নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মঞ্জুর চৌধুরী

আমি ঝন্ঝা, আমি ঘূর্ণি, আমি পথ-সমূখে যাহা পাই যাই চূর্ণি’। আমি নৃত্য-পাগল ছন্দ, আমি আপনার তালে নেচে যাই, আমি মুক্ত জীবনানন্দ। আমি হাম্বার, আমি ছায়ানট, আমি হিন্দোল, আমি চল-চঞ্চল, ঠমকি’ ছমকি’ পথে যেতে যেতে চকিতে চমকি’ ফিং দিয়া দিই তিন দোল; আমি চপলা-চপল হিন্দোল। আমি তাই করি ভাই যখন চাহে এ মন যা, করি শত্রুর সাথে গলাগলি, ধরি মৃত্যুর সাথে পান্জা, আমি উন্মাদ, আমি ঝন্ঝা! আমি মহামারী আমি ভীতি এ ধরিত্রীর; আমি শাসন-ত্রাসন, সংহার আমি উষ্ন চির-অধীর! বল বীর - আমি চির উন্নত শির!

মঞ্জুর চৌধুরী › বিস্তারিত পোস্টঃ

"সবার উপরে দেশ সত্য - তাহার অনেক অনেক পরে দল ও দলের নেতা ও তাঁদের সন্তানেরা" - এই তত্ব যতদিন না মেনে নিব - ততদিন "সোনার বাংলা" সোনার হরিণের মতই অধরা থেকে যাবে।

