নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মঞ্জুর চৌধুরী

আমি ঝন্ঝা, আমি ঘূর্ণি, আমি পথ-সমূখে যাহা পাই যাই চূর্ণি’। আমি নৃত্য-পাগল ছন্দ, আমি আপনার তালে নেচে যাই, আমি মুক্ত জীবনানন্দ। আমি হাম্বার, আমি ছায়ানট, আমি হিন্দোল, আমি চল-চঞ্চল, ঠমকি’ ছমকি’ পথে যেতে যেতে চকিতে চমকি’ ফিং দিয়া দিই তিন দোল; আমি চপলা-চপল হিন্দোল। আমি তাই করি ভাই যখন চাহে এ মন যা, করি শত্রুর সাথে গলাগলি, ধরি মৃত্যুর সাথে পান্জা, আমি উন্মাদ, আমি ঝন্ঝা! আমি মহামারী আমি ভীতি এ ধরিত্রীর; আমি শাসন-ত্রাসন, সংহার আমি উষ্ন চির-অধীর! বল বীর - আমি চির উন্নত শির!

মঞ্জুর চৌধুরী › বিস্তারিত পোস্টঃ

মাথা মোটা ধর্মান্ধের দল!

১৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৪ রাত ১১:৩৭

নাইন ইলেভেন দূর্ঘটনার পর অ্যামেরিকা যখন তালিবান নিধনে আফগানিস্তান আক্রমণ করেছিল, তখন আমরা মাত্রই কলেজের ছাত্র। সিলেটের অতি বিখ্যাত এম.সি কলেজে। ক্যাম্পাসে তখন শিবিরের একচ্ছত্র রাজত্ব। প্রতিদিন আমাদের গ্রুপকে শিবিরে যোগ দেয়ার দাওয়াত দেয়া হয়, এবং আমরা নানান ছুতোয় তাদের এড়িয়ে যাই।
"শিবিরে যোগ দিলে তোমাদের দ্বীনের পথে থাকতে সুবিধা হবে। আমরা শুধুই দ্বীনের পথে চলতে সাহায্য করি। রাজনীতি আমাদের মূখ্য উদ্দেশ্য না।"
"আমরাতো এমনিতেই পাঁচওয়াক্ত নামাজ পড়ছি, আমাদের 'অফিসিয়াল সীলের' কী দরকার?"
"শুধু নামাজ পড়লেই কী চলবে নাকি? কোরআন পড়তে হবেনা?"
"আমরা রোজ কোরআনও পড়ি। সুরাহ ইয়াসিন আমার ঠোটস্থ মুখস্ত।"
বড় ভাই এমনভাবে তাকালেন যেন আমি তাঁর সাথে ফাজলামি করছি। তাই হরবর করে সুরাহ ইয়াসিন বলতে শুরু করে দিলাম। দশম আয়াত পর্যন্ত যেতে না যেতেই তিনি আর কথা বাড়ালেন না।
শিবিরের বড় বড় নেতার সাথে তখন আমাদের এভাবেই পরিচয় হয়ে গিয়েছিল। শিবিরে যোগ না দিয়েও।
একদিন যোহরের নামাজ পড়ছি কলেজ মসজিদে, সেখানে জামাত শেষে শিবিরের "বড় ভাইয়েরা" আল্লাহর দরবারে দোয়া করলেন, যাতে তালিবানদের শক্তি বৃদ্ধি করা হয়। অন্যায় যুদ্ধে তাদের যেন বিজয় হয়।
তখন যুদ্ধের অবস্থা ভয়াবহ। মুহূর্মুহু বোমা হামলায় নিরীহ মানুষ মারা পড়ছেন। হাসপাতালে আহতের ভিড় সামলানো যাচ্ছে না। ফুটফুটে সব শিশু, ফেরেস্তার মতন চেহারা, হাত/পা হারিয়ে বিছানায় শুয়ে আছে!
আমরা তাই খুবই আবেগের সাথে বলেছিলাম, "আমীন!"
বুঝতে পারিনি পাটায় পোতায় পিশাপিশিতে ওরা আসলে মাঝখানের মরিচ। এতদিন তালিবানের গুলিতে মরেছে, এখন মরছে অ্যামেরিকান বোমায়। ওদের ভাগ্যে মৃত্যু লেখাই ছিল। আফসোস!
এখন সবাই জানেন যে আল্লাহ আমাদের দোয়া কবুল করেননি। তিনি সর্বজ্ঞ, তিনি জানেন কার ভিতরে কী চলছে। এবং তিনি অবশ্যই যা কিছু করেন, ভালোর জন্যই করেন। তালিবানদের বাড়তে দিলে কী হতো সেটা পেশোয়ার ট্রাজেডি চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে।
