নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বলার মত তেমন কোনো গুন নেই এমনকি কোনো কিছুতেই সেরা নই কিন্তু সব সময় সেরাদের আশে পাশে থেকে সব সময় শিখতে চাই...\n

মাহদি (এক জন মেরুদণ্ডী প্রাণী)

মাহদি (এক জন মেরুদণ্ডী প্রাণী) › বিস্তারিত পোস্টঃ

স্কুল বুলিং - আর নয় অবহেলা !

১৫ ই জুলাই, ২০১৮ বিকাল ৫:৫৬

আকিবের রেজাল্ট কার্ড দেখে সবার চোখ ছানাবড়া । মাত্র গতবছর JSC তে ট্যালেন্টপুলে স্কলারশিপ পাওয়া ছেলে বছর ঘুরতেই ইয়ার ফাইনালে ৪ টি বিষয়ে ফেল !
ইদানিং কারো সাথে কথা বলতেও চায় না অভিমানী ছেলেটা। চুপ চাপ নিজের ঘরে বসে থাকে।স্কুলে তো যায়না বললেই চলে। রাত জেগে জেগে চোখের নিচে কালো দাগ পরে গিয়েছে। সেদিন তো ওর বাবা আচ্ছা মত মারল - অপরাধ, ওর ঘরে সিগারেট এর পেকেট পাওয়া গিয়েছে।
বেপারটা এখানেই থামল না, দুদিন বাদেই স্কুল থেকে ফোন। ওর থেকে অনেক লম্বা এক ছেলেকে উইকেট দিয়ে বাড়ি দিয়ে মাথা ফাটিয়ে দিয়েছে, অবস্থা আশংকা জনক।

আকিব তার বয়সের অন্য ছেলেদের থেকে উচ্চতায় অনেক খাটো। গায়ের রং আর চেহারা সুবিধাজনক না হলেও ছেলে সে অনেক ভাল।কারো সাথে ঝগড়ার বা টিচারদের সাথে বেয়াদবীর কোনো রেকর্ড নেই। সেই ছেলের এমন অধঃপতন !

প্রথমবার তাই ওয়ারনিং আর বেত মেরে ছেড়ে দেয়া হল। বাসায়ো চলল আরেক দফা ।
খোজ নিয়ে জানা গেল, স্কুলের কিছু লম্বা ছেলে আকিবকে নিয়মিত উতক্ত করত।টিফিন খেয়ে ফেলত ওর। স্কুলের মেয়েদের সামনে ওকে 'লিলিপুট আকিব' বলে ডাকত। ওদের ফুট ফরমায়েশ না মানলেই লাথি-ঘুষি মেরে অবাধ্যতার শাস্তি দিত।

আকিবের বাবারো ধারনা খুব করে একদিন ধোলাই দিলেই সোজা হবে ছেলে। কিন্তু বেপারটা আরো খারাপ হল,বিষন্নতায় আকিব সুইসাইড করল।
স্কুল বুলিং' এর শিকার হয়ে অগোচরে ঝড়ে গেল আরেকটি মেধাবী প্রান।

স্কুল বুলিং' এর ঘটনাটি আমাদের আশে পাশে হার হামেশা হয়ে আসছে কিন্তু আমরা কেউই তেমন আমলে নেই না।

আচ্ছা স্কুল বুলিং কি ?

ইচ্ছাকৃত এবং অপ্রয়োজনীয়ভাবে শক্তি প্রদর্শনের উদ্দেশ্যে স্কুলের এক/ একদল শিক্ষার্থী দ্বারা দুর্বল শিক্ষার্থী প্রতিপক্ষের উপর হিংসাত্মক আচরনই হল স্কুল বুলিং। প্রত্যক্ষদর্শীদের কাছে নিজেদের জাহির করার সাথে সাথে ভিক্টিমকে হাসির পাত্র হিসেবে উপস্থাপন করাই এর প্রধান উদ্দেশ্য বা কারন।

যেমনঃ ব্যঙ্গাত্মক নামে ডাকা,শিক্ষার্থীকে অন্য শিক্ষার্থী দের সামনে অপদস্থ করা, ধাক্কাধাক্কি, লাথি মারা, সামাজিকভাবে বয়কট করা ইত্যাদি ।

স্কুল বুলিং এর ধরন :

