নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

কাউন্টার নিশাচর

কাউন্টার নিশাচর › বিস্তারিত পোস্টঃ

আওয়ামী লীগের লুটতন্ত্র

১৫ ই এপ্রিল, ২০১৬ রাত ১২:৩১

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্যসহ নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, মাদক ব্যবসা, চোরাচালান, জমি দখলসহ নানা অপকর্মের অভিযোগের শেষ নেই। খুনের অভিযোগতো সঙ্গে আছেই। টিআর-কাবিখা প্রকল্প বাস্তবায়নের নামে লুটপাট, অনিয়ম, দুর্নীতিসহ দলের ভিতর কোন্দল জিইয়ে রাখছেন এমপিরা। এসব ঘটনায় কখনো কখনো এমপিরা সরাসরি নেতৃত্ব দিচ্ছেন, আবার কখনো ছেলেমেয়ে, নিকটাত্বীয় ও দলের নিজস্ব ক্যাডার বাহিনী দিয়ে ঘটাচ্ছেন তারা।
আসামি গ্রেফতার কিংবা ছাড়িয়ে নেওয়া নয়, পুলিশ বাহিনীতে বিভিন্ন নিয়োগের জন্য আওয়ামী লীগের এমপিদের পাঠানো তালিকা অনুযায়ী কাজ না হলেই সংশ্লিষ্ট জেলার পুলিশ সুপারদের সঙ্গে দ্ব›েদ্ধ জড়িয়ে পড়ছেন তারা। নানা ধরনের অভিযোগ আনছেন পুলিশ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে। ২০১৫ সালে কনস্টেবল নিয়োগ নিয়ে দেশের বিভিন্ন জেলায় পুলিশ এবং স্থানীয় ক্ষমতাসীন দলের এমসপিদের সম্পর্কের অবনতি হয়েছে। এর মধ্যে রাজবাড়ী, ঝিনাইদহ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, ঠাকুরগাঁও, গাইবান্ধা, কক্সবাজার ও মৌলভীবাজার জেলায়ও নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অনিয়ম ও অর্থ লেনদেন নিয়ে সংশ্লিষ্ট এলাকার এমপি এবং আওয়ামী লীগের নেতারা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে লিখিত অভিযোগ করেছিলেন। অনেক এমপি সংবাদ সম্মেলন করে গণমাধ্যমকে তাদের প্রতিক্রিয়াও জানান।
১৪ মার্চ ২০১৫ রাজবাড়ী প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেন রাজবাড়ী-১ আসনের সংসদ সদস্য আলহাজ কাজী কেরামত আলী ও সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য চৌধুরী কামরুন নাহার লাভলী। সংবাদ সম্মেলনে একাত্মতা প্রকাশ করে মুঠোফোনে বক্তব্য দেন রাজবাড়ী-২ আসনের সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি মোঃ জিল্লুল হাকিম।
ক্ষমতাসীন দলের অন্তঃকোন্দলের কারণে সংঘটিত ঘটনাগুলোর জন্য রীতিমতো বিব্রত র‌্যাব-পুলিশ। এর বাইরে দলীয় পরিচয় বহনকারী অপরাধীদের অবৈধ অস্ত্র কিংবা বিভিন্ন অপরাধের সঙ্গে জড়িতদের হাতে হাতে আটক করলেও আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যরা বিব্রতবোধ করছেন। এক পর্যায়ে তাদের ছেড়ে দিতেও বাধ্য হচ্ছেন। এসব বিষয় সরকারের উচ্চ পর্যায় অবহিত হওয়ার পরও কোনো প্রতিকার হচ্ছে না। স্থবিরতা চলে এসেছে বাহিনীর অপারেশনের ক্ষেত্রে।
