নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মঞ্জুর চৌধুরী

আমি ঝন্ঝা, আমি ঘূর্ণি, আমি পথ-সমূখে যাহা পাই যাই চূর্ণি’। আমি নৃত্য-পাগল ছন্দ, আমি আপনার তালে নেচে যাই, আমি মুক্ত জীবনানন্দ। আমি হাম্বার, আমি ছায়ানট, আমি হিন্দোল, আমি চল-চঞ্চল, ঠমকি’ ছমকি’ পথে যেতে যেতে চকিতে চমকি’ ফিং দিয়া দিই তিন দোল; আমি চপলা-চপল হিন্দোল। আমি তাই করি ভাই যখন চাহে এ মন যা, করি শত্রুর সাথে গলাগলি, ধরি মৃত্যুর সাথে পান্জা, আমি উন্মাদ, আমি ঝন্ঝা! আমি মহামারী আমি ভীতি এ ধরিত্রীর; আমি শাসন-ত্রাসন, সংহার আমি উষ্ন চির-অধীর! বল বীর - আমি চির উন্নত শির!

মঞ্জুর চৌধুরী › বিস্তারিত পোস্টঃ

পাক-ভারত লড়াই - কে হারলো আর কে জিতলো তাতে আমার বাপের কী?

১৮ ই মার্চ, ২০১৬ সকাল ১১:০২

গতকাল দাদাবাবুরা ইডেনকে করাচির ন্যাশনাল স্টেডিয়াম বানিয়ে ফেললেন - এই নিয়ে আমার ফেসবুক নিউজফিডে অনেক থিওরি দেখলাম। সাধারনত এইসব ব্যপারে আমি তেমন মাথা ঘামাই না, তবে আমার খুব পছন্দের কয়েকজনকে ভুল তথ্য শেয়ার করতে দেখে মনে হলো কিছু একটা লেখা দরকার। এবং তাই শুরুতেই বলে নেই, এই লেখাটি অনেকেরই পছন্দ হবেনা, বেশিরভাগই আমাকে গালাগালি করবেন। কেউ কেউ আমাকে মারতে তেড়েও আসতে পারেন। তবে আমি বরাবরের মতই শুধু সেটাই বলবো যা আমার মনে হয় সঠিক, এবং যা আমি সত্যি বলে বিশ্বাস করি। কেউ যদি আমার সাথে ভিন্নমত পোষণ করে, অবশ্যই সেই অধিকার তাঁর আছে। এবং আমি তাঁর বিশ্বাসকে যথেষ্টই শ্রদ্ধা করি।
যে থিওরিটাকে সবচেয়ে বেশি ভাইরাল হতে দেখলাম, বন্ধুমহলের অন্তত দশজন অতি কাছের মানুষকে যা শেয়ার করতে দেখেছি তা হচ্ছে, "এসব বিহারীদের কাজ। কলকাতার মুসলমানরা যারা এখনও বুকে পাকিস্তানকে লালন করেন, এটা তাঁদের কাজ।"
তত্বের পেছনে কাউকে প্রমান হাজির করতে দেখিনি, তবে যুক্তি দিয়েছেন বেশ। সলিড যুক্তিটি হচ্ছে, "বিহার যেহেতু ভারতে অবস্থিত, এবং দেশ বিভক্তির সময়ে দলে দলে বিহারী পাকিস্তানকে ভালবেসে বাংলাদেশে আসে এবং ৭১ এ পাকিস্তানিদের পা চেটে বাঙালিদের উপর বর্বর হামলা চালায়, ও এখনও যাদের বস্তিতে গেলে পাকিস্তানি পতাকা উড়তে দেখা যায়, এবং বাংলাদেশের বিরুদ্ধে খেলায় যারা পাকিস্তানের সাপোর্ট করে - তারাতো ইডেনে পাকিস্তানের পতাকা উড়াবেই।"
কথাটা আংশিক সত্য অবশ্যই। তবে আমার বিশ্বাস, পুরোপুরি নয়।
আমি যেহেতু ইডেনে ছিলাম না - কাজেই হলফ করে দাবি করতে পারিনা যুক্তিটা ভুল। আমি বলতে চাইছি, কেবল বিহারীদের বা কেবল "কলকাতার মুসলমানরাই" পাকিস্তানের সাপোর্ট করেনি। কলকাতার সাধারন জনসাধারণও এই মুহূর্তে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যে কোন দেশের সাপোর্টার। সেটা যদি চিরশত্রু পাকিস্তানও হয় - তাও সই। রবিচন্দ্রন আশ্বিনের ট্যুইটতো একদম চোখে আঙ্গুল দিয়েই দেখিয়ে দিল। ওতো কলকাতার মুসলমানও না, বিহারীও না।
