নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি হচ্ছি কানা কলসির মতো। যতোই পানি ঢালা হোক পরিপূর্ণ হয় না। জীবনে যা যা চেয়েছি তার সবই পেয়েছি বললে ভুল হবে না কিন্তু কিছুই ধরে রাখতে পারিনি। পেয়ে হারানোর তীব্র যন্ত্রণা আমাকে প্রতিনিয়ত তাড়া করে।

মাহফুজ

তেমন কিছু লিখবোনা নিজেকে নিয়ে কারণ লিখতে গেলে সেটা এতো বিশাল হবে যে কেউ পড়বেনা; অবশ্য লিখলেই যে অনেকে পড়বে তাও না। যাই হোক আসি মূল বিষয়ে, আমি হচ্ছি সেই ব্যক্তি যে জীবনে চলার পথে একটি সুন্দর সেতু পেয়েছিলাম, মজবুতও ছিলো। সেতুটির পাশেই ছিলো একটি বাঁশের সেতু। আমি অনায়াসেই সুন্দর আর মজবুত সেতু দিয়ে ওপারে চলে যেতে পারতাম যেখানে খুব সুন্দর একটি পৃথবী আছে। আমি বোকার মতো নিজের খামখেয়ালিপনার কারণে বাঁশের সাঁকোতে উঠে পড়লাম যেটা ছিলো খুবই ভয়ানক এবং জায়গায় জায়গায় ত্রুটি অর্থাৎ নড়বড়ে আর খুবই গভীর। বাতাস দিলেই সেতুটি দুলতে থাকে ভয়ানক ভাবে।

মাহফুজ › বিস্তারিত পোস্টঃ

রিকসার হুড এবং দেবতার দানবীয় উপাখ্যান

২৯ শে এপ্রিল, ২০১৮ রাত ৩:৫২

অদৃশ্য এক চোখের জলে ভেতরে ভেতরে ভেসে যাচ্ছে যেনো অদিতি। অমিতের প্রতি তার সীমাহীন ভালোবাসা আর হৃদয়ের গভীরে তিলেতিলে জমতে থাকা সম্মানের ভান্ডার সব আজ অস্তিত্বের সংকটে পড়ে গেছে। কালবৈশাখী ঝড়ের ঝাপটায় ছিন্নভিন্ন হয়ে গেছে মনে হচ্ছে সঞ্চিত চিন্তাভাবনা আর কল্পনার আদলে তৈরি ভিত্তিটা।

হুড উঠানো রিকসায় অমিতের পাশে বসে আছে অদিতি। একটি রিকসার হুড যে মানুষের বিশ্বাস আর উপলব্ধিগুলোকে কিভাবে নিষ্ঠুর আঘাতে ক্ষতবিক্ষত করে দিতে পারে তা আজ অদিতির অনুভূতিগুলোকে পড়তে পারলে মর্মে মর্মে উপলব্ধি করা যেতো।
কয়েকমিনিট আগেও হুড ফেলা রিকসায় অমিতের পাশে বসে থাকা অদিতি নিজেকে পৃথিবীর সুখী মানুষদের তালিকার একজন ভেবেছিলো। তার মনে হচ্ছিলো স্বর্গের কোনো দেবতা তার দেবীকে নিয়ে পৃথিবীর সৌন্দর্য অবলোকন করতে বেরিয়েছেন স্বর্গীয় বাহনে চড়ে।

অদিতি কল্পনায় ডানা মেলে যখন পরম তৃপ্তির মহাসমুদ্রে ভাসছিলো ঠিক তখনই অমিত রিকসার হুড উঠিয়ে দেয়, রোদ লাগছে বলে।

পড়ন্ত বিকেলের সুমিষ্ট রোদ আর মৃদুমন্দ বাতাসে অমিতের রোদের তেজ লাগলো কিভাবে?প্রশ্নটা অদিতির মনের মাঝে উঁকিঝুঁকি দেয়া শুরু করতেই সে খুব অবাক হলো আর পরক্ষণেই নিজেকে গুটিয়ে নিলো ভয়ে কুঁকড়ে গিয়ে। এ ভয় অনিরাপত্তা কিংবা প্রাণনাশের নয়। ভয়টা ছিলো দীর্ঘদিন ধরে অতিযত্নে লালিতপালিত করা বিশ্বাস বালির বাঁধের মতো গুড়িয়ে যাবার ভয়। হুড উঠানোর খানিকক্ষণ পরেই অদিতির ভয়টা বাস্তবে আরো বিকট হয়ে হাজির যখন অমিতের ডানহাত অদিতির শরীরের এখানে ওখানে মৃদু বিচরণ করতে শুরু করলো। অমিতের প্রতি অদিতির বুকভরা ভালোবাসা আর সম্মানের মৃত্যুযন্ত্রণা শুরু হয়েছিলো তখন।

