নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মঞ্জুর চৌধুরী

আমি ঝন্ঝা, আমি ঘূর্ণি, আমি পথ-সমূখে যাহা পাই যাই চূর্ণি’। আমি নৃত্য-পাগল ছন্দ, আমি আপনার তালে নেচে যাই, আমি মুক্ত জীবনানন্দ। আমি হাম্বার, আমি ছায়ানট, আমি হিন্দোল, আমি চল-চঞ্চল, ঠমকি’ ছমকি’ পথে যেতে যেতে চকিতে চমকি’ ফিং দিয়া দিই তিন দোল; আমি চপলা-চপল হিন্দোল। আমি তাই করি ভাই যখন চাহে এ মন যা, করি শত্রুর সাথে গলাগলি, ধরি মৃত্যুর সাথে পান্জা, আমি উন্মাদ, আমি ঝন্ঝা! আমি মহামারী আমি ভীতি এ ধরিত্রীর; আমি শাসন-ত্রাসন, সংহার আমি উষ্ন চির-অধীর! বল বীর - আমি চির উন্নত শির!

মঞ্জুর চৌধুরী › বিস্তারিত পোস্টঃ

"কাউলাদের" থেকে সাবধান!

২৪ শে ডিসেম্বর, ২০১৪ রাত ১২:৪৬

১.
অ্যামেরিকায় বা যেকোন 'বিদেশে' এসে প্রথমেই মানুষকে রিটেইল শপে কাজ নিতে হয়। বাংলাদেশে আমি ডাক্তার ছিলাম, দেশে আমি ইঞ্জিনিয়ার ছিলাম - এইসব হম্বিতম্বি এইদেশে কাজ করে না বাছা - এইদেশে তুমি নোবডি। 'সামবডি' হতে হলে তোমাকে বেশ কিছুদিন কোথাও না কোথাও কাজ করে নিজেকে প্রমাণ করতেই হবে।
রিটেইল শপে কাজ, মানে ওয়ালমার্ট, গ্যাস স্টেশন অথবা ফাস্টফুডে কাজ করা মানে কাস্টমার সার্ভিসে (সেলসম্যান, ক্যাশিয়ার ইত্যাদি) কাজ করা। পৃথিবীর সবচেয়ে জঘন্যতম কাজ! এইটা বাংলাদেশ না যে আপনি শাড়ি কিনতে শাড়ির দোকানে গেলেন, উঁচু শেলফ থেকে একটা পছন্দের শাড়ি নামাতে বললেন; তখন দোকানদার আপনার দিকে তাকিয়ে বলল, "শাড়ির একদাম কিন্তু দশহাজার টাকা। আপনি কী নিবেন? নিলে বলেন, তাইলেই নামাবো। খামোখা সময় নষ্ট করতে চাই না।"
আপনি তখনও শাড়িটা ঠিক মতন দেখেনওনি, তার আগেই আপনাকে গ্যারান্টি দিতে হবে যে আপনি কিনবেন! আপনার কিছুই বলার নেই। দোকানদারদের কাছে আপনি একরকম জিম্মি।
অ্যামেরিকায় কাস্টমারই সব। ওয়ালমার্টের কর্ণধার স্যাম ওয়াল্টনের ভাষায়, "কাস্টমার হচ্ছে এক নম্বর বস!"
এখানে কাস্টমারের যে কী ক্ষমতা সেটা না দেখলে কেউ বিশ্বাসই করতে চাইবেন না। তাঁরা অনায়াসেই কর্মচারীদের সাথে দুর্ব্যবহার করেন, পাল্টা জবাব হিসেবে আপনি কেবল হাসিমুখে (নকল হাসি হলেও চলবে) মাফ চাইতে পারবেন। একটা বাজে কথা বলার অধিকার আপনার নেই। ম্যানেজার যদি আসেন, তবে ম্যানেজারকেও কাস্টমারের পক্ষ্যই নিতে হয়। এটাই তাঁর দায়িত্ব।