তা হঠাৎ দাদা বাবুরা কেন ক্ষেপলেন আমাদের উপর?
খুবই সহজ। চলচ্চিত্রকার ফরহাদ ভাইও যেটা নিজের স্ট্যাটাসে লিখেছেন, এবং যেটা বুঝতে হলে মস্তিষ্কে যেটুকু বুদ্ধি আছে সেটা খাটানোই যথেষ্ট, আমরা তাস্কিনের হাতে ধোনির মুন্ডু ধরিয়ে একটা ছবি ফেসবুকে ছড়িয়ে দিয়েছি।
মহেন্দ্র সিং ধোনি হচ্ছে ওদের জাতীয় দলের অধিনায়ক, তাঁদের দেশের প্রতিনিধি, তাঁদের সেনাপতি। যুদ্ধের প্রধান নিয়মই হচ্ছে শত্রুসেনার প্রাণ নিতে যতই লড় না কেন, সম্মান দিতে ভুল না। আমরা অশিক্ষিত বর্বর বাঙ্গাল, আমরা কী অত সব বুঝি?
এই কাজটাই যদি মাশরাফিকে নিয়ে করতো, তাহলে এই আমরাই কেয়ামত নামিয়ে ফেলতাম।
প্রতিপক্ষের জাতীয় পতাকাকে (পাক-ভারত থেকে শুরু করে সম্প্রতি জিম্বাবুয়ে পর্যন্ত) নিয়ে আমরা যা খুশি তাই করি, কোথাও দেখাই ওদের জাতীয় পতাকায় শিশু পেশাব করছে তো কোথাও কুকুর পায়খানা - জিম্বাবুয়ের পতাকায়তো সরকারী টেলিকম বিজ্ঞাপন দেখালো হোয়াইট ওয়াশ করা হচ্ছে - অথচ এসবের জবাবে কেউ আমাদের পতাকার অসম্মান করলে আমরাই চরম হিপোক্রেটের মতন বলি, "দেখুন ওরা কত খারাপ!"
সেই সাথে যোগ করুন গত বছর ওয়ানডে সিরিজে সিরিজ জয় নিশ্চিত করেই ভারতের আইকন সমর্থক সুধীরকে পেটাতে তাড়া করা।
এছাড়া সাধারণ রেশা রেশিতো আছেই। ওরা আমাদের কাংলাদেশ ডাকে, আমরা ওদের রেন্ডিয়া ডাকি। ওরা বলে আমাদের স্বাধীনতা ওদের দান, আমরা ওদের বলি ওরা সহায়ক শক্তি ছিল কেবল, স্বাধীনতা আমরা আদায় করে নিয়েছি। ওরা বলে "বাংলাদেশই পৃথিবীর এক মাত্র দেশ যার মানচিত্র অন্য একটি দেশের (ভারতের) মানচিত্রের সাথে ফ্রী পাওয়া যায়।" আমরাও তখন বলি ভারতই পৃথিবীর একমাত্র দেশ যার রাজধানীকে "রেপ (ধর্ষণ) ক্যাপিটাল" বলা হয়।
ওরা এমন আরও অনেক কিছুই বলেন। আমরাও তেমনই অনেক কিছুই জবাব দেই।
গুরুচন্ডালি বা নগরচন্ডালি গ্রুপে কেউ একটু ঢু মারলেই জানতে পারবেন।
তাও ভাল, গুরুচন্ডালির অ্যাডমিন (ইপ্সিতা দি) আপাতত ক্রিকেট বিষয়ক যে কোন পোস্টের উপর কারফিউ জারি করেছেন।
ক্রিকেট সম্পর্কিত যেকোন পোস্টেই সেখানে গালাগালি (খিস্তি) ছুটতে থাকে মেশিনগানের মতন। একটা পর্যায়ে মনে হয় দুই পক্ষ্য সামনা সামনি হলে আরেকটি কুরুক্ষেত্রের লড়াই বাঁধতে বাধ্য।