১৩ জুন ২০১৫ রাত ১২টায় রাজধানীর নিউ ইস্কাটনের রাস্তায় রিকশার সামান্য জটে আটকে যায় ক্ষমতাসীন দলের সংরক্ষিত মহিলা আসনের এমপি পিনু খানের পুত্র বখতিয়ার আলম রনি কালো রঙের আলিশান প্রাডো গাড়ি। হঠাৎ গাড়ির ভিতর থেকে রনি রিকশার জট লক্ষ্য করে এলোপাতাড়ি গুলি চালায়। এতে নিরীহ দুই ব্যক্তি নিহত হন।
প্রায় প্রতি রাতেই মাতাল হয়ে বন্ধুদের নিয়ে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে বেড়াতেন রনি। আগে-পিছে গাড়ির বহর নিয়ে হুটার (সাইরেন) বাজিয়ে রাতের ঢাকায় ছড়াতেন আতঙ্ক। মাঝেমধ্যেই তিনি গাড়ির জানালা দিয়ে পিস্তল বের করে গুলি চালিয়ে আনন্দ উল্লাস করতেন। দুজন নিরীহ মানুষের প্রাণ কেড়ে নেওয়ার ঘটনার আগেও গভীর রাতে রাজধানীর হাতিরপুল ও সংসদ ভবনের সামনে দুই দফা ফাঁকা গুলি ছুড়েছিলেন রনি। তবে সেসব ঘটনায় কেউ হতাহত হয়নি। এমপির স্টিকার থাকায় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা তার গাড়ি থামাতেন না।
১৫ জুন ২০১৫ ঢাকা-মাওয়া মহাসড়কে সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে ডিউটিরত শ্রীনগর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) জহিরুল ইসলাম ছাত্রলীগ নেতা অনিকের একটি রেজিস্ট্রেশনবিহীন মোটরসাইকেল সিগন্যাল দিয়ে গাড়ির কাগজপত্র চাইতে গেলেই তেলে-বেগুনে জ্বলে ওঠেন অনিক। ওই পুলিশ সদস্যকে বলতে থাকেন, ‘তুই আমাকে চিনিস না? তোরে এ থানায় পাঠাইছে কে? দেখে নিব।’ এক পর্যায়ে পুলিশ সদস্য জহিরুলের মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে তাকে ধাক্কা দিয়ে চলে যান অনিক। পরে অনিককে গ্রেফতার করতে পুলিশ অভিযান চালালে সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) সামসুজ্জামানকে ১৫ দিনের মধ্যে অপসারণের প্রকাশ্য হুমকি দেন সংসদ সদস্য সুকুমার রঞ্জন ঘোষ। এর মাত্র তিন দিন পর ১৮ জুন চোরাই মোটরসাইকেলসহ শ্রীনগর বাজারের পার্শ্ববর্তী এলাকায় এক ব্যক্তিকে আটক করেন শ্রীনগর থানার এসআই রেজাউল ইসলামের নেতৃত্বাধীন একটি দল। এ অপরাধে এসআই রেজাউলকে শ্রীনগর বাজার থেকে লাউড স্পিকারে ফোন করে অকথ্য ভাষায় গালাগাল করেন এমপি সুকুমার রঞ্জন ঘোষের কথিত এপিএস শ্রীনগর উপজেলা যুবলীগের বহিষ্কৃত সাধারণ সম্পাদক সুজন। পরে তার নেতৃত্বে একদল দুর্বৃত্ত ওই পুলিশ সদস্যের ওপর হামলা চালিয়ে মোটরসাইকেল ছিনিয়ে নেয়। (সূত্রঃ দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিন ৯ সেপ্টেম্বর ২০১৫)
২৩ জুলাই ২০১৫ মাগুরা শহরের দোয়ারপাড়া এলাকায় মাগুরা জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক কামরুল ভূঁইয়া ও ছাত্রলীগ কর্মী আজিবর শেখ গ্র“পের মধ্যে সংঘর্ষের নেপথ্যে ছিল প্রধানমন্ত্রীর সহকারী একান্ত সচিব (এপিএস-২) সাইফুজ্জামান শিখর এবং যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী বীরেন শিকদারের মধ্যে দীর্ঘদিনের বিরোধ। মূলত এ দুই গ্র“পের আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে মাগুরায় সংঘাত ও খুনোখুনির ঘটনা ঘটছে। পুলিশের বিশেষ শাখার এক প্রতিবেদনে এসব বিষয় বিস্তারিতভাবে উল্লেখ করা হয়। দুই গ্র“পের দ্ব›েদ্ধর কারণে বিভিন্ন অপরাধের তদন্তে রীতিমতো বিব্রতবোধ করেন র‌্যাব-পুলিশের সদস্যরা।
