নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বিলোয়

আমার সম্পর্কে কিছু লিখব

বিলোয় › বিস্তারিত পোস্টঃ

ছাইভস্ম থেকে আবারও জেগে উঠবে ফিনিক্স পাখি..

২৪ শে মে, ২০১৫ সকাল ১১:২৫

২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত বিএনপি-বর্জিত একতরফা নির্বাচনে জিতে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট ক্ষমতায় আসে। লাগাতার দ্বিতীয়বারের মতো ক্ষমতার মসনদে আরোহণ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত তার কর্তৃত্ববাদী রূপটি পরিগ্রহ করেন- যা ছিল ১৯৭৫ সালে সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে গঠিত বাকশালের ওপর অর্পিত ক্ষমতার চেয়েও ভয়াবহ। দীর্ঘদিন ক্ষমতার বাইরে থাকা একটি দলের জন্য এমন ক্ষমতাপ্রাপ্তি আওয়ামী লীগ নেতৃত্বকে যে ক্ষমতান্ধ করে দেবে, সেটাই স্বাভাবিক। অবশ্য ক্ষমতা কোনো কোনো ব্যক্তিকে আবার ঔদার্যের পথেও পা বাড়াতে সাহায্য করে। শেখ হাসিনা সেই ব্যতিক্রমী উদারপন্থী নন। প্রতিপক্ষের প্রতি তার অনুসৃত কঠোর দমননীতিই তা প্রমাণ করে।
দেশের প্রধান নির্বাহী সংসদে স্বস্তিকর সংখ্যাগরিষ্ঠতা ও অনুগত প্রশাসন দ্বারা তার ক্ষমতাকে করেছেন পাকাপোক্ত। এ ছাড়াও রয়েছে তার সরকারি আনুকূল্যপ্রাপ্ত বিশাল স্তাবক গোষ্ঠী, দলীয় ক্যাডার বাহিনী ও সরকারের কৃপা প্রত্যাশী ভক্ত-সমর্থক দল। এতে অন্যায়ের কিছু নেই। ক্ষমতার ধারক যে কোনো দল এসব সুবিধা ভোগ করেই থাকে। অন্যায় শুধু এটুকুই, যখন এমন ক্ষমতার জোরে ক্ষমতাসীন দলটি তার প্রতিপক্ষ দলকে অস্তিত্ব থেকে মুছে ফেলতে চায়। রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান প্রতিষ্ঠিত বহুদলীয় গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের অন্যতম অনুষঙ্গরূপে যে বিএনপির উৎপত্তি ঘটেছিল, সেই জননন্দিত দলটিকে ক্ষমতাসীনরা রোষানলে ফেলে দলটির চেয়ারপারসন এবং নেতাকর্মীদের বিরতিহীনভাবে মামলা-হামলা, হুমকি-ধমকিতে পদে পদে পর্যুদস্ত করে রেখেছে।
বলাবাহুল্য, ৫ জানুয়ারির পাতানো নির্বাচনের পর থেকেই দেশে এক ধরনের অস্বস্তি ও অনিশ্চয়তা বিরাজ করছে। কেননা দেশে ও বিদেশে নির্বাচনটি বিতর্কিতই থেকেছে। ওই নির্বাচন বিএনপি বয়কট করলেও কার্যকরভাবে পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী নির্বাচনটিকে প্রতিহত করতে পারেনি। কেননা ইলেকশন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের অপকৌশলসহ দলীয় সরকারের অধীনেই নির্বাচনটি অনুষ্ঠিত হয়েছিল। নির্বাচনটির ফলাফল আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকারকে বিনাশ্রমে ২০১৯ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকার সার্টিফিকেট প্রদান করে। কিন্তু নির্বাচনটির গ্রহণযোগ্যতার সংকট থেকেই যায়। যদিও আওয়ামী জোট ছলেবলে এবং কৌশলে দেশের উন্নয়ন ও এগিয়ে যাওয়ার কথা বলে গ্রহণযোগ্যতা আদায়ের প্রচেষ্টায় কোনো বিরতি দেয়নি এবং তা সফলও হয়েছে।
