নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ভাবছি আমি ডুবেই যাবো \nসবুজ ঘাসের মাঝে,\nঘাসের চেয়ে আমি অমন \nবড় কিছু না যে।

আব্দুল্লহ আল মামুন

আব্দুল্লহ আল মামুন › বিস্তারিত পোস্টঃ

গল্পঃ মেয়ের বাবার উপঢৌকন

২৬ শে আগস্ট, ২০২০ সকাল ১০:১১


“আব্বু এই ঈদে কিন্তু তোমাকে একটা গরু পাঠাতেই হবে। নয়তো শ্বশুরবাড়িতে আমার মানসম্মান কিছুই থাকবে না।”

মোবাইলের ওপাশ থেকে শফিকুর রহমানের মেয়ে কাকুতি মিনতি করে কথাগুলো বলছে। শফিকুর রহমান অনেক কষ্টে নিজেকে সংযত করে কথাগুলো শুনছেন। ছ'মাস হলো তিনি তার বড় মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন। মেয়েকে চোখের আড়াল করা যে এতো কষ্টের তা তিনি আগে বুঝেননি।

এই মেয়ে জন্মের পর থেকে তার চোখের সামনে বেড়ে উঠেছে। কত আবদার, কত আহলাদ, কত হাসি, কত কান্না এক মুহুর্ত চোখ বন্ধ করলেই যেন তিনি সব এখনো এক নিমিষে দেখতে পান। সেই মেয়ে আজ ছয়মাস ধরে তার সামনে নেই, ভাবতেই চোখের কোন ভিজে উঠে। কিন্তু তিনি তো কাঁদতে পারেন না। তিনি তো বাবা। তিনি কাঁদলে মেয়ের কী হবে? সে কিভাবে নিজেকে সামলাবে? এমনিতেই শ্বশুরবাড়িতে নতুন পরিবেশ। সেখানে নানানজনে নানান কথা বলে।

মেয়ের সম্মানের কথা চিন্তা করে গত ঈদে মেয়ের শ্বশুর বাড়ির সবার জন্য কাপড় পাঠিয়ে ছিলেন। সেই কাপড় নিয়েও নাকি মেয়েকে কত কথা শুনতে হয়েছে। মেয়ের বাবার নাকি নজর ভালো না। ব্যান্ডের দোকান থেকে কাপড় দেয়নি। শ্বাশুড়িকে কেউ এতো কম দামের কাপড় দেয়? ননদের কাপড় কালার কেমন আশি বছরের বুড়ির মতো। কাজের মেয়ের জন্য কোন কাপড় দেয়া হয়নি। এরকম আরো কতো কথা! এসব শুনে এতো আদরের বাবা-অন্তপ্রাণ মেয়েটি যে কীভাবে তা সহ্য করেছে, শফিকুর রহমান তা ভেবে পান না।

ওপাশ থেকে আবারও কথা ভেসে এলো “আব্বু শুনছো?”

শফিকুর রহমান চোখের পানি মুছে গলাকে যথা সম্ভব স্বাভাবিক রেখে বললেন, “হ্যারে মা, শুনছি। তুই বল। কেউ কি তোকে কিছু বলেছ?”

“শোন আব্বু, আমার শ্বাশুড়িকে তুমি চেন না। তিনি কি সরাসরি কিছু বলবেন? তিনি ইনিয়ে বিনিয়ে আমার কাছে গল্প করেছেন, গত বছর তার বান্ধবীর খালতো বোনের ননদের ছেলের শ্বশুর বাড়ি থেকে নাকি বিশাল বড় এক গরু পাঠিয়েছিল। সেই গরুর গোস্তো নাকি তার বান্ধবীর খালতো বোন তাকে পাঠিয়েছে। তার বান্ধবী নাকি বাক্স করে দু’টুকরো গোস্তো এনে তাকে খাইয়েছে। সেই গোস্ত নাকি তার এতো মজা লেগেছে, এতো মজা লেগেছে, তার স্বাদ নাকি এখনো জিহবায় লেগে আছে। এখন তুমি বল, এ গল্প ঈদের আগে আমাকে শোনানোর মানে কী?"

শফিকুর রহমান কিছু বলতে পারছেন না। এমনিতেই গত ঈদে এতোগুলা কাপড়-চোপড় কিনতে গিয়ে তাকে ধার করতে হয়েছে। গত ঈদে বোনাস পাননি। এ ঈদেও পাবেন বলে মনে হয় না। নিজে কখনো একলা এক গরু কোরবানি দেননি। এখন মেয়ের শ্বশুরবাড়িতে গরু পাঠাতে হলে, তাকে তো গ্রামের পৈত্রিক সম্পত্তি বিক্রি করতে হবে। এতো অল্প সময়ে তিনি তা কিভাবে বিক্রি করবেন? তবু তিনি মেয়েকে বললেন, “মারে তুই চিন্তা করিস না, আমি দেখি কী করা যায়। তুই ভালো থাকিস আর শ্বশুর - শ্বাশুড়ির সেবা-যত্ন করিস।”

