নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মঞ্জুর চৌধুরী

আমি ঝন্ঝা, আমি ঘূর্ণি, আমি পথ-সমূখে যাহা পাই যাই চূর্ণি’। আমি নৃত্য-পাগল ছন্দ, আমি আপনার তালে নেচে যাই, আমি মুক্ত জীবনানন্দ। আমি হাম্বার, আমি ছায়ানট, আমি হিন্দোল, আমি চল-চঞ্চল, ঠমকি’ ছমকি’ পথে যেতে যেতে চকিতে চমকি’ ফিং দিয়া দিই তিন দোল; আমি চপলা-চপল হিন্দোল। আমি তাই করি ভাই যখন চাহে এ মন যা, করি শত্রুর সাথে গলাগলি, ধরি মৃত্যুর সাথে পান্জা, আমি উন্মাদ, আমি ঝন্ঝা! আমি মহামারী আমি ভীতি এ ধরিত্রীর; আমি শাসন-ত্রাসন, সংহার আমি উষ্ন চির-অধীর! বল বীর - আমি চির উন্নত শির!

মঞ্জুর চৌধুরী › বিস্তারিত পোস্টঃ

বাবুল আখতারের চাকরিতে অব্যাহতি

০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ রাত ১১:০৭

কিছুদিন আগে লিখেছিলাম কেন আমি ভোটের রাজনীতি পছন্দ করিনা। মূল বক্তব্য ছিল, টাকা অথবা বন্দুকের জোরে যেকোন দাগি আসামিও "জনগণের ভোটে" জয়ী হয়ে রাজগদিতে বসে যেতে পারে। যে ছিচকা সন্ত্রাসীকে রিমান্ডে নিয়ে ডলা দিতে একজন সৎ পুলিশ অফিসারের হাত নিশপিশ করে, নির্বাচনের পরে দেখা যায় সেই সন্ত্রাসীই জনপ্রতিনিধি হয়ে বসে আছে, এবং সেই পুলিশ অফিসারই তাকে স্যালুট দিতে বাধ্য হয়।
সততা দেখাতে গিয়ে কোন পুলিশ অফিসার যদি সেই সন্ত্রাসীর গায়ে হাতও তোলে, তাহলেও তাঁর যে অবস্থা জনপ্রতিনিধিরা করেন, সেটা একটা উদাহরণ হয়েই থাকে।
দেশের মানুষ কখনই সত্যের পাশে এসে দাঁড়ায় না। তারা নিজের দলের পেছনে লেজ নাড়াতেই পারলেই আনন্দে ডগমগ করে।
এখন একটা গল্প শোনাই। কারও কাছে অপ্রাসঙ্গিক মনে হলেও আমার কাছে প্রাসঙ্গিকই। তবে তার আগে একটা ব্যাকগ্রাউন্ড দিতে চাই।
আমার দাদা ছিলেন কাস্টমস সুপার। ডিপার্টমেন্ট ছিল নার্কোডিক্স। জিভে জল চলে আসার মতন একটা চাকরি। এই ডিপার্টমেন্টে চাকরি পেলে মানুষ হয়ে জন্মানোর জন্য আফসোস হয়। মাকড়শা হয়ে জন্মালে দশটা হাত পা থাকতো, তাহলে সবকটা দিয়েই টাকা কামানো যেত। ঘুষের টাকা কমানোর জন্য দুইটা হাত যে বড্ড কম!
এই ডিপার্টমেন্টের চতুর্থশ্রেণীর কর্মচারীও যেখানে কোটিপতি হয়ে যায়, সেখানে আমার দাদার অবস্থা গেল পরে। যৌথ পরিবারের আমাদের বাড়িতে মেহমান এলে চায়ের সাথে বেলা বিস্কুট দেয়া হতো। খুব বেশি অভিজাত শ্রেণীর কেউ এলে তাঁর ইজ্জ্ত রক্ষার্থে নাস্তায় বানানো হতো সুজির হালুয়া।
আমার বাবা একবার দাদাকে প্রশ্ন করেছিলেন - তোমার কলিগদের নিজস্ব গাড়ি আছে, ওদের বাড়িতে গেলে হরেক রকম মজাদার নাস্তা খেতে পাওয়া যায়। আমাদের বাড়িতে কেন এসব হয়না?
দাদা বলেছিলেন, "তুমি ওদের বাড়ির সামনে দাঁড়ানো গাড়ি, এবং মজার নাস্তাই দেখ। ওদের সংসারের অশান্তি কী তুমি দেখতে পাও?"
এরপর বাবা লক্ষ্য করে দেখেন প্রতিটা বাড়িতে কোন সন্তান উন্মাদ, নাহয় বৌয়ের এক্সট্রা ম্যারিটাল এফেয়ার আছে, নাহলে গৃহকর্তা অ্যালকোহলিক - মোট কথা, ওদের বাড়িতে সব আছে, শুধু শান্তিটাই অনুপস্থিত।