তো স্বাভাবিকভাবেই কাস্টমার সার্ভিসে যারা কাজ করেন, কিছুদিনের মধ্যেই তাঁরা বর্ণবাদী হয়ে যান। সহজভাষায় যাকে রেসিস্ট বলে আর কি। তাঁরা তখন ইন্ডিয়ানদের (ব্রাউন চামড়ার যে কেউ এখানে 'ইন্ডিয়ান') ঘৃণা করেন, ম্যাক্সিকানদের (ল্যাটিন অ্যামেরিকার সবাই এখানে 'ম্যাক্সিকান') ঘৃণা করেন, আরবদের ঘৃণা করেন, চিঙ্কুদেরও (টানা চোখের অধিকারী, চাইনিজ, জাপানিজ, কোরিয়ান, ইন্দোনেশিয়ান সবাই) ঘৃণা করেন। ঘৃণার কোন শেষ নাই। এমনকি সাদা চামড়ার অ্যামেরিকানরাও রেসিজম থেকে বাদ যান না।
তবে রেসিজমের সবচেয়ে বড় শিকার হন অ্যাফ্রিকান অ্যামেরিকান সম্প্রদায়। যদিও তাঁদের মধ্যে এখন অ্যাফ্রিকার কোন বৈশিষ্ট্যই অবশিষ্ট নেই, তবুও কালো মানেই ওরা অন্ধকার মহাদেশের অধিবাসী। বাঙ্গালি সমাজে তাঁদের আবার আরেকটা নাম আছে, "কাউলা!"
গ্যাস স্টেশনে কাজ করছেন, গভীর রাতে দুইজন কালো ছেলে এলেন আপনার দোকানে। নিশ্চিতভাবেই আপনার হৃৎপিন্ড তখন লাফিয়ে মুখ দিয়ে বেরিয়ে আসতে চাইবে। কালো মানেই আমাদের কাছে সন্ত্রাসী, কাউলা মানেই ‘গ্যাংস্টা!’
আপনার সেলফোনের স্পীড ডায়ালে তখন নাইন ওয়ান ওয়ান। শুধু টেপার অপেক্ষা। দু’মিনিটেই পুলিশ এসে উপস্থিত হবে।
কারও কারও হাত আবার বন্দুকের ট্রিগারে। যদি সে পিস্তল বের করে তাহলে শট গান দিয়ে গুলি করে ব্যাটার বুক ঝাঝরা করে দেয়া হবে। "সেল্ফ ডিফেন্স!"
কিন্তু যদি নিশিরাতে কোন সাদা অ্যামেরিকান গ্যাস স্টেশনে আসে, আমরা কিন্তু ভয় পাইনা। 'ব্রাউন চামড়ার' লোক হলেতো পাত্তাই দেই না। আমরা 'ইন্ডিয়ানরা' (ব্রাউন চামড়ার যে কেউ এখানে ইন্ডিয়ান) এখানে খুবই নিরীহ জাতি।
মজার ব্যপার হচ্ছে, অ্যামেরিকার সেরা পঁচিশজন সিরিয়াল কিলারের লিস্টে কিন্তু একটাও 'কাউলা' নেই। সব সাদা চামড়ার 'ভদ্রলোক।'
এইটা কোন থিওরি না, এইটা ফ্যাক্ট।
২.
রেসিজমের শিকার কিন্তু আমরাও। ব্রাউন বলে যত না, তারচেয়ে বেশি মুসলিম হিসেবে। কেউ যখন জানতে পারে আমি মুসলিম, তখন তাঁর প্রথম রিয়েকশনটা হয় দেখার মতন। তাঁদের দৃঢ় বিশ্বাস, আমরা অতি অবশ্যই খৃষ্টান এবং ইহুদীদের শত্রু হিসেবে গন্য করি। ওদের শত্রু ভাবাটাই নাকি আমাদের ঈমান! নিজের জীবন দিয়ে হলেও তাদের মেরে ফেলাটা তখন আমাদের ঈমানী দায়িত্ব। আমাদের আরেক পরিচয় 'বুম! বুম!!' এই নামের সাথে যে আফ্রিদির কোন সম্পর্ক নেই, সেটাতো বুঝতেই পারছেন। বুদ্ধি খরচ করে বের করুন আর কী হতে পারে।
