নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মঞ্জুর চৌধুরী

আমি ঝন্ঝা, আমি ঘূর্ণি, আমি পথ-সমূখে যাহা পাই যাই চূর্ণি’। আমি নৃত্য-পাগল ছন্দ, আমি আপনার তালে নেচে যাই, আমি মুক্ত জীবনানন্দ। আমি হাম্বার, আমি ছায়ানট, আমি হিন্দোল, আমি চল-চঞ্চল, ঠমকি’ ছমকি’ পথে যেতে যেতে চকিতে চমকি’ ফিং দিয়া দিই তিন দোল; আমি চপলা-চপল হিন্দোল। আমি তাই করি ভাই যখন চাহে এ মন যা, করি শত্রুর সাথে গলাগলি, ধরি মৃত্যুর সাথে পান্জা, আমি উন্মাদ, আমি ঝন্ঝা! আমি মহামারী আমি ভীতি এ ধরিত্রীর; আমি শাসন-ত্রাসন, সংহার আমি উষ্ন চির-অধীর! বল বীর - আমি চির উন্নত শির!

মঞ্জুর চৌধুরী › বিস্তারিত পোস্টঃ

অর্গান ডোনেশন এবং ইসলাম

২৮ শে নভেম্বর, ২০১৮ রাত ১২:৫৪

অ্যামেরিকান নাগরিক জীবনের সবচেয়ে বড় সুবিধা হচ্ছে এখানে ৯১১ (ইমার্জেন্সি) কল করার পাঁচ মিনিটের মধ্যেই পুলিশ, এম্বুলেন্স, ফায়ার সার্ভিস ইত্যাদি সেবা পাওয়া যায়। ক্ষেত্র বিশেষে দুই মিনিটও লাগেনা। পাঁচ মিনিট কনজারভেটিভ নাম্বার হিসেবে বললাম। একবার আমি এক রুমে দাঁড়িয়ে জরুরি এম্বুলেন্স কল করে অন্য রুমে যেতে না যেতেই শুনি দরজায় নক হচ্ছে। প্যারামেডিক্স চলে এসেছে। আমার বাড়ি এতটাও বড় না যে এক রুম থেকে আরেক রুমে যেতে রিকশা ভাড়া করতে হয়। বুঝেন তাহলে তাঁরা কতটা করিৎকর্মা।
তো যা বলছিলাম। প্রতিটা সেকেন্ড তাঁদের কাছে সোনার চেয়ে দামি। ইমার্জেন্সি সাইরেন শোনার সাথে সাথে অতি ব্যস্ত সড়কও থমকে দাঁড়ায়, ভিড়ের রাস্তায় গাড়ি প্রয়োজনে খাদের কিনারে সরে গিয়ে হলেও এম্বুলেন্স, পুলিশ বা ফায়ার ট্রাককে পথ করে দেয়। আমাদের দেশে লোকজনের অতিকৌতূহল, ফেসবুকের জন্য সেলফি তোলার প্রতিযোগিতার কারণেই অনেকের প্রাণ অকালে ঝরে। কোটি টাকার সম্পদ পুড়ে ছাই হয়। একবার এনটিভি অফিসে আগুন লেগেছিল। আরেকবার বসুন্ধরা মার্কেটে। টিভিতে লাইভ দেখছিলাম ভিডিও। জনতার ভিড়ে দমকল বাহিনী পৌঁছাতেই পারছিল না। আফসোস।
এখানেও মানুষের কৌতূহল আছে, কিন্তু একই সাথে তাঁদের সাধারণ বোধ শক্তিও আছে। তাঁরা জানে, তাঁদের কৌতূহলের চেয়েও বেশি জরুরি মানুষের প্রাণ বাঁচানো। ইমার্জেন্সি সার্ভিস পৌঁছানোর এক সেকেন্ডেরও কম সময় অনেক ক্ষেত্রে জীবন মৃত্যুর মাঝে ব্যবধান টেনে আনে। স্ট্রোক বা হার্ট এটাকের রোগী, কিংবা আগুনে বন্দি হওয়া মানুষের কাছে গিয়ে একবার জানতে চান সেকেন্ডের মূল্য কি।
তা একদিন এখানে এক বাড়িতে আগুন লাগলো। যেহেতু অ্যামেরিকার সব বাড়িই কাঠের তৈরী, তাই আগুন ধরলে সেটা ছড়াতে খুব বেশিক্ষন লাগেনা।
ইমার্জেন্সি ফায়ার ট্রাক সময় মতন পৌঁছালও বটে। কিন্তু ইউনিভার্সিটি অফ নর্থ ডাকোটার এক ছাত্র ম্যাটের প্রাণ তাঁরা বাঁচাতে পারলো না। ম্যাটের বয়স ছিল মাত্র একুশ।
ষোল বছর বয়সে ম্যাট অর্গান ডোনার হিসেবে সাইন আপ করে ফেলেছিল। তাই তাঁর শরীর কবর দেয়ার আগে ডাক্তাররা তাঁর কিডনি, লিভার এবং হার্ট সরিয়ে ফেলেছিল।
