নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি হচ্ছি কানা কলসির মতো। যতোই পানি ঢালা হোক পরিপূর্ণ হয় না। জীবনে যা যা চেয়েছি তার সবই পেয়েছি বললে ভুল হবে না কিন্তু কিছুই ধরে রাখতে পারিনি। পেয়ে হারানোর তীব্র যন্ত্রণা আমাকে প্রতিনিয়ত তাড়া করে।

মাহফুজ

তেমন কিছু লিখবোনা নিজেকে নিয়ে কারণ লিখতে গেলে সেটা এতো বিশাল হবে যে কেউ পড়বেনা; অবশ্য লিখলেই যে অনেকে পড়বে তাও না। যাই হোক আসি মূল বিষয়ে, আমি হচ্ছি সেই ব্যক্তি যে জীবনে চলার পথে একটি সুন্দর সেতু পেয়েছিলাম, মজবুতও ছিলো। সেতুটির পাশেই ছিলো একটি বাঁশের সেতু। আমি অনায়াসেই সুন্দর আর মজবুত সেতু দিয়ে ওপারে চলে যেতে পারতাম যেখানে খুব সুন্দর একটি পৃথবী আছে। আমি বোকার মতো নিজের খামখেয়ালিপনার কারণে বাঁশের সাঁকোতে উঠে পড়লাম যেটা ছিলো খুবই ভয়ানক এবং জায়গায় জায়গায় ত্রুটি অর্থাৎ নড়বড়ে আর খুবই গভীর। বাতাস দিলেই সেতুটি দুলতে থাকে ভয়ানক ভাবে।

মাহফুজ › বিস্তারিত পোস্টঃ

লাশের রাজনীতি

২৮ শে নভেম্বর, ২০১৭ বিকাল ৫:১৫





আগামীকাল মিছিল, মিছিলের প্রস্তুতি চরছে নিরলশভাবে।
তাহের, বাবর ফেস্টুন বানাচ্চে, জাবেদ, খোকন লিখছে প্লে কার্ডে। মতিন বড় ব্যানারটায় পাইপ ঢুকিয়ে ফিটিং করছে। মানবিকা, জহুরা সবাইকে সাহায্য করছে।

একটা মানুষ একটু দূরে চুপচাপ বসে আছে, তার ভেতরে কোনো ভাবনার ঝড় উঠেছে। মিছিল কিংবা আগামীকালের কর্মসূচীর নেতৃত্বে আছেন হাবিব, সোহেল, আজিজ ভাইরা। তারা বসে শলাপরামর্শ করছিলেন।

হাবিব ভাই প্রথম খেয়াল করলেন সেই ভাবনায় তলিয়ে যাওয়া বালকটিকে।
কিরে রবি কি হলো, সবাই কাজ করছে আর তুই চুপচাপ বসে আছিস যে! কাল মিছিলে যাবিনা?

রবি তড়াক করে লাফিয়ে উঠলো হাবিব ভাইয়ের প্রশ্ন শুনে। কি কন ভাই! যামুনা মানে, আরে আমি তো সবার আগেই থাকুম কিন্তু যামু কি নিয়া সেইটা ভাবতেছিলাম।

কি নিয়া যাবি মানে? ব্যানার, ফেস্টুন, কার্ড সবকিছুই তো আছে।

এগুলান তো আছে ভাই কিন্তু... রবি ইতস্থত করতে লাগলো।

আরে ব্যাটা কিন্তু কি, বলবি তো।

আমতা আমতা করে রবি বললো, ভাই আমারে একটা রঙয়ের ডিব্বা কিন্যা দিবেন?

হাবিব ভাই অবাক হলেন। রঙ দিয়ে কি করবি তুই এখন? ভাই আমি আমার গতরে লেইখা যামু মিছিলে। ঐ সব ব্যানার বুনার ধইরা হাঁটতে ভাললাগেনা আমার।