সেদিন গভীর রাতে বউয়ের 'ডাইনারে' খেতে ইচ্ছে হলো। প্রেগন্যান্ট মহিলারা হচ্ছেন আলাদিনের মত, শুধু হুকুম করেন। স্বামীদের সেই জ্বীন হতে হয় যে হাসিমুখে হুকুম তালিম করে।
দুজনে মিলে গেলাম খেতে। আমাদের পাশেই আপাদমস্তক বোরখায় ঢেকে এক মহিলা এসে বসলেন। প্রথম দেখায় বুকটা ধক করে উঠলো। এদেশে আমরা মেয়েদের অর্ধনগ্ন অবস্থায় দেখে অভ্যস্ত। নিশিরাতে সেই নগ্নতা আরেকটু বেড়ে যায়। নাইট ক্লাব থেকে অনেকেই খেতে আসেন কিনা। সেখানে একজন এসেছেন এক্কেবারে নেকাব পড়ে। চোখ ছাড়া কিছুই দেখা যায় না। সেই চোখ দেখে বোঝা গেল মহিলা কৃষ্ণাঙ্গিনী।
একে মহিলা 'মুসলিম' তার উপর 'কাউলা!' ডবল ডোজের ঝটকা সামলাতেই বুকটা লাফিয়ে উঠেছিল।
সাথে সাথে বউকে বললাম, "কী দিন এসেছে, নিজের ধর্মের এক মহিলাকে নিজের ধর্মীয় পোশাকে দেখে আজকাল পিলে চমকে উঠে!"
মহিলা এক চিপায় বসে খেলেন। এবং একসময়ে খাওয়া শেষে চলেও গেলেন। কোন কোন বুমবুম ঘটেনি। রেসিজমের গালে একখানা জবরদস্ত চপেটাঘাত।
৩.
পৃথিবীর সবচেয়ে আধুনিক দেশ অ্যামেরিকায় এই মাত্র কয়েক বছর আগেও কালো চামড়ার লোকেদের পুড়িয়ে মারা হতো। কালোদের ফাঁসি চড়ানোর দৃশ্য দেখতে মানুষেরা স্বপরিবারে ভিড় করতেন। যেন কোন উৎসব ঘটছে। কু ক্লাক্স ক্ল্যানের নাম অনেকেই শুনেছেন। সাদাদের অতি কুখ্যাত সংগঠন। আমাদের দেশের জঙ্গিদের মতন এরাও সন্ত্রাসী গোষ্ঠী। পার্থক্য, এরা কালো চামড়ার লোকেদের খুন করতো। একই সাথে যারা কালোদের সাহায্য করেন, তাদেরও যমের বাড়ি পাঠান। এরা এখনও পুরোপুরি বিলুপ্ত হয়ে যায় নি। এদের নাকি মাঝে মাঝেই সিক্রেট মিটিং হয়।
কালোদের জন্য আলাদা স্কুল ছিল, আলাদা কলেজ ছিল। এমনকি পানি খাবার নলও তাঁদের জন্য ভিন্ন ছিল।
বাসের সীটে কালোরা বসতেই পারতো না, সাদা চামড়ার কাউকে দেখলেই উঠে দাঁড়াতে হতো। ভোটের অধিকার? সেতো বহুদূরের ব্যপার।
কালোদের অধিকার নিয়ে লড়েছিল বলে এরা একাধিক 'সাদা' প্রেসিডেন্ট পর্যন্ত মেরে ফেলেছে। খুব বেশিদিন আগেকার কথা কিন্তু নয়। এই সেদিনের ঘটনা এসব। তাই এখনও রেসিজম অনেকের মন থেকে ঠিকমত দূর হয়নি। এখনও এইদেশে মানুষ চামড়ার রঙ্গের উপর ভিত্তি করে মানুষকে বিচার করে। সাদা চামড়ার লোকেরা কালো, বাদামী, হলুদ, লালচে চামড়ার লোক দেখলে বলে, "ইমিগ্র্যান্ট!"
৪.