এবং এটাই আমাদের পারিবারিক শিক্ষা হয়ে জেনারেশনের পর জেনারেশন ধরে চলছে। "হালাল উপার্জনে আর কিছু হোক না হোক, রাতে আরামের একটা ঘুম হয়।" বিশ্বাস না হলে ঘুষখোর একটা বাটপারকে ধরে জিজ্ঞেস করুন ব্যাটা কয়টা ঘুমের ওষুধ খেয়েও ঘুমহীন রাত কাটায়।
দাদার জীবনের একটা ঘটনা উল্লেখ করি। আমার বাবা লাইভ সাক্ষী। ১০০% সহীহ, বলতেই হবে।
দাদার পোস্টিং তখন মৌলভীবাজার। বলে রাখা ভাল - আমার দাদা নিজে ঘুষ নিতেন না, তাঁর নিচের বা উপরের কাউকেও ঘুষ নিতে দিতেন না। ঘুষের পুরো চেইন নষ্ট করে দিতেন।
তাঁর এই ঘাউরামির জন্য তাঁকে সরকারি খরচে পুরো বাংলাদেশ সফর করে বেড়াতে হতো। কয়েক মাসের বেশি কোথাওই স্থায়ী হতে পারতেন না।
তো মৌলভীবাজার হচ্ছে চা বাগানের এলাকা। একদিন দেখা গেল ভেজাল মদ খেয়ে একদল কুলি মারা গেছে। কুলিরা হচ্ছে চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী - সমাজের নিম্নতম শ্রেণীর মানুষ।ওদের জন্ম মৃত্যুতে সরকার বা জনগণের কিচ্ছু এসে যায়না। শুধু শুধু সময় নষ্ট করার কী মানে?
আমার দাদার মাথায় নিশ্চই কোন গন্ডগোল হয়েছিল - তাই তিনি তদন্ত করলেন - এবং তদন্তে বেরিয়ে এলো যে চা বাগানের ম্যানেজার (মালিকও হতে পারে - ভুলে গেছি) এতে সরাসরি জড়িত।
দাদার সহকর্মীদের মুখ লালায় ভরে গেল। বড়শিতে নীল তিমি ধরা পড়েছে - জব্বর মাল খসানো যাবে!
রাতেই আমাদের বাড়িতে কিছু আগুন্তক এলেন। সাথে দুই ঝুড়ি কমলা এবং একটি মিষ্টির বাক্স। আমার বাবা এবং ফুপুর বয়স কম, সামনে এত কমলা দেখে দুই মুঠোয় দুইটা কমলা নিয়ে খাওয়া শুরু করে দিলেন। আব্বু বরাবর বলতেন, সেই কমলার মতন মিষ্টি কমলা সারা জীবনেও তিনি খেতে পারেননি। ঘুষের মাল যে মধুর চেয়ে মিষ্টি - এরচেয়ে বড় প্রমান আর কী হতে পারে?
আগুন্তকেরা মিষ্টির বাক্স খুললেন, ভিতরে ক্যাশ টাকা ঝকঝক করছে। দশ হাজার টাকা নগদ! তখনকার সময়ে দশহাজার টাকার পরিমান বুঝাতে একটা উদাহরণ দেয়া যেতে পারে। আমার দাদি নিজের টাকায় সিলেট শহরে সাত কাঠার জমি কিনেছিলেন সাড়ে তিন হাজার টাকায়।
বলে রাখা ভাল, আমাদের গুষ্ঠির সবাই ভীষণ শর্ট টেম্পার্ড। গরম তাওয়ায় পানি ছিটা দিলে যেমন ফুস করে জ্বলে উঠে, তেমনি কথায় কথায় ঝলসে উঠা আমাদের বংশগত দোষ।
"বেরিয়ে যান আমার বাসা থেকে। টাকা পয়সা আর কমলা নিয়ে এখুনি বিদায় হন! সাহস কত বড়! আমাকে কিনতে এসেছে!"
দশ হাজার টাকা ও দুই ঝুড়ি কমলায় বিক্রি হবার প্রস্তাবে দাদা ভীষণ খেপে উঠেছিলেন।
আগুন্তকেরা বিদায় নিলেন। তবে বিদায় নেবার আগে বলে গিয়েছিলেন, "এই বাক্স নিয়েই আমি ঢাকা যাব - এবং আপনার ট্রান্সফারের লেটার নিয়ে আসব।"
আগুন্তক তার কথা রেখেছিলেন। দাদা এক সপ্তাহের মধ্যেই মৌলভীবাজার থেকে বিদায়।
ঘটনা কিন্তু বাংলাদেশ আমলের না। ব্রিটিশ পরবর্তী পাকিস্তান আমলের।
