নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মঞ্জুর চৌধুরী

আমি ঝন্ঝা, আমি ঘূর্ণি, আমি পথ-সমূখে যাহা পাই যাই চূর্ণি’। আমি নৃত্য-পাগল ছন্দ, আমি আপনার তালে নেচে যাই, আমি মুক্ত জীবনানন্দ। আমি হাম্বার, আমি ছায়ানট, আমি হিন্দোল, আমি চল-চঞ্চল, ঠমকি’ ছমকি’ পথে যেতে যেতে চকিতে চমকি’ ফিং দিয়া দিই তিন দোল; আমি চপলা-চপল হিন্দোল। আমি তাই করি ভাই যখন চাহে এ মন যা, করি শত্রুর সাথে গলাগলি, ধরি মৃত্যুর সাথে পান্জা, আমি উন্মাদ, আমি ঝন্ঝা! আমি মহামারী আমি ভীতি এ ধরিত্রীর; আমি শাসন-ত্রাসন, সংহার আমি উষ্ন চির-অধীর! বল বীর - আমি চির উন্নত শির!

মঞ্জুর চৌধুরী › বিস্তারিত পোস্টঃ

যাকাত দিবেন কাদের?

১৬ ই জুন, ২০১৬ রাত ১:৩৫



একটা বাস্তব ঘটনা বলি।
আমার এক দুলাভাই দেশে বেড়াতে গেছেন। নিউমার্কেটের দিকে যাচ্ছেন। রিক্সায় বসা। প্রচন্ড জ্যাম। গরমে ঘামছেন। হঠাৎ লক্ষ্য করলেন তাঁর যে রিক্সা চালক, তাঁর এক পা নাই। পঙ্গু। মাত্র এক পায়েই রিক্সা চালানোর মতন কঠিন কাজটা অনায়াসে করে যাচ্ছে।
দুলাভাইর মনটা ব্যথিত হলো। একই সাথে রিক্সাওয়ালার জন্য শ্রদ্ধায় বুকটা ভরে গেল।
ঠিক তখনই ল্যাংচাতে ল্যাংচাতে এক ফকির এসে হাজির হলো।
"আব্বা! ল্যাংড়া লুলারে দুইটা ট্যাকা দিয়া যান। আমি পঙ্গু মানুষ! ঠ্যাং নাই।"
দুলাভাই অ্যামেরিকা থেকে গেছেন। পকেটে টাকা আছে। টাকাওয়ালা প্রবাসী দেশে গেলে দেশের সব অসহায় দুস্থ মানুষের দুর্দশা দূর করে দিতে চান। দুলাভাইও ব্যতিক্রম নন। অন্য কোন সময় হলে নিশ্চিতভাবেই পকেটে হাত দিয়ে কিছু চকচকে নোট বের করে ফকিরকে খুশি করে দিতেন। কিন্তু বেচারা ফকিরের ভাগ্য খারাপ। দুলাভাইর রিক্সাওয়ালাটাও ছিল পঙ্গু মানুষ। ঠ্যাং নাই।
দুলাভাই কেবল চোখের ইশারায় ফকিরকে রিক্সাওয়ালার পা দেখিয়ে বললেন, "ও পারলে তোমার অজুহাত কী?" (ইংলিশে বললে, What's your excuse?)
ফকির দাঁত মুখ খিঁচিয়ে বেচারাকে গালাগালি করতে করতে চলে গেল।
একবার দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান ইত্যাদির একটি ক্লিপে দেখেছিলাম একটি পরিবারের সবক'টা পুরুষই জন্মান্ধ। মেয়েরা চোখে দেখতে পারে, ওরাই সংসারের কর্মকান্ড পরিচালনা করে। এবং উপার্জন করে কারা? সেই অন্ধ পুরুষেরা। পিতা-পুত্র-নাতি সবাই মিলে ব্রাক্ষণবাড়িয়া শহরের টাউনহলের পাশে মুক্তমঞ্চে গান করে, শ্রোতারা খুশি হয়ে যা দেয়, তাই সই।
হানিফ সংকেত যখন পরিবার প্রধানকে জিজ্ঞেস করেন, "ভিক্ষাবৃত্তি বেছে নিলেন না কেন?"
অন্ধ লোকটি জবাবে বলেন, "নবীজির শিক্ষা, করবো না ভিক্ষা।"
উপরের ঘটনাগুলো বললাম কারন রমজান মাস এলেই আমরা পত্রিকায় হেডলাইন দেখি অমুক জায়গায় যাকাতের শাড়ি-লুঙ্গি নিতে গিয়ে এত জন নিহত। বিস্তারিত পড়লে জানা যায়, কোন এক শিল্পপতি নিজের বার্ষিক যাকাত প্রদানের জন্য মাইকিং করে গরিব মানুষ জড়ো করেছিলেন। এবং সেখানেই পদপিষ্ট হয়ে এত হতাহতের ঘটনা ঘটেছে।
ইসলাম বস্ত্রহীনে বস্ত্র দান করতে বললেও আপনাকে এই তরিকায় যাকাত আদায় করতে বলেনা। বলে যে এমনভাবে যাকাত দাও যাতে যাকাত গ্রহণকারী আগামী বছর যাকাত প্রদানকারী বনে যেতে পারে।
উদাহরণ দিলে একটু স্পষ্ট হবে।
ধরা যাক এক শিল্পপতির বার্ষিক যাকাতের পরিমান ১ লক্ষ্ টাকা। আরও বেশি হয়, কিন্তু কনজারভেটিভ নম্বর হিসেবে ধরলাম এক লাখ টাকা।
এখন এই লোকটি যদি একজন গরিবকে সম্পুর্ন টাকা দান করে, তাহলেই কিন্তু তাঁর যাকাত আদায় হয়ে যাবে। এবং একই সাথে, লাখপতি হবার সুবাদে সেই গরিব লোকেরও আগামী বছর যাকাত ফরজ হবে, এবং সেও কোন একজনকে সাহায্য করবে। সেটা একশ টাকা দিয়ে হলেও।