যাই হোক - দাদা বাবুদের সাথে আমাদের রেশারেশি সাম্প্রতিক ঘটনা নয়। সেই আদ্যিকাল থেকেই তাঁরা আমাদের বাঙ্গাল বলে আসছেন, তাঁদের বিশ্বাস পূর্ব বাংলা চাষাভুষার দেশ, পশ্চিম বাংলা শিক্ষিত এলিট ক্লাসের জন্য বরাদ্দ। কাজেই আমরাও সেই আদ্যিকাল থেকেই আন কালচার্ড একটি সম্প্রদায় এবং তাঁদের রক্ত নীল।
ওদের মোহনবাগান এবং ইস্টবেঙ্গলের খেলার সময়ে পুরো পশ্চিমবঙ্গ দুই ভাগ হয়ে যায়। কারন মোহনবাগান ঘটিদের দল, এবং ইস্ট বেঙ্গলের সমর্থক ও খেলোয়ার সবাই বাঙ্গাল।
এখনও বিয়ের সময়ে অনেক ঘটি বাঙ্গাল বংশের নাম শুনে নাক সিটকায়। কোথাও কোথাওতো বিয়েও ভেঙ্গে যায়। এই ডালাস শহরেই আমার এক বাঙ্গাল বান্ধবী এই ইস্যুতে তাঁর আরেক বান্ধবীর বিয়ে ভাঙ্গার ঘটনা শোনালো। এই সেদিনের ঘটনা।
এবং সেই ব্রিটিশ আমলে ইংরেজরা যখন নিজেদের হাতে রাজধানী শহর বানাবার জন্য অতি যত্নে কলকাতা নির্মান করে, তখন আসলেই শহরটি ঝকঝকে তকতকে ছিল। নোংরা হলোতো স্বাধীনতার পর। এবং কারা নোংরা করলো? বাঙ্গাল মূলুক থেকে দল বেঁধে ছুটে আসা উদ্বাস্তুর দল। সাতচল্লিশ থেকে একাত্তুর পর্যন্ত কেবল এসেছেই, ফুটপাথ, রেল স্টেশন থেকে শুরু করে বড় বড় জমিদারের বাগানবাড়ি দখল করে বস্তি বানিয়ে থেকেছে। কে চায় নিজের সুন্দর পরিচ্ছন্ন ছিমছাম শহরটাকে অপাংক্তেয়দের কারনে নোংরা হতে দেখতে? এসবতো একটাও তথ্য মিথ্যা না।
এখন যদি বাড়তি মশলা হিসেবে যুক্ত হয় সেই দেশ বিভাগের আগে ও পরে থেকে দলে দলে তাঁদের পূর্বপুরুষদের দেশ ছাড়তে বাধ্য করা। ক্ষোভতো থাকবেই।
আধুনিকমনা সেকুলার দাদা বাবুরা যতই সাম্যের গান গাক না কেন, আমাদের মন থেকে তাঁরা বাঙ্গালই গন্য করেন। রক্তের টান বড় কঠিন টান!
এখন সেই পুঁচকে কাঙ্গাল বাঙালদের হাতে ওদের পুরো ভারতবর্ষ থেকে বাছাইকৃত এগারোটি রত্ন যদি মার খায় - একটা আস্ত সিরিজ হেরে যায় - ব্যপারটা তাঁরা হজম করবেন কিভাবে? সেও নাহয় স্পোর্টসম্যানশিপের কারনে গেলা গেল, কিন্তু যখন অকৃতজ্ঞ কাঙ্গালগুলো কানের কাছে জয়োল্লাসের নামে চিৎকার চ্যাঁচামেচি করে - কাহাতক সহ্য করা যায়?
যাই হোক, কথা বাড়ালে কথা কেবল বাড়বেই।
আমার ফিলোসফি হচ্ছে প্রতিটা মানুষকে যার যার কর্মের উপর বিচার করা উচিৎ, তাঁর সম্প্রদায়ের কর্মের উপর নয়। সেই পুরানো যুক্তিই দিব, আল্লাহ তাঁর সর্বশ্রেষ্ঠ মানবকে যে সম্প্রদায়ের কাছে পাঠিয়েছিলেন, সেই একই সম্প্রদায়ের কাছেই একই সময়েই সর্বনিকৃষ্ট মানবকেও পাঠিয়েছিলেন। ভাবনার উপাদান আছে বৈকি।
কাজেই ইডেনে স্রেফ মুসলমানরাই পাকিস্তানের সমর্থক ছিল কথাটি ভুল। দাদারাও ওদের সাপোর্ট করেছে - এবং এর পেছনে আমরাও খানিকটা দায়ী।
এখন বিহারী এবং পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত বাঙ্গালিদের চোখ বুজে গালগালি করার আগে আমরা একটু যদি আতাহার আলী খান এবং তামিম ইকবাল "খানের" বংশের শেকর সন্ধান করি - তাহলে হয়তো একটু ভাল হতো।
