নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মঞ্জুর চৌধুরী

আমি ঝন্ঝা, আমি ঘূর্ণি, আমি পথ-সমূখে যাহা পাই যাই চূর্ণি’। আমি নৃত্য-পাগল ছন্দ, আমি আপনার তালে নেচে যাই, আমি মুক্ত জীবনানন্দ। আমি হাম্বার, আমি ছায়ানট, আমি হিন্দোল, আমি চল-চঞ্চল, ঠমকি’ ছমকি’ পথে যেতে যেতে চকিতে চমকি’ ফিং দিয়া দিই তিন দোল; আমি চপলা-চপল হিন্দোল। আমি তাই করি ভাই যখন চাহে এ মন যা, করি শত্রুর সাথে গলাগলি, ধরি মৃত্যুর সাথে পান্জা, আমি উন্মাদ, আমি ঝন্ঝা! আমি মহামারী আমি ভীতি এ ধরিত্রীর; আমি শাসন-ত্রাসন, সংহার আমি উষ্ন চির-অধীর! বল বীর - আমি চির উন্নত শির!

মঞ্জুর চৌধুরী › বিস্তারিত পোস্টঃ

টিএসসিতে চুম্মাচাটি

২৬ শে জুলাই, ২০১৮ রাত ১:৩১

মানুষের জীবনের আয়ু কতটুকু?
সুস্থ স্বাভাবিক থাকলে এখন বোধয় ষাট হলেই মানুষ দিন গুনতে শুরু করেন। সবাই তখন প্রতিটা দিনকে ওভারটাইম হিসেবে বিবেচনা করেন। চিরতরে চোখ বুজার আগে আল্লাহ আল্লাহ করেন।
এইতো সেদিন আমি আমার বাবার ভেসপায় করে স্কুলে গিয়েছি, কোচিংয়ে গিয়েছি। আমার কাঁধে থাকতো ব্যাগ, আমি তাঁর পিঠে গাল ঠেকিয়ে রাখতাম। ফ্রেশফুড নামের ফাস্টফুডের কলিজা সিঙ্গারা খেতাম, আর পঞ্চখানায় শিক কাবাব। এবং এখন তিনি কবরে শুয়ে আছেন আজ সাত বছর চলছে।
মনে হয় এইতো সেদিন আমার ছেলে আমার এক হাতের উপরই ঘুমাতে পারতো। এখন তাঁর মা তাঁকে বেশিক্ষন কোলে রাখতে পারেনা, এতটাই ভারী এবং বড় হয়ে গেছে সে। দেখতে দেখতেই ইন শা আল্লাহ একদিন স্কুল কলেজে যাবে - চাকরি বাকরি বিয়ে শাদী করে বাচ্চা কাচ্চা নিয়ে সংসার করবে। আমরা ততদিনে বিদায় নিব পৃথিবী থেকে।
মোট কথা - সময় উড়ে চলছে। একেবারে রকেটের স্পিডে। মানুষের জীবনে সময়ের চেয়ে মূল্যবান কিছু হতে পারেনা। সেই সময়টাই আমরা বাঙালি লোকজন আজাইরা তুচ্ছ কারনে নষ্ট করতে ওস্তাদ! টিএসসিতে কে চুমা চাটি করেছে এই নিয়ে গত কয়েকদিন ধরে ফেসবুক সয়লাব। প্রত্যেকেই যার যার মন্তব্য পেশ করছেন। দশ হাত, পনেরো হাত - পঁচিশ হাত লম্বা একেকটি লেখা। বাপরে বাপ!
সিরিয়াসলি???? আমাদের সময় এতই সস্তা?
টিএসসির ঘটনা নিয়ে আলোচনা করছেন কেউ ইনবক্সে, কেউ সরাসরি। নিজেদের অবস্থান ব্যাখ্যা করে আমার পয়েন্ট অফ ভিউ কী জানতে আগ্রহী।
প্রথম কথা, ভাই আমি অ্যামেরিকায় থাকি। এই চুমাচাটি দেখতে দেখতে চোখ কান নাক সব পঁচে গেল। এই দেশে এই দৃশ্য অতি স্বাভাবিক। কলেজ ইউনিভার্সিটিতে পড়ার সময়ে এমনও দেখেছি যে কিছুদিন এক মেয়ে অমুকের সাথে ব্যাকটেরিয়া বিনিময় করছে, সেমেস্টার বদলের সাথে সাথেই দেখি জীবাণু সাপ্লাইয়ারও বদল হয়ে গেছে। ভাইসাহেব তখন অন্য কোথাও ব্যস্ত।