আট মাস পর তাঁর বোন, মা এবং বাবা এক বৃদ্ধের সাথে দেখা করেন। বৃদ্ধকে তাঁরা জড়িয়ে ধরেন। আবেগহীন বলে কুখ্যাত মার্কিনিদের প্রত্যেকের চোখে তখন অশ্রু ঝরছে। একে একে স্টেথেস্কোপ দিয়ে তাঁরা বৃদ্ধের হৃদস্পন্দন শুনছেন। ওটা যে ম্যাটের হৃদপিন্ড!
এই ম্যাট মরে গিয়েও বাঁচিয়ে দিয়েছে ছেচল্লিশ বছর বয়স্কা এক রমণীকে। তাঁর কিডনির প্রয়োজন ছিল। ম্যাটের এক কিডনিই তাঁর প্রাণ রক্ষা করেছে। অপর কিডনি বাঁচিয়েছে ছাপ্পান বছর বয়সী রমণীর প্রাণ। একষট্টি বছর বয়সী এক বৃদ্ধের প্রাণ রক্ষা পেল ম্যাটের লিভারে।
অর্গান ডোনেশন যে খুবই মহৎ একটি কর্ম, এতে কোনই সন্দেহ নাই।
এখন আসে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। ইসলাম অর্গান ডোনেশন নিয়ে কী বলে?
গত মাসেই আমার সাথে কথোপকথনে আমার এক চাচা অভিযোগ করছিলেন, "মুসলিমদের সমস্যা কী? অর্গান ডোনেশনকে হারাম বলে কেন?"
আমরা কী কখনও চিন্তা করেছি এটি কী আসলেই হারাম? আর হারাম হলেও কেন হারাম?
দেখা যাক কুরআন হাদিস কী বলে।
কুরআনের কোথাও একটি আয়াত নাই যেখানে বলা হয়েছে শরীরের কোন অর্গান "ডোনেট" করা যাবেনা। হাদিসেও নেই। যুক্তি আসতে পারে তখনতো অর্গান ট্রান্সপ্ল্যান্টেশনের কোন টেকনোলজিই ছিল না। কুরআনে যদি আয়াত থাকতো তাহলেতো লোকে তখন বুঝতো না।
কিন্তু কুরআনে এমন অনেক আয়াতই এডভান্স নাজেল হয়েছিল যা তখনকার সময়ে সাহাবীরা বুঝেননি, কিন্তু ভবিষ্যতে বুঝতে পেরেছিলেন।
হাদিসের ক্ষেত্রেও তাই।
যাই হোক, আমাদের ধর্মে ইজমা এবং কিয়াস নিয়ম চালু থাকায় এই এক সুবিধা হয়েছে। কনটেম্পোরারি বিষয়ের উপর স্কলার লেভেলে আলোচনা হয়ে তাঁরা যা নির্ধারণ করবেন, সেটাই তখন ইসলামিক আইন হয়ে যাবে। কেউ কেউ আপত্তি করতে পারেন, যেহেতু কোরান হাদিসে নাই, তাই ইজমা মানিনা।
কিন্তু ইজমার যথার্থতার যুক্তিতে একটি হাদিস বর্ণনা করা হয়, "My ummah will never agree upon an error."
Reference : Sunan Abi Dawud 4253
In-book reference : Book 37, Hadith 14
English translation : Book 36, Hadith 4240
মানে হচ্ছে, ইজমা মানতেই হবে।
যাই হোক, এই অর্গান ডোনেশন ইস্যুতে মক্কা, রিয়াদ, মালেশিয়া ইত্যাদি শহরে নিয়মিত কনফারেন্স হয়ে থাকে। বিশ্বের শ্রেষ্ঠ শ্রেষ্ঠ ইসলামিক মাথা সেখানে একত্রিত হন। এবং তারপর তাঁরা এই নিয়ে আলোচনা করে ঐক্যমতে আসার চেষ্টা করেন। দুঃখজনক হলেও সত্য, কিছু ক্ষেত্রে স্কলার লেভেলে সবাই একমত হন না। এবং এটা কোন দোষের কিছু না। আমাদের সাহাবীগণও নবী (সঃ) বেঁচে থাকাবস্থাতেই অনেক সময়ে অনেক বিষয়ে ঐক্যমত প্রকাশ করেননি। ফেমাস ইন্সিডেন্ট ছিল বনু কুরাইযা অভিযানে রাসূলের (সঃ) হাদিস নিয়ে দ্বন্দ্ব। রাসূল(সঃ) বলেছিলেন, বনু কুরাইযা পর্যন্ত না পৌঁছে কেউ আসর নামাজ পড়বে না।