প্রতিবাদ করার ক্ষমতাটুকু অদিতির ছিলোনা তা নয় আসলে ঘৃণায় সে একেবারেই নিস্তব্ধ হয়ে গিয়েছিলো। অদিতির এখন মনে হচ্ছে শরীরের প্রতিটি অঙ্গপ্রত্যঙ্গ অসাড় হয়ে গিয়েছে।

মাধ্যমিকে পড়াকালীন অমিতের প্রতি অদিতির ভালোবাসার জন্ম। অমিত হচ্ছে অদিতির বান্ধবী ইরিনার বড় ভাই। ইরিনাদের বাসায় প্রায় সময় যাতায়াত এবং পড়াশোনার সাহায্য চাওয়ার বদৌলতে অমিতের সাথে পরিচয়। সৌম্য,শান্ত চেহারার আর নিষ্পাপ হাসির অমিত সত্যি খুব সুদর্শন। সুদর্শন সেই অমিত তাই সহজেই অদিতির মনটা কেড়ে নিলো। কিন্তু অনুভূতিগুলো প্রকাশের সময় বা সুযোগ এবং সাহস অদিতি অর্জন করতে পারেনি বহুদিন।

আসাযাওয়ার পথে দেখা, টুকটাক কথা আর ভদ্রতারক্ষার হাসির বাইরে অমিতকেও তাই পাওয়া যায়নি। অমিত শুধু সুদর্শন ছিলো তা নয় নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্রও ছিলো আর তাই তার বেশ নামডাক ছিলো ছোটবড় সবার মাঝে।

সবকিছু মিলিয়েই অদিতি কল্পনায় পঙখীরাজের পিঠে সওয়ারী হয়ে অমিতকে নিয়ে গিয়েছিলো অনেক দূরের পৃথিবীতে। প্রজাশূন্য যে পৃথিবীর একমাত্র অধিপতি ছিলো অমিত আর তার রাণী অদিতি। কল্পনার রাজ্যে বসবাস করতে করতে নিরুপায় অদিতি একসময় প্রিয় বান্ধবী ইরিনার কাছে লাজলজ্জা ভুলে সাহায্য চাইলো। প্রথমে ঠাট্টাতামাসা করলেও ইরিনা রাজী হয় বান্ধবীর প্রেমের মাধ্যম হতে।

তারপর অদিতি আর অমিতের ইরিনার সাহায্যে প্রেম হয়ে গেলো। কিছুদিন তারা একে অন্যের সাথে ফোনে আলাপও করলো।

উচ্চমাধ্যমিক পরিক্ষার প্রস্তুতি চলছে এখন তাই কলেজ বন্ধ। এরমাঝে গত পরশু অমিত দেখা করার কথা বলে অদিতিকে। রক্ষণশীল পরিবারের মেয়ে অদিতি। চাইলেই হুটহাট করে ঘর থেকে বের হতে পারেনা। বড়ভাই বাবা খুব আদর সোহাগ করলেও কড়া নজরে রাখেন। উপায় না দেখে ইরিনাকে দিয়ে ফোন করানো হলো অসিতির বাসায়। এক বানানো বান্ধবীর জন্মদিনের গল্প বলে অদিতিকে বাইরে নিয়ে আসা হলো।

- কি ব্যপার তোমাকে এত্ত আড়ষ্ট লাগছে কেনো? টেইক ইট ইজি অদিতি। এটা তোমার আমার প্রথম ডেট!

অমিতের কথায় অদিতি চমকে গিয়ে বাস্তবে ফিরে এলো। ঘৃণায় তার শরীর রিরি করছে। অনেক কষ্টে সে চোখের পানি আটকে রেখেছে। ভালবেসে দেবদূতের আসনে বসানো কোনো অসুরের সামনে সে চোখের জল ফেলে নিজেকে অপমানিত কিংবা একফোঁটা চোখের জলকেও অসম্মানিত করার ইচ্ছে নেই অদিতির। কয়েকটা মিনিটে তার বিশ্বাস আর ভালবাসার এমন নোংরা পরিণতি আবিষ্কার করতে পেরে বিমূঢ় হয়ে গিয়েছিলো সে। এই বিমূঢ়তা এতটাই কঠিন ছিলো যে, অমিতের হাত তার শরীরের কোথায় কোথায় স্পর্শ করেছে তা টেরই পায়নি অদিতি।