আবার একই সমান্তরালে বিএনপিসহ ভিন্নমত পোষণকারীদের আন্দোলন-সংগ্রামও অব্যাহত থেকেছে। এ বছরের ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের প্রথম বছর পার হওয়ার পর থেকেই সরকারের পদত্যাগসহ একটি পুনর্গঠিত নির্বাচন কমিশনের অধীনে একটি মধ্যবর্তী নির্বাচনের দাবি ক্রমশই জোরালো হয়ে উঠতে থাকে। এ দাবির পুরোভাগে থাকে বিএনপিসহ নাগরিক ঐক্য এবং কিছু ছোট দলের প্রভাবশালী বড় নেতারা। ৫ জানুয়ারির কুকীর্তি হজম করতে না পারা সরকার প্রমাদ গোনে এবং তার শেষ সম্বল শক্তি প্রয়োগের আশ্রয় নেয়। নিজের কার্যালয়ে অবরুদ্ধ খালেদা জিয়া উপায়ান্তর না দেখে দেশব্যাপী অবরোধের ডাক দেন।
আওয়ামীরা আন্দোলনের জিকির হিসেবে এক সময় ভোট ও ভাতের অধিকার প্রতিষ্ঠার কথা বলত। সেই ভোট বা নির্বাচন নামক প্রতিষ্ঠানটিকে তারা এবারের সিটি নির্বাচনে এমনভাবে কলংকিত করল যে, এরপর সাধারণ শান্তিপ্রিয় মানুষ ভোটবিমুখই থাকবে। জীবন-জীবিকা ও রাজনৈতিক পরিবর্তনের খাতিরে প্রয়োজনে পেশিশক্তির চর্চা, ভোট জালিয়াতির কায়দাকানুন ও কেন্দ্র দখলের মহড়ায় অধিক মনোযোগী হবে তারা। অবশ্য আওয়ামীরা এসব সতর্কবাণী বা নীতি নৈতিকতার থোড়াই পরোয়া করে। তারা এখন নতুন মন্ত্রে দীক্ষা নিচ্ছে- উন্নয়নের জন্য বা দেশকে এগিয়ে নেয়ার জন্য যা দরকার তাই তারা করবে। তাতে প্রশাসন দলীয়করণ, পুলিশনির্ভরতা এবং অপকৌশল- এ সবই জায়েজ।
পাঠক নিশ্চয়ই লক্ষ্য করছেন, সাম্প্রতিক নির্বাচনের পর এত বিরূপ সমালোচনা, দেশে-বিদেশে এত নিন্দা এবং নির্বাচন কমিশনের মেরুদণ্ডহীনতা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে
দেয়া সত্ত্বেও কী ভীতিপ্রদভাবে সংশ্লিষ্টরা
নির্লিপ্ত! সরকার, নির্বাচন কমিশন, আইন-
শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর লোকেরা এবং
যারা এ প্রহসনের নির্বাচনে নির্বাচিত হলেন, তাদের কারও মধ্যেই কোনো ভাবান্তর নেই, বিবেকের দংশন নেই- বরং তারা সবাই একরকম তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলছেন এবং আমরা বিমোহিত দৃষ্টিতে তা দর্শন করছি।
৫ জানুয়ারিতে গণতন্ত্র হেরেছিল। কিন্তু ২৮ এপ্রিলের নির্বাচনে এক ঝাপটায় গণতন্ত্রের অভিযাত্রায় আমরা আরও অনেক দূর পিছিয়ে গেলাম। অবৈধ ও প্রশ্নবিদ্ধ কর্তৃপক্ষ এখন আরও বেপরোয়া হয়ে উঠবে ভিন্নমত পোষণকারীদের কণ্ঠ রোধ করতে। বোঝাই যাচ্ছে, ভিন্নমতাবলম্বীদের ওপর কঠিন খক্ষ নেমে আসবে। ইতিমধ্যেই তার কিছু নমুনা দৃশ্যমান হচ্ছে। বিএনপি ইতিমধ্যেই তাদের প্রতিশ্র“তিশীল নেতাদের নিরাপত্তা