নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মঞ্জুর চৌধুরী

আমি ঝন্ঝা, আমি ঘূর্ণি, আমি পথ-সমূখে যাহা পাই যাই চূর্ণি’। আমি নৃত্য-পাগল ছন্দ, আমি আপনার তালে নেচে যাই, আমি মুক্ত জীবনানন্দ। আমি হাম্বার, আমি ছায়ানট, আমি হিন্দোল, আমি চল-চঞ্চল, ঠমকি’ ছমকি’ পথে যেতে যেতে চকিতে চমকি’ ফিং দিয়া দিই তিন দোল; আমি চপলা-চপল হিন্দোল। আমি তাই করি ভাই যখন চাহে এ মন যা, করি শত্রুর সাথে গলাগলি, ধরি মৃত্যুর সাথে পান্জা, আমি উন্মাদ, আমি ঝন্ঝা! আমি মহামারী আমি ভীতি এ ধরিত্রীর; আমি শাসন-ত্রাসন, সংহার আমি উষ্ন চির-অধীর! বল বীর - আমি চির উন্নত শির!

মঞ্জুর চৌধুরী › বিস্তারিত পোস্টঃ

রাষ্ট্রভাষা বাংলা কেন, শুধু উর্দু কেন নয়?

২৩ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ সকাল ১০:৪৫

ভাষার মাসে অতি গুরুত্বপূর্ণ কিছু কথা বলতে চাই। এতদিন ধারনা ছিল এটা কমন সেন্স, সবাই জানে, বুঝে - বলার কী আছে? কিন্তু বুঝে গেলাম বাঙালির কাছে কমন সেন্সটাই একটি আনকমন বিষয়। বিশেষ করে "সাঈদ মিনারে" ফুল দিতে যাওয়া মানুষের কাছে যখন "একুশে ফেব্রুয়ারী কী হয়েছিল?" জানতে চাওয়া হয়, তখন উত্তর আসে, "এইদিনে যুদ্ধ হয়েছিল, অনেক মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হয়েছিলেন, এইদিনে পাকিস্তানিদের সাথে আমরা বিজয় অর্জন করি" কিংবা একটি শিশুর সরলস্বীকারোক্তি, "বলতে পারছি না ভাইয়া" - কিছু কথা বারবার লিখতেই হবে।
প্রথম কথা - "উর্দুই হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্র ভাষা" - এতে সমস্যা কী? ইন্ডিয়াতেতো হিন্দি রাষ্ট্রভাষা, ওদেরতো সমস্যা হচ্ছে না। তাছাড়া ওরা পাঞ্জাবি, পশতু, সিন্ধি বা বেলুচি ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা করেনি, কাজেই বাংলাকে করতে যাবে কেন?
খুবই ভাল প্রশ্ন। আপনি দ্বিধা দ্বন্দে পরে যাবেন। নিরপেক্ষ বনতে গিয়ে বেকুব বনে যাবেন। বলবেন, আসলেইতো, শুধু শুধু আন্দোলন ফান্দোলন, ১৪৪ ধারা ভাঙ্গাভাঙ্গি, গুলি খেয়ে মরা - এইসবতো হুদাই!
তাহলে চলেন, ক্লাস সেভেনে পড়ে আসা ইতিহাস রিভাইস দেয়া যাক।
মুঘল আমল থেকে মুসলিমরা ছিল উপমহাদেশের শাসনকর্তা। অফিস আদালতের ভাষা ছিল আরবি-ফার্সি। মানে যে আরবি-ফার্সিতে কথা বলতে পারবে, সেই আরামসে সরকারী চাকরি পাবে। যে পারবে না সে তার নিজের মতন কিছু একটা করে খাবে।
ব্রিটিশরা এসে অফিসের ভাষাকে করলো ইংলিশ, মুসলিমদের ইগোতে লেগে গেল। ফতোয়া জারি হলো, "ইহা কাফের নাসারাদের ভাষা, ইহা শিখিলে দোজখে যাইতে হইবে।"
আমরা আমাদের আরবি আর ফার্সি নিয়েই পরে রইলাম।
হিন্দুরা ইংরেজি শিখে চটজলদি চাকরি পেতে লাগলো। ফল, কয়েক শতাব্দী ধরে পিছিয়ে থাকা হিন্দু সমাজ মুসলিমদের চেয়ে কয়েক হাজার কদম এগিয়ে গেল। মুসলিমরা অনেক অনেক পরে এসে উপলব্ধি করলো ভাষার গুরুত্ব। কিন্তু ততক্ষনে যা ক্ষতি হবার হয়ে গেছে।
