নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মঞ্জুর চৌধুরী

আমি ঝন্ঝা, আমি ঘূর্ণি, আমি পথ-সমূখে যাহা পাই যাই চূর্ণি’। আমি নৃত্য-পাগল ছন্দ, আমি আপনার তালে নেচে যাই, আমি মুক্ত জীবনানন্দ। আমি হাম্বার, আমি ছায়ানট, আমি হিন্দোল, আমি চল-চঞ্চল, ঠমকি’ ছমকি’ পথে যেতে যেতে চকিতে চমকি’ ফিং দিয়া দিই তিন দোল; আমি চপলা-চপল হিন্দোল। আমি তাই করি ভাই যখন চাহে এ মন যা, করি শত্রুর সাথে গলাগলি, ধরি মৃত্যুর সাথে পান্জা, আমি উন্মাদ, আমি ঝন্ঝা! আমি মহামারী আমি ভীতি এ ধরিত্রীর; আমি শাসন-ত্রাসন, সংহার আমি উষ্ন চির-অধীর! বল বীর - আমি চির উন্নত শির!

মঞ্জুর চৌধুরী › বিস্তারিত পোস্টঃ

রনির বাচ্চাদের সমাজচ্যুত করা

১২ ই জুন, ২০১৮ রাত ১:৫৭

কিছুদিন আগে মাশাল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ বলে ছবিসহ একটা পোস্টে জানিয়েছিলাম যে আপনাদের সবার সহযোগিতায় আরেকটি শিশুর হৃদপিন্ডে সফল অস্ত্রোপচার হয়েছে, হার্টের ছিদ্রটি বন্ধ হয়েছে, এবং সে এখন সুস্থ আছে।
এক আপু ইনবক্সে জানালেন তাঁর বাচ্চারও ছোটবেলায় এই সমস্যা ছিল। দুই বছর বয়সে অপারেশন হয়েছিল, এবং ছেলেটি এখন সুস্থ আছে। তবে নিজের বুকে সেলাইয়ের দাগটির কারনে সে খুব হীনমন্যতায় ভোগে। কারোর সাথে সহজভাবে মিশতে চায়না, এবং এই দাগের কারনে প্রায়ই ডিপ্রেসড থাকে।
আমি তাঁকে জানালাম যে আমার নিজের গালে একটা জন্মদাগ আছে, এটি মানুষ দেখতে পারে, এবং এই কারনে আমাকে অনেক কথাও শুনতে হয়েছে। কিন্তু আমার জীবন সেজন্য থেমে থাকেনি। বললাম শিশুটিকে বুঝাতে যে জীবন অনেক বড়, অনেক ব্যাপক এবং মহান - তুচ্ছ দাগ নিয়ে চিন্তা করে নষ্ট করার মতন সময় নেই।
তিনি বললেন, "ঠিক আছে, আমি তাঁকে বলবো আপনার কথা।"
তারপর মহিলা বোমা ফাটালেন।
"ওর বন্ধুর মায়েরা প্রায়ই ওকে বলে বুকের জামা সরিয়ে অপারেশনের দাগ দেখাতে। এই বিষয়টাই ওর পছন্দ না, কিন্তু কেউই বুঝতে চায় না।"
আমি বুঝতে পারলাম সমস্যাটার মূল কোথায়। এই মহিলাদের আলগা কৌতূহল। কেনরে বাপ, তোর বাপের কী? ঐ ছেলের বুকে অপারেশনের দাগ দেখে গবেষণা করে তুই কী এমন নোবেল পুরষ্কার জিতে যাবি? উল্টা তোর মুখভঙ্গি এমন হবে যে শিশুটি ধরেই নিবে সে আর আট দশটা বাচ্চা থেকে ভিন্ন। নাহলে সবাই তাঁর দাগ দেখতে আগ্রহী কেন? নিশ্চই দাগটা খারাপ। ক্ষেত্রবিশেষে ধরে নিবে সে অভিশপ্ত।
ভদ্রমহিলা ক্যান্টনমেন্টে থাকেন। আমরা জানি যে অলি গলি বস্তির মানুষ ক্যান্টনমেন্টে থাকেনা। কাজেই ধরেই নেয়া যায় সমাজের একটি শিক্ষিত, সভ্য, ভদ্রপল্লীতে শিশুটি বড় হচ্ছে। সেখানেই তাঁর সাথে চলছে এই মানসিক বর্বরতা, এই শিশু যাবে কোথায়?
হুমায়ূন আহমেদের দুই ছেলেকে নিয়ে শাওন এসেছিল ডালাসে বেড়াতে। উঠেছিল আমাদের ফরহাদ ভাইয়ের বাসায়। শাওনকে বললাম তাঁর দুই সন্তানের সাথে ছবি তুলতে চাই। প্রিয় সাহিত্যিকের রক্ত বইছে দুই শিশুর শরীরে, বাপের সাথে না হোক, ছেলের সাথেই স্মৃতি ধরে রাখা যাক।
