নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মঞ্জুর চৌধুরী

আমি ঝন্ঝা, আমি ঘূর্ণি, আমি পথ-সমূখে যাহা পাই যাই চূর্ণি’। আমি নৃত্য-পাগল ছন্দ, আমি আপনার তালে নেচে যাই, আমি মুক্ত জীবনানন্দ। আমি হাম্বার, আমি ছায়ানট, আমি হিন্দোল, আমি চল-চঞ্চল, ঠমকি’ ছমকি’ পথে যেতে যেতে চকিতে চমকি’ ফিং দিয়া দিই তিন দোল; আমি চপলা-চপল হিন্দোল। আমি তাই করি ভাই যখন চাহে এ মন যা, করি শত্রুর সাথে গলাগলি, ধরি মৃত্যুর সাথে পান্জা, আমি উন্মাদ, আমি ঝন্ঝা! আমি মহামারী আমি ভীতি এ ধরিত্রীর; আমি শাসন-ত্রাসন, সংহার আমি উষ্ন চির-অধীর! বল বীর - আমি চির উন্নত শির!

মঞ্জুর চৌধুরী › বিস্তারিত পোস্টঃ

খুবই সেনসিটিভ ইস্যু। তবে এড়িয়ে যাবেন না।

০৮ ই ডিসেম্বর, ২০১৪ রাত ১১:৫৫

প্রথমেই বলে নেই, এটি খুবই সেনসিটিভ ইস্যু। তবে এড়িয়ে যাবেন না, কারণ একইসাথে এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
আমার এক কাজিনের বিয়ে হয়েছিল বিরাট কোটিপতি ছেলের সাথে। লন্ডনি সিলেটিরা এমনিতেই কোটিপতি হয়, তারউপর ছেলের পরিবারের সিলেটে চা বাগান ফাগানে একেবারে হুলুস্থূল অবস্থা! ছেলে নিজেও উচ্চশিক্ষিত। দেখতেও সুন্দর, মাশাল্লাহ!
লন্ডনে সিলেটিদের আত্মীয়স্বজন গিজগিজ করে। অনেক খোঁজখবর নিয়ে জানা গেছে, দীর্ঘপ্রবাস জীবনে ছেলের একটিও প্রেমের রেকর্ড নেই। এমন সুপাত্র পেয়ে মেয়ের পরিবার স্বাভাবিকভাবেই উচ্ছসিত!
মেয়ে নিজেও রূপসী, আমার কাজিন বলে কথা! :)
এবং মেয়ের গুষ্ঠিও কোটিপতি। তারউপর তাঁদের পরিবার "একতাই বলে" বিশ্বাসী! মানে কারও দুঃখের দিনে পরিবারের সবাই যেমন পাশে এসে দাঁড়ায়, তেমনি কারও সুখের দিনেও পরিবারের সবাই সমানভাবে উপস্থিত!
এই মামা গায়ে হলুদের স্পন্সর তো ঐ চাচা "পান-চিনি" স্পন্সর করছেন। বিয়ের অমুক অংশের দায়িত্ব এই ফুপু কাঁধে তুলে নিচ্ছেন, তো ঐ খালা তমুক অংশে কাউকেই হাত লাগাতে দিচ্ছেন না।
মহা ধুমধামে বিয়ে সম্পন্ন হলো। সে এক দেখার মতই অনুষ্ঠান ছিল। ছেলেপক্ষ্য মেয়েকে লন্ডন উড়িয়ে নিয়ে গেল, এবং মাত্র এক মাসের মাথাতেই মেয়ে দেশে ফেরত চলে এলো। ডিভোর্স হয়ে গেছে!
চারিদিকে হায় হায় রব! ঘটনা কী কেউ বুঝতে পারছে না। মেয়েপক্ষ্য স্বাভাবিকভাবেই বলছে ছেলেরই সব দোষ, ছেলেপক্ষ্যের কারও সাথে পরিচয় না থাকায় ওদের বক্তব্য শোনা হয়নি। শোনা সম্ভব হলে হয়তো তারা বলতো মেয়েরই সব দোষ!
একটা সময়ে দেখলাম সিলেট শহরেই, মেয়ের নিজের আত্মীয়স্বজনদের মধ্যে কানাঘুষা চলছে, "নিশ্চই মেয়েটা কিছু একটা করেছে, নাহলে একমাসে কারও ডিভোর্স হয়?"
আবার সামনা সামনি হলে দেখি সেই আত্মীয়দেরই মেয়েটির জন্য প্রাণ একেবারে ফেটে যাচ্ছে! আমরা বাঙ্গালিরা চরম হিপোক্রেট একটি জাতি। Admit it!
যারই দোষ হোক, আমরা দেখলাম অনেক হাসিখুশি মেয়েটা রাতারাতি বদলে গেল। যেন কোন ম্যাজিক ট্রিক! বিয়েটা ম্যাজিকের পর্দার ভূমিকা পালন করেছে। কিন্তু কিছু কিছু ম্যাজিকের খেলা বেদনাদায়ক হয়ে থাকে!
কথা প্রসঙ্গে আরেক ঘটনায় যাওয়া যাক।