একদল সাহাবী রাস্তায় থাকাবস্থায় দেখলেন আসর ওয়াক্ত শেষ হয়ে যাচ্ছে। তাঁরা পথেই নামাজ পড়তে চাইলেন। তাঁদের যুক্তি, নবী (সঃ) তাড়াহুড়া বুঝাতে ভাবপ্রকাশে বলেছেন, আক্ষরিক অর্থে না।
আরেকদল বললেন, নবীর বাণী আক্ষরিক অর্থেই পালন করতে হবে।
দুই ভাগ হওয়া সাহাবীগণ যখন রাসূলের (সঃ) কাছে কে সঠিক জানতে চাইলেন, নবীজি (সঃ) কাউকেই ভুল বলেননি।
আরেকটা ঘটনা বলি। আগেই এইসব ঘটনা বিস্তারিত বলছি, যাতে আপনারা মূল আলোচনার গুরুত্ব বুঝতে পারেন।
আমর ইব্নে আল আস (রাঃ) তখন মাত্রই মুসলিম হয়েছেন। মক্কা থেকে হিজরত করা শেষ ব্যাচের সাহাবী তিনি। নবী (সঃ) তাঁকে নেতা বানিয়ে এক অভিযানে পাঠিয়ে দিলেন। পথে এক রাত্রে তাঁর স্বপ্নদোষ হলো। এদিকে মরুর বুকে তখন শীত নেমেছে। যারা কখনও শুষ্ক রুক্ষ আবহাওয়ায় থাকেননি, তাঁরা কল্পনাও করতে পারবেন না শীত কেমন ভয়ংকর হতে পারে। একদম হাড্ডিতে গিয়ে কাঁপন ধরায়।
এখন ইসলামের সাধারণ নিয়ম হলো, স্বপ্নদোষ হলে গোসল করতেই হবে। কিন্তু সেই ভয়াবহ ঠান্ডায় গোসল করলে আমর (রাঃ) জানতেন তিনি নির্ঘাত মারা যাবেন।
তাই তিনি গোসল না করেই কেবল তায়াম্মুম করে ইমামতি করলেন। এবং অভিযান শেষে ফেরৎ আসার পর সব সাহাবী একযোগে আমরের (রাঃ) বিরুদ্ধে বহু অভিযোগের তালিকা ধরিয়ে দিলেন। সেই তালিকায় এই ঘটনা ছিল উপরের দিকে।
রাসূল (সঃ) তাঁকে যখন জানতে চাইলেন, "তুমি কী জানাবা থাকা অবস্থায় ইমামতি করেছিলে?"
আমর (রাঃ) তখন, "ইয়া রাসূলাল্লাহ (সঃ)! আমি শুনেছি আল্লাহ এও বলেছেন "তোমরা নিজেদের হত্যা করো না। নিঃসন্দেহে আল্লাহ তা’আলা তোমাদের প্রতি দয়ালু। (৪:২৯)"
এই কথা শুনে রাসূলুল্লাহ হেসে দিয়েছিলেন, এবং তিনি "ভুল" করেছিলেন বলে কোন কথা বলেননি।
এই গেল কোন ইস্যুতে সাহাবীদের মধ্যেই দ্বিমতের কথা।
এখন মূল প্রসঙ্গে আসি।
জ্বি, আমাদের স্কলার লেভেলে অর্গান ডোনেশন নিয়ে দ্বিমত আছে। তবে জীবিত মানুষের অর্গান ডোনেশন নিয়ে সবাইই ঐক্যমতে আছেন। তাঁদের যা মতভেদ সেটা মৃতের অর্গান ডোনেশন নিয়ে।
তা প্রথমে জীবিতদের অর্গান ডোনেশন নিয়ে কথা বলা যাক। কিছু কন্ডিশন মেনে চলতে হবে।
১. মেজর লস করা যাবেনা। কোন অবস্থাতেই নিজের "প্রাণের" ক্ষতি করা যাবেনা। আমি রক্ত দান করতে পারি, নিজের এক কিডনি দান করতে পারি, নিজের একটি চোখও দান করতে পারি - কিন্তু কোন অবস্থাতেই নিজের হার্ট দান করে দিতে পারবো না। এতে আমি নিজেই মরে যাব। আমার মৃত্যু ঘটিয়ে অন্যের প্রাণ রক্ষা করা যাবেনা।
২. মেজর বেনিফিট হতে হবে। কেউ মারা যাচ্ছে, তাঁর "প্রাণ রক্ষার" প্রয়োজনে আমি অর্গান ডোনেট করতে পারবো। কারোর বিনোদন বা ফূর্তির জন্য আমি নিজের অর্গান দিয়ে দিতে পারবো না।
৩. বিক্রি করা যাবেনা। নিজের কিডনি বেঁচা যাবেনা। রক্ত বেঁচা যাবেনা। আমাকে দান করতে হবে।
এই তিন কন্ডিশন এপ্লাই করলে জীবিত মানুষের অর্গান ডোনেশনে কোনই সমস্যা নাই।
এইবার আসা যাক সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে। মৃতের অর্গান ডোনেশন নিয়ে। যেখানে স্কলাররা বিভক্ত।