তিনি জানালেন, লোকজনের ভিড় ওদের পছন্দ নয়। মাঝে মাঝেই ওরা আতঙ্কিত হয়ে যায়, বিশেষ করে ছোটটা তাঁর মাকে প্রশ্ন করে, "আমিতো ওদের চিনিনা, ওরা কেন আমার সাথে ছবি তুলতে চায়? ও কিভাবে আমাকে চেনে?"
মা তখন বুঝান তাঁর বাবা কী ছিলেন। কিন্তু শিশুটি বুঝতে চায়না। বুঝতে চাইবার কথাও নয়। ওর মাথায় কিছুতেই ঢুকে না, কেন ওর বন্ধুদের সাথে লোকজন ছবি তুলে না? কেন তাঁকেই সবাই আলাদা করে দেখে?
আমরা কত সহজেই একটি শিশুর কাছ থেকে তাঁর শৈশব কেড়ে নেই। এবং অল্পের জন্য সেই অপরাধের ভাগিদার আমিও হতে যাচ্ছিলাম।
লোকজনের প্রাইভেসি লঙ্ঘনে আমাদের কাজকারবার লেজেন্ডারি পর্যায়ের।
কিছুদিন আগে প্রিয়াংকা চোপড়ার সাথে সেলফি তোলার জন্য লোকজনের বর্বরতা সেইরকম ছিল। গায়ের সাথে গা লাগিয়ে ছবি তুলতে হবে। তারকাদের শরীর না ছুঁলেতো চলবেই না। কিছু বললে বলবে, মিডিয়া তারকা? তারাতো পাবলিক প্রপার্টি।
কোন বলদই বুঝতে আগ্রহী নয় ওদেরও ব্যক্তিগত জীবন থাকে। স্বামী/স্ত্রীর ঝগড়া হয়, বাচ্চাকাচ্চাদের বড় করতে গিয়ে নানা টেনশনের মধ্য দিয়ে যান।
একবার ক্যাটরিনা কাইফ প্লেনে করে যাচ্ছিলেন। এক মেয়ে জেদ ধরলো তাঁর সাথে ছবি তুলতে হবে। ক্যাটরিনা কয়েকবার নিষেধ করার পর মেয়েটা বিরক্তিকর কান্নাকাটি শুরু করলে এয়ারহোস্টেজকে দিয়ে মেয়েটিকে বিদায় করা হয়েছিল। ব্যস, নিউজ হেডলাইন হয়ে গেল ক্যাটরিনা একজন অতি অহংকারী বেয়াদব নায়িকা। এক অবুঝ শিশুর মন ভেঙেছে।
আরে বাবাজি, সেই অবুঝ শিশুর কী অধিকার আছে তাঁর মন ভাঙার? সে কোন পরিস্থিতিতে ছিল এইটা কেউ বিবেচনায় নেয়? হয়তো সেইদিন তাঁর পরিবারের কোন সদস্য অসুস্থ ছিলেন। হয়তো সেইদিন তাঁর বয়ফ্রেন্ডের সাথে ব্রেকাপ হয়েছে। আরও কত কিছুইতো হতে পারে।
কথা হচ্ছে, আপনার জীবনে যেমন অনেককিছুই চলে, তেমনি আমাদের প্রত্যেকের জীবনেই কিছু না কিছু চলে। আপনার জীবনে যেমন এমন অনেক কিছুই আছে যা নিয়ে আপনি সবার সাথে আলোচনা করতে আগ্রহী নন, তেমনি প্রত্যেকের জীবনেই কিছু না কিছু থাকে যা নিয়ে তাঁরা সবার সাথে আলোচনা করতে আগ্রহী নয়।
কারোর ডিভোর্স হলো, সে হয়তো নিজের মনকে হালকা করার জন্য কাউকে খুঁজছে, কিন্তু সেটা যে আপনি, এই তথ্য আপনি কোথায় পেলেন?
"কেন, কী হয়েছিল? আমাকে বল। আমি জানতে আগ্রহী। কারন কারোর পেটের খবর না জানা পর্যন্ত আমার পেটের ভাত হজম হয়না। গুড়গুড় করে।"
তখন বলা উচিৎ, "আপনার জামাইর সাথে ফষ্টিনষ্টি করতে গিয়ে হাতে নাতে ধরে ফেললাম। শালার ব্যাটা, তুই পরকীয়া করতে চাইলে ভাবীর সাথে কর, ভাবীর মেয়ের সাথে কর, তার জামাইর সাথে করবি ক্যান? বিবাহিত জীবনে ফ্রাস্ট্রেটেড এক ব্যাটা তোকে ইশারা দিল, আর তুই দৌড় দিলি?" তারপর মহিলার দিকে ফিরে বলুন, "ভাল করেছি না ভাবি? আচ্ছা, আপনার স্বামীর সমস্যা কী? সব ঠিক আছেতো? তাহলে এইভাবে বাইরে মুখ মারতে চায় কেন?"
