নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি কেহ নই।

শরীফ আজাদ

আমি সব, আমি সবাই, আমিই এই বিশ্বব্রহ্মাণ্ড। আমি নীরবতা, আমিই কোলাহল। আমি অনুভূতিহীন, আমিই সকল অনুভূতি! আমিই তুমি।

শরীফ আজাদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

কোলরিজের কবিতা: বুড়ো নাবিকের গান (শেষাংশ)

১৫ ই জুন, ২০১৬ রাত ৮:৩৭



এই যে দরবেশ, ঐ জঙ্গলে তাঁর আবাস
যে জঙ্গল গড়িয়ে নেমেছে সাগরটায়।
কিভাবে সে তাঁর উচ্চস্বরের কণ্ঠটা ধারণ করে!
নাবিকদের সাথে কথা বলতে সে ভালোবাসে
যারা এসেছে দূরের কোন দেশ থেকে।

সে নতজানু হয়, সকালে, বিকেলে এবং সন্ধ্যায়—
তাঁর আছে একটা গোলগাল তুলতুলে গদিঃ
এটা সেই শৈবাল যা পুরোপুরি ঢেকে ফেলে
সেই পুরনো ওক গাছের পচা মুড়াটা।

ডিঙ্গি নাওটা কাছে এসে ভিড়লোঃ কানে আসলো তাঁদের কথার আওয়াজ,
‘কেন, আমার মনে হয় ব্যপারটা খুবই অদ্ভুত!
কোথায় সেই উজ্জ্বল আলো গুলো,
কোথায় সেই আলোকউজ্জ্বল সঙ্কেত?

‘অদ্ভুত, আমার বিশ্বাসের কসম!’, বলে উঠলো দরবেশটা—
‘এবং আমাদের ডাকে তাঁরা সাড়া দিলো না!
নৌকোর তক্তা গুলোকে দেখাচ্ছিলো বিকৃত! আর দেখো ঐ নৌকা গুলো,
কতো পাতলা আর শুষ্ক!
এমন জিনিস আমি জীবনে কখনও দেখিনি,
পুরো ব্যপারটাই ছিলো দৈবাৎ।

ধূসর পল্লবের কঙ্কাল গুলো ধীরে পিছিয়ে পড়ে
আমার অরণ্যের স্রোতস্বিনী ছোট নদীটার সাথে;
যখন চিরহরিৎ লতার ঝোপ গুলো তুষারের ভারে নুয়ে পড়ে,
আর পেচকশিশুটা ডাক দেয় নিচের নেকড়েটাকে,
যে গ্রাস করে মা-নেকড়ের বাচ্চাটাকে।’

‘হে ঈশ্বর! তাঁর চেহারাটা দেখাচ্ছে পৈশাচিক—
(পাইলট প্রত্যুত্তরে বললো)
আমি একজন ভীতু’ — ‘ধাক্কা দাও, ধাক্কা দাও!’
উচ্চস্বরে বলে উঠলো দরবেশ।

নৌকোটা এসে ভিড়ল জাহাজের কাছে,
কিন্তু আমি না কিছু বললাম, না হাত নাড়ালাম;
নৌকোটা একদম কাছে, জাহজের নিচে এসে ঠেকলো,
এবং একটা সূক্ষ্ম আওয়াজ এসে কানে বাজলো।

জলের নিচে আওয়াজটা গুড়গুড় করে উঠলো,
এখনো, আরও জোরে, আরও ভয়ানকভাবেঃ
আওয়াজটা পৌছুলো জাহাজটার কাছে, চিরে ফেললো পানিটাকে;
জাহাজটা শিশার মতই ডুবে যেতে লাগলো।