তালিবানদের সেই পরাজয়ে আমরা খুব মর্মাহত হয়েছিলাম। কারণ আমাদের দেশে যুদ্ধটা প্রচার পেয়েছিল "খৃষ্টান বনাম ইসলাম জিহাদ" রূপে।
বাংলাদেশে থেকে আমরা বুঝতে পারিনি যে যারা অন্যায়ভাবে অন্যধর্মের নিরীহ মানুষ হত্যা করতে পারে, স্বার্থে আঘাত করলে তারা একসময় নিজেদের ধর্মের মানুষেরও জীবন নিতে দ্বিধা করবে না। পাকিস্তানি ছাগল শাসকরাও সেটা বুঝতে পারেনি। তাই তালিবানদের প্রশ্রয় দিয়ে এসেছিল। এখন সেটার খেসারত দিচ্ছে।
কিছুদিন পরপর ওদের এই শহরে ঐ শহরে বোমা হামলা হচ্ছে, শয়ে শয়ে মানুষ মরে নিহতের সংখ্যা হাজার ছাড়িয়ে নিচ্ছে। শিয়া-সুন্নি, তালিবান-পাকিস্তানি, মুসলিম-কাফির ইত্যাদি ইত্যাদি।
তালিবান উচ্ছেদে যখন কোন হামলা চালানো হয়, তখন দেখা যায় আমাদের দেশের লোকজন তাদের জন্য সমব্যথী হয়ে উঠেন।
আমাদের দেশে এখনও একটা বিরাট দল আছে যারা চোখ বন্ধ করে বলেন, "হাজার হোক, ওরাও মুসলমান! ওরাও আমাদের ভাই।"
শুধু তালিবানই না। ইরাকে আইএস নিধনের অভিযানেও এদের এক মত। একেকজন নিরীহ সাংবাদিকের মাথা কাটা ভিডিও প্রচার করা হয়, এবং এরা সেই ভিডিও দেখে বলেন, "সুবহানাল্লাহ!"
নাউযুবিল্লাহ!
কাদের আপনারা মুসলিম বলছেন? যারা মুসলমানে মুসলমানে, মানুষে মানুষে ভেদাভেদ সৃষ্টি করে, তাদের?
"আমি সুন্নি! মার শিয়ারে! আল্লাহু আকবার!"
"আমি শিয়া! মার সুন্নিরে! ইয়া আলী!"
"আমি মুসলিম! মার কাফিররে! আল্লাহু আকবার!"
এবং সবচেয়ে বেদনাদায়ক, "আমি তালিবান। আমি কাউরে মারতে পারিনা। তাই ছোট ছোট বাচ্চাদের মারি। আল্লাহু আকবার!"
গত পরশু সিডনীতে যা হয়ে গেল, সেটাকে কী বলা যাবে? কে শ্রেষ্ঠ হলো? একদল নিরীহ মানুষকে যারা অস্ত্রের মুখে জিম্মি করলো? নাকি যে যুবক নিজের জীবনের পরোয়া না করে ওদের সাথে লড়তে গিয়ে নিহত হলেন? নাকি সেই তিন বাচ্চার মা, যে আরেকজনের জীবন রক্ষা করতে গিয়ে শহীদ হলেন? বুদ্ধি খাটান।
কেউ কেউ বলবেন, "ধর্ম অত্যন্ত জটিল বিষয়। এইটা বুঝা সহজ না। এইসব ব্যপারে চুপ থাকাই ভাল।"
আমি বলবো, কে বলেছে ধর্ম জটিল? যা ভাল, তা কর, যা খারাপ, তা করো না। এরচেয়ে সহজ আর কী হতে পারে? a b c d? তিন বছরের বাচ্চাকে জিজ্ঞেস করুন, a b c d তার কাছেও জটিল।
তারপরেও যারা এইখানে ধর্ম টানতে চান, তাঁদের উদ্দেশ্যে বলি, সুরাহ আনফালের ৪৬তম আয়াতে এইসব বিভেদ সৃষ্টিকারী ফাজিলদের আল্লাহ সতর্ক করে বলেছেন, "And obey Allah and His Messenger, and do not dispute and [thus] lose courage and [then] your strength would depart; and be patient. Indeed, Allah is with the patient."
সুরাহ আল ইমরানেও একই কথা আরেকটু স্পষ্ট করে বলা হয়েছে, "And hold firmly to the rope of Allah all together and do not become divided."(১০৩)