রোদের তেজ বলে মিথ্যা অজুহাতে যখন অমিত রিকসার হুড উঠিয়েছিলো ঠিক তখনই স্বপ্নের ইমারতে ফাটল ধরেছিলো অদিতির। তারপর অদিতি যখন অমিতের স্পর্শ টের পেয়েছিলো সেই থেকে গত কয়েক মিনিটে পুরো ইমারতই নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। অদিতি কল্পনাও করেনি স্বপ্নের মানুষটি জীবনের প্রথমবার সুযোগ পাওয়া মাত্রই তাকে শারীরিক ভাবে সামান্য আর মানসিকভাবে জানোয়ারের মতো ধর্ষণ করবে। পাশাপাশি বসতে চাওয়া মানেই কি আমার শরীরে হাত দেয়ার অনুমতি দেয়া? রিকসায় বসলেই কি হুড উঠিয়ে নস্টামি করতে হয়? প্রথমবারই শুধু ভালবাসার নেশায় মুগ্ধ হয়ে ঘুরতে এসে নিজের শরীরে ঘৃণ্য ছোঁয়ার অনুভূতি নিয়ে ফিরতে হবে তাও ভালবেসে দেবতার আসনে বসানো মানুষটির কাছ থেকে?

অদিতি কি হলো, কথা বলো?

দ্বিতীয়বারের মতো বাঁধা পেয়ে অদিতি চোখ তোলে চাইলো অমিতের দিকে। যে চেহারা জুড়ে ছিলো সৌম্যতা, চোখের ভাষায় ছিলো কোমল, নিষ্পাপ এক অমিতের অস্তিত্ব, সে সবকিছু কেমন কুৎসিত অসুরের মতো ভয়াবহ লাগছে। সানগ্লাসের আড়ালে অমিতের চোখজোড়া লোভার্ত শকুনের কথা মনে করিয়ে দিলো অদিতিকে।

আমি নেমে যাবো।
অদিতি শুধু এই একটি বাক্য বলতে পারলো অমিতকে।

অদিতির কণ্ঠ আর চেহারার অদ্ভুত পরিবর্তনে চমকে উঠলো অমিত। এতক্ষণ সে অদিতির চেহারা লক্ষ্য করেনি কারণ অদিতির দৃষ্টিতে, ধর্ষক অমিতদের ধর্ষনকালে চেহারার প্রয়োজন পড়েনা।

কি হয়েছে অদিতি?
অমিতের গলা কাঁপছে।

আমি নেমে যাবো। যন্ত্রের মতো দ্বিতীয়বার অদিতি বললো।

অমিত লাফ দিয়ে রিকসা থেকে নেমে রিকশাওয়ালাকে বললো "মামা যাও"।

পাহাড়সম ঘৃণার স্তুপে এক বিন্দু কৃতজ্ঞতা জাগলো অমিতের জন্য অদিতির। অমিত নেমে না পালালে তাকে নামতে হতো কিন্তু পা দুটো অসাড় লাগছে। পেছন ফিরে তাকাতে গিয়েও তাকালোনা অদিতি। কি হবে তাকিয়ে? রিকসায় যার সাথে উঠেছিলো সে তো দিব্যলোকের সুদর্শন সুপুরুষ ছিলো কিন্তু যে নেমেছে সে তো নারীকে শুধুই মাংসপিণ্ড ভাবা সুযোগ সন্ধানী এক দানব। দানবদের জন্য কোনো পিছুটান থাকতে নেই, দেখাতে নেই সহানুভূতি।

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ২৯ শে এপ্রিল, ২০১৮ ভোর ৪:৪৪

কাওসার চৌধুরী বলেছেন: গল্পটি চমৎকার হয়েছে। পড়ে ভাল লাগলো।

২৯ শে এপ্রিল, ২০১৮ বিকাল ৫:২০

মাহফুজ বলেছেন: আমার স্বার্থকতা। ☺

২| ২৯ শে এপ্রিল, ২০১৮ সকাল ১১:৪৬

রাজীব নুর বলেছেন: নিজের অতীত দিনের সৃতি মনে পরে গেল।

২৯ শে এপ্রিল, ২০১৮ বিকাল ৫:২১

মাহফুজ বলেছেন: চিন্তায় পড়ে গেলাম মন্তব্য দেখে

৩| ২৯ শে এপ্রিল, ২০১৮ বিকাল ৪:০৭

ব্লগার_প্রান্ত বলেছেন: কথা সত্য, আজকাল রিকশাও নিরাপদ নয়। কই যে আছি!

২৯ শে এপ্রিল, ২০১৮ বিকাল ৫:২২

মাহফুজ বলেছেন: আসলে সময়টাই অনিরাপদ আর উসিলা হয়ে তো আমরা আছিই।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.