১)শারীরিক( Physical ) বুলিং : ফেলা দেয়া,ধাক্কা দেওয়া, মারা, খোঁচা দেওয়া,থুতুছিটানো,চশমা,ঘড়ি,টিফিনবক্স ইত্যাদি জিনিসপত্র জোর করে নিয়ে যাওয়া, লুকিয়ে রাখা,ভেঙে ফেলা, অসংলগ্ন অংগ ভংগী ইত্যাদি।

২) আবেগীয় (Emotional) বুলিং :
কাওকে একঘরে করে রাখা, তার সাথে না মেশা এবং অন্য সহপাঠীদেরকেও মিশতে মানা করা। এখানে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীকে দিয়ে উদাহরণ সৃষ্টি করা হয় যাতে অন্যদের নিয়ন্ত্রন করা যায়।

৩) মৌখিক (verbal) বুলিং : মিথ্যা অপমানজনক বিবৃতি, অভিযোগ বা গুজব ছড়ানো, ভেংচি কাটা, কটাক্ষ করা,খারাপ ভাষায় সম্বোধন করা। যেমন : টাকা চুরির অভিযোগ, কোন মেয়েকে মন্দ চরিত্রের প্রমানের জন্য স্কুলে গুজব ছড়ানো।

৪) সাইবার(Cyber) বুলিং : ক্লাসের ফেসবুক গ্রুপ বা অন্য ভারচুয়াল সামজিক মাধ্যমে ভিক্টমের ছবি নিয়ে মজা করা,আপত্তিজনক মেসেজ/ছবি পাঠানো, ক্লাসের মেসেঞ্জার/ হোয়াটস এপ গ্রুপ থেকে বের করে দেয়া, নিয়মিত বাজে কমেন্ট করা ইত্যাদি।

৫)সেক্সুয়াল(Sexual)বুলিং :অপ্রত্যাশিতভাবে শরীরের বিভিন্ন স্থানে স্পর্শ করা বা করার চেষ্টা করা,ইংগিতবাহী চিহ্ন প্রদর্শন, কয়েকজন মিলে প্যান্ট খুলে দেয়া, বিভিন্ন আপত্তি জনক স্থানে পানি বা রং ঢেলে দেয়া।

৬)জাতিগত ( Racial) বুলিং : জাত,বর্ন,গোত্র,ধর্ম, পেশা, গায়ের রঙ নিয়েও বুলিং করা হয়। এক্ষেত্রে বরিশাল, নোয়াখালী, কুমিল্লার শিক্ষার্থীরা বেশি ভুক্তভোগী। বাংলাদেশে জন্মসুত্রে নাগরিক বিহারী ছাত্ররাও এক্ষেত্রে ভিক্টিম। মুসলিম অনেক বাচ্চাদের বাসা থেকে বলা হয় সংখ্যালঘু বিশেষত হিন্দু সম্প্রদায়ের শিশুদের সাথে মিশলে তারাও হিন্দু হয়ে যাবে। এই ভ্রান্ত ধারনা কোমলমতি শিশুরা স্কুলের অন্যদের মাঝে ছড়িয়ে দেয় ফলে হিন্দু বাচ্চাটির সাথে কেউ মিশে না।

আমাদের দেশে ছেলেদের ক্ষেত্র শারীরিক ( Physical) বুলিং এবং মেয়েদের ক্ষেত্রে মৌখিক(Verbal),আবেগময়(Emotional)ও সাইবার(Cyber) বুলিং এর হার বেশি।

অপরদিকে বাংলা মিডিয়াম স্কুল গুলোতে বুলিং এর হার সামগ্রিক ভাবে ইংলিশ মিডিয়াম থেকে বেশি। বাংলা মিডিয়াম স্কুলে শারীরিক ও আবেগী এবং ইংরেজি মাধ্যম স্কুল গুলোয় মৌখিক,সেক্সুয়াল ও সাইবার বুলিং তুলনামূলক বেশি। বিশেষ করে ৯ম-১০ম শ্রেনীতে সাইবার ও সেক্সুয়াল বুলিংই অধিক।

বুলিং এর পরিনাম :

