নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নরকল্পতরু বা তরুকল্পনর...

কুড়াই প্রহরব্যেপে স্মৃতিলগ্ন ধূলি

হারুন আল নাসিফ

এই ব্লগের সকল মৌলিক লেখার স্বত্ব লেখকের। এখানকার কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ, ছাপানো বা অনুলিপি করা অগ্রহণযোগ্য। সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত © হারুন আল নাসিফ [email protected] [email protected]

হারুন আল নাসিফ › বিস্তারিত পোস্টঃ

আমি এ পাড়ার ছেলে

০২ রা অক্টোবর, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:৪৪

রাস্তার মোড়ে একটা মুদি দোকান আছে না, বড়?
মা জেনারেল স্টোর? সেটা আমাকে চেনে।
গলি থেকে বেরিয়ে হাতের বামে
চা-পান-সিগ্রেটঅলা চাচা আমাকে চেনে।
দুপুরে দোকানে বসে তার শালি লিলি খালা,
হাতের চা শেষ না হতেই এক টুকরা শুকনা সুপারি
এগিয়ে দিয়ে বলে, ‘মামা, নেন’।
আর একটু সামনে সন্ধ্যায় কুপি জ্বালিয়ে
কুঁজো হয়ে বসা মুচিটা আমাকে চেনে।
গলির মুখে কিছুদিন থেকে সিদ্ধ ডিম বিক্রি করে
যে হ্যাংলা মতো ছেলেটি, সে আমাকে চেনে।
সাহেব বাড়ির নুরা পাগলাও চেনে আমাকে।

রোজ সন্ধ্যায় বড় রাস্তার ধার ঘেঁষে
উচ্চস্বরে ‘আমি অন্ধ কপাল মন্দ’ বলে গান গেয়ে
ভিক্ষা করে যে বুড়ো লোকটি, সে,
তার মলিন লাঠি আমাকে চেনে।
গ্রামে চোদ্দ লাখ টাকার পাকাবাড়ি করা
গাইবান্ধার হাসিমুখ ল্যাংড়া ভিক্ষুক
আর হুইল চেয়ার ছাড়া অচল
মা-ভক্ত প্রতিবন্ধী আলাপি ছেলেটি আমাকে চেনে।

মাঝবয়সী মিতবাক যে ঝালমুড়িওলা
কেজি স্কুলের পাশে বসে, তাকে আমার কথা
জিজ্ঞেস করলেই মুচকি হেসে ঘাড় নাড়াবে।
গার্লস স্কুলের দপ্তরিও চেনে আমাকে।
প্রথমে একটু ভাব নিলেও পরে ঠিকই চিনবে।

চিকন গলির শেষ মাথার ঘুমটি দোকান,
তার পাশের ভরাট হওয়া খাল, দক্ষিণের ডোবা
কে না চেনে আমাকে!
এ পাড়ার নতুন-পুরানো সব ব্যানার-সাইনবোর্ড,
ইলেক্ট্রিকের বোবা তার, খাম্বা, ল্যাম্পপোস্ট,
টান্সমিটারের হেলে পড়া পিলার,
ময়লা ফেলার খোলা ডাস্টবিন আমাকে চেনে।

‘কুলফি মালাই, কুলফি মালাই’ বলে হাঁক দেয়া
আইসক্রিমওয়ালা ভোলা মিয়া,
নাইটগার্ড মুন্সির বেঞ্চি, ছলুর সিএনজি,
করিমের ঠেলাগাড়ি, মোল্লার ভ্যান আমাকে চেনে।
ফুচকা-চটপটির দোকানের পিচ্চি ছেলেটা জানে
আমার ঝাল-টক দুটোই বেশি।
কেনাকাটার সেলিম ভাই বিকেল বেলা আমাকে
দেখলেই বুঝে ফেলেন আজ কি বার!

