নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সবার উপরে মানুষ সত্য, তার উপরে আল্লাহ! সঠিক বিচারের মালিক, সর্বশক্তিমান, মহা ক্ষমাশীল।

মোঃ ছিদ্দিকুর রহমান

আমি এক জন্ স্বাধীন চেতা মানুষ, ছাত্র জীবনে ছাত্র ইউনিয়নের সদস্য ছিলাম, কর্ম জীবনে একজন সরকারী কর্মচারী (অব:), বর্তমানে একটি বেসরকারী কোম্পানীতে হিসাব রক্ষন কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োজিত আছি।

মোঃ ছিদ্দিকুর রহমান › বিস্তারিত পোস্টঃ

মানুষ সৃষ্টি

০৭ ই মার্চ, ২০১৮ দুপুর ১:২৩

পবিত্র কুরআনে পরিস্কার ভাষায় আল্রাহু তায়ালা বলে দিয়েছেন হযরত আদম (আঃ) ও তার বংশধর কিভাবে সৃষ্টি করেছেন তার বলে দিয়েছেন। আজকে সূরা সিজদাহর ৭ থেকে ৯ নম্বর আয়াতের ব্যাখ্যা তুলে ধরা হলো। এই সূরার ৭ থেকে ৮ নম্বর পর্যন্ত আয়াতে মহান আল্লাহ বলেছেন:

الَّذِي أَحْسَنَ كُلَّ شَيْءٍ خَلَقَهُ وَبَدَأَ خَلْقَ الْإِنْسَانِ مِنْ طِينٍ (7) ثُمَّ جَعَلَ نَسْلَهُ مِنْ سُلَالَةٍ مِنْ مَاءٍ مَهِينٍ (8)

“যিনি তাঁর প্রত্যেকটি সৃষ্টিকে সুন্দর করে সৃষ্টি করেছেন এবং মানব সৃষ্টির সূচনা করেন কাদামাটি থেকে।” (৩২:৭)

“অতঃপর তিনি তার বংশধর সৃষ্টি করেন নোংরা ও তুচ্ছ পানির নির্যাস থেকে।” (৩২:৮)

মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে আসমান ও জমিন সৃষ্টি এবং এগুলো পরিচালনা সম্পর্কে আলোকপাত করা হয়েছে। এরপর আজকের এই দুই আয়াতে দু’টি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে। প্রথমত: জড় ও জীব এবং উদ্ভিদ ও প্রাণী নির্বিশেষে আল্লাহ তায়ালা এই পৃথিবীতে যা কিছু সৃষ্টি করেছেন তা সর্বোত্তম রূপে সৃষ্টি করেছেন। তাঁর সৃষ্টিতে ত্রুটি বা বিচ্যুতি থাকার বিন্দুমাত্র অবকাশ নেই। দ্বিতীয়ত: এই আয়াতে অন্য সব সৃষ্টি থেকে মানুষ সৃষ্টিকে আলাদাভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। কারণ, মহান আল্লাহ প্রথম মানব আদম (আঃ)কে পানি ও মাটির মিশ্রণে সৃষ্টি করেছেন এবং এরপর তার বংশ বিস্তার করেছেন নারী-পুরুষের মিলনের ফলে মায়ের গর্ভে ভ্রূণ সৃষ্টির মাধ্যমে। এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন, মানুষের শুক্রাণু নোংরা ও মূল্যহীন মনে হলেও এর ভেতরের অভাবনীয় জৈবিক গঠন দিয়ে আরেকটি মানুষ তৈরি হয়। এর ফলে মহান আল্লাহর অসীম জ্ঞান ও ক্ষমতার পরিচয় পাওয়া যায়।

আরেকটি বিষয় হচ্ছে, ডারউইন তত্ত্বে বানর থেকে মানুষ সৃষ্টি হয়েছে বলে দাবি করা হলেও এই আয়াতে বলা হচ্ছে: মহান আল্লাহর ইচ্ছায় প্রথম মানব সরাসরি মাটি ও পানি দিয়ে সৃষ্টি হয়েছে। এই দিক দিয়ে আদি পিতা হযরত আদম (আঃ)-এর সঙ্গে তাঁর পরবর্তী বংশধরদের পার্থক্য রয়েছে। কারণ, হযরত আদম মাটির তৈরি এবং তার বংশধরেরা শুক্রাণু থেকে তৈরি। অথচ ডারউইন তত্ত্ব দাবি করছে, প্রথম মানবও শুক্রাণু থেকে তৈরি হয়েছে কারণ তারও পিতামাতা ছিল এবং সে ছিল বানর।