প্রথমে জানা যাক যারা বিরোধিতা করছেন, কেন করছেন।
ইসলামে মৃতদেহের বিকৃতি ঘটানো হারাম। সহীহ হাদিস আছে। মৃতদেহ যদি শত্রুরও হয়, এবং সেই শত্রু আমার নিজের অতি আপনার লোকের মৃতদেহের বিকৃতি ঘটিয়েছে - তারপরেও তার মৃতদেহের বিকৃতি আমরা ঘটাতে পারবো না। উহুদের যুদ্ধে হজরত হামজার মৃতদেহের টুকরো টুকরো অবস্থা দেখে আবেগের বশবর্তী হয়ে রাসূল (সঃ) চেয়েছিলেন কুরাইশদেরও মৃতদেহের এমন অবস্থা করতে। আল্লাহ নিষেধ করেন। এবং রাসূল (সাঃ) সাথে সাথে নিজের আবেগ সামলে সাধারণ নিয়ম করে কোন মৃতদেহেরই বিকৃতি নিষিদ্ধ করেন।
যেহেতু রাসূলের নির্দেশ, সেহেতু মৃত দেহের কোন অর্গান নেয়াকে তাঁরা সমীচীন মনে করেন না।
যারা এর পক্ষে কথা বলেন, তাঁদের যুক্তি, মৃতদেহের বিকৃতি তখনই ঘটানো হয় যখন তাঁর হাত পা মাথা নাক মুখ কাটা হয়। অর্গান ডোনেশনে যা করা হয়না। ডাক্তাররা অতি সাবধানতার সাথে তাঁর শরীরের ভিতরের অর্গান সরিয়ে আনেন। তারপর সেলাই করে শরীরকে আবারও আগের মতই সুন্দর করে দেন। আমাদের শারীরিক কাঠামো হাড্ডির গঠনের উপর টিকে থাকে। হাড্ডি যেহেতু কেটে টুকরো করা হচ্ছেনা, কাজেই টেকনিক্যালি মিউটেলেশন ঘটছে না।
এখন এই ক্ষেত্রেও তাঁদের কিছু কন্ডিশন আছে যা মানতেই হবে।
১. মৃতের মত থাকতে হবে। জীবিতাবস্থায় তাঁর সম্মতি থাকতে হবে তাঁর অর্গান ডোনেশনের ব্যাপারে। যেমনটা উপরে ম্যাটের ছিল। মৃতের যদি স্পেসিফিক অসম্মতি থাকে, তবে কোন অবস্থাতেই তাঁর অর্গান ডোনেট করা যাবেনা।
২. যদি কেউ নিশ্চিত না হন মৃতের সম্মতি বা অসম্মতির ব্যাপারে - তাহলে মৃতের উপর যার অধিকার বেশি, যেমন স্বামী/স্ত্রী, বাবা-মা, অথবা সন্তানগণ, তাঁরা সিদ্ধান্ত নিবেন। অন্য কেউ মাতবরি করলে চলবে না।
৩. এক্ষেত্রেও অর্গান বিক্রি করা যাবেনা। দান হতে হবে। মৃত্যুর পর আপনার আত্মীয়স্বজন আপনার শরীর বিক্রি করে টাকা কামাতে পারবেনা।
এদের জন্য সবচেয়ে বড় মোটিভেশন কুরআনের আয়াত, যেখানে আল্লাহ বলছেন, "যে একটি মানুষের জীবন রক্ষা করে, সে যেন গোটা মানবজাতির জীবন রক্ষা করে।" (সূরা মায়েদাহ ৩২)
ইহুদিদের ধর্মীয় গ্রন্থেও আল্লাহর এই বাণীটি এখনও অবিকৃত অবস্থায় রয়েছে। "Whoever destroys a soul [of Israel], it is considered as if he destroyed an entire world. And whoever saves a life of Israel, it is considered as if he saved an entire world. Mishnah Sanhedrin 4:5; Yerushalmi Talmud 4:9, Babylonian Talmud Sanhedrin 37a."
উপরের ঘটনায় ম্যাটের মাধ্যমে প্রাণ পেল চার চারজন ব্যক্তি। পৃথিবীর বর্তমান জনসংখ্যা সাড়ে সাত বিলিয়ন। চার দিয়ে গুন দিন। জ্বি, ক্যালকুলেটর লাগবে, এবং সাধারণ ক্যালকুলেটরে সেই সংখ্যা ধরবেন না। সোয়াবের পরিমান বুঝতে পারছেন? একুশ বছরের ছেলে ম্যাট একাই নিয়ে নিল, আর আমরা ফেসবুকে সাকিবের বৌয়ের পর্দা ইস্যুতে জীবন কাটিয়ে দিলাম।