আমাদের দেশে বেশ কয়েক বছর আগে পাগলের চিকিৎসা মানেই ছিল তার বিয়ে দিয়ে দেয়া। লোকজন বলতো "বউ আসলে সব ঠিক হয়ে যাবে!"
কোন উন্মাদের মাথা থেকে যে এই বুদ্ধি বেরিয়েছিল কে জানে!
একজন মানসিক প্রতিবন্ধীর চিকিৎসা কী করে বিয়ে হতে পারে? বউ যদি মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞ না হয়ে থাকেন, তবে কোন লজিকে পাগল সুস্থ হবে? কিন্তু দেখা যায়, বিয়ের পরেও যদি পাগল পাগলামি করতে থাকে, এবং প্রায় একশোভাগ ক্ষেত্রে সেটাই ঘটে, তবে দোষটা সম্পূর্ণভাবেই বউয়ের উপর এসে পড়ে। কেন বউটা পাগলকে সুস্থ্য করতে পারলো না? দোষ নিশ্চই মেয়ের!
শহরাঞ্চলে এই প্রথা এখন নজরে না আসলেও, গ্রামাঞ্চলে নাকি এখনও পাগল সুস্থ্য করতে "বিবাহ চিকিৎসার" কোন বিকল্প নেই।
তবে শহরে আরেকটা রোগে বিবাহ চিকিৎসা দেয়া হয়। ছেলে বখে গেছে, ড্রাগ অ্যাডিক্ট হয়ে গেছে, কিংবা রাস্তাঘাটে গুন্ডামি করে বেড়ায় - মুরুব্বিরা ছেলেটির সাথে একটি সুস্থ্য স্বাভাবিক মেয়ের, রাস্তা দিয়ে মেকআপ ছাড়া হেঁটে গেলেও যেই মেয়েটিকে যে কেউ সুন্দরী হিসেবে মেনে নিবে, তার সাথে বিয়ে দিয়ে দেন। তারপর তাঁরা হাত ধুয়ে ফেলার মতন করে বলেন, "আমাদের দায়িত্ব আমরা পালন করেছি, এখন ছেলেকে ভাল করার দায়িত্ব বউয়ের।"
কই ভাই? কোথায় দায়িত্ব পালন করলেন? ছেলে একদম বখে গিয়েছে, এখন উল্টা আরেকটা মেয়ের জীবনেরও সর্বনাশ করলেন। তাহলে কিভাবে আপনাদের দায়িত্ব শেষ হলো?
এখন ফিরে আসি আমার কাজিনের বিয়েতে।
বেচারির মাত্র একমাসেই বিয়ে ভেঙ্গে গেছে। মেয়েটি কিছুতেই বলে না কেন বিয়ে ভাঙ্গলো। কয়েক বছর পরে তার আবার বিয়ে হলো এবং এখন তাঁদের কয়েকটা ফুটফুটে বাচ্চাও হয়েছে। এখন মেয়েটিকে সুখী বলাই যায়। তাঁর প্রথম স্বামীর দ্বিতীয় বিয়ে হয়েছে কিনা জানা নেই।
আমি নিশ্চিত নই, তবে আমার ধারনা তাঁর প্রথম স্বামী সমকামী ছিল। সহজ ভাষায় Gay!
আমাদের দেশে সমকামী কনসেপ্টটা ধোঁয়াটে হলেও অ্যামেরিকায় এরা বেশ খোলামেলা। এখনও আমাদের দেশীয় বাপ চাচারা এক ছেলের সাথে আরেক ছেলের বিয়ের কথা শুনলে চোখ কপালে তুলে ভাবেন, "কিভাবে সম্ভব!"
মায়েরা গর্ব করে বলেন, "আমার ছেলে মাশাআল্লাহ ভীষণ লক্ষ্মী হয়েছে! মেয়েদের দিকে একদমই চোখ তুলে তাকায় না। তার সবাই ছেলে বন্ধু!"
আন্টি, একটু খোঁজ নিয়ে দেখেন ছেলে কেমন লক্ষ্মী! সে হয়তো অন্য ছেলের পাশে দিয়ে গেলে তাকে ছুঁয়ে দেখতে চায়। পাছায় চিমটি কাটে। আরও হয়তো অনেক কিছুই করে, বুঝে নিন।
সমকামীদের নিয়ে আমাদের দেশে অনেক মিসকনসেপশন আছে। তাঁদের অত্যন্ত ঘৃণার চোখে দেখা হয়। একজন ঘুষখোর, চোর বাটপার দূর্নীতিবাজদের আমাদের যেখানে ঘৃণা করার কথা, সেখানে আমরা তাদের 'জ্বী হুজুরি' করি, সেখানে সমকামী জানলেই আমরা তাঁদের সমাজচ্যুত করে দেই। 'ইবোলা' রোগীর মতন তাঁর স্পর্শ পারলে এড়িয়ে চলি।
