নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

\"তোমার সাথে মিলব আমি ঠিক বেঠিকের বাহিরে\"

লাবিব ফয়সাল

ভালোমানুষ হওয়ার কোন ঝঞ্ঝাট নেই, তাই আমি নিতান্ত ভালোমানুষ...

লাবিব ফয়সাল › বিস্তারিত পোস্টঃ

বিকেল শেষে

১৪ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ ভোর ৪:৪৯

দাদু দাদু দেখ, তোমার নামে চিঠি এসেছে। এই যুগে চিঠির ব্যবহার নেই বললেই চলে।তবে অফিসিয়াল কাজে মাঝে মাঝে চিঠি আদান প্রদান করার একটা ট্রাডিশনাল রীতি দেখা যায়।কিন্তু আব্দুর রহমান ফারুক সাহেবের অবসর গ্রহনের প্রায় দুই বছর হল। তাই অফিস থেকে কোন চিঠিওতো আসার কথা নয়। এসব কথা চিন্তা করতে করতেই একমাত্র নাতি সাফিনের কাছ থেকে চিঠিটা নিলেন ফারুক সাহেব।চিঠির মলাটে ঠিকানা দেখে রকিং চেয়ার থেকে একটু সোজা হয়ে বসলেন।চিঠিটা এসেছে তুরস্ক থেকে। খামের আগাটা একটু দ্রুত খুলেই সাদা কাগজের মাঝে নিল কালিতে লেখা পাতাটি বের করলেন তিনি।
ফারুক সাহেব প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠেই দেড় কিলোমিটার হাটার অভ্যাস গড়ে তুলেছেন। এতে তার শরীর মন দুটোই ভলো থাকে।এর পর বাড়িতে ফিরে এসে জানালার পাশে হেলানো রকিং চেয়ারে বসেই চায়ে চুমুক দিতে দিতেই পেপারে একটু চোখ বুলিয়ে নেন। কিন্তু আজ চা ঠান্ডা হয়ে যাওয়ার পরেও তার কোন খেয়াল নেই।

চিঠির প্রথমেই লেখা “এ.আর দোস্ত..এখনো কি আগের মতই আছিস’


চিঠি লেখার নিয়মতান্ত্রিক যে ভদ্রতা থাকে তা যেন এখানে ইচ্ছা করেই অমান্য করা হয়েছে। ফারুক সাহেবের নিয়মের প্রতি অত্যাধিক শ্রদ্ধা বিভিন্ন সময় প্রশংসা বয়ে এনেছে। কিন্তু আজ কোন ভুলই ভুল মনে হচ্ছে না।
নীল কালির একটা লাইনই যেন ফারুক সাহেবকে তার ফেলে আসা চৌত্রিশ বছর আগের জীবনে ফিরিয়ে নিয়ে গেল। যেখানে শুধুই পাঁচজন বন্ধুর অস্তিত্ব। আজকের আব্দুর রহমান ফারুক সাহেবকে যারা শর্টকাট নাম এ.আর দিয়েছিল।
বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির কিছু দিনের মাঝেই শুভর সাথে পরিচয় হয় এ,আর এর।তার কিছুদিন পর মেঘও তাদের সাথে যোগ দেয়। দু মাসের মাঝেই ক্লাসের সবচেয়ে কথা কম বলা মেয়ে পরমা আর উদাসও জুটে যায় তাদের সাথে। তাদের বন্ধুত্বটা কিছু দিনের মাঝেই অনুকরণীয় হয়ে উঠল সাবার কাছে। অন্য বন্ধুরা বলত যে তাদের আশপাশে পারমানবিক বোমা পরলেও তারা কোন খোজ খবর পাবেনা।
তাদের পৃথিবী হলো সদরঘাটে গিয়ে নৌকায় ঘুরাঘুরি, এর পর রহিম মিয়ার ডকের কাছে ভাঙা ভ্যানে করে বিক্রি করা পেয়ারা মাখা খাওয়া।আর সব শেষে দশ টাকার স্পেশাল সরবত দিয়েই দিনের জের টান।
তবে তাদের সবচেয়ে মজার বিষয়টি ছিল রাত্রি চক্রের আবিষ্কার। চক্রের নাম দিয়েছিল মেঘ। এর কার্যক্রম হলো পাঁচজনের কারো যদি কোন কারনে মন খারাপ হয়,তাহলে একসাথে আড্ডা দিয়েই সময় পার করে দিতে হবে সবার। এতে মন খারাপ নাকি সবাইকে একসাথে দেখে ভয়ে পালিয়ে যাবে। এই রাত্রি চক্র সবার কাছেই অনেক প্রিয় ছিল। আর এই চক্র মশাই এর উপর ভরসা করেই সবার মন খারাপ হওয়ার প্রবনতা বেড়ে যেতে লাগলো।
তবে এই পাঁচজনের মাঝে শুভ ছিল সবচেয়ে মজার। সে সবসময় মেয়েগুলোকে মাতিয়ে রাখতো। তবে শুধু পরমা আর মেঘ না,তার দৌড় পাশের ফ্যাকাল্টি থেকে শুরু করে বড় আপুদের উপর মহলেও ছিল। তাদের মতে সে নাকি খুব হ্যান্ডসাম। এই পাঁচজনকে সবচেয়ে বেশি দেখা যেত সদরঘাটের ওয়াটার ব্রীজের লোহার বেঞ্চ দুটিতে। বরিশালের সবকটি লঞ্চকেই পরিচয় করিয়েছিল শুভ।বলেছিল যদি কখনো মন কাদে,তাহলে এই লঞ্চগুলোকে এসে মনের কথা বলো, তারা সব দুঃখগুলোকে মাঝ নদিতে ফেলে দেবে।

