নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সবার উপরে মানুষ সত্য, তার উপরে আল্লাহ! সঠিক বিচারের মালিক, সর্বশক্তিমান, মহা ক্ষমাশীল।

মোঃ ছিদ্দিকুর রহমান

আমি এক জন্ স্বাধীন চেতা মানুষ, ছাত্র জীবনে ছাত্র ইউনিয়নের সদস্য ছিলাম, কর্ম জীবনে একজন সরকারী কর্মচারী (অব:), বর্তমানে একটি বেসরকারী কোম্পানীতে হিসাব রক্ষন কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োজিত আছি।

মোঃ ছিদ্দিকুর রহমান › বিস্তারিত পোস্টঃ

স্বর্ণলতা-ভ্রমন কাহিনী

০৪ ঠা ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ রাত ৮:২১

জীবনের সন্ধিক্ষণে এসেও, আজো আমাকে চাকুরী করতে হচ্ছে। আজ অথবা কাল চাকুরী ছাড়বো, কিন্তু পারি পারি বলেও পারছি না। কারণ আমার ছোট্ট ছেলেটি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্থ বিজ্ঞানের সম্মান ফাইনাল দিতেছে। নগদ টাকার দরকার। চাকুরীটা না করলে আমি তেমন একটা আশাবাদি হতে পারছি না। কোথায় যেন একটু ফাক থেকেই যাচ্ছে। তা ছাড়া চাকুরী টি যখন সম্মানের, তখন করবোই না কেন? জীবনের অনেক চড়াই উত্তরাই পারি জমিয়ে আজ এই পর্যায়ে আসার জন্য আ্ল্লাহুর দয়া কাজ করেছেন। আমি অবনত মস্তকে তাকে শুকরিয়া জানাই, তাকে সিজদা করি।

মাননীয় এমডি স্যার সিড়ি দিয়ে নামাজ শেষ করে নামছিলেন। সামনা সামনী হলাম, তিনি আমার কুশলাদি জানতে চাইলেন। তিনি বরাবরই এই ধরনের মানুষ সবাইকেই প্রাণ খুলে ভালবাসেন, আমি তার প্রতি সব সময় আন্তরিক। যখনই তিনি আমার সাথে কথা বলতেছিলেন, তখন আমার বুঝতে বাকি থাকলো না যে, আমার উপর কোনো না কোন পরোয়ানা নেমে আসতেছেন। কারণ এর ২ ঘন্টা আগেই হেড অব দা ফাইন্সাস আমাকে কিছু অবগত করে ছিলেন, তিনির কথায় সময় ছিল ১৫ দিন, কিন্তু এমডি স্যারের কথায় সময় হলো মাস দুই। বুঝলাম সমস্যাটা একটু গভীর বটে। আমাকে আসতে হবে বাজুয়া, মানে মোংলার দক্ষিন পারে। আসার ব্যাপারে কিছু দিক নির্দেশনা পেলাম, কারন ইতি পূবে এখানে আসার সৌভাগ্য আমার হয় নাই। অজানা সংঙ্কা মনে কাজ করতেছিল, আবার আনন্দও লাগতেছিল, নতুন কোন জায়গায় যাব, নতুন কিছুর সাথে পরিচয় ঘটবে। আমার কিন্তু তর সইছিল না।