আমাদের পূর্বপুরুষেরা কিন্তু আজকের ইয়ো জেনারেশনের মতন বেকুব ছিলেন না। আমি জানিনা তাঁদের সিলেবাস কী ছিল, কিন্তু তাঁরা যাই পড়তেন, আসলেই শিক্ষিত হতেন। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ছাত্রীর মতন "সাঈদ মিনারে মুক্তিযোদ্ধাদের শ্রদ্ধা" দিতে যেতেন না। তাই যখন তাঁরা শুনেছেন যে জিন্না সাহেব বলছেন, "উর্দূই হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা" - তাঁরা বুঝে ফেলেছিলেন যে এর ফলে বাঙালিদের অবস্থা হবে এক শতাব্দী প্রাচীন মুসলমানদের মতন। তাই তাঁরা সাথে সাথে প্রতিবাদ করে উঠেছিলেন। পাঞ্জাবি, সিন্ধি, বেলুচি বা পশতু ভাষায় অভ্যস্ত মানুষ যত সহজে উর্দু শিখতে পারে, হাজার মাইল দূরের বাঙালিদের সেই একই ভাষা শিখতে অনেক কষ্ট হয়। সিলেটি, চিটাগনিয়ান বা নিউকেলির মানুষ ঠিকমতন বাংলাই শিখতে পারেননা, তাঁরা কথা বলবেন উর্দুতে! সমস্যা বুঝতে পারছেন?
ফুটনোট: পাকিস্তানের আরেকটা সমস্যা ছিল তাদের রাষ্ট্রক্ষমতায় শুরু থেকেই একদল মূর্খ ও আহাম্মক লোক বসেছিল। যাদের কাছে ভাষাটাও ছিল ধর্মীয় লেবাসযুক্ত। বাংলাকে ওরা হিন্দুদের ভাষা বলতো এইটা সবাই জানি (আশা করি) সাথে পাঞ্জাবিকেও তারা জ্ঞান করতো শিখদের ভাষা হিসেবে। প্রচুর আরবি ও ফার্সি শব্দ থাকায় উর্দুকে ওরা মনে করতো ইসলামী ভাষা - তাই মুসলিম রাষ্ট্রে উর্দুকে রাষ্ট্র ভাষা করতে চেয়েছিল। যেখানে ৫% লোকও উর্দুতে কথা বলতো না। জিন্নাহর নিজের মাতৃভাষাই ছিল সিন্ধি, এবং তিনি ইংরেজিতে কথা বলতে বেশি স্বাচ্ছন্দ বোধ করতেন।
অনেককেই দেখি জিন্নাকে গালাগালি করতে। কেন? কারন তিনি "উর্দুই হবে রাষ্ট্রভাষা" ঘোষণা দিয়েছিলেন। কিন্তু সত্যি বলতে যত বই আমি পড়েছি, সবগুলি থেকে মোটামুটি এইটা জানলাম যে এই লোকটির আমাদের অঞ্চল সম্পর্কে তেমন স্পষ্ট ধারনাই ছিল না। দুই ভাগওয়ালা রাষ্ট্র পেয়ে তিনি প্রথমে বলেছিলেন, "পোকায় খাওয়া পাকিস্তান নিয়ে আমি কী করব?" এবং তারপর এই দেশীয় কিছু চামচা তাঁর কানে ভরেছিল যে এই অঞ্চলের লোক উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বানন্দেই গ্রহণ করবে। যে কারনে তিনি ছাত্রদের প্রতিবাদে খুব অবাক হয়েছিলেন।
যাই হোক, ভদ্রলোক মাত্র আটমাস বয়সী রাষ্ট্রকে ফেলে পরপারে চলে গিয়েছিলেন, পাকিস্তানের যা সর্বনাশ করার শুরু করেছিল তাঁর উত্তরসুরি লিয়াকত আলী খান। এবং এই পরম্পরা একাত্তুর ছাড়িয়ে জারি আছে এখন পর্যন্ত। অভিশপ্ত জাতিটি আজ পর্যন্ত একজনও ভাল রাষ্ট্রনায়ক পায়নি। ৪৭ এ যে রাষ্ট্রের জন্ম হয়েছিল মিলিয়ন মানুষ হত্যা ও বাস্তুচ্ছেদের মধ্য দিয়ে, ৭১ এ যারা স্নান করেছিল তিরিশ লক্ষের রক্ত গঙ্গায় - তারা এত সহজে শাপমুক্ত হবে কী করে?
সে অনেক লম্বা কাহিনী - বটম লাইন হচ্ছে, বঙ্গবন্ধু নিজেও কী কোনদিনও জিন্নাকে নিয়ে কোন কটুক্তি করেছিলেন? আমিতো পাইনি।
তাহলে আমরা অতি চেতনায় চেতীত হয়ে কেন শুধু শুধু লোকটাকে গালাগালি করি? পাকিস্তানি বলে? তাহলে ওদের আর আমাদের মধ্যে পার্থক্যটা কী থাকে?

