নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মঞ্জুর চৌধুরী

আমি ঝন্ঝা, আমি ঘূর্ণি, আমি পথ-সমূখে যাহা পাই যাই চূর্ণি’। আমি নৃত্য-পাগল ছন্দ, আমি আপনার তালে নেচে যাই, আমি মুক্ত জীবনানন্দ। আমি হাম্বার, আমি ছায়ানট, আমি হিন্দোল, আমি চল-চঞ্চল, ঠমকি’ ছমকি’ পথে যেতে যেতে চকিতে চমকি’ ফিং দিয়া দিই তিন দোল; আমি চপলা-চপল হিন্দোল। আমি তাই করি ভাই যখন চাহে এ মন যা, করি শত্রুর সাথে গলাগলি, ধরি মৃত্যুর সাথে পান্জা, আমি উন্মাদ, আমি ঝন্ঝা! আমি মহামারী আমি ভীতি এ ধরিত্রীর; আমি শাসন-ত্রাসন, সংহার আমি উষ্ন চির-অধীর! বল বীর - আমি চির উন্নত শির!

মঞ্জুর চৌধুরী › বিস্তারিত পোস্টঃ

ডিভোর্স নাকি পরকীয়া?

০৮ ই মে, ২০২১ রাত ১১:৫৮

অতি সেনসিটিভ বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে যাচ্ছি। সিংহভাগেরই কথাগুলো হজম হবেনা, এইটা মেনেই লেখা। খোলা মনে বুদ্ধি ও লজিক খাটিয়ে পড়ার অনুরোধ রইলো।

বিল গেইটসের ডিভোর্স হওয়ায় বাঙালির রাতের ঘুম হারাম হয়ে গেছে। "সাতাশ বছরের সংসার এইভাবে ভেঙ্গে গেল।" "তিনটা ছেলেমেয়ে হবার পরেও এইভাবে তালাক হলো!" এই থেকে শুরু হয়ে মানুষের আলোচনার বিষয় মেলিন্ডা, বিশেষ করে বিলের ব্যক্তিগত চরিত্র পর্যন্ত গড়াচ্ছে। "নিশ্চই সে অন্য কোন মেয়ের প্রেমে পড়েছে।" "বুড়া কাকুর কচি মাইয়া দরকার, তাই বিয়া ভাঙছে, যাতে নতুন বিয়া করতে পারে।" কথাবার্তায় আরও জঘন্য ভাষা ব্যবহার করা হচ্ছে, ওসব আর উল্লেখ করলাম না।
তা ডিভোর্সকে আমাদের উপমহাদেশীয় কালচারে নিষিদ্ধ বিষয় হিসেবে গণ্য করা হয়। কারোর ডিভোর্স হয়েছে, নিঃসন্দেহে এটি দুঃসংবাদ, কিন্তু কোন অবস্থাতেই "অপরাধ" নয়। রাষ্ট্রীয়, ধর্মীয় কোন দিক দিয়েই নয়। অথচ আমাদের দেশের সমাজে এমনভাবে এ নিয়ে আলোচনা হয় যেন এটি বিরাট কোন অপরাধ। এবং এর পেছনে দায়ী কে তা খুঁজে বের না করা পর্যন্ত সমাজের লোকের ঘুম হয় না। কথা হচ্ছে, আমরা বুঝিতো যে "ডিভোর্স" বিষয়টা আসলে কি? তার আগে জানা যাক, "বিয়েটা" কি।

ইসলামিক মতে, বিয়ে হচ্ছে স্বামী এবং স্ত্রীর মধ্যে এক ধরনের চুক্তি। বলিউড ঢালিউড সিনেমায় যেমন দেখায়, বিয়ে মানে জন্ম জন্মান্তরের বন্ধন, মৃত্যু ছাড়া একে ভাঙ্গার কেউ নাই, ইত্যাদি ইত্যাদি সব অতিরঞ্জন ছাড়া কিছুই না। বাস্তবের বিয়ে হচ্ছে ছেলেপক্ষ কিছু শর্ত নিয়ে হাজির হবে, মেয়েপক্ষ কিছু শর্ত নিয়ে, তারপরে দুই পক্ষের সমঝতায় সাক্ষীর উপস্থিতিতে সেই চুক্তিনামায় সাক্ষর হবে। এই শর্তগুলোর মাঝেই প্রেম ভালবাসা যেমন থাকবে, তেমনই অতি জরুরি বিষয়েরও উল্লেখ থাকবে। যেমন স্ত্রীর ভরনপোষনের দায়িত্ব স্বামীর, কতটাকা মোহরানা আদায় হলো, কত বাকি রইলো, স্বামী দ্বিতীয় বিয়ে করতে পারবেন কিনা, স্ত্রীর তালাক দেয়ার অধিকার ইত্যাদি সবকিছুই উলেখ থাকবে। চুক্তির শর্ত ভঙ্গ হলে যেকোন পক্ষেরই অধিকার আছে সেই সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে আসার। যেকোন ব্যবসায়িক বা সাধারণ চুক্তির সাথে এর কোন পার্থক্যই নেই। আমার ধারণা, দুনিয়ার মোটামুটি সব দেশেই বিয়ের সংজ্ঞা ও নিয়ম এই।

