নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মঞ্জুর চৌধুরী

আমি ঝন্ঝা, আমি ঘূর্ণি, আমি পথ-সমূখে যাহা পাই যাই চূর্ণি’। আমি নৃত্য-পাগল ছন্দ, আমি আপনার তালে নেচে যাই, আমি মুক্ত জীবনানন্দ। আমি হাম্বার, আমি ছায়ানট, আমি হিন্দোল, আমি চল-চঞ্চল, ঠমকি’ ছমকি’ পথে যেতে যেতে চকিতে চমকি’ ফিং দিয়া দিই তিন দোল; আমি চপলা-চপল হিন্দোল। আমি তাই করি ভাই যখন চাহে এ মন যা, করি শত্রুর সাথে গলাগলি, ধরি মৃত্যুর সাথে পান্জা, আমি উন্মাদ, আমি ঝন্ঝা! আমি মহামারী আমি ভীতি এ ধরিত্রীর; আমি শাসন-ত্রাসন, সংহার আমি উষ্ন চির-অধীর! বল বীর - আমি চির উন্নত শির!

মঞ্জুর চৌধুরী › বিস্তারিত পোস্টঃ

"একদিন আমি বিপদে পড়লে, কেউ না কেউ আমাকেও সাহায্য করবে।"

০৭ ই নভেম্বর, ২০১৭ রাত ১:২৫

অ্যামেরিকা আসতে না আসতেই আমার বৌ অসুস্থ হয়ে হস্পিটালাইজড হলো। হাসপাতালের বিছানায় চারদিন চার রাত্রি যাপন। আমি তাঁর পাশে বসে থাকি। যখন জেগে থাকে তখন গল্প করি। যখন ঘুমায়, তখন আমি গল্পের বই পড়ি। যখন আমার ঘুম পায়, তখন আমি বাড়িতে এসে ঘুমাই। হাসপাতাল বা অপরিচিত স্থানে আমার ঘুম সহজে আসেনা।
সেই হাসপাতাল জীবনের একটি অভিজ্ঞতার কথা বলি।
একদিন দরজায় নক। আমি ভাবলাম ডাক্তার বা নার্স এসেছেন। দেখি স্যুট টাই পড়া এক কৃষ্ণাঙ্গ ভদ্রলোক হাজির। ডাক্তার নার্স কিছু নন সেটা বুঝতে পারছি। ভাবলাম হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কেউ হবেন হয়তো। বিল টিল নিয়ে আলোচনায় বসতে আগ্রহী হয়তো। অ্যামেরিকায় চিকিৎসা খরচ কিন্তু একদম চোয়াল ঝুলিয়ে দেবার মতন এক্সপেন্সিভ। আমার বৌ ঐ চারদিন হাসপাতালের বিছানায় চিকিৎসা নিয়েছে, এজন্য আমরা তিরিশ হাজার ডলারের একটা ইনভয়েস পেলাম। রোগ যদি আরও জটিল হতো, তাহলে বিলের পরিমানও কয়েকগুন বেড়ে যেত।
তো যাই হোক - ভদ্রলোক এসে হাই হ্যালো বললো। রোগীর খোঁজ খবর নিল। ঈশ্বরের গুনগান করলো। যীশু খ্রীষ্টের গুনগান করলো। আমি তালে তালে মাথা নাড়লাম। ঈশ্বরতো আমারই আল্লাহ, যীশুতো আমারই নবী। ওরা মানে আল্লাহর পুত্র, আমার বিশ্বাস সেটা ভুল - এইতো আপাতত পার্থক্য।
তারপর আমাকে জিজ্ঞেস করলো, "তুমি যদি কিছু মনে না করো, তুমি কোন ধর্মের অনুসারী আমি কী জানতে পারি?"
আমি হাসিমুখে বললাম, "ইসলাম। আমরা মুসলিম।"
লোকটার উৎসাহ কেমন যেন দমে গেল মনে হলো। তবু তিনি বললেন, "আমি তোমার স্ত্রীর জন্য প্রার্থনা করতে চাই, যদি তোমার অনুমতি হয়।"
আমি বললাম "অবশ্যই।"
দেখলাম লোকটা তাঁর ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করলেও, আমার আল্লাহর চেয়ে ভিন্ন কেউ মনে হলো না।
"Oh Lord grant her cure, Oh Lord grant her peace, Oh Lord grant her......" এই লর্ডতো আমারও প্রভুই।
প্রার্থনা শেষে লোকটি হাত মিলিয়ে কেবিন থেকে বেরিয়ে গেল। আরও অন্যান্য রোগীদের কাছে যাবে সে।
লোকটার এই ব্যাপারটি আমাকে মুগ্ধ করলো। আমরা যেখানে নিজেদের অসুস্থ পরমাত্মীয়দেরই দেখতে যাবার সময়ে নানান তালবাহানা করি, সেখানে এই লোকটি নিয়মিতই অচেনা নারীপুরুষদের খোঁজ খবর নেন। তাঁদের সুস্থতার জন্য প্রার্থনা করেন।
কেউ কেউ বলবেন, "ওরা আসলে বিভিন্ন মিশনারির হয়ে কাজ করে। এই কাজের জন্য বেতন পায়।" - লোকটা আমাকে যেহেতু কোন মিশনারির কথা বলেননি, বা কোন এজেন্ডা তুলেননি, কাজেই আমি তাঁকে ছোট করতে এই ধরণের কথা বিশ্বাস করতে চাইনা। আর যদি বেতনভুক কর্মচারীও হয়ে থাকে, তাহলে অবশ্যই বলবো এই চাকরি নিয়ে লোকটির গর্ব করা উচিৎ।
