নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মঞ্জুর চৌধুরী

আমি ঝন্ঝা, আমি ঘূর্ণি, আমি পথ-সমূখে যাহা পাই যাই চূর্ণি’। আমি নৃত্য-পাগল ছন্দ, আমি আপনার তালে নেচে যাই, আমি মুক্ত জীবনানন্দ। আমি হাম্বার, আমি ছায়ানট, আমি হিন্দোল, আমি চল-চঞ্চল, ঠমকি’ ছমকি’ পথে যেতে যেতে চকিতে চমকি’ ফিং দিয়া দিই তিন দোল; আমি চপলা-চপল হিন্দোল। আমি তাই করি ভাই যখন চাহে এ মন যা, করি শত্রুর সাথে গলাগলি, ধরি মৃত্যুর সাথে পান্জা, আমি উন্মাদ, আমি ঝন্ঝা! আমি মহামারী আমি ভীতি এ ধরিত্রীর; আমি শাসন-ত্রাসন, সংহার আমি উষ্ন চির-অধীর! বল বীর - আমি চির উন্নত শির!

মঞ্জুর চৌধুরী › বিস্তারিত পোস্টঃ

তাঁর কাছে প্রার্থনা করি, লাখ লাখ নির্দোষের রক্তে যাদের হাত রাঙা হয় প্রতিদিন, জাহান্নামের সর্বনিম্ন স্তরেই যেন তাদের স্থান হয়।

