নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বিলোয়

আমার সম্পর্কে কিছু লিখব

বিলোয় › বিস্তারিত পোস্টঃ

(‘নিরপেক্ষ রেফারির’ ভূমিকা থেকে সেনাবাহিনীর সরে আসার নেপথ্যে

২৭ শে এপ্রিল, ২০১৫ রাত ১০:৫১

ব্রিটেনের প্রভাবশালী দৈনিক ফাইন্যান্সিয়াল টাইমসে রবিবার প্রকাশিত Bangladesh army funded to forget its role as neutral referee এর অনুবাদ-
--------------------------------------------------------------------------
বাংলাদেশে সহিংসতার কারণে স্থিতিশীলতা হুমকিতে পড়লে কয়েক দশক ধরে বিবদমান রাজনীতিকদের একটা ভরসার জায়গা ছিল। সমাধানটা আসতো মূলত একটি নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনের মধ্য দিয়ে। পরবর্তী নির্বাচন আয়োজনের জন্য এই সরকার প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে সশস্ত্রবাহিনীর সমর্থনপুষ্ট হয়ে থাকে।
কিন্তু এই মুহূর্তে যখন সবচেয়ে বেশি দরকার তখন দক্ষিণ এশিয়ার ১৬ কোটি মানুষ অধ্যুষিত দেশটির সেই ভরসাস্থল আর অক্ষুণ্ন নেই। বর্তমানে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার ২০১৪ সালের জানুয়ারি মাসে তত্ত্বাবধায় সরকারের দাবি নাকচ করে দেয় এবং এর অনিবার্য ফল হিসেবে ক্ষমতায় আসে। এরপর টাকা, জমি, বিভিন্ন নিমার্ণ প্রকল্পের চুক্তি এবং অন্যান্য সুযোগ সুবিধা দেয়ার মাধ্যমে সশস্ত্রবাহিনীকে বাগে আনতে অগ্রসর হয়।
নতুন নির্বাচনের দাবিতে গত চার মাস ধরে সহিংস অবরোধ ও রাজপথে প্রতিবাদ করে ব্যর্থ হওয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার দল বিএনপি এবং তাদের মিত্র জামায়াতে ইসলামী বিশেষভাবে সরকারি বর্বরতার শিকার হয়েছে। অবরোধে শতাধিক মানুষ মারা গেছে, স্কুল-কলেজ বন্ধ ছিল এবং দেশটির গার্মেন্ট খাত ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে।
‘বাুদস খালেদা জিয়ার কৌশল হচ্ছে সেনাবাহিনীকে মাঠে নামানো’, বলছিলেন বাংলাদেশি একজন নেতৃস্থানীয় বিশ্লেষক। যিনি নিপীড়নের ভয়ে তার নাম প্রকাশ না করতে অনুরোধ করেছেন।
তিনি বলেন, ‘সহিংসতার মাত্রা আপনাকে এমন একটি পর্যায়ে নিয়ে যেতে হবে যাতে শৃংখলা ফেরানোর জন্য হস্তক্ষেপ করাকে সেনাবাহিনী নিজেদের জন্য বাধ্যতামূলক মনে করে।’
এটা বুঝতে পেরে শেখ হাসিনা সেনাবাহিনীকে মিগ (যুদ্ধবিমান), সাবমেরিনসহ যাতবীয় জিনিসপত্র কিনে দিচ্ছেন, ক্যান্টনমেন্টের জন্য জায়গা বরাদ্দ দিচ্ছেন। তিনি এই বাহিনীর মধ্যে এমন ক্ষুধা তৈরি করছেন যে তা নিবারণ করতে ভবিষ্যৎ সরকারগুলোকে খুবই বেগ পেতে হবে। তারা চাচ্ছে কিন্তু পাচ্ছে না এমন কিছু নেই।
বাংলাদেশ রাশিয়া এবং চীন থেকে ভর্তুকিমূল্যে সমরাস্ত্র কিনছে এবং গত ছয় বছরে দেশটির প্রতিরক্ষা বাজেট দ্বিগুণ বাড়িয়ে ১৬ হাজার কোটি টাকার উপরে তোলা হয়েছে। তবে সরকারিভাবে প্রতিরক্ষা খরচ গ্রহণযোগ্যভাবে জিডিপির মোটামুটি ১.৪ শতাংশই আছে বলে দেখানো হচ্ছে।