হাজিবাড়ির রাতজাগা কুকুরটা, মামুন মিয়ার
দোকানের সামনের নিমগাছ, তার ডাল-পালা,
গলির মুখে বটতলায় খালেকের ফুলের দোকান,
অপর পাশের এটিএম বুথ,
দুপুর বেলায় খোলা ভাঙ্গারির দোকানটাও
আমাকে চেনে।

গেলো বছর ঘুড়ি ওড়ানোর মৌসুমে যে ঘুড়িটা
লতা’পুদের নারিকেল গাছে আটকে গিয়েছিল,
রোদ-বৃষ্টিতে কাগজ ছিঁড়ে বের হয়ে থাকা
তার করুণ কাঠিগুলো আমাকে চেনে।
বাতাসে উড়ে এসে পাশের বাড়ির কার্নিশে পড়া
ছাদে শুকাতে দেয়া কিশোরী কামিজ,
কারেন্টের তারে ঝুলে থাকা যুবতী শেমিজ
আমাকে চেনে।
গফুর ভিলার তিনতলার বারান্দায় মাঝে মাঝে
গামছায় ঝেড়ে ভেজা চুল শুকাত যে মেয়েটি,
সে আমাকে চেনে।

রাস্তার পাশে রিকশার ঘষায় লম্বা দাগ বসে যাওয়া
রানা-রনি ভাইদের দেয়ালটা আমাকে চেনে।
চিনুদের মেইন গেটের আধ-ভাঙা কলিংবেল,
রুহিয়াদের বেলি ফুলের টব, সীমাদের মানিপ্ল্যান্ট,
খান মঞ্জিলের পাখামেলা পাথুরে ঈগল,
ছাদে রোদে দেয়া রুমা ভাবির আচারের বয়াম,
ছাদ থেকে দেখা যাওয়া খেয়াদের বিশাল বারান্দা,
পিনুদের ফুলে ভরা বাগান আমাকে চেনে।

এ পাড়ার বালুর মাঠ, তরুণ সংঘ, জুম্মা মসজিদ,
মাজার, লালসালু, দানবাক্স, মোমবাতি-লোবান,
শবে-বরাতের শিরনি, হালুয়া-রুটি, তারাবাজি,
ভোরের মাঠাওয়ালা, সিটি কর্পোরেশনের ঝাড়ুদার
আমাকে চেনে, সবাই জানে আমি এ পাড়ার ছেলে।

মন্তব্য ৫ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৫) মন্তব্য লিখুন

১| ০২ রা অক্টোবর, ২০১৬ রাত ৮:০২

এস আই সুমন বলেছেন: আপনার লেখার প্রতি ভাল লাগা রইল।

২| ০২ রা অক্টোবর, ২০১৬ রাত ৮:০৫

চাঁদগাজী বলেছেন:



বাকী আছে থানার বর দারোগা, উনি আপনাকে চেনার দরকার আছে

৩| ০২ রা অক্টোবর, ২০১৬ রাত ৮:০৫

নুরুল মিলন বলেছেন: অনেক ভালো লাগলো।

৪| ০২ রা অক্টোবর, ২০১৬ রাত ৯:১৩

হারুন আল নাসিফ বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ এস আই সুমন ও নুরুল মিলন।

৫| ০২ রা অক্টোবর, ২০১৬ রাত ৯:২১

হারুন আল নাসিফ বলেছেন: সম্মানিত চাঁদগাজী, থানার বর দারোগা মানে আপনি বোধ হয় বড় দারোগা লিখতে চেয়েছিলেন। যাক উনি আপনাকে বোধ হয় চেনে। আমাকে না চিনলেও চলবে। আমি একটা কবিতা লেখার চেষ্টা করেছি। সবার ভালো নাও লাগতে পারে। আপনারও হয়তো লাগেনি। কিন্তু আপনার মন্তব্যের মাধ্যমে আপনি ঠিক কি বুঝাতে চেয়েছেন, তা পরিষ্কার নয়। তবে মনে হয় একটু তাচ্ছিল্য করেছেন, তাই না? তা হোক, কবিতাটি আপনি পড়েছেন বলে ধারণা করছি, সে জন্যে আপনাকে ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.