নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মাদারি

মাদারি › বিস্তারিত পোস্টঃ

বহুজাতিক বাংলালিংকে ব্যাপক কর্মী ছাটাই!

০৯ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ দুপুর ২:১২

বিদেশী কর্পোরেট বিনিয়োগের পক্ষে প্রধান যুক্তিই দেয়া হয় এই বলে যে এরা বিপুল মুনাফা দেশের বাইরে পাচার করলেও এরা ভালো বেতনের কর্মসংস্থান তৈরী করে।বাস্তবতা হলো,এসব বিদেশী কোম্পানি শুরুর দিকে তুলনামূলক ভালো বেতনে মেধাবী কর্মী নিয়োগ করলেও, কাজ ফুরিয়ে যাওয়ার পর অবলিলায় ছুড়ে ফেলে দেয়।এর সবচেয়ে জ্বলন্ত উদাহরণ হলো বাংলাদেশের টিলিকম সেক্টর।

নেটওয়ার্ক তৈরীর সময় বহু মেধাবি তরুণদের তুলনামূলক ভালো বেতনে রিক্রুট করলেও, যখন নেটওয়ার্ক তৈরীর কাজটা মোটামুটি সম্পন্ন হয়ে যায়, যখন কোম্পানি মুনাফা করতে শুরু করে, তখন এসব দক্ষ ও মূল্যবান মানব সম্পদ তাদের কাছে দায়ভার বা বার্ডেন এ পরিণত হয়।তাদেরকে ছাটাই করা শুরু করে। গ্রামীণ ফোন ইতোমধ্যেই এই কাজটি করেছে যার প্রতিবাদে গ্রামীণের কর্মীর গ্রামীণ ফোন এমপ্লয়িজ এসোসিয়েসান গঠন করে প্রতিরোধ তৈরী করেছে। এখন ছাটাই করছে দ্বিতীয় বৃহত্তম টেলিকম অপারেটর বাংলালিংক।

বাংলালিংক এ কর্মী ছাটাই এর খবর বেশ কিছুদিন ধরে গুজব আকারে শোনা যাচ্ছিল। সম্প্রতি ৭ ফেব্রুয়ারি বাংলালিংকের সিইও বাংলালিংকের কর্মীদের সাথে এক সভায় সরাসরি বিষয়টি স্বীকার করেছেন।যদিও তিনি সরাসরি সংখ্যাটি বলেন নি,আকারে ইঙ্গিতে বুঝিয়ে দিয়েছেন মোটামুটি ৪০০ থেকে ৫০০ এর মধ্যে হবে। বাংলালিংকের মোট কর্মী সংখ্যা প্রায় ২ হাজার ৬২ জন। অর্থাৎ এক ধাক্কায় ২০ থেকে ২৫ শতাংশ কর্মী ছাটাই এর ধান্দা করছে বহুজাতিক ভিম্পলকম লিমিটেডের বাংলাদেশি সাবসিডিয়ারি বাংলালিংক।


বাংলালিংক বহু বছর ধরেই বাংলাদেশের সরকার তথা জনগণ ও তার কর্মীদেরকে নানা ভাবে বঞ্চিত করছে।১১ বছর ধরে বাংলাদেশে ব্যাবসা করলেও নানা ভাবে খরচ বাড়িয়ে দেখিয়ে মুনাফার কথা স্বীকার করছে না। মুনাফার কথা স্বীকার করলে মুনাফার উপর সরকারকে কর দিতে হবে এবং কমীদেরকে মুনাফার অংশীদ্বারিত্ব প্রদান করতে হবে। অথচ একই বাজারে ব্যাবসা করে গ্রামীণ ফোন প্রতিবছর প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা করে মুনাফা করছে।এ বিষয়ে গুঞ্জনের সূত্র ধরে ২০১৫ সালে বাংলালিংকের তৎকালিন সিইও জিয়াদ সাতারা মুনাফা করার কথা স্বীকারও করেন। তিনি বলেন:

“We made profits during the first half of this year, but I can't provide the numbers right now,”
সূত্র: view this link