আমি স্তব্ধ হয়ে গেলাম জাঁকাল আর ভয়ঙ্কর আওয়াজে,
যে আওয়াজ কাঁপিয়ে তুলল পুরো আকাশটা, সাগরটা।
সাতদিন জলে ডুবে থাকা একজনের মতই
আমার দেহটা ভেসে উঠলো;
কিন্তু যেন স্বপ্নের মতই, শীঘ্রই আমি
নিজেকে আবিষ্কার করলাম পাইলটের নৌকোয়।

ঘূর্ণিস্রোতের উপরে, যেখানে ডুবেছিলো জাহাজটা,
নৌকাটা ঘুরতে লাগলো বৃত্তাকারে;
আর বাকী সবকিছুই ছিলো অনড়, এবং ঐ পাহাড়টা
যেন বলে যাচ্ছিলো আওয়াজটার কথা।

আমার ঠোঁট গুলো নড়ে উঠলো — চিৎকার বেরুলো পাইলটের কণ্ঠে,
এবং মূর্ছিত হয়ে সে পড়ে গেলো;
দরবেশটা খুলে দিল তাঁর চক্ষুদ্বয়,
আর সেখানেই বসে পড়লো প্রার্থনায়।

হাতে নিলাম বৈঠা গুলোঃ আমি মাল্লার,
যে এখন পাগল বনে যেতে বসেছে,
একটা উচ্চস্বরের দীর্ঘ হাসি হাসলাম, আর পুরো সময়টা
এদিক-ওদিক করছিলো তাঁর চক্ষুদ্বয়।
‘হা! হা!’ বললো সে, ‘আমি স্পষ্টত দেখতে পাচ্ছি
শয়তানটা বৈঠা চালাতে জানে।’

এবং এখন, পুরোপুরি আমার নিজের দেশে,
আমি দাঁড়িয়ে রইলাম শক্ত মাটির উপরে!
দরবেশটা নেমে আসলো নৌকো থেকে,
আর সে অতিকষ্টে কোনরকম দাঁড়িয়ে রইল।

‘ও আমায় মুক্ত করো, মুছে দাও আমার সকল পাপ, হে পুণ্যাত্মা!’
দরবেশ ক্রুশ টানলো তাঁর কপালে।
‘জলদি বলো,’ বললো সে, ‘বলো তুমি—
তুমি কেমনতর মানুষ?’

মুহূর্তেই আমার পুরো অবয়বটা মোচড় দিয়ে উঠলো
একটা নিদারুণ যন্ত্রণায়,
এই অনুভূতিটা আমায় বাধ্য করলো গল্পটা শুরু করতে,
তারপর সে আমায় মুক্ত করে ছেড়ে দিলো।

সেই থেকে, সময়ে-অসময়ে
যন্ত্রণাটা আবারো ফিরে আসেঃ
এবং যতক্ষণ না এই বীভৎস গল্পটা বলা শেষ হয়
আমার হৃদপিণ্ডটা পুড়তে থাকে যন্ত্রণায়।

আমি রাত্রির মতই পার হই ভূমির পর ভূমি;
আমার কথা বলার এক অদ্ভুত ক্ষমতা আছে;
ঐ মুহূর্তে আমি দেখতে পাই তাঁর মুখ,
আমি তাঁকে চিনি, সে অবশ্যই শুনতে পায় আমার কথাঃ
তাঁকেই আমি গল্পটা শিখাই।

ঐ দরজা থেকে কি জাঁকাল আওয়াজ বিস্ফোরিত হচ্ছে!
ওখানে রয়েছে বিয়ের অথিতিরাঃ
কিন্তু নববধূ আছে বাগান বাড়িটায়,
আর কনের সহচরীরা গেয়ে যাচ্ছে গানঃ
শুনতে পেলাম সান্ধ্য প্রার্থনার ঘণ্টার আওয়াজ,
আমিও বসে পড়লাম প্রার্থনাতে!