ঘটনা এই কারণেই বললাম যাতে সবাই বুঝতে পারেন যে সেই অনাদিকাল থেকেই আমরা দুর্নীতিবাজ একটি জাতি। ইহা মোটেও রিসেন্ট ফেনোমেনা নয়।
এখন আসি সাম্প্রতিক বাবুল আখতার প্রসঙ্গে। ইদানিং চাকরিতে প্রচন্ড ব্যস্ত হয়ে যাওয়ায় খুব একটা পত্রিকা পড়া হয়না, তবে যেটুকু পড়লাম, তাতে জানলাম তিনি একজন সৎ পুলিশ কর্মকর্তা। জঙ্গি দমনে তাঁর ভূমিকা প্রশংসনীয়। কিন্তু সৎ মানুষের সমস্যা হচ্ছে, সবাই তাঁদের শত্রু হয়ে যায়। কাজেই তাঁর স্ত্রীকে বলির পাঠা হতে হলো। নিজের সন্তানদের সামনেই নৃশংসভাবে খুন হতে হলো।
পুরো দেশ ঝাঁপিয়ে পড়লো প্রতিবাদে। সবাই জঙ্গিদের বিরুদ্ধে জিহাদে তাঁর পেছনে আছে। "গো এন্ড কিল দেম অল স্যার!" "টেক রিভেঞ্জ!" "আনলিশ হেল!" ইত্যাদি ইত্যাদি জ্বালাময়ী এবং ইমোশনাল ম্যাসেজে ফেসবুক ভরে গেল। এবং তারপরেই ঘটনা প্যাচ খেয়ে গেল। উড়ো খবর শোনা গেল আসলে জঙ্গি না, তিনি নিজে তাঁর স্ত্রী হত্যায় জড়িত। খুনি সন্দেহে যাদের গ্রেপ্তার করা হলো, পুলিশি হেফাজতেই তাদের খুন হলো। গতকাল দেখি তাঁকে চাকরি থেকেও অব্যাহতি দেয়া হয়েছে।
বেচারা বাবুল আখতার। বৌ হারালেন, বাচ্চারা এতিম হলো এবং এখন তিনি চাকরিও হারালেন। এবং খুব আফসোসের সাথে দেখতে বাধ্য হচ্ছি - তখনকার দিনের জ্বালাময়ী সঙ্গীদের কেউই এখন তাঁর পাশে নেই। জঙ্গিরা খুন করলে খুন, নিজের সরকার, নিজের দল খুন করলে সেটা হালাল - এইতো আমাদের বুদ্ধিজীবীদের চিরকালীন ফিলোসফি। সুসময়ের বন্ধু, দুঃসময়ের বাঘ। আসলে জাতে কাল সাপ।
দুঃখিত বাবুল ভাই - বড্ড বেমানান একটা দেশে আপনি সততা ধরে রাখতে চেয়েছিলেন। আপনার মতন বেকুবদের জন্য এ চাকরি না।
আমি আবারও বলছি - এই কেস সম্পর্কে আমার জ্ঞান কম। কিছুই জানিনা। পত্রিকায় টুকটাক পড়েছি। কেউ কেউ বলবেন "আলু পত্রিকায় পড়ে মন্তব্য লিখতে আসছে। ব্যাটা ছাগু কোথাকার!"
যথেষ্ট বিনয়ের সাথেই সেই সমস্ত দলকানাদের বলছি, ভদ্রলোককে চাকরি থেকে অব্যাহতি কিন্তু আলু পত্রিকা দেয়নি। দিয়েছে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। সব দোষ আলু পত্রিকার ঘাড়ে চাপিয়ে নিজে মনে মনে শান্তি পেতে চাইলে সেটা আপনার ব্যপার।
একজন সাধারণ মানুষ হিসেবে আমার একটাই বক্তব্য, যদি তিনি খুনের সাথে জড়িত হন, তাহলে তাঁর বিচার হোক। কঠোর থেকে কঠোরতম শাস্তি হোক।
আর যদি না হন, তাহলে তাঁর চাকরি গেল কেন? কেন ব্যাপারটাকে এত ঘোলাটে করা হচ্ছে?
আজকে যদি বাবুল আখতাররা বিচার না পায় - এই দেশে এখনও যে দুই একটা সৎ সরকারি কর্মচারী দেখতে পাওয়া যায় - ভবিষ্যতে সেটাও পাওয়া যাবেনা।
আমরা সত্যের পাশে আছি। আমরা সত্যের পূজারী। বিশ্বাস করি - একদিন সত্য ঠিকই বেরিয়ে আসবে।
সমস্যা হচ্ছে, আমাদের দেশে সত্যকে এত বেশি মিথ্যা দিয়ে চাপা দেয়া হয় যে বেরিয়ে আস্তে তার একটু বেশিই সময় লাগে।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ০৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ রাত ১২:৪৬