এইটা বললাম অ্যামেরিকার কথা। যারা অন্তত 'বিদেশীদের' সাথে রেসিজম করে।
আমাদের দেশের অবস্থা আরও ভয়াবহ। আমি নিজের শহর সিলেটের কথাই যদি বলি, আমরা সিলেট অঞ্চলের বাইরের লোকেদের "বেঙ্গলি" বলি। সিলেটে এসে বাইরের কেউ থাকতে চাইলে বলি, "আবাদী!”(ইমিগ্র্যান্ট)
প্রয়োজনে নিজের কাজিনকে বিয়ে করবো, তবু সিলেটের বাইরের কারও সাথে সংসার করবো না।
চিটাগংয়ের মানুষেরও একই দোষ আছে। ঢাকার মানুষেরও একই দোষ। এখন আবার তারা গানও গায়, "ঢাকার পোলা ভ্যারি ভ্যারি স্মার্ট!"
বাবারে! আমরা কী তাইলে ভ্যারি ভ্যারি ক্ষ্যাৎ?
গোটা দেশের লোকজন মিলে 'নোয়াখাইল্যা' বা 'বরিশাইল্যাদের' দেখতে পারিনা। কেন? ওরা লোক খারাপ। কেন খারাপ? উত্তর নেই।
আরে ব্যাটা ফাজিল! অন্যকে খারাপ বলার আগে নিজের দিকে তাকিয়ে দেখ, তোর জন্ম শুক্রাণু-ডিম্বানু (অনেক ভদ্র শব্দ ব্যবহার করলাম, চলিত ভাষায় বুঝে নেন কী বুঝিয়েছি) থেকে - এমন নোংরা একটা 'বস্তু' থেকে জন্ম নিয়ে তুই কিভাবে কারও উপরে শ্রেষ্ঠ হলি? বেঁচে থাকতে হলে তোকেও খাবার খেতে হয়, খাবার শেষে সেটা ত্যাগ করতে তোকেও টয়লেটে যেতে হয়। তাহলে কিসের এত অহংকার তোর?
এখন আবার নতুন নতুন রেসিজম শুরু হয়েছে।
"ওর বাপ আওয়ামীলীগ করে, ও ভারতের দালাল।"
"ওরা বিম্পি-জামাত সমর্থক! ওরা যুদ্ধাপরাধী।"
হিন্দু-মুসলিম-বৌদ্ধ-খৃষ্টান নিয়ে বিভেদতো ছিলই। ভবিষ্যতেও থাকবে।
সেই ছোটবেলায় একবার আমাদের এক বন্ধু কথায় কথায় জানতে পেরেছিল যে আমাদের সাথে একটা বৌদ্ধ ছেলেও ক্রিকেট খেলতে আসত। সেই বন্ধু দাঁত মুখ খিঁচিয়ে এমনভাবে চেহারা বানালো যে মনে হওয়া স্বাভাবিক যেন এতদিন সে বীফ শিক কাবাব মনে করে আসলে পঁচা ইঁদুরের মাংস খেত।
অথবা আমরা মুসলিমরা এক হিন্দু দাদার বাড়িতে বেড়াতে গেলে তাঁর রান্নাঘরে আমাদের প্রবেশ নিষেধ ছিল। আমরা বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেলে তাঁর মা গঙ্গা জল দিয়ে নিজের বাড়ি 'শৌচ' করতেন। এইসব দেখলে কতদিন সেই বাড়িতে যেতে ইচ্ছে করে?
এতটুকুন একটা দেশ, প্লেন টেকঅফ করার পর ঠিকভাবে নড়াচড়া করার আগেই যার আকাশসীমা পেরিয়ে যায়, সেখানেই আমরা একজন আরেকজনকে দেখতে পারিনা। আফসোস! আমরা আবার আমাদের 'কৃষ্টি-কালচার' নিয়ে গর্ব বোধ করি! আমাদের কালচার কী আমাদের এটা শিখিয়েছে? জবাব হচ্ছে, না!