এখানে আমাদের দেশের কিছু কালচারাল ব্যাপার ঢুকে যায়, যা কোন অবস্থাতেই গ্রহণযোগ্য না।
যেমন, এই অতি আধুনিক যুগেও ছেলে/মেয়ের অমতে বিয়ে দেয়া। ছেলে মেয়ে হয়তো অন্য কাউকে পছন্দ করে যাকে ছেলে/মেয়ের অভিভাবকের পছন্দ না। অথবা, ওরা নিজেরাই হয়তো অনেক কারণেই বিয়ের জন্য তৈরী না, কিন্তু অভিভাবক চাইছেন এখনই বিয়ে দিয়ে দিতে। এক্ষেত্রে দেখা যায় জোর জবরদস্তি আর ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইলের মাধ্যমে বিয়ে দেয়া হয়। জেনে রাখুন, ইসলামিক মতেই, যদি ছেলে/মেয়ে মন থেকে বিয়েতে রাজি না থাকে, তাহলে সেই বিয়ে অবৈধ। আপনি যতই লাখখানেক মানুষকে সাক্ষী রেখে ও বিপুল আয়োজনের মাধ্যমে ধুমধাম করে বিয়ে দেন না কেন।

আমাদের সিলেটের কথাই ধরেন। সিলেটি মেয়ের বাপ মেয়ের পছন্দের ছেলেটির সাথে বিয়ে দিবে না। ছেলের স্বভাব চরিত্রে, বা লেখাপড়ায়, বংশ মর্যাদায় কোনই সমস্যা নেই - সমস্যা বা দোষ বলতে একটাই, সে সিলেটি না। তাই মেয়েকে জোর করে এমন কারোর সাথে বিয়ে দেয়া হবে যাকে হয়তো মেয়েটা মন থেকে মেনে নিতে পারবে না। এইটা কোন কথা হলো?
হ্যা, যদিও ইসলাম বলে বিয়েতে বংশ মর্যাদা, পারিবারিক শিক্ষা ইত্যাদি বিষয় বেশি আমলে না নিতে, বরং চরিত্র ও তাকওয়াই প্রধান হওয়া উচিৎ, আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকেই বলবো, যে যেমন পরিবার, পরিবেশ ও বংশ মর্যাদায় বড় হয়েছে, সে যদি সমান না পায় (উপর নিচ না, সমানে সমান হতে হবে) তাহলে সেই বিয়েতে সমস্যা হতে বাধ্য। এক্ষেত্রে সিলেটি পিতার আপত্তির কারন যদি এই হয় যে মেয়েটি তাঁদের সামাজিক স্ট্যাটাসের চাইতে বড় (বসুন্ধরার মালিকের ছেলে) অথবা ছোট (কোন নিচু উপার্জনের পরিবারের) ছেলেকে পছন্দ করেছে, তখন এই আপত্তির কারনটা যথেষ্ট জোরালো। জমিদার বাড়িতে ফকির বাড়ির কেউ উঠে আসলেও সমস্যা, আবার জমিদার বাড়ির কেউ ফকির বাড়িতে গেলেও সমস্যা। কাজেই বিয়ের সময়ে সমানে সমান হবার চেষ্টা করুন। আপনি মজু ব্যাপারীর ছেলে হয়ে প্রিন্স উইলিয়ামের মেয়েকে বিয়ে করতেই পারেন, কিন্তু সেই বিয়ে টিকার সম্ভাবনা শূন্য। উপরে যে