে সাহায্য করলো। আমি আমার এই ছোট্ট জীবনে, তার কাছে চির ঋৃণী। বাস্তবতার সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে তিনি মোটেও কৃপণ্য করেননি। মা-বাবাকে কি ভাবে ভালবাসতে হয় আমি তার কাছে শিখেছি।

তাই এই গানটি আমি যত বার শুনি ততবারই আমার অতিত কে মনে করিয়ে দেয়।

আমি আমার বাবাকে কখনো কষ্ট পাইতে দেই নি, না আমার ছোট্ট ভাইবোনকে । জরিয়ে রেখেছি অক্টোপাসের মতো, এটা আল্লাহুর মেহেরবানী ছাড়া আর কিছুই না। তাই আমি আমার আল্লাহুর কাছে হাজারো শোকরানা আদায় করছি। আজ আমি জীবনের প্রায় শেষ প্রান্তে এসেছি। কিন্তু অতীতকে ভূলতে পারি নাই। আজ আমার সবই আছে, কিন্তু আমার বাবা নাই, তাই নিজেকে বড়ই অসহায় এবং এতিম মনে হয়। আমার ছোট্ট ভাই বোনকে আজও বুঝতে দেই না, যে আমরা সবাই বুড়ো হয়ে গেছি। মাকে জড়াইয়া আজও একটি পরিবার হিসাবে বসবাস করিয়া আসিতেছি।

আমি এই কাহিনীর পাঠকের কাছে দোয়া চাই, যত দিন বেঁচে থাকবো যেন এমনি করে বেঁচে থাকতে পারি।
(নিজ জীবনের কাহিনী)

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ১৫ ই নভেম্বর, ২০১৬ সকাল ৮:৫৭

এস,এম,মনিরুজ্জামান মিন্টু বলেছেন: আপনার লেখা পড়ে চোখে ভিজে গেল। জীবন থেকে নেয়া এসব গল্প বাস্তব জীবনে কাকতালীয় ভাবে কিছু কিছু মানুষের সাথে মিলে যায়। মহান আল্লাহ রাব্বুল আ’লামীন সব সময় আপনার সহায় থাকুন। ভালো থাকুন।

১৬ ই নভেম্বর, ২০১৬ বিকাল ৪:৪৭

মোঃ ছিদ্দিকুর রহমান বলেছেন: আমি আপনাকে কষ্ট দিতে চাই নি। আমি চেয়ে ছিলাম নিজের জীবনের কষ্টকে সবার সাথে শেয়ার করা জন্য । আমি আপনার কাছে বিনীত ভাবে ক্ষমা চাচ্ছি। ভাই আমার লেখা যদি আপনাকে কষ্ট দিয়ে থাকে, সত্যই আমি আপনার কাছে অপরাধী হলাম। নিজেকে বিলিয়ে দেওয়ার মধ্য দিযে অনেক আনন্দ পাওয়া যায়। আমি কখনই কাউকেও দোষী কাতারে দাড় করাই না। কষ্ট যেটুকু সুধুই আমার আর আনন্দ যেগুলো সবাই ভাগ করে দিলাম। আপনীও ভাল থাকবেন, দোয়া করি, আল্লাহু আপনাকে ভাল রাখুন। আমিন।।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.