নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মঞ্জুর চৌধুরী

আমি ঝন্ঝা, আমি ঘূর্ণি, আমি পথ-সমূখে যাহা পাই যাই চূর্ণি’। আমি নৃত্য-পাগল ছন্দ, আমি আপনার তালে নেচে যাই, আমি মুক্ত জীবনানন্দ। আমি হাম্বার, আমি ছায়ানট, আমি হিন্দোল, আমি চল-চঞ্চল, ঠমকি’ ছমকি’ পথে যেতে যেতে চকিতে চমকি’ ফিং দিয়া দিই তিন দোল; আমি চপলা-চপল হিন্দোল। আমি তাই করি ভাই যখন চাহে এ মন যা, করি শত্রুর সাথে গলাগলি, ধরি মৃত্যুর সাথে পান্জা, আমি উন্মাদ, আমি ঝন্ঝা! আমি মহামারী আমি ভীতি এ ধরিত্রীর; আমি শাসন-ত্রাসন, সংহার আমি উষ্ন চির-অধীর! বল বীর - আমি চির উন্নত শির!

মঞ্জুর চৌধুরী › বিস্তারিত পোস্টঃ

আমি যখন ঐন্দ্রিলা

৩১ শে ডিসেম্বর, ২০১৭ ভোর ৫:০০


তখন মাত্রই অ্যামেরিকায় এসেছি। হাই ফাইভে একটা একাউন্ট খুলে রেখেছিলাম, ব্যবহার করতাম না। ফেসবুক তখন নতুন ফেনোমেনা, এতেই সবার সাথে যোগাযোগ রাখি। তিন্নির সাথে তখন মাত্রই ভালোবাসাবাসি শুরু হয়েছে। এই সময়ে তিন্নি কথায় কথায় বলল অমুক নামের এক পিচ্চি ছেলে বড্ড যন্ত্রনা করছে।
প্রেমিক পুরুষ মাত্রই পজেসিভ হয়ে থাকে। নিজের প্রেমিকার আশেপাশে মাছির ভনভন তাঁর সহ্য হবে কেন? আমি জিজ্ঞেস করলাম, "কী করে?"
"শুধু ফ্রেন্ডশিপ করতে চায়। বলে কথা বলবো। দেখা করবো। লাঞ্চ করবো, এইসব আর কি। বলেছি যে আমি তোমার চেয়ে বয়সে তিন বছরের বড়, তখন বলে, "আমিতো আপনার সাথে প্রেম করছি না। শুধু ফ্রেন্ডশিপ করতে গেলে বয়স আসছে কোত্থেকে?""
কথা হচ্ছে, এই ধরণের লুলা পাবলিক আমার ভালোই পরিচিত। "ফ্রেন্ডশিপ" করতে চাই বলে আসে, তিনদিন পরে প্রেমিক হতে চায়। ম্যায়নে পেয়ার কিয়া সিনেমার একটি বিখ্যাত ডায়লগ ছিল, "এক লাড়কা অর এক লাড়কি কাভি দোস্ত নেহি হো সাক্তি।" মানে বিষমকামী কোন পুরুষ বা নারী যদি প্রিএঙ্গেজড না থাকে, অথবা অন্য কারোর সাথে প্রেম করার দিকে মন ফোকাস্ড না থাকে, তাহলে তাঁদের "জিগরি দোস্ত" হবার সম্ভাবনা খুব কম। প্রেম হবেই। এই ছেলে ঐ চান্সই খুঁজছে।
তিন্নি ছেলেটাকে দূর দূর করেও তাড়াতে পারছেনা। ঝুলে আছে। তখন ফেসবুকে ব্লক কিভাবে করতে হয় সেটা সে জানতো না। অথবা অপশনই ছিল না।
"কী করা যায় বলতো?"
আমি এর আগেও তাঁর এইরকম বহু কেস হ্যান্ডেল করেছি। একবারতো একটা সাইকোকেও (স্টকার, প্রতিদিন মিরপুর থেকে মহাখালী এবং মহাখালী থেকে মিরপুর পর্যন্ত পিছু নিত, রাতবিরাতে ফোন করতো, নিজেকে ডরের শাহরুখ খান না করতো ইত্যাদি) ট্যাকল করতে হয়েছিল। এইসব আমার কাছে ততদিনে দুধভাত।
আমি বললাম, "ঠিক আছে, ব্যবস্থা নিচ্ছি।"
বুঝতে পারছিলাম গর্ধবটার হৃদনগরীতে অনাবৃষ্টি চলছে। যেখানে নারীর গন্ধ পাচ্ছে সেখানেই লকলকে জিভ নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। একে যদি একটি মেয়ের সাথে বেঁধে দিতে পারি, তাহলে এ আর যন্ত্রনা করবে না।
আমি তখন "ঐন্দ্রিলা" নামের একটা ফেসবুক একাউন্ট খুললাম। হাইফাইভ থেকে বাঙালির মতন দেখতে এমন সুন্দরী এক বিদেশিনীর বেশ কয়েকটা ছবি নিলাম। Random কিছু ছেলেমেয়েকে বন্ধু বানালাম।
তারপর ছেলেটাকে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠালাম। ব্যাটা হা করেই ছিল। টোপ গিলতে সময় নষ্ট করলো না।
ব্যস, ইনবক্স ভরে গেল ম্যাসেজে। কে আমি, কী করি, কোথায় থাকি ইত্যাদি।
আমিও তখন বাঙালি ছেলেদের ড্রিম গার্ল হয়ে গেলাম। আমি ঐন্দ্রিলা, এ লেভেল পরীক্ষা দেব, গুলশানে থাকি, এবং আমার বাবার নাম বললাম না, কারন আমার বাবাকে এক নামে পুরো বাংলাদেশ চিনে।