শুধুমাত্র সূরা সিজদাহ’র ৭ নম্বর আয়াত নয় পবিত্র কুরআনের আরো অনেক আয়াতে এ বিষয়টির প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে। বলা হয়েছে, আদমের বাবা-মা ছিল না। সূরা আলে ইমরানের ৫৯ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে, ঈসা যেমন পিতা ছাড়া শুধুমাত্র মায়ের মাধ্যমে জন্মগ্রহণ করেছে তেমনি আদম পিতা-মাতা কাউকে ছাড়াই মাটির দ্বারা সৃষ্টি হয়েছে।

এই দুই আয়াতের শিক্ষণীয় দিকগুলো হলো:

১. বিশ্বজগত ও এর নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা হচ্ছে সর্বোত্তম ব্যবস্থা। এর চেয়ে সুন্দর ব্যবস্থা তৈরি হওয়া সম্ভব ছিল না। এর কারণ হচ্ছে, এটি আল্লাহ তায়ালার অসীম জ্ঞান, প্রজ্ঞা ও ক্ষমতা দিয়ে তৈরি হয়েছে। ফলে এখানে ত্রুটি-বিচ্যুতি থাকার প্রশ্নই আসে না।

২. আল্লাহ তায়ালা হচ্ছেন মহান শিল্পী যিনি এক ফোটা মূল্যহীন পানি দিয়ে মানুষের মতো বিস্ময়কর জীব সৃষ্টি করেছেন।

৩. মানুষ যেহেতু মাটি, পানি ও শুক্রাণুর মতো মূল্যহীন জিনিস দিয়ে সৃষ্টি হয়েছে তাই তার মধ্যে অহংকার, গর্ব, হিংসা ইত্যাদি বিষয় থাকা উচিত নয়।

এবারে সূরা সিজদাহ’র ৯ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ বলেছেন:

ثُمَّ سَوَّاهُ وَنَفَخَ فِيهِ مِنْ رُوحِهِ وَجَعَلَ لَكُمُ السَّمْعَ وَالْأَبْصَارَ وَالْأَفْئِدَةَ قَلِيلًا مَا تَشْكُرُونَ (9)

“অতঃপর তিনি তাকে (অর্থাৎ তার অঙ্গ-প্রত্যঙ্গকে) সুষম করেন, তাতে রূহ সঞ্চার করেন এবং তোমাদেরকে দেন কর্ণ, চক্ষু ও অন্তঃকরণ। (কিন্তু) তোমরা সামান্যই কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর।” (৩২:৯)

এই আয়াতে আদম ও তার বংশধরদের সৃষ্টির পর্যায়গুলো ধারাবাহিকভাবে বর্ণনা করা হয়েছে। বলা হয়েছে, মহান আল্লাহ মানুষের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলোকে ভারসাম্যপূর্ণভাবে সৃষ্টি করেছেন এবং তাকে একটি সুন্দর শারীরিক কাঠামো দান করেছেন। এরপর এই শরীরের মধ্যে প্রাণ সঞ্চার করে তাকে অন্যান্য প্রাণী থেকে সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য দান করেছেন। কর্দমাক্ত মাটি দিয়ে হযরত আদমের দেহ তৈরি করার পর আল্লাহ তায়ালার ইচ্ছায় তাতে প্রাণ সঞ্চার হয় এবং তিনি বিশেষ জীবন লাভ করেন। তার বংশধারায় মানব জাতি আজও এই পৃথিবীতে টিকে রয়েছে। এখন নারীর গর্ভে শুক্রাণু প্রবেশের পর ৯ মাস ধরে বিশেষ প্রক্রিয়ায় মানবাকৃতি ধারণ করার পর একটি শিশু পৃথিবীতে আসে এবং বিশেষ জীবন লাভ করে।