আতাহার আলী খানের পূর্বপুরুষ পাকিস্তানি। এই ব্যপারটা আমরা ১০০% নিশ্চিত।
আকরাম খানদের বাসা চিটাগংয়ের যে পাড়ায়, আমার জন্মও সেই কাজির দেউরিতে। এবং যতদূর আমি জানি, পাড়ার লোকেরা জানতো যে তাঁরা বিহারী। ভুল হলে অবশ্যই ধরিয়ে দিবেন। তামিমতো সেদিন বলেইছিল তাঁর চাইল্ডহুড হিরো আফ্রিদি। মানে জাতীয় দলে খেলার আগে পাক ভারত লড়াই হলে গ্যালারিতে দাঁড়িয়ে পাকিস্তানি পতাকা উড়াতো যে কিশোরটি তাঁরই নাম তামিম ইকবাল।
গুলশানে যখন আতাহার আলী খান তাঁর রীবকের শো রুম উদ্বোধন করে ছিলেন - তখন ফিতা কাটতে ওয়াসিম আকরামকে নিমন্ত্রণ করেছিলেন - আজহারউদ্দিনকে কিন্তু নয়। বলার প্রয়োজন নেই যে সেই সময়ে দুই দেশের এই দুই মহাতারকাই রীবকের ব্র্যান্ড এম্বেসেডর ছিলেন।
শচীন টেন্ডুলকার এবং হরভাজন সিংকে দেখেছি আশরাফুলের বাড়িতে হাত দিয়ে পোলাও খেতে। মাংসের বাটি হাতে নিজের হিরোর সামনে বিনীত ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে ছিল আমাদের দেশের প্রথম সুপারস্টার! চরমপন্থীরা সেই ছবি দেখলে ছিঃ ছিঃ করলে অবাক হবো না।
মুস্তাফিজতো সবসময়েই বলে তাঁর আদর্শ মোহাম্মদ আমির।
তাই বলে বাংলাদেশ ক্রিকেটে এদের অবদানের কথা অস্বীকার করার উপায় আছে? নিতান্ত নিমকহারাম না হলে কখনই নয়।
এবার আসি ভারত পাকিস্তানের সমর্থনের ব্যপারে।
ব্যক্তিগতভাবে আমি বিশ্বাস করি ভারত পাকিস্তান বা অন্য কোন দেশের বিরুদ্ধে যেকোন দেশের খেলায় যে কেউ যে কোন দেশকে সমর্থন করতেই পারে। জুম্মাবারে আমি মসজিদে যাচ্ছি, আর আমারই আরেক মুসলিম ভাই কেন বন্ধুদের সাথে ঠিক তখনই আড্ডাবাজি করছে - এই ব্যপারটি নিয়ে আমি যেমন মাথা ঘামাই না - ক্রিকেট, ফুটবল, কাবাডি, খোখোতে কে কোন দলের সাপোর্ট করলো তাতেও আমার কিছু যায় আসেনা। আমি এইসব ব্যপারে হয়তো আসল মুক্তমনা। যদিও মুক্তমনার দাবিদার ফেসবুক সেলেবদের আমি এই ক্ষেত্রে কখনই মুক্তমনের পরিচয় দিতে দেখিনি।
তবে হ্যা, অবশ্যই বলতে চাই, খেলাটি যদি হয় বাংলাদেশের বিরুদ্ধে - তাহলে আমিও মৌলবাদী হয়ে যাই। এখানেও যুক্তি পরিষ্কার। আমার মসজিদের ভিতর কাউকে আমি পূজা করতে দেখলে অবশ্যই বাঁধা দিব। ব্যপারটা ঠিক তেমনই।
এখন বাংলাদেশে থেকে যাদের দাবি "দেশটা পাক/ভারত হলে কতই না ভাল হতো" - তাদের উদ্দেশ্যে আমার একটাই বাণী - "গবাদি পশুকে কখনও ফুল বাগানে নিয়ে যেতে নেই। ওরা ফুলের মর্ম বুঝবে না - চিবিয়ে খেয়ে ফেলবে।"