ছেলেটাতো তখন নিজেকে একদম হুমায়ূন আহমেদের গরিব বেকার নায়ক ভাবা শুরু করেছে যার প্রেমে অপ্সরী আছাড় খেয়েছে। ঝুলাঝুলি করতে লাগলো আমার বাবার নাম তাকে বলতেই হবে।
আমি খুব পার্ট নিয়ে কথা বলি তখন। মোটেও পাত্তা দেইনা। ও আচ্ছা, ভাল কথা, প্রোফাইলে শুরুতেই আমি ছবি দেই নাই। আমাকে যখন দেখার জন্য ঝুলাঝুলি করছিল, তখনই হাই ফাইভ থেকে ঐ বিদেশিনীর ছবি খুঁজে বের করেছিলাম। তার আগে এক সপ্তাহ ছেলেটাকে ঝুলিয়েছি। বলেছি, "আমি আমার ছবি দেখাতে চাইনা। ছেলেরা আমার সাথে ফ্রেন্ডশিপ করতে পারেনা। প্রেমে পরে যায়। আমি শিওর, তোমাকে ছবি দেখালে তুমিও আমার প্রেমে পরে যাবে। আমি সেটা চাই না।"
"না না, আমি কথা দিচ্ছি, আমি তোমার প্রেমে পড়বো না। প্রেম এত সস্তা নাকি?"
"তাহলে ছবি দেখে কী করবে? আমি চাই কেউ আমাকে ভালবাসলে আমাকেই বাসুক, আমার রূপকে নয়।"
ছেলেটা রীতিমতন হাতে পায়ে ধরে আমার কাছ থেকে ছবি আদায় করেই ছাড়লো। এবং আমি নিশ্চিত, সেই রাতে আনন্দে তার ঘুম হয়নি। আকাশের পরী নেমে এসেছে তার ফুটা চালের বাড়িতে। এখন তাকে পায় কে?
অথচ মুখে বলল, "না, আমার কিন্তু তোমাকে অতটাও সুন্দরী মনে হয়নি। বরং তোমার মনটা আমার কাছে অনেক ভাল লাগে।"
আমি মনে মনে বলি, "আর তুমি একটা ছাগল চান্দু! ফেসবুকের ইনবক্সের কথাবার্তায় মন দেইখা ফেললা?"
যাই হোক, বেচারা অনেকদিন ঝুলে ছিল আমার সাথে। "আজ আমি তোমার সাথে দেখা করবোই। আমি নাভানা টাওয়ারে থাকবো বিকাল চারটা থেকে ছয়টা পর্যন্ত। তোমাকে আসতেই হবে।"
আমি বললাম, "আমি একদমই আসতে পারবো না। ড্যাডি আজ রাতে সিঙ্গাপোর যাচ্ছে, আমি তাঁর সাথে সময় কাটাবো।"
"বাবা" ডাকে ছেলেরা যত না পটে, মেয়ের মুখে "ড্যাডি" ডাকটা শুনলে তাদের আথারিপাথাড়ি অবস্থা হয়ে যায়। আমি তখন একে ফর্টিসেভেন নিয়ে নেমেছি, ছেলেটা বুক পেতে দিয়েছে ঝাঁঝরা হতে।
"আমি তারপরেও থাকবো।"
এবং যখন আমি যাইনা, রাতে ম্যাসেজ আসে, "তুমি এলে না? আমি কিন্তু তোমার অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে ছিলাম পাক্কা দুইটা ঘন্টা।"
আমি বলি, "I told you I can't come."
"কবে দেখা করবে আমার সাথে হে রহস্যকন্যা!"
আমার সাথে তখন ছেলেটার যতবার যোগাযোগ হতো, তিন্নির সাথে তাঁর অর্ধেকও হতো না। তারেক অবাক হয়ে ভাবে, একটা ছেলের সাথে এইভাবে আমি কিভাবে প্রেম চালিয়ে যাচ্ছি! আমি বলি, "প্রেমতো করছি না, নাকে দড়ি দিয়ে ঘুরাচ্ছি।"
"ছেলেটা এত সহজেই ঘুরছে?"
"ছেলেরা এত সহজেই ঘুরে।"
যাই হোক, আমার সাথে প্রেমে ব্যস্ত হয়ে যাওয়ায় সে আর তিন্নিকে যন্ত্রনা করলো না। ছেলে ভাল ছিল। একটা মাত্র হৃদয় বহু নারীকে দিয়ে বেড়ায়নি। তিন্নির জীবন থেকে একটা আপদ বিদায় নিল।
আজ এতদিন পরে এই লেখাটা লিখলাম কারন আমাদের এডমিন প্যানেলের একজন সদস্যা সম্প্রতি এমন একজনের শিকার হয়েছেন। "উদ্দেশ্যহীন চ্যাট করতে চাই।" "আচ্ছা, এমন যদি হয় আপনাকে আমার খুব পছন্দ কিন্তু সামনাসামনি এপ্রোচ করতে পারছি না" টাইপ কথাবার্তা। তখন আমার মনে পড়ে গেল সেই স্মৃতি। বেচারা, যেদিন আমি বলেছিলাম আমি আসলে ঐন্দ্রিলা না, মঞ্জুর, তখন বেচারা প্রথম কয়েক ঘন্টা বিশ্বাসই করতে পারছিল না।
"এমন রসিকতা করছো কেন তুমি? আমি কী কোন অন্যায় করেছি যে তুমি শাস্তি দিতে চাচ্ছ? যা খুশি তাই করো, কিন্তু আমাকে তোমার জীবন থেকে তাড়িয়ে দিও না।"
বেচারা, আমার মনে হয় এই ঘটনার পর সে নিজের বউকেও মাঝে মাঝে সন্দেহের চোখে দেখে, শাড়ির আড়ালের মানুষটা পুরুষ নাতো?
লুলা পাবলিকদের সাথে এই থেরাপি দিয়ে দেখতে পারেন। ১০০% কাজে আসে। পরীক্ষিত এবং প্রমাণিত। :)

