নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ভাবছি আমি ডুবেই যাবো \nসবুজ ঘাসের মাঝে,\nঘাসের চেয়ে আমি অমন \nবড় কিছু না যে।

আব্দুল্লহ আল মামুন

আব্দুল্লহ আল মামুন › বিস্তারিত পোস্টঃ

নীলসাগর এক্সপ্রেস ও কিছু প্রশ্ন

৩০ শে অক্টোবর, ২০১৮ বিকাল ৪:২৪



অল্প অল্প গল্প: "নীলসাগর এক্সপ্রেস ও কিছু প্রশ্ন"
১.
ছেলেটি বারবার মোবাইলে সময় দেখছে, হাতে ঘড়ি নেই। অনেক দিন হয় ঘড়ি পরেনা। আর মাত্র দশ মিনিট আছে। বাসটা বারবার ব্রেক কষছে আর সেই ব্রেক এসে লাগছে ছেলেটির হার্টে, শেষ পর্যন্ত ট্রেনটি ধরতে পারবেতো?

ট্রেনের অবস্থান জানতে মোবাইল থেকে ম্যাসেজ পাঠিয়ে ঠিকঠাক রিপ্লাই পাওয়া যাচ্ছে না। আর মাত্র সাত মিনিট বাকি। এমন সময় বাসটি কমলাপুর ফুট ওভার ব্রিজের মুগদা পার্শে থামলো। ছেলেটি বাস থেকে লাফ দিয়ে নামল।

দ্রুত সিড়ি দিয়ে উঠতে গিয়ে পা ফসকে পড়ে গেল। সিড়ির লোহাগুলো নানান জায়গায় জং পড়ে বোয়াল মাছের মত হা করে আছে, একটু অসতর্ক হলে পা ঢুকে যাবে। কিন্তু অত ভাবার সময় নেই। কোন রকমে উঠে আবার দৌড় দিল ছেলেটি। কাঁধের ব্যাগটি এপাস ওপাস দুলছে। অপর দিক থেকে আসা এক মধ্যবয়সি লোকের গায়ে দুলতে থাকা ব্যাগটি গিয়ে লাগলো, লোকটি তাল হারিয়ে পড়তে পড়তে কোন রকমে নিজেকে সামলে গলা খেচিয়ে কি যেন বলল, ওসব শুনা বা সরি বলারও সময় নেই।

ওভার ব্রিজ থেকে নেমে স্টেশনে ভদ্রভাবে যেতে হলে মাথা চোঁখা গ্রিলটা ঘুরে মেইন গেট দিয়ে ঢুকতে হবে। তাতে চার/পাঁচ মিনিট চলে যাবে। অত সময় নেই। কিছুটা ঝুকি নিয়ে গ্রিলের উপর দিয়ে টপকানোর সময় একজন আনসার হৈ হৈ করে ছুটে এলো। তার হৈ হৈ রবে ছেলেটির পা পিছলে যাচ্ছিল প্রায়। আনসার তার কাছে আসালে ছেলেটি তার দাঁড়িয়াবান্দা খেলার অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে দিল এক ছুট।

তার এখন জানা দরকার কত নং প্লাট ফর্ম থেকে নীলসাগর এক্সপ্রেস ছাড়বে। গেট দিয়ে ঢুকার সময় টিকেট চেকারের জানতে চাইলে, তিনি বললেন, নীলসাগর এখনো এসে পৌছায়নি, দেড় ঘন্টা লেট আছে। তার কথায় আস্থা রাখতে না পেরে তাড়াতাড়ি সামনের ইসক্রিনে চোখ বুলালো ছেলেটি। সেখানে নীলসাগরের কোন নাম না দেখে আরো দু’একজনের কাছে জিজ্ঞেস করে ছেলেটি হাফছেড়ে বাঁচল। এই শীতের সকালে সে ঘামতে লাগলো। জ্যাকেটের চেন খুলে কান টুপিটা হাতে নিয়ে বাতাস করাতে লাগল।