আবার এমনও দেখেছি যে সাত আট বছর বয়সে ছেলে মেয়ের প্রথম দেখা, প্রথম ভাল লাগা এবং আমৃত্যু এক সাথে সংসার করে যাওয়া।
এদেশে এমন বিপরীতমুখী ঘটনা অতি স্বাভাবিক ঘটনা।
বাচ্চাকাচ্চারাও সবকিছুতে অভ্যস্ত। মায়ের সাথে থাকছে মায়ের বয়ফ্রেন্ডের সংসারে। বাবা গার্লফ্রেন্ডের সাথে আরেক সংসারে ব্যস্ত। আবার কেউ কেউ বাবা মায়ের সুখের সংসারে ফুল হয়ে ফুটছে।
হ্যা, বাংলাদেশেও কিন্তু এই কিসাকিসির ঘটনাটা বিরল না। টিএসসিতেও নয়। আমি নিজেই দেখেছি। রমনা বা সোহরাওয়ার্দী, বা জাতীয় কবির কবরের পাশে বসে যুবকরা কিভাবে নিজের প্রেমিকার শরীরের এখানে ওখানে হাত বুলাচ্ছে। বেশিরভাগ মেয়ে বোরখা পরে আসতো পর্দার খাতিরে নয়, বরং চেহারা যাতে চিনে না ফেলে কেউ। চন্দ্রিমা উদ্যান বা সংসদ ভবন এলাকায় রাতে না যাওয়াই ভাল।
এরা স্থান কাল পাত্র কোন কিছু নিয়ে কখনও ভাবেনা। ডেস্পারেশন এদের মাথা নষ্ট করে দেয়।
আমার নজর খারাপ ছিল সেই সময়ে। ঢাকা শহর বেড়াতে এসে দ্রষ্টব্য স্থানগুলো বেড়াতে গিয়ে এইসব কুকর্মগুলোই আমার চোখে ধরা খেত। তকদির!
আমাদের ব্র্যাকে এক ছেলে পড়তো। হারামজাদা যেন জিন্দেগীতে একটা গার্লফ্রেন্ড পেয়ে এভারেস্ট জয় করে ফেলেছিল। সবাইকে দেখিয়ে বেড়াতো এই মেয়েটি তার গার্লফ্রেন্ড এবং সে তার বয়ফ্রেন্ড। ক্যান্টিনে, "প্রাঙ্গনে," কম্পিউটার ল্যাবে, লাইব্রেরিতে সারাক্ষন মেয়েটির গায়ে হাত বুলাতো। হাতে হাত ধরে হাঁটাহাঁটি করলে এতটা দৃষ্টিকটু হতো না। ফাজিলটা হাত ধরা বাদে সব করে বেড়াতো। কখনও পিঠ বুলাচ্ছে, নাহয় গাল টিপছে, নাহয় কানের ফুটায় আঙ্গুল ঢুকিয়ে ঝিমাচ্ছে। অসহ্য লাগতো দেখতে!
আমরা ব্যাটার নামই দিয়ে দিয়েছিলাম "কান ভাই।"
একদিন কান ভাই বিদেশে পাড়ি দিল, মেয়েটির অন্য আরেক জায়গায় বিয়ে হয়ে গেল। তাঁর স্বামীকে অবশ্য কখনও তাঁর কানের ফুটায় আঙ্গুল ঢুকিয়ে ঝিমাতে দেখিনি।
শুনেছি কান ভাই অ্যামেরিকায় এসেছিলেন। উনার দেখা অবশ্য পাইনি। দেখার শখ আছে এখনও কী তিনি বৌ/গার্লফ্রেন্ডের শরীর হাতাপিতা করেন।
নোংরাভাবে বর্ণনা করছি কারন ব্যাটা নোংরাভাবেই হাতরাতো। দেখলে যে কারোর শরীর ঘিনঘিন করে উঠবে।
তো যা বলছিলাম, অনেকেই পশ্চিমা দেশের তুলনা করে বলছেন বিদেশে চুমু খাওয়া যায়। এতে দোষের কিছু নেই। কাজেই আমাদের দেশে প্রকাশ্যে চুমু খেতে হবে।
অতি সত্য বচন। বিদেশিরা প্রেমের বহিঃপ্রকাশ হিসেবে চুমু খায়, এতে নোংরামি করেনা। এদের চুমু খাওয়াটা আমাদের দেশে ছেলে মেয়ের হাত ধরে হাঁটাহাঁটির মতোই স্বাভাবিক এবং শালীন দৃশ্য বলে মনে হয়।
তবে যুক্তিতে কিন্তু একটি ফাঁক রেখে দিচ্ছেন সবাই।