১০ ই আগস্ট, ২০১৬ রাত ১২:০৭

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সম্মান করতে হবে। কেন? কারন তিনি অতি-অতি-অতিরিক্ত মাতবর এক জাতিকে "এক করে" প্রায় শূন্য হাতেই স্বাধীন করে দিয়েছিলেন। এই যে আমাদের লাল সবুজ পতাকা, এই যে ঘন সবুজ পাসপোর্ট, এই যে জাতীয়তায় আমরা লিখতে পারি "বাংলাদেশী" - এই সবের কিছুই হতো না যদি না শেখ মুজিবুর রহমান নামের একটি লোক মাঠে ঘাটে ছুটাছুটি না করতেন।
এই পর্যন্ত ঠিক আছে।
এখন আমাদের অবশ্যই অবশ্যই এও স্বীকার করতে হবে যে তিনিও একজন "মানুষ" ছিলেন। তাঁরও হাজারো গুনের পাশাপাশি কিছু "দোষ-ত্রুটিও" ছিল। লিখতে বসলে একটি বই লিখে ফেলা খুবই সম্ভব। কিন্তু আমাদের অবশ্যই অবশ্যই অবশ্যই তাঁর প্রতি যথাযথ সম্মানবোধ রেখে তবেই তাঁর সমালোচনা করতে হবে। তিনি আমাদের ইয়ার দোস্ত লাগেন না যে যা খুশি সেই ভাষায় তাঁর নামে লিখে ফেলবো।
এই পর্যন্তও সব ঠিক আছে।
এখন আসি তাঁর পুত্র শেখ কামাল প্রসঙ্গে।
ভদ্রলোকের জন্মদিন গেল কিছুদিন আগে, তাই তাঁকে নিয়ে বেশ কিছু লেখা পড়েছি।
একটা কথা অস্বীকার করার কোনই উপায় নাই যে তাঁর নামে একটি ভয়াবহ গুজব দেশে প্রচলিত আছে। তিনি নাকি ব্যাংক ডাকাত ছিলেন।
গুজবে বিশ্বাসীদের - লম্ফোঝম্পকারীদের উপর আমার খুবই মেজাজ খারাপ হয়। একটি লোক ব্যাংক ডাকাত কিনা সেটা বিচার করবে আদালত। আমি বিচার করার কে? আমি কী ব্যাংক ডাকাতি হতে দেখেছি? আমার কাছে কী অকাট্য প্রমান আছে? আমি কী শেখ কামালকে ব্যক্তিগতভাবে চিনি যে চোখ বুজে বলে দিতে পারবো "একে দিয়েই ডাকাতি সম্ভব?"
তাহলে বেনিফিট অফ ডাউট দিতে ক্ষতি কিসের?
অনলাইনে আমার সব লেখালেখির মূল বিষয়গুলোর একটি হচ্ছে, কাউকে "ভাল" বলার আগে আমার খুব বেশি প্রমানের দরকার নেই - কিন্তু একজনকে "খারাপ" ডাকার আগে আমি যেন একশোটা প্রমান বাজিয়ে দেখি। খুব কী কঠিন কোন কাজ?
তাঁর নামে আরেকটি ভয়াবহ গুজব হচ্ছে তিনি নাকি মেজর ডালিমের স্ত্রীকে তুলে এনেছিলেন। মানে তিনি লম্পট। অভিযোগ কিন্তু ভয়াবহ - এবং দেশের একটি বড় অংশের লোক সেটি বিশ্বাসও করেন।
কিন্তু মেজর ডালিম নিজের জীবনীতে লিখছেন যে তাঁর স্ত্রীকে আরেকটা আওয়ামী বদমাইশ উঠিয়ে এনেছিল, শেখ কামাল আস্ত দৃশ্যপটেই অনুপস্থিত। তাহলে তাঁর নামে এই অভিযোগ করনেওয়ালারা নিজেদের কতটা জোকার প্রমাণিত করেন সেটা বুঝতে পারছেন?
কাজেই শেখ কামালকেও অসম্মান করার কিছু নেই। একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে যথেষ্ট সম্মান তাঁর এমনিতেই প্রাপ্য।
এই পর্যন্তও সব ঠিক আছে।
কেউ কেউ এটুকু পড়েই মহানগর উত্তর আওয়ামীলীগ কিংবা বিয়ানীবাজার পশ্চিম যুবলীগের ফেসবুক গ্রূপে আমাকে অ্যাডের চিন্তাভাবনাও করে ফেলেছেন নিশ্চই।
ঠিক যেমনভাবে একদিন খুব অবাক হয়ে আমি আবিষ্কার করেছিলাম যে আমি নিজের অজান্তেই নোয়াখালী জাতীয়তাবাদী দল এবং বৃহত্তর ময়মনসিংহ আওয়ামীগের ফেসবুক গ্রূপগুলোতে আছি!
ভাইয়েরা আমার - আল্লাহর দোহাই লাগে - আমাকে কোন রাজনৈতিক দলে যোগ করে পাপের ভাগি বানাবেন না। তসলিমা নাসরিন - আসিফ মহিউদ্দিনকে তাওহিদী জনতা মনে করা এবং আমাকে কোন রাজনৈতিক দলের সাপোর্টার ভাবা - দুইটাই একই রকম গোস্তাখী।