হে বিয়ের অথিতি! আমার এই আত্মাটা
নিঃসঙ্গ, একাকী কাটিয়েছে একটা বিশাল সমুদ্রেঃ
এটা এতটাই নিঃসঙ্গ আর একাকীত্বে ডুবে ছিলো যে ঈশ্বর নিজেও
সেখানে খুব একটা যেতে চাইত না।

ও, এই বিয়ে-ভোজের চেয়েও মধুর,
এটা আরও মধুর লেগেছিলো আমার কাছে,
একসাথে হেঁটে যাওয়া সেই গির্জার দিকে
একটা উৎকৃষ্ট সঙ্গীকে সাথে নিয়ে!—

একসাথে হেঁটে যাওয়া সেই গির্জায়,
আর একসাথেই ডুবে যাওয়া প্রার্থনায়,
প্রত্যেকেই মাথা নোয়ায় নিজ নিজ ঠাকুরের কাছে,
বৃদ্ধ, শিশু আর প্রাণের বন্ধুরা,
এবং তরুণ আর কুমারীরা!

বিদায়, বিদায়! কিন্তু আমি তোমাকেই
বলি, তোমাকেই হে বিয়ের-অথিতি!
যে প্রার্থনা করে, সেই ভালোবাসে
মানুষ ও প্রাণী উভয়কে।

যার প্রার্থনা উত্তম, তাঁর ভালোবাসাও উত্তম,
সে ভালোবাসে সবকিছু, সে ভালোবাসে বৃহৎ ও ক্ষুদ্রতমকে,
প্রিয় ঈশ্বর ভালোবাসে মোদেরকে,
তিনি স্রষ্টা, ভালোবাসেন তাঁর সকল সৃষ্টিকে।

উজ্জ্বল চক্ষুর সেই নাবিক,
বয়সের ভারে তাঁর শুভ্র ধূসর দাঁড়ি,
চলে গেছে সেঃ আর এখন বিয়ের-অথিতিটা
ঘুরে ফিরল বরের দরজা থেকে।

নির্বাক, স্তব্ধ অথিতিটা ত্যাগ করলো বিয়ে বাড়ি,
এবং একটা অসহায়ত্বের অনুভুতি ভর করলো তাঁর ঘাড়েঃ
পূর্বের চেয়ে আরও বিমর্ষ, আরও বিজ্ঞ হয়ে
সে জেগে উঠলো পরের দিন প্রভাতে।

(সমাপ্ত)

ষষ্ঠাংশ সহ বাকী পর্বগুলো পড়ুন এখানে

তর্জমা
জুন ১৫, ২০১৬। ঢাকা
শরিফুল ইসলাম (শরীফ আজাদ)
মূল: দ্যা রাইম অব দ্যা অ্যানশিয়েন্ট মেরিনার— স্যামুয়েল টেইলর কোলরিজ

মন্তব্য ১৮ টি রেটিং +৫/-০

মন্তব্য (১৮) মন্তব্য লিখুন

১| ১৫ ই জুন, ২০১৬ রাত ১০:১৩

কথাকথিকেথিকথন বলেছেন: মোটামুটি বড় কবিতা । অনুবাদটা সময় সাপেক্ষ মনে হচ্ছে । অনুবাদ ভাল হয়েছে, কাহিণী নির্ভর কাব্য । ভাল লেগেছে ।

১৫ ই জুন, ২০১৬ রাত ১০:১৭

শরীফ আজাদ বলেছেন: অনুবাদের সময়কাল তিন মাস। মাঝখানে অন্যকিছুও অনুবাদ করেছি।

মন্তব্যের জন্যে ধন্যবাদ। :)

২| ১৬ ই জুন, ২০১৬ রাত ১:১৩

রেজওয়ান তানিম বলেছেন: এত দীর্ঘ কবিতা এত কষ্ট করে অনুবাদ করেছেন কেউ কমেন্ট করল না,