মেডিক্যাল সায়েন্স এখন উল্কার গতিতে এগুচ্ছে। খুব শীঘ্রই ক্লোন করে অর্গান তৈরী প্রথা শুরু হবে। তখন আর হাত, পা, কিডনি লিভার নিয়ে চিন্তা করতে হবেনা। প্রতিদিন বিরিয়ানি খাওয়া নিয়ে চিন্তা করতে হবেনা। হার্ট নষ্ট হলে আরেকটা পাওয়া যাবে। কিন্তু সেটা ভবিষ্যতের কথা। বর্তমানে এখনও মুমূর্ষু মানুষ আমাদের দিকে তাকিয়ে থাকেন। এক ভারতেই প্রতিদিন যত মানুষ মরে, সবার চোখ দিয়ে পুরো ভারতের অন্ধত্ব দূর করা সম্ভব। পুরো বিশ্বের ক্ষেত্রেও ব্যাপারটা তাই।
আমরা সবাই অমর হতে চাই, অর্গান ট্রান্সপ্ল্যান্টেশনের মাধ্যমে অন্যের শরীরে যে বেঁচে থাকা যায় - সেটাই উপলব্ধি করি না।

কেউ কেউ বোকার মতন প্রশ্ন করেন, আল্লাহ বলেছেন শেষ বিচারের দিন শরীরের অঙ্গ প্রত্যঙ্গ আমাদের পক্ষে-বিপক্ষে সাক্ষ্য দিবে। আমার শরীরের অর্গান যদি অন্যকে দিয়ে দেই, বা অন্যের শরীরের অর্গান নিজের শরীরে নেই - তাহলেতো প্যাঁচ খেয়ে যাবে।
উত্তর দেয়ার আগে আমার পাল্টা প্রশ্ন, আপনি আল্লাহর অসীম ক্ষমতায় বিশ্বাসী, অথচ এই শঙ্কা করছেন যে অর্গানের "মেমরি" আল্লাহ হ্যান্ডেল করতে পারবেন না?
উত্তর হচ্ছে, যখন যার শরীরে যেই অর্গান যতক্ষণ থাকবে, সেটা ততক্ষন তাঁর মালিকাধীন থাকবে। আপনাকে আপনার মালিকাধীন অবস্থার অর্গানের জন্য জবাবদিহি করতে হবে। অন্যেরটা নিয়ে মাথা ঘামানোর প্রয়োজন নেই।
আরেকটি বোকার মতন প্রশ্ন, "কেয়ামতের দিন যখন আমাকে জীবিত করা হবে, আমি যদি আমার অর্গান দিয়েই দেই - তাহলে সেটা পাব কোত্থেকে?"
সূরা ইয়াসিনের ৭৮ থেকে সর্বশেষ আয়াতে এই বিষয়ে আল্লাহ বলেছেন, "সে আমার সম্পর্কে এক অদ্ভূত কথা বর্ণনা করে, অথচ সে নিজের সৃষ্টি ভুলে যায়। সে বলে কে জীবিত করবে অস্থিসমূহকে যখন সেগুলো পচে গলে যাবে? বলুন, যিনি প্রথমবার সেগুলোকে সৃষ্টি করেছেন, তিনিই জীবিত করবেন। তিনি সর্বপ্রকার সৃষ্টি সম্পর্কে সম্যক অবগত। যিনি তোমাদের জন্যে সবুজ বৃক্ষ থেকে আগুন উৎপন্ন করেন। তখন তোমরা তা থেকে আগুন জ্বালাও। যিনি নভোমন্ডল ও ভূমন্ডল সৃষ্টি করেছেন, তিনিই কি তাদের অনুরূপ সৃষ্টি করতে সক্ষম নন? হ্যাঁ তিনি মহাস্রষ্টা, সর্বজ্ঞ। তিনি যখন কোন কিছু করতে ইচ্ছা করেন, তখন তাকে কেবল বলে দেন, ‘হও’ তখনই তা হয়ে যায়। অতএব পবিত্র তিনি, যাঁর হাতে সবকিছুর রাজত্ব এবং তাঁরই দিকে তোমরা প্রত্যাবর্তিত হবে।"
মানে হচ্ছে, আল্লাহ যখন আপনাকে মাটির দলা থেকে আবারও সৃষ্টি করবেন, তখন তিনি অর্গান সহই সৃষ্টি করবেন। ওটা নিয়ে আল্লাহকেই ভাবতে দিন। আমরা নাহয় আমাদের কৃতকর্ম নিয়েই ভাবি।

