নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মঞ্জুর চৌধুরী

আমি ঝন্ঝা, আমি ঘূর্ণি, আমি পথ-সমূখে যাহা পাই যাই চূর্ণি’। আমি নৃত্য-পাগল ছন্দ, আমি আপনার তালে নেচে যাই, আমি মুক্ত জীবনানন্দ। আমি হাম্বার, আমি ছায়ানট, আমি হিন্দোল, আমি চল-চঞ্চল, ঠমকি’ ছমকি’ পথে যেতে যেতে চকিতে চমকি’ ফিং দিয়া দিই তিন দোল; আমি চপলা-চপল হিন্দোল। আমি তাই করি ভাই যখন চাহে এ মন যা, করি শত্রুর সাথে গলাগলি, ধরি মৃত্যুর সাথে পান্জা, আমি উন্মাদ, আমি ঝন্ঝা! আমি মহামারী আমি ভীতি এ ধরিত্রীর; আমি শাসন-ত্রাসন, সংহার আমি উষ্ন চির-অধীর! বল বীর - আমি চির উন্নত শির!

মঞ্জুর চৌধুরী › বিস্তারিত পোস্টঃ

মেয়েদের ডিভোর্সে সহায়তা করা

০৯ ই মে, ২০১৭ রাত ২:৩৫

একমহিলা তাঁর স্বামীর হাতে মার খান। নিয়মিত খান। মানসিক ও শারীরিক শক্তিতে তিনি কুলিয়ে উঠতে পারেননা। মার খেয়ে তিনি কাঁদতে থাকেন। এলাকাবাসী তাঁর সেই অসহায় কান্নার শব্দ শোনে।
কিছুকিছু সচেতন এলাকাবাসী বদ স্বামীটাকে খুব করে বকে দেন। আচ্ছা করে শাষিয়েও দেন। বকাঝকায় কাজ হয়ও। কয়েকদিন মার বন্ধ থাকে। তারপরে আবার শুরু হয় অত্যাচার। মহিলা মার খান, কাঁদেন, এলাকাবাসী সেই কান্নার শব্দ শোনে।
নারীবাদী ও অসহায় মহিলাদের নিয়ে কাজ করে এমন কিছু সংগঠন করলো কী মহিলার হয়ে লড়াই করে তাঁকে অত্যাচারী স্বামীর হাত থেকে মুক্ত করে আনলো। মানে ডিভোর্স করিয়ে দিল। এখন দুই বাচ্চা নিয়ে মহিলা একা সংসার করেন। ও আচ্ছা - বলা হয়নি, মহিলা কিন্তু শিক্ষিত। বিএ পাশ করেছিলেন - এবং ছোটখাট চাকরিও করতেন। কাজেই স্বামীর সঙ্গ ছুটে যাওয়ায় তিনি ঠিক মাঝ দরিয়ায় পরে যাননি।
তবে সমস্যা বাঁধলো বেশ কিছু ক্ষেত্রে।
১. অতি উৎসাহী কিছু আত্মীয়স্বজনের সাথে দেখা হওয়া মাত্রই তাদের প্রথম প্রশ্ন, "তালাক কেন হলো? কার দোষ?"
কমন সেন্স বলে এই সময়ে উত্তর অবশ্যই বায়াসড হবে। যদি স্বামীটিকে প্রশ্ন করা হয়, সেই স্বামী কখনই বলবেনা যে "আমি আসলে বৌকে পেটাতাম। সকাল বিকাল রুটিন মোতাবেক পেটাতাম। তাই তালাক হয়ে গেছে।"
যদি এখানে বৌয়ের পরকীয়া সম্পর্ক দায়ী থাকে, সে কখনই বলবে না, "ক্যানভাসের (আমার ফেসবুক গ্রূপ) পুরুষ অ্যাডমিনদের সাথে টাঙ্কিবাজি করার সময়ে হাতেনাতে ধরা খেয়েছিলাম, তাই ডিভোর্স হয়ে গেছে।"
এবং উপরে উল্লেখ করা ঘটনার মহিলাকে এই প্রশ্ন করার মানে হচ্ছে তাঁর দগদগে ঘায়ে নুনের ছিটা দেয়া। বেচারি মাত্রই সংসার ভাঙার কষ্টের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। একটি গাছের শেকড় সহ উপড়ে ফেলার মতন কষ্ট কারোর সংসার ভেঙে যাওয়া। তাঁকে একটু সময় দাও নিজেকে সামলানোর।
না, আসল খবর না জানা পর্যন্ত এসব আত্মীয়ের পেটের ভাত হজম হবেনা। তাদের জানতেই হবে ঘটনা কী!
২. এরপরে শুরু হবে জাজমেন্টাল মন্তব্য।
"কী বেহায়া মেয়ে মানুষরে বাবা! সংসার করতে হলে কত দিক সামলে চলতে হয়.....অথচ এখন সামান্য ঠোকাঠুকি হলেই ডিভোর্স! আমরা আর সংসার করি নাই আর কি!"
আপনি কিভাবে শিওর হচ্ছেন আপনার কেস এবং তাঁর কেস এক? আপনার স্বামী আপনাকে চামড়ার বেল্ট দিয়ে পেটায়? যদি পেটায়, এবং সেটা আপনি হজম করে ফেলেন তাহলে এটাও জেনে রাখুন, সবার হজম শক্তি আপনার মতন না। আপনি হয়তো গু খেয়ে সেটা হজম করায় বিশ্বাসী - তিনি নন। তিনি বমি করে দিবেন, এখানে সেটাই করেছেন। কাজেই কার ডিভোর্স কী কারনে হলো, কেন হলো ইত্যাদি নিয়ে বাইরের মানুষের মন্তব্য করাটা খুবই বিরক্তিকর এবং অরুচিকর। বস্তিবাসী অশিক্ষিত কাজের বুয়া শ্রেণীর লোকেরা এমনটা করলে তাও মানা যায় - শিক্ষিত শ্রেণীর মহিলারা যখন এই কাজ করেন, তখন খুবই হতাশ লাগে।
৩. এবং এখন আসা যাক শিক্ষিত শ্রেণীর পুরুষ সমাজে।