০২ রা মার্চ, ২০১৮ রাত ২:০৯

আমার ছেলেটা সারাদিন ডে কেয়ারে থাকে। সেখানে তাঁর যতই আদরযত্ন হোক না কেন. দিনশেষে আমি যখন যাই ঝাঁপ দিয়ে আমার কোলে উঠে তাঁর বেবিসিটারকে হাত নেড়ে হাসিমুখে বলে "বাই যুযু!"
সে তাঁর বেবিসিটার দাদুকে "যুযু" ডাকে।
আমার অফিস থেকে বাসার পথ চল্লিশ মাইল, পুরোটা সময় সে গাড়ির পেছনে কারসিটে বসে আনন্দে থাকে। তাঁর বাবা মা দুইজনই তাঁর সাথে আছে, আনন্দ করবে নাই বা কেন?
বাড়ি ফিরে তাঁকে যেন কেউ রেডবুল খাইয়ে দেয়। আস্ত বাড়ি মাথায় তুলে ফেলে। তাঁর সাথে তখন খেলতে হবে, আমাদের সারাদিনের ক্লান্তি, বাড়ির কাজ কারবার কোন কিছুই কোন বাহানা নয়।
রাতে ঘুমাবে আমাদের মাঝে। মাঝরাতে যদি তাঁর ঘুম ভাঙে, তখন একবার তাঁর মাকে চুমু খাবে, একবার আমাকে। এবং সাথে সাথে ডাকবে, "বাবা" "বেবি"। সে তাঁর মাকে পাঞ্জাবিদের মতন বেবি ডাকে (ওরা ডাকে বেবে)। কেন ডাকে সেই জানে। ও এখন পর্যন্ত কোন পাঞ্জাবির ধারে কাছেও যায়নি।
প্রতিবার রাত তিনটা-চারটার দিকে সে ঘুম থেকে উঠে যাচ্ছে। এবং বাধ্য করছে আমরাও যেন আর ঘুমাতে না পারি। বিরক্তি লাগবার কথা। কিন্তু বিরক্তি আসেনা। বরং নিজেকে খুব ভাগ্যবান মনে হয়। কেন জানেন? বলছি, তার আগে একটা মানুষের জীবনের চরম নাটকীয়তার কথা বলি।
একজন লোকের ঘটনা শুনেছিলাম। নিজের দেশে তিনি আস্ত একটি রাস্তার মালিক ছিলেন। মানে সেই রাস্তার দুপাশে যত বাড়িঘর দোকানপাট সব ছিল তাঁর। কোটিপতি বললেও কম বলা হবে। সুখের সংসার ছিল। এখন তিনি শরণার্থী হিসেবে ভিনদেশে আশ্রয় নিয়েছেন। একটা সময়ে তিনি নিজে শত শত মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দিয়েছিলেন, এখন তিনি নিজেই কাজ খুঁজে পাননা। তাঁর পরিবার একবেলা খায় তো দুইবেলা উপোষ থাকে। তাঁর আত্মীয় স্বজন বন্ধুবান্ধব কে কোথায় হারিয়ে গেছে তিনি জানেন না। অনেকেই মারা গেছেন তাঁর চোখের সামনেই। জীবনের চরম নাটকীয় মোড়ে তিনি ট্রাজেডির শিকার হয়ে গেছেন। এখন কেবল ভালোয় ভালোয় মরতে পারলেই তিনি সুখী। শেষ দৃশ্যে যবনিকাপাত, নাটক সমাপ্তি। দর্শকের তালি!
বলছি একজন সিরিয়ান রিফিউজির কথা। হাজারে হাজারে রিফিউজির হাজারে হাজারে গল্প। প্রতিদিন আরও লাখে লাখে এমন গল্প রচিত হচ্ছে। দুই মৃত সন্তানকে বুকে জড়িয়ে ধরে কাঁদছে পিতা, ছোট্ট মেয়েকে কোলে তুলে ছুটছেন পিতা - দুজনের কণ্ঠ থেকেই বেরুচ্ছে হাহাকার! ছোট ভাইকে নিঃশ্বাস নেবার সুযোগ করে দিতে গিয়ে নিজে বিষাক্ত গ্যাসসেবনে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লো বড় বোন। অথচ কিছুদিন আগেও তাঁদের একটি শান্ত সুন্দর দেশ ছিল। সবকিছুই স্বাভাবিক ছিল। এখন মনে হয় সেসব অন্য কোন জন্মের কথা! এই জন্ম কেবলই দুঃস্বপ্নময়!
আমি কী নিয়ে বিরক্ত হবো? আমার ছেলে রাত তিনটায় চুমু দিয়ে আমার ঘুম ভাঙ্গায় বলে? আমাদের চরম সৌভাগ্য আমাদের জীবনের নাটক এখনও ট্রাজেডির মোড় নেয়নি। আমাদের বাচ্চারা এখনও আমাদের কোলেই ঘুমায় এবং আমাদের চিন্তা করতে হয়না কখন না জানি আকাশ থেকে বোমা এসে তাঁদের দ্বিখণ্ডিত করে দেয়! এখনতো নিঃশ্বাসেও বিষ মিশিয়ে হত্যাযজ্ঞ চালানো হচ্ছে। ভবিষ্যৎ পৃথিবী আরও অনেক ব্যাপক বিধ্বংসী মারণাস্ত্র নিয়ে তৈরী হবে। কেয়ামতের জন্য স্রষ্টার হুকুমের অপেক্ষা করতে হবে কেন? কেয়ামততো মানুষ সঙ্গে নিয়েই ঘুরছে। এইমুহূর্তে পৃথিবীতে যতটুকু পারমাণবিক বোমা মজুত আছে, তা দিয়ে আস্ত পৃথিবী পিষে, মুচড়িয়ে, গুড়িয়ে দেয়া একদম ওয়ানটু! তারপরেও আরও অস্ত্র চাই! আরও যুদ্ধাস্ত্র বানাও। সেসব বিক্রি করো। আরও যুদ্ধ চাই। তাহলে আরও অনেক কাস্টমার পাওয়া যাবে।