২.
নীলসাগর এক্সপ্রেস প্লটফর্মে এসে দাঁড়িয়েছে। বগিগুলোতে পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা অভিজান চলছে। ছেলেটি তার নির্ধারিত বগির সামনে দাঁড়িয়ে আছে। আরো যাত্রিরাও সেখানে অপেক্ষমান। এক মা তার নতুন হাঁটতে শেখা বাচ্চাকে সামলে রখতে হিমসিম খাচ্ছেন। এক পরিবার তাদের মালপত্র গুণে গুণে হয়-রান, একটা লাগেজ খুঁজে পাচ্ছেন না। এমন সময় দূর থেকে একটি মেয়েকে দেখা যাচ্ছে একটু দৌড়ে একটু দ্রুত লয়ে হেঁটে আবার একটু দৌড়ে আবার একটু দ্রুত লয়ে হেঁটে এদিকেই আসছে। তার পিঠে ঝুলানো ব্যাগ। হাতে একটি সাদা কাগজ। সে একবার কাগজের দিকে একবার ট্রেনের বগির দিকে তাকাচ্ছে। মেয়েটির পরনে স্কিন টাইট জিন্স আর কামিজ। কামিজের উপর একটা বুক ফাড়া সোয়েটার। ওড়নাটার দুই প্রান্ত কাধের দুই দিক থেকে সামনের দিকে ঝুলে আছে। মাথায় উপরে একটি ছোট কানটুপি। চুলগুলো ঘাড় থেকে একটু নিচ অব্ধি নেমেছে। মনে হয় তাদের আর নামতে দেয়া হয় না। মেয়েটি যখন দৌড়াচ্ছিল তখন ওড়নার দুই প্রান্তের সাথে সাথে সোয়েটারের দুই প্রান্ত, সাথে দুই প্রান্তের পবনও দুলে উঠছিল। আর সেই মাতাল পবনের ছোঁয়া অনেককেই ছুঁয়ে যাচ্ছিল।

মেয়েটি অন্য সবাইকে ছাড়িয়ে ছেলেটির সামনে এসে দাঁড়ালো।
- এক্সকিউজ মি, এটা কি নীলসাগর এক্সপ্রেস?
- জি।
- “চ” বগিটা কোন দিকে?
- এটাই “চ” বগি।
- অনলাইনে টিকেট কেটেছি তো, দেখেন তো এটা “চ” নাকি “ছ”?
এই বলে মেয়েটি তার হাতের কাগজটি ছেলেটির দিকে বাড়িযে দিল। ছেলেটি কাগজটি হাতে নিয়ে দেখে বললো,
- জি, এটা “চ”।
- থেংকিউ।
- হু।
মেয়েটি বগিতে উঠতে যাচ্ছিল। ছেলেটি তাকে থামিয়ে বললো, একটু পরে উঠেন। বগি ঝাড়ু দিচ্ছে। মেয়েটে থামল। এর কিছু পর সবাই ট্রেনে উঠে গেল।

৩.
ট্রেন ছুটে চলছে। ঢাকা-টংগী-গাজিপুর ছাড়িয়ে ট্রেন এখন খোলা প্রান্তর পাড়ি দিচ্ছে। শীতের কুয়াশা এখনো ছোপ ছোপ ভাবে এদিক সেদিক জেঁকে বসে আছে। সূর্যের আবছা আলোয় গ্রামগুলোকে মেঘের দেশের বাড়ি বলে মনে হচ্ছে।
ছেলেটির সিট বগির মাঝামাঝি আর মেয়েটি বিপরীত দিকের শেষ মাথায়। মাঝে মাঝেই দুজনের দৃষ্টি বিনিময় হচ্ছে। মেয়েটি কানে হেডফোন লাগিয়ে মোবাইলে দিকে তাকিয়ে আছে। ছেলেটিও পাশের যাত্রির সাথে গল্পে মেতেছে।
যমুনা সেতুতে ট্রেন পার হচ্ছে অত্যন্ত ধীর গতিতে। নিচে জলের স্রোত নেই বল্লেই চলে। এখানে ওখানে চর পড়ে গেছে। সূর্যের তেজ এখনো তেমন নেই। যমুনা নদীর এপাড় আর ওপাড়ের জনপদের মধ্যে কি যেন একটা তফাত রয়েছে। এই তফাতটা শুধু যে প্রাকৃতিক তা নয়, মানুষের আচার-আচরণ কথা-বর্তাতেও কেমন যেন একটা আলাদা ভাব রয়েছে।