সিলেটির উদাহরণ দিলাম, একটি সিলেটি মেয়ে, যে সিলেটের বাইরে জন্মে বেড়ে উঠেছে, সে কিন্তু তখন ঐ বাইরেরই হয়ে যায়। যেমনটা প্রবাসীদের ছেলে মেয়েরা হয়ে থাকেন। আমেরিকায়, অস্ট্রেলিয়ায় বা ইংল্যান্ডে জন্ম নেয়া শিশু, সেখানকার আলো বাতাস পরিবেশে বেড়ে উঠে ওদেরই একজন হয়ে যায়। আপনি যতই পহেলা বৈশাখে পান্তা ইলিশ খাওয়ান বা ঈদের দিনে মাংস রেজালা। ওরা বিয়ের সময়ে ওদের মাঝেই কাউকে খুঁজবে। সে কালো হোক, সাদা হোক অথবা ওদের মতোই বিদেশে বেড়ে ওঠা বাঙালি কেউ। আমাদের এই সহজ সত্যটা মেনে নিতেই হবে। এখানে জোর জবরদস্তি করলেই সমস্যা। আপনি শহরে জন্মে পড়াশোনা করে চাকরি করে প্রতিষ্ঠা পাবার পরে গ্রাম বাংলার কোন ছেলে/মেয়েকে বিয়ে করেন? অথবা বিদেশী কাউকে? এখানেও ব্যাপারটা ঠিক তাই।
তা যা বলছিলাম, যদি ছেলে/মেয়ের অমতে বিয়ে হয়, কিংবা বিয়ের পরে দেখা গেল মতের মিল হচ্ছে না, কোন অবস্থাতেই এক সাথে থাকা সম্ভব না; অথবা দেখা গেল বিয়ের বহুদিন পরে দুইজনের রাস্তা দুইদিকে বাঁক নিচ্ছে, এতটাই যে আর কোন অবস্থাতেই দুইজনের এক বিন্দুতে মেলা সম্ভব না; তখন? তখন কি আলাদা হয়ে যাওয়াই ভাল না? সমাজের কথা চিন্তা করে, বাচ্চাদের কথা চিন্তা করে ইত্যাদি ইত্যাদি বিষয় মাথায় রেখে নিজের অমতে এমন কারোর সাথে সংসার করে যাওয়াটা কতটা যৌক্তিক? যে ছেলে/মেয়ের কথা চিন্তা করে নিজের জীবন নষ্ট করলেন, বিয়ের পরে ওদের কেউই আপনাকে ওদের সংসারে রাখতে চাইলো না, তখন? আর সমাজতো কোন কালেই আপনার জন্য কিছু করবে না। বৃদ্ধাশ্রমে আপনি পড়ে থাকলে আপনার সন্তানদের গালাগালি করবে - ব্যস এই পর্যন্তই। এখন চিন্তা করে বলেন, জীবন গোছানোর সুযোগ যখন থাকে, তখনই কি গুছিয়ে ফেলা উচিৎ না?
আপনি জানেন আপনার ব্যবসায়িক পার্টনার ক্যাশ টাকা মেরে দেয়। কোম্পানির সম্পদ লুটে খায়। কাজে ফাঁকি দেয়, কোম্পানির সম্মানেরও বারোটা বাজায়। আপনি যে ফিলোসফিতে বিশ্বাস করে ব্যবসা শুরু করেছিলেন, সে বহু আগেই সেই ফিলোসফির বাইরে চলে গেছে। তারপরেও কি আপনি সেই পার্টনারের সাথে ব্যবসা চালিয়ে যাবেন? বিয়ের ক্ষেত্রে তাহলে যুক্তি কি? পার্থক্য কি?

