নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ভাবছি আমি ডুবেই যাবো \nসবুজ ঘাসের মাঝে,\nঘাসের চেয়ে আমি অমন \nবড় কিছু না যে।

আব্দুল্লহ আল মামুন

আব্দুল্লহ আল মামুন › বিস্তারিত পোস্টঃ

কিছু নিরীহ স্বীকারোক্তি

০৭ ই নভেম্বর, ২০১৮ দুপুর ২:৪৬



তখন আমার দূরন্ত কৈশোর। থাকি আজিমপুর কলোনীতে। যাদের শৈশব-কৈশোর কলোনীতে কেটেছে, তারাই জানে কলোনীতে বেড়ে উঠাটা কত আনন্দঘন হতে পারে। সম-বয়সি বন্ধুর অভাব এখানে কোন কালেই ছিল না। আর এ রকম কতগুলো বিচ্ছু একত্রিত হলে যে কত কত মহান অপকর্ম সম্পাদিত হতে পারে তার কোন হিসেব থাকে না।

এমনই কিছু মহান অপকর্মের কথা বলে কিছুটা দায়মুক্তির অপচেষ্টা করি, যদি কোন ভুক্তভুগির নজরে এই লেখাটা পড়ে, তো তা হবে বাড়তি পাওয়া এবং এতদিনে নিশ্চয়ই তিনি বা তারা সে সব অপকর্মকে নিজ গুণে ক্ষমা করে দিয়েছেন।

অপকর্ম-১:
অভিনেত্রী ফাল্গুনী হামিদ তখন বিটিভিতে পরিচিত মুখ (তখন বিটিভি ছাড়া অন্য কোন টিভি ছিল না)। তার মেয়ে তনিমা হামিদ তখনো অভিনয়ে আসেনি। তাদের বাসা ছিল আজিমপুর কলোনীতে। সেই বাসার প্রতি ছিল আমাদের ব্যাপক কৌতুহল। মাঠে বল খেলতে গেলে তাদের একতলা বাসার জানালায় বল লেগে দুম করে আওয়াজ হতো, মাঝে মাঝে জানালাও ভেঙ্গে যেতো, আর বাসা থেকে তিরিক্ষি স্বরে গালি-গালাজ ভেসে আসতো। আবার ক্রিকেটের বল জানালার গ্রিল গলে রুমে গেলে বা বরান্দায় পড়লে সেটা উদ্ধার করা ছিল তৃতীয় বিশ্ব যুদ্ধ জয়ের সমান। এই ঘটনা শুধু তাদের বেলাতেই ঘটতো তা না, মাঠের পাশের সব বিল্ডিং এর একতলার চিত্র মোটামুটি একই রকম ছিল। কিন্তু ফাল্গুনী হমিদের বাসার প্রতি বোধকরি আমাদের রাগটা একটু বেশিই ছিল। তাই ফুটবলটা কখনো কখনো আমরা ইচ্ছা করেই তাদের জানালায় মারতাম। আবার সবে-বরাতের রাতে চকলেট বোমের সলতায় আগর বাতি লাগিয়ে টাইম বোমের মত বানিয়ে তা তাদের বারান্দায় বা জানালার কোনায় রেখে দূরে লুকিয়ে মজা দেখার অপেক্ষায় থাকতাম। আবার কখনো কখনো দূর থেকে ইচ্ছে করে জানালায় ইট মারতাম। তারা যত দিন ঐ বাসায় ছিল ততদিন এরকম উৎপাত সহ্য করেছে, তবে এই উৎপাত শুধু আমরা করেছি তা না, এটা মোটামুটি একটা ঐতিহ্যে রূপ নিয়েছিল। অনেকটা বংশানুক্রমিক ঐতিহ্যের মত এক গ্রুপের পর অপর গ্রুপ এই মহান দায়িত্ব নিজেদের কাঁধে তুলে নিতো।