মন্তব্য ১৫ টি রেটিং +৪/-০

মন্তব্য (১৫) মন্তব্য লিখুন

১| ২৮ শে নভেম্বর, ২০১৮ রাত ১:০৮

আর্কিওপটেরিক্স বলেছেন: সুন্দর পোস্ট

২৯ শে নভেম্বর, ২০১৮ রাত ১২:২৮

মঞ্জুর চৌধুরী বলেছেন: থ্যাঙ্ক ইউ। :)

২| ২৮ শে নভেম্বর, ২০১৮ রাত ১:২৬

আরোগ্য বলেছেন: এ বিষয়ে অনেক কিছু জানতে পারলাম। দেখি বাকীরা কি বলে। খুবই জটিল একটা ব্যাপার। আল্লাহ আমাদের সঠিক মাসআলা প্রদান করুন।

২৯ শে নভেম্বর, ২০১৮ রাত ১২:২৮

মঞ্জুর চৌধুরী বলেছেন: ধন্যবাদ।

৩| ২৮ শে নভেম্বর, ২০১৮ রাত ১:৩৫

ইব্‌রাহীম আই কে বলেছেন: অনেক সুন্দর আলোচনা করেছেন। অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্যও উপস্থাপন করেছেন। ধন্যবাদ।

২৯ শে নভেম্বর, ২০১৮ রাত ১২:৩০

মঞ্জুর চৌধুরী বলেছেন: ধন্যবাদ!

