নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মাদিহা মৌ

মাদিহা মৌ › বিস্তারিত পোস্টঃ

উত্থান পতন

১২ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:৩৩




এক

সাদা শার্টটা ইন করে পরে কালো টাইটা বেঁধে নিলো গলায়। আয়নায় তাকালো। নাহ! যথেষ্টই পরিপাটি দেখাচ্ছে! এখন শুধু ইন্টারভিউটা ভালোয় ভালোয় দিতে পারলেই ওকে আর পায় কে! খুশি খুশি মনে বাসা থেকে বের হলো মুনিফ।

মাত্র কয়েকদিন আগেই পাশ করে বের হয়েছে সে। বিষয় ছিলো সাংবাদিকতা। ছোট বেলা থেকেই খেলার প্রতি আলাদা একটা টান কাজ করে ওর। বিশেষ করে ক্রিকেটের প্রতি। খুব শখ ক্রীড়া সাংবাদিক হবে। তারই ধারাবাহিকতায় এখন ইন্টারভিউ দিতে যাচ্ছে সে।

“বাংলাদেশ সময়” বেশ জনপ্রিয় একটা পত্রিকা। এই পত্রিকায় ক্রীড়া সাংবাদিক হিসেবে যোগ দিতে পারলে আর পিছন ফিরে তাকাতে হবে না তাকে।

যেরকম খুশি খুশি মনে ইন্টারভিউ রুমে ঢুকেছিল , তারচেয়ে আরো দুইধাপ বেশি খুশিমনে বের হল সে। চাকরি হয়ে গেছে তার। মামা চাচা থাকলে যা হয় আর কি! এইটা রক্তের সম্পর্কের মামা-চাচা নয়। পলিটিশিয়ানর মামা-চাচা। গতকাল রাতে তেমনই একজনের পকেট ভারী করে দিয়ে এসেছিল মুনিফ। যার ফলস্বরূপ প্রথম ইন্টারভিউতেই চাকরি হয়ে গেছে । পরিস্থিতি পাল্টে যাওয়াতে স্বাভাবিকভাবেই হাঁটার মধ্যে কেতাদুরস্ত ভাব চলে এসেছে ওর। কলার উঁচু করে , "চাকরিটা আমি পেয়ে গেছি বেলা শুনছো! " গানটা গুনগুন করে গাইতে গাইতে “বাংলাদেশ সময়” ভবন থেকে বেরিয়ে এল সে। যদিও চাকরির জন্য অপেক্ষা করছে - এমন কোন বেলা নেই তার । তবুও. . . গান গাইতে ক্ষতি কী?

ফুরফুরে মনে বাসায় এসে সোজা ওয়াশরুমে ঢুকল। ঘন্টাখানেক শাওয়ারের নিচে ভিজবে। গত কয়েকদিনের দৌড়াদৌড়িতে বেশ ধকল গিয়েছে শরীরের উপর্। গোসল সেরে খেয়েদেয়ে লম্বা ঘুম দেবে সে। তারপর ঠান্ডা মাথায় ভাববে; কী নিয়ে কাকে নিয়ে তার প্রথম আর্টিকেলটা সাজাবে।

দুই

চোখে ল্যাম্পপোস্টের আলো এসে পড়াতে ঘুম টুটে গেছে মুনিফের। বিছানার পাশের জানালাটা দিয়ে আলো আসছে। তার পা , মাথা, আর ল্যাম্পপোস্টের লাইটটিকে পৃথক তিনটি বিন্দু কল্পনা করে রেখা টানলে একটি নিঁখুত ৬০° কোণ উৎপন্ন হবে। যে কারণে আলোটা সরাসরি চোখে এসে পড়ছে। মেজাজটা খিঁচড়ে গেল! এই ল্যাম্পপোস্টাকে তার অসহ্য লাগে। একটু শান্তিমত ঘুমানোও যায়না এটার অত্যাচারে। শোয়া থেকে বসে ল্যাম্পপোস্টটার দিকে তাকালো। মনে মনে মুন্ডুপাত করছে জড়বস্তুটার। হলুদ আলোটার দিকে তাকাতেই প্রথম আর্টিকেলের বিষয় খুঁজে পেল সে।

রাআদ রহমান!