বিদেশিরা নিজেদের বাবা মায়ের সামনেই বয়ফ্রেন্ড গার্লফ্রেন্ডকে চুমু খায়। এদেশে ছেলে মেয়েতে প্রেম অতি স্বাভাবিক ঘটনা। আমার এক্স বস একদিন চিন্তায় পড়ে বলছিলেন তাঁর মেয়ের বয়স সতেরো হয়ে গেছে, এখনও সে কেন কোন বয়ফ্রেন্ড খুঁজে নিচ্ছে না? মেয়ে পুরো ফোকাস পড়ালেখায় দেয় - এতই পড়ুয়া যে মাঝে মাঝে দুপুরের লাঞ্চের কথা পর্যন্ত ভুলে যায়। ফুল ফ্রি স্কলারশিপে বিশ্বের সেরা সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ে ডাক পেয়েছে। কিন্তু মেয়েকে ইউনিভার্সিটি অফ টেক্সাসে যেতে দিচ্ছেন কারন অন্য কোথাও গেলে এই মেয়ে হয়তো পড়ালেখা করতে করতেই না খেয়ে মরবে।
নিঃশ্বাস গোপন করে ভাবলাম, আহারে, আমাদের মা বাবা এমন সন্তান পেলে মাথায় তুলে নাচতেন। আর এই মহিলা এমন সন্তান পেয়েই আফসোস করছেন!
বাংলাদেশে আপনারা যারা প্রকাশ্যে চুমুর পক্ষে মত দিচ্ছেন, তাঁরা নিজেদের বাবা মায়ের সামনে নিজেদের গার্লফ্রেন্ড/বয়ফ্রেন্ডকে চুমু খেয়ে দেখান, তারপরে রাস্তাঘাটের কথা চিন্তা করা যাবে। দেখা যায় বিয়ের সময় উপস্থিত হলে সবার আগে ছেলেরা পল্টি খায়। "আমি এখনই বিয়ের কথা কিভাবে বাবা মাকে বলবো? আমিতো এখনও চাকরি বাকরি কিছু করিনা।"
মেয়েরা বলে, "আমি কোন মুখে বাবা মায়ের সামনে তোমার কথা বলবো? তুমিতো এখনও স্টুডেন্ট?"
জ্বি, আগে প্রেমের স্বীকৃতি বাড়ি থেকে আদায় করুন। চুমাচাটি নিয়ে তারপরে চিন্তা করা যাবে। চ্যারিটি বিগিন্স অ্যাট হোম। ঘর থেকেই সমাজের পরিবর্তন শুরু করুন। আধা খসড়া ওয়েস্টার্ন হয়ে লাভ নেই। একূল অকূল দুকূলই হারাবেন তাহলে।
আমাদের বুঝতে হবে আমরা আমাদের বাক্যের কোথায় গিয়ে কমা দেব, কোথায় ফুলস্টপ এবং কোথায় প্রশ্নবোধক চিহ্ন ব্যবহার করবো। সমস্যা হচ্ছে আমরা শিক্ষিতরাও ম্যাচিউরড আচরণ করিনা, অশিক্ষিতদের থেকে কী আশা করবো তাহলে?
অ্যামেরিকায় ষাট-সত্তুরের দশক ধুয়ে ফেলেছিল বিট জেনারেশনের পোলাপান। কাপড় চোপড় ছাড়া পুরো ন্যাংটা হয়ে রাস্তায় ঘুরা থেকে শুরু করে ড্রাগস সেবন ইত্যাদি সবই করতো এরা। আল্টিমেট ওয়েস্টার্ন কালচারের দেশ, ডেমোক্রেসি মুক্তচিন্তা ও স্বাধীন মতবাদের দেশ অ্যামেরিকা কিন্তু তাদের সাদরে গ্রহণ করেনি। কেন করেনি সেটা গবেষণা করে দেখুন।
এখনও এদেশে পর্নতারকাদের মার্কিন সমাজ সাদরে গ্রহণ করে না। পতিতাবৃত্তির অভিযোগ প্রমাণিত হলে তরিপারের শাস্তি আছে এদেশে। যেকোন দেশ, যেকোন সংস্কৃতির একটি ধারা থাকে, যেকোন পরিবর্তন ধারা অনুযায়ী হওয়া ভাল। নাহলে বন্যায় সব ভেসে যায়।
একজন বাস্তব মার্কিন নারীরই উদাহরণ দেই। উদাহরণ না দিলে যুক্তি মজবুত হয়না।