মনে রাখতে হবে, এই আয়াতে আল্লাহ তায়ালা যে রুহ ফুঁকে দেয়ার কথা বা প্রাণ সঞ্চারের কথা বলেছেন তা দিয়ে সেই বিশেষ জীবন দান করাকে বোঝানো হয়েছে। এর মাধ্যমে তিনি মানুষের প্রতি বিশেষ দয়া করে তাকে অন্যান্য জীব-জন্তু থেকে সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য দান করেছেন। এই রুহ ফুঁকে দেয়ার অর্থ এই নয় যে, আল্লাহ মানুষের শরীরের মধ্যে কোনো কিছু ঢুকিয়ে দিয়েছেন। কারণ, এরকম কোনো কিছু সম্ভব নয়।

পৃথিবীর অন্য সব প্রাণীরও চোখ-কান আছে কিন্তু যে প্রাণ আল্লাহ মানুষকে দান করেছেন তার মাধ্যমে মানুষ যে উপলব্ধি শক্তি অর্জন করেছে তা অন্যান্য প্রাণীর উপলব্ধি শক্তি থেকে বহুগুণ উন্নত। আল্লাহ তায়ালা মানুষকে পঞ্চ ইন্দ্রিয় দান করেছেন। অন্যান্য প্রাণী চোখ দিয়ে যেমন দেখতে পায় মানুষও ঠিক তেমনিই দেখতে পায়। কিন্তু মানুষকে আল্লাহ যে জ্ঞান দিয়েছেন তা দিয়ে সে ওই দৃশ্যমান বিষয়গুলোকে পর্যালোচনা করে একটি বিশেষ উপলব্ধিতে পৌঁছাতে পারে যেটা অন্য প্রাণীর পক্ষে সম্ভব নয়। এই উপলব্ধির মাধ্যমে মানুষ সৃষ্টির রহস্য ও এর স্রষ্টা সম্পর্কে ধারণা লাভ করতে পারে। এই উপলব্ধি ক্ষমতা দিয়ে মানুষ আল্লাহর দেয়া নিয়ম কানুনকে পদার্থবিদ্যা, রসায়ন, জীববিজ্ঞানসহ অন্যান্য ধারায় ভাগ করে তা দিয়ে নানা রকম আবিস্কার করেছে। এসব আবিস্কারের মাধ্যমে মানুষের জীবনযাপন প্রক্রিয়া আগের তুলনায় অনেক সহজ হয়েছে এবং এই প্রক্রিয়া ক্রমেই পূর্ণতার দিকে যাচ্ছে। মানুষের গবেষণা থেমে নেই। অন্যদিকে মানুষ ছাড়া অন্য সব প্রাণী সৃষ্টির শুরুতে যেমন ছিল এখনএ তেমনই রয়েছে। আজকের মৌমাছি এক হাজার বছর আগের মৌমাছির মতোই পাহাড় চূড়ায় বা গাছের মগডালে বাসা বানায় এবং একই প্রক্রিয়ায় মধু আহরণ ও সঞ্চয় করে।

এই আয়াতে মানুষের উপলব্ধি করার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপকরণগুলোর প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে। এগুলো হচ্ছে, চোখ, কান ও ‘আক্‌ল’ বা বিবেক। এগুলোর কোনো কোনোটি দৃশ্যমান আবার কোনো কোনোটি অদৃশ্য। চোখ ও কান দিয়ে যেকোনো বস্তুকে সবাই একই রকম দেখতে পায় কিন্তু সেই বস্তু সম্পর্কে প্রত্যেকের অন্তরে একই রকম ধারণা তৈরি হয় না। প্রক্যেকেই নিজস্ব ধ্যান-ধারণা ও বিচার-বিবেচনা দিয়ে আলাদা আলাদাভাবে উপলব্ধি করার চেষ্টা করে।

খুব সঙ্গত কারণে আল্লাহ তায়ালা প্রদত্ত এসব নেয়ামতের শোকর আদায় করতে হবে। কিন্তু দুঃখজনকভাবে বেশিরভাগ মানুষ দুনিয়া পেয়ে নিজের স্রষ্টাকে ভুলে যায়; তাঁর নেয়ামতের শোকর আদায় বা কৃতজ্ঞতা স্বীকার করে না। আবার যারা শোকর আদায় করে তারাও অসীম দয়া লাভের তুলনায় যতটুকু কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে তা যথেষ্ট নয়।

এই আয়াতের শিক্ষণীয় দিকগুলো হলো:

১. মানুষের উন্নত মর্যাদা পাওয়ার কারণ হচ্ছে তার মধ্যে আল্লাহ প্রাণ সঞ্চার করেছেন এবং তাকে তিনি বিশেষ জীবন দান করেছেন।