হ্যাঁ! রাআদই হবে মুনিফের লেখা কলামের প্রথম সাবজেক্ট!

মুনিফের জায়গায় অন্য কেউ হলে কখনোই সে প্রথম আর্টিক্যালটা রাআদকে নিয়ে লিখত না। কিন্তু মুনিফ জানে; Raad is the perfect choice for him. ২০২০ সালে মাত্র পনের বছর বয়সেই রাআদ বাংলাদেশ অনূর্দ্ধ-১৯ দলে খেলার সুযোগ পেয়েছে। সেটাও আবার বিকেএসপিতে ভর্তি হওয়ার মাত্র তিন মাসের ভেতরে! অনূর্ধ্ব-১৭, অনূর্ধ্ব-১৯ হয়ে এ দলে খেলার সুযোগও পেয়েছে এই ছেলে। আসছে বিশ্বকাপে এর অভিষেক হবার সমূহ সম্ভাবনা আছে এর।

ইউটিউবে রাআদের পারফরমেন্সগুলো খুটিয়ে খুটিয়ে দেখতে লাগল মুনিফ। ছেলেটা বামহাতি মিডলঅর্ডার ব্যাটসম্যান এবং বামহাতি অর্থোডক্স স্পিনার। বোলিং স্টাইল আর শট খেলার ভঙ্গী দেখে ও বুঝতে পারল এই ছেলেই হবে দেশের ভবিষ্যৎ কিংবদন্তী! কোনভাবে সে যদি বিশ্বকাপে নির্বাচকমন্ডলীর চোখ এড়িয়ে যায়; তাহলে পস্তাতে হবে দলকে।

পরদিন বাংলাদেশ সময়ের খেলার পাতার অর্ধেকটা জুড়ে থাকল রাআদ রহমানের জীবনবৃত্তান্ত আর খেলোয়াড়ি জীবনের কাহিনী! প্রতিবেদক -মুনিফ খান!

তিন

আসন্ন বিশ্বকাপের জন্য পনেরো সদস্যের দল ঘোষণা করা হয়েছে। এবং তাতে অবধারিতভাবেই রাআদ রহমানের নাম আছে। অবশ্য এখানে মুনিফেরও বিশাল একটা ভূমিকা আছে। যদি সে ফলাও করে আর্টিকেলটা না লিখত; তাহলে হয়ত নির্বাচকমন্ডলীর চোখ এড়িয়ে যেত রাআদ। মুনিফের মাঝেমধ্যেই মনে হয় -তার নির্বাচক প্যানেলে থাকা উচিৎ ছিল। খেলোয়াড় নির্বাচনে ওর মত বিচক্ষণতা আর কারোর মধ্যে পরিপূর্ণভাবে আছে বলে মনে করেনা মুনিফ।

অভিষেকের পর আর পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি রাআদের্। একের পর এক সাফল্য উপহার দিয়ে যাচ্ছে সে। আর মুনিফের কীবোর্ডেও তাই বার বার রাআদের নাম উঠে আসছে। রাআদকে নিয়ে একটার পর একটা আর্টিকেল লিখেই চলেছে সে!

১| তিনি বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠান (বিকেএসপি)-এর প্রাক্তন শিক্ষার্থী। এখানেই তাঁর ক্রিকেটের হাতে খড়ি। বাংলাদেশ দলের উদীয়মান তারকা রাআদ আন্তর্জাতিক ও ঘরোয়া ক্রিকেট ছাড়াও ভারতীয় প্রিমিয়ার লীগ-এ ন্যাটপোল এবং ইংল্যান্ডের ঘরোয়া ক্রিকেটে ক্রিস্টারের হয়ে খেলেছেন। জন্ম ২ মার্চ ২০০৫ সালে রাজশাহীতে জন্মগ্রহণ করেন রাআদ। তাঁর পুরো নাম রাআদ রহমান। পরিবার দুই ভাইবোনের মধ্যে রাআদ বড়। রাজশাহীতে রাআদের পৈত্রিক বাড়ী। তাঁর বাবা রাজশাহী বিভাগীয় দলের ..... (এরপর পৃষ্ঠা ৩ কলাম ১)