আমার অফিসের এক ডিপার্টমেন্টের মহিলা ভিপি (ভাইস প্রেসিডেন্ট) নিজের চার ছেলে-মেয়েদের নিয়ে বসলেন। চারজনেরই বয়স এগারোর নিচে এবং এমন আলোচনার জন্য এটাই সঠিক বয়স। তাঁদের সামনে একটি পরিষ্কার শুকনো তোয়ালে এবং একটি অপরিষ্কার স্যাঁতস্যাঁতে ভেজা নোংরা তোয়ালে রাখলেন। তারপরে তাঁদের জিজ্ঞেস করলেন, "তোমরা যখন গোসল শেষে আসবে, তখন কোন তোয়ালেতে শরীর মুছবে?"
ছেলে মেয়েদের উত্তর, "অবশ্যই পরিষ্কার টাওয়েল।"
মা তখন বললেন, "তাহলে নিজেদেরও এই টাওয়েলের মতোই ঝকঝকে রেখো।"
১০০% সাদা অ্যামেরিকান এই মহিলা যেহেতু একটি বড় কোম্পানির সবচেয়ে প্রফিটেবল ডিপার্টমেন্টের ভিপি, কাজেই তাঁর শিক্ষা দীক্ষা এবং যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলারও যোগ্যতা কারোর নেই। এই হচ্ছে তাঁর নিজের ছেলেমেয়েদের দেয়া শিক্ষা। বেশিরভাগ অ্যামেরিকান অভিভাবকই তাঁদের সন্তানদের এইভাবে নৈতিক শিক্ষা দিয়ে আসেন। পর্ন সিনেমা দেখে বাঙালির ধারণা হয়তো অ্যামেরিকায় সবাই এখানে ওখানে শুয়ে বেড়ায়। বাস্তবে তা নয়।
তারপরেও দেখা যায় টিনেজ প্রেগন্যান্সি এই দেশে একটি বিরাট সমস্যা। প্রায়ই দেখা যায় অবলীলায় টিনেজ গর্ভবতী মেয়েরা নিজেদের পেটের ভ্রূণ হত্যা করে ফেলছে। ভ্রূণ হত্যা ও শিশু হত্যা সমান বলেই আমার বিশ্বাস। ট্রাম্পের দলের সাথে এই ব্যাপারে আমিও সহমত। এই দেশের চার্চগুলো প্রচার করে প্রেগন্যান্ট হয়ে থাকলে এবোর্ট না করে তাঁদের সাথে যোগাযোগ করতে। তাঁরা সেই শিশুর যত্ন নিবে, তাঁকে বড় করবে। মানব শিশুর প্রাণের মূল্য চার্চ বুঝে, মা বাবা বুঝে না, আফসোস।
আমাদের দেশেও কিন্তু ডাস্টবিনে এমন শিশুর মৃতদেহ পাওয়া যায়। কুকুরে কামড়ে খাচ্ছে। কে জানে, কুকুর যখন প্রথম দাঁত বসাচ্ছিল, তখন হয়তো শিশুটি জীবিত ছিল। কী অপরাধে তাঁকে এই শাস্তি দেয়া হলো?
অন্ধভাবে বিদেশী সংস্কৃতি ফলো করাটাই স্মার্টনেস নয়।
আমরা না পারি ইংরেজ হতে, না পারি বাঙ্গাল। দুই নৌকায় পা দিতে গিয়ে মাঝবরাবর ছিড়ে যাই।
একটা জিনিস খেয়াল করে দেখবেন, হঠাৎ ধনী হওয়া পরিবারের ছেলেপিলেরাই কিন্তু বিগড়ায় বেশি। বাবা মা মনে করেন মদ খাওয়া, জুয়া খেলা, নারী নিয়ে রংতামাশা করা, শিশা বা নাইট ক্লাবে গিয়ে ফূর্তি করা আভিজাত্যের বৈশিষ্ট্য। ওসব না করলে বুঝিবা নিজেদের স্মার্ট প্রমান করা যাবেনা।
খাঁটি বনেদি পরিবারের লোকজন জানেন তাঁদের প্রমান করার কিছু নেই। তাঁরা নিজের সন্তানদের ভ্যালুজ শেখায়।
কাজেই আপনি স্মার্ট, আপনি মুক্তচিন্তার ধারক বাহক ইত্যাদি প্রমান করতে আলগা চেষ্টা নিবেন না যেন, তাহলেই বরং লোকজনকে বুঝিয়ে দিবেন আপনার ভেতর ফাঁকা। বরং সঠিককে সঠিক এবং ভুলকে ভুল বলুন, তাহলে নিজের একটা কনস্ট্যান্ট রূপ প্রকাশ যাবে।