৪| ২৮ শে নভেম্বর, ২০১৮ রাত ২:৩৩

নতুন বলেছেন: মানুষের জন্য ভালো কিছু ধম`র অজুহাতে নিষেধ করা উচিত না।

২৯ শে নভেম্বর, ২০১৮ রাত ১২:২৯

মঞ্জুর চৌধুরী বলেছেন: ধর্ম এসেছেই মানুষের কল্যাণের জন্য।

৫| ২৮ শে নভেম্বর, ২০১৮ সকাল ৭:৩৪

ভিন্নচিন্তা ভিন্নমত ভিন্নপথ বলেছেন: @ মন্জুর চৌধুরী- জনাব, মুসলিমরা এখনো নামাজের সময় বুকের উপর হাত বাঁধবে না নাভীর উপর রাখবে, আমিন জোরে বলবে না আস্তে বলবে এই সব জটিল ব্যাপারেই একমত হতে পারে নাই, আপনি এসেছেন অর্গান ডোনেশনের হালাল/হারাম যাচাইয়ের পোস্ট নিয়ে।

এখনো বিবি তালাকের ফতোয়ার ফয়সালা হয়নি, বায়াত্তর ফেরকার মধ্যে কোন ফেরকা বেহেশত যাবে তার ফয়সালা হয়নি, তারাবীহ নামাজ 20/8 রাকাতের সমাধান হয়নি, পীর ধরা/মাযারে যাওয়া জায়েজ না নাজায়েজ, মিলাদ পালন সহীহ না বিদাত এইসব .....অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের মতৈক্য হয় নি ।

আপনার ইজমা কিয়াস দিয়ে এইসবের সমাধান দিতে পারেন কিনা দেখেন, তারপর না হয় অর্গান ডোনেশনের মত জটিল বিষয়ে আলাপ করা যাবে।

২৯ শে নভেম্বর, ২০১৮ রাত ১২:২৭

মঞ্জুর চৌধুরী বলেছেন: জনাব ভিন্ন চিন্তা ভিন্ন মত, আপনি যেসবের কথা বলছেন, সেসব বহুযুগ আগেই সমাধান হয়ে গেছে। যারা মানেনা, তারা অজ্ঞতা, মূর্খতার কারণেই মানেনা। এখানে স্কলার লেভেলে অনৈক্য নেই। এই কারণেই বলা হয়েছে পড়তে। আমাদের দেশের লোকে শুনে মুসলমান, জেনে নয়।

৬| ২৮ শে নভেম্বর, ২০১৮ সকাল ৮:২৪

রাজীব নুর বলেছেন: আপনার পোষ্ট গুলো আমার ভালো লাগে। জীবন বাস্ততা আর ধর্ম মিলেমিশে ফানাফানা করে দেন।

২৯ শে নভেম্বর, ২০১৮ রাত ১২:২৭

মঞ্জুর চৌধুরী বলেছেন: আপনার মন্তব্যও ভাল লাগে। :)

৭| ২৮ শে নভেম্বর, ২০১৮ সকাল ৯:২৫

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন:
যে জ্ঞান সাধনার আহবানের মাধ্যেম হয়েছে ইসলামের আগমন- তারাই ভুলে গেছে সে আহবান!
যে অন্ধত্ব থেকে বাঁচাতে ধর্ম এল আলো লয়ে-আজ ধার্মিকের লেবাসে সেই অন্ধত্ব প্রগাঢ়!
আলো চাই আলো। জ্ঞানের আলো। ধ্যানের আলো। মুক্তির আলো!
আলোকিত হোক পৃথিবী!
বিশ্বাসের মৌলিক পাঠ হোক স্বচ্ছ
জ্ঞানের চর্চায় হোক ইবাদত
মুক্তির আলোয় আলোকিত হোক বিশ্ব।

দারুন উপস্থাপনায় মুগ্ধ সহমত।
++++++++++

২৯ শে নভেম্বর, ২০১৮ রাত ১২:২৭

মঞ্জুর চৌধুরী বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই।

৮| ২৯ শে নভেম্বর, ২০১৮ সকাল ১১:৩১

মোস্তফা সোহেল বলেছেন: লেখাটি পড়ে অনেক ভাল লাগল ভাইয়া।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.