কথা হচ্ছে, একটা রিক্সা কিনে দিতে, একটা কোদাল কিনে দিতে, একটা সেলাই মেশিন কিনে দিতে, একজোড়া ছাগল কিনে দিতে লাখ লাখ টাকা লাগেনা। যাকে কিনে দেয়া হয়, সে ইচ্ছা করলে এই সম্পদ থেকেই নিজের ভাগ্য ফেরাতে পারবে। আর যে ভাগ্য ফেরাতে চাইবে না, তাকে কোটি টাকা ধরিয়ে দিলেও আগামী দিনই আবার রাস্তায় এসে সেই ভিক্ষেই করবে। উপরে ল্যাংড়া রিক্সাওয়ালা এবং ল্যাংড়া ফকিরের ঘটনা বললাম না? মানুষের পঙ্গুত্ব শরীরে নয়, মানসিকতায়। দারিদ্রও তাই।
আমার দুলাভাই আবেগে আপ্লুত হয়ে ল্যাংড়া রিক্সাওয়ালাকে ভাড়া দেয়ার সময়ে পাঁচশ টাকার একটা নোট ধরিয়ে হিমু স্টাইলে হাঁটা দিয়েছিলেন। ফকিরটাকে দেননি। অন্ধ শিল্পী পরিবার প্রধানের হাতে হানিফ সংকেত দুই লাখ টাকার চেক ধরিয়ে দিয়েছিলেন। সবই সম্মান বোধ থেকে, করুনা থেকে নয়।
কাউকে যদি আপনি দান খয়রাতে অভ্যস্ত করে ফেলেন, তাহলে সে জীবনেও কাজ করবেনা। রাস্তায় বসে আল্লাহ আল্লাহ জিকির তুললেই যদি শয়ে শয়ে টাকা আসে, তাহলে কেন মানুষ পরিশ্রম করতে যাবে?
একটা মানুষকে জেনুইনলি সাহায্য করতে চান? তাহলে এমনভাবে সাহায্য করুন যাতে আপনার সামান্য সাহায্যটাই যেন সে কাজে লাগিয়ে নিজের ভবিষ্যত পাল্টে ফেলতে পারে। আপনি কেন তার মিল্কিং কাউ হতে যাবেন?
যেমন স্পৃহা নামের একটি ননপ্রফিট সংগঠনের সাথে আমরা (আমি এবং তারেক) যুক্ত আছি। এরা রাজারবাগের বস্তির মানুষদের নিয়ে কাজ করে। শিশুদের শিক্ষা দেয়। বস্তির মেয়েদের সেলাইর ট্রেনিং দেয়। ছেলেদের শেখায় কারিগরী শিক্ষা। বস্তির মানুষদের জন্য আছে বিনামূল্যে চিকিৎসা সুবিধা। অনেক স্থানেই বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা দেয়া হয়, কিন্তু দেখা যায় ওষুধ ঠিকই নিজের পয়সায় কিনতে হয়। স্পৃহা সেই ওষুধটাও বিনা পয়সায় দেয়।
কেন?
যাতে বস্তির মানুষ একসময়ে বস্তি থেকে বেরিয়ে আসতে পারে।
এবং তাঁরা তাঁদের মিশনে এখন পর্যন্ত যথেষ্টই সফল বলা চলে। আজকে অনেকেই স্পৃহা থেকে প্রাপ্ত সাহায্য কাজে লাগিয়ে "এবং" নিজের পরিশ্রমে নিজের ভাগ্য বদলে ফেলেছেন। ভুরি ভুরি উদাহরণ আছে। যাচাই করে দেখতে পারেন।
স্পৃহা অনুদানের এক টাকা সাধারন দানে নয়, বরং সেই এক টাকা থেকে কিভাবে একশ টাকার কাজ করা যায় - সেই বিশ্বাসে বিশ্বাসী।
যাকাতের টাকাতো অনেকেই অনেক খাতে দিচ্ছেন। কেউ কেউ আবার টাকা দেয়ার মতন গরিবই খুঁজে পাচ্ছেন না। তাঁদের জন্য স্পৃহা একটি চমৎকার প্রতিষ্ঠান হতে পারে। আপনার যাকাতের টাকা আপনি স্পৃহাকে দান করুন। যাকাত ছাড়াও যদি আলাদাভাবে দান করতে চান তাহলেও করতে পারেন। এবং পারলে ওদের সাহায্য করতেও এগিয়ে আসুন। সবাই মিলে একটি একটি করে বস্তি ধরলেই দেখবেন একদিন বাংলাদেশের সব মানুষ বস্তি থেকে বেরিয়ে এসেছেন।
স্পৃহাকে সাহায্য করার ঠিকানা:
Bank Name: Shahjalal Islami Bank Limited;
Branch: Satmasjid Road Branch
Account Name: Spreeha Bangladesh Foundation - Jakat Fund
A/C no: 4021-11100007363
Anyone who wants to donate zakat from Bangladesh can deposit directly to this account.
For non-zakat/regular donations from Bangladesh, please use the following account:
Bank Name: Dutch Bangla Bank Ltd. (DBBL)
Branch: Ring Road
Account Name: Spreeha Bangladesh Foundation-General
A/c no 148.110.24555