সুরাহ আল আনামেতো আল্লাহ আরও বড় দুঃসংবাদ দিয়েছেন তাদের জন্য, "Indeed, those who have divided their religion and become sects - you, [O Muhammad], are not [associated] with them in anything. Their affair is only [left] to Allah ; then He will inform them about what they used to do."(১৫৯ নম্বর আয়াতটি মিলিয়ে নিন।)
মানে হচ্ছে, আল্লাহ তাদের দেখে নিবেন। পার্সোনালি! এবং কে না জানে তিনিই সবচেয়ে কঠিন শাস্তিদাতা! আল্লাহ আমাদের সবাইকে মাফ করুক!
নবীজি বলেছেন "কিয়ামতের আগে ইসলাম ধর্মের ৭৩টি শাখা প্রশাখা বেরুবে, মাত্র একটিই জান্নাতে যেতে পারবে। কারা? যাঁরা কোরআনকে আকড়ে ধরে থাকবে, এবং নবীজির (সঃ) "অথেন্টিক" হাদীস মেনে চলবে, তাঁরাই জান্নাতি।"
মাত্র তিরিশ পাড়ার কোরআনে একটি বিশেষ ব্যপারে যদি একাধিকবার উল্লেখ করা হয়ে থাকে, তার মানে হচ্ছে ব্যপারটা মহা মহা গুরুত্বপূর্ন। সেই সাথে যদি রাসূলেরও শক্তিশালী ব্যাকআপ থাকে, তার মানে আর নিস্তার নাই। ধর্মে বিভক্তি টানা তাই সেইরকম নিষিদ্ধ একটি ব্যপার! অথচ, আমরা কথায় কথায় ওস্তাদি ফলাই। একে অপরকে "কাফির" বলে ডাকি। মানুষ মারা গেলে আমাদের বুক কেঁপে উঠেনা। আরে, তারাও আমাদের মতই মানুষ, তাদের শরীরেও একই লাল রক্ত বইছে, আমরা সবাই একই আদি পিতা মাতার সন্তান, এই কী যথেষ্ট না? কেউ আমার মতে অমত হলেই তাকে মেরে ফেলতে হবে, এ কেমন ধর্মপালন?
এক পাকিস্তানি বন্ধুর ফেসবুকে একটা ভিডিও দেখলাম। এক ভদ্রলোক কাঁদতে কাঁদতে উর্দূতে বলছেন, "জালিমের দল, এ তোরা কী করলি? তোরা যে তাঁদের মেরে ফেললি, তাঁদের দোষটা অন্তত বলে দে! এখন এইসব মায়েরা কার কাছে গিয়ে বলবে 'আমাদের বাচ্চাদের ফিরিয়ে দাও?' কার কাছে যাবে?"
ভদ্রলোকের গলা ধরে আসে। কাঁদতে কাঁদতে চোখ ফুলে উঠে অনেক আগেই। যেই ভিডিওটি দেখছে, সেই কাঁদছে।
আমরা ভিডিও দেখে ঝিম মেরে যাই। ভাবি, আমাদের কী কিছুই করার নেই?
আছে! আপনার বন্ধু বান্ধবের সাথে খোলামেলাভাবে এই বিষয়ে কথা বলুন। আমি নিশ্চিত, আপনাদের বন্ধু মহলে বা তাদের বন্ধু মহলে এখনও অনেকেই আছেন যারা জঙ্গিবাদের পক্ষ্য নেন। তাঁদের বুঝান ইসলাম শান্তির ধর্ম। আমরা সাধারণ মানুষের রক্ত পিপাসু নই। ওরা যদি বলে কোরআনে আছে হিংসার কথা, তবে হাতে কোরআন দিয়ে বলুন, রেফারেন্স বের করে দেখাতে। যদি একটাও আয়াত বের করে দেখাতে পারে, আল্লাহর কসম, আমি তাদের কাছে হার মেনে নিব। আর জীবনেও কোন উচ্চবাচ্য করবো না।
কিন্তু আপনি ওদের উপরের আয়াতগুলো দেখাতে পারবেন। সুরাহ মায়্যিদার অতি বিখ্যাত আয়াতটিও ("যে একটি নিরীহ মানুষ হত্যা করলো, সে যেন গোটা মানবজাতিকে হত্যা করলো...(৩২)") দেখান। হাদিস দেখান। আপনিই পারবেন নিজেকে শুধরাতে এবং সেই সাথে অন্যকেও শুধরাতে।
কে জানে, বাচ্চাদের স্কুলে আক্রমণ করা উন্মাদ লোকটাকে অথবা সিডনীতে জিম্মি করা মাথা মোটা পাগলগুলাকে কেউ যদি সময় মত বুঝাতে পারতো, তাহলে আজকে হয়তো আমাদের এভাবে ভিডিও দেখে কাঁদতে হতো না!