১২ অক্টোবর ২০১৫ ধনাঢ্য পরিবারের দুই কিশোর গুলশানের ব্যস্ত সড়কে কার রেসিংয়ে মেতে ওঠে। তাদের গাড়ি বিকট শব্দ তুলে ছুটছিল। তাদের একজন ১৯৯৬ সালে ঢাকার রমনা-তেজগাঁও আসনে আওয়ামী লীগের এমপি এইচ বি এম ইকবালের ভাতিজা ফারিজ রহমানের বেপরোয়া গাড়ির চাপায় মারাতœক আহত হন চার ব্যক্তি।
দেশের তরুণসমাজ ধ্বংসকারী মাদক ইয়াবা চোরাচালানের ‘অঘোষিত গডফাদার’ নামে বহুল আলোচিত টেকনাফের (কক্সবাজার-৪) এমপি আবদুর রহমান বদি এবং তার পাঁচ ভাই। গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর গোপন প্রতিবেদনে ইয়াবা ব্যবসায়ী হিসেবে এদের প্রত্যেকের নাম রয়েছে শীর্ষস্থানে। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) বদি ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মামলা করেছে, যা বর্তমানে বিচারাধীন।
মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগরে এখন চলছে দখলের মহোৎসব। জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও এমপি সুকুমার রঞ্জন ঘোষের ব্যবসার পার্টনার (অংশীদার) সিরাজুল ইসলাম ও তার পরিবার দখল করছে বিভিন্ন স্থাপনা। সিরাজুল ইসলাম নিজেই দখল করে নিয়েছেন স্কুল অ্যান্ড কলেজ এবং মসজিদের জায়গা। তার ভাই মোশারফ হোসেন খোকন সরকারি পুকুর ভরাট করেছেন। ভেঙে ফেলেছেন উপজেলার দেউলভোগ বাজারের হযরত শাহ বকশী (রহঃ) মাজারে চলাচলের জন্য নির্মিত শত বছরের পুরনো কাঠের একটি পুল।
পুকুরে প্রায় ২৭৫ ফুট দীর্ঘ ও ৬০ ফুট প্রস্থ প্রায় ৪০ শতাংশ সরকারি জায়গা। এটা সরকারের ১ নম্বর খাস খতিয়ানে ৫১০ দাগে বাজার হিসেবে অন্তর্ভুক্ত। ১ নম্বর খতিয়ানভুক্ত হওয়ায় এটি কারও মালিকানাধীন সম্পত্তি নয়। মাজারের পূর্ব পাশে প্রায় ২০০ ফুট দীর্ঘ ও ২০ ফুট প্রস্থ সরকারের নয়নজলি জায়গা রয়েছে। ওই জায়গা ইতিমধ্যে ভরাট করা হয়েছে। শত বছর ধরে ওই জলাশয়ের ওপর একটি কাঠের পুল পেরিয়ে মাজারে যাতায়াত করা হচ্ছিল। সেতুটি দিয়ে মাজারের বিপরীত পাশে বসবাসকারী শতাধিক বেদে পরিবার তাদের খাবার পানি আর নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র আনা-নেওয়া করত। পুকুরটি ভরাট ও পুলটি ভেঙে ফেলার কারণে নৌকায় ভাসমান ও রাস্তার পাশে বসতি স্থাপনকারী বেদে সম্প্রদায়ের পরিবারগুলো চরম বিপাকে।