এখন দেখা যাক আমাদের ধর্ম মানে ইসলাম কী বলে?
ইসলাম বলে, রেসিজম আসলে শয়তানের কাজ। শয়তান মানে ইবলিস স্বয়ং, দ্য বাপ অফ অল ভিলেনস।
প্রমাণ দিচ্ছি।
কুরআনের একটা অতি বিখ্যাত ঘটনা যেখানে হযরত আদমকে(সঃ) সৃষ্টির পর আল্লাহ জ্বীন এবং ফেরেস্তাদের নির্দেশ করেছিলেন তাঁকে সম্মান করে সিজদা করতে, তখন ইবলিস বলেছিল, "আমি আগুনের তৈরী এবং ও মাটির - আমি কেন তাঁকে সম্মান করতে যাব? আমি অবশ্যই তাঁর থেকে সেরা।"
ইবলিস হচ্ছে সর্বপ্রথম রেসিস্ট।
আমরা যদি বলি, আমার গায়ের রং সাদা, তাই আমি কালোদের চেয়ে উপরে; অথবা আমি সিলেটি, বাকিরা সবাই বেঙ্গলি (প্রকারন্তরে বাকি সবাই খারাপ) তাহলে আমার আর ইবলিসের মধ্যে পার্থক্য কোথায়? কোন পার্থক্য নেই।
ইসলাম ধর্ম মতে, আমরা এক পুরুষ ও এক নারী থেকে এসেছি, কাজেই কেউ কারও চেয়ে বড়, কেউ কারও চেয়ে ছোট নই। জন্মগতভাবেতো অবশ্যই নই। হ্যা, কর্মগতভাবে আমাদের স্ট্যাটাস অবশ্যই নির্ভর করে। কেউ যদি সন্ত্রাসী হয়ে যায়, সে সাদা কালো যাই হোক না কেন, তার উপরে একজন ভাল মানুষ, সেও সাদা কালো, ধনী গরীব যাই হোক না কেন, শ্রেষ্ঠ! একজন ঘুষখোর চোর মন্ত্রীর চেয়েও একজন খেটে খাওয়া দিন মজুর কিন্তু সৎ ব্যক্তির অবস্থান উপরে। আপনি মানেন অথবা না মানেন, এটাই সত্য।
আল্লাহর শেষ নবী(সঃ) তাঁর বিখ্যাত 'বিদায় হজ্জ্ব' ভাষণে বলেছেন, "একজন অনআরবের উপর যেমন কোন আরবের শ্রেষ্ঠত্ব নেই, তেমনি কোন আরবের উপরেও কোন অনআরবের শ্রেষ্ঠত্ব নেই। একজন শ্বেতাঙ্গ একজন কৃষ্ণাঙ্গ থেকে শ্রেষ্ঠ নয়, একজন কৃষ্ণাঙ্গও শ্বেতাঙ্গ থেকে শ্রেষ্ঠ নয়।"
তিনি আমাদের নেতাদের মতন শুধু কথার বুলিই ছোটাননি, নিজের জীবনে তা প্রয়োগও করেছেন। ইসলামের প্রথম মুয়াজ্জিন হচ্ছেন হযরত বিলাল(রাঃ)। তিনি কে ছিলেন? একজন আফ্রিকান কৃতদাস! যোগ্যতা? তাঁর কন্ঠস্বর ছিল অসম্ভব সুরেলা। কে তাঁকে মুয়াজ্জিন বানালেন? বিশ্বনবী (সঃ) স্বয়ং। যিনি কিনা নিজে ছিলেন একজন খাঁটি আরব। এর উপর কোন কথা আছে? না, নেই।
নবীজি(সঃ) তাঁর সবচেয়ে প্রিয় কন্যা ফাতিমার (রাঃ) বিয়ে দিয়েছিলেন হযরত আলীর(রাঃ) সাথে। বিয়ের সময়ে আলীর(রাঃ) অবস্থা কী ছিল? দেনমোহর দেবার জন্যও নিজের কোন সম্পত্তি ছিল না। এই বাড়িতে সংসার করলে ফাতিমাকে(রাঃ) অতি কষ্টে সংসার টানতে হবে এটা তিনি জানতেন। এবং সেটাই হয়েছিল।