এই প্রসঙ্গে অবশ্যই একটি ঘটনা বলার লোভ সামলাতে পারছি না। নবী (সঃ) এক বৈঠকে তাঁর সাহাবীদের সাথে কথোপকথনের এক পর্যায়ে জানতে চাইলেন, "তোমাদের মধ্যে আজ কে অসুস্থ রোগী দেখতে গিয়েছো?"
হজরত আবু বকর হাত তুলে বললেন, "আমি গিয়েছি।"
নবীজি (সঃ) বললেন, "তোমাদের মধ্যে কে আজ মৃতের জানাজা ও দাফনে অংশ নিয়েছ?"
হজরত আবু বকর হাত তুলে বললেন, "আমি।"
নবীজি বললেন, "তুমি জান্নাতে যাচ্ছ।"
তো - ইসলামের একটি আনুষঙ্গিক অঙ্গ হচ্ছে অসুস্থ রোগী দেখতে যাওয়া, যাবার সময়ে ফল ফলাদি নিয়ে যাওয়া, কুশল মঙ্গল জানতে চাওয়া, সুস্থতার জন্য দোয়া চাওয়া। যদি সুস্থ হয়ে যান, তাহলেতো আলহামদুলিল্লাহ। যদি তিনি মারা যান, তাহলে তাঁর দাফন, কাফন, জানাজা ইত্যাদি কাজে অংশগ্রহণ করা। ঐ খ্রিষ্টান ভদ্রলোককে ঠিক তাই করলেন। আমাদের মুসলিম কয়জন এই কাজটা করি? আমাদের দেশে নার্সদের আচরণেই রোগীর ব্লাড প্রেশার কয়েকগুন বেড়ে যাবার কথা। অন্তত আমার নিজেরতো অবশ্যই মাথায় রক্ত উঠে যায়। আমি একজন রোগী, কোন ভাড়াটে খুনি নই - একটু নম্র ভদ্র আচরণ কী আমার প্রাপ্য নয়?
আমরা ফেসবুকে ইসলাম প্রচার করেই দায় সেরে ফেলি। অথবা মসজিদের তাবলীগ জামাত থেকে একদল লোক বাড়ি বাড়ি গিয়ে ধর্ম প্রচার করে থাকেন। এদেরই কাউকে কাউকে আবার দেখি অন্যদের নিচু চোখে দেখতে। মানে, তাঁরা যেহেতু "দাওয়াতে" বেড়িয়েছেন, কাজেই তাঁরা ধরেই নিয়েছেন যে তাঁদের সম্মান আল্লাহর চোখে অনেক বেশি, বিজনেস ক্লাস। সাধারণ মানুষরা ইকোনোমি ক্লাস প্যাসেঞ্জার।
আমি কাউকেই ছোট করতে বলছি না, তবে দাওয়াত প্রচারের একটি অতি শক্তিশালী মাধ্যম হচ্ছে নিজের আচার-আচরণ, স্বভাব চরিত্র, ব্যবহার। আমি দেড়হাত লম্বা দাড়ি রেখে নামাজ পড়তে পড়তে কপাল কালো করে ফেলছি, এদিকে মানুষের সাথে দুর্ব্যবহার করে থাকি, তাহলে আমার চেয়ে বড় ব্যর্থ পুরুষ এই সংসারে খুঁজে পাওয়া কঠিন হবে।
কিছু উদাহরণ দিচ্ছি, বুঝতে পারবেন।
তখন ওয়ালমার্টে কাজ করি। ক্যাশিয়ার। "সেল্ফ চেকআউট" নামের একটি রেজিস্ট্রার আছে ওয়ালমার্টে - যেখানে ক্রেতা নিজেই নিজের কেনা দ্রব্যগুলো স্ক্যান করে মেশিনের সাথে টাকা পয়সার লেনদেন মেটান। এখানে যদি ক্রেতা কিছু স্ক্যান না করেন, এবং ক্যাশিয়ার যদি সেটা লক্ষ্য না করে, তাহলে কারোরই কিছুই করার থাকেনা। কাজেই সেল্ফ চেকআউটে চোরের ভিড় সাংঘাতিক। জ্বি, এদেশেও মানুষেরা প্রচুর চুরি করে। পরে সেসব কাহিনী লেখা যাবে নে।
তো আমি সেল্ফ চেকআউটে ডিউটি দিচ্ছি, এই সময়ে এক কৃষ্ণাঙ্গিনী এসে আমাকে তিরষ্কার করে বললেন, "এই যে আমি মাত্রই এই জিনিষটা স্ক্যান না করে চলে গিয়েছিলাম, তুমি সেটা লক্ষ্য করোনি কেন?"
আমি দেখি জিনিসটা ছোট এবং এর দাম দশ পনেরো ডলার হবে। এরচেয়ে বড় বড় জিনিসের স্ক্যানিংয়ের দিকে আমাদের নজর রাখতে হয়। এত ভিড়ে এই ফালতু জিনিসটা লক্ষ্য রাখা শুধু কঠিনই না, মোটামুটি অসম্ভব কর্মও।
তবুও তাঁর কাছে ক্ষমা চাইলাম। মহিলা সেটা আবার স্ক্যান করে কিনলেন। দাম মেটানোর সময়ে শুনিয়ে দিলেন, "যেহেতু আমি একজন ভাল খ্রিষ্টান কাজেই আমি
চুরি করতে পারিনা। সেই পার্কিং লট থেকে হেঁটে আমাকে আবার আসতে হলো।"