আমার সাথে একজন সাইট এক্যাইন্টটেন্ট আছে, গাবতলীতে আসতে হবে। সাথে লাগেজ আছে। যেহেতু দুই মাসের অধিক থাকতে হতে পারে, বাসা থেকে রিক্সা হয়ে, এয়ার পোর্ট থেকে সিএনজি করে সোজা গাবতলী। কিন্তু বাধ সাধলো ঢাকার জ্যাম। কোন কিছুই করার উপায় থাকলো না সঠিক সময়ে। যথা সময়ে গাবতলী পৌছতে পারলাম না এবং গাড়ীও পেলাম না। উপায় নাই গাবতলী বাস ষ্ট্রান্ডে ৬ ঘন্টা অপেক্ষা করে, রাতের গাড়ী ধরলাম। অনেক চড়াই উতরাই পার করে বাগের হাটে পৌছলাম কিন্তু অসময়ে। তখন রাত ৩.৩০ ঘটিকায়। কন কনে শীত, গভীর রাত, বাগরহাটের অফিসে কোন দিন আসিনি, এই প্রথম। কাকে ডাকবো ভেবে নিজেই বোকা হয়ে গেলাম, এত গভীর রাতে কাউকে কল করে ঘুমভাঙাবো বিবেক বার বার আমাকে আঘাত করতে লাগলো। চারি দিকে অন্ধকার বিশাল একটা বটগাছের নীচে দাড়িয়ে আছি, ছোট্ট একটা রাস্তা বাম দিকে নেমে গেছে, টপ টপ করে শীশিরের পানি গা ভিজিয়ে দিতেছে। শীত যেন শরীরের হাড়ে আঘাত হানতাছে। অজানা অচেনা গ্রাম। বাগের হাট শহরের নয় একটু বাহিরে। উপায় নাই কাউকে না কাউকে কল তো করতেই হবে। মোমিন নামে এক সুপার ভাইজারের নাম্বার দেওয়া হয়েছিল। তাকে কম পক্ষে ১০টা কল দিলাম কিন্তু বেচারা মনে হয় এমন ঘুম দিয়াছেন যে, তিনি সারাই পাইনাই। আর ঘুম যখন গভীর হয় তখন টের না পাওয়াটা স্বাভাবিক।

রাত ৪টা বেজে গেল, মাসুদ সাহেব আমার কলিক, ওনাকে কল দিলাম, তিনি সাথে সাথে উত্তর করলেন, মনে হলো তিনি আমার কলের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। এত গভীর রাতে একটা লোক কি ভাবে আমার কলের উত্তর করলো, ভেবে পাচ্ছিলাম না। তিনি বললেন, ভাই আপনি কোথায়, আমি বললাম একটা বট গাছের নিচে দাড়িয়ে আছি। তিনি বললেন, নীচের দিকে একটা রাস্তা নেমে গিয়াছে, ওটা ধরে একটু হাটুন, হাতের ডানে একটা গেট দেখবেন, আপনী ওখানে দাড়ান আমি ব্যবস্থা করছি। তিনি স্ব-পরিবারে অফিসের বাহিরে থাকেন। তিনি হয়তো অন্য কাউকে কল করে বললেন। তারা মমিনকে বললো, মমিন দরজা খুললো বটে, তবে রাত প্রায় পৌনে পাঁচটা বাঝে। আমার জন্য খাবার রাখা ছিল, কিন্তু খাবারের আর ইচ্ছা নাই , শরীর একটু আরাম চায়। লেপ টেনে গায় দিতে না দিতে আজান হলো, নামাজ পড়তে হবে, মাথায় এই চিন্তাটা ঘোরপাক খাচ্ছে। আমার পার্শ্বের খাটেই গুমিয়ে আছেন একজন ইঞ্জিনিয়র, জানতে চাইলাম উনি কে, জবাব দিলেন তিনি অনুপ বাবু, তাকে তো আর ডাকার প্রয়োজন নাই, গেটে তালাবদ্ধ বাহিরে যাবার কোন জো নাই। বাসাতেই নামাজ পড়তে হলো, মন থেকে ভয়ের রেশ এখনও কাটে নাই। নামাজের শেষে একটু ঘুমানোর সুযোগ আসলো। ঘুম ভেঙ্গে গেল মাসুদ সাহেবের গলার আওয়াজে, কারন আওয়াজ টা আমার অনেক চেনা। তিনি মমিনকে ধমকাচ্ছেন। এতগুলো কল দিল আর তুমি গুমাচ্ছো। আসলে ঘুম হলো শান্তির বিষয় এখানে তো আর জোড় চলে না্। সবার সাথে কুশল বিনিময়ে করলাম, এবং নাস্তা সেড়ে মাসুদ সাহেবের সাথে ঘুৃড়তে বেড়িয়ে পরলাম।

