নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সবার উপরে মানুষ সত্য, তার উপরে আল্লাহ! সঠিক বিচারের মালিক, সর্বশক্তিমান, মহা ক্ষমাশীল।

মোঃ ছিদ্দিকুর রহমান

আমি এক জন্ স্বাধীন চেতা মানুষ, ছাত্র জীবনে ছাত্র ইউনিয়নের সদস্য ছিলাম, কর্ম জীবনে একজন সরকারী কর্মচারী (অব:), বর্তমানে একটি বেসরকারী কোম্পানীতে হিসাব রক্ষন কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োজিত আছি।

মোঃ ছিদ্দিকুর রহমান › বিস্তারিত পোস্টঃ

গুনে ভরা কালমেঘ

২৮ শে জুলাই, ২০১৭ দুপুর ২:০৯

আমাদের প্রাণ প্রকৃতি নানা বৈচিত্রে ভরপুর। মানুষ আদিকাল ধরে লতা পাতা আর উদ্ভিদের প্রাণ রস খেয়ে নানা রোগ ব্যাধির উপশম করে আসছে। আমাদের সব কিছুর দেখা মেলেনা কিংবা জানাও হয়না । বনে বাদারে প্রকৃতিগতভাবে জন্মে থাকা একটা দরকারী ভেষজ উদ্ভিদ কালোমেঘ। কালোমেঘ একটি ভেষজ বর্ষজীবী উদ্ভিদ। দেশীয় চিরতা হিসেবে সমধিক পরিচিত ও ‘বিকল্প কুইনাইন’ হিসেবে বহুল ব্যবহৃত কালোমেঘ। ইউনানি, আয়ুর্বেদিক ও হোমিওপ্যাথিক ওষুধ শিল্পের কাঁচামাল হিসেবেও এখন কালোমেঘ ব্যবহার হচ্ছে।চিকিৎসা বিজ্ঞানের মতে, কালোমেঘ জ্বর থেকে শুরু করে অজীর্ণ, যকৃতের গোলযোগসহ অনেক জটিল ও কঠিন রোগের চিকিৎসায় কার্যকারী ভূমিকা রাখে। গড় উচ্চতা ১ মিটার। এর শাখা চতুষ্কোণ এবং পাতা বল্লমাকৃতির হয়ে থাকে। ফুল ক্ষুদ্রাকার। ফুলের রং গোলাপী। অল্প পরিমাণে বিক্ষিপ্ত গুচ্ছে ফুল ফোটে। দেড় থেকে দু সে.মি. লম্বা ফল অনেকটা চিলগোজার মতন দেখতে। শিকড় ব্যতীত কালোমেঘ গাছটির সব অংশই ওষুধের কাজে ব্যবহৃত হয়।



কালোমেঘ অত্যন্ত তেতো আবার পুষ্টিকরও। মানব দেহের রোগপ্রতিরোধী শক্তি বৃদ্ধি করে। জ্বর, কৃমি, আমাশয়, সাধারণ শারীরিক দুর্বলতা এবং বায়ু আধিক্যে কালোমেঘ অত্যন্ত উপকারী।



পরিচয়-
বর্গ: Lamiales
পরিবার: Acanthaceae
গণ: Andrographis
প্রজাতি: A. paniculata (বৈজ্ঞানিক নাম অ্যান্ড্রোগ্রাফিস পানিকুলাটা)
নাম: বাংলাদেশে কালমেঘ/কালপানাস , আসামে- চিরতা, আরবীতে- কুচবুড়া, মারঠিতে- ওলি-কিরোতা, চায়নাতে- চুন জিন লায়ান এবং ইংরেজীতে Green chirayta।

এ ভেষজ উদ্ভিদ স্থানভেদে আলাদা পরিচিতি আছে।
কালোমেঘ ঔষধী গুনাগুন সমৃদ্ধ । শিশুদের যকৃৎ রোগে এবং হজমের সমস্যায় কালমেঘ ফলপ্রদ। কালমেঘের পাতা থেকে তৈরী আলুই পশ্চিম বাংলার ঘরোয়া ঔষুধ যা পেটের অসুখে শিশুদের দেওয়া হয়। টাইফয়েড রোগে এবং জীবানুরোধে কালমেঘ কার্য্করী। কালোমেঘ গাছ বেটে সরষের তেলে চুবিয়ে নিয়ে চুলকানিতে লাগানো হয়। গাছের পাতার রস কোষ্ঠকাঠিন্য ও লিভার রোগের প্রতিষেধক হিসেবে দারুণ উপকারী ।