২| ব্যাটিংয়ে হতাশ করলেও ক্যারিবিয়ান প্রিমিয়ার লিগে বল হাতে রাআদ রহমান ছিলেন রীতিমতো দুর্বার। ৮ ম্যাচে ১১ উইকেট নিয়ে টুর্নামেন্টের দ্বিতীয় সেরা বোলারতো তিনিই। বোলিংয়ের এই পারফরম্যান্সই তাঁকে জায়গা করে দিয়েছে টুর্নামেন্টটির সেরা একাদশে। . . . ( এরপর পৃষ্ঠা ৫ কলাম ৭)

৩| তাহলে কখনো কখনো আক্ষেপ থাকে! রাআদ রহমানকে ৬ উইকেট নিতে দেখেও যেমন মনে হচ্ছে, আরও দু-একটি উইকেট তো পেতেই পারতেন। ব্যাটসম্যান যে অল্পের জন্য বেঁচে গেলেন কয়েকবার! মাত্র ৬ রান দিয়েছেন, তার পরও যেমন মনে হচ্ছে যদি আর দু- একটি রান কম হতো! চোটের কাছে হার মেনে মাত্রই কদিন আগে অবসর নিয়েছেন আরুল সুপিয়াহ। আর একটি উইকেট নিলে বা দুটি রান কম দিলে সুপিয়াহর রেকর্ডটিকেও ‘অবসরে’ পাঠিয়ে দিতে পারতেন রাআদ রহমান! ... (এরপর পৃষ্ঠা ৬ কলাম ৩)


এরকম প্রায় প্রতিদিনই রাআদকে নিয়ে কিছু না কিছু লেখা থাকেই মুনিফদের পত্রিকায়। একজন খেলোয়াড়কে ভাল পজিশনে তুলতে পারফরমেন্সের পাশাপাশি মিডিয়াও যে বড় ভূমিকা রাখতে পারে -রাআদ রহমানই তার প্রমাণ! রাআদের আজকের অবস্থানের জন্য মুনিফ মনে মনে নিজেকে ক্রেডিট দিতে পছন্দ করে। যদিও সেটা প্রকাশ করে না। মুনিফ নিজেও এখন বেশ ভাল অবস্থানে আছে। “বাংলাদেশ সময়” পত্রিকার বেশ উঁচু স্থানে নিজের অবস্থান করে নিয়েছে। তাছাড়া পেপারের কাটতিও বেড়েছে অনেক। মুনিফ যাইই লিখুক না কেন পাঠক তাইই রুদ্ধশ্বাসে পড়ে ফেলে। সে ঠিক করল রাআদের একটা সাক্ষাৎকার নিবে।

চার

প্রশ্ন: সাধারণ জীবনযাপন করতে পারেন না, কোনো হতাশা?
রাআদ: খুব একটা খারাপ লাগে না। কারণ আমার ওরকম ঘোরাফেরার অভ্যাস কোনো সময়ই ছিল না। বিকেএসপিতে পড়ার কারণে আলাদা ভাবে থাকার একটা অভ্যাস হয়ে গেছে। রাজশাহীতে গিয়ে আরামে ঘুরতে পারি কোন ঝামেলা ছাড়াই। এশিয়ার বাইরে গেলে আরামে চলাফেরা করা যায়।
প্রশ্ন: বিকেএসপিই কী আপনার জীবন গড়ে দিয়েছে?
রাআদ: আমি তো বলবো হ্যাঁ। এ নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। বিকেএসপিতে ভর্তি না হলে আমার পক্ষে এত দূর আসা সম্ভব হতো না। রাজশাহীর ছোট একটা শহর থেকে কোনো ভাবেই তা করতে পারতাম না।"