কিন্তু কয়েকমাস যাওয়ার পরে মেঘের মাঝে কিছুটা পরিবর্তন দেখা যাচ্ছিল। প্রথমদিকে সবাই এড়িয়ে চললেও পরবর্তিতে তার উদাসীনতা সবাইকেই ব্যাথিত করেছিল। তবে ষোল কলায় পূর্ণ হলো তখনি, যখন তাকে দেখা গেল ক্যাম্পাসের এক বড় ভাইয়ের সাথে। তবে এমন ঘটনা যখন হর হামেসাই ঘটতে লাগলো, তখন অবশ্য আর কেউ কষ্টটা প্রকাশ হতে দেয় নি।
দেখতে দেখতেই বছর শেষ হয়ে এলো। দ্বিতীয়বার ভর্তি পরীক্ষা দেয়ার জন্য অনেকেই নতুন করে পড়ালেখা শুরু করেছে।পরমা তার ভাইয়ার চাপে দ্বিতীয়বার পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে ব্যাস্থ সময় কাটাতে লাগলো। আর উদাস একটা স্কলারশীপে তুরস্ক চলে গেল। এ,আর এবং শুভও কেন জানি আগের মতো সময় বের করে দেখা করতে পারছিলনা। আস্তে আস্তে সবাই কেমন ব্যাস্ত হয়ে পড়লো নিজেদের নিয়ে। এখন কেউ আর আগের মত একসাথে দেখা করতে পারে না। কত কাজ চলে এসেছে সামনে। সবাই যেন বড় হতে ব্যাস্ত। এখন এদের কেউই আর লঞ্চ দেখতে যায় না। হয়তো তাদের মন আর কখনই খারাপ হয় নি।

এসব ভাবতে ভাবতেই ফারুক সাহেব চশমাটা খুলে চোখের কোনার পানিটা মুছতে মুছতেই একটা মুচকি হাসি দিলেন। পাঁচ বছর আগের চিটি আজ এসেছে। আসলেই,কিছু কিছু ভুল তিন বছর আগের সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যাওয়া ব্যাক্তিকেও জিবিত করে তুলতে পারে।

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ সকাল ৮:০৪

অপু নীল বলেছেন: ভালো লাগলো

০৭ ই এপ্রিল, ২০১৬ রাত ১:১৫

লাবিব ফয়সাল বলেছেন: ধন্যবাদ ভাইয়া..

২| ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ সকাল ১১:২৭

চন্দ্রপ্রেমিক বলেছেন: কিছু কিছু ভুল তিন বছর আগের সড়ক দূর্ঘটনায় মারা যাওয়া ব্যাক্তিকেও জীবিত করে তোলে।
++++
চমৎকার ভাব

০৭ ই এপ্রিল, ২০১৬ রাত ১:১৬

লাবিব ফয়সাল বলেছেন: ধন্যবাদ চন্দ্রপ্রেমিক।

৩| ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ১০:১৮

ফেরদৌসা রুহী বলেছেন: আসলেই,কিছু কিছু ভুল তিন বছর আগের সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যাওয়া ব্যাক্তিকেও জিবিত করে তুলতে পারে।

তাইতো মনে হচ্ছে।

০৭ ই এপ্রিল, ২০১৬ রাত ১:১৬

লাবিব ফয়সাল বলেছেন: হা হা..

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.