কালমেঘ গাছের পাতার রস জ্বর, কৃমি, অজীর্ণ, লিভার প্রভৃতি রোগের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়। এ গাছের রস রক্ত পরিষ্কারক, পাকস্থলী ও যকৃতের শক্তিবর্ধক ও রেচক হিসেবেও কাজ করে। আবার গাছের পাতা সিদ্ধ করে ক্ষতস্থানে লাগিয়ে দিলে ঘা-পাঁচড়া জাতীয় রোগ দূর হয় ।



বাংলাদেশের কালমেঘের পরিচয-
মরিচ পাতার সদৃশ কালোমেঘ পাতার অগ্রভাগ ও বোঁটার দিকে ক্রমশ সরু এবং বর্ণ গাঢ় সবুজ। আবহাওয়াগত আনুকূল্যে বাংলাদেশের সর্বত্র কালোমেঘ জন্মে। বর্ষার শেষে পত্রকলা থেকে লম্বা পুষ্পদ- বের হয় এবং এ পুষ্পদন্ডে হালকা সাদার মাঝে বেগুনি ফোঁটাযুক্ত ১ সেন্টিমিটার লম্বা ফুলগুলো সাজানো থাকে। পরে লম্বালম্বিভাবে ২ অংশে ৪-৫টি করে মোট ৮-১০টি বীজ থাকে। কালোমেঘ গাছ ১২ থেকে ১৫ ইঞ্চি লম্বা হয়। এ গাছের পাতা, কান্ড ও বীজ ৩টিই ওষুধ তৈরির কাজে ব্যবহার করা হয়। পাকা বীজের রঙ হালকা খয়েরি।



বর্ষার পর থেকে শীতকাল পর্যন্ত ফুল ও ফল হয়। সাধারণত জুন-জুলাই মাস চারা লাগানোর উপযুক্ত সময়। তবে পরিপক্ব বীজ মাটিতে পড়ে আপনাআপনি কালোমেঘ গাছ জন্মে থাকে। তুলনামূলকভাবে এটি ছায়াযুক্ত জায়গায় বেশি জন্মায় বলে অন্য গাছের নিচে এবং সাথী ফসল হিসেবেও এর চাষ করা যায়। সামান্য মাটি খুঁড়ে বীজ বপন করলে ফলন বাড়ে। কালোমেঘ অঞ্চলভেদে কল্পনাথ হিসেবেও পরিচিত। অনেকে অত্যধিক তেতো স্বাদের এ গাছ শুকিয়ে চিরতা বলে বিক্রি করে থাকে। প্রকৃতপক্ষে আমাদের দেশে চিরতা জন্মে না।

চিরতার মতো তিতা স্বাদের কালোমেঘের পুরো গাছটিই ঔষধি গুণে ভরপুর। বিদেশে কুইনাইনের বিকল্প হিসেবে কালোমেঘের ব্যাপক ব্যবহার হচ্ছে। আমাদের দেশে স্মরণাতীতকাল থেকেই লোকজ চিকিৎসা ক্ষেত্রে কালোমেঘ অত্যন্ত জনপ্রিয় এবং গ্রাম্য কবিরাজ, হাকিম ও হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসকরা বিভিন্ন রোগ চিকিৎসায় এটি অনেক ব্যবহার করে থাকেন।

কালোমেঘের কোনো রকম পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া না থাকায় রোগ প্রতিরোধে এর প্রয়োগ সর্বজনবিদিত। অনেকেই কালোমেঘকে কালের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ এক কার্যকর ভেযজ ওষুধ বলে থাকেন।

কালোমেঘ বাংলাদেশ, ভারতের আসাম ও হিমাচল প্রদেশ জন্মে থাকে । আর্দ্র এবং অন্ধকারময় স্থান ভাল বৃদ্ধি হয়। তবে অল্প আলোকে বেশি চাষ হয়। বাংলাদেশে । কোনো ধরনের পরিচর্যা না থাকায় এসব ভেষজ উদ্ভিদ দ্রুত হারিয়ে যাচ্ছে।

আসুন আমরা এই সকল গাছের পরিচর্যা করি, স্বাভাবিক ভাবে আমাদের পরিবার পরিজনের চিকিৎসা করি ও সুস্থ্য থাকি।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ২৯ শে জুলাই, ২০১৭ রাত ১২:১২

চাঁদগাজী বলেছেন:


পাকিস্তানী আমলে বাচ্চাদের জ্বর সারানোর জন্য "কালোমেঘ" নামে কবিরাজী ঔষধ ছিল।

২| ২৯ শে জুলাই, ২০১৭ সকাল ৮:০২

মোঃ ছিদ্দিকুর রহমান বলেছেন: জি, গাজীভাই, এখনো আছে কিন্তু তার ব্যবহার খুবই কম হয। কিছু কঠিন কঠিন জ্বর আছে যে গুলো এই গাছ গাছরার গুনেই ভাল হতো। আপনাকে ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.