আশ্চর্য

ব্লগে যে কি চলে এখন

১৬ ই জুন, ২০১৬ দুপুর ১:২৪

শরীফ আজাদ বলেছেন: ব্লগে মানুষ ব্লগ পড়ে, সাহিত্য পড়েনা।

আমার কষ্টটা অনুধাবন করার জন্যে আপনাকে অশেষ ধন্যবাদ।

৩| ১৬ ই জুন, ২০১৬ দুপুর ১২:৫৭

হাসান মাহবুব বলেছেন: এমন একটা কাজ শেষ করার জন্যে আপনাকে অভিনন্দন।

১৬ ই জুন, ২০১৬ দুপুর ১:২৮

শরীফ আজাদ বলেছেন: ধন্যবাদ হাসান ভাই।

এত লম্বা কবিতা অনুবাদ করতে গিয়ে মাঝখানে কয়েকবার আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছিলাম। শেষ পর্যন্ত শেষ করতে পেরে আমি পুলকিত।

৪| ১৬ ই জুন, ২০১৬ দুপুর ২:০৯

আলোরিকা বলেছেন: যার প্রার্থনা উত্তম, তাঁর ভালোবাসাও উত্তম,
সে ভালোবাসে সবকিছু, সে ভালোবাসে বৃহৎ ও ক্ষুদ্রতমকে------------দারুণ । সমাপ্ত ! অভিনন্দন :)

১৬ ই জুন, ২০১৬ দুপুর ২:১৩

শরীফ আজাদ বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ :)

৫| ১৬ ই জুন, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:৩৪

কবি হাফেজ আহমেদ বলেছেন: কথাকথিকেথিকথন বলেছেন: মোটামুটি বড় কবিতা । অনুবাদটা সময় সাপেক্ষ মনে হচ্ছে । অনুবাদ ভাল হয়েছে, কাহিণী নির্ভর কাব্য । ভাল লেগেছে ।

১৬ ই জুন, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:৪২

শরীফ আজাদ বলেছেন: ধন্যবাদ :)

৬| ১৬ ই জুন, ২০১৬ রাত ৯:৩১

মারুফ তারেক বলেছেন: ভালো লাগল, অনুবাদটা ভালো হয়েছে

শুভকামনা জানবেন।

১৬ ই জুন, ২০১৬ রাত ৯:৩৭

শরীফ আজাদ বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ :)

৭| ১৬ ই জুন, ২০১৬ রাত ১১:২৭

রেজওয়ান তানিম বলেছেন: আমার সাথে এইখানে যোগাযোগ করলে খুশি হব এবং আমার মনে হয় ভালই হবে- rezwan tanim

১৭ ই জুন, ২০১৬ রাত ১২:০২

শরীফ আজাদ বলেছেন: যোগাযোগ বলতে কি আপনাকে ফেবুতে এড করতে বলছেন, নাকি সামুতে বার্তা পাঠানোর কথা?

৮| ১৭ ই জুন, ২০১৬ বিকাল ৪:৫২

প্রোফেসর শঙ্কু বলেছেন: এরকম পোস্টে প্লাস দিয়েও আনন্দ। চমৎকার কাজ হয়েছে সুপ্রিয়।

১৭ ই জুন, ২০১৬ বিকাল ৪:৫৬

শরীফ আজাদ বলেছেন: আন্তরিক ধন্যবাদ জানবেন, প্রোফেসর সাহেব :)

৯| ১৯ শে জুন, ২০১৬ সকাল ১১:৪৩

আমার কোন নাম নাই বলেছেন: ছোট ছোট কাজ করা সহজ । বড় কাজে ভালবাসা আর ধৈর্য ধারণ প্রয়োজন । এখানে আপনার দুটু ই ছিল । ভাল কিছু আমাদের দেবার জন্য আপনার সুন্দর ইচ্ছাকে ধন্যবাদ জানাই । ভাল থাকবেন ।

১৯ শে জুন, ২০১৬ দুপুর ১২:৫৪

শরীফ আজাদ বলেছেন: সুন্দর মন্তব্যে অনুপ্রাণিত হলাম।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.