একটা বুলেট কিনতে প্রয়োজন হয় তিনশো টাকার, একটি রুটির দাম দশ টাকাও না। কিন্তু ক্ষুধার্তের হাতে রাইফেল ধরিয়ে বলা হয় ছিনিয়ে নে তোর খাবার। এবং ক্ষুধার যন্ত্রনায় অন্ধ লোকটি তখন কিই বা করবে? বিচিত্র এই বিশ্ব রাজনীতি!
মানুষ মরছে আরাকানে, ইয়েমেনে, ফিলিস্তিন, সিরিয়ায়। মানুষ মরছে বিশ্বব্যাপী। যেখানে যুদ্ধ নেই, সেখানেও শিশু মৃত্যু থেমে নেই। খোদ অ্যামেরিকাতেই কয়েক মাস পরপর স্কুলে ঢুকে গুলি করে শিশু হত্যা চলছে। ভারতেইতো একদল উন্মাদ এক সিনেমার উপর বিক্ষোভ দেখাতে গিয়ে স্কুল বাসে বোমা মেরে বসেছে।ওদের হাতে মেশিনগান দিলে কী করতো বুঝতে পারছেন?
একদল ক্ষমতালোভী অন্ধ রাজনীতিবিদের লোভের লালসার শিকার হচ্ছে লাখে লাখে শিশু। হয় নিজেরা মরে যাচ্ছে। আর বেঁচে গেলেও এতিম হচ্ছে। কিছুদিন আগে মসজিদে শুনেছিলাম ইয়েমেনের পাঁচ লাখের উপর এতিম শিশু আছে যারা অতি সম্প্রতি বাবা মা হারিয়েছে। যদি আমাদের মধ্যে কেউ কেউ একেকজন শিশুর ভরণপোষণের দায়িত্ব নিতে পারেন তাহলে অনেক উপকার হয়। পাঁচ লাখ শিশু! আমি যুবক বয়সে এসে বাবাকে হারিয়ে মনে হয়েছিল আমার পৃথিবী উজাড় হয়ে গেছে, সেখানে এরা শৈশব থেকেই জানেনা পিতার কোলে ঝাঁপিয়ে পড়ার আনন্দটা কী!
আমাদের করার কিছুই নেই? ফেসবুকে দুই চার কথা লিখে, শেয়ার দিয়ে আমরা কিই বা করতে পারবো? দুই চার পয়সা সাহায্য পাঠিয়েই বা কি এমন পরিবর্তন হয়ে যাবে? আজকে আমরা দশটা এতিম শিশুর দায়িত্ব নিলাম, অন্যদিকে ওরা আরও বিশজন এতিম বানাবে, চল্লিশকেতো মেরেই ফেলবে!
কিন্তু এছাড়া আর কিই বা করার আছে? Rally, সভা, সেমিনার, প্রতিবাদপত্র, বিক্ষোভ ইত্যাদির প্রয়োজন আছে। নাহলে ঐসমস্ত নরপশুরা জানবে কিভাবে লোকজন তাদের উপর চটছে। কিন্তু তারা কী এর থোরাই পরোয়া করে?
স্রষ্টাকে বিচার দিব? তিনিতো নিজেইতো দেখছেন। সবই তাঁর "বৃহৎ পরিকল্পনার" অংশ। আমাদের মাথায় ঢুকবে না ওসব। মুসা (আঃ) নবীর সাথে খিজিরের ঘটনাটা মনে নেই?
আল্লাহ বলেছেন এই পৃথিবী নিয়ে বেশি চিন্তিত না থাকতে, তিনি যার যার পুরষ্কার ওপারের চিরস্থায়ী ভুবনে বুঝিয়ে দিবেন। এবং যার যার শাস্তি, সেও সেটা পাবে। নিশ্চই পাবে। তিনিই বলেছেন অণু পরমাণু পরিমান কুকীর্তিরও হিসেব তিনি নিবেন। তিনি শুধু পাপীদের সুযোগ দিয়ে যাচ্ছেন যদি তারা পথে ফিরে!
তাহলে তাই হোক। তাঁর কাছে প্রার্থনা করি, লাখ লাখ নির্দোষের রক্তে যাদের হাত রাঙা হয় প্রতিদিন, জাহান্নামের সর্বনিম্ন স্তরেই যেন তাদের স্থান হয়। এবং কেবল পরকালই নয়, তাদের শাস্তি যেন ইহকাল থেকেই শুরু হয়। মরে যাওয়া স্বজনের বেঁচে যাওয়া আত্মীয়রা দেখে যাক তাঁদের হত্যাকারীদের কী পরিণতি হয়।
এবং দোয়া করি, আমরা যেন কখনই এমন কঠিন পরিস্থিতির শিকার না হই।