এখন যারা একে স্রেফ "নির্লজ্জ্ব বেহায়াপনা" বলে হাত ধুয়ে ফেলছেন, যারা "বাঙালি সংস্কৃতি" নিয়ে গর্বে বুক ফুলিয়ে ফেলছেন, তাঁরা নিজেরা কতটুকু সভ্য আচরণ করেন সেটাও কী কখনও বিবেচনায় নিয়েছেন? দেশের রাস্তায় কোন মেয়ে নিশ্চিন্তে হাঁটতে পারেনা, পারলে চোখ দিয়েই তাঁকে প্রেগন্যান্ট বানিয়ে ফেলে। দেশের পুরুষ সমাজ এতটা সভ্য হলে এরা কারা যারা রাস্তাঘাটে মেয়েদের শরীর হাতড়ে বেড়ায়? কয়েক মাস বয়সী কন্যা শিশু পর্যন্ত যেই দেশে ধর্ষণের হাত থেকে নিরাপদ নয়? রাস্তার বখাটে থেকে শুরু করে স্কুল-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক কেউই এই তালিকা থেকে বাদ যায় না। কাজে প্রমোশনের জন্যও উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাগণ নারীদের সাথে প্রাইভেট সময় কাটাতে চায়। কেউকে বিচার দিলে তাঁকে শুনতে হয়, "আপনার সাথেই কেন এমন হলো? নিশ্চই আপনিই ইশারা ইঙ্গিত দিয়েছিলেন?" এত সভ্য কবে ছিলাম আমরা যে একটা চুমুর দৃশ্যে সমাজ পতনের হাহাকার তুলে ফেলি?
একটা চুমুর প্রতিবাদে পুরো দেশ ফুলে ফেঁসে উঠলো, এদিকে সরকারি অফিসে ঘুষ ছাড়া ফাইল নড়ে না কেন তা নিয়ে কারোর বিন্দুমাত্র মাথাব্যথা নেই। একটা মানব বন্ধন কখনও হতে দেখলাম না দুর্নীতির প্রতিবাদে। বিশ্বের দুর্নীতিমুক্ত ১৭৬ টি দেশের তালিকায় আমরা কেন ১৪৫ নম্বরে এই নিয়ে কারোর কোন চিন্তা নাই। একটা সময়ে আমরাই ছিলাম সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ, এখন আমাদের চেয়েও খারাপ লোকজন পৃথিবীতে আছে, এই খুশিতেই আমরা মিষ্টি বিতরণ করে বেড়াচ্ছি।
একের পর এক নারী ধর্ষণ হয়েই চলেছে, বিন্দুমাত্র প্রতিবাদ নেই। (ফেসবুকের স্ট্যাটাসকে যদি প্রতিবাদ ধরা হয়, তাহলে কিছু বলার নেই।) কিছুদিন আগেই শিশুদের পিটিয়ে মেরে ফেলেছিলাম, মনে আছে? একটার নাম ছিল রাজন, আরেকটার নাম রাকিব। এর পরেও দেশে শিশু নির্যাতন কমেনি। এখনও প্রায়ই শিশুদের গলিত লাশ খুঁজে পাওয়া যায় নর্দমায়। আমাদের দেশের নামি ক্রিকেটার গৃহকর্মী পিটানোর মামলায় হাজত খাটে। প্রায়ই দেখা যায় সমাজের উঁচু শ্রেণীর লোকজন বিচিত্র তরিকাতে কাজের লোক পিটিয়ে হৈচৈ ফেলে দিয়েছেন। এখনও যৌতুক ছাড়া দেশে বিয়ে হয়না কোন কোন অঞ্চলে। যৌতুকের (শ্বশুরবাড়ির উপহার) দাবিতে স্ত্রী হত্যা ছাড়া একটি বছরও পেরোতে দেই না। ছাত্রলীগ হাতুড়ি দিয়ে মেরে একজনকে পঙ্গু বানিয়ে ফেলেছে, অথচ নির্লজ্জের মতন লোকজন বলছেন "আজ ছাত্রলীগকে গালি দিচ্ছেন, অথচ এই ছাত্রলীগই এই করেছিল ঐ করেছিল সেই করেছিল ম্যা ম্যা ম্যা......" - তাই লাইসেন্স দেয়া হয়ে গেছে তারা হাতুড়ি দিয়ে মানুষ পিটাবে, বাহ্!
কোন অ্যাকশন নেই এইসব ব্যাপারে। চুমাচাটি করলো ক্যান, এই নিয়ে সবাই সরব।
আসল ঘটনায় কান ভাইয়ের মতন কানের ফুটায় আঙ্গুল ঢুকিয়ে আমরা সবাই ঝিমাচ্ছি।
বাই দ্য ওয়ে - যেই যুবক যুবতীর ছবি এইভাবে ভাইরাল করা হলো। এই মেয়েটি বা এর কাছাকাছি দেখতে মেয়েদের বাড়িতে কী অবস্থা হবে কেউ কি একবারও সেটা নিয়ে চিন্তা করেছিল? এই যুবকের সাথে তাঁর বিয়ে হবেনা এইটা নিজের অভিজ্ঞতা থেকে মোটামুটি বলে দিতে পারি, তখন অন্য ছেলের সাথে বিয়ের সময়ে যে ঝামেলার সৃষ্টি হবে - তা নিয়ে কেউ কী ভেবেছেন? পক্ষে বিপক্ষে যেই কথা বলছে, সেই ছবিটা শেয়ার করছে। ঝাপসা করারও প্রয়োজন বোধ করছে না। বুদ্ধিশুদ্ধি কী আমরা এক্সপোর্ট করে দিয়েছি নাকি?
বটম লাইন, তাহলে কী টিএসসির চুমাচুমি ঘটনা ঠিক না বেঠিক?
উত্তর হচ্ছে সঠিক না বেঠিক তা নিয়ে আলোচনার আগে এত ফালতু ঘটনাকে রাষ্ট্রীয় ইস্যু বানিয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা সময় নষ্ট করা কেন সেটাই বুঝতে পারছি না। এরচেয়ে বড় বড় ঘটনা কী আমাদের দেশে ঘটেনা? নাকি আমাদের দেশে ইস্যুর এতই আকাল পড়েছে?
এই লেখাটা লিখতে পাক্কা তেইশ মিনিট তেপ্পান্ন সেকেন্ড সময় বরবাদ হলো। হোয়াট আ ওয়েস্ট অফ টাইম। ধুর!