জলাশয়কে ঘিরে বহু বছর ধরে এলাকার সবচেয়ে বড় নৌকার হাট বসলেও জলাশয় ভরাট হয়ে যাওয়ায় নৌকার হাটটি আর বসতে পারবে না। সিরাজুল ইসলাম দেউলভোগ টিএন্ডটি অফিসের জমি দখল করলে পরে প্রশাসনের হস্তক্ষেপে তা ছেড়ে দিতে বাধ্য হন। উপজেলা নির্বাচনে তার ভাগ্নে সেলিম হোসেন খান ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। নির্বাচনের পরদিনই তার ভাগ্নেকে দিয়ে ন্যাশনাল ব্যাংকের পেছনের জায়গা দখল করিয়েছেন। অভিযোগ রয়েছে, উপজেলার পাটাভোগ ইউনিয়নের জশুরগাঁও মৌজার আরএস ৫৫ দাগের ৬৩ শতাংশ খেলার মাঠসহ ১১২ শতাংশ সরকারি জমি জাল দলিলের মাধ্যমে সরকারদলীয় লোকজনের নামে নামজারি করিয়ে সেখান থেকে ৩৩ শতাংশ জমিতে স্থানীয় এমপির স্ত্রী আভা রানী ঘোষের নামে বিদ্যালয় স্থাপনের জন্য উপজেলা শিক্ষা অফিসে দানপত্রের মাধ্যমে বরাদ্দ করেন। বাকি জমি ৭৯ শতাংশ জমি প্রায় ২ কোটি টাকায় বিক্রি করে তা ভাগবাটোয়ারা করে নেন। (সূত্রঃ দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিন ২৭ আগষ্ট ২০১৫)
চুয়াডাঙ্গায় বিভিন্ন মামলায় গ্রেফতারকৃত আসামী ছাড়িয়ে নিতে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা চুয়াডাঙ্গা সদর থানায় আক্রমণ চালিয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বেলায়েত হোসেন ও সদর থানার অফিসার ইনচার্জ সাইফুল ইসলামকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করে। এ ঘটনার পর পুলিশ আক্রমণকারীদের থানা থেকে সরিয়ে দিতে গেলে আক্রমণকারীরা নির্বিচারে শহরের শহীদ হাসান চত্বর এলাকাসহ গাড়ি, মোটরসাইকেল, দোকানপাট ভাঙচুর করে। ওই সময় বিক্ষুব্ধ আক্রমণকারীরা পিস্তলের কয়েক রাউন্ড গুলি ছোড়ে। শহরের লাইটপোস্টের ও দোকানের সামনে জ্বলা বাতিগুলো ভেঙ্গে ফেলে পুলিশের উপর ইটপাটকেল মেরে আক্রমণ চালাতে থাকে।
৩ ডিসেম্বর ২০১৫ সন্ধ্যার পর পৌর এলাকার সাতগাড়ী গ্রামের নতুনপাড়ার বিশার ছেলে ৫টি মামলার আসামী খালিদ (২২) ও একই এলাকার সাঈদ রাজমিস্ত্রীর ছেলে আসাদ (২০) ও শহরের মসজিদ পাড়ার আসলামের ছেলে কানা রাসেল (২৩) কে আটক করা হয়। এদের মধ্যে ৫টি মামলার আসামী খালিদকে জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মোহাইমেন হাসান জোয়ার্দ্দার অনিকের নেতৃত্বে আসা কয়েকজন ছাত্রলীগ নেতা থানা থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে ব্যার্থ হয়। এরপর হুইপ সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুনের মত একজন সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ব্যাক্তি ও তার ভাই মেয়র রিয়াজুল ইসলাম জোয়ার্দ্দার এবং ভায়ের ছেলে অনিকের নেতৃত্বে আক্রমনটি হয়। তারা পুলিশের পিকআপ ভ্যানসহ শহরে ব্যাপক ভাঙচুর চালিয়েছে। একজন ওয়ারেন্টের আসামীকে হুইপ থানায় এবং পুলিশকে আক্রমণ করে ছাড়িয়ে নিতে আসলেন।