ট্রেন একে একে মুলাডুলি, নাটোর, সান্তাহার, আক্কেলপুর পেরিয়ে গেল। সামনে জয়পুরহাট স্টেশনে ছেলেটি নামবে। ব্যাগ কাঁধে নিয়ে মেয়েটার পাস দিয়ে আসার সময় আবার চোখাচোখি। মেয়েটি মিষ্টি করে হাসলো। ছেলেটিও।

তবে মেয়েটির চেহারাটা সেই হাসির সাথে ঠিক সায় দিচ্ছিল বলে মনে হল না। চোখটাও একটু ছলছল করছিল কি?
ছেলেটি নেমে গেল, ট্রেনও ছেড়ে দিল। কিন্তু ছেলেটার মনের মাঝে কি যেন কি হল। হঠাৎ করে মনে হল, কমলাপুর স্টেশনে মেয়েটি কেন অতগুলো মানুষকে বাদ দিয়ে তাকেই এসে ট্রেনের কথা জিজ্ঞেস করেছিল? সে তো একটু দূরেই দাঁড়িয়ে ছিল। আর জিজ্ঞেস করারও তো দরকার ছিল না। যে মেয়ে অনলাইনে টিকেট কাটতে পারে, সে কেন “চ” বগির সামনে এসেই “চ” বগির কথা জিজ্ঞেস করবে? ট্রেনের গায়েই তো “চ” লিখা ছিল! ট্রেনের মাঝেও সে কেন বার বার উঁকিঝুকি মেরে দেখছিল? আবার কেন নামার সময় অমন করে একটি করুণ হাসি দিল? কেন তার চোখ ছলছল করছিল? ছেলেটি মনে মনে নিজেকে ধিক্কার দিচ্ছিল, এই প্রশ্নগুলো কেন তার মনে ট্রেন থেকে নামার আগেই আসলো না?

এরপর সেই মেয়েটির সাথে সেই ছেলেটির আর কখনো দেখা হয়নি। ছেলেটি আজও কখনো কখনো আনমনে ভাবে, ঐ প্রশ্নগুলো যদি একটু আগেও মাথায় আসতো, তাহলে না হয় সে, সেই মেয়েটির সাথে চিলাহাটি পর্যন্তই চলে যেতো।
#আবদুল্লাহ আল মামুন ... ৩০-১০-২০১৮।
(ছবিটি নেট থেকে নেয়া। আলোকচিত্র শিল্পীর নাম জানা নাই।)

মন্তব্য ১৫ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১৫) মন্তব্য লিখুন

১| ৩০ শে অক্টোবর, ২০১৮ বিকাল ৪:৩৫

নজসু বলেছেন: ২য় মামুন ভাই কেমন আছেন?
আপনাকে অনেকদিন পর দেখলাম মনে হয়।
আপনাকে ২য় মামুন ভাই বলে ডাকলে সমস্যা হবে কি?
আরেক মামুন ভাইকে আমার সম্প্রতিক পোষ্টে তার কমেন্টের সূত্র ধরে নতুন নামকরণ করেছি।
.............................................

মানুষ একবার ভুল করলে তার আফসোস আজীবন বয়ে বেড়ায়।
গল্প নিজস্ব ঢংয়ে এগিয়ে গেছে।
জয়পুরহাটের আক্কেলপুরে আমি গিয়েছিলাম।

৩ নং এ প্রান্তর শব্দটা প্রন্তর হয়েছে।

৩০ শে অক্টোবর, ২০১৮ বিকাল ৪:৪৭

আব্দুল্লহ আল মামুন বলেছেন: আলহামদুলিল্লাহ, ভালো আছি। "২য় মামুন ভাই" হতে আমার কোন সমস্যা নেই। স্কুল জীবনে একই ক্লাসে আমরা ৩জন মামুন ছিলাম। চাকুরি জীবনেও কম বেশি একই রকম মধুর সমস্যায় আছি। সুতরাং, লেখক জীবনে (যদিও এখনো লেখক হয়ে উঠতে পারিনি) এর ব্যতিক্রম হবে, আশা করি কি করে। ভালো থাকবেন। আর সুন্দর মন্তব্য ও ভুল ধরিয়ে দেয়ার জন্য ধন্যবাদ।