মন্তব্য ১০ টি রেটিং +৫/-০

মন্তব্য (১০) মন্তব্য লিখুন

১| ২৬ শে জুলাই, ২০১৮ রাত ২:১০

অনল চৌধুরী বলেছেন: বাঙ্গালী অসভ্যরা পশ্চিম থেকে অবাধ শারীরিক সম্পর্ক,মদ খাওয়াকে মনে করে আধুনিক।
কিন্ত ওদের কাজের সংস্কৃতি,দেশপ্রেম,নৈতিকতা,অঅইনের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ,কোন কিছুই নেবে না।
টিএসসি-তে ... অার শারীরিক সম্পর্ক করে অাধুনিক হতে চায় কিন্ত বাচ্চা হলে তাকে ডাষ্টবিনে ফেলে দেয়-এই হচ্ছে এদেশের লোকদের আধুনিক হওয়ার নমুনা!!!!
বিয়ের অাগে লুচ্চামি করবে কিন্ত পশ্চিমের মতো বিয়ে ছাড়া বাচ্চা মানুষ করার মতো উদারতা তাদের নাই।

২| ২৬ শে জুলাই, ২০১৮ রাত ২:১৭

ইব্‌রাহীম আই কে বলেছেন: "মানুষের জীবনের আয়ু আর কতটুকু?"
একটা বিষয় দেখতে দেখতে আর একটা বিষয় নিয়ে লেখা পড়তে পড়তেই জীবন ফুরিয়ে আসল!