আমি আবারও ক্ষমা চাইলাম, এবং তাঁর সততার জন্য তাঁকে ধন্যবাদ দিলাম।
আমাদের ধর্মে বলা আছে, "এমনভাবে দান করবে, যাতে তোমার বাঁহাত টের না পায় ডান হাত কী দান করেছে।"
আসলে উদাহরণটি দেয়া হয়েছে আপনি যাতে শোঅফ না করেন। শোঅফ যেকোন পুন্য কাজকে ধ্বংস করে দেয়। কিন্তু পুন্য কাজেরও প্রচারের প্রয়োজন আছে। আপনার দেখাদেখি আরও আট দশজন এগিয়ে আসেন, তাহলে অবশ্যই আপনার উচিৎ প্রচার করা। এই মহিলাটি বা উপরের সেই ভদ্রলোকটি আমার মনে গেঁথে দিলেন, সব কালোই চোর না, সব খ্রিষ্টানই ট্রাম্প না।
একবার হাইওয়েতে গাড়ি পাংচার হয়ে গিয়েছিল। স্পেয়ার টায়ারটাও ছিল ফাটা। ভাগ্য ভাল, এক মাইলের মধ্যেই একটি টায়ারের দোকান ছিল। আমি টায়ার খুলে মাথায় তুলে হাঁটা শুরু করলাম। রিম সহ টায়ার কিন্তু ভালই ভারী। সাথে যোগ করুন মাথার উপর মধ্যগগনে টেক্সাসের গমগমে গ্রীষ্মের সূর্য। এবং পাশ দিয়ে সত্তুর মাইল বেগে ছুটে যাওয়া গাড়ির বহর। ভয়াবহ অবস্থা।
দুই মিনিটের মধ্যে আমার সামনে একটি পুরানো মডেলের গাড়ি এসে থামলো। ভিতর থেকে যেই লোকটি আমাকে বললো "এসো তোমাকে দোকানে পৌঁছে দিই" - সেই লোকটিকে প্রথম দর্শনে যে কেউ বলবে, "হোয়াইট ট্র্যাশ।" নোংরা, অপরিষ্কার কাপড় চোপড় পড়া, গাড়িতেও এখানে ওখানে কাগজপত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। হাত ভর্তি ট্যাটু, গালে অনিয়মিত শেভ করায় খাবলা খুবলা দাড়ি। লম্বা চুল। কেউ যদি বলে লোকটা ড্রাগ অ্যাডিক্ট, অবিশ্বাস করার কোন কারনও থাকবে না। কিন্তু এই লোকটিই আমার উপকার করলেন। আমি ধন্যবাদ দিলে স্পষ্ট সাউদার্ন কান্ট্রি উচ্চারনে বললেন, "আমিও যেদিন বিপদে পড়বো - কেউ না কেউ আমাকেও সাহায্য করবে।"
চমৎকার ফিলোসফি!
আমার এক লেসবিয়ান বসের কথা আমি এর আগেও বহুবার বলেছি। যে একবার তাঁর আপন ভাইবোন এবং খালার সাথে চিরতরে সম্পর্কচ্ছেদ করে এসেছিল। কারন ওরা তাঁকে একটি সিক্রেট গ্রূপে যুক্ত করতে চেয়েছিল। গ্রূপের নাম, "আমরা মুসলিমদের ঘৃণা করি।"
বসের জোরালো দাবি ছিল আমি সারা জীবনে তিনটা মুসলিমের সাথে পরিচিত হয়েছি, তিনটাই আমার সাথে কাজ করে, এবং তিনজনের একজনকেও আমি কখনও এমন কিছু করতে দেখিনি যেকারনে আমার মনে হতে পারে ওদের ঘৃণা করা উচিৎ।"
লক্ষ্য করুন, আমরা কাজের সেই তিন মুসলিম কখনই তাঁর সাথে আমাদের ধর্ম নিয়ে আলোচনায় যাইনি। আমরা কেবল আমাদের আচার আচরণে কনসিস্ট্যান্ট থেকেছি, সৎ থেকেছি - বাকিটা সেই মহিলাই বুঝে নিয়েছে।
এই কেবল এই ঘটনা নিয়েই আমি গর্বে বলতে পারি, আমার মানব জন্ম বৃথা যায়নি।
ফেসবুকে ধর্মের নামে হেট স্পীচ ছড়ানোর আগে নিজের দিকে তাকিয়ে দেখুন। আপনার আশেপাশের কয়জন মানুষ আপনার হয়ে নিজের পরিবারের লোকজনদের বিরুদ্ধেও লড়ার প্রস্তুতি নেয়?
কিংবা, আপনারই আপনজনেরা যদি কোন নির্দোষের বিরুদ্ধে উল্টাপাল্টা কথা বলে, আপনি কী সেই অন্যায়ের প্রতিবাদ করেন? কেবল ধর্মভিত্তিকই হতে হবেনা, হতে পারে যে কোন কিছুই। আপনার মা হয়তো আপনার ভাবীর বিরুদ্ধে অন্যায় আচরণ করেছেন, আপনার বৌ অযথাই কাজের মেয়েটিকে মারধর করেছে, কিংবা আপনার সন্তান অন্যায়ভাবে বন্ধুবান্ধবদের সাথে ঝগড়া করছে। তখন আপনার অবস্থান কী হয়?
ঐ জাঙ্কি ভদ্রলোকের ফিলোসফিটা কেবল মনে রাখবেন, "একদিন আমি বিপদে পড়লে, কেউ না কেউ আমাকেও সাহায্য করবে।"