মুখ খারাপ করতে চাইলে আরও করুন। এরা যদি তারপরে গিয়ে কিছুটা হলেও শুধরে।
এই যে রনি নামের লোকটা ধর্ষণ করতে গিয়ে ধরা খেল। পুরো বাংলাদেশ নেমে এসেছে তার বৌ বাচ্চাকে নসিহত দিতে।
"বৌ কেন নিজের স্বামীকে কন্ট্রোল করতে পারেনা।"
"বিবাহিত জীবন নিশ্চই সুখী নয়, নাহলে এমন সুন্দর বৌ রেখে কেন রাস্তার বেটির সাথে শুইতে চাবে?"
"আহারে অমন সুন্দর সুন্দর বাচ্চারা! এই বাবু, তোমার আব্বুর সাথে তোমার আম্মুর কী রোজ ঝগড়া হতো?"
আমাদের এলাকায় Rab এর তালিকাভুক্ত এক বিরাট সন্ত্রাসীর বৌ বাচ্চা থাকতো। বাপ জেলে, মা দুই শিশু নিয়ে এপার্টমেন্টে থাকে। দেবশিশুর মতন দেখতে ঐ দুই বাচ্চার সাথে কেউই মিশতো না। এবং কোন এক বিচিত্র কারনে ঐ দুই বাচ্চা আমাকে খুব পছন্দ করতো। রাস্তায় দেখা হলে গাড়ির কাঁচ নামিয়ে হাতছানি দিয়ে বলতো, "রাজীব ভাইয়া! রাজীব ভাইয়া!!"
আমার বন্ধু তখন মজা করে বলতো, "ব্যাপার কী? ওদের এত মোহাব্বত ক্যান তোমার প্রতি? ওদের খালা কিন্তু সুন্দর আছে। ওদের খালু হয়ে যাও। হিহিহি।"
একদিন তাঁদের জন্মদিনের অনুষ্ঠানে গিয়ে দেখি আমি ছাড়া এবং তাঁদের আত্মীয়দের কয়েকজন ছাড়া বলতে গেলে কেউই আসেনি। বাচ্চাগুলো আমাকে দেখে কী যে খুশি! শেরাটন থেকে কেক আনা হয়েছিল, ফখরুদ্দিনের বিরিয়ানি। তৃপ্তির সাথে খেয়েছিলাম।
ভদ্রলোকেদের বিশ্বাস এই শিশুদের সাথে তাঁদের বাচ্চারা মিশলে বাচ্চারাও বিগড়ানোর সুযোগ আছে। পুরোটাই Pre-assumption. কিন্তু এই গ্যারান্টি কে দিচ্ছে যে তাঁদের বাচ্চারা বাইরে নষ্ট হচ্ছেনা? এবং এই শিশুগুলো ভাল হবেনা?
আগে দেখুন এই বাচ্চাগুলোর মধ্যে তাদের বাপের কোন কোয়ালিটি আছে কিনা। শুরুতেই কেন ধরে নিচ্ছেন ব্রাক্ষণের পুত্র ব্রাক্ষণ হবে এবং শূদ্রের পুত্র শূদ্র?
পিতার অপরাধে এদের সমাজচ্যুত করে দিয়ে সমাজই এদের অপরাধী করে গড়ে তুলছে। ওরা কেন সমাজকে ভালবাসবে যেই সমাজ তাঁদের ওদের অংশ হিসেবে মনে করে না?
আমি কিন্তু নিজের মতবাদ দিচ্ছি না। সাইকোলজি এবং ক্রিমিনোলজির আলোকেই বলছি। এছাড়া সোশ্যাল স্টাডিজও আমার পক্ষ্যেই কথা বলবে।
অপরাধ সাধারণত বস্তিতেই কেন হয় বলে আপনার ধারণা? একটি ছেলে যখন ভদ্র সমাজের কারোর পেটে ছুরি চালায়, এই ভেবেই চালায় যে ঐ লোকটা তার কেউ নয়, বরং তাকে ঘৃণা করে। অতএব একে মারা জাস্টিফাইড।
আমার এইসব কথাবার্তায় অনেকেই মাইন্ড করেন। অনেকের সাথেই মতবিরোধ হয়। প্রায় সবাইই তিরষ্কার করেন। কিন্তু যুক্তি প্রমান দিয়ে কেউ কাউন্টার করতে পারেন না।
রনির বাচ্চাদের সাথে এমন আচরণ করতে থাকুন। যদি এরা বড় হয়ে অপরাধী হয়, তারপরে ওদের নিয়ে ছিঃছিঃ করার আগে পারলে নিজেকে দোষ দেয়ার চেষ্টা করবেন। আপনারা এমন আচরণ করেছিলেন বলেই সেদিনের সেই বাচ্চারা আজকে এমন অপরাধী হয়েছে।