আমার বেশকিছু সমকামী বন্ধু আছে। ছেলেও যেমন, মেয়েও তেমন। নিজের অভিজ্ঞতা থেকেই বলছি, বন্ধু হিসেবে সমকামী মেয়েরা অসাধারণ! মেয়ে বলে স্বাভাবিকভাবেই তারা ছেলেদের চেয়ে একটু বেশি 'নাইস' হয়ে থাকে, এবং সমকামী হওয়ায় প্রেমের সম্পর্ক তৈরী হবার কোন সুযোগ থাকে না। কাজেই তাঁদের সাথে বন্ধুত্ব আর আট দশটা ছেলের সাথে বন্ধুত্বের মতই স্বাভাবিক। কোন কোন ক্ষেত্রে একটু বেশি 'কমফর্টেবল।'
সমকামী ছেলেদের সাথে মেশায় তাঁদের কয়েকটা গুণাবলী আমি লক্ষ্য করেছি। তারা বেশ সুদর্শন হয়ে থাকে। প্রচন্ড ফ্যাশন সচেতন হয়ে থাকে। প্রচন্ড মানে I really mean প্রচন্ড! কথাবার্তায় খুবই নম্র-ভদ্র হয়ে থাকে। এবং সবচেয়ে বড় যে বৈশিষ্ট্য তা হচ্ছে, কোন মেয়ের সাথে তাঁদের প্রেমের সম্পর্ক থাকেনা!
আমার প্রথম "কাজিন দুলাভাইয়ের" সাথে বৈশিষ্ট্যগুলো মিলে যায়।
এখন বাঙ্গালি কমিউনিটিতে সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো, মা বাবা যখনই বুঝতে পারেন তাঁদের ছেলে অথবা মেয়ে সমকামী, তখনই তাঁকে সুস্থ্য করতে তাঁর বিয়ের ব্যবস্থা করেন। এবং মনে করেন বউয়ের সাথে বিছানায় গেলেই বুঝিবা তাঁরা স্বাভাবিক হয়ে যাবেন!
ব্যপারটা কিন্তু তা না। ছেলে তখন গোপনে অন্য ছেলের বাড়িতে যায়। মাঝে দিয়ে আরেকটা মেয়ের জীবন নষ্ট করা হচ্ছে!
একজন মেয়েকে এত কাছে পেয়েও আপনার ছেলের ভিতরে কোন আলোড়ন তৈরী হচ্ছে না (এরচেয়ে ভদ্রভাবে লেখা সম্ভব নয়, তবে বুঝে নিন কী বুঝাতে চাইছি) সেটা কোনভাবেই মেয়েটির দোষ নয়। কাউকে যদি "দোষ" দিতেই হয়, তবে নিজের ছেলেকে দিন! যদিও এই ব্যপারে নাকি জোর জবরদস্তি খাটে না। আমার যেসব গে এবং লেসবিয়ান বন্ধু-বান্ধবী আছে, তাঁদের কারোরই নাকি বিপরীত লিঙ্গের প্রতি "ফিলিংস"টাই আসে না! তাঁরা বলেন, "আমাদের উপরওয়ালা এইভাবেই সৃষ্টি করেছেন, আমরা কী করতে পারি?"
আল্লাহ আমাকে স্ট্রেইট করেই জন্ম দিয়েছেন, কাজেই আমি উপলব্ধি করতে পারবো না তাঁদের ফিলিংসের বিষয়টা, এবং একারণেই এই ব্যপারে কোন মন্তব্য করবো না।
তবে একটা কথা অবশ্যই বলবো, তোমরা যদি মনে করো তোমার বিপরীত লিঙ্গের প্রতি আকর্ষণ নেই, এবং তুমি সমকামী, তাহলে "লোকলজ্জার ভয়ে" অথবা "পরিবার-পরিজনদের ইজ্জত রক্ষার্থে" বিপরীত লিঙ্গের কাউকে বিয়ে করে ফেল না।
তুমি সমকামী, সেটা তোমার নিজস্ব ব্যপার। তুমি জানো সেটা কিভাবে deal করতে হবে। হয় স্পষ্ট আওয়াজ তুলো, নাহলে একদম চুপ করে থাকো। মাঝে দিয়ে অন্যের জীবন নষ্ট করার কী অধিকার তুমি রাখো?
পুনশ্চ: অনেক ছেলেই মনে করেন "গে"দের সাথে মিশলেই বুঝিবা গেরা ধাপাধাপ তাঁদের প্রেমে হাবুডুবু খেতে শুরু করবেন। অথবা ফ্লার্ট করা শুরু করবে। ব্যপারটা কিন্তু তা নয়। আপনি যেমন হয়তোবা অনেক মেয়ের সাথেই মিশেন, তারা সবাই কী আপনার প্রেমে পড়ে? তাঁদের বয়ফ্রেন্ড থাকে, স্বামী থাকে, কেউ আপনাকে ছোট ভাই হিসেবে দেখে, কেউবা বড় ভাই। অথবা শুধুই বন্ধুত্ব থাকে আপনাদের মধ্যে। তেমনি লেসবিয়ান গেরাও সেরকম। ওরা ভিন্ন কোন গ্রহের প্রাণী নয়। ওরাও আমাদের মতই মানুষ। সেক্সুয়াল প্রেফারেন্সটাই যা একটু ভিন্ন। তবে আপনি যদি স্ট্রেইট হয়ে থাকেন, তবে আপনার কোনই ভয় নেই। ওরা আপনাকে ঘাটাবে না নিশ্চিত থাকুন।

