নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মাদারি

মাদারি › বিস্তারিত পোস্টঃ

বাংলালিংক গার্মেন্টস লিমিটেড: ট্রেড ইউনিয়ন, কর্মী ছাটাই ও র‌্যাবের গল্প

১২ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ৯:০৫

ট্রেড ইউনিয়ন করার অপরাধে গার্মেন্টস শ্রমিক ছাটাই এর খবর প্রায়ই শোনা যায়। ছাটাই এর প্রতিবাদে, মজুরির দাবীতে কিংবা ম্যানেজমেন্টের নির্যাতনের প্রতিবাদে প্রায়সই শোনা যায় অমুক গার্মেন্টস এর শ্রমিকরা মালিকপক্ষকে ঘেরাও করেছে, পড়ে পুলিশ বা র‌্যাব গিয়ে তাদের উদ্ধার করেছে। বাংলালিংকের কর্মীরা হয়তে কখনও ভাবেনি তাদেরকেও এরকম একটা পরিস্থিতিতে পড়তে হবে। কিন্তু পুঁজিপতি মালিকপক্ষের চরিত্রটাই এমন- মুনাফার জন্য পারে না এমন কোন কাজ নেই- হোক তা দেশীয় গার্মেন্টস মালিক বা বহুজাতিক কর্পোরেশন।

বহুজাতিক বাংলালিংক এতদিন আদর করে তার কর্মীদের ‘টাইগার’ বলে সম্বোধন করে এসেছে- যেকারণে গুলশানে বাংলালিংক এর হেড অফিসের নাম দেয়া হয়েছে- ‘টাইগার ডেন’। গত ১১ ফেব্রুয়ারি বৃহস্পতিবার রাতে সেই টাইগার ডেনের সামনে দেখা গেল অভাবনীয় দৃশ্য- কোম্পানির চিফ টেকনিক্যাল অফিসার মিশরীয় নাগরিক পেরিহান এলহামি টাইগার ডেন থেকে বের হতে চাচ্ছেন কিন্তু কয়েকশা কর্মীরা তাকে অবরুদ্ধ করে রেখেছে।




কারণ ঐদিন সন্ধ্যায় বাংলালিংক কর্তৃপক্ষ একজন সিনিয়র টাইগারকে হঠাৎ ছাটাই করেছে- আদরের টাইগারকে কুকুরের মতো বের করে দিয়েছে। তাকে ডেকে টার্মিনেশন লেটার ধরিয়ে দিয়েছে, তার অফিসিয়াল ল্যাপটপ সিজ করে নিয়েছে, এমনকি তাকে তার ব্যাক্তিগত সামগ্রী নেয়ার জন্য পর্যন্ত তার ডেস্কে ফিরতে দেয়া হয়নি- অন্য একজন সহকর্মীর মাধ্যমে তাকে তা সংগ্রহ করতে হয়েছে।

বৃহস্পতিবার ছাটাই করে বাংলালিংক কর্তৃপক্ষ ভেবেছিল- হঠাৎ করে ছাটাই এর কারণে কর্মীরা তাৎক্ষণিক কিছু করতে পারবেনা, শুক্র শনিবার বন্ধ থাকায় তাৎক্ষণিক উত্তেজনা রবিবার নাগাদ থিতু হয়ে আসবে এবং ট্রেড ইউনিয়ন গঠনের সাথে যুক্ত কর্মীদেরকে বেশ একটা ভয়-ভীতির মধ্যে ফেলে দেয়া যাবে। কিন্তু বাংলালিংকের কর্মীরা তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত নিয়ে এক অভাবনীয় সংহতির দৃষ্টান্ত তৈরী করে- তারা সকল ভয়ভীতি অতিক্রম করে বিদেশী সিটিও কে ঘেরাও করে এই ছাটাই বাতিল করার দাবী করতে থাকে। কর্মীরা বুঝতে পারে, গার্মেন্টস এর মতোই ট্রেড ইউনিয়ন সংগঠিত করার কাজে যুক্ত থাকার কারণে শরীফ হোসেনকে ছাটাই করেছে বহুজাতিক ভিম্পেলকমের বাংলাদেশি সাবসিডিয়ারি বাংলালিংক।