বুলিংয়ে ভিক্টিম শিক্ষার্থী সাধারণত স্কুলে যেতে চায়না। আমাদের দেশে ভিক্টিম শিশুরা অনেকেই স্কুলে আত্মরক্ষার জন্য ছুরি জাতীয় অস্ত্র নিয়ে আসে এবং অনেকক্ষেত্রে প্রতিশোধ পরায়ণ হয়ে বুলিংকারীদের আক্রমণ করে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্কুল গুলোতে গোলাগুলির ঘটনাগুলোর প্রধান কারনো কিন্তু এই বুলিং ।
আইদাহো স্টেট ইউনিভার্সিটির প্রাক্তন ক্লিনিকাল সাইকোলজির শিক্ষক ডক্টর.মার্ক ডমবেক এর মতে, বিষন্নতা, অবসাদ,আত্মহত্যা প্রবনতা,রাগ, প্রচুর দুশ্চিন্তা হল এর শর্ট টার্ম ইফেক্ট। এক্ষেত্রে ভুক্তভোগী নিজেকে আলাদা, অপ্রয়োজনীয়,মুল্যহীন মনে করে হীনমন্যতায় ভুগে আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়।এখানে উল্লেখ্য বাংলাদেশের ১৫-২৯ বছর বয়সীদের মৃত্যুর ২য় প্রধান কারণ কিন্তু আত্মহত্যা।
দীর্ঘদিন ধরে এ অবস্থার ভিতর দিয়ে গেলে ওই শিক্ষার্থী অতিরিক্ত সন্দেহপ্রবন হয়,নিরাপত্তাহীনতা ভুগে, অনিদ্রা দেখা দেয় সেই সাথে প্রতিশোধ পরায়ন হয়ে ওঠে, যা অনেক সময় সাইকোপ্যাথে পরিনত করে ভুক্তভোগীকে। Post Traumatic Stress Syndrome এর মত মারাত্মক মানুষিক রোগের দেখা মেলে এদের মাঝে। এমনকি প্রত্যক্ষদর্শীদের ক্ষেত্রেও অনেক সময় একই রকম সমস্যা দেখা দেয়।

ডিউক ইউনিভার্সিটি মেডিকেল সেন্টারের
সাইকিয়াট্রি এন্ড বিহ্যাভিরিয়াল সাইন্স বিভাগের সহকারী অধ্যাপক উইলিয়াম কোপল্যান্ডের মতে
বুলিংকারীদের ক্ষেত্রে Anti Social Personality Disorder এর হার অন্য যেকোনো গোষ্ঠীর থেকে বেশি। এরা অপরের প্রতি কম সহানুভূতিশীল হওয়ায় নিজেদের সামান্য স্বার্থে কারো ক্ষতি করতে দ্বিধা গ্রস্থ হয় না।ফলে অনেক ক্ষেত্রেই তারা ভয়ংকর ক্রিমিনাল হয়ে ওঠে।

ঢাকার বিভিন্ন স্কুল শিক্ষকদের মতে,এই বয়সের শিশুদের

ঢাকার বিভিন্ন স্কুল শিক্ষকদের মতে,এই বয়সের শিশুদের মাঝে নিজেকে গুরুত্বপূর্ণ প্রমানের একটি প্রেরণা থাকে। ফলে স্কুলে বা অন্য কোথাও বুলিং এর শিকার ছাত্রটি অনেক ক্ষেত্রেই পরে স্কুলে অপর শিক্ষার্থীকে একইভাবে আক্রমণ করে বসে।

কিভাবে হবে প্রতিরোধ :

স্কুল বুলিং প্রতিরোধে প্রথমেই স্কুল শিক্ষক, পিয়ন,আয়া,স্কুল বাস ড্রাইভার, দারোয়ান অর্থাৎ স্কুলের সাথে সংশ্লিষ্ট সকলকে এর কুফল সম্বন্ধে পরিষ্কার ধারণা দিতে হবে।বুলিংয়ের অভিযোগ পেলে অভিযুক্ত শিশুকে সহপাঠীদের সামনে মারধর বা শাস্তি প্রদান না করে তাকে বুঝাতে হবে নয়ত অভিযুক্ত নিজেকে প্রমান করতে আরো বড় ধরনের আক্রমণ করতে পারে।