যেখানে ফাতিমা(রাঃ) ছিলেন বিশ্বনবীর(সঃ) কন্যা। তাঁর চেয়ে যোগ্যতর কন্যা আরব সমাজে দুইটি ছিল না। আরবের এমন কোন পুরুষ ছিলেন না যিনি তাঁর মতন মেয়েকে জীবন সঙ্গিনী হিসেবে পেয়ে সুখী হবেন না। অথচ নবীজি (সঃ) কিনা 'ডাক্তার' 'ইঞ্জিনিয়ার' অথবা 'চৌধুরী' 'খন্দকার' সব বাদ দিয়ে আলীর (রাঃ) সাথেই বিয়ে দিলেন?
তিনি শুধুমাত্র মানুষটাকে দেখতেন। তাঁর লাস্ট নেম অথবা গাত্রবর্ণকে নয়।
এইসব ঘটনা কত বছর আগের? চৌদ্দশ বছর পেরিয়ে গেছে। আমি উপরে যত কাহিনী বললাম তা কবেকার? অতি সাম্প্রতিক। আর আমরা ইসলামকে মধ্যযুগীয় গালি দিয়ে নিজেদের আধুনিক বলি!
হাসালে বন্ধু!
৫.
নবীজির (সঃ) মসজিদে এক মহিলা ঝাড়ু দিতেন। বেশ কিছুদিন ধরে সেই মহিলা অনুপস্থিত থাকায় তিনি সাহাবীদের কাছে জানতে চাইলেন মহিলা ঠিক আছে কিনা। সাহাবীরা জানালেন মহিলা কিছুদিন আগে মারা গেছেন।
নবীজি(সঃ) ভীষণ মর্মাহত হলেন। বললেন, "আমাকে খবর দাও নি কেন? আমি তাঁর জানাযা পড়াতাম।"
সারাদিন এই নিয়ে তাঁর অনুতাপ ছিল।
সাহাবীরা একজন 'সামান্য' ঝাড়ুদারের মৃত্যুতে বিশ্বনবীকে (সঃ) 'ডিস্টার্ব' করার কথা চিন্তাই করেন নি। তাঁরা ভুলে গিয়েছিলেন যে তিনি বিশ্বনবী(সঃ), শ্রেষ্ঠ মানব। অতি সামান্য যে পিপড়া, সেটাকেও তিনি অকারণে হত্যা করেন না। অতি নিরীহ যে বৃক্ষ, সেটারও কোন ক্ষতি সাধনের ব্যপারে তিনি নিষেধ করেছেন। ‘Racism’তো বহুদূর!
আবুজর গিফারীর (রাঃ) নাম সবাই শুনেছেন নিশ্চই। তাঁর রেফারেন্সে অনেক অনেক হাদিস আমরা জানতে পেরেছি।
তিনি একবার এক কৃতদাসকে গালি দিয়ে বলেছিলেন, "কালো নারীর সন্তান।" (যেহেতু গালি ছিল, কাজেই সঠিক শব্দ হয়তো হবে, 'কাউলা বেটির পুৎ!' আল্লাহ ভাল জানেন।)
কথাটা নবীজির (সঃ) কাছে পৌছালে তিনি তাঁকে ডাকিয়ে এনে বলেন, "তোমার মধ্যে জাহেলি যুগের (অন্ধকার ও বর্বতার যুগ) উপাদান এখনও অবশিষ্ট আছে। তুমি এখুনি গিয়ে তাঁর কাছে ক্ষমা চাইবে! শুধু তাই না, ভবিষ্যতের জন্যেও সাবধান থাকবে বলে দিলাম! তুমি কোন সাহসে এমন কথা বললে?"
একজন সাহাবী(নবীজীর(সঃ) সঙ্গী), একজন দাসের সাথে রেসিজম করায় নবীজির (সঃ) রেসপন্স ছিল এই। আর আমরা দেশের বাইরে যাবার কালে আপনজনদের অতি অবশ্যই পরামর্শ দেই, 'কাউলাদের থেকে সাবধান!'