আসমা বিনতে আবু বকর (রাঃ) ছিলেন আবু বকরের কন্যা, আমাদের সুন্নি মুসলিমদের বিশ্বাস অনুযায়ী, নবী রাসূলদের পরে দুনিয়ার বুকে কদম ফেলা সবচেয়ে উত্তমতম পুরুষ ছিলেন আবু বকর(রাঃ)। তিনি ছিলেন হজরত আয়েশার (রাঃ) বোন। বিয়ে হয়েছিল জুবেইর ইবনে আউয়ামের (রাঃ) সাথে, যিনি জীবিত থাকাবস্থাতেই বেহেস্তের সুসংবাদ পাওয়া সেরা দশ সাহাবীর একজন ছিলেন। এই দম্পতির আটটি সন্তান হয়েছিল, তারপরে আসমা (রাঃ) ডিভোর্স দিয়ে চলে আসেন। মতের মিল হয়নি, সমস্যা হচ্ছিল, তিনি সংসার করতে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন, কাহিনী শেষ। কার কি বলার আছে? এই আসমাকে (রাঃ) উমার (রাঃ) বিয়ের প্রস্তাব দেন। অথচ আসমা (রাঃ) ফিরিয়ে দেন। কেন? কারন উমারকে (রাঃ) আসমা (রাঃ) নিজের জীবন সঙ্গী হিসেবে চাননি। এখানেও কাহিনী শেষ। কোন জোর জবরদস্তি কিচ্ছু না। মেয়ে বিয়েতে রাজি না, আর কোন কথা নাই।
বা হজরত আয়েশার (রাঃ) মুক্ত করা দাসী বারিরার ঘটনা, যখন সে মুক্ত হয়েই নিজের স্বামীকে ত্যাগ করে। স্বামী তাঁর পিছনে পিছনে অনুনয় বিনয় করতে থাকেন, স্বয়ং রাসূলুল্লাহ (সঃ) বারিরাকে পরামর্শ দেন কেননা তিনি স্বামীকে ফিরিয়ে নেন। বারিরা বিনয়ের সঙ্গেই নবীজির পরামর্শ ফিরিয়ে দেন।
কিংবা সেই মহিলার কথা, যে এসে নবীজিকে (সঃ) বলেন যে তাঁর বিয়ে তাঁর মতের বিরুদ্ধে হয়েছিল। নবী (সঃ) বলেন, তাহলে সেই বিয়ে হয়নি, চুক্তি বাতিল, তুমি মুক্ত।
সাড়ে চৌদ্দশো বছর আগের আরব মহিলাদের এই সিদ্ধান্ত গ্রহণের সাহস ছিল, স্বাধীনতা ছিল। সেই সমাজে ডিভোর্সকে কেউ গণনাতেই নিতেন না। সাত আট বাচ্চা হয়ে যাওয়ার পরেও মহিলাকে বিয়ের জন্য প্রস্তাব দেন পুরুষেরা। আমাদের দেশের সমাজে এই বর্তমান যুগেও সেটা সম্ভব না। কারন কি? "লোকে কি বলবে" - এই মেন্টালিটি।
আরে ভাই, লোকে কি বলবে সেটা ভাবতে ভাবতে আপনারা এক জীবন পার করে দেন, তারপরে বুড়া বয়সে গিয়ে উপলব্ধি করেন, লোকের আপনাকে নিয়ে ভাবনার টাইমই ছিল না। মাঝে দিয়ে নিজের জীবন বরবাদ করে ফেলা। কোন মানে হয়?
বাংলাদেশের বিগ শট কিছু ডিভোর্সের ঘটনাই নিন। হুমায়ূন আহমেদকেই ধরা যাক। তাঁর ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে এত চর্চা আমাদের, এত চর্চা আমাদের যে বলার না! দেখবেন লোকজন গুলতেকিনের ঘটনা শুনে হুমায়ূনকে গালাগালি করেন। তিনি কত সাইকো ছিলেন, কত স্বার্থপর ছিলেন, কত আত্মকেন্দ্রিক ছিলেন ইত্যাদি ইত্যাদি। তিনি স্ত্রীকে পড়তে দেননি, স্ত্রীকে কাজ করতে দেননি। সবই ঠিক আছে। আমি বিন্দুমাত্র সাফাই গাইবো না। সৃষ্টিশীল হুমায়ূন আহমেদের আমি ভক্ত, ব্যক্তি জীবনে তিনি সাধারণ মানুষ হবেন, দেবতা নন, এইটা উনার ভক্তরা মানলে মানুক না মানলে নাই, আমি মানি। তাই তাঁর সাবেক স্ত্রীর এইসব অভিযোগ সত্য হবার সম্ভাবনাই ৯৯% ধরে নিলাম। আমার কথা হচ্ছে, বিয়ের শুরু থেকেই যদি এত সমস্যা থেকে থাকে, তাহলে এতদিন সংসার টানতে গেলেন কেন? আগেই আলাদা হয়ে যেতেন। তাঁর জীবনটাও সুন্দর হতো, হয়তো ছেলেমেয়েদেরও। হয়তো হুমায়ূনও নিজের পছন্দ ও রুচি অনুযায়ী জীবন সঙ্গিনী খুঁজে নিতেন। এক সময়ে যিনি সহজ সরল লজ্জাবতী গুলতেকিনকে ভালবেসেছিলেন, পরবর্তীতে তিনি নাচ গান জানা গুনবতী এক মেয়েকে জীবন সঙ্গিনী হিসেবে পেতে চাইলেন। খুবই স্বাভাবিক ঘটনা। মানুষের ইচ্ছা, রুচি ইত্যাদির পরিবর্তন ঘটেনা? এককালে আপনি মার্সিডিজ চালাতেন, আজকে টেসলা চালান, কালকে আপনার মনে হবে ল্যান্ড রোভার কেনা যাক। আবার এমনও ঘটে যে একেকজন মানুষ আঠারো বিশ বছর পুরানো গাড়িই ধরে রাখেন। নষ্ট হলে মেরামত করেন, যত্ন নেন নিজের সন্তানের মতোই। হয়না? দুই পক্ষের কথাই বলছি আমি। এখন আমি এক নারীর সাথে সংসার করে ফেলছি বলে অন্যদেরও সেটা করে যেতে হবে - এই ধরনের অন্যায় আবদার করার অধিকার আমাকে কে দিল? আমরা কি জানি কার সংসারে কি নিয়ে সমস্যা চলছে? তাহলে তাঁদের সিদ্ধান্তে আমরা মন্তব্য করার কে?