টাইপ করতে করতে আপনমনে হাসে মুনিফ। হুম! রাআদ এখন স্টার্। তবে ওকে ফলেন স্টার বানাতে খুব একটা বেগ পেতে হবেনা মুনিফের্। হঠাৎ করেই হাসিটা মুছে যায় মুনিফের ঠোঁট থেকে। এইকথা ভাবছে কেন ও? ফলেন স্টার করার কথা মাথায় এল কেন? আশ্চর্য তো! নিজের উপরেই রাগ লাগছে ওর।

পাঁচ

মেজাজের তাপমাত্রা চরম সীমায় পৌঁছে গেছে মুনিফের্। এত্তো বড় সাহস! তার মুখের উপর না করে দেয়! মুনিফ খানের প্রস্তাব নাকচ করে! বলে কিনা অন্য পত্রিকার সাথে চুক্তিবদ্ধ হয়ে গেছে! স্টার হয়ে গেছে! তাই এখন সে ভুলে গেছে তার স্টার হওয়ার পিছনে কে অনন্য ভূমিকা পালন করেছে! "আমার পত্রিকায় কলাম লিখতে প্রত্যাখ্যান করে তুমি নিজে নিজের ক্ষতি ডেকে এনেছ রাআদ রহমান! এর জন্য পস্তাতে হবে তোমাকে!" দাঁতে দাঁত চেপে নিজেকেই যেন শোনাল কথাগুলো।

খুব বেশিদিন অপেক্ষা করতে হল না মুনিফকে। মাসখানেকের মধ্যেই প্রতিশোধ নেবার সুবর্ণ সুযোগ পেয়ে গেল ও। রাআদ বোর্ডের অনুমতি না নিয়েই ক্যারিবিয়ান প্রিমিয়ার লীগ খেলতে চলে গেছে। এবং সেই সাথে নির্বাচক মন্ডলীর সাথে বাকবিতণ্ডায় জড়িয়েছে। ঘটনা কতটুকু সত্যি , জানেনা মুনিফ। জানার দরকারও নেই। রাআদ রহমানকে নিয়ে আবার ওর কীবোর্ডে ঝড় উঠবে। তবে এবারেরটা পজিটিভ ইস্যু নিয়ে নয়; নেগেটিভ ইস্যু নিয়ে।

প্রেক্ষাপট বদলাতে খুব বেশি সময় লাগলো না।

ছয়


কিছুদিনের মধ্যেই ফের মুনিফের পত্রিকায় খেলার পাতার নিয়মিত নিউজে আসতে শুরু করলো রাআদ। তবে এবার আর পজিটিভ নিউজ হিসেবে নয় - নেগেটিভ নিউজ হিসেবে। হেডলাইন গুলো নিম্নরূপ -

*ড্রেসিং রুমে বেয়াদবির চূড়ান্ত করলেন রাআদ!

*এক ভক্তের প্রতি কটুক্তি ছুড়ে দিলেন অলরাউন্ডার ক্রিকেটার , রাআদ রহমান!

*বাইরে খেতে গেলে একবেলায় ২০-২৫ হাজার টাকা খরচ করেন বিশ্ব সেরা অলরাউন্ডার!

*নতুন গাড়ি ছুঁয়ে দেওয়ায় স্টেডিয়ামের গার্ডকে তেড়ে মারতে গিয়েছিলেন রাআদ রহমান।


এরকম নিউজ ছাপিয়ে ছোটবড় স্ক্যান্ডাল ছড়ানো শুরু করল মুনিফ। ইদানিং মিডিয়ার সামনে এলেই অপ্রিয় কিছু প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয় রাআদের্। সেগুলো সত্যি না হলেও সরাসরি বলতেও পারেনা ব্যাপার গুলো সত্য নয়। সাংবাদিক মুনিফ বাজে নিউজ ছাপে নাকি!

রাআদকে এইসব ছোটখাটো হেনস্তা করে মন ভরছে না মুনিফের! তার দরকার আলোড়ন সৃষ্টিকারী খবর! যেটার মধ্যে একটুখানি হলেও সত্য থাকতে হবে! এরপর সেটাকে তিলকে তাল বানিয়ে সাধারণ মানুষের সামনে উপস্থাপন করা চুটকি বাজানোর মতোই সহজ তার কাছে!

