নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মঞ্জুর চৌধুরী

আমি ঝন্ঝা, আমি ঘূর্ণি, আমি পথ-সমূখে যাহা পাই যাই চূর্ণি’। আমি নৃত্য-পাগল ছন্দ, আমি আপনার তালে নেচে যাই, আমি মুক্ত জীবনানন্দ। আমি হাম্বার, আমি ছায়ানট, আমি হিন্দোল, আমি চল-চঞ্চল, ঠমকি’ ছমকি’ পথে যেতে যেতে চকিতে চমকি’ ফিং দিয়া দিই তিন দোল; আমি চপলা-চপল হিন্দোল। আমি তাই করি ভাই যখন চাহে এ মন যা, করি শত্রুর সাথে গলাগলি, ধরি মৃত্যুর সাথে পান্জা, আমি উন্মাদ, আমি ঝন্ঝা! আমি মহামারী আমি ভীতি এ ধরিত্রীর; আমি শাসন-ত্রাসন, সংহার আমি উষ্ন চির-অধীর! বল বীর - আমি চির উন্নত শির!

মঞ্জুর চৌধুরী › বিস্তারিত পোস্টঃ

যদি ছেলেকে "মানুষ" বানিয়ে যেতে পারি....

২৭ শে জুন, ২০১৭ রাত ১২:০৭

আমি যখন আমার ছেলের দিকে তাকাই, ওর মাঝে আমারই ছায়া খুঁজি। যেমনটা আমার বাবা খুঁজতেন আমার মাঝে তাঁর ছায়া, তাঁর বাবা খুঁজতেন তাঁর মাঝে তাঁর.....এবং এধারা সেই সৃষ্টির শুরু থেকেই বয়ে আসছে হয়তোবা।
প্রতিটা বাবাই বোধয় চান, তাঁর সন্তান তাঁর রক্তের পাশাপাশি তাঁকেও ধারণ করুক। তাঁর স্বভাব-চরিত্র, তাঁর ঐতিহ্য লালিত হোক তাঁর সন্তানদের মাঝে। বাবারা একদিন মাটির সাথে মিশে যান, সময় একদিন তাঁদের স্মৃতি ধুয়ে নিয়ে যায় - তবু তাঁরা বেঁচে থাকতে চান তাঁদের সন্তানদের হাত ধরে, বংশ পরম্পরায়; জন্ম থেকে জন্মান্তরে।
আমার ঈদের গল্প আমার জেনারেশনের আট দশটা মানুষের জীবনের ঈদের গল্প থেকে ভিন্ন নয়। ঈদের আগে কেনাকাটা করা, ঈদের দিন নতুন জামা/জুতা পড়া হবে, এই খুশিতে ঘুম থেকে উঠা, সকালে বাবার সাথে গিয়ে ঈদের নামাজ পড়া, আত্মীয় মুরুব্বিদের সালাম করা, কিছু কিছু আত্মীয়ের কাছ থেকে সালামী পাওয়া এবং রাতে হুমায়ূন আহমেদের নাটক এবং ইত্যাদি দেখা। কারোর সাথেই ব্যতিক্রম নেই।
বন্ধু বান্ধবদের অনেকেই দেশের বাড়ি গিয়ে ঈদ করতো। আমাদের সেটা করতে হতো না। দাদা দাদি নানা নানীদের যৌথ পরিবারেই আমাদের বেড়ে উঠা। ঈদের সময়ে "এ জার্নি বাই বোট/ট্রেন/বাস" হতোনা বলে তখন মন খারাপ হতো, গ্রামে গিয়ে "এডভেঞ্চারাস ঈদ" হতোনা বলেও অতৃপ্ত থাকতো মন - তবুও এখন ভাবি আমরা কতটা সৌভাগ্যবান ছিলাম! তখনকার যৌথ পরিবারে প্রতিদিনের আনন্দবেদনার কাব্যের অংশ হয়ে বেড়ে উঠার আনন্দ এখনকার একক পরিবারের শিশুরা উপলব্ধিই করতে পারবে না। সেসব দিন তুলনাহীনা।
শৈশবের ঈদ শীতের দিনে হতো। তাই সকালে ঘুম থেকে উঠাটা ছিল অত্যন্ত কঠিন। তার উপর গোসল করাটাতো ছিল রীতিমতন অভিশাপ।
সেই ভোর থেকে চুলায় গরম পানি ফুটতে থাকতো, বালতিতে ঢালার পরে একজন একজন করে ভাইবোন গোসলে যেতাম। বাবা বলতেন, "তোমরা কতটা সৌভাগ্যবান তোমরা জানোনা, কল খুললেই পানি চলে আসে। আমাদের সময়ে কুয়াশা ঢাকা শীতের দিনে পুকুরে গিয়ে গোসল করতে হতো।"
তারপর তিনি বলতেন, "আমাদের বলা হতো, ঈদের দিন যে যত আগে গোসল করবে, সে তত আগে বেহেস্তে যাবে। আমরা বেহেস্তে যাবার লোভে দৌড়ে গিয়ে পুকুরে ঝাঁপ দিতাম। আর কাঁপতে কাঁপতে উঠে আসতাম।"
আল্লাহর রহমত, আমাদের বেহেস্তে যাবার সেই দৌড় প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে হয়নি। আমার ছেলেকে অবশ্য চুলায় পানি ফোটার জন্যও অপেক্ষা করতে হয় না। ওকে আমাদের চেয়েও ভাগ্যবান বলাই যায়। তাঁর সন্তান কী বিছানায় শুয়ে শুয়েই গোসল সেরে ফেলতে পারবে? হয়তো ওদের জন্য আবিষ্কার হবে এয়ার বাথ টেকনোলজির। বাতাসের মাধ্যমেই শরীরের সব ময়লা ধুয়ে সাফ হয়ে যাবে।
এবং চারিদিকে কবি নজরুলের সেই অমর সংগীত, "রমযানের ঐ রোযার শেষে এলো খুশির ঈদ...."
আমার এখনও এই গানটি কানে না আসলে মনে হয়না ঈদ এসেছে। গানটির কিছু চরণতো জীবন বদলে ফেলার মতন শক্তিশালী।
"যারা জীবন ভরে রাখছে রোজা নিত্য উপবাসী।
সেই গরীব ইয়াতিম মিস্কিনে দে যা কিছু মুফিদ।।"
আমরা এক মাস রোজা রেখেই কাহিল হয়ে যাই, যাদের জীবনভর রোজা রাখতে হয় - তাঁদের কষ্ট আমরা উপলব্ধি করি?