শফিকুর রহমান মোবাইল রেখে দুই হাতে মাথা ধরে বসে পড়লেন। কী করবেন তিনি? কোথা থেকে টাকা যোগাড় করবেন? বন্ধু-বান্ধব কলিগদের কাছে আগে যে ধার করেছেন, তা-ই তো এখনো পরিশোধ করেননি। নতুন করে ধার চাইবেন কী করে? একটা ছোট গরু কিনতে হলে কম করেও পঞ্চাশ হাজার টাকা লাগবে। এদিকে গরু না দিলেও নয়। তার এতো আদরের মেয়েটা শ্বশুরবাড়িতে কথা শুনবে, তা কিছুতেই তিনি মেনে নিতে পারবেন না।

মেয়েকে তিনি দেখেশুনেই বিয়ে দিয়েছেন। ছেলে ভালো চাকরি করে। ফ্যামেলিও ভালো, শিক্ষিত ফ্যামেলি, অবস্থা সম্পন্ন। কোন দিকেই তাদের কোন অভাব নেই। সামাজিক অবস্থানও বেশ সম্মানজনক। তবু কেন যে তারা এমন করছে, তা তিনি বুঝে উঠতে পারছেন না।

শফিকুর রহমান ব্যাংক থেকে বেতনের বিপরীতে লোন নিয়ে সোজা চলে গেলেন গরুর হাটে। হাটে বিশাল বড় বড় গরু উঠেছে। তিনি অবাক হয়ে গরুর দিকে তাকিয়ে থাকেন। কী সুন্দর গরু! এদের আবার প্যাডেস্টাল ফ্যান দিয়ে বাতাস করা হচ্ছে। খানিক পর পর ভেজা নেকড়ায় গা মুছে দেয়া হচ্ছে।

কিন্তু মুগ্ধ হয়ে গরু দেখলে কী হবে, এ গরু কেনার সাধ্য তো তার নেই। কোন কালে হবে বলেও মনে হয় না। তিনি বাজেটের মধ্যে ছোট গরু কেনার জন্য হাটের আরো ভেতরে ঢুকে গেলেন। কিন্তু সাধ্যের মধ্যে গরু কোথায়? যাই দেখেন, তাই প্রায় দ্বিগুণ দাম। এই দাম কমানোর ব্যাপারে ব্যাপারীদের কোন আগ্রহ নেই। কেনা বেচা হচ্ছে অনেকটা বাটা জুতার রেটের মতো। তিনি কী করবেন, বুঝতে পারছেন না। গরু না কেনার কথা তিনি কিছুতেই ভাবতে পারছেন না। তার মনের মাঝে কেবলই মেয়ের করুণ মুখটি ভেসে উঠছে।

শেষপর্যন্ত তিনি ছোটখাটো একটি গরু বহু উচ্চমূল্য দিয়ে কিনে মেয়ের শ্বশুর বাড়ি পাঠিয়ে দিলেন। এ বছর নিজের আর কোরবানী দেয়া হলো না। তিনি মুখ অন্ধকার করে বসে আছেন। কষ্টের কথা কাউকে বলতে পারছেন না। এমন সময় ফোনটা বেজে উঠলো। ফোন ধরতেই ওপাশে মেয়ের কান্নার ঢেউ। মেয়ে তো বোঝে না সেই ঢেউ শত সহস্র গুণ বৃদ্ধি পেয়ে তা বাবার বুকে আছড়ে পড়ে।

তিনি কোন রকমে নিজেকে সামলে নিয়ে বললেন, “কী হয়েছে মা?”

হেঁচকি ওঠা কন্ঠে মেয়ে বললো, তুমি এটা কী পাঠিয়েছো আব্বু? আমার শ্বাশুড়ি বলেছে, “তোমার বাবার আক্কেলটা কেমন? মেয়ের বাড়িতে কেউ বাছুর পাঠায়? এর চেয়ে তো ছাগলের সাইজও বড়।” আব্বু, আমি সব কষ্ট সহ্য করতে পারি কিন্তু তোমাকে নিয়ে কেউ কটু কথা বললে আমার সহ্য হয় না। আব্বু, তুমি আমাকে এখান থেকে নিয়ে যাও। এখনই নিয়ে যাও। আমি আর সহ্য করতে পারছি না।

শফিকুর রহমান কিছুই বলতে পারছেন না। তার হাত-পা কাঁপছে। চোখেমুখে হঠাৎ করেই যেন অন্ধকার দেখছেন। তিনি তাল সামলাতে না পেরে পড়ে গেলেন। মোবাইলটাও হাত থেকে ছিটকে দূরে পড়ে গেলো। ওপাশ থেকে তখনও কন্ঠস্বর ভেসে আসছে, “হ্যালো, আব্বু, শুনতে পাচ্ছো? আব্বু, আব্বু,... ”
(ছবি নেট থেকে ডাউনলোড করে এডিট করা। শিল্পীর নাম জানা নাই।)
আবদুল্লাহ আল মামুন
রচনাকাল- ২০ আগস্ট ২০২০