মন্তব্য ১০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১০) মন্তব্য লিখুন

১| ১২ ই জুন, ২০১৮ রাত ৩:০৫

মো: নিজাম উদ্দিন মন্ডল বলেছেন: আপনার চিন্তাধারাগুলো যুক্তিযুক্ত, সুন্দর!

আমি তো মনেকরি, চারপাশে যত অপরাধ হয় তার শাস্তির একটা অংশ সমাজ ও সমাজের তথাকথিত ভালো(!!) মানুষদের দেয়া দরকার!X(

১২ ই জুন, ২০১৮ সকাল ৯:২৯

মঞ্জুর চৌধুরী বলেছেন: সত্য বলেছেন ভাই।

২| ১২ ই জুন, ২০১৮ ভোর ৫:২৫

কিশোর মাইনু বলেছেন: অসাধারণ লিখেছেন ভাই।আসলেই আমাদের সমাজ ই নিত্যনতুন অপরাধী তৈরী করছে।

BTW,আপনাকে কি মঞ্জুর ভাই সম্বোধন করলে খুশী হবেন নাকি রাজীব ভাই সম্বোধন করলে?!?!?

১২ ই জুন, ২০১৮ সকাল ৯:২৯

মঞ্জুর চৌধুরী বলেছেন: দুইটাই আমার নাম, একটাতে ডাকলেই চলবে। :)

৩| ১২ ই জুন, ২০১৮ সকাল ৯:২৮

রাজীব নুর বলেছেন: ভালো লেখা।
তবে আমি শাওন ম্যাডামের দুই ছেলের সাথে ছবি তুলেছি।

১২ ই জুন, ২০১৮ রাত ৮:২১

মঞ্জুর চৌধুরী বলেছেন: তাহলে ভাই আপনাদের জন্যই আজকে বাচ্চাগুলোর এই অবস্থা। :)
হাহাহা, জোকস ছিল, মাইন্ড কইরেন না।

৪| ১২ ই জুন, ২০১৮ সকাল ৯:৩১

অনন্য দায়িত্বশীল আমি বলেছেন: আপনার অনেক কথার সংগেই আমি সহমত পোষন করি। লেখাটি সুন্দর হয়েছে।

১২ ই জুন, ২০১৮ রাত ৮:২১

মঞ্জুর চৌধুরী বলেছেন: ধন্যবাদ। :)

৫| ১২ ই জুন, ২০১৮ সকাল ১০:৩২

হাঙ্গামা বলেছেন: রনির পরিবারকে এভাবে নসিহত করার বিরোধীতা করায় ফেসবুকে ব্যাপক তোপের মুখে পড়ছিলাম।

১২ ই জুন, ২০১৮ রাত ৮:২২

মঞ্জুর চৌধুরী বলেছেন: সত্যের পথে থাকলে বাঁধা আসবেই।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.