ইন্ডিভিডুয়াল রাজনীতিবিদদের প্রতি আমার শ্রদ্ধা আছে - কিন্তু তাঁদের নিজ নিজ রাজনৈতিক দলগুলোর কর্মকান্ডে আমি পরম হতাশ। অন্য একদিন ব্যাখ্যা করা যাবে।
আপাতত আসি সমস্যার কথায়।
এবং এখন এই পয়েন্ট থেকে লেখা পড়ার পর আবারও একদল আমাকে এন্টি আওয়ামীলীগ/দেশদ্রোহী/রাজাকার বানিয়ে দিবেন।
আবার আরেকদল জাতীয়তাবাদী/জিয়ার সৈনিক দলে আমাকে যুক্ত করে দিতে পারেন।
আবারও অনুরোধ - আল্লাহর ওয়াস্তে কাজটা করবেন না। আমি অবশ্যই এন্টি রাজনীতির লোক - এবং অবশ্যই কোন দলের লোক নই। আমার চোখে সব রসুনেরই এক ইয়ে।
তো যা বলছিলাম।
শেখ কামালের জীবনের একটি ঘটনা সেদিন পড়ার সৌভাগ্য হলো।
৭২ এর মিউনিখ অলিম্পিক চলাকালীন সময়ে শেখ কামাল জার্মানিতে তাঁর এক পুরানো বন্ধুর সাথে দেখা করতে গিয়েছিলেন - এবং সেই সময়ে তাঁদের কথোপকথন।
কাহিনী সংক্ষেপ হচ্ছে, বঙ্গবন্ধু তখন অসুস্থ হওয়ায় স্বপরিবারে সুইজারল্যান্ড চলে এসেছিলেন। যিনি এত লোকের সাথে থেকে অভ্যস্ত, তিনি বিদেশে একা থাকবেন কী করে? তাই ইউরোপের সব বাঙালি রাষ্ট্রদূতদের সুইজারল্যান্ড নিয়ে এসেছিলেন। জার্মানির রাষ্ট্রদূত হুমায়ূন রশিদ চৌধুরীকেও তাই খেলা বাদ দিয়ে সুইজারল্যান্ড চলে আসতে হয়েছিল।
এদিকে তাঁর ভাতিজার (তাঁর বন্ধু) সাথে শেখ কামাল দেখা করতে জার্মানি চলে আসেন। সেখানেই বিএমডব্লিউর হেড অফিসের পাশের এডিডাসের দোকান থেকে সেই বন্ধু তাঁকে তাঁর নবগঠিত ক্লাব আবাহনীর জন্য এক সেট জার্সি কিনে উপহার দেন।
তার আগে বন্ধু শেখ কামালের ড্রেস দেখে বলেন, "কী ফকিরের মতন ড্রেস পরে চলে এসেছিস? তুই প্রধানমন্ত্রীর ছেলে!"
শেখ কামাল যথেষ্ট বিনয়ের সাথে বলেন, "যুদ্ধবিদ্ধস্ত একটি গরিব দেশের গরিব প্রধানমন্ত্রীর ছেলে আমি। এখনও দেশের মানুষের মুখে ভাতই তুলে দিতে পারলাম না। নিউমার্কেট থেকে পনেরোশো টাকায় এই ড্রেস বানিয়েছি। এর বেশিতো আমার দরকার নেই।"
এই পর্যন্তও সব ঠিক আছে। দুই বন্ধুর কথোপকথন। সমস্যাটা বাঁধে যখন এই কনভার্সেশনের উপর ভিত্তি করে শেখ কামালকে "মহান" বানানোর চেষ্টা করা হয়। প্রমান করার চেষ্টা করা হয় তিনি ব্যাংক ডাকাত ছিলেন না। তিনি লম্পট ছিলেন না। ইত্যাদি।
আমি কিন্তু আগেই বলেছি কেন তাঁকে ইন্ডিভিডুয়াল মানুষ হিসেবেই সম্মান করা উচিৎ। এবং কেন তাঁকে ব্যাংক ডাকাত - এবং লম্পট বানানো উচিৎ না।
এই কথোপকথনে সমস্যাগুলো হচ্ছে, যদি জানেনই যুদ্ধবিদ্ধস্ত একটি দেশের মানুষের মুখে খাবার নেই - এবং তখনকার সময়ে আমার নানী দাদীরা বলেছেন যে দিনে কেবল একবেলা ভাত খেতে হতো - আরেকবেলা রুটি খেতে বাধ্য হতেন। মানুষ লম্বা লাইন ধরতো ভাতের ফ্যানের জন্য। উচ্ছিষ্ট খাবার যেন ফেলা না হয় - ক্ষুধার্ত মানুষ তৃপ্তি সহকারে সেসব খাবার খেতেন। তাহলে সেই দুর্যোগের সময়ে প্রধানমন্ত্রী অসুস্থ হওয়ায় "স্বপরিবারে" (এবং তাঁর পরিবারে কিন্তু লোকসংখ্যা বেশ ভালই) সুইজারল্যান্ড ভ্রমণ কতটা যৌক্তিক শোনায়? সুইজারল্যান্ড সেই অনাদিকাল থেকেই ভ্রমণের জন্য পৃথিবীর অন্যতম এক্সপেন্সিভ দেশ। "মাসব্যাপী সফর" কিন্তু যুদ্ধবিধ্বস্ত একটি দেশের রাজকোষের উপর বিশাল চাপ! সাথে যোগ করুন সমস্ত ইউরোপ থেকে উড়িয়ে আনা রাষ্ট্রদূতদের থাকা খাওয়া ও ভ্রমণের খরচ।