বাবা যখনই কোন ফকির মিসকীনকে দান করতেন, আমাদের মাধ্যমেই করতেন। আমাদের হাতে টাকা দিয়ে বলতেন, "ওকে টাকাটা দিয়ে তোমাকে এমন পরিবারে জন্ম দেয়ার জন্য আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করো। আজ ওর জায়গায় তুমিও থাকতে পড়তে।"
ঈদের জন্য আমাদের সাধারণত এক সেট জামাই কেনা হতো। এক সেট পাঞ্জাবি এবং আরেক সেট গেঞ্জি/শার্ট এমন ঘটনা খুব বেশি ঘটতো না। প্রতি ঈদেই যে নতুন নতুন পাঞ্জাবি পড়েছি - তা নয়, আগের বারের পাঞ্জাবি ধোপাকে দিয়ে পরিষ্কার করিয়ে, কড়া মাড় দিয়ে ইস্ত্রি করিয়ে ঈদের জামাতে গিয়েছি এমন বহুবার ঘটেছে। এই অভ্যাস এখনও রয়ে গেছে। নিজের জন্য নতুন জামা পেলে আমি খুশি, না পেলে সত্যিই কিচ্ছু যায় আসেনা। আমরা বাবা মায়ের উপর চাপ দেইনি কখনও। তাঁদের আয় মোটামুটি ভাল হলেও ছিলতো সীমিতই। আমাদের ছাড়াও আরও কারোর কারোর জন্য বাজেট তোলা থাকতো। পাড়ায় পোলিও আক্রান্ত এক ছেলে ছিল, ফয়সাল নাম। দুই লাঠিতে ভর দিয়ে পাড়ায় চক্কর দিত। হাসিটা এত সুন্দর ছিল যে বুকে এসে বিঁধে। ঈদের দিনে তাঁর জন্য কাপড় কেনা হতো। বাবা নিজের হাতে তাঁকে দিতেন। এবং তিনি তাঁর তিন সন্তানকেই শারীরিকভাবে নিখুঁত বানাবার জন্য উপরওয়ালাকে ধন্যবাদ দিতেন। বিকলাঙ্গ সন্তানের পিতামাতা হবার মনোকষ্টের তুলনায় নরকবাস কিছুই না।
এছাড়া আমাদের কিছু বাজেট তোলা থাকতো এমন কিছু মানুষের জন্য যাদের অবস্থা কোন ভিখিরির চেয়ে কম খারাপ নয়, এবং তাঁরা কখনই হাত তুলে ভিক্ষা চাইবে না। মসজিদের ইমাম-মুয়াজ্জিনরা ছিলেন তেমনই সম্প্রদায়ের লোক। কেউ বিশ্বাস করবে কিনা জানিনা, তাঁদের মাসিক বেতন অবিশ্বাস্য রকমের কম হয়ে থাকে। এত কম টাকায় তাঁরা কিভাবে সারভাইভ করেন, তাঁরাই জানেন। তাঁদের জন্য পাঞ্জাবি, লুঙ্গি এবং তাঁদের স্ত্রীদের জন্য শাড়ির টাকা আলাদা তোলা থাকতো। ইমাম সাহেব তাঁর কাপড় নেবার সময়ে স্পষ্টই জানিয়ে দিতেন, তিনি যাকাতের টাকা নেন না। বাবা "উপহার" হিসেবে দিলে তবেই নিতেন।
এইবার ঈদে আমরা স্বপরিবারে নামাজে গেলাম। দেশে কেন মহিলাদের ঈদের জামাতে নেবার প্রচলন নেই আমি ভেবে পাইনা। হাদিসেতো যতদূর জানি রাসূলুল্লাহ (সঃ) স্পষ্ট নির্দেশ দিয়েছেন মেয়েদের ঈদের নামাজে যেতে, এবং নামাজ পড়তে না পারলেও দোয়ায় অংশ নিতে।
যাই হোক, মসজিদের মহিলা কক্ষে দেখা গেল এক মা তাঁর শিশুকে এক ঝুড়ি চকলেট ভর্তি গুডি ব্যাগ ধরিয়ে দিয়ে বললেন সব শিশুদের মধ্যে বিলিয়ে দিতে। শিশুটি মহানন্দে সেই কাজটি করছে। আমার ছেলের ভাগ্যেও এক ব্যাগ চকলেট জুটলো উপহার।
ব্যাপারটি আমার এত ভাল লেগেছে যে আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি আগামী বছর ইন শা আল্লাহ এই কাজটা আমিও করবো। এক বস্তা চকলেট কিনে ছোট ছোট ব্যাগ বানিয়ে নিজের বাচ্চাকে দিয়ে অন্য বাচ্চাদের সাথে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে শেখাবো। রিফিউজি ক্যাম্পে নিয়ে গিয়ে গৃহহীন নির্দোষ শিশুদের ঈদ উপহার দেয়ার মাধ্যমে সে কতটা সৌভাগ্যবান সেটা উপলব্ধি করাবো।
তারচেয়ে বড় কথা, আমি শেখাতে চাই দোস্ত-দুশমনি ভুলে হাত মিলিয়ে ভ্রাতৃত্ব স্থাপন কেবল ঈদের দিনেই নয় - বছরের প্রতিটা দিনেই করতে হয়। আমি মুসলিম, ও কাফির; আমি সুন্নি, ও শিয়া; আমি হানাফী, ও সালাফি; আমি বাঙালি, ও বিদেশি জাতীয় নিম্নশ্রেণীর মানসিকতা ত্যাগ করে ও যেন বুঝতে শেখে প্রতিটা সৃষ্টিই আল্লাহর আপনজন। যে তাঁর সৃষ্টির সেবা করে, তাঁর প্রতি আল্লাহ সন্তুষ্ট থাকেন। সে যেন ছোট ছোট বিষয়ে নিজেদের মধ্যে বিভক্তি সৃষ্টি না করে। সে যেন একটা দুইটা অমিল দেখে মানুষকে দূরে ঠেলে দেয়ার পরিবর্তে হাজারো মিল খুঁজে বের করে সবাইকে কাছে টেনে নিতে শেখে। সে যেন সেই মানুষ হয়ে দেখায় যার সম্মানে আল্লাহ বলেছিলেন জ্বিন ও ফেরেশতারাও যেন সিজদাহ দেয়।
আমি না শেখালে ও শিখবে কার কাছে?
যদি ছেলেকে "মানুষ" বানিয়ে যেতে পারি, তাহলেই বুঝব মানব জন্ম স্বার্থক ছিল। আমি তাঁর কর্মেই অমরত্ব পাবো।
সবাইকে ঈদের শুভেচ্ছা।