অপকর্ম-২:
রুমা-সীমাদের বাসা ছিল এক নং বিল্ডিং এর দোতলায়। এই দুই বোন বোধ করি দিনের বেশির ভাগ সময় বারান্দাতেই কাটিয়ে দিতো। যারা আজিমপুরে আশির দশকে থেকেছেন, তারা জানেন তখনকার বারান্দাগুলো বাঘের খাচার মত গ্রিল দেয়া থাকতো না। আমরা যতবারই সেই বারান্দার কাছ দিয়ে যেতাম একবার হলেও আড় চোখে তাদের দেখে নিতাম। একবার কিভাবে কিভাবে যেন আমাদের এক বন্ধু তাদের বাসার ফোন নম্বর যোগাড় করল। সেই সময়ে কোন মেয়ের সাথে কথা বলা ছিল বিরাট সাহসের বিষয়। আর ফোনে পরিচয় গোপন করে কথা বলা তো অন্য রকম থ্রিল। আমরা প্রায় প্রতিদিনই নিয়ম করে কয়েন বক্স থেকে ফোন করে তাদের জ্বালানো শুরু করলাম। তাদের সাথে কোন কালেই আমাদের কোন শত্রুতা ছিল না। তবু কেন যে এমন করতাম জানি না।

অপকর্ম-৩:
ইডেন কলেজ ও এর হোস্টেল কলোনীর কাছে হওয়ার কারণে বিকেল বেলা মেয়েরা তাদের বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজন নিয়ে কলোনীর রাস্তায় হাটা-চলা করে, আবার মাঠে বসে আড্ডা দেয়। আবার কখনো কখনো মাঠে বসেই জন্মদিনের পার্টি করে। এমনি এক বিকেল বেলা একটা গ্রুপ হয়তো জন্মদিনের পার্টির আয়োজন করছিল। তারা এক পাশে বসে তাদের আয়োজন সাজাচ্ছিল। এর মধ্যে এক মেয়ে হোস্টেল থেকে এক বক্স নুডুলস রান্না করে এনেছে। আমাদের এক বন্ধু বলল,
- ঐ দেখ, এক বক্স নুডুলস। নুডুলস খাবি?
- কি ভাবে?
- খাবি কি না বল?
- আচ্ছা খাবো।
আমরা তখন পাঁচজন ছিলাম। পরিকল্পনা অনুযায়ী দুইজন চিল্লা-চিল্লি করে ভিষণ মারামারি লাগিয়ে দিলাম। অপর দুইজন দুই দিক থেকে তাদের থামাতে দৌড়ে আসে। আর এইসব হট্টোগোল দেখে সবাই যখন এদিকে তাকিয়ে আছে, তখন আমাদের পঞ্চম জন নুডুলসের বক্স নিয়ে হাওয়া হয়ে যায়। তখন মারামারিও থেমে যায়, পরিস্থিতিও শান্ত হয়ে যায়। পরে এক বন্ধুর বাসায় গিয়ে সবাই মিলে পেট ভরে নুডুলস খেয়ে বাটিটি ব্যাগে ভরে চুপি চুপি সেই জায়গায় ফেলে এসেছিলাম। যে নুডুলসটা রান্না করেছে, তাকে ধন্যবাদ। নুডুলসটা খুব মজা হয়েছিল।

অপকর্ম-৪:
আজিমপুর কমিউনিটি সেন্টারে সব সময় বিয়ের প্রোগ্রাম লেগেই থাকতো। একদিন বন্ধু বলল খুব বিয়ে খেতে ইচ্ছে করছে। বললাম, চল খেয়ে আসি। বাসা থেকে একটু ভালো কাপড়-চোপড় পরে একটি জুতার বাক্স আর একটি সপিং ব্যাগ নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম। রাস্তা থেকে দশ ইঞ্চি একটি ইট কুড়িয়ে নিয়ে সেই বাক্সে ভরে র‌্যাপিংএ মুড়িয়ে চলে গেলাম কমিউনিটি সেন্টারে। আমার বন্ধু টেনশনে ঘামলেও আমি বেশ স্বাভাবিক ছিলাম। আরাম করে ভর পেট খেয়ে বের হওয়ার পর আমাদের হাসি আর থামে না। আমার এখনো খুব জানতে ইচ্ছে করে, গিফ্টের বাক্স খুলে দশ ইঞ্চি ইট পাওয়ার পর তাদের চেহারাটা কেমন হয়েছিল।