মন্তব্য ৮ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০১৪ রাত ১২:৫২

পয়গম্বর বলেছেন: আমি আপনার লেখার একজন ভক্ত। বরাবরের মতোই ভালো হয়েছে।

১৯ শে ডিসেম্বর, ২০১৪ ভোর ৪:৩৭

মঞ্জুর চৌধুরী বলেছেন: ধন্যবাদ! আপনারা কমেন্ট করেন বলেই লিখতে ভাল লাগে। :)

২| ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০১৪ রাত ১:১৭

নতুন বলেছেন: এই সহজ বিষয়টা আমাদের দেশের কোটি মানুষের মাথায় নেই..

১৯ শে ডিসেম্বর, ২০১৪ ভোর ৪:৩৯

মঞ্জুর চৌধুরী বলেছেন: ছড়িয়ে দিন। আলোচনা করুন বন্ধুদের সাথে। যখনই কথা উঠবে এইসব বিষয়ে, এড়িয়ে যাবেন না। আপনিই একটা জঙ্গিকে সঠিক পথে ফেরাতে পারবেন। :)

১৯ শে ডিসেম্বর, ২০১৪ ভোর ৪:৩৯

মঞ্জুর চৌধুরী বলেছেন: ছড়িয়ে দিন। আলোচনা করুন বন্ধুদের সাথে। যখনই কথা উঠবে এইসব বিষয়ে, এড়িয়ে যাবেন না। আপনিই একটা জঙ্গিকে সঠিক পথে ফেরাতে পারবেন। :)

৩| ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০১৪ রাত ২:০১

আমি ভাল আছি বলেছেন: হুমম

৪| ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০১৪ দুপুর ১:১২

অপূর্ণ রায়হান বলেছেন: ভালো লিখেছেন ভ্রাতা +

শুভেচ্ছা।।

১৯ শে ডিসেম্বর, ২০১৪ ভোর ৪:৪০

মঞ্জুর চৌধুরী বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ ভাই। আপনাকেও শুভেচ্ছা। :)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.