২. মহান আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানানোর পূর্বশর্ত হচ্ছে তাকে উপযুক্তভাবে চিনতে পারা। যে ব্যক্তি নিজেকে চেনে না সে আল্লাহকে চিনতে পারে না এবং যে আল্লাহকে চিনতে পারে না তার পক্ষে তাঁর শোকর আদায় করা সম্ভব নয়।

৩. মানুষের মধ্যে দুটি পরস্পরবিরোধী আকর্ষণ রয়েছে। বস্তুগত দুনিয়ার প্রতি আকর্ষণ এবং সৃষ্টিকর্তার প্রতি ভালোবাসা। চিন্তাশীল ও মর্যাদাসম্পন্ন মানুষ বস্তুগত জীবনের সব উপকরণ ব্যবহার করে আধ্যাত্মিক দিকে দিয়ে নিজেকে উন্নত করার চেষ্টা করে। কিন্তু মূর্খ ও মর্যাদাহীন মানুষ আধ্যাত্মিক দিকটির কথা সম্পূর্ণ ভুলে গিয়ে বস্তুগত ভোগসম্ভার নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ে।

আল্লাহু তায়ালা আমাদেরকে কোরআন পড়ার ও আমল করার তৈফিক দান করুন ।

আমিন।।

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ০৭ ই মার্চ, ২০১৮ দুপুর ১:২৯

জাহাঙ্গীর কবীর নয়ন বলেছেন: এই পোস্টটা কেন জানি পছন্দ হইলো। ধন্যবাদ।

০৭ ই মার্চ, ২০১৮ রাত ৮:৩০

মোঃ ছিদ্দিকুর রহমান বলেছেন: জনাব, আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ, যেহেতু এই লেখাটা পছন্দ হয়েছে, আমার কষ্টটা একটু লাগব হলো বলে আমার মনে হয়। আল্লাহু আপনার নেক হায়াৎ বাড়িয়ে দিন। আমিন।।

২| ০৭ ই মার্চ, ২০১৮ বিকাল ৫:০২

রাজীব নুর বলেছেন: বিজ্ঞানের কথা দুই একটা লিখলেন না?

০৭ ই মার্চ, ২০১৮ রাত ৮:৩২

মোঃ ছিদ্দিকুর রহমান বলেছেন: চেষ্টা করবো, লেখার তবে ইসলাম কে তো আগে অন্তরে স্থান দিতে হবে, কি বলেন, তাই না? আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ

৩| ০৭ ই মার্চ, ২০১৮ রাত ৮:০২

আল হাবসি বলেছেন: ইউটিউবে ancient alien বাংলা লিইখা টাইপ করলেও অনেক episode পাওয়া যায়, এই হাইপোথিসিস এর কর্মকর্তা গুলা তো আবার সম্পূর্ণ উল্টা কথা কয়, (আমরা নাকি এই গ্রহের ই না) একদিকে সৃষ্টিকর্তার আদম হাওয়া/ adam ঈভ ,অন্যদিকে darwin theory, আবার এখন ancient alien হাইপোথিসিস, কই যে যামু, ভাইভা কূল পাই না ওস্তাদ !!!!! বানাইছে কোন ব্যাডায়??

০৭ ই মার্চ, ২০১৮ রাত ৮:৩৭

মোঃ ছিদ্দিকুর রহমান বলেছেন: আমি জানি, তাই তাদের ভূলটা ধরাবার জন্য এই লেখা, কোরআন কি বলে? সেটা তাদের কাণে যেন একটু প্রবেশ করে তাই, মানুষ নাস্তিকতায় ভরপুর হয়ে যাচ্ছে, তাই কোরআন খুজে এই লেখার চেষ্টা কয়েক জনার লেখা পড়ার পর একজনার ব্যাখ্যাটা আমার কাছে মনে হলো খু্বই যক্তিযুক্ত। কোরআন যা লিখেছে, বিজ্ঞান হাজার হাজার বৎসর চেষ্টা্ করেও তার পরিবর্তন করতে পারবে না। আল্লাহু সবাইকে পবিত্র কোরআন পড়ার ও বোঝার মত শক্তি ও তৌফিক দান করুন। এবং সমাজে শান্তি ফিরে আসুক। আমিন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.