প্রতি ছ'মাসে অন্তত একবার স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীদের নিয়ে এ বিষয় থেকে প্রতিকারের উপায় নিয়ে কাউন্সিলিং করা প্রয়োজন।যেমন বুলিংকারীরা সাধারণত প্রত্যক্ষদর্শীদের সামনে ভিক্টিমকে তাদের থেকে দুর্বল দেখতে চায়।ভিক্টিমের ফেসিয়াল এক্সপ্রেশনে ভিক্টিম কষ্ট পাচ্ছে বুঝতে পারলে তারা তা ব্যাপক উৎসাহে আবারো করে।তাই তাদের গুরুত্ব না দিলে তারা উৎসাহ হারিয়ে ফেলে,এমন ছোট ছোট বিষয়গুলো নিয়ে সেখানে শিশুদের সাথে আলোচনা করা হবে।
সেই সাথে টেলিভিশন, রেডিও ও অন্যান্য মিডিয়ার মাধ্যমে এ বিষয়ে আরো প্রচারণা প্রয়োজন। স্কুলে গ্রুপ এসাইনমেন্ট, সাইন্স ফেয়ার ইত্যাদি দলগত কাজ গুলোর ফলে বাচ্চাদের ভিতর বন্ধুত্ব তৈরী হয় যা বুলিং প্রতিরোধে ব্যাপক ভূমিকা রাখে।
একই ভাবে বাসাও হতে হবে বুলিং মুক্ত।
শিশুদের কোন অবস্থাতেই ক্লাসে কিংবা বাসায় অন্যদের সামনে শাসন করা যাবেনা,কারন তাও একপ্রকার বুলিং।অনেক ক্ষেত্র বাসার বেড়াতে আসা আত্ত্বীয়,সাবলেট ভাড়াটিয়া বা কাজের লোকদের সামনে আমরা শিশুদের শাসন করি। অধিকাংশ সময় আমাদের অনুপস্থিতিতে তারা সেগুলো বলে বাচ্চাদের উত্তক্ত করে।বাবা মাকে বাসায় শিশুদের সাথে আরো বন্ধুসুলভ হতে হবে যাতে সে অকপটে সব কথা আপনার সাথে শেয়ার করতে পারে।

স্কুল বুলিংয়ের দীর্ঘ মেয়াদী প্রভাবে আমাদের অনেকের মাঝে আজ আত্মবিশ্বাসের অভাব, হীনমন্যতা আর হাজারো মানসিক সীমাবদ্ধতা তৈরী হয়েছে।অনেক সম্ভাবনাময় শিক্ষার্থী স্কুল ছেড়ে দিচ্ছে কিংবা খারাপ ফলাফল করে হারিয়ে যাচ্ছে ধীরে ধীরে।ঠিক এমনি একটি সময়ে,আমাদের আজকের একটি সঠিক সচেতন সিদ্ধান্তই পারে উদ্দোমী আত্মবিশ্বাসী আর মানসিক শক্তিতে বলিয়ান এক আগামীর বাংলাদেশ গড়তে।


© আল মাহদী
ঢাকা সেন্ট্রাল ইন্টারন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ

মন্তব্য ৫ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (৫) মন্তব্য লিখুন

১| ১৫ ই জুলাই, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:০৫

রাজীব নুর বলেছেন: সুন্দর পোষ্ট।

২| ১৫ ই জুলাই, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:৫১

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: দরকারী পোষ্ট!

আমাদের শিক্ষকদেরই এসবের জ্ঞান কম। অভিবাবকদেরও সচেতন হতে হবে।
সামাজিক জাগরনের জন্য এসবের উপর প্রচুর কাজ করা উচিত।

++++

৩| ১৫ ই জুলাই, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:২১

সুমন কর বলেছেন: এতো বুলিং !! দারুণ পোস্ট। শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ।

৪| ১৫ ই জুলাই, ২০১৮ রাত ৮:২৬

বিচার মানি তালগাছ আমার বলেছেন: গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। শিক্ষকদের সচেতন করতে হবে। প্রতি ক্লাসেই 'দাদাগিরি' দেখানো ছাত্রদের অভিভাবকদের সাথে বসতে হবে। তাদের বোঝাতে হবে...

৫| ১৫ ই জুলাই, ২০১৮ রাত ১০:৩৩

লায়নহার্ট বলেছেন: {প্রত্যেকটা স্কুল শুট্যার বুলিং এর স্বীকার}

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.