অপকর্ম-৫:
যারা কলোনীতে বাগান করতো, তারা জানে, আমাদের বয়সী ছেলে-পেলেদের হাত থেকে গাছের ফল-ফলাদি রক্ষা করা কতটা কঠিন ছিল। তাই কোন গাছের আম মিষ্টি, কোন গাছের বরই টক, কোন গাছের ডালিমে পাক ধরেছে, এসব ছিল আমাদের নখদর্পণে।
আমাদের অবস্থান ছিল ৭৪নং বিল্ডিংএ। বিল্ডিংটির উত্তর পাশে সিএমবি অফিসের দুটো একতলা টিন সেড বাড়ি ছিল, এখনো আছে। এর পূর্ব পাশের বাড়িটিতে একটি বার-মাসী পেয়ারা গাছ ছিল। সেই গাছের পেয়ারা এত মজার ছিল যে, পুরো আজিমপুর কলোনীতেও এমন গাছ দ্বিতীয়টি ছিল বলে আমাদের জানা ছিল না। তো কারণে অকারণে আমাদের ক্রিকেটের বল, ব্যাটমিন্টনের ফেদার, ফুটবল ওদের চালে গিয়ে পরতো। আর সেইসব খেলার উপকরণ উদ্ধার করতে গিয়ে সেই পেয়ারা গাছে কোন কচকচে পেয়ারাই আর অবশিষ্ট থাকতো না। আমাদের এরূপ অত্যাচারে তারা নিজ গাছের পেয়ারা কখনো খেতে পেরেছে কি না সন্দেহ আছে।

এখনো মাঝে মাঝে খুব স্মৃতি কাতর হলে সেই কলোনীর রাস্তাঘাট দিয়ে একটু ঘুরে আসি। জীবনের শতেরোটি বছর এখানে কেটেছে, এই মায়ার বাঁধনটা বড়ই শক্ত। কলোনী আর আগের মত নেই। সব ইমারত ভেঙ্গে নতুন গগনচুম্বি অট্টালিকা বানানো হচ্ছে। সেদিন দেখলাম আমাদের ইমারতটি এখনো ভাঙ্গা হয়নি। আর কিছু দিন পর সেখানে গিয়ে পুরোনো বিল্ডিংগুলো আর খুঁজে পাওয়া যাবে না। শৈশব-কৈশোর সেই সব বন্ধু-বান্ধবদের কারো কারো সাথে এখনো যোগাযোগ থাকলেও অনেকেই হারিয়ে গেছে এই বিশাল শহরের জনারণ্যে।
#আবদুল্লাহ আল মামুন ... ০৭-১১-২০১৮।

মন্তব্য ১০ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (১০) মন্তব্য লিখুন

১| ০৭ ই নভেম্বর, ২০১৮ বিকাল ৩:১৮

*** হিমুরাইজ *** বলেছেন: আপনি দেখি অপকর্মের জনক ;)

০৭ ই নভেম্বর, ২০১৮ বিকাল ৩:৩৯

আব্দুল্লহ আল মামুন বলেছেন: শৈশব-কৈশোরে সাধু-সন্ন্যাসী ছিল কয়জন?

২| ০৭ ই নভেম্বর, ২০১৮ বিকাল ৫:৩৪

রাজীব নুর বলেছেন: অপকর্ম গুলো কি সুন্দর করে স্বীকার করলেন!!

০৮ ই নভেম্বর, ২০১৮ সকাল ৯:৩৫

আব্দুল্লহ আল মামুন বলেছেন: দায়মুক্ত হওয়ার বৃথা চেষ্টা।

৩| ০৭ ই নভেম্বর, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:৪৩

ওমেরা বলেছেন: এখন কি ভাল হয়েছেন ?

০৮ ই নভেম্বর, ২০১৮ সকাল ৯:৩৬

আব্দুল্লহ আল মামুন বলেছেন: চেষ্টায় আছি।

৪| ০৭ ই নভেম্বর, ২০১৮ রাত ৮:০০

আরোগ্য বলেছেন: আপনার কৈশোরতো সার্থক।

০৮ ই নভেম্বর, ২০১৮ সকাল ৯:৩৭

আব্দুল্লহ আল মামুন বলেছেন: হা হা হা, ভালোই বলেছেন।

৫| ০৭ ই নভেম্বর, ২০১৮ রাত ৮:০৫

আখেনাটেন বলেছেন: ওমেরা বলেছেন: এখন কি ভাল হয়েছেন ? -- অামারও কথা তাই। এখনও অন্য কোনো রুমা-টুমার দিকে... :P


লেখা মজার হয়েছে। শৈশবের দুরন্তপনা।

০৮ ই নভেম্বর, ২০১৮ সকাল ৯:৩৮

আব্দুল্লহ আল মামুন বলেছেন: চেষ্টায় আছিরে ভাই। দৃষ্টি সংযত করা বড়ই কঠিন কাজ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.