মন্তব্য ৮ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ০৭ ই নভেম্বর, ২০১৭ রাত ৩:৪১

বিচার মানি তালগাছ আমার বলেছেন: খুব সুন্দর লিখেছেন। আমাদের আচরণ আমাদের ধর্মীয় ও জাতীয় পরিচয় প্রকাশ করবে...

৩০ শে ডিসেম্বর, ২০১৭ ভোর ৪:০৩

মঞ্জুর চৌধুরী বলেছেন: সত্যি।

২| ০৭ ই নভেম্বর, ২০১৭ সকাল ১০:২৮

রুরু বলেছেন: ভালো লাগলো কথা গুলো।

৩০ শে ডিসেম্বর, ২০১৭ ভোর ৪:০৩

মঞ্জুর চৌধুরী বলেছেন: ধন্যবাদ

৩| ০৭ ই নভেম্বর, ২০১৭ বিকাল ৩:১৮

রাজীব নুর বলেছেন: গুড জব।

৩০ শে ডিসেম্বর, ২০১৭ ভোর ৪:০৩

মঞ্জুর চৌধুরী বলেছেন: :)

৪| ১০ ই নভেম্বর, ২০১৭ রাত ১২:৫৮

এইচ তালুকদার বলেছেন: অসাধারন

৩০ শে ডিসেম্বর, ২০১৭ ভোর ৪:০৩

মঞ্জুর চৌধুরী বলেছেন: থ্যাংক ইউ :)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.