্প্রথমে হযরত খান জাহান আলী (র) এর রওজা মোবারকের পার্শ্বের মসজিদে দু'রাকাত নফল নামাজ আদায় করলাম, এবং তার পার্শ্বেই তিনির রওজা মোবারক জিয়ারত করলাম ,তিনির জন্য দোয়া মাগফেরাত করলাম, কারন তিনিই বাগেরহাটে ইসলামের গোড়া পত্তন ঘটিয়েছেন। যাট ঘম্ভুজ মসজিদে গেলাম, আমাদের কাজগুলো ঘুৃড়ে ঘুড়ে দেখালাম । অগোছালো মালামাল গুলো গুছিয়ে রাখার ও অন্যান্য মালামাল বিভিন্ন সাইটে ব্যবহারের উদ্যেশে পাঠাতে বললাম। মসজিদের চারি দিকে ঘুড়ে ঘুড়ে আল্লাহুর রহমাতের প্রসংশা করলাম। এমন সুন্দর মসজিদ যিনি তৈরি করেছেন, তার জন্য মহান আল্লাহুর দরবারে দোয়া করলাম, জোহরের নামাজ আদায় করলাম। কত বড় বড় এক একটা আস্ত পাথর দার করিয়ে রাখা হয়েছে, তার উপর নকসা করা, অতুলনীয় সব কারু কার্য্য, প্রসংশার দাবী রাখার মত। ৭/৮ শত বৎসরের আগের এই মসজিদ আজও কালের সাক্ষী হয়ে দাড়িয়ে আছে। ইসলামে এক অপরুপ নির্দশন, সুবহান আল্লাহু।

মাসুদ সাহেব খুবই জাদরেল অফিসার তিনি আমাকে ভ্রমনের ফাকে ফাকে কাজের কতা গুলো বুঝাতে চেষ্টা করতে মোটেও কৃপন্য করেন নি। আমার কাজের পরিবেশটা বুঝাতে চেষ্টা করতেছেন। যদিও আমি ইতিপূর্বে কিছুটা আচ পেয়ে ছিলাম কিন্তু তিনির কাছে পুরোটা জানতে পেরে খুব সুবিধা হল। আমি বার বার আচার্য্য হতে লাগলাম কি ভাবে এই কাজগুলো ঐ ব্যাক্তিরা করতে পারতেছেন, তাদের কি আত্মায় কোন ভয় নাই। যেভাবে ঘটনাটা প্রকাশ পেল তাতে আমি নিশ্চিত হলাম এটা ম্বর্নলতার মত পুরো প্রোজেক্টটি জড়িয়ে ধরে রেখেছেন। যেহেতু আমরা এই প্রোজেক্টে প্রচুর অর্থ বিনিয়োগ করে ফেলেছি, সেহেতু কিছুই করার নাই। প্রোজেক্ট তুলতেই হবে।

আমি আপনাদের এবার স্বর্নলতার বর্ণনা দিতেছি । আপনারা একটু জানুন এই স্বর্নলতা কি?


পরিচিতি: স্বর্ণলতা বা আলোকলতা একটি পরজীবী উদ্ভিদ। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই কুল (বরই), বাবলা, ইত্যাদি কাঁটাবহুল গাছে জন্মাতে দেখা যায়। রসালো কাণ্ড পত্রবিহীন, সোনার মত রং, আকর্ষণীয় চেহারা। কোন পাতা নেই, লতাই এর দেহ কান্ড মূল সব। লতা হতেই বংশ বিস্তার করে। সোনালী রং এর চিকন লতার মত বলে এইরূপ নামকরণ। ঔষধি গুণ আছে। অনেক ক্ষেত্রে আশ্রয় দাতা গাছের মৃত্যু ঘটিয়ে থাকে।

ঔষধি গুণ: আলোকলতা বা স্বর্ণলতার অনেক গুণ। স্বর্ণলতা শুধু অপকারীই নয়-- এর আছে ভেষজ গুণ। এই উদ্ভিদের রস ক্ষত উপশমে কার্যকরী। এছাড়া এটি বলকারক, কফ নাশক, পিত্ত নাশক ও পেটের পীড়া নিরাময় করে। স্বর্ণলতার বীজ ও লতা পিত্তজনিত রোগে, দূষিত ক্ষতে, ক্রিমির জন্যে ও খোস-পাঁচড়ায় ব্যবহৃত হয়। এটি ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাসনাশক।