মন্তব্য ৮ টি রেটিং +৫/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ৩১ শে ডিসেম্বর, ২০১৭ ভোর ৫:৪৭

অাব্দুল্লাহ অাল কাফি বলেছেন: আপনার লেখা পড়েও তো এখন সন্দেহ লাগে।আমরা আপনার এমন শিকারে পরিনত হব না তো আবার?

২| ৩১ শে ডিসেম্বর, ২০১৭ ভোর ৫:৫৮

শায়মা বলেছেন: ভাইয়া সাত সকালে হাসতে হাসতে মরেই গেছি। তবে ভাবছি তুমি যখন ঐন্দ্রিলার মত আমি যখন ঐন্দ্রিল বা নিজেই নিজের হাসব্যান্ড সে ঘটনাটাও লিখবো কিনা! :P

৩| ৩১ শে ডিসেম্বর, ২০১৭ ভোর ৬:৪৫

সোহানী বলেছেন: হাহাহাহাহাহা..................... আমি হাসতে হাসতে ফিট। আগে পোলাপান বেকুব ছিল তাই পারছেন এমন দড়ি পড়াইতে এখন এইগুলা বহুত চাল্লু....... এই থেরাপী ব্যাকডেটেড।

৪| ৩১ শে ডিসেম্বর, ২০১৭ সকাল ৭:২৫

সৈয়দ ইসলাম বলেছেন: পরীক্ষিত ভাই পরীক্ষিত।
হা হা হা হা হা হা হা মজা পেলুম। ধন্যবাদ।

৫| ৩১ শে ডিসেম্বর, ২০১৭ সকাল ১০:১২

রাজীব নুর বলেছেন: আপনি অনেক দুষ্ট।

৬| ৩১ শে ডিসেম্বর, ২০১৭ বিকাল ৫:৫৯

রাসেল ০০৭ বলেছেন: এটা কি ফেসবুকের পোস্ট ছিলো?
এডমিন প্যানেল ফ্যাক্ট। :)

৭| ০২ রা জানুয়ারি, ২০১৮ বিকাল ৫:৩০

মোস্তফা সোহেল বলেছেন: মজার ঘটনা।পড়ে ভাল লাগল।
এদেশে লুল পাবলিকের অভাব নাই।

৮| ০২ রা জানুয়ারি, ২০১৮ রাত ১১:২২

জুনায়েদ বি রাহমান বলেছেন: প্রমাণিত!

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.