আমাদের দেশি সমাজের মূল সমস্যা হচ্ছে, আমরা নিজেদের সুখের চাইতে সমাজকে নিয়ে অতিরিক্ত ব্যস্ত হয়ে পড়ি। বিয়ের পরে দেখা যায় অনেক সমস্যা চোখে পড়ে। পুরুষ হয়তো বৌয়ের কাছে যা চাইছে তা পাচ্ছে না, নারীরও একই অবস্থা। কিছুতেই কিছু হবার নয়। এক্ষেত্রে সবচেয়ে সহজ ও সুস্থ সমাধান হচ্ছে আলাদা হয়ে যাওয়া, এবং তারপরে নিজের নিজের ভুল থেকে প্রাপ্ত শিক্ষা কাজে লাগিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে চলা। কিন্তু আমাদের দেশে করবে কি জানেন? বিয়ে টিকিয়ে রেখে পরকীয়ায় লিপ্ত হবে। বৌয়ের কাছ থেকে এই সুখ পায়নাই, কাজেই অন্য জায়গা থেকে সেটা পেতে হবে। স্বামী কেবল টাকার পেছনেই ছুটে গেল, তাঁকে তাঁর প্রাপ্য সম্মান দিল না। যে পুরুষের কাছে সে সেই সম্মান পেল, সে সেখানেই চলে গেল। দেশের শিল্পপতি থেকে শুরু করে টুপি মাথার দাড়িওয়ালা মাওলানা হয়ে রিক্সাওয়ালা পর্যন্ত, সর্বক্ষেত্রে এক ঘটনা ঘটছে। পরকীয়া না হলে চলে প্রস্টিটিউশন। মি টু মুভমেন্টে জানা গেল অফিসের বস, আত্মীয় থেকে শুরু করে সেলিব্রেটি পর্যন্ত সবাই মেয়ে/ছেলেদের হ্যারাস করেছে। ৯০%এর বেশি ক্ষেত্রে (নাকি শতভাগই?) সবাই ছিল বিবাহিত। আপনার যদি বাইরে মুখ মারার শখই থাকে, তাহলে শুধু শুধু ঘরে বৌকে ঠকাচ্ছেন কেন? বৌর সাথে আলোচনায় বসেন, বলেন আপনার যা যা চাহিদা আছে স্ত্রী দিতে পারবেন কিনা। স্ত্রী খোলাখুলিই বলুন আপনার চাহিদাগুলো স্বামী পূরণ করতে পারবেন কিনা। যদি আলোচনায় কাজ না হয়, তাহলে সিদ্ধান্ত নিন আপোষে বিবাহ চুক্তি থেকে বেরিয়ে আসার। তারপরে সিঙ্গেল অবস্থায় আপনি আবার ট্রাই করুন। সমস্যা কোথায়? তর্ক করার আগে আমাকে এখন একটু বুঝান, কোনটা সুস্থ সমাধান? ডিভোর্স নাকি পরকীয়া? তাহলে ডিভোর্সের ব্যাপারে আমাদের এত নাক সিটকানো মনোভাব কেন?