হাবিব ভাই রবির কথা শুনে চমকে উঠলেন। এখানে উপস্থিত সকলের চাইতে কম শিক্ষিত একটা ছেলের মুখে এমন সৃষ্টিশীল চিন্তার কথা শুনে অবাক হবারই কথা। সোহেল আর আজিজ ভাই উৎসাহ দিলেন রবিকে। কোনো চিন্তা করিসনা রঙ তো কিনে আনবোই এবং তোর শরীরে আমরা সুন্দর করে লিখেও দেবো যা প্রয়োজন। রবির মলীন মুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠলো আশ্বাস পেয়ে। হাবিবকে ডেকে নিয়ে বাইরে চলে গেলো আজিজ আর সোহেল। তারা রঙ যোগাড় করবে এখনই যেহেতু হাতে সময় নেই। সকাল ১১ টায়ই মিছিল নিয়ে এগুতে হবে প্রধানমন্ত্রীর বাসার দিকে। তাদের আন্দোলন দেশের সরকারের বিরুদ্ধে। অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে রাখা সরকারের পতন কিংবা যে কোনো উপায়ে পদত্যাগ চায় তারা। শুধু রবিরা নয় আরো শতসহস্র আন্দোলনকারীর সমাগম হবে কাল।

রবির উদম শরীরের সামনে হাবিব সুন্দর করে লিখে দিলো-অবৈধ সরকার, ক্ষমতা ছাড়। সোহেল লিখলো পিঠে-ভোটের অধিকার চাই।

হাবিবকে একটু অন্যরকম লাগছে, চেহারায় কি রকম এক বিষাদের ছায়া নেমেছে তার। রবিকে কাছে ডেকে জিজ্ঞেস করলো- কিরে দেশকে খুব ভালোবাসিস?
খুব ভালোবাসি ভাই।
সবসময় দেশকে এভাবে ভালোবাসবি।

মিছিল নিয়ে বের হবার সময় হয়েছে, সদস্যরা ইতিমধ্যে সবাই উপস্থিত হয়ে গেছে। সোহেল রবিকে ডাকলো এবার- শুন রবি তুই সবসময় আগে থাকার চেষ্টা করিস মিছিলের। কারণ তুইই আমাদের প্রধান আকর্ষণ।

রবি ঝটপট উত্তর- হ ভাই আমি সবার আগেই থাকমু চিন্তা কইরেন না।

মিছিল বেরিয়ে পড়লো মুখরিত স্লোগানের ছন্দে। রবির উচ্ছাস দেখে কে? বারবার মাথা নীচু করে দেখছে তার শরীরের লেখাগুলো আর পিঠের লেখাগুলো দেখা যাচ্ছেনা বলে আফসোসও করছে।

রবিদের মিছিলটি প্রেসিডেন্টের বাসভবনের সামেন হাজির হলো, আরো অনেক মিছিল এসে যোগ দিচ্ছে তাদের সাথে। স্লোগানে স্লোগানে প্রায় রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে যেনো। হাবিব ভাই খুব আস্তে আস্তে স্লোগান দিচ্ছেন। আজও চিন্তিত লাগছে। সোহেল এবং আজিজকে কোথাও দেখা গেলোনা। ইতিমধ্যে পুলিশ এসে পড়েছে। তারা সর্বাত্মক চেষ্টা করছে এবং প্রেসিডেন্টের বাসভবনের সামনে যাতে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে ।

হাবিবকে হঠাৎ কোথাও পাওয়া যাচ্ছেনা, এত মানুষের ভীড়ে মানুষ খুঁজে বের করা চরম দুরূহ বিষয়। দলের অন্যান্যরা তাই সেদিকে মনোযোগ না দিয়ে স্লোগান দিতে থাকলো। সোহেল, আজিজও যোগ দিয়েছে আবার দলের সাতে। রবির মুভমেন্টটাই বেশী চোখে পড়ছে সবার।

ভীড়ের মাঝে আজিজের মোবাইল কেঁপে উঠলো পকেটে। হাবিবের ফোন। হাবিব কই তুই, কোথায় নেই হয়ে গেলি? চিৎকার করে জিজ্ঞেস করলো আজিজ।

আছি তোদের পাশেই, তুই রবিকে বল এক জায়গায় দাঁড়িয়ে স্লোগান দিতে। ও বেশী নড়াচড়া করছে।

হাবিবের এমন কথা শুনে আজিজ অবাক হলো, সে আশেপাশে তাকিয়ে হাবিব কোথায় আছে দেখার চেষ্টা করলো। না নজরে পড়লনা।

আরে তুই আগেপিছে তুই কি দেখছিস, রবিকে বল জায়গায় দাঁড়িয়ে স্লোগান দিতে।

হাবিব যে আজিজদের দেখতে পাচ্ছে এ কথায়ই বুঝা যাচ্ছে।

আচ্ছা বলছি আর তুই এখানে আয় তাড়াতাড়ি। একথা বলে লাইন কেটে দিল আজিজ। আজিজ রবিকে কিছু বললোনা, কেন জানি তার কিছু একটা সন্দেহ লাগছে। সন্দেহটা কি হাবিবের উপর বুঝতে পারছেনা। মিছিলের উপস্থিতি বেড়েই চলছে, বাড়ছে স্লোগানের ধ্বণিও।