তাহলে প্রশ্ন হলো, ২০১৫ সালের প্রথম অর্ধে যে কোম্পানি মুনাফা করছে এবং এর আগের বছরের তুলনায় ৯ শতাংশ বেশি আয় করেছে বলে তৎকালিন সিইও বিটিআরসির কাছে স্বীকার করেছে, সেই কোম্পানি তে কি এমন ঘটলো যে ২০১৬ সালে ২০ থেকে ২৫ শতাংশ কর্মী ছাটাই করা হবে? বাংলালিংক ২০০৫ সালে বাংলাদেশে যাত্রা শুরু করার পর ১১ বছর হযে গেল- এটা কি আদৌ বিশ্বাসযোগ্য যে এখনও পর্যন্ত কোম্পানিটি লস দিয়ে চলেছে, কোন মুনাফা করেনি, তারপরও এই দেশে বিনিয়োগ করে চলেছে? কোন পাগলে এটা বিশ্বাস করবে?

আসলে গত বছর বাংলালিংকের সিইও’র কথা থেকেই স্পষ্ট যে বাংলালিংক ইতোমধ্যেই মুনাফা করতে শুরু করেছে।এখন হলো মুনাফা আরো বাড়ানোর সময়, যে কারণে কোম্পানি পুনর্গঠনের অযুহাতে কর্মী ছাটাই করতে শুরু করেছে।

আশার কথা হলো, এই ছাটাই এর কথা বার্তার মধ্যেই বাংলালিংকের কর্মীরা ট্রেড ইউনিয়ন গঠন করে ফেলেছে। সিইও এরিক অস আনুষ্ঠানিক ভাবে স্বীকার করার আগেই ৭১৯ জন কর্মীর স্বাক্ষর সংগ্রহ করে ট্রেড্ ইউনিয়নের রেজিস্ট্রেশানের জন্য শ্রম অধিদপ্তরের শ্রম পরিচালক বরাবর আবেদনও করে ফেলেছে।


সরকার ও শ্রম মন্ত্রনালয়ের উচিত এখন দ্রুত এই ট্রেড ইউনিয়নকে রেজিস্ট্রি প্রদান করা। নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠান বিটিআরসি’র উচিত বাংলালিংকের কাছে কর্মী ছাটাই এর যৌক্তিকতার ব্যাখ্যা চাওয়া, জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা।

কিন্তু গ্রামীণ ফোনের ক্ষেত্রে যা হয়েছে, তা থেকে সরকারের শক্ত ভূমিকার ব্যাপারে আশাবাদি হওয়া কঠিন।আমরা দীর্ঘদিন ধরেই দেখছি, দেশি বিদেশী কর্পোরেটরা তাদের শ্রমিক ও কর্মীদেরকে নানা ভাবে বিভিন্ন অধিকার ও সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত করে রাখে আর রাষ্ট্রের শাসকরা বিনিয়োগের পরিবেশের নামে এবং কমিশনের ধান্দায় এসব দেখেও না দেখার ভান করে।

এ অবস্থায় কর্পোরেট শ্রম শোষণ ও অন্যায় ছাটাইয়ের বিরুদ্ধে বাংলালিংক কর্মীদের এই লড়াইয়ের সাথে সংহতি জানানো, তাদের পাশে দাড়ানো, তাদের দাবী মেনে নিতে কোম্পানিকে বাধ্য করা সরকারের পাশাপাশি আমাদেরও দ্বায়িত্ব।

মন্তব্য ৫ টি রেটিং +৪/-০

মন্তব্য (৫) মন্তব্য লিখুন

১| ০৯ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ৯:৫১

সুমন কর বলেছেন: দুঃখজনক ঘটনা !!! প্রতিকার কি পাওয়া যাবে !!

২| ১২ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ দুপুর ১২:৫৫

রাজু রহমান বলেছেন: গ্রামীণফের বিষয়টি একমত হতে পারলাম না।
আর গ্রামীণফের সাথে বাংলালিংকের তুলনা করা হাস্যকর।

৩| ১২ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ দুপুর ১:২২

এক নিরুদ্দেশ পথিক বলেছেন: কোম্পানির গ্রোথ পিরিয়ডে সে ব্যাপক কর্মসংস্থান করবে, গ্রোথ না থাকলে সে তার হিউম্যান রিসোর্স সংকুচিত করবেই। এটা খুবই স্বাভাবিক একটা নিয়ম। বাংলালিংক সহ সকল দেশি বিদেশী বেসরকারি কোম্পানির রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট ফরমূলা একই। তবে আমাদের সরকারি ব্যবস্থাপনা এবং আইনি কিছু ব্যাপারও আছে।