মন্তব্য ২৬ টি রেটিং +৯/-০

মন্তব্য (২৬) মন্তব্য লিখুন

১| ২৪ শে ডিসেম্বর, ২০১৪ রাত ৩:২৩

বাংলার পথিক বলেছেন: লেখাটা পড়ে ভালো লাগলো কাউলা থেকে সাবধান :) অনেকেই বাইরে গিয়ে অনেক ফাপরবাজি করেন যে আমি অমুকে সেই সেলসম্যান হিসেবে আছি । কফি সপে আছি । সেই রকম হাই ফাই অবস্থা । ধন্যবাদ বাস্তবটা যে এমন যে তা জানা ছিলো না :!>

২৪ শে ডিসেম্বর, ২০১৪ ভোর ৫:৩৬

মঞ্জুর চৌধুরী বলেছেন: ধন্যবাদ!

২| ২৪ শে ডিসেম্বর, ২০১৪ রাত ৩:৩০

নাইমুল ইসলাম বলেছেন: অসাধারণ! চমৎকার! আপনার যুক্তি গুলা ভিষণ মজবুত। বরাবরের মতই প্রশান্তি অনুভব করলাম আপনর লেখা পড়ে :)

২৪ শে ডিসেম্বর, ২০১৪ ভোর ৫:৩৭

মঞ্জুর চৌধুরী বলেছেন: ধন্যবাদ! :)

৩| ২৪ শে ডিসেম্বর, ২০১৪ ভোর ৪:২৪

সেলিম মোঃ রুম্মান বলেছেন: সুন্দর লিখেছেন, ধন্যবাদ।

২৪ শে ডিসেম্বর, ২০১৪ ভোর ৫:৩৭

মঞ্জুর চৌধুরী বলেছেন: মন্তব্যের জন্যও ধন্যবাদ! :)

৪| ২৪ শে ডিসেম্বর, ২০১৪ ভোর ৫:০৯

শাদা-অন্ধকার বলেছেন: আল্লাহর শেষ নবী(সঃ) তাঁর বিখ্যাত 'বিদায় হজ্জ্ব' ভাষণে বলেছেন, "একজন অনআরবের উপর যেমন কোন আরবের শ্রেষ্ঠত্ব নেই, তেমনি কোন আরবের উপরেও কোন অনআরবের শ্রেষ্ঠত্ব নেই। একজন শ্বেতাঙ্গ একজন কৃষ্ণাঙ্গ থেকে শ্রেষ্ঠ নয়, একজন কৃষ্ণাঙ্গও শ্বেতাঙ্গ থেকে শ্রেষ্ঠ নয়।" এটা বোঝে কয়জন... আমাদের দেশে শুধু অঞ্চলভেদে রেসিজম নয়-গায়ের রঙ এও রেসিজম হয়। বিয়ে করতে গেলে মেয়ের গায়ের রঙ নিয়ে প্রশ্ন উঠবেই তা সে যতই কোয়ালিটি থাকুক না কেন...

ভালো লেগেছে আপনার লেখা...

২৪ শে ডিসেম্বর, ২০১৪ ভোর ৫:৩৮

মঞ্জুর চৌধুরী বলেছেন: :)

৫| ২৪ শে ডিসেম্বর, ২০১৪ সকাল ৮:৫১

এইচ তালুকদার বলেছেন: অসাধারন লিখেছেন ভাই

২৭ শে ডিসেম্বর, ২০১৪ ভোর ৪:২২

মঞ্জুর চৌধুরী বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই!