জ্বি, বঙ্গবন্ধু যথেষ্ট দেশপ্রেমিক ছিলেন কোন সন্দেহ নাই। তিনি শতাব্দীর সেরা নির্বাচিত বাঙালি, এতেও তর্ক করবোনা - কিন্তু তাঁর এই সিদ্ধান্তের সাথে সহমত হতে পারছি না বলে দুঃখিত।
আমাদের বর্তমান রাষ্ট্রপতিই একজন আদর্শ, যিনি চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেন কিভাবে একটি "গরিব" দেশের গরিব রাষ্ট্রপতির বিদেশ সফর করা উচিৎ।
তারপর যুক্ত হয় শেখ কামালের জার্মানি চলে যাওয়া। সেটিও সরকারি খরচে - বলার অপেক্ষা রাখেনা। তবে খটকা লাগে এর পরের কথোপকথনে। তবে তার আগে একটি তথ্য দিয়ে দেই।
২০০৪ সালে আমি যখন দেশে একটি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছি - তখন নিজের টিউশনির টাকা জমিয়ে পনেরোশো টাকা দিয়ে একটি শার্ট কিনেছিলাম। হুলুস্থূল লেগে গিয়েছিল। তখন ভাল ফর্মাল শার্টের দাম ছিল তিন থেকে পাঁচশ টাকা। এবং বিদেশী অতি ভাল কোয়ালিটির শার্টের দাম থাকতো চৌদ্দ পনেরোশোর মধ্যে।
আমার বাবা যখন সত্তুরের দশকের শেষ ভাগে জার্মান কোম্পানির চাকরিতে জয়েন করেন, তাঁর বেতন তখন এক হাজার টাকার কিছু বেশি হবে হয়তো। আত্মীয় স্বজন দূর দূর থেকে দেখা করতে আসতেন সম্ভাব্য "বড়োলোক" আত্মীয়ের সাথে হাত মেলাবার জন্য। সেই সময়ের কথা বলছি যখন মানুষ এক দুইশ টাকা দিয়ে মাসের সংসার চালিয়ে নিতে পারতো। হুমায়ূন আহমেদেরই স্মৃতিচারণমূলক বইগুলিতে পাওয়া যায় কিভাবে কত কম বেতনের টাকায় তাঁর মা বাবা সংসার চালাতেন।
সেখানে ১৫০০ টাকা দিয়ে বানানো একটি শার্টকে এক বন্ধু "মামুলি" বলছে - কোন জমিদারের বংশধর এই বন্ধু? এই ধরণের ফাজলামির জন্য তারতো দন্ডনীয় শাস্তি হওয়া উচিৎ!
এবং দলীয় ভক্তিতে অন্ধ হয়ে এই ব্যাপারটিকে মহান বানাতে যাওয়া কতটা অযৌক্তিক বুঝতে পারছেন?
আবারও একই কথা বলে শেষ করি।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে আমাদের নিজেদের স্বাধীনতার কারণেই সম্মান করতে হবে। তিনি কী কী "জাজমেন্টাল এরর" করেছেন - সেটা নিয়ে সমালোচনা করলেও সম্মান রেখেই করতে হবে।
তাঁর পুত্রকন্যাদের ক্ষেত্রেও একই ধারা প্রযোজ্য। প্রত্যেকেই নিজ নিজ কর্মগুনেই সম্মানের দাবিদার। একজনতো আবার বিভিন্ন মেয়াদে নির্বাচিতা প্রধানমন্ত্রী। দেশের অভিভাবক। তাঁদেরও সমালোচনা করতে হলে যথাযথ সম্মান রেখেই করতে হবে। তবে - তাঁদের ভুলেরও প্রশংসা করে বাহবাহ দিতে গেলেই সমস্যাটা বাঁধবে।
"সবার উপরে দেশ সত্য - তাহার অনেক অনেক পরে দল ও দলের নেতা ও তাঁদের সন্তানেরা" - এই তত্ব যতদিন না মেনে নিব - ততদিন "সোনার বাংলা" সোনার হরিণের মতই অধরা থেকে যাবে।
সবাই ভাল থাকুক।

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ১০ ই আগস্ট, ২০১৬ বিকাল ৫:১৩

মাঘের নীল আকাশ বলেছেন: ভাল লিখেছেন ++++

১১ ই আগস্ট, ২০১৬ রাত ৩:৪৮

মঞ্জুর চৌধুরী বলেছেন: ধন্যবাদ! :)

২| ১১ ই আগস্ট, ২০১৬ ভোর ৫:৪৪

নাইক্যডিয়া বলেছেন: বাপ্রে বাপ,মন্তব্য কর্তে কত প্যারা?
মিনিমাম ১ঘন্টা লাগে। X( X((

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.