৩| ২৬ শে জুলাই, ২০১৮ রাত ২:৫৭

বিচার মানি তালগাছ আমার বলেছেন: কথা হচ্ছে, সবাই জানে সমাজে নারী-পুরুষে আরো খারাপ কিছু হচ্ছে। তাই বলে এসবকে প্রকাশ্যে এনে বৈধতা বা প্রেমের সৌন্দর্য বর্ণনা করার কিছু নেই...

৪| ২৬ শে জুলাই, ২০১৮ সকাল ৯:১৭

নীল আকাশ বলেছেন: আপনার শেষ লাইনটাই জোস হয়েছে। পুরোপুরি সময় নষ্ট। পুরা সমাজ ধংস হয়ে যাচ্ছে আর আমরা এক মেয়ে ছেলে কি করেছে তা নিয়ে মাতা মাতি করছি !!!!

৫| ২৬ শে জুলাই, ২০১৮ সকাল ৯:১৯

রাজীব নুর বলেছেন: লাইফ ইজ টেম্পোরারি। চুমু ইজ পার্মানেন্ট।

৬| ২৬ শে জুলাই, ২০১৮ সকাল ৯:৩৫

সাগর শরীফ বলেছেন: আসলেই, এসব নিয়ে মাতামাতি করা সময় নষ্ট করা ছাড়া আর কিছু না। যেসমস্ত পোলাপান এসব করবে, তাদের কোন বাণীতে কাজ হবে না। তারা করবেই।
তবে যারা এখনো এসবের মাঝে অভ্যস্ত নয়, তাদের জন্য লেখাটি আনেক গুরুত্বপূর্ণ।
রাজীব ভাই, দারুণ কমেন্ট !

৭| ২৬ শে জুলাই, ২০১৮ সকাল ১০:৫৯

মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন বলেছেন: অ‌হেতুক বিতর্ক।

৮| ২৬ শে জুলাই, ২০১৮ সকাল ১১:৩৪

ক্স বলেছেন: আপনি আমেরিকায় চুমাচুমি দেখে অভ্যস্ত। আমি বাংলাদেশের এরকম হাজারো কান ভাইয়ের হাতাহাতি দেখে অভ্যস্ত। সেগুলার কোন ছবি কেউ তো ফেসবুকে পোস্ট করেনা। ঢাবিতে পড়ার সময় আমি সেন্ট্রাল লাইব্রেরিতে এক ছেলেকে দেখছিলাম তার সহপাঠীর স্পর্শকাতর জায়গাগুলোতে হাতাতে। তখন ক্যামেরা মোবাইল ছিলনা, থাকলে সেই ছবি এখানে পোস্ট করে দিতাম। মেয়েটা বিরক্ত হচ্ছিল, কিন্তু সরে যাচ্ছিল না - মনে হয় তার কাছেও ভাল লাগছিল। ব্যাপারটা মিউচুয়াল।

চুমুর ছবি ভাইরাল হবার কারণে মেয়ের বিয়ে হবেনা - একথা এখনকার যুগের জন্য প্রযোজ্য না। কিছু কিছু ছেলে এরকম সাহসী মেয়েই পছন্দ করে। তবে ছেলেটির কপালে শনি আছে - এটা নিশ্চিত।

৯| ২৬ শে জুলাই, ২০১৮ সকাল ১১:৩৬

মোস্তফা সোহেল বলেছেন: ভাল লিখেছেন।আমি বুঝলাম না এই বিষয়টা নিয়ে এত মাতামাতির কি আছে।

১০| ২৬ শে জুলাই, ২০১৮ দুপুর ১:৩৩

সিনথিয়া আফরিন বলেছেন: ভাইটি বৃষ্টিতে শ্বাস কষ্টে ভুগতেছিলো, বোনটি শুধু শ্বাস নিতে সাহায্য করতেছিলো । :`>

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.