বেশিদিন অপেক্ষা করতে হলো না তার। এসিস্ট্যান্ট তার জন্য জবর খবর নিয়ে এসেছে!

ইংল্যান্ডের ঘরোয়া ক্রিকেট লিগে খেলতে যাওয়ার জন্য ডাক পড়েছে রাআদের। কিন্তু বিসিবি প্রধান জরুরী কাজে দেশের বাইরে। রাআদ তাই প্রধান নির্বাচক মন্ডলীর একজনের কাছ থেকে মৌখিকভাবে স্বীকৃতি নিয়েই চলে গেল খেলতে। অইদিকে নতুন কোচ প্র্যাকটিসের ডেট ফিক্সড করে জানলো রাআদ দেশে নেই। সে রাআদ কে দেশে ফিরে আশার জন্য মেইল করেছে। মেইলের উত্তর আসেনি তখনো।

মুনিফের ইচ্ছে করছে খুশিতে বগল বাজাতে! পরদিনই পত্রিকায় ছাপা হলো;

"কোন অনুমতি ছাড়াই দেশ ছেড়েছে রাআদ। কোচ তাকে ফিরে আসতে বলায়; সে কোচের মুখের উপর 'না'করে দিয়েছে! সেই সাথে বলেছে; দেশের হয়ে নাকি তিনি আর খেলবেন না! ……… "(বিস্তারিত শেষের পাতায় ৫ কলাম)

জনগণ খবরটাকে ঠিক সেভাবেই নিল - যেভাবে মুনিফ চেয়েছে! কিছু রাআদ হেটারের অতি তৎপরতায় রাআদের অবাধ্যতার খবর (!) ঘুরে বেড়াতে শুরু করলো লোকের মুখে মুখে। "দেশের হয়ে খেলব না" - কথাটা অর্ধেকের বেশি মানুষ বিশ্বাস করে ফেলল এবং তাদের মন রাআদের প্রতি তীব্র ঘৃণায় ভরে গেল।

দিন দুয়েকের মধ্যে রাআদ দেশে ফিরে এসে দেখল - দুইটা দিনে তাঁর দুনিয়া উলট-পালট হয়ে গেছে। দেশের হয়ে খেলবে না -এরকম কোন কথা সে বলেনি; কথাটা বার বার বলা স্বত্ত্বেও তাকে নিয়ে বোর্ড মিটিং বসল। বোর্ড সিদ্ধান্ত নিল - খেলোয়াড়রা যাতে অনিয়ম না করে তার দৃষ্টান্তস্বরূপ- রাআদকে কঠিন শাস্তি দেওয়া হবে। হাতজোড় করে মাফ চাওয়ার পরও তাকে দশ মাসের জন্য সকল ধরনের ক্রিকেট থেকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হল!

এই খবর ছড়িয়ে পড়ার পর সারাদেশের ক্রিকেটপ্রেমিরা হাহাকার করে উঠল। তারা উদ্ধত রাআদের শাস্তি চেয়েছিল ঠিক , কিন্তু এতটা কঠিন শাস্তি চায়নি। রাআদের শাস্তি কমানোর দাবী নিয়ে কিছু তরুণ আন্দোলন করল। দেশবাসীর সাথে সাথে বিদেশী ক্রিকেটপ্রেমিরাও এই রায়ে তীব্র অসন্তোষ প্রকাশ করল।

এতকিছুর পরও বিসিবি তাদের সিদ্ধান্তে অনড়। শাস্তি কমানোর আবেদনে সাড়া দিলে তাদের কথা(!)র দাম(!) কমে যাবে - এই ভয়ে আবেদন নাকচ করে দিল। নিয়ম শৃঙ্খলা রক্ষার্থে এই শাস্তির নাকি প্রয়োজন আছে!

সাত

দশমাস পার হতে আর অল্পকিছু দিন বাকি। আক্ষরিক অর্থেই এই দশমাস রাআদের কেটেছে নরক যাপনের মত। দশমাস শেষ হবার পর সে নেটে গেল প্র্যাকটিস করতে। সতীর্থদের বাঁকাচোখে তাকানো উপেক্ষা করে সে প্র্যাকটিস করছে। প্রত্যেকটা বল ব্যাটের আঘাতে দূরে সরে যাওয়ার সময়টায় রাআদ বুঝতে পারল - তার শরীরে জং ধরেছে! বার বার চেষ্টা করেও সে তার নিজের স্টাইলে শর্ট খেলতে পারল না।

বিশ্বকাপ আসন্ন। ১৫ দলের স্কোয়াড ঘোষণা করার আগে অস্ট্রেলিয়ার সাথে একটা প্রীতি ম্যাচ খেলবে ওরা। দশ মাস পর এটাই রাআদের প্রথম ম্যাচ। কঠোর পরিশ্রম করল সে ম্যাচের আগে। প্র্যাকটিসের জন্য নেটে অনেক বেশি সময় কাটাল। নিজেকে ফিরে পাবার নিজেকে ফিরে পাবার , নিজের ফর্ম ফিরে পাবার আপ্রাণ চেষ্টা করল।

কিছুতেই কিছু হল না। অজিদের বিপক্ষে নিজেকে তুলে ধরতে পারল না রাআদ। না ব্যাটিংয়ে , না বোলিংয়ে! পুরোপুরি ব্যর্থ সে। নিজের মধ্যকার হতাশা আর চেপে রাখতে পারছে না সে। জানে - পারফরমেন্সের এই দশা দেখার পরও কোনভাবেই তাকে বিশ্বকাপের জন্য স্কোয়াডে রাখা হবে না! আজীবন লোকে যাকে আবেগশূন্য মানুষ হিসেবে জানত -সে মাঠ ছাড়ল চোখের পানি মুছতে মুছতে।

মনে একটু ক্ষীণ আশা ছিল, "Form is temporary, class is permanent"- এই ব্যাপারটা মাথায় রেখে হলেও তাকে হয়ত বিশ্বকাপের ১৫ জনের স্কোয়াডে রাখা হবে। হয়নি! ভীষণভাবে ভেঙে পড়েছে রাআদ। কখনো আর ক্রিকেটে ফিরতে পারবে কিনা জানে না। নিজের উপর বিশ্বাস হারিয়েছে সে। শুধু একটা প্রশ্ন তার মনে - "কী দোষ ছিল তার?" কিন্তু এখন আর এই প্রশ্নের জবাব কেউই দিবেনা! কেউ না!

পরিশিষ্টঃ
চোখে ল্যাম্পপোস্টের আলো এসে পড়াতে ঘুম টুটে গেল মুনিফের। বিছানার পাশের জানালাটা দিয়ে আলো আসছে। তার পা , মাথা, আর ল্যাম্পপোস্টের লাইটটিকে পৃথক তিনটি বিন্দু কল্পনা করে রেখা টানলে একটি নিঁখুত ৬০° কোন উৎপন্ন হবে। যেকারনে আলোটা সরাসরি ওর চোখে এসে পড়ছে। মেজাজটা খিঁচড়ে গেল! এই ল্যাম্পপোস্টাকে অসহ্য লাগে ওর। একটু শান্তিমত ঘুমানোও যায়না এটার অত্যাচারে। শোয়া থেকে বসে ল্যাম্পপোস্টার দিকে তাকালো। মনে মনে মুন্ডপাত করছে জড়বস্তুটার। প্রতিদিনই করে। প্রত্যেকটা দিন অসময়ে জ্বলে উঠে কেন যে তার ঘুম ভাঙ্গায় এটা - তা ভেবে রাগে গজগজ করল কিছুক্ষণ! সে নিজে যে অসময়ে ঘুমায় - তা আর মাথায় নেই। ল্যাম্পপোস্টের হলুদ আলোর দিকে চোখ পড়তে মৃদু একটা হাসি ফুটল ঠোঁটে। Rahman Raad chapter is closed! গায়ের কাঁথাটা শরীর থেকে সরিয়ে বিছানা থেকে নেমে পড়ল মুনিফ। "আহমেদ শরীফ" কে নিয়ে আর্টিকেল লিখতে হবে তার্। ছেলেটা লীগ ক্রিকেটে দারুণ খেলছে!