ওরা স্বাধীন দেশের মূল্য বুঝেনা, ওদের সিরিয়ায় পাঠিয়ে দেয়া হোক। বুঝুক মাতৃভূমির মুক্ত বাতাসে দম নেয়ার আনন্দটুকু কতটা মধুর। বুঝুক দেশ মায়ের ইজ্জত হানাদারের হাতে লুন্ঠিত হতে দেখা কতটুকু কষ্টের।
এখন আরেকটা রিয়েলিটি যোগ করি। তার আগে আমি বলে নেই, যে কোন ঘটনা আমি বিচার করি দুই পক্ষের দৃষ্টিকোণ থেকেই। একতরফা বিচার আমার কাছে অন্যায় মনে হয়। কাজেই একবার আমি অপর পক্ষের জুতায় পা ঢুকিয়ে খানিকটা পথ হেঁটে তবেই কোন সিদ্ধান্তে উপনীত হই।
ধরা যাক কাল যদি অ্যামেরিকা বনাম বাংলাদেশ ফুটবল ম্যাচ হয়, বিরাট ব্যবধানে হারবে জেনেও আমি (মঞ্জুর চৌধুরী) অবশ্যই বাংলাদেশের সমর্থন করবো। কেন? অ্যামেরিকা কী এখন আমার নিজের দেশ নয়? এই দেশে থেকে, খেয়ে, সব সুযোগ সুবিধা নিয়ে আমি কেন বাংলাদেশের সমর্থন করি?
আমার বোন দুলাভাই মামাতো ভাই সব অস্ট্রেলিয়ায় থাকে। অস্ট্রেলিয়া বনাম বাংলাদেশের খেলায় স্টেডিয়ামে গিয়ে বাংলাদেশের সমর্থন করে। পতাকা উড়ায়। তামিমের চারে চিৎকার দিয়ে গ্যালারী কাঁপায়। ওয়ার্নার আউট হলেও একই তালে উল্লাস করে। সাকিব যখন বিগব্যাশ লীগে খেলে, তখন সিডনিতে অনুষ্ঠিত প্রায় প্রতিটা ম্যাচ জাতীয় পতাকা হাতে দেখতে যায়।
তাহলে ঠিক একই কাজ যখন বিহারীরা করে, সেই ক্ষেত্রে আমরা তেড়েফুড়ে যাই কেন? তথাকথিত মুক্তমনার দাবিদাররাই তখন উগ্রবাদী আস্তিকের মতন আচরণ করতে শুরু করেন।
এইটা ফ্যাক্ট যে ওদের প্রথম পছন্দ পাকিস্তান, ওরা ৭১ এ সেটাই প্রমান করেছে। কিন্তু পাকিস্তান ওদের নিজের দেশে আশ্রয় দেয়নি। আমরাও ওদের একটা বস্তিতে বন্দি করে ফেলেছি। ওরা কয়েক পুরুষ ধরে এখন বাংলাদেশে থাকে, কিন্তু এখনও পাকিস্তানের গুনগান গায়।
কথা হচ্ছে, এই পাকপ্রীতি বন্ধের জন্য আমরা কী কোন ব্যবস্থা নিয়েছি? তাদের পুনর্বাসনের কোন ব্যবস্থা করেছি? একবার বিহারী পট্টিতে গিয়ে তাদের অবস্থার খোঁজ নিয়েছি? আমরা এখনও তাদের পূর্বপুরুষের কুকর্মের জন্য ঘৃনা করে আসছি। এবং আমাদের ঘৃনা অবশ্যই জাস্টিফায়েড। বাপ দাদার খুনিদের কি করে ক্ষমা করে দেই? একাত্তুরকে ভুলে গেলে আমরা যে আমাদের অস্তিত্বই অস্বীকার করবো।
কিন্তু একই সাথে এটাও এক্সপেক্ট করি কিভাবে যে ওরা আমাদের ভালবাসবে? আমরা ঘৃনা করছি, ওরাও জবাবে ঘৃনা করছে। ওরাও ঘৃনা করছে, আমরাও জবাবে ঘৃনা করছি। সমানে সমান এবং এন্ডলেস।
যেকোন এক পক্ষ্য আলো না নিয়ে এলে অন্ধকার কিছুতেই দূর হয় না। আমরা অপেক্ষায় আছি ঐ পক্ষ্য আগে জ্বালুক।
যেকোন সভ্যজাতির প্রধানতম বৈশিষ্ট্য সহনশীলতা। আমরা কী তবে এখনও সভ্য হতে পারিনি?
শেষ করি পাকিস্তান প্রসঙ্গে।