২| ৩০ শে অক্টোবর, ২০১৮ বিকাল ৪:৫৭

পদ্মপুকুর বলেছেন: গল্প ভালো হয়েছে। বিশেষ করে যখন দেখা গেল যে ট বগিতে দু'জনের সিট পাশাপাশি পড়েনি, তখনই গল্প গতানুগতিকতা ছেড়ে নিজস্ব ধারায় চলে গেলো। আবার শেষ পর্যন্ত যখন ওই প্রশ্নগুলো ছেলেটির মাথায় আসলো, গল্পের ধারাটা বাস্তবেই থাকলো।

ভালো লাগলো উপস্থাপনা। ভালো থাকবেন, শুভ ব্লগিং।

৩০ শে অক্টোবর, ২০১৮ রাত ৮:২৮

আব্দুল্লহ আল মামুন বলেছেন: গল্পটা সত্য ঘটনা অবলম্বনে বলেই গতানুগতিক হয়নি। সুন্দর মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ। ভালো থাকবেন।

৩| ৩০ শে অক্টোবর, ২০১৮ বিকাল ৫:৪৩

টিয়া রহমান বলেছেন: অনেক সুন্দর ভাইয়া, তবে ছেলেটি মেয়েটিকে খুঁজে পেলে আর ও ভালো লাগবে ধন্যবাদ

৩০ শে অক্টোবর, ২০১৮ রাত ৮:৩৮

আব্দুল্লহ আল মামুন বলেছেন: নিরন্তর শুভেচ্ছা রইল। গল্পটি সত্য, তাই ইচ্ছা করেই কোন রং লাগানো হয়নি।

৪| ৩০ শে অক্টোবর, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:২৬

আব্দুল্লাহ্ আল মামুন বলেছেন: আহ ট্রেন জার্নি নিয়ে সুন্দর মধুর কাহিনী। ভালো লিখেছেন মিতা। আপনার উপস্থাপনার তারিফ করতেই হয়।। বাহ বাহ।

৩০ শে অক্টোবর, ২০১৮ রাত ৮:৪১

আব্দুল্লহ আল মামুন বলেছেন: অন্তহীন ভালোবাসা রইল, মিতা।

৫| ৩০ শে অক্টোবর, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:৫০

কে ত ন বলেছেন: গল্পে ভুল আছে। নীলসাগর এক্সপ্রেস সাত বগির একটা ছোট ট্রেন। এখানে বড়জোড় 'ছ' পর্যন্ত থাকতে পারে। ট থাকার তো প্রশ্নই আসেনা।

৩০ শে অক্টোবর, ২০১৮ রাত ৮:৩৯

আব্দুল্লহ আল মামুন বলেছেন: অনেক দিন আগের ঘটনা, তাই ভুল হতে পারে। আপনার কথা মত ঠিক করে দিয়েছি। ধন্যবাদ।

৬| ৩০ শে অক্টোবর, ২০১৮ রাত ৮:১৯

রাজীব নুর বলেছেন: শুধু বিঘে দুই ছিল মোর ভুঁই আর সবই গেছে ঋণে।
বাবু বলিলেন, "বুঝেছ উপেন, এ জমি লইব কিনে।'

৩০ শে অক্টোবর, ২০১৮ রাত ৮:৪২

আব্দুল্লহ আল মামুন বলেছেন: ভালোবাসা রইল।

৭| ৩০ শে অক্টোবর, ২০১৮ রাত ৯:২০

আব্দুল্লাহ্ আল মামুন বলেছেন: সুন্দর একটি ব্যখ্যা।

৮| ৩০ শে অক্টোবর, ২০১৮ রাত ১০:১৫

বিচার মানি তালগাছ আমার বলেছেন: আমি বুঝলাম না, বাংলাদেশের সব ছেলেরাই বাস/ট্রেনে মেয়ে সহযাত্রী পেলেই অন্য কিছু ভাবতে কেন শুরু করে?

৩১ শে অক্টোবর, ২০১৮ দুপুর ১২:৩০

আব্দুল্লহ আল মামুন বলেছেন: হাঃ হাঃ হাঃ, এই গল্পের ছেলেটি কিন্তু আগে ভাবেনি। পরে ভেবেছে। ঘটনা ক্রমে এটি সত্য ঘটনা।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.