৬| ২৪ শে ডিসেম্বর, ২০১৪ সকাল ৯:১৯

মামুinসামু বলেছেন: অনেক সুন্দর একটি লেখা। ধন্যবাদ।

২৭ শে ডিসেম্বর, ২০১৪ ভোর ৪:২২

মঞ্জুর চৌধুরী বলেছেন: :)

৭| ২৪ শে ডিসেম্বর, ২০১৪ সকাল ১০:০০

অপূর্ণ রায়হান বলেছেন: কুরআনের একটা অতি বিখ্যাত ঘটনা যেখানে হযরত আদমকে(সঃ) সৃষ্টির পর আল্লাহ জ্বীন এবং ফেরেস্তাদের নির্দেশ করেছিলেন তাঁকে সম্মান করে সিজদা করতে, তখন ইবলিস বলেছিল, "আমি আগুনের তৈরী এবং ও মাটির - আমি কেন তাঁকে সম্মান করতে যাব? আমি অবশ্যই তাঁর থেকে সেরা।"
ইবলিস হচ্ছে সর্বপ্রথম রেসিস্ট।
আমরা যদি বলি, আমার গায়ের রং সাদা, তাই আমি কালোদের চেয়ে উপরে; অথবা আমি সিলেটি, বাকিরা সবাই বেঙ্গলি (প্রকারন্তরে বাকি সবাই খারাপ) তাহলে আমার আর ইবলিসের মধ্যে পার্থক্য কোথায়? কোন পার্থক্য নেই।


++++++++++++++++


পুরো লেখাটাই চমৎকার ও যুক্তিযুক্ত।

ভালো থাকবেন ।।

২৭ শে ডিসেম্বর, ২০১৪ ভোর ৪:২৩

মঞ্জুর চৌধুরী বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ ভাই। ভাল থাকবেন। :)

৮| ২৪ শে ডিসেম্বর, ২০১৪ সকাল ১১:০২

জনাব মাহাবুব বলেছেন: মজবুত যুক্তির উপর আপনার লেখা।

মানুষে মানুষে ভেদাভেদের সুন্দর ভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন।

২৭ শে ডিসেম্বর, ২০১৪ ভোর ৪:২৪

মঞ্জুর চৌধুরী বলেছেন: লেখা পড়াতো সহজ কাজ। এখন শিক্ষাটা জীবনের কাজে লাগলেই হয়।

৯| ২৪ শে ডিসেম্বর, ২০১৪ সকাল ১১:৩৮

মাঘের নীল আকাশ বলেছেন: চমৎকার লিখেছেন! ++++

২৭ শে ডিসেম্বর, ২০১৪ ভোর ৪:২৫

মঞ্জুর চৌধুরী বলেছেন: ধন্যবাদ! :)

১০| ২৫ শে ডিসেম্বর, ২০১৪ রাত ১২:২৭

ক্ষতিগ্রস্থ বলেছেন: ভাল লাগল...

২৭ শে ডিসেম্বর, ২০১৪ ভোর ৪:২৫

মঞ্জুর চৌধুরী বলেছেন: :)

১১| ২৫ শে ডিসেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৪:০৮

পাজল্‌ড ডক বলেছেন: অসাধারণ আরেকটি পোস্ট। প্রিয়তে।

২৭ শে ডিসেম্বর, ২০১৪ ভোর ৪:২৫

মঞ্জুর চৌধুরী বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ!

১২| ২৬ শে ডিসেম্বর, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:৫৫

কলমের কালি শেষ বলেছেন: অসম্ভব যুক্তিসংগত লেখা । ++++++

২৭ শে ডিসেম্বর, ২০১৪ ভোর ৪:২৫

মঞ্জুর চৌধুরী বলেছেন: :)

১৩| ২৬ শে ডিসেম্বর, ২০১৪ রাত ৮:৪৯

মেলবোর্ন বলেছেন: আল্লাহ আমাদের মনকে রেসিজম হতে দুরে থাকার তৈফিক দিন, সঠিক ইসলাম বুঝার ও মানার ও প্রচারের জন্য আমাদের কবুল করুন , ধন্যবাদ রিমাইন্ডারের জন্য।

২৭ শে ডিসেম্বর, ২০১৪ ভোর ৪:২৬

মঞ্জুর চৌধুরী বলেছেন: :)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.