কন্ট্রাক্ট জবঃ শর্ট টার্ম কিংবা লিমিটেড টার্ম জব নিয়ে আমাদের দেশে ব্যাপক ধারনা না থাকা। কন্ট্রাক্ট শেষে জব চলে যাওয়া খুব স্বাভাবিক, সাধারণত খুব ভালো পার্ফরম করলে কন্ট্রাক্ট স্থায়ী হয়। আমাদের কিছু মানুষ এটা মানতে পারে না, গ্রামীণ ফোনকে যে অভিযোগ দেয়া হয়েছে এগুলা নিয়ে ভুল ধারণা প্রচলিত আছে। নতুন চাকুরী না খুঁজে একদল লোক দীর্ঘ দিন অযৌক্তিক আন্দোলন করেছে।

কন্ট্রাক্ট জবের নোটিশ পিরিয়ড এবং প্রণোদনা
বাংলাদেশের শ্রম আইন এগুলা নিয়ে ভেবেছে কিনা জানা নেই, কোম্পানি কাউকে বিনা নোটিসে ছাটাই করতে পারে না, যা বাংলাদেশে অহরহ হচ্ছে। বাংলাদেশে চাকরির কোন আইনি প্রটেকশন নেই। সাধারণত একটি শর্ট কন্ট্রাক্ট যত ছোটই হোক না কেন, তাতে ১ মাস নোটিস টাইম থাকবে, অপারগে ১ মাসের বেতন পরশোধ করতে হবে। কন্ট্রাক্ট ডিউরেশন বাড়ার সাথে সাথে নোটিস পিরিওড বাড়তে পারে, তবে সাধারানত ৩ মাসের বেশি হয় না কন দেশেই।

পার্মানেন্ট জব অফারের পরিমানঃ
আমি নিশ্চিত এটা ফোলআপ করা হয় না, এটা একটা খুব গুরুত্ব পুর্ন ইস্যু। একটা কম্পানির মোট টার্ন ওভার এর বিপরিতে আনুমানিক কি পরিমান স্থায়ী ম্যানপাওয়ার বেইজ থাকা বাধ্যতামূলক সেটা ডিফাইন খুব জরুরি। এখানে মোট স্থায়ী এমপ্লয়ীর বিপরিতে কি পরিমান কন্ট্রাক্ট অফার করা যাবে তাও ডিফাইন করা হয়। বাংলাদেশ এগুলা কেউ ভাবে না।

বাংলাদেশে কিছু দেশি বিদেশি কোম্পানি খুব সামান্য লোক দিয়ে খুব বড় কোম্পানি চালায়। রবি, বাংলালিংক টেলিকম খাতের উদাহরণ, ব্যাংককিং সেক্টরে এটা ভয়াবহ। দেশি কোম্পানি গুলোর মধ্যে প্রাণ এই কাজে পারদর্শী, প্রাণে চাকরি করা ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ার গন পশুর মত খাটেন।

অর্থাৎ আমাদের বিস্তৃত একটা জনসম্পদ এর জন্য ওয়ার্ক এন্ড লাইফ ব্যালান্স নেই, ওভার টাইম নেই, থাকলে সীমিত, মূল কোম্পানির প্রদত্ত ওভারটাইম এবং এজেন্ট এর প্রদত্ত অভারটাইমের গরমিল (নাইট গার্ড, ক্লিনিং এর রিসোর্স গুল কে ঠকানো হয় এভাবে।)। এতে করে এইসব কোম্পানিতে কাজ করে মানুষ দীর্ঘ মেয়াদে অসুস্থ হচ্ছেন, ফিজিক্যাল ডিজেবেলিটি আসছে ধীরে ধীরে, কিন্তু কোম্পানি হেলথ ফুয়াসিলিটি দেয় না একেবারেই।



পার্মানেন্ট জব এর ট্রার্মিনেশনঃ

বাংলাদেশের আইনে এই সুরক্ষাটা একেবারেই নেই। বেসরকারিতে স্থায়ী জব অফার করা লোক পেনশন পান না, প্রভিডেন্ট ফান্ডও সরকার কর্তিক বাধ্যতামূলক নয়। সরকার শুধু আয়কর নিয়ে মাথা ঘামায়।