হাবিবকে কেউ খেয়াল করতে পারলনা, সে ভীড়ের মধ্যেই সবার অগোচরে অপরিচিত এক মানুষের সাথে কথা বলছিলো, অপরিচিত লোকেটা বিদায় নেয়ার আগমুহূর্তে একটা সাদা বান্ডিল ঢুকিয়ে দিলো সন্তর্পণে হাবিবের প্যান্টের পকেটে। সবার অন্তরালে চিত্রায়িত হওয়া এই দৃশ্যটাই আজকের দিনের নিকৃষ্ট পটভূমি তৈরী করতে যাচ্ছে কেউ তখনো জানেনা।

রবি অনেক্ষণ লাফালাফি করে ক্লান্ত হয়ে গেছে। তাদের দল সবার সামনে আর সে তারও সামনে। রবির খুব ইচ্ছে করছিলো এক গ্লাস পানি খাবে। আশেপাশে তাকিয়ে দেখলো কারো কাছে পানি আছে কি না? তেমন কেউ চোখে পড়লনা যার হাতে পানির বোতল বা পানিজাতীয় কিছু আছে। রবির তেষ্টা যেন দ্বিগুণ বেড়ে গেল পানি না পেয়ে। সহজে যে বেরিয়ে যাবে এখান থেকে তারও উপায় নেই। জনস্রোত ঠেলে বেরিয়ে যাওয়া অসম্ভব। ছোট্ট মাথায় একটা বুদ্ধি এলো রবির, সামনেই একটা গোল চত্বরের মতো ছোট একটা জায়গা, রাউন্ড সিঁড়ি আছে দুই তিন ধাপ। রবির ইচ্ছা ওখানে গিয়ে পানি চাইবে চিৎকার করে যাতে সবাই তার কথা শুনে, তার দিকে নজর পড়ে।

সিঁড়ির দ্বিতীয় ধাপে গিয়ে রবি সবার দিকে মুখ ফিরে চাইলো। মনে হচ্ছে সে দলনেতা। ভাষণ দিবে এখন রবি এরকমই লাগছে। তার বুকে সাদা রঙয়ে লেখা "অবৈধ সরকার, ক্ষমতা ছাড়" দিনের আলোর মতই ফোঁটে উটেছে যেন।

রবি ভাষণ নয় তবে কিছু বলার জন্য মুখটা খোলতে যাবে ঠিক তখনই ঠাসসসসস করে বিকট একটা শব্দ হলো, পরক্ষণেই দেখা গেলো রবি গগণবিদারি এক চিৎকার দিয়ে কয়েক ফুট পেছনে ছিটকে গিয়ে পড়লো। তার বুকের সাদা লেখার উপর টগবগে লাল রঙ গড়িয়ে মিশে যাচ্ছে। গুলি করা হয়েছে রবিকে, সবাই জানপ্রাণ নিয়ে দৌঁড়াতে শুরু করেছে, আতঙ্কে জায়গাটা মুহূর্তের মধ্যে এক নরকে পরিণত হলো।

রবির সাথীরাও যে যেদিকে পারছে পালাচ্ছে কিন্তু একজন মানুষ দেখা গেলো রবির কাছে প্রাণপণ যাবার চেষ্টা করছে। লোকটা আজিজ, আজিজ অনেক কষ্টে ছুটন্ত ভীড় ঠেলে রবির পাশে গিয়ে হাটুমুড়ে বসলো । রবির মাথা কোলে নিয়ে বুঝার চেষ্টা করলো বেঁচে আছে কি না? না রবি বেঁচে নেই, বুলেটের তীব্র আঘাত তৃষ্ণার্থ রবির প্রাণ মুহূর্তেই কেড়ে নিয়েছে। আজিজ যেন পাথর হয়ে গেল রবির রক্তাক্ত্ব শরীরের দিকে চেয়ে। আজিজের দুই হাত নিমিষেই রক্তেরাঙ্গা হয়ে উঠলো রবির তাজা রক্তে। একটু আগেও তো রবি সরকার বিরোধী স্লোগান তার বুকে পিঠে নিয়ে ছুটোছুটি করছিলো তাদের সামনে। এখন সেই প্রাণবন্ত জীবনটি একটি মৃতদেহ মাত্র।