সরকার বলছে, ২ লাখ ৬০ হাজার সদস্যের শক্তিশালী এই সেনাবাহিনীর ক্যু করার কোনো ইচ্ছা নেই। বাহিনীটি জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে সবচেয়ে বড় অংশগ্রহণকারী হিসেবে লাভবানও হচ্ছে। শেখ হাসিনার উপদেষ্টা এইচটি ইমাম বলেন, ‘এটা এমন কিছু যা সেনাবাহিনী হারাতে চাইবে না।’
তবে হাসিনার বিরোধীরা তার সরকারের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের ওপর ‘রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের’ অভিযোগ তুলে এসবের সাথে জড়িত নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদেরকে শান্তি মিশন থেকে প্রত্যাহার করার আহ্বান জানিয়েছেন।
বিএনপি নেতা এবং সাবেক সেনাপ্রধান মাহবুবুর রহমান অবশ্য পেশাদারিত্বের ক্ষেত্রে সেনাবাহিনীর পক্ষাবলম্বন করে বলেন, জাতীয় নিরাপত্তা হুমকিতে পড়লেই শুধু দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে সেনাবাহিনী রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ করতে পারে।
তবে তিনি এ বিষয়ে একমত যে, শুধু সিনিয়র কর্মকর্তাদের পদন্নোতির ক্ষেত্রেই উদারতা নয়, হাসিনা সরকার সশস্ত্রহিনীকে তাদের পক্ষে রাখতে আর্থিকসহ অন্যান্য সুবিধাও দিচ্ছে। মাহবুব জানান, সেনাপ্রধান থাকা অবস্থায় বাহিনীতে তিনিই ছিলেন একমাত্র লেফটেনেন্ট জেনারেল, সেখানে বর্তমানে আছেন ছয় জন।
তিনি বলেন, ‘এই সরকার সেনাবাহিনীকে জনশক্তি, অস্ত্র-সরঞ্জাম সবদিক থেকেই আসলেই বড় করেছে। বর্তমানে সেনাবাহিনীর জন্য অনেকগুলো কল্যাণমূলক প্রকল্প রয়েছে। বেতন-ভাতাও আগের চেয়ে ভাল।’
বিএনপির কিছু নেতার পাশাপাশি স্বতন্ত্র বিশ্লেষকরাও এই উপসংহারে আসছেন যে, অপরাধ দমনে কাজ করা এবং বিরোধীদের ওপর নিপীড়ন চালানোর অভিযোগে অভিযুক্ত এলিট ফোর্স র্যাওব থেকে শুরু করে সেনাবাহিনীর মূল গোয়েন্দা সংস্থা এবং অন্যান্য নিরাপত্তা বাহিনীগুলোর প্রত্যেক শাখার সাথে বোঝাপড়ার মাধ্যমে অন্তত বর্তমান সময়ের জন্য হলেও শেখ হাসিনা খালেদা জিয়াকে অনেকটা ধরাশায়ী করে রেখেছেন।
সম্প্রতি সেনাবাহিনীর মালিকানাধীন একটি নির্মাণ কোম্পানিকে সড়ক নির্মাণের চুক্তি এবং আবাসনের জন্য জমি বরাদ্দ দেয়ার প্রসঙ্গ উল্লেখ করে ঢাকার একজন বাংলাদেশি পর্যবেক্ষক বলেন, ‘প্রকৃত অর্থে এটি সেনা-সমর্থিত হাসিনা সরকার।’ ট্রাস্ট ব্যাংক নামে সেনাবাহিনীর নিজস্ব ব্যাংকও আছে।
‘তারা (সরকার) বিএনপিকে ঘায়েল করে রেখেছে। ক্ষমতা ব্যবহার করে নয়, বরং টাকার ভাগ দিয়ে সেনাবাহিনীর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ হাতে নিয়ে নিয়েছে’, ওই পর্যবেক্ষক বলেন।
বাংলাদেশের রাজনীতি বিষয়ে বিশেষজ্ঞ অন্য একজন মনে করেন এর অবশ্যম্ভাবী ঝুঁকি রয়েছে। তিনি বলেন, ‘সেনাবাহিনী বিশাল সুযোগ সুবিধা ভোগ করায় অভ্যস্থ হয়ে পড়ছে। দেশে গণতন্ত্র টিকে থাকার ক্ষেত্রে এটি মারাত্মকভাবে ক্ষতিকর।’

মন্তব্য ০ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.