তারা প্রথমেই চান্স নেয়া শুরু করে ডিভোর্সি নারীর সাথে। মহিলা সিঙ্গেল - অসহায় - তাঁর একজন পুরুষ সঙ্গীর বড্ড প্রয়োজন। সেই পুরুষ সঙ্গীটি হতে সবাই বড্ড আগ্রহী। বিবাহিত, তিন চার বাচ্চার বাপ, বয়স পঞ্চাশ-ষাট হয়ে গেছে, যেকোন দিন হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে যাবে - সেই ব্যাটাও "গোপনে" মহিলার সাহায্যে এগিয়ে আসতে আগ্রহী। নোংরা নোংরা ম্যাসেজে মহিলার ফেসবুক ইনবক্স ভরে যায়, মহিলাকে আড়ালে পেলেতো কথাই নাই। অফিসের কলিগরা প্রাইভেট কিছু সময়ের লোভে মহিলার কাজ করে দেয়। যদি মহিলা রাজি না হয়, তাহলে সেই মহিলার নামেই অফিসে কুৎসা রটে। বস প্রমোশন আটকে রাখে।
ডিগনিটিওয়ালা মহিলা, যে এইসব চরিত্রহীন, লম্পট বা সহজ বাংলায় ছ্যাচ্চোর পুরুষ মানুষদের ঘৃণা করে, যে নিজের পার্সোনালিটি বজায় রাখে - সে বেচারি কতটা মানসিক যন্ত্রণার মধ্য দিয়ে যান সেটা কেউ বুঝতে পারে?
আর যদি মহিলা অশিক্ষিতা বা স্বল্পশিক্ষিতা হন?
সারা জীবন স্বামীর উপর নির্ভর করে ছিলেন - এখন হঠাৎ তাঁর সংসার ভেঙে গেছে। প্রথম প্রশ্নই উঠে - এখন তিনি কোথায় যাবেন? মহিলার বাবা মা বেঁচে না থাকলে নিজের ভাইবোনই তাঁকে আশ্রয় দিবেনা। তাঁদের নিজেদের সংসারেই ঝামেলার শেষ নেই। উটকো বাড়তি ঝামেলা নিবে কে?
নারীবাদী এবং মহিলা সংগঠনগুলোর নেত্রীরা, যারা তাঁর ডিভোর্সের ব্যবস্থা করিয়েছেন - তাঁরা নিবেন? না। তাঁরা সর্বোচ্চ যা করবেন তা হচ্ছে একটা নির্দিষ্ট পরিমান টাকা তাঁর হাতে ধরিয়ে দিতে পারেন - এরবেশি কে ঝামেলায় জড়াবে? কার এত সময় আছে? তা, যে মহিলার বাইরের জীবন সম্পর্কে কোন এক্সপিরিয়েন্সই নাই - তাঁর হাতে এক কোটি টাকা ধরিয়ে দিলেও তিনি দাঁড়াতে পারবেন না। অনেক বড় সুযোগ আছে, সেই টাকার লোভে কিছু মাছি ভনভন করবে, এবং সেই টাকা শেষ হলে তাঁকে ফেলে পালাবে।
কাজেই যখন দেখবেন, কোন নারী মার খাওয়ার পরেও স্বামীর সংসার করে যাচ্ছে, সেই মহিলাটিকে কিছু চিন্তাভাবনা না করেই গালাগালি করে বসবেন না। হয়তো তিনি বাইরের পৃথিবীতে আসার সাহস পাচ্ছেন না বলেই অত্যাচারী স্বামীর সাথে থেকে যাচ্ছেন। আগে বোঝার চেষ্টা করুন ঘটনা কী। কেন মহিলা ভয় পাচ্ছে। আগে বাইরের পরিবেশ সুস্থ করুন। লোকজনের মানসিকতা পরিবর্তন করুন। ডিভোর্সি নারীদের পুনর্বাসনের নিশ্ছিদ্র ব্যবস্থা নিশ্চিত করুন। তারপরে নাহয় মার খেয়ে সেটা হজম করা নারীদের গালাগালি করা যাবে।
হ্যা - এখন আপনার পাশের বাড়ির লোকটি - কিংবা আপনার নিজের আপন ভাই তার স্ত্রীকে মারধর করে - আপনি কী তাহলে হাতে হাত গুটিয়ে বসে থাকবেন? যেহেতু দেশে ডিভোর্সি মেয়েদের সুন্দর ভাবে বাঁচার মতন সমাজ নেই?
না। আপনি প্রতিবাদ করবেন। পারলে অত্যাচারীর হাত ভেঙে দিবেন। মেয়েটির যদি ডিভোর্স প্রয়োজন হয়, আপনি তাঁকে সাহায্য করবেন। এই পর্যন্ত সবকিছুই ঠিক আছে। তবে এরপরেই আপনার দায়িত্ব কয়েকগুন বেড়ে যাবে। যে মেয়েটিকে সমুদ্রে ডুবে মরার থেকে উদ্ধার করে আনলেন, তাঁকে চোরাবালিতে ধাক্কা দিয়ে ফেলবেন না। তাঁর পুনর্বাসনের জন্য যতরকমের সাপোর্ট দরকার - সেটা দিন। চাকরি-বাকরি-একা জীবন যাপনের জন্য ট্রেনিং ইত্যাদি থেকে শুরু করে ভাল দেখে একটি ছেলের সাথে বিয়ে পর্যন্ত যেখানে যে সাহায্য লাগবে করুন। আমাদের দেশে ডিভোর্সি মেয়েদের বিয়ে হয়না। কেন হয়না তার অনেক কারন আছে। তবে ইসলামী দৃষ্টিকোণ থেকে বললে, আমাদের নবীজির (সঃ) এক স্ত্রী বাদে বাকি সব স্ত্রীই ছিলেন হয় বিধবা, নাহয় ডিভোর্সি। ডিভোর্সি মেয়েদের নিয়ে কটূক্তি করার আগে আমার মনে হয় প্রতিটা মুসলিমের এই দিকটিই সবার আগে বিবেচনায় আনা উচিৎ।
আপনি যদি অত্যাচারী স্বামীর সাথে ডিভোর্স করিয়েই নিজের দায়িত্ব শেষ বলে মনে করেন, তাহলে এই মেয়ে আবারও অসহায় কান্না কাঁদবে। এবং এলাকাবাসীও তাঁর সেই অসহায় কান্নার শব্দ শুনবে।

