নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সত্য সুন্দর চিরঞ্জীব

এম.এ.জি তালুকদার

আমি একজন গৈ-গেরামের সাধারণ মানুষ

এম.এ.জি তালুকদার › বিস্তারিত পোস্টঃ

একটি সড়ক দূর্ঘটনা-- সারা জীবন নয়, কয়েক প্রজন্মের কান্না।।

০৯ ই মার্চ, ২০১৬ বিকাল ৫:২৭




এসএসসি পরীক্ষায় রচনা লেখার পুরো নম্বর প্রাপ্তীর জন্য ‘‘একটি সড়ক দুর্ঘটনা’’ শিরোনামে বাংলা ও ইংরেজীতে পাঠ্য বইয়ের একটি রচনা হুবহু অনেক কষ্ঠ করে মুখস্ত করেছিলাম। রচনাটির সূচনা, বর্ণনা ও উপসংহারের প্রতিটি অংশ এত কষ্ট করে মুখস্থ করার পিছনে ক্লাসের শিক্ষকদের চেয়ে বশি ভুমিকা পালন করেছিল আমার পিতা। তাঁর সার্বক্ষনিক তদারকি এবং ভয়ঙ্কর মূর্তিতে ধুমকা-ধুমকির ফলে নিজের শত অনিচ্ছা সত্বেও উপরোক্ত অঘটনের রচনাটি অত্যন্ত ঝরঝরেভাবে আমার ঠোটস্থ হয়ে গেল। এই রচনাটি এসএসসি পরীক্ষায় যে শতভাগ কমন পড়ে যাবে -এ বিষয়ে আমাদের বিদ্যালয়ের অত্যন্ত খ্যাতিমান একজন শিক্ষক চ্যালেঞ্জ ছুড়ে অনেকটা আমাদের এলাকায় মাইকিং করার মত প্রচার করে দিয়েছিলেন। যে কারণে স্কুলের পাশাপাশি প্রতিটা পরীক্ষার্থীর অভিভাকগন তার সন্তানের পরীক্ষা প্রস্তুতির বিষয় মানেই বুঝতেন‘‘একটি সড়ক দুর্ঘটনা’’ তাঁর ছেলে মুখস্থ করেছে কি না?। যদি কোন ছাত্রের অভিভাবক তাঁর সন্তানের এই রচনাটি মুখস্থের ব্যাপারে একটু খারাপ কিছু বুঝতেন বা মুখস্থের বিষয়ে কোন প্রকার দূর্বলতা দেখতেন তাহলে হয় তিনিই সন্তানের খবর করতেন অথবা এই তথ্য ঐ মাষ্টার সাহেবের কানে তুলে দিতেন এবং এ বিষয়ে যা করার মাষ্টারই তা অতি সহজেই করতেন। অতঃপর অনেক প্রতীক্ষা আর প্রস্তুুতিয়ান্তে পরীক্ষার হলে গিয়ে সেই অনেক কষ্ট করে মুখস্থ করা রচনা আর আমাদের কমন পড়লো না। পরীক্ষায় খাতায় ‘‘ একটি সড়ক দূর্ঘটনা’’-এর ছবি আঁকতে না পারার কারণে আমাদের অনেকেরই ঐ বছর ব্যাকরনে পাশ করা নিয়ে টানাটানি এবং কান্নাকাটি শুরু হয়েছিল। পরে অবশ্য ঐ স্যার বলেছিলেন যে, ‘‘দুর্ঘটনা একটি অতি খারাপ এবং জীবন ও পরিবার ধবংসী বিষয় যে কারণে হয়তো কর্তৃপক্ষ এ বিষয়টা এড়িয়ে গেছেন’’। কিন্তু কর্তৃপক্ষ এড়িয়ে গেলেও আমার জীবনের খাতায় সড়ক দুর্ঘটনা অভিশাপ ঠিকই পাঠিয়ে দিলেন সর্বকালের সর্বশ্রষ্ঠ মহান কর্তৃপক্ষ। এর মাত্র ০৫ বছর পর ১৯৯৮ সনে এক সাথে আমার পিতা এবং আমার খালু দুজন মালবাহী ট্রাক গাড়ীর ধাক্কায় ভ্যান গাড়ী হতে ছিটকে পড়ে ঢাকা-বগুড়া বিশ্বরোডের ধানগড়া-ষোলমাইল নামক স্থানে এক মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনার শিকার হন। এই দুর্ঘটনার স্থান আমাদের বাড়ী হতে বেশ কিছু দুর হওয়ার কারনে প্রথমে আমরা কিছু জানতে পারি নাই। এই ঘটনার ৮/১০ ঘন্টা পরে জানতে পারলাম যে, আমার পিতা ও আমার খালু সড়ক দুর্ঘটনায় কঠিনভাবে আহত হয়ে বগুড়া মোহাম্মদ আলী হাসপাতালে মারা গেছেন। পরে তাঁদের লাশ আনার সময় এই হাসপাতালের কর্মরত অসাধু /দালাল