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ২৭ শে জুন, ২০১৭ রাত ১২:৫৮

সচেতনহ্যাপী বলেছেন: সব পিতাদেরই কামনাা, সন্তানটি যেন তারই মমত হয়।। এবং স্বাভাবিকই এটা।।
তাই আমরা কষ্ট করলেও চাই, সন্তানরা থাকুক দুধে-ভাতে।।।
আপনার সদ্বিচ্ছায় স্বাগত।।।

২৭ শে জুন, ২০১৭ রাত ৮:৩৬

মঞ্জুর চৌধুরী বলেছেন: ধন্যবাদ।

২| ২৭ শে জুন, ২০১৭ দুপুর ১২:০৭

বিজন রয় বলেছেন: যদি ছেলেকে "মানুষ" বানিয়ে যেতে পারি, তাহলেই বুঝব মানব জন্ম স্বার্থক ছিল। আমি তাঁর কর্মেই অমরত্ব পাবো।

আর যাদের ছেলে নাই শুধু মেয়ে আছে, তাদের বেলায় কি হবে?
সেসব বাবারা কি করবেন?

আমিও চাই আপনার পরবর্তী প্রজন্ম আগে মানুষ হোক। অন্য সব কিছু পরে।

২৭ শে জুন, ২০১৭ রাত ৮:৩৫

মঞ্জুর চৌধুরী বলেছেন: আমার মেয়ে নাই, তাই আমি ছেলের কথা বলেছি, যাদের ছেলে নাই তাঁরা মেয়ের কথা বলবে। যাদের দুইটাই আছে, তাঁরা দুইটার কথাই বলবে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.