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +৪/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ২৩ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ দুপুর ১২:১৪

আরণ্যক রাখাল বলেছেন: শহীদ মিনারকে "সাঈদ মিনার" লোক বাংলাদেশে নেই, এমনটা নয়, কিন্তু খুব কম। তারা কোনোদিন আমাদের প্রতিনিধিত্ব করে না। আর এ ধরনের মূর্খ সব যুগেই ছিল।
ধর্মের ভিত্তিতে দেশভাগের ব্যাপারে জিন্নাহ অনেকটা লড়াই করে মূর্খের মতো পাকিস্তানের সাথে বাংলাকে জুড়ে দিয়েছিলেন। তাকে কটূক্তি করার ইচ্ছা না থাকলেও সম্মান করার কিছু নেই অন্তত

২৪ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ৩:৫৯

মঞ্জুর চৌধুরী বলেছেন: পাকিস্তানের জন্যতো পাঞ্জাবি মুসলমানদের চাইতে বাঙালি মুসলিমরাই বেশি লড়েছিল। এই নিয়ে যখন ভোটাভুটি হলো চব্বিশ শতাংশও পাঞ্জাবি পাওয়া যায়নি যারা পাকিস্তান চায় যেখানে বাঙালি সংখ্যা ছিল শতকরা ছিয়ানব্বই ভাগ!
আরেকটা কথা, ধর্মের ভিত্তিতে দেশ ভাগ হবার জন্য তাকে কিন্তু আমরা মুসলিমরাই চাপ দিচ্ছিলাম। তখনকার সংখ্যা গরিষ্ঠ হিন্দু সমাজ কিভাবে মুসলিমদের সাথে আচরণ করতো আশা করি সেটা জানেন। কিছু কমন উদাহরণ দেই। একটা কুকুর যদি মিষ্টির দোকানে ঢুকে পরত, তাহলে সেটাকে হুশহাশ বলে তাড়িয়ে দেয়া হতো। কিন্তু একটা মুসলিম ঢুকে পড়লে পুরো দোকানের মিষ্টি ফেলে দেয়া হতো। বা রেস্টুরেন্টে মুসলিমদের আলাদা প্লেটে খেতে দেয়া হতো, ঠোঙ্গায় খাবার ভরে দূর থেকে ছুড়ে দেয়া হতো যাতে ছায়া পরে জাত না যায়। এই অবস্থায় ধর্মের ভিত্তিতে দেশভাগের জন্য তাকে একা দোষ দেয়াটা কতটুকু যৌক্তিক?
আমিতো বলেছিই, যতটুকু পড়েছি তার ব্যপারে, আমি তেমন কিছু পাইনি যে আমরা তাকে "গালাগালি" করতে পারবো - যেটা লিয়াকত আলী খান থেকে শুরু করে ইয়াহিয়া পর্যন্ত প্রতিটা রাষ্ট্রনায়কের মধ্যে পেয়েছি - বা এখন নাওয়াজ শরিফ পর্যন্ত যে ধারা চালু আছে। আপনি কিছু জানলে প্লিজ জানান।

২| ২৪ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ২:৫৫

আহসানের ব্লগ বলেছেন: সহমত রাখাল ভাইয়া ।

২৪ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ৩:৫৯

মঞ্জুর চৌধুরী বলেছেন: জবাবটা উপরে দিয়েছি

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.