সত্যি বলতে ওরা আমার কাছে কৃমির মতন, ছোটবেলায় পেটে বাস করতো, পায়খানা করে বের করে দিয়েছি। এখন সে বাঁচলো কী মরলো আমার কিচ্ছু যায় আসেনা। আমরা দাবি করতে পারি ওরা একদিন রাষ্ট্রীয়ভাবে ক্ষমা চাইবে, যা মনে হয়না কখনও চাইবে। কিন্তু তারও আগে আমার প্রশ্ন - ক্ষমা চাইলেই কী আমরা ক্ষমা করে দিব? এতই সহজ?
ওদের সাথে আমাদের যুদ্ধ হয়েছে, অতিরিক্ত তিক্ততার সাথে সম্পর্ক শেষ হয়েছে। সেই সম্পর্ক জোড়া লাগাবার প্রয়োজন নেই। সেই সম্পর্ক নিয়ে কথাবার্তা বলারও দরকার নেই। ভাসানী যেমন বলেছিলেন, তোমরা তোমাদের রাস্তা দেখ, আমরা আমাদের পথ নিজেরাই বানায়ে নিব।
বঙ্গবন্ধু যেমন বলেছিলেন, আগে ওরা বাস্তবতা অনুভব করুক, তারপরে আলোচনা।
ওদের নিয়ে কথা বলাটাও আমার কাছে নিজেকে সস্তা করার মতন লাগে।
ওদের খেলোয়ারদের পঁচানোর জন্যও বাড়তি গবেষণা আমার কাছে স্রেফ সময়ের অপচয় বলে মনে হয়। আমি যদি আমার শৈশবের সেই কৃমির সন্ধানে নর্দমায় নর্দমায় নেমে সন্ধান করি, এবং খোঁজ পেলে ট্রল করতে বলি, "কিরে কেমন আছিস? খুবতো জ্বালিয়েছিলি...এখন বুঝ মজা" - ব্যপারটা কেমন হবে?
বরং ওদের পাত্তা দিলেই ওরা মনে করবে ওদের গুরুত্ব এখনও কিছুটা হলেও আমাদের কাছে আছে। আমরা কেন বলতে পারি না উই ডোন্ট গিভ আ শিট অন ইউ!
ওদের হিংসা করার তো কিছু নেই। দেশটা জন্মের পর থেকেই আল্লাহর গজবের শিকার। সেটা কী চোখের সামনে দেখতে পারছি না? ব্যাখ্যার প্রয়োজন আছে? তাহলে শুধু শুধু এই বাড়তি আগ্রহ কেন ওদের প্রতি?
ইন্ডিয়া পাকিস্তান ম্যাচ আসছে। বরং ম্যাচটা উপভোগ করুন।
আপনার অতি আপনজনও যদি অতি পাকি প্রেমী হয়ে থাকে কিংবা অতি ভারত প্রেমী হয়ে থাকে - সেটা তাঁর হাতে ছেড়ে দিন। শুধু শুধু নিজের পছন্দ অন্যের উপর চাপানোর চেষ্টা করেন কেন? নাইন্টিন সেভেন্টি ওয়ান সেও ভাল জানে, কিন্তু তাঁর হৃদয়ে এফেক্ট করেনা, আপনার কী করার আছে? লাকুম দ্বীনুকুম ওয়াল ইয়া দ্বীন - যার যার ধর্মবিশ্বাস তাঁর তাঁর কাছে।
একটা কথা মনে রাখবেন, বাংলাদেশী কেউ যে যতই পাকিস্তান সমর্থন করুক না কেন, সিনেমা দেখার ক্ষেত্রে বলিউডই তাঁর প্রথম পছন্দ। এদেশের মেয়েরা আফ্রিদিকে বিয়ে করতে চায়, আবার বালিশের নিচে সালমান খান বা রনবীর কাপুরের ছবি রেখেই ঘুমায়। আপনি নিজেও কী কখনও কোন বলিউড কন্যাকে ভালবাসেন নি? আপনি কী তবে দেশদ্রোহী? Chill!
আপনার কাজ আপনি করুন, পাকিস্তান বা ভারত নিয়ে সময় নষ্ট না করে আপনার প্রতিবেশী নিঃসঙ্গ বৃদ্ধটির খোঁজ খবর নিন - কাজের বুয়ার শিশুটিকে অ আ ক খ শেখান - অনেক পুণ্য হবে ওসবে।
দিনের শেষে এটা স্রেফ খেলা - তাও ভিন্ন দুই প্রতিবেশীর রাষ্ট্রের মধ্যে। কে হারলো আর কে জিতলো তাতে আমার বাপের কী? টেক ইট ইজি।