বাংলালিংকে বেশ কিছুদিন ধরেই কর্মী ছাটাইয়ের কথা বার্তা শোনা যাচ্ছিল। নেটওয়ার্ক এক্সপানসন মোটামুটি শেষ হয়ে যাওয়ায় কোম্পানি এখন আর আগের পুরনো বিশ্বস্ত কর্মীদের দরকার মনে করছে না, তারা এখন কোম্পানির দায়ভার- মুনাফার সর্বোচ্চ করণের জন্য এখন তাদেরকে ছাটাই করাই কোম্পানির জন্য লাভজনক। এক পর্যায়ে নতুন সিইও এরিক অস ‘টাউন হল’ সেশনের(এক ধরণের ঘরোয়া কর্মী সভা) মাধ্যমে ছাটাইয়ের কথা ঘোষণা করে- যদিও কত জন কর্মী কি কারণে ছাটাই করা হবে, তাদের কম্পেনসেশন কি হবে এইসব কোন কিছুই পরিস্কার করেনি। অবশ্য সিই্ও এর এই স্বীকারোক্তির আগেই কর্মীরা সংগঠিত হয়ে ট্রেড ইউনিয়ের জন্য প্রয়োজনীয় স্বাক্ষর সংগ্রহ করে রেজিস্ট্রেশানের আবেদন সম্পন্ন করে ফেলে। শ্রম আইনের ধারা ১৮৬ অনুসারে, ট্রেড ইউনিয়নের দরখাস্ত অনিস্পন্ন থাকা অবস্থায় মালিক পক্ষ কোন শ্রমিক বা কর্মীকে চাকুরি থেকে ছাটাই করতে পারবে না। কিন্তু তারপরও অবৈধ ভাবে কর্মী ছাটাই করে গার্মেন্টস মালিকের মতোই আচরণ করল বহুজাতিক কর্পোরেট বাংলালিংক।

এদিকে চিফ টেকনিক্যাল অফিসার পেরিহান এলহামিকে উদ্ধার করার জন্য ম্যানেজমেন্টের কেউ আসেনা। পেরিহানের বক্তব্য হলো, এই সিদ্ধান্ত আরো উপর থেকে এসেছে, তার কিছুই করার নাই। আরো উপর অর্থাৎ সিইও এবং মূল কোম্পানি বহুজাতিক ভিম্পলকম। কর্মীরা জানে এটা একা কারো সিদ্ধান্ত নয়, হেড কোয়ার্টারের সিদ্ধান্ত ও অনুমোদন ছাড়া এরকম এগ্রেসিভ আচরণ লোকাল ম্যানেজমেন্টের করতে পারার কথা না। তারা পেরিহানের মাধ্যমে হেড কোয়ার্টারে বার্তা দেয়ার সিদ্ধান্ত বহাল রাখে। এদিকে মিডিয়াকে নানা ভাবে যুক্ত করার চেষ্টা চলতে থাকে- এক পর্যায়ে কয়েকটি ইলেক্ট্রনিক ও অনলাইন মিডিয়া এসে হাজির হয়, নিউজ স্ক্রলে ঘেরাও এর খবর চলে আসে, যদিও প্রিন্টমিডিয়ার অনলাইন ভার্সন ও পরদিনের ছাপা কাগজে বোধগম্য কারণেই এর কোন চিহ্ন দেখা যাবে না। খবর পেয়ে আন্দোলনকারী বাংলালিংক কর্মীদের সাথে সংহতি প্রকাশ করতে আসে গ্রামীণ ফোন এমপ্লয়িজ ইউনিয়ন।

দুই গাড়ি পুলিশ সন্ধ্যা থেকেই উপস্থিত ছিল। গভীর রাতে এক পর্যায়ে এসে হাজির হয় র‌্যাব। সম্ভবত পেরিহানের দেশ মিশরের দূতাবাসের সাথে সরকারি যোগাযোগের ফলাফল স্বরুপ ঘটনাটা ঘটেছে- হাজার হলেও বিদেশী বিনিয়োগের নিরাপত্তা বলে কথা!