কিছু লোক ডেড-বডিতে ময়না তদন্তের নামে তাদের শরীর কাটা ছেড়ার ভয় দেখিয়ে আমাদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকাও হাতিয়ে নেয়। তাঁদের করুন মৃত্যূতে আমি ব্যক্তিগত ভাবে কোন বিচার পাওয়ার আশা করি নাই। কারণ, ঐ কিশোর বয়সেই পড়েছিলাম যে, এ ধরনের মৃত্যু কোন হত্যা নয়, এটা নিছক অস্বাভাবিক বা দৈব ঘটনার ফলাফল মাত্র। কিন্তু সব মনে হওয়া কথাই বাস্তবতার প্রেক্ষিতে মেনে নেয়া যায়না। আমরা যারা সাধারন মানুষ তারা প্রচলিত নিয়মকে আইনের মতো শ্রদ্ধা করলেও, আমাদেরও আত্মা আছে। আমরাও প্রিয়জনকে হারিয়ে কষ্ট পাই। আমার বুঝতে খুব কষ্ট হয় যে, যেখানে কাউকে ছোট একটা অস্ত্র দিয়ে মারলে/আঘাত করলে হত্যা বা হত্যার প্রচেষ্টা হিসাবে গণ্য করা হয়,- যা শাস্তিযোগ্য অপরাধ ; অথচ বিশাল একটা ট্রাক দিয়ে মানুষকে থেতলে রাস্তায় পিসে মারলেও এটা দুর্ঘটনা হয়।- এগুলো মানতে আমাদের কষ্ট হয়! এই রকম নির্মমভাবে একজন মানুষ অন্যের হাতে নিহত হবে! অথচ এর দায়িত্ব সেই ঘাতক নিবেনা? আমার দাবী-- এর সমুদয় দায় দায়িত্ব ঐ ঘাতক যদি বহন না করে, তাহলে এর দায়িত্ব প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে রাষ্ট্রকেই নিতে হবে। সড়ক হত্যা আজ কোন পর্যায়ে নেমেছে এবং এই রকম ঘটনার খবর পত্রিকায় প্রতিদিন আজ কেন আসছে?-এই কথাগুলো জীবনের তাগাদায় সড়ক পথে চলি আর ভাবি।
সিরাজগঞ্জ-হাটিকুরমরুল-বনপাড়া নাটোর মহাসড়কে যাতাযাত করতে প্রায়ই দেখি যে, দুয়েকটা কুকুর বা এই জাতীয় বেওয়ারিশ পশু রাস্তায় যানবাহনের আঘাতে মারা গিয়ে যানবাহগুলোর একের পর এক চলন্ত চাকায় একাধারে পিষ্ট হতে হতে ওর চামড়াটা শুকিয়ে অবশেষে পলিথিনের মতো উড়তে উড়তে এক সময় রাস্তার পাশে হারিয়ে যায়। এই অমানবিক দৃশ্য হয়তো আজ সারা বাংলাদেশে মানুষ দেখতে দেখতে অভ্যস্ত হয়ে যাচ্ছেন। এ দৃশ্যে ঘাতক, পথচারী বা কর্তৃপক্ষ কতটুকু মনে আঘাত পান সেটা না হয় বাদই দিলাম কিন্তু এটা যে মারাত্মকভাবে পরিবেশ বিপর্যয় ঘটায়!!?? েএবং এই নোংরা পরিস্কার করার দায়িত্বটাই বা কার? তাছাড়া এই মহাসড়কে ভারী যান ও ক্ষুদ্র যান চলাচলের জন্য মহাসড়কটি সমান্তরালভাবে দু’ভাগে বিভক্ত হওয়ার কারণে পূর্বে এখানে সড়ক হত্যা খুন হওয়ার সম্ভাবনা খুব কম ছিল। কিন্তু সম্প্রতি বিভক্ত রাস্তার মাঝখানে খেজুর, কুল জাতীয় কাটাওয়ালা কিছু বৃক্ষ জন্মানোর কারনে গোদের উপরে যেন বিষফোঁড়ার সৃষ্টি হয়েছে। আমার প্রশ্ন এগুলো ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব কেউ না করলে, এভাবে আর কতদিন চলবে ? এটাতো দেশের একটি সড়কের কিছু সমস্যার একটি চিত্র মাত্র। বর্তমানে রাস্তায় বিভিন্ন ধরনের খেলার মতো যানবাহনের ছড়াছড়ি। নছিমন, করিমন, ভুটভটি, অটো-ভ্যান এগুলোর না আছে কাগজপত্র, না আছে এই সমস্ত গাড়ী চালকের কোন প্রকার শিক্ষা-দীক্ষা বা কোন প্রকার গাড়ী চালানোর ভালো অভিজ্ঞতা। পায়ে