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ০৯ ই ডিসেম্বর, ২০১৪ রাত ১২:১০

খেলাঘর বলেছেন:


আপনি গে?

০৯ ই ডিসেম্বর, ২০১৪ রাত ১২:৩৫

মঞ্জুর চৌধুরী বলেছেন: আমিতো লিখেছিই আমি স্ট্রেইট। কেন ভাই, আপনি গে? সমস্যা নাই। শুধু মেক শিওর করবেন, একটা মেয়েকে বিয়ে করে তাঁর জীবন বর্বাদ করবেন না।

২| ০৯ ই ডিসেম্বর, ২০১৪ দুপুর ২:১২

ভূতের কেচ্ছা বলেছেন: অনেক ভাল লেগেছ আপনার লেখাটি,

শুভ ব্লগিং..........

০৯ ই ডিসেম্বর, ২০১৪ রাত ১১:০৮

মঞ্জুর চৌধুরী বলেছেন: ধন্যবাদ!

৩| ০৯ ই ডিসেম্বর, ২০১৪ রাত ১১:৫৬

অ্যানালগ বলেছেন: বাংলাদেশে সমকামি অনুভুতি কাউকে প্রকাশ করতে দেখা যায় না। এখানে এসবের চর্চা নেই তাই কারো সুপ্ত অনুভুতি থাকলেও তার প্রকাশ ও প্রসার হয়নি।

লন্ডনি বিয়া এখন কমি গেছে ভাইছাব, লাস্ট ২ বছর কুনো দাওয়াত পাইলাম না :(

১০ ই ডিসেম্বর, ২০১৪ ভোর ৫:০৩

মঞ্জুর চৌধুরী বলেছেন: :)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.