মন্তব্য ৭ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৭) মন্তব্য লিখুন

১| ১৮ ই মার্চ, ২০১৬ সকাল ১১:০৬

বিজন রয় বলেছেন: অঅমার কিছু যায় আসে না।
তবে অনেকের যায় আসে।

২| ১৮ ই মার্চ, ২০১৬ সকাল ১১:০৬

বিজন রয় বলেছেন: আপনারো যায় আসে তাই আপনি এটা নিয়ে পোস্টে দিয়েছেন।

৩| ১৮ ই মার্চ, ২০১৬ সকাল ১১:১২

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: পাক-ভারত লড়াই - কে হারলো আর কে জিতলো তাতে আমার বাপের কী?

এত সোন্দর কথা যদি বাংলাদেশের সবাই কইতো!

৪| ১৮ ই মার্চ, ২০১৬ সকাল ১১:২৫

বাদাল বলেছেন: অনলাইনে আয় করুন
জনপ্রিয় নতুন সোশ্যাল নেটওয়ার্ক “TSU” থেকে
গল্‌প নয় বাস্‌তব!
এটি একটি নতুন সোশ্যাল নেটওয়ার্ক, যারা তাদের ইনকামের ৯০%-ই, ইউজারকে দিয়ে থাকে !!! তাই এর জনপ্রিয়তা দিনদিন বাড়ছে। এর নির্মাতা প্রতিষ্ঠান জাপানে অবস্থিত।

প্রথমেই বলবো, এটি ফেইসবুকের মত নতুন একটি সাইট। আসলে নতুন বললে ভূল হবে। এটি মোটামুটি পুরাতন একটি সাইট। ২০১৪ এর অক্টবর থেকে এর আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু।

আমরা সাধারণত ফেইসবুক থেকে কোন ইনকাম করতে পারি না। যার ‍পুরটাই চলে যায় ফেইসবুকের তহবিলে। কিন্তু tsu বলেছে যে তার ইনকামের ৯০% দিয়ে দিবে তার ইউজারকে। এবং এর অনেক প্রমান ও আছে।

৩০০ ফ্রেন্ড হওয়ার পরেই আপনার ইনকাম শুরু হবে। আপনি আপনার পোষ্ট এ যত লাইক, কমেন্ট, শেয়ারার আর ভিউয়ার পাবেন, আপনার ইনকাম তত বাড়বে। আর তাই Like, Comments & share হলো এই সাইটের ইনকাম এর মূল হাতিয়ার । তার চেয়ে বড় হলো Family Tree তৈরি করা। মেম্বার যত বেশি হবে, ইনকাম ও তত বাড়বে। কারন, আপনি যাদের ইনভাইট করবেন, তাদের ইনকামের ৫০% বোনাস পাবেন আপনি। এরপর বাকি সার্কেল তো আছেই...