এক পরিচিত মহিলা জানালেন উনার স্বামী ওপেনলি আরেক মহিলার সাথে প্রেম করে বেড়াচ্ছেন। মহিলা ডিভোর্স দেয়ার সাহস পাচ্ছে না কারন মহিলার শিক্ষাগত যোগ্যতা কম, চাকরির অভিজ্ঞতা নেই, ক্যাশ টাকা সম্পত্তি কিছুই তাঁর নামে নেই। তিনি স্বামীর করুনার পাত্রী হয়ে জীবন কাটাচ্ছেন, এবং এইটাই তাঁর নিয়তি হিসেবে মেনে নিয়েছেন। প্রসঙ্গ ওঠায় আরেকটি ঘটনা তুলে ধরি। এক পাঠক সেদিন এক লিংক দিলেন, যেখানে এক মাওলানা ইসলামিক মতে তালাকের ব্যাপারে নিয়ম কানুন শেখাচ্ছেন। ইসলামে মেয়েরা তালাক দিতে পারবে তখনই যদি কাবিনের শর্তাবলীতে সেটা উল্লেখ থাকে। তা মাওয়ালানা নিজেই বললেন, তিনি নিজের বিয়ের কাবিননামা থেকে সেই শর্তটি কেটে বাতিল করেছিলেন। মানে হচ্ছে, এই মাওয়ালানার স্ত্রী উনাকে তালাক দিতে পারবেন না। তা বিয়ের সময়ে ভালভাবে কাবিননামা পড়ে নিবেন। কোন দামি সম্পত্তি কেনার চাইতেও অতি জরুরি চুক্তিনামা এটি। এক্ষেত্রে তাড়াহুড়া করবেন না। আবেগাপ্লুত হবেন না। সব সম্ভাবনা মাথায় রেখেই চুক্তিনামা তৈরী করবেন।
তো যা বলছিলাম, আমাদের দেশে অনেক মহিলাই স্বামীর অত্যাচার সহ্য করে দাঁতে দাঁত চেপে সংসার চালিয়ে যান। কারন ডিভোর্সি মহিলার সামাজিক স্বীকৃতি নেই। বিয়ের বাজারে তাঁদের দাম ক্লিয়ারেন্স সেলের প্রোডাক্টের মতন। অথচ তাঁর চারপাশে লুইচ্চা বদমাইশরা ক্রমাগত ভনভন করে। এদের সবার টেস্ট ড্রাইভ করার ইচ্ছা, কিন্তু গাড়ি কিনতে কেউই আগ্রহী না। মাহার ঠিকমতন আদায় না করা, পিতার সম্পত্তির ভাগ বাটোয়ারার সময় তাঁর প্রাপ্য "হক" আদায় না করা ইত্যাদি নানা কারণেই তাঁদের এই সমস্যায় পড়তে হয়। এছাড়া আত্মনির্ভরতা, শিক্ষার অভাব ইত্যাদিতো আছেই।
পুরুষদের ক্ষেত্রেও কিন্তু এমনটা ঘটতে দেখি। বৌয়ের ক্যারেক্টার নিয়ে কোনই সমস্যা নাই, কিন্তু কথাবার্তা ও মানসিক অত্যাচারে বেচারা হয়তো আত্মহত্যার কথাও চিন্তা করে, তবু এই বৌ ছাড়ার কথা কল্পনায় আনেনা। হয়তো ছেলেমেয়ে, হয়তো পরিবার, হয়তো সমাজ, হয়তো নিজের উপর কনফিডেন্সের অভাব - ইত্যাদি নানান কারন থাকতে পারে। চুপচাপ মাথা নিচু করে সংসার করে যান। তারপরে একদিন সময়মতন পটল তোলেন।

তা এইসব কিছু মাথায় রেখে আপনারাই বলেন, বিল গেইটস সাহেব ও মেলিন্ডা ম্যাডামের ডিভোর্স কেন হচ্ছে, কে দোষী, কে নির্দোষী, কে কাকে ঠকিয়েছে ইত্যাদি নিয়ে আলোচনার কোন মানে আছে? যেকোন কারণেই হোক, তাঁরা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তাঁরা আলাদা হবেন, ব্যস, ঘটনা এখানেই শেষ। এইটা ভাল সমাধান? নাকি মিটু মুভমেন্টে বিল গেইটসের বা মেলিন্ডার নাম শুনলে খুশি হতেন? অথবা বসুন্ধরার এমডি আনভীরের মতন কোন কেলেঙ্কারিতে জড়ালে? বা বিল গেইটসের কোন "মানবিক বিয়ের" টুইটার স্টেটমেন্ট পড়ে চমৎকৃত হতেন?