আজিজের শরীর গুলিয়ে উঠছে, সে নিজেও মনে হয় লুটিয়ে পড়বে মনে হচ্ছে। নিজেকে কোনো রকম নিয়ন্ত্রণ করলো সে। রবির মুখের দিকে চাইতেই বেশ কিছু প্রশ্ন উকি দিল আজিজের মনে। বুলেটটা কাদের ছোঁড়া? পুলিশের তো অবশ্যই না। বিনা কারণে তারা কেন গুলি করবে? আন্দোলনকারীরা এখনো তো কোনো উগ্র কর্মকাণ্ড করেনি যে গুলি করতে হবে। হাবিব কোথায়, দলনেতা হাবিব মিছিল শুরুর পর থেকেই কেন দূরে দূরে আর কেনইবা আজিজকে ফোন করে বলেছিল, রবিকে বলতে স্থির দাঁড়িয়ে থাকতে? তবে কি এখানে অসহায় রবি কোনো স্বার্থান্বেষী মহলের স্বার্থ উদ্ধারে বলি হলো। তার নিবেদিত নিষ্পাপ প্রাণটা কি নোংরা রাজনীতির লাশের ব্যবসায় উৎসর্গ করলো মানুষরূপী কোনো জানোয়ারের দল? রবির লাশটাই কি তবে এবার পূঁজি হবে ক্ষমতার পালা বদলে? কোনো উত্তর পাচ্ছেনা আজিজ, শুধু একের পক এক প্রশ্ন যেন ঝাঁক বেঁধে তীরের মতো তার দিকে ছুটে আসছে।

বর্তমান ভয়াবহ পরিস্থিতিতে রবির লাশ কোলে নিয়ে আজিজ যে প্রশ্নের উত্তরগুলি পাচ্ছেনা সে উত্তরগুলি আমাদের কাছে আছে। আমরা জানি ক্ষমতার পালা বদলের খেলায় সমাজের কিছু অসহায় এবং রাজনীতির জন্য নিবেদিত প্রাণ কিছু মানুষের লাশ নিয়ে সওদা হয়। সে লাশগুলি দিয়ে বিক্ষোভ মিছিল হয, সে লাশগুলো কোন দলের কর্মী তা নিয়ে নোংরা টানাহেঁচড়া চলে দলে দলে। যে জীবন্ত মানুষটিকে জীবিত অবস্থায় দলের নেতানেত্রীরা চিনতেনইনা সেই নেতানেত্রী আর সংগঠন লোকটার লাশকে নিজেদের কর্মট এবং অত্যন্ত আন্তরিক সদস্য বলে পরিচয় দেন, লাশের দায়িত্ব নিতে চান, বিশেষ সম্মান দিয়ে তার শেষকৃত্য আয়োজন করেন। লাশটা তাদের ক্ষমতা নামক সোনার হরিণ অর্জনের একটি টিকিট বা মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করেন। এটাই রাজনীতি আর রাজনীতিতে শেষ বলে কোনো কথা নেই তা আমরা সবাই জানি।

আমরা তো এমন রাজনীতির প্রত্যাশী না, আমরা রক্তের হোলী খেলায় কোনো রাজনীতি বা গনতান্ত্রিকতার চর্চা দেখিনা। দেখি শুধু তরতাজা আর টগবগে প্রাণের বলি হতে। আসুন আমরা শান্তিপূর্ণ ভাবে রাজনীতি চর্চা করি, মানুষের অধিকার আদায়ের নামে রাজনীতি করতে গিয়ে এভাবে রবিদের বলির পাঁঠা না বানাই, খালি না করি সন্তানকে নিয়ে সোনালী স্বপ্নে বিভোর মা বাবার বুক।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ২৮ শে নভেম্বর, ২০১৭ রাত ১০:০০

আবু তালেব শেখ বলেছেন: যদিও বা গল্প এটা তবে এই কাহিনী রাজনিতিতে হামেশাই ঘটে। সাধারন মানুষ গুলি খেয়ে মর আর নেতারা আড়ালে থেকে ফায়দা লুটে।

২| ২৯ শে নভেম্বর, ২০১৭ রাত ১২:০১

আখেনাটেন বলেছেন: রাজনীতির কলুষিত দিকটা গল্পচ্ছলে তুলে ধরেছেন। তবে একবিন্দুও মিথ্যে নয়। এটা এ দেশে এতই নোংরা ও ভয়ঙ্কর রূপ নিয়েছে যে এরচেয়েও মারাত্মক অনেক কিছুই ঘটে চলেছে প্রতিনিয়ত।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.