নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি খুব সাদাসিধে মানুষ ।কবিতা,গল্প,লিরিক লিখার চেষ্টা করি মাত্র ।মাঝে মাঝে জীবনকে রহস্যেঘেরা বৃত্ত মনে হয় । যে বৃত্তে আমরা একদিক থেকে অন্যদিকে পরিভ্রমন করি ।কখনো কখনো জীবনের কথাগুলো অলীক ভাবনাদের স্পর্শ করতে ব্যাকুল হয় ।কিন্তু ভাবনাগুলো কখনোই স্পর্শ করা হয়না ।হয়তো কিছু কথা রাখতে গিয়েও রাখা হয়না ব্যাপারটির সাথে একমত পোষণ করে ।রাখা না রাখার ক্যানভাসে জীবন নি:শেষের পথে হাঁটে ।একসময় সেটাও ফুরোয় ।এরমাঝে অনেক কথার মিছিলে একটি প্রশ্ন মনে বারবার আঁচর কাটে...........আমরা কি কখনো পরিপূর্ণ হতে পারি.................আমরা মুগ্ধ হই...........কিন্তু মুগ্ধতাকে ছুঁতে পারিনা,খুব কাছ থেকে............
আজকাল কেন জানি বড্ড মন খারাপ থাকে।সে মন খারাপ নিয়ে এক বন্ধুর বাসায় গেলাম আড্ডা দিতে। বাসার কাছাকাছি গিয়ে রিক্সা থেকে নামতেই বাবুর ফোন
-তরুণ তুই কোথায়?আমরা ছাদে বসে আছি তোর জন্য। তাড়াতাড়ি আয়।
-হুম আসছি।
বলেই ভাড়াটা দিয়ে ছুট লাগালাম ওর বাসার ছাদে।
এই ছাদটা আমার খুব পছন্দ।বছর দুয়েক আগে এই ছাদেই আমার সঙ্গে প্রথম চোখাচোখি হয় অহনার।সেদিন কোথায় যেন হারিয়ে গিয়েছিলাম। তার চোখের মায়াবী আবেশে লিখে ফেলি জীবন...ের প্রথম কবিতা।এরপর আমার শব্দস্রোত গড়াত তার বেলাভূমিতে।
প্রতিদিন ছাদে আড্ডায় বসা হতো।আড্ডাকে ফাকি দিয়ে আমি খেয়াল করতাম ও কখন ওদের ছাদে আসবে।যেই আড্ডা ছেড়ে উঠতাম অমনি উনি হাজির। রুমে ফেরা সঙ্গীদের থেকে দলছুট হয়ে বসে থাকতাম।এভাবে কত প্রহর গড়ায় কথা আর হয়না দুজনায়।
শীতের এক বিকেলে বাসে চেপে যাচ্ছি পাবলিক লাইব্রেরী।সিটি কলেজের সামনে আসতেই দেখি উনি দাড়িয়ে আছেন।এক ঝটকায় নেমে গেলাম।ও পরের বাসে উঠলো ,আমিও। এবং বসলাম তার পাশে।
অনেক সাহস করে প্রশ্ন করলাম
-কোথায় যাচ্ছেন?
-চারুকলায়
-আপনি?
-লাইব্রেরীতে।
-খুব বই পড়েন
-না ,ওই চত্তর্টা খুব ভালো লাগে।
কথায় কথায় শাহবাগ চলে এলাম।
বাস থেকে নেমে আবারও আলাপন।
-আচ্ছা আপনার নামটা জানা হয়নি। এতো কাছাকাছি প্রতিদিন দেখা হয় অথচ কেউ কাউকে জানি না। অবশ্য এটা নিতান্তই একটা সাধারণ ব্যাপার। আপনিই বা কেন আমাকে জানবেন।এতো কাছে থেকেও মনে হয় বহুদূর। হোয়াটএভার আমি তরুণ
-আমি অহনা
কথা শেষ করে ঢুকে পড়লাম লাইব্রেরীতে।
এর পরদিন থেকে ওর আর দেখা নেই।খোজ নিয়ে জানা গেল ওদের সবাই চিটাগাং চলে গেছে।আমার ভেতরে শূন্যতা যেন বাড়তে লাগলো।অনেক চেষ্টা করেও কোন ঠিকানা বা ফোন নম্বর পাইনি।ছাদে গেলেই শুরু হয় অস্থিরতা।
পুরনো কথা চিন্তা করতে করতে সিড়ি দিয়ে উঠছি।মনে হচ্ছে কে যেন পেছন থেকে আমাকে টেনে ধরছে।আর মনে হচ্ছে ছাদটা যেন আকাশের উচ্চতায়।
অবশেষে ছাদে এলাম।বেশ আড্ডা হলো।মনটা একটু ফুরফুরে হলো।অনেকদিন ধরেই একটা অভ্যাস হয়ে গেছে।রাতে বাবুর বাসায় আড্ডা দিয়ে দেড় দু ঘন্টা রাস্তায় হাটা।খুব ভোরেও এর পুনরাবৃত্তি চলে।জানিনা পথে কি আছে বা কাকে খুজি।শুধু জানি যে পথ দিয়ে হাটি সেখানে কিছু মায়ার আবেশ আছে।
রাত এগারোটা। ফিরছি বাবুর বাসা থেকে।ধানমন্ডি আবাসিক এলাকার ভেতর দিয়ে হাটতে হাটতে এক বাসার নিচতলায় চেচামেচি শুনে দাড়ালাম।যা বুঝলাম ড্রাগ এডিক্টেড ছেলে ড্রাগ কেনার টাকা না পেয়ে বাড়িতে ভাংচুর করে শেষমেষ বাড়ি থেকে বের হয়ে গেল।এখন তার ঠিকানা ভ্রষ্ট পথের প্রান্ত।
খুব ক্ষট লাগলো। মেন রোড ছুই ছুই অবস্থায় দেখলাম একদল পথশিশু মনের আনন্দে চারটি কলা ভাগ করে খাচ্ছে। খেয়ে দেয়ে চটের বস্তা বিছিয়ে যাত্রী ছাউনির নিচে শুয়ে পরলো।এখন তারা গভীর ঘুমে মগ্ন।হয়তো স্বপ্নে বিভোর। ওদের স্বপ্ন ঘুমের মধ্যেই সীমাবদ্ধ।
মনে মনে চিন্তা করলাম জীবন কত বিচিত্র।আমার হাহাকার প্রনয়ের।ওই ছেলেটার হাহাকার সুন্দর জীবনে ফেরার। আর পথশিশুদের হাহাকার একটু আশ্রয়ের।
©somewhere in net ltd.