এখানে এদেশী ইউজার খুব কম। তাই তাদের আশায় না থেকে আপাতত ফরেইনার দের এড করেন। শুরুর দিকে আপনাদের ফ্রেন্ড বানাতে কষ্ট হবে। এক্ষেত্রে আমার রিসেন্ট পোষ্টের লাইকার দের এড করে নিতে পারেন। কিছু ফ্রেন্ড হওয়ার পরে আর ফ্রেন্ড পেতে আপনাকে কষ্ট হবে না।
আর বেশি কথা বলব না।
এখন আসা যাক সাইন আপ এর পালায়। এখানে সাইন আপ করতে হলে কারো না কারো রেফারেন্স লাগবেই। তা না হলে সাইন আপ করা যাবে না। এজন্য আমার রেরেফারেন্স নিতে পারেন আপনারা।
নিচের লিংক-এ যান...
tsu
এইখানে আপনার সম্পূর্ণ ডিটেইলস দিয়ে সাইন আপ করুন। এরপর ভিতরে প্রোফাইল ঠিক করুন আপনার মত করে।

এর পুরোটাই হলো ফেইসবুকের মত। এখানে ফেইসবুক, টুইটার, ইউটুব এর লিংক দিতে পারেন শেয়ার বাড়ানোর জন্য। ভালো রেসপন্স পাবেন।

মোবাইল দিয়ে TSU চালাতে হলে আপনাকে প্লে ষ্টোর থেকে TSU Software টি নামিয়ে নিতে হবে।

৫| ১৮ ই মার্চ, ২০১৬ সকাল ১১:৫১

অন্তহীন রাকিব বলেছেন: ইডেনে সেদিন আমিও ছিলাম, ৯০% বাঙ্গালী হিন্দু ছিলো আর তারা প্রায় সবাই পাকিস্তানকে সাপোর্ট করছিলো।

৬| ১৮ ই মার্চ, ২০১৬ দুপুর ১২:২৭

বাবুরাম সাপুড়ে১ বলেছেন: -----------ওরা আমাদের কাংলাদেশ ডাকে, আমরা ওদের রেন্ডিয়া ডাকি।----------

পশ্চিম বাংলার বাঙালীরা কাংলাদেশ ডাকে।..আমি ভারতীয় বাঙালী , দীর্ঘ দিন মহারাষ্ট্রএ থাকি , এখানে কেউ কাংলাদেশ ডাকে না....ভারতের অন্য প্রদেশও না। তাহলেও বন্ধ হোক দুদেশের কিছু লোকের এই নোংরামো পনা ।

----আপনার কাজ আপনি করুন, পাকিস্তান বা ভারত নিয়ে সময় নষ্ট না করে আপনার প্রতিবেশী নিঃসঙ্গ বৃদ্ধটির খোঁজ খবর নিন - কাজের বুয়ার শিশুটিকে অ আ ক খ শেখান - অনেক পুণ্য হবে ওসবে। ------------

পাকিস্তান বা ভারত নিয়ে সময় নষ্ট না করে.....বাংলাদেশ টাও এখানে যোগ করে দিন।......

সত্যি তো খেলার মধ্যে যার যা দেশ তা জিতলে মনের মধ্যে এট্টু গব্বো গব্বো ভাব হওয়া ছাড়া কার বাপের কি যায় আসে বলুন তো ?। বরং আসুন নিজের দেশ জিতলে মনের খুশীতে একটু ভালো ডিনার করে ,সন্তানের মুখে চুমো খেয়ে আগামী কালের সুন্দর সকল টির জন্যে অপেক্ষা করি।

---দিনের শেষে এটা স্রেফ খেলা---টেক ইট ইজি।--- একদম সহমত। আপনার বা আমার যে দেশ ই খেলুক না কেন।

৭| ১৮ ই মার্চ, ২০১৬ দুপুর ১:২৭

সোজোন বাদিয়া বলেছেন: লেখাটার জন্য ধন্যবাদ। ভাল থাকুন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.