৩ ডিসেম্বর ২০১৫ চুয়াডাঙ্গা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বেলায়েত হোসেন রাত ১০টার দিকে গাড়িতে চেপে সদর থানায় যাওয়ার সময় থানার প্রধান দরজার সামনে গাড়ি থেকে নেমে দেখতে পান এডভোকেট আব্দুল মালেকের মোটরসইকেলে চেপে হুইপ সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুনসহ বেশ কিছু দলীয় নেতা-কর্মী থানার দিকে আসছে। হুইপ ছেলুন মোটরসাইকেল থেকে নেমেই পুলিশ সুপার রশীদুল হাসানকে গালিগালাজ করতে থাকেন ও তাকে ধাক্কা মারে। সে সময় আওয়ামী লীগ নেতা খুস্তার জামিল ও মেয়র রিয়াজুল ইসলাম জোয়ার্দ্দার এবং হুইপের ভায়ের ছেলে জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মোহাইমেন হাসান জোয়ার্দ্দার অনিকের নেতৃত্বে আক্রমণকারীরা সদর থানার অফিসার ইনচার্জ সাইফুল ইসলাম ও তার ওপর আক্রমণ চালায় এবং পুলিশের পিকআপ ভ্যানটি ভাঙচুর করে। সে মুহূর্তে আক্রমণ ঠেকাতে পুলিশও মারমুখি হয়ে উঠে আক্রমণকারীদের ধাওয়া করে। ওই সময় আক্রমণকারীরা পিছিয়ে যায় এবং হুইপ সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুন এলাকা ত্যাগ করেন। (সূত্রঃ দৈনিক সংগ্রাম ৫ ডিসেম্বর ২০১৫)
ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের চাঁদাবাজি, লুটপাট, অন্যায় প্রভাব খাটানোর জোয়ার যেন রেকর্ড গড়তে চাইছে। তাদের লাগামহীন অপকর্ম কোনোভাবেই থামানো যাচ্ছে না। তৃণমূল পর্যায়ের এমন কোনো আর্থিক খাত নেই, যেখান থেকে জনপ্রতিনিধিদের নামে টাকার ভাগ যাচ্ছে না। হাটবাজার ইজারা, জলমহাল, বালুমহাল বরাদ্দের খাত থেকে শুরু করে বাস-ট্রাক টার্মিনাল, এমনকি টেম্পোস্ট্যান্ডের চাঁদাবাজির টাকাও পাঠানো হচ্ছে এমপিদের নামে। এসবের সঙ্গে যোগ হয়েছে নানা কর্মকাণ্ডে তদবিরবাজির মোটা টাকা। সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থায় চাকরি দেওয়া, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সরকারিকরণ, শিক্ষকদের এমপিওভুক্তি, এমনকি বেসরকারি স্কুলে নৈশপ্রহরী নিয়োগের ক্ষেত্রেও এমপি সরাসরি হস্তক্ষেপ করছেন। ‘যা পারো কামাই করো’-এমন নীতি-আদর্শ নিয়েই ছুটে চলেছেন জনপ্রতিনিধিরা।

নেতারা এখন টাকা চিনেছেন, তাই জনস্বার্থ ভূলুণ্ঠিত হয়ে পড়েছে। পদে পদে বেড়েছে টাকার খেলা। হাসপাতাল থেকে আহত ব্যক্তির ডাক্তারি সার্টিফিকেট নিতে, এমনকি নিছক জন্ম নিবন্ধন করাতেও এখন টাকা লাগছে। সে টাকা এমপির নিযুক্ত লোকের হাত ঘুরে পৌঁছে যাচ্ছে নির্দিষ্ট স্থানে। এসব ক্ষেত্রে রাখঢাকেরও কোনো বালাই নেই। সব কিছুই চলছে খোলামেলাভাবে। দমন-পীড়ন, কমিশন-বাণিজ্য, জমি দখলসহ বিভিন্ন অনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে বারবার বিতর্কিত হয়েছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের অর্ধশতাধিক এমপি। এ ছাড়া উপজেলা চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান, মেয়রসহ আরও শতাধিক জনপ্রতিনিধির বিরুদ্ধেও রয়েছে অন্তহীন অভিযোগ।