চালানো রিক্সা-ভ্যান আজ অচল হওয়ার কারনে, এই সমস্ত যানবাহনের অনেক বেকার ড্রাইভারই এখন ইঞ্জিন চালিত এই পরিবহনগুলোর চালক হয়ে এই ধরনের সমস্যাকে আরও জটিল করে তুলছে। এই সমস্ত খেলাড়ী পরিবহনের বেশিরভাগ যাত্রীই হন গৈ-গেরামের অশিক্ষিত ও অসচেতন নাগরিক। এখন আমার মনে হয় সড়ক দুর্ঘটনার সবচেয়ে বড় কারণ হলো-পরিবহন ব্যবসা কাজে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিগণ সেবার বদলে শুধুমাত্র এটাকে বাণিজ্যিক মন মানসিকতায় নেয়া। কিছু অসাধু মুনাফাখোর মানুষ রাতারাতি ধনপতি হওয়ার বাসনায় দু-একটা যানবাহন কিনে শুরু করেন টাকা কামানোর ধান্দা। তাছাড়া আমাদের দেশের ড্রাইভার গুলো বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই নিদিষ্ট বেতনের বদলে দৈনিক গাড়ির আয়ের উপর মালিক কর্তৃক একটা কমিশন প্রদানের মাধ্যমে গাড়ী চালান।
যে কারণে গাড়ির মালিক এবং গাড়ির ড্রাইভার উভয়েই বেশি অর্থ কামাইয়ের লোভে গাড়িটি রাস্তায় এনেই শুরু করেন পাগলের মতো অর্থের পিছনে বিদ্যুৎ গতিতে ছুটেচলা। আজকাল নিবির পল্লী জনপদের মধ্যে ইটভাটি বা এই ধরনের শিল্প প্রতিষ্ঠান স্থাপনের ফলে, এই সমস্ত প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজনীয় মালামাল পরিবহনের কাজে ব্যবহৃত গাড়িগুলোর বেপরোয়া গতির কারণে নিবির পল্লীর মানুষও এখন সড়ক নয়,গাড়ী দূর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন প্রতিনিয়ত। তাছাড়া গাড়িগুলোর চালকরা রাস্তায় দুর্ঘটনা ঘটিয়ে অতি দ্রতি পালিয়ে যায়। যেকারণে শুধু রাজপথ নয়, দেশের সর্বস্তরের রাস্তায় এই মনিটরিং ব্যবস্থার প্রসার ঘটাতে হবে। রাস্তার মাঝে মাঝে অভিযোগ কেন্দ্র স্থাপন করে অভিযোগ কেন্দ্রের টেলিফোন বা মোবাইল নম্বর ব্যাপকভাবে জনগণকে জানানোর ব্যবস্থা করতে হবে। এ বিষয়ে প্রতিটি স্থানীয় গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য নির্দেশ প্রদান করা যেতে পারে। সর্বপরি ব্যাপক জনসচেতনতা সৃষ্টির পাশাপাশি সড়ক দুর্ঘটনাকে একটি হত্যা হিসাবে বিবেচনা করে এবিষয়ে প্রয়োজনীয় আইন সংশোধন পূর্বক অভিযুক্তদের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যু দন্ডের ব্যবস্থা করলেই আমার বিশ্বাস সড়ক দুর্ঘটনা নির্মুল না হলেও, মহামারি আকার ধারন করবে না।

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ০৯ ই মার্চ, ২০১৬ বিকাল ৫:৫০

কল্লোল পথিক বলেছেন:






ধন্যবাদ।
খুব সুন্দর একটা বিষয় তুলে ধরেছেন।

০৯ ই মার্চ, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:২৬

এম.এ.জি তালুকদার বলেছেন: নারে ভাই সুন্দর নয়, আমার জীবনের করুন কাহিনী

২| ০৯ ই মার্চ, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:২৫

এম.এ.জি তালুকদার বলেছেন: নারে ভাই সুন্দর নয়, আমার জীবনের করুন কাহিনী।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.