সমাপ্ত



বি:দ্র: আপনারা যারা ক্রিকেটপ্রেমি; তারা সবাইই বুঝতে পেরেছেন - এই গল্প আমি কাকে নিয়ে লিখেছি! হ্যাঁ! ঠিক ধরেছেন! আমি বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান কে নিয়েই লিখেছি! বোর্ড আর মিডিয়ার উপর তীব্র রাগ আর ক্ষোভ নিয়ে গল্পটা লিখেছি আমি। গল্পে শেষটা যতটা মর্মান্তিক - বাস্তবে ততটা হয়নি। কিন্তু যখন সাকিবের শাস্তির রায় ঘোষণা করা হল - তখন আমার মনে হয়েছিল , এরকমটাই হবে ওর সাথে! চক্রান্ত করে ওর ক্যারিয়ারটাকে নষ্ট করে দেওয়া হবে! যেমনটা হয়েছিল আমিনুল ইসলাম বুলবুল; অপি; হাবিবুল বাশার সহ আরো অনেকেরই। খুশির বিষয় হল - তেমন কিছুই হয়নি। আমাদের সাকিব ঠিক তাঁর নিজের মত করেই ফিরেছে! দোয়া করি , আরো বহুবছর সে ভালোভাবে খেলে যাবে আমাদের দলের হয়ে।

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +৪/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ১২ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ৮:২৫

মহা সমন্বয় বলেছেন: আমিও ভাবছিলাম সাকিব বুঝি গেল.. সাকিবের কিন্তু হারিয়ে যাওয়াটা অসম্ভব কিছু ছিল না। অনেক তারকাই জনপ্রিয়তার মধ্য গগণ থেকে পদস্ফলনের কারনে অতল গহীনে হারিয়ে যায়।
তবে সাকিব হারিয়ে যায় নি এটা আমাদের জন্য ভাল।

১২ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ৯:২৬

মাদিহা মৌ বলেছেন: অনেক তারকাই জনপ্রিয়তার মধ্য গগণ থেকে পদস্ফলনের কারনে অতল গহীনে হারিয়ে যায়।

সাকিব সেই অনেক তারকাদের মত নয়। সে আলাদা। আলাদা দেখেই তো বিশ্বসেরা সে। জনপ্রিয় সবাই ই তো আর বিশ্বসেরা হতে পারে না। :)

২| ১২ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ৯:৪৪

মহা সমন্বয় বলেছেন: হুম তা তো অবশ্যই তা না হলে কি আর বিশ্বসেরা হতে পারে!!
আর আপনি দেখি সাকিবের এক বিশাশাশালল ভক্ত, এক কথা কি সাকিব জানে ??

১২ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ৯:৫৫

মাদিহা মৌ বলেছেন: সাকিব না জানলেই কি তার ভক্ত হওয়া যাবে না?

তাঁকে নিয়ে লিখলে সেটা জানিয়েই লিখতে হবে এমনটাও তো নয়!

আপনার মন্তব্যটা ভালো লাগেনি।

আর, আমি শুধু সাকিবেরই না - পুরো বাংলাদেশেরই বিশাল বড় ভক্ত! :)

৩| ১৩ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ দুপুর ১২:৫৬

কথাকথিকেথিকথন বলেছেন: সুন্দর গল্প সাজিয়েছেন । সাকিবের বেলায় না হলেও এভাবে অনেক ট্যালেন্ট হারিয়ে যায় ।

১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ সকাল ৯:২১

মাদিহা মৌ বলেছেন: এটা ঠিক! অলক্ষ্যের রাজনীতির কারণে ট্যালেন্ট অনেক হারিয়েই যায়। আমাদের নজরেও আসলে তেমনটা পড়ে না তাদেরকে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.