নিয়ে শংকায় রয়েছে। খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে মামলাগুলো নতুন করে সচল ও ত্বরান্বিত করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী স্বয়ং। বিএনপির যে কোনো সম্ভাব্য আন্দোলনে এবার যে স্টিমরোলার নেমে আসবে, তা পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে। শহীদ জিয়ার কবরে ইতিমধ্যেই হামলা হয়েছে। রুচিহীনতার স্কেলে আর কত নিচে নামবে এদেশ!
আমি বিশ্বাস করি, এখনও বিপথ গমন রোধ করার সময় আছে। সব দলই অবিমৃশ্যভাবে ভিলেন বা এনজেল নয়। দলের মধ্যে সুস্থ চিন্তার লোক অবশ্যই আছে- বিশেষ করে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মতো বৃহৎ দলে। একথাও স্বীকার্য যে, সময় সবার জন্য সব সময় এক রকম যায় না। সন্দেহ নেই, বিএনপি এ মুহূর্তে স্মরণকালের সবচেয়ে কঠিন দুর্দশায় নিপতিত। তবে আওয়ামী লীগকে এরও চেয়ে নাজুক অবস্থায় দেশবাসী দেখেছে। ক্ষমতা চিরস্থায়ী নয়। ক্ষমতার হাত বদলে বিচিত্র সব চালিকাশক্তি কাজ করে, যার অস্তিত্ব কোনো কোনো সময় অনুভবও করা যায় না। তাই দলগুলোর মধ্যে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের প্রয়োজন এখনকার চেয়ে অধিক অনুভূত আগে আর কখনও হয়নি।
পরিশেষে একথা বলতেই হয়, যিনি বা যারাই দেশ শাসন করুন, যেভাবেই করুন, যতদিনের জন্যই করুন, দেশের ও দশের সর্বাঙ্গীণ কল্যাণার্থে একটি সুচিন্তিত স্থায়ী রাজনৈতিক নিষ্পত্তির কোনো বিকল্প চোখে পড়ে না। স্বাধীনতায় নেতৃত্বদানকারী আওয়ামী লীগে যদি সেই উপলব্ধির সূচনা হয় আমরা বুঝব, বাংলাদেশ সত্যিই এগিয়েছে এবং উত্তরোত্তর এগোবে। দমন-পীড়ন, নির্যাতন বা হুমকি-ধমকি সব সময়ই দেউলিয়া রাজনীতির উপসর্গ, যা দেশকে শুধু সংঘাতের দিকে ঠেলে দেয়। মনে রাখতে হবে বিএনপি এ মুহূর্তে যত দুর্বলই হোক, তার অন্তর্নিহিত শক্তিকে নিঃশেষ করা যাবে না। ফিনিক্স পাখির মতো নিজের ছাইভস্ম থেকে তা আবার জেগে উঠবে।
এম আবদুল হাফিজ : নিরাপত্তা বিশ্লেষক ও কলাম লেখক।

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ২৪ শে মে, ২০১৫ সকাল ১১:৪৪

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: মনে রাখতে হবে বিএনপি এ মুহূর্তে যত দুর্বলই হোক, তার অন্তর্নিহিত শক্তিকে নিঃশেষ করা যাবে না। ফিনিক্স পাখির মতো নিজের ছাইভস্ম থেকে তা আবার জেগে উঠবে।

++++

২৪ শে মে, ২০১৫ সকাল ১১:৫৬

বিলোয় বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই

২| ২৪ শে মে, ২০১৫ দুপুর ১২:৩৩

গাজী সুবন বলেছেন: যেভাবে মাজা ভাঙ্গা হচ্ছে,ফিনিক্স পাখি ফুরুৎ করতে মনে হয় সময় লাগবে,

২৪ শে মে, ২০১৫ রাত ১০:১৪

বিলোয় বলেছেন: হ রে ভাই

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.