ধর্মমন্ত্রী অধ্যক্ষ মতিউর রহমানের ছেলে মুহিত উর রহমান শান্ত ময়মনসিংহ শহরের এক আতঙ্কের নাম। জেলা আওয়ামী লীগের কোনো পদে না থাকলেও তিনি জেলা আওয়ামী লীগের নেতা পরিচয় দিয়ে বেড়ান বলে অভিযোগ রয়েছে। বাবা মন্ত্রী হওয়ায় মন্ত্রণালয়ের অনেক কাজও শান্ত দেখভাল করে থাকেন। হজযাত্রীদের ব্যাগ তৈরি, সরকারিভাবে হজযাত্রীদের তালিকা তৈরি, পূজা ও ঈদের বিশেষ বরাদ্দে তিনি প্রভাব খাটান। ময়মনসিংহ শহরের রাজনীতিতে প্রভাব রাখতে যুবলীগ নেতা শাহানুর ও শহর ছাত্রলীগের সভাপতির বাড়িতে কয়েক দফায় হামলা চালিয়েছেন শান্ত। জেলায় জমি দখলের অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
দেশব্যাপী আলোচিত নারায়ণগঞ্জে সেভেন মার্ডারের ঘটনার সময় আলোচনায় আসেন ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়ার জামাতা লেঃ কর্নেল তারেক মোহাম্মদ সাঈদ। নারায়ণগঞ্জের আলোচিত এ হত্যাকাণ্ডে ক্ষমতাসীন দলের ভাবমূর্তিকেও প্রশ্নবিদ্ধ করেছে বর্তমান ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রী মায়ার পরিবার। বর্তমানে মন্ত্রিসভার গুরুত্বপূর্ণ এক সিনিয়র মন্ত্রীর ছেলের বিরুদ্ধে ওই মন্ত্রণালয়ে নিয়োগ বাণিজ্য, পদায়ন এবং প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগ সরকারপ্রধানের কাছে জমা দিয়েছে কয়েকটি গোয়েন্দা সংস্থা। অভিযোগ রয়েছে, ওই মন্ত্রী আওয়ামী লীগ সরকারের প্রথম মেয়াদে (১৯৯৬-২০০১) কয়েকটি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালনকালে তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল। স্ত্রীর অপকর্মের কারণে ২০০৮ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ওই সিনিয়র নেতা অংশ নিতে পারেননি। এবার গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ে দায়িত্ব পালনকালে তার ছেলে সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
যুব ও ক্রীড়া উপমন্ত্রী আরিফ খান জয়ের এক ভাই অমিত খান শুভ্র রাজধানীর মতিঝিল এলাকার বিশেষ করে ক্রীড়াঙ্গনের সব ধরনের টেন্ডার নিয়ন্ত্রণ করে থাকেন। এ ছাড়া তার হুকুমে নানা ধরনের অপকর্ম ঘটছে বলে অভিযোগ রয়েছে। তার আরেক ভাই নুরু খান মিঠু নেত্রকোনায় একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করেছেন।
শিশুকে গুলি করে পুলিশের হাতে গ্রেফতার মঞ্জুরুল ইসলাম লিটন সুন্দরগঞ্জের এমপি হলেও এলাকার সবকিছুই দেখভাল করেন তার স্ত্রী সৈয়দা খুরশিদ জাহান স্মৃতি। নেতা-কর্মীদের অভিযোগ শোনা, বিচার, শালিসি সবই করেন তিনি। স্থানীয় স্কুল-কলেজ থেকে সব প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রণও তার হাতে। তিনিই মূলত উপজেলা প্রশাসনে খবরদারি করেন। এমনকি উপজেলা আইন-শৃঙ্খলা কমিটির মিটিংয়েও তার সরব উপস্থিতি নানা আলোচনার জš§ দিয়েছে। ঠাকুরগাঁওয়ে চলছে বাপ-বেটার শাসন। এমপি দবিরুল ইসলাম তার ছেলেকে দিয়ে হিন্দুদের জমি দখল করে নিয়েছেন। তার ছেলের দাপটে এলাকার মানুষ অতিষ্ঠ। এ সরকারের মেয়াদে যশোর-৫ আসনের সাবেক এমপি খান টিপু সুলতানের বড় ছেলে হুমায়ূন সুলতানের বিরুদ্ধে স্ত্রীর হত্যার অভিযোগ রয়েছে। এ ছাড়াও গত ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে রাজশাহী-৩ আসনের মেরাজ উদ্দিন মোল্লা হেরেছেন নতুন প্রার্থী আয়েন উদ্দীনের কাছে। এর আগে বিতর্কিত হওয়ায় তাকে দল থেকে মনোনয়নই দেওয়া হয়নি। তার বড় ছেলে আবুল কালাম আজাদের নির্দেশে মোহনপুর থানা, মেজ ছেলে জালাল উদ্দীনের নির্দেশে পবা থানা চলত। আর ছোট ছেলে মোস্তাক ছিলেন ইয়াবা ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। ছেলেদের এসব অপকর্মের খেসারত দিতে হয়েছে মেরাজ উদ্দিন মোল্লাকে।
কুষ্টিয়া-১ আসনে আফাজ উদ্দীন আহমেদও খেসারত দিয়েছেন দুই পুত্রের অপকর্মের। আফাজ উদ্দীনের দুই ছেলের কাছে জিম্মি ছিল দৌলতপুরের মানুষ। টাঙ্গাইল-৩ আসনের এমপি আমানুর রহমান খান রানা ও তার ভাইদের ক্ষমতার দাপটে অস্থির হয়ে উঠেছে গোটা এলাকার মানুষ। তিনি ও তার পরিবারের কয়েক সদস্যের বিরুদ্ধে সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, জমি দখলের অভিযোগ পুরনো। এ পরিবার দলের এক নেতাকে খুন করে সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম হয়। টাঙ্গাইলের জনপ্রিয় নেতা ফারুক আহম্মেদ হত্যায় এমপি ও তার তিন ভাই- মুক্তি, বাপ্পা ও কাঁকনের নাম আসে। তাদের সম্পৃক্ততার কথা জানিয়ে জবানবন্দি দেন ফারুক হত্যায় গ্রেফতার ব্যক্তিরা। মাদক, জুয়া, হাউজি, দখল, টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজির একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণ এ পরিবারের হাতে। কয়েক বছরেই তারা বিপুল অর্থবিত্তের মালিক হয়েছেন।
রূপকল্প-২০২১ বাস্তবায়নে তরুণদের ভূমিকাকে গুরুত্ব দিয়ে থাকেন সরকারের নীতিনির্ধারকরা। অথচ এ তরুণদের ধ্বংসকারী মাদক ইয়াবা চোরাচালানের অঘোষিত গডফাদার আবদুর রহমান বদি এবং তার পাঁচ ভাই। কক্সবাজার-৪ আসন থেকে নির্বাচিত আওয়ামী লীগের এমপি বদির বিরুদ্ধে মানব পাচারেরও অভিযোগ রয়েছে। বদির বিরুদ্ধে সরকারি কর্মকর্তা ও সাংবাদিক লাঞ্ছনার অভিযোগও আছে। ১২ আগস্ট ২০১৫ তিনি উখিয়া উপজেলার প্রকৌশলী (এলজিইডি) মোস্তফা মিনহাজের অফিসে ঢুকে তার কলার ধরে মারধর ও গালিগালাজ করেন। এর আগেও তিনি এমন বহু ঘটনা ঘটিয়েছেন
জিবলু রহমান

মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ১৫ ই এপ্রিল, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:১১

সোজোন বাদিয়া বলেছেন: গুরুত্বপূর্ণ ইসু নিঃসন্দেহে। কিন্তু প্রতিটি খবরের সাথেই সূত্র দেওয়া আবশ্যক ছিল (দু-এক জায়গায় দিয়েছেন যদিও, তা যথেষ্ট নয়)। এমন খবরের সাথে নির্ভরযোগ্য সূত্র যদি না থাকে, তাহলে বৃথা কষ্ট। পাঠক আপনাকে তো চোখ বন্ধ করে বিশ্বাস করবে না। ভাল থাকুন।

১৫ ই এপ্রিল, ২০১৬ রাত ১১:১১

কাউন্টার নিশাচর বলেছেন: জি ভালো বলেছেন। এরপর থেকে সব গুলতেই লিনক দেব

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.