প্রজ্জলিত মেশকাত বলেছেন: সুন্দর লেখনী।

২| ০৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ রাত ১:২২

নতুন বলেছেন: আপনি বাবুল আক্তারকে সন্দেহের বাইরে রেখে চিন্তা করছেন তাই এমন লাগছে আপনার।

স্ত্রী হত্যায় প্রথম সন্দেহ পড়ে স্বামীর উপরে... এই বিষয়টা ভুলে যাবেন না।

আসুন বাবুলের ভুমিকায়...

যদি বাবুল আক্তার ষড়যন্ত্রের স্বীকার তবে তিনি কেন সেই সব নিয়ে মিডিয়ায় আসছেন না?

তিনি একজন এসপি তিনি কি কোন তথ্য জোগাড় করতে পারেন নাই কে খুন করেছে? কেন করেছে?

যদি বাবুল আক্তার জড়িত নাই থাকে তবে তাকে ফাসানোর জন্য কতটুকু প্রতিবাদ তিনি করেছেন?

তিনি রাস্টিয় পদক প্রাপ্ত এসপি...তার বিরুদ্ধে তার ডিপাটমেন্টে কে কে ষড়যন্ত করতে পারে? তিনি চেস্টা করলে বিষয়টি প্রধান মনন্ত্রীর নজরেও আনতে পারেন... সেই চেস্টা কি তিনি করেছেন??

যদি বিষয়টা চাপা পড়ে যায় তবে কার লাভ??? খুনির তাইনা... তবে বাবুল কেন চুপ থেকে বিষয়টা চাপা পড়েদিতে সাহাজ্য করছে?

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.