মোটা লতা পিত্তজনিত রোগে, সরু লতা দূষিত ক্ষতে, বীজ ক্রিমি ও পেটের বায়ুনাশে খাওয়ানো হয়। এছাড়া পাণ্ডুরোগ, পক্ষাঘাত, মাংসপেশির ব্যথা, যকৃত ও প্লীহার রোগে এর বহুল ব্যবহার আছে।(এটি কোনো প্রেসক্রিপশন নয়)

বিষাক্ত অংশ: পুরো উদ্ভিদ

বিষক্রিয়ার ধরন: প্রজনন ক্ষমতারোধি, বমন সৃজক, গর্ভপাতক।

বিবিধ: স্বর্ণলতার বীজ থেকেই গাছ হয় বেশির ভাগ যদিও লতার টুকরো অন্য গাছে ছড়িয়ে পড়লেও হবে। গাছ একটু বড় হলে লতাটা আশে পাশের গাছকে সেন্স করে বুঝে দেখে কোন গাছটি তার জীবনোপযোগী, সেই গাছের দিকেই লতাটা বেঁকে যায়। অন্য গাছকে আশ্রয় করার পরে ভূমিজ কাণ্ড শেকড় অপ্রয়োজনীয় হয়ে পড়ে বলে তা বাতিল হয়ে যায়। জন্মাবার দুতিন সপ্তাহের মধ্যে কোনো আশ্রয়ী উদ্ভিদ না পেলে মরে যায় এই লতা।

প্রজাতিসমূহ: সারা পৃথিবীতে Cuscuta গণে ১০০-১৭০ টি প্রজাতি পাওয়া যায়। বাংলাদেশে রয়েছে চারটি প্রজাতি। বিপ্রদাস বড়ুয়া গাছপালা তরুলতা গ্রন্থে পার্বত্য চট্টগ্রামে একটি নতুন প্রজাতির সন্ধান পাওয়া গেছে বলে লিখেছেন। এটি ভারতের উত্তরাখণ্ডের ফুলের উপত্যকা জাতীয় উদ্যানের উদ্ভিদ বৈচিত্র্যের জন্য একটি হুমকি।

এতক্ষন অাপনারা গুলম্মটির ছবি দেখলেন ও বর্ণনা শুনলেন। আসল কথা হলো এই চরিত্রে কিছু মানুষ পৃথিবীটাকে নোংড়া করার চেষ্টা করে আমি তাদেরকে ঘৃনা করি, হয়তো বা আপনীও ঘৃনা করেন জানি, তবু ও ওদের সাথেই আমাদের বসবাস। আমরা ওদেরকে বাদ দিয়ে চলতে পারি না। কারণ ওরা আমাদের আষ্টে-পিষ্ঠে জড়িয়ে আছেন। এমন ভাবে তারা আমাদের চারি পার্শ্বে জড়িয়ে আছে, ঠিক যেন স্বর্ণলতার মত। এদের সাথে উঠা-বসা, হাটা-চলা, কথা-বর্তা কিন্তু কিছুই করার নাই, আমরা সবাই বিমোহিত হই। আসলে তারা স্বর্নলতা। এই স্বর্ণলতা ছাটাই করা আমার কাজ না। আমার দরকার প্রোজেষ্ট এর কাজ পরিপূর্ন করা। ঢালী গ্রুপের সুনাম রাখা, একজন ভাল মানুষের সুনামকে টিকিয়ে রাখা ছাড়া আর কিছুই না।

একটা গানে লিখতাছি।।
যার সনে যার ভালবাসা, তারে ছাড়া প্রাণ বাচেঁনা
পিড়িতি এই জগতে জাতি কুলের ধার ধারেনা।।
পিড়িতিই.....................................................

এক জাইতা লতা আছে, বাইতে বাইতে উঠে গাছে।
গাছ মরিলে লতাও মড়ে, তবু লতায় গাছ ছাড়ে না।।
পিড়িতিই...................................................

আশেক যায় মাসুকের কাছে, মাসুক যদি না চায় তারে।
নিজের প্রেমে নিজেই মরে, অন্য কারও মারতে হয় না।।
পিড়িতিই............................................................

দেখ চাতকের রীতি, যার সাথে মেঘের পিড়িতিই।
চাতক মড়িয়া গেলেও অন্য, পানি পান করে না।।
পিড়িতিই...................................................

মন্তব্য ০ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.