মন্তব্য ১১ টি রেটিং +৫/-০

মন্তব্য (১১) মন্তব্য লিখুন

১| ০৯ ই মে, ২০২১ রাত ১২:১৪

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:


এত বড় লেখা পড়ার ধৈর্য্য নাই এখন
রমজানের পরে মনে পরলে পরে নিবো।

২| ০৯ ই মে, ২০২১ রাত ১২:৩৯

রাজীব নুর বলেছেন: সব কিছুর মধ্যে আপনি কেন যে ধর্ম টেনে আনেন!!
ধর্ম দিয়ে জীবন চলে না। সংসার চলে না। দেশ চলে না।

৩| ০৯ ই মে, ২০২১ রাত ১২:৪২

নতুন বলেছেন: আমাদের সমাজের মানুষের অপরের বিষয়ে নাক গলাতেই ভালো লাগে।

এখানে অনেকে হিসাব করছে মেলিন্ডা কতটাকা পাবে ।

সমাজের মানুষ নারীদের ঠকাতে চেস্টা করে, সুবিধা নিতে চেস্টা করে। ধর্মকে ব্যবহার করে ভয় দেখাতে যে স্বামীর অবাধ্য হলে জাহান্নামে যাবে নারীরা।

তত্ব কথা সবাই বলে কিন্তু কেইউ মানতে চায় না।

৪| ০৯ ই মে, ২০২১ রাত ১:৫০

মিরোরডডল বলেছেন:



একটা সম্পর্ক যে কোনও কারনেই যখন আর মানিয়ে নেয়া সম্ভব হয়না তখন ডিভোর্স হয়, সেটা সেই সম্পর্কের জন্য ভালো ।

এমন কিছু কাপল দেখেছি যারা রেস্পেক্টফুল সমঝোতার মধ্যে দিয়ে ডিভোর্স করে এখন যার যার মতো ভালো আছে ।

আবার আমাদের চারপাশে এমন অনেক পরিবার দেখি যারা একটা আনহেলদি সম্পর্ক জোর করে টেনে নিয়ে যাচ্ছে, সমাজ কি বলবে, মানুষ কি বলবে এই ভেবে । এটা তাদের নিজেদের জন্য ভালো না, আবার বাচ্চাদের জন্যও ভালো না । বাচ্চারা একটা অসুস্থ পরিবেশে বড় হচ্ছে যেখানে বাবা মায়ের মাঝে ভালোবাসা নেই, রেস্পেক্ট নেই, শুধুই ঝগড়াঝাঁটি, মারামারি ।

একটা কাপল যখন ডিভোর্স করছে, এটা একান্তই তাদের ব্যক্তিগত। তার মানেই না এখানে কোন তৃতীয় ব্যক্তি বা সম্পর্ক থাকবেই । অনেক কারনেই সম্পর্কের অবনতি হয় । অন্যের ব্যক্তিগত বিষয়ে মানুষের কেনো যে এতো মাথাব্যথা, পারলে আরেকজনের বেডরুমে ঢুকে যায়, সব জানতে হবে কিন্তু কেনো ??? খুবই বাজে অভ্যাস !



৫| ০৯ ই মে, ২০২১ ভোর ৫:০১

কামাল১৮ বলেছেন: ইসলাম ধর্ম অনুসারে নারীর তালাক দেয়ার অধিকার নাই।সে তালাক চাইতে পারে,দেয়ার অধিকার একমাত্র স্বামীর।
ভালো লোক খারাপ লোকের একটা সংজ্ঞা আছে।সেই সংজ্ঞায় পরলেই একটা লোককে ভালো লোক বলা যায়।

৬| ০৯ ই মে, ২০২১ সকাল ১১:১৫

ইনদোজ বলেছেন: ইসলামী আইন অনুযায়ী নারীর তালাক দেয়ার অধিকার আছে, যদি তাকে সেই অধিকার দেয়া হয়। কাবিননামায় এ সংক্রান্ত একটা ধারা আছে।