শিল্পপুলিশ যেমন শ্রমিকদের ঘেরাও থেকে গার্মেন্টস মালিকদের উদ্ধার করে নিয়ে যায়, র‌্যাব তেমনি ভীতিকর পরিস্থিতি তৈরী করে পেরিহান এলহামি কে উদ্ধার করে নিয়ে গেছে। বাংলালিংকের কর্মীরা কোন বাধা দেয় নি- তারা শুধু বলেছে- র‌্যাব দিয়ে সিটিও কে সাময়িক উদ্ধার করা গেলেও কোম্পানি তো আর র‌্যব দিয়ে চালানো যাবে না! রবিবার থেকে তারা আবার আন্দোলনে যাবে- প্রয়োজনে লাগাতার কর্ম বিরতির মাধ্যমে কর্মী ছাটাইয়ের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করতে বাধ্য করবে।

মন্তব্য ১৩ টি রেটিং +৯/-০

মন্তব্য (১৩) মন্তব্য লিখুন

১| ১২ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ৯:২১

মহা সমন্বয় বলেছেন: আচ্ছা কোম্পনাী বন্ধ হয়ে যাবে নাকি ? এত বড় কোম্পানী তাহলে কেমনে কি ??
যাই হোক- আন্দোলন চলবে।

২| ১২ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ৯:২২

গোধুলী রঙ বলেছেন: গুড জব!

৩| ১২ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ৯:২৪

মোঃ আলামিন বলেছেন: বিদেশী মাল গুলারে পিটাইয়া লাল করে দেয়া উচিৎ

৪| ১২ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ৯:৩১

অচল জ্ঞানী বলেছেন: দেশি মাইর পড়েনাইত! তাই......

৫| ১৩ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ১২:২৫

প্রামানিক বলেছেন: চিন্তার বিষয়। এমনি বেকারের জ্বালায় দেশের অবস্থা ভাল না।

৬| ১৩ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ সকাল ৮:০৮

বিদগ্ধ বলেছেন: সংহতি!

৭| ১৩ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ সকাল ৯:১৮

শুটকাভাই বলেছেন: বদমায়েসরা টাকা পয়সা পাচার করে নিয়ে যাচ্ছে হুন্ডির মাধ্যমে। অবকাঠামো উন্নয়নেও ওরা বাংলাদেশী সাব-কন্ট্রাক্টরদের কাজ দেয় না। ওরাস ইনভেষ্ট কিংবা অন্য নামে-বেনামে কাজ দিয়ে টাকা বিদেশে পাচার করে।

৮| ১৩ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ সকাল ১০:১১

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: র‌্যাব দিয়ে সিটিও কে সাময়িক উদ্ধার করা গেলেও কোম্পানি তো আর র‌্যব দিয়ে চালানো যাবে না! রবিবার থেকে তারা আবার আন্দোলনে যাবে- প্রয়োজনে লাগাতার কর্ম বিরতির মাধ্যমে কর্মী ছাটাইয়ের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করতে বাধ্য করবে।

এ জেনারেশন শুধূ ডিজুস নয়- প্রমাণের সময় এসেছে

চলুক অন্যায়ের বিরুদ্ধে তীব্র আন্দোলন।

৯| ১৩ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ সকাল ১১:৩৬

বিজন রয় বলেছেন: ভাল পোস্ট ++।

১০| ১৩ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ দুপুর ১২:১৭

নাসলিমা বলেছেন: Youtube adsense নিয়ে কিছু লিখুন

১১| ১৩ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ৮:১৬

মাঈনউদ্দিন মইনুল বলেছেন:


সরকার থেকে সুবিধাভোগীগুলোকে বের করতে হবে... তাহলে দেশি/বিদেশি সকল করপোরেটরা শ্রমিকের অধিকার দিতে বাধ্য হবে।

১২| ১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ সকাল ১১:৪৬

কাল্পনিক_ভালোবাসা বলেছেন: আপনি এই ব্যাপারে এত বিস্তারিত কিভাবে জানেন? আপনি কি কোন ধরনের অনুসন্ধান মুলক সাংবাদিকতার সাথে জড়িত? বা আপনি কি ঐ কোম্পানীতে কর্মরত কোন ব্যক্তি? বা আপনার কথার সত্যতা কি?

আপনি যা তুলে এনেছেন তা অবশ্যই গুরুত্বপূর্ন, এমনটা হলে সেটা নিন্দনীয়। তবে একটি কোম্পানীর বিরুদ্ধে যখন এই জাতীয় কোন খবর প্রকাশিত হয়, তখন অবশ্যই তার কোন সুত্র উল্লেখ্য করা উচিত। সেটা হোক নিজস্ব অনুসন্ধান বা কোন সোর্সের ভিত্তিতে। আপনার কাছ থেকে এই ব্যাপারে একটি বক্তব্য আশা করছি।

পোস্টটি পর্যবেক্ষনে রইল।

১৩| ২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ১২:১২

বখ বলেছেন: পুরো ঘটনাই সঠিকভাবে তুলে ধরা হয়েছে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.