উপরন্তু সুনির্দিষ্ট কারন ছাড়া কিংবা কি কি কারনে স্থায়ী জব টার্মিনেট করা যাবে এগুলা ডিফাইন্ড নেই, প্র্যোয়োগ নেই। থাকলে মানুষ আদালতে যেত, যা বাইরের দেশে সাধারন ঘটনা। কারন অনেক সময় অভ্যন্তরীণ রাজনীতির কারনে, শত্রুতার কারনে লোকে জব হারায়, এদের কোন প্রটেকশন নেই।

পার্মানেন্ট জব এর ট্রার্মিনেশনঃ
পার্মানেন্ট জবের টার্মিনেশন প্রোনদনা কি হবে সেটাও ডিফাইন থাকা চাই।
একটি কোম্পানি যদি ফেয়ার টার্মিনেশন করে, অর্থাৎ চাকরিজীবীকে আইনানুগ বর্ধিত বেতন, ভাতা অগ্রিম দিয়ে স্থায়ী কন্ট্রাক্ট টার্মিনেট করে তাইলে সমস্যা নেই। কিন্তু যেহেতু এসব ফলোয়াপের কেউ নেই, তাই সবাই আমাদেরকে ঠয়ায়।


ভাই, আপনি খুব সাধারণ ভাবে ব্যাপারটা তুলে এনেছেন, দরকার সুনির্দিস্ট কন্ট্রাক্ট ভাঙার আলামত সহ লিখা। কেইস স্পেসিফিক হলে ব্লগটি খুব ভাল হোত।

৪| ১২ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ দুপুর ১:৫৫

এক নিরুদ্দেশ পথিক বলেছেন: বাংলালিংক এ কর্মী ছাটাই এর খবর বেশ কিছুদিন ধরে গুজব আকারে শোনা যাচ্ছিল। সম্প্রতি ৭ ফেব্রুয়ারি বাংলালিংকের সিইও বাংলালিংকের কর্মীদের সাথে এক সভায় সরাসরি বিষয়টি স্বীকার করেছেন।যদিও তিনি সরাসরি সংখ্যাটি বলেন নি,আকারে ইঙ্গিতে বুঝিয়ে দিয়েছেন মোটামুটি ৪০০ থেকে ৫০০ এর মধ্যে হবে। বাংলালিংকের মোট কর্মী সংখ্যা প্রায় ২ হাজার ৬২ জন। অর্থাৎ এক ধাক্কায় ২০ থেকে ২৫ শতাংশ কর্মী ছাটাই এর ধান্দা করছে বহুজাতিক ভিম্পলকম লিমিটেডের বাংলাদেশি সাবসিডিয়ারি বাংলালিংক।

ভিম্পেল্কম গ্লোবালি আউটসোর্সে যাচ্ছে, তাই ছাটাই বাড়ছে। এই কাজ এরিকসন বাংলাদেশে হয়েছে। এয়ারটেল বাংলাদেশ কখনই স্থানীয় টেকনিক্যাল ম্যানেজমেন্টে অপারেটে্ড হয়নি, এয়ারটেল ইন্ডিয়া এবং এরিকসন ইন্ডিয়ার যৌথ আউটসোর্সে কোম্পানিটি দীর্ঘ দিন চলেছে। এটা আমরা জানি না।

সাধারণত আউটসোর্স অপারেশন ইন্ডীয়াতে যায়।

এখানে ২ টা বিষয়ঃ

১। দেশের আইনে এটা থাকা চাই, মোট টার্ন ওভারের বিপরীতে কি পরিমান লোক নিয়োগ বাধ্যতামূলক, তাইলে কোম্পানি আউটসোর্স কি পরিমান করবে এগুলা তার ম্যানেজমেন্ট ডিসিসানে বিবেচনায় আনবে।
২। আইনের মধ্যে ডিফাইন্ড প্রণোদনা দিচ্চে কিনা?

৫| ১২ ই মার্চ, ২০১৬ রাত ১২:১৮

পিসিবাবু বলেছেন: ১২ মাসের সেলারি দিচ্ছে যারা যারা জব ছাড়ছে। grameen কিছুই দেয় নাই।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.