মন্তব্য ৫ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৫) মন্তব্য লিখুন

১| ০২ রা মার্চ, ২০১৮ সকাল ৭:৪২

হাসান কালবৈশাখী বলেছেন:
পাকিস্থানে, আফগানিস্থানে গির্জায়-মসজিদে প্রার্থনায় অগনিত মানুষ গুলি বোমায় মারা গেলেও মুমিন শ্রেণীরা চুপ ছিল।
আরবে আমাদের হাজার হাজার নারী শ্রমিকেরা ধর্ষিত
ইরাক, সিরিয়ায় গত দুতিন বছর লক্ষ লক্ষ মানুষ মরছে, সেখানে পশুর মতো মানুষকে জবাইকরে হত্যা করা হচ্ছিল, কারো কোন বিকার দেখিনি। ব্রিটেন ও জার্মানীতে জঙ্গিরা গুলি চাপাতি ট্রাক চাপাদিয়ে অনেক নিরিহ মানুষ মেরে ফেলার পরেও এদেশের বেশিরভাব মুমিন মানবতাবাদীরা খুনিদের প্রতি সহানুভূতিশীল ছিলেন।

কিন্তু এখন আইএস জেহাদিরা সিরিয়াতে কোনঠাসা হয়ে পরাজয় নিশ্চিত হয়ে যাওয়ার পর জেহাদি মুমিনদের দরদ উথলে উঠছে। ফটোশপও সুরু হয়ে গেছে।

২| ০২ রা মার্চ, ২০১৮ সকাল ৮:০৩

আবু সায়েদ বলেছেন: হাসান কালবৈশাখী বলেছেন:
পাকিস্থানে, আফগানিস্থানে গির্জায়-মসজিদে প্রার্থনায় অগনিত মানুষ গুলি বোমায় মারা গেলেও মুমিন শ্রেণীরা চুপ ছিল।"

--কথা ঠিক না। নিরীহ লোক মারা কখোনই মুমিন সমর্থন করে না।


হাসান কালবৈশাখী বলেছেন: "কিন্তু এখন আইএস জেহাদিরা সিরিয়াতে কোনঠাসা হয়ে পরাজয় নিশ্চিত হয়ে যাওয়ার পর জেহাদি মুমিনদের দরদ উথলে উঠছে। ফটোশপও সুরু হয়ে গেছে।"

--সিরিয়ায় গুতায় সধারন আসাদ-বিরোধিরা মরছে। এদের সাথে আই এস এর কোন ব্যাপার নেই। আর এ গনহত্যাকে 'ফটশপ' বলে চালিয়ে দিয়ে হালকা করার কারন নাই।

হাসান কালবৈশাখী বলেছেন: "ইরাক, সিরিয়ায় গত দুতিন বছর লক্ষ লক্ষ মানুষ মরছে, সেখানে পশুর মতো মানুষকে জবাইকরে হত্যা করা হচ্ছিল, কারো কোন বিকার দেখিনি। ব্রিটেন ও জার্মানীতে জঙ্গিরা গুলি চাপাতি ট্রাক চাপাদিয়ে অনেক নিরিহ মানুষ মেরে ফেলার পরেও এদেশের বেশিরভাব মুমিন মানবতাবাদীরা খুনিদের প্রতি সহানুভূতিশীল ছিলেন।"

--এ কথাও ঠিক না। পাশ্চিমাদের ভুল বিশ্ব- রাজনীতী এর জন্য দ্বায়ী। জঙ্গি এমনি এমনিতেই হয় না। জঙ্গী কারা বানাচ্ছে, সেটাও দেখেন। আবার, পরিস্থিতির কারনেই অনেকে অস্ত্র হাতে নিতে বাধ্য হয়, যেমন ৭১ সালে আমরা নিয়েছি, তাই বলে আমরা কি জঙ্গি?


১৩ ই মার্চ, ২০১৮ রাত ১০:০৯

মঞ্জুর চৌধুরী বলেছেন: ভাল বলেছেন ভাই। আমিও এই কথাগুলোই বলতে চেয়েছিলাম।

৩| ০২ রা মার্চ, ২০১৮ সকাল ৮:২৬

প্রথম বাংলা বলেছেন: ধর্ম এবং রাজনীতি সব এখন খমতার চাবিকাঠি হয়ে গেছে। মধ্যপ্রাচ্যে চলছে তেলের রাজনিতি আর ক্ষমতার লড়াই। এতে দাবারগুটি হলো ধর্ম। এইসব গুটি নিয়ে খেলছে আমেরিকা এবং সৌদিআরব। ইরাকে তারা সাদ্দামকে মেরে শিয়াদের ক্ষমতায় এনেছে। এখানে তারা আইএস মারছে। আবার সিরিয়ার তারা আইএস দিয়ে আসাদকে ক্ষমাতাচ্যুত করার চেষ্টা করছে। অর্থ এবং অস্থ সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে। সৌদি নিজেও জানেনা মরুরর দাবায় তারাও একটি গুটি।

৪| ০২ রা মার্চ, ২০১৮ বিকাল ৪:২১

রাজীব নুর বলেছেন: প্রিথিবীর মধ্যে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ গুলোই যত অশান্তির কারন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.