বিল মারা গেলে স্ত্রী হিসেবে মেলিন্ডা পেতেন ১ কোটি ডলার, ডিভোর্স হওয়ার কারণে পাবেন সাড়ে ৭ হাজার কোটি ডলার। কিন্তু এটি আদৌ কোন হিসাবই নয়। যে কোন কারণেই হোক, তাদের প্রাপ্তবয়স্ক সন্তান থাকার পরেও ডিভোর্সের সিদ্ধান্ত নিতে হল। আমি এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাই।

৭| ০৯ ই মে, ২০২১ দুপুর ১২:৩৫

রানার ব্লগ বলেছেন: খুলা তালাকঃ স্ত্রী যদি বিশেষ কোন কারণে স্বামীর সাথে বসবাস করতে নারায হয় তাহলে স্বামী তার নিকট থেকে অথবা তার প্রতিনিধির পক্ষ থেকে বিনিময় গ্রহণ করে স্ত্রীকে পৃথক করে দেয়াকে খুলা তালাক বলা হয়।

খুলার ক্ষেত্রে স্বামী ও স্ত্রী উভয়ের সম্মতি থাকতে হবে। যদি স্বামী সম্মতি প্রদান না করে তাহলে স্ত্রী বিচারকের শরণাপন্ন হয়ে তার মাধ্যমে খুলা করবে।
স্বামী স্ত্রীকে বিদায়ের অনুমতি দেয়ার পর যদি স্ত্রী পুনরায় উক্ত স্বামীর সংসার করতে চায়, তাহলে এ খুলা তালাকের ক্ষেত্রে স্বামী উক্ত স্ত্রীকে গ্রহণ করতে চাইলে পুনরায় বিয়ের মাধ্যমে গ্রহণ করতে হবে।

আর যদি অন্যত্র বিবাহ করতে চায়, তাহলে এক হায়েয অতিক্রম করার পর অন্যত্র বিবাহ করতে পারবে। [এ মর্মে ইমাম নাসাঈ হাদীস বর্ণনা করেছেন, দেখুন ‘‘সহীহ্ নাসাঈ’’ ৩৪৯৭) এছাড়া দেখুন ‘‘ফিক্হুস সুন্নাহ্’’ খুলা অধ্যায়]।
তার জন্য আল্লাহ বিধান প্রদান করেছেনঃ
{فَإِنْ خِفْتُمْ أَلَّا يُقِيمَا حُدُودَ اللَّهِ فَلا جُنَاحَ عَلَيْهِمَا فِيمَا افْتَدَتْ بِهِ}

‘‘অতঃপর যদি তোমরা উভয় পক্ষের শালিসগণ) আশঙ্কা কর যে উভয়পক্ষ আল্লাহর আইনসমূহ ঠিক রাখতে পারবে না, তাহলে উভয়ের প্রতি কোন গুনাহ নেই যদি কোন কিছুর বিনিময়ে স্ত্রী নিজেকে মুক্ত করতে চায়।’’ সূরা আল-বাকারাহঃ ২২৯)
আর যদি স্বামী বিনা মালে পরিত্যাগ করে তাহলে আরও ভাল।

৮| ০৯ ই মে, ২০২১ দুপুর ১:০৫

নীল আকাশ বলেছেন: আপনার পোস্টে আপনি কোন প্রতি ম ন্তব্য দেন না। করে কী লাভ?

৯| ০৯ ই মে, ২০২১ দুপুর ২:১৯

রাজীব নুর বলেছেন: আপনি কারো মন্তনব্যের উত্তর দেন না কেন?

১০| ০৯ ই মে, ২০২১ দুপুর ২:৩৯

সাড়ে চুয়াত্তর বলেছেন: পরকীয়ার চেয়ে বিবাহ বিচ্ছেদ ভালো। অনেকে সমাজের ভয়ে জোর করে সম্পর্ক টেনে নিয়ে যায়। সারা জীবন ঝগড়া করে কাটায়। যা তাদের সন্তানদের জন্যও ক্ষতিকর। বিল গেটস দম্পতির সিদ্ধান্ত থেকে আমাদের অনেক কিছু শেখার আছে। আমাদের দেশে মানুষ ধর্মের চেয়ে সমাজকে প্রাধান্য দেয়। ফলে ধর্মীয় বিধানের সুফল পায় না।

১১| ১০ ই মে, ২০২১ বিকাল ৩:৪৮

সিগনেচার নসিব বলেছেন: বেশিরভাগ বাঙালি সমালোচক সমালোচনা আর হেইট স্পিচের পার্থক্য বুঝে না। সমালোচনা করতে গিয়ে নিন্দামন্দ করে ফেল !

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.