মন্তব্য ৮ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ০৯ ই মে, ২০১৭ ভোর ৫:০৪

বিচার মানি তালগাছ আমার বলেছেন: সেরকম হলে তো ভালোই হত। কিন্তু আমরা সবাই তো নিজের পরিবার নিয়েই হিমশিম খেয়ে যাচ্ছি, সেখানে অন্যের দায়িত্ব তো আরো কঠিন। তবে সরকার এ ব্যপারে কিছু করলেও করতে পারে। কিন্তু বাংলাদেশের মত দেশে এসব দিবাস্বপ্নই...

০৯ ই মে, ২০১৭ রাত ৯:২৭

মঞ্জুর চৌধুরী বলেছেন: সরকারের কিছু করার নাই। লোকজনের মানসিকতা পরিবর্তন না হলে সরকার মিলিটারি দিয়েও কিছু করতে পারবেনা।

২| ০৯ ই মে, ২০১৭ সকাল ১১:৪৬

কাল্পনিক হিমু বলেছেন: যুক্তি রয়েছে ভালো লাগলো

০৯ ই মে, ২০১৭ রাত ৯:২৭

মঞ্জুর চৌধুরী বলেছেন: ধন্যবাদ!

৩| ০৯ ই মে, ২০১৭ দুপুর ১২:১৬

কানিজ রিনা বলেছেন: একটা নারীর উপর যতই অন্যায় হোক তার
ডিভোর্স পাওয়া মানে সমাজে বিশাল অপরাধ
ঘুরে ফিরে নারী অপরাধী হয়েই সমাজে বাস
করতে হয় কারন সে নারী।

০৯ ই মে, ২০১৭ রাত ৯:৩০

মঞ্জুর চৌধুরী বলেছেন: :(

৪| ০৫ ই জুন, ২০১৭ দুপুর ১২:৩৬

প্রথমকথা বলেছেন: খুব সুন্দর শিক্ষণীয় পোষ্ট।
সবাই সচেতন হলে অনেক কমবে বন্ধ হবে না, এই জন্য দরকার জন সচেতনাতা।।

৫| ১৬ ই জুন, ২০১৭ রাত ১০:৩২

সামু পাগলা০০৭ বলেছেন: পোস্টে সহমত পোষন করছি। আমিও এমনই মনে করি। আপনাকে অজস্র ধন্যবাদ এমন গুরুত্বপূর্ণ টপিক নিয়ে গুছিয়ে লেখার জন্যে।
ভালো থাকুন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.