মন্তব্য ১০ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১০) মন্তব্য লিখুন

১| ২৬ শে আগস্ট, ২০২০ সকাল ১০:২৫

চাঁদগাজী বলেছেন:


মেয়ােটা বেকুব।

২৬ শে আগস্ট, ২০২০ সকাল ১০:৪৩

আব্দুল্লহ আল মামুন বলেছেন: আপনার মন্তব্য ভালো লেগেছে। সমাজের এ কুপ্রথা থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে। ধন্যবাদ অশেষ।

২| ২৬ শে আগস্ট, ২০২০ সকাল ১১:৫৭

রাজীব নুর বলেছেন: আমি বিয়ে করেছি। আমি তো শ্বশুর বাড়ি থেকে কিচ্ছু নেই নি। আমার শ্বশুর কিন্তু বেশ ধনী। যারা যৌতুক নেয় আমি তাদের ঘৃণা করি।

২৬ শে আগস্ট, ২০২০ দুপুর ১২:০৭

আব্দুল্লহ আল মামুন বলেছেন: এমনই হওয়া উচিৎ। ধন্যবাদ ভাই।

৩| ২৬ শে আগস্ট, ২০২০ দুপুর ১২:১৫

মোহামমদ কামরুজজামান বলেছেন: গল্প হিসাবে ঠিক আছে । তবে বর্তমানের সামাজিক অবস্থার সাথে মেলে না।

এখনকার দিনে যে কেউ এই রকম পরিস্থিতি ভাবতেই পারে না।কোন মেয়ে এত বোকা হতে পারেনা যে তার বাবার সামর্থ্য সম্পর্কে তার কোন ধারনা নেই । যেই বাবা জীবনে একা কোরবানী দেয়নি সেই বাবার মেয়ে কি করে তার শ্বশুর বাড়ীর জন্য আস্ত একটা গরু চায় (বেকুব মহিলা)।
আর সব বাবাই মেয়ের ভাল চায় তাই বলে এরকম ভালবাসা বা ভাল বাবা হওয়া জরুরী নয়।

২৬ শে আগস্ট, ২০২০ দুপুর ১২:২৮

আব্দুল্লহ আল মামুন বলেছেন: এটি আমার পাশের বাড়িতেই ঘটছে এবং তা এ ঈদেই। ঘটনাটি ঢাকায় ঘটেছে। তাই ঘটনাটি অবাস্তব নয়।
চট্টগ্রামে এই প্রথা এখনো বর্তমান। প্রয়োজনে একটু খোঁজ নিয়ে দেখতে পারেন।
তবে এ সমাজকে বদলাতে হবে। আমরা আমাদের অবস্থান থেকে একটু চেষ্টা করি। সময় নিয়ে পড়েছেন ও মন্তব্য করেছেন দেখে আমি আপ্লুত।
অনেক অনেক ধন্যবাদ ভাই।।

৪| ২৬ শে আগস্ট, ২০২০ দুপুর ১২:৩৮

নেওয়াজ আলি বলেছেন: অনেক এলাকায় কুপথা চালু আছে । মেয়েদের পেরেশানি

২৬ শে আগস্ট, ২০২০ বিকাল ৩:০১

আব্দুল্লহ আল মামুন বলেছেন: ঠিক বলেছেন। বিশেষ করে চট্টগ্রাম অঞ্চলে এ কুপ্রথা অধিক চলমান। তবে এখন ঢাকাতেও এর প্রভাব পড়েছে। আমার দেখা ঘটনাটি ঢাকায়। অনেক অনেক ধন্যবাদ ভাই।

৫| ২৬ শে আগস্ট, ২০২০ দুপুর ২:২৪

মোঃমোস্তাফিজুর রহমান তমাল বলেছেন: এরকমটা আমার এক আত্মীয়ের সাথে হয়েছিলো।আত্মীয়ের শ্বশুরবাড়ি থেকে চাওয়া হয়েছিলো আমার বাবার কাছে। বাবা বলেছিলেন,যদি এতই অভাব থাকে তাহলে সপরিবারে আমাদের এখানে চলে আসুন।পাঠাতে পারবো না কিছু। টানা দুই ঈদে এমন জবাব দেয়ার পর তারা সোজা হয়ে গিয়েছিলেন। আর কিছু চাওয়ার নাম করেননি। আমার সেই আত্মীয় শ্বশুরবাড়ির কোনও কথা গায়ে লাগাননি।আর আমার বাবার কাছেও চাননি।এজন্য শ্বশুরবাড়ির লোকেরাই নিজ থেকে চাইত।

২৬ শে আগস্ট, ২০২০ বিকাল ৩:০৪

আব্দুল্লহ আল মামুন বলেছেন: আপনার বাবাকে একশটা সালাম। দরুণ প্রতিবাদ করেছেন। এ থেকে আমাদের শিক্ষা নেওয়া উচিত। অনেক অনেক ধন্যবাদ ভাই। ভালো থাকবেন সবসময়।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.