মন্তব্য ২ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ১৬ ই জুন, ২০১৬ ভোর ৬:০৪

ভাবনা ২ বলেছেন: যাকাত যারা দেয় তাদের আয় থেকে হারাম ও অসত পথে আসা অর্থ বাদ দিলে দেখা যাবে হালাল ও সৎপথে উপার্জিত অর্থ এতই কম যে সে নীজেই যাকাত পাওয়ার উপযুক্ত বলে বিবেচিত হবে । একটি ছোট উদাহরণ দেয়া যাক । যাকাত দেয়ার উপযুক্ত মানুষের বাসাবাড়ীতে যে ঝি চাকর রাখা হয় তাদেরকে কি মিনিমাম ওয়েজ রেটে মাইনা দেয়া হয় , তাদেরকে কি হলিডে পে দেয়া হয় , তাদের কি গ্রাচোইটি পেনশন দেয়া হয় , তাদেরকে কি দশ বিশ বছর খাটিয়েও কোন প্রমোশন দেয়া হয় । মোটোইনা । অতএব এই বেচে যাওয়া পয়সাটা কি হালাল বা সৎপথে উপার্জিত বলে গন্য করা যাবে । এটা একটা ছোট উদাহরণ , তার আয়ের হিসাবে এরকম আরো হাজারটা ফাক ফোকর আছে যেমন মিথ্যা ইনকামটেক্স রিটার্ণ , অভার ইনভেসিং , আন্ডার ইনভেসিং , মুনাফা খোরী , মজুদ দারী , অফিসের কাজে ফাকিবাজি , অআরো অনেক অনেক এরকম অআছে । এরকম ফাকিবাজির হিসাব নীজে না রাখলেও আলেমুল গায়েব আল্লাহ বান্দার সকল আয় ব্যয়ের হিসাব রাখেন । নীজেকে ও মানুষকে ফাকী দিলেও অাল্লাকে ফাকি দেয়া যাবেনা । নীজে যদি হক হালাল রুজির উপরে থাকে তাহলে আর যাকাত দেয়ার প্রয়োজন হবেনা বা যাকাত গ্রহণ উপযোগী মানুষই খুঁজে পাওয়া যাবেনা ।

অনেক ধন্যবাদ পোষ্টি দিয়ে এ বিষয়ে আলোচনার সুত্রপাত করার জন্য।

২০ শে জুন, ২০১৬ রাত ৯:৪৫

মঞ্জুর চৌধুরী বলেছেন: ভাল বলেছেন। :)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.