নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মারুফ হোসেন

Tsundoku

মারুফ হোসেন › বিস্তারিত পোস্টঃ

অন্তর্ধান রহস্য—আর্থার কোনান ডয়েল [অনুবাদ গল্প]

০২ রা নভেম্বর, ২০১৮ রাত ৯:৩১


‘হঠাৎ টার্কিশ কেন?’ আমার বুটের দিকে একদৃষ্টে চেয়ে জিজ্ঞেস করল শ্রীমান শার্লক হোমস। একটা বেতের চেয়ারে বসে আছি। আমার ছড়িয়ে দেয়া পা-জোড়ার ওপর ওপর স্থির হয়ে আছে ওর দৃষ্টি।
‘ইংলিশ,’ কিছুটা বিস্মিত হয়েই জবাব দিলাম। ‘অক্সফোর্ড স্ট্রিটের ল্যাটিমার থেকে কিনেছি।’
হাসল হোমস, ক্লান্ত ধৈর্য ফুটে উঠেছে সেই হাসিতে।
‘গোসলের কথা বলছি হে। বাড়ির স্বাস্থ্যসম্মত ব্যবস্থা বাদ দিয়ে ব্যয়বহুল টার্কিশ গোসলের দরকার পড়ল কেন?’
‘কয়েকদিন ধরে বাতের ব্যথাটা বেড়েছে। টার্কিশ গোসলে বেশ উপকার হয়,’ বললাম আমি। তারপর যোগ করলাম, ‘কিন্তু, হোমস, আমার জুতো আর টার্কিশ গোসলের মধ্যে যোগসূত্রটা কী, বলো তো?’
‘একটু যুক্তি খাটিয়ে ভাবলেই বুঝতে পারবে, ওয়াটসন,’ চোখ টিপে বলল হোমস। ‘খুব সহজ ব্যাপার। একটা প্রশ্ন আর তার উত্তরের মাধ্যমেই ব্যাপারটা খুব সহজে খোলাসা করা যায়। প্রশ্নটি হলোÍআজ সকালে তোমার সঙ্গে আর কে উঠেছিল গাড়িতে?’
‘তোমার কথার মাথা-মুণ্ডু কিচ্ছু বুঝলাম না,’ কড়া গলায় বললাম আমি।
‘শাবাশ, ওয়াটসন! দারুণ যুক্তিসঙ্গত উপায়ে প্রতিবাদ করেছ। চলো, ব্যাপারটা তাহলে কী দাঁড়াল দেখা যাক। শেষ ব্যাপারটাÍমানে গাড়ির কথাটাই ধরো আগে। তোমার কোটের বাঁ-দিকের আস্তিনে আর কাঁধে কাদার ছিটে লেগে রয়েছে। গাড়ির মাঝখানে বসলে সম্ভবত কাদার ছিটে লাগত না। আর লাগলেও এভাবে একপাশে লাগত না। তার মানে, গাড়ির একপাশে বসেছিলে তুমি। আর একপাশে বসার অর্থ হলো, তোমার সাথে নিশ্চয়ই একজন সঙ্গী ছিল।’
‘আচ্ছা। এবার বুট আর গোসলের মধ্যে কী সম্পর্ক পেলে, বলো।’
‘খুব সহজ ব্যাপার। তুমি সবসময় বিশেষভাবে বুটের ফিতে বাঁধ। কিন্তু আজ দেখছি দুটো গিঁট দিয়ে ফিতে বাঁধা হয়েছে। এ-কাজ কখনও কর না তুমি। তার মানে, পা থেকে জুতো খুলেছিলে। আবার পরানোর সময় ফিতে বেঁধে দিল কে? হয় মুচি, নয়তো টার্কিশ গোসলখানার কর্মচারী। মুচি হওয়ার সম্ভাবনা কমÍকেননা বুটগুলো নতুন কিনেছ। তাহলে বাকি রইল কোনটা? টার্কিশ গোসলখানা। ফালতু। টার্কিশ গোসল অবশ্য একটা কাজে লেগেছে।’
‘কী কাজ?’
‘মাত্রই না বললে একটু হাওয়া বদলের জন্যে টার্কিশ গোসল নিয়েছ? দাঁড়াও একটা বুদ্ধি দিই। বিনাখরচায়, ফার্স্ট-ক্লাস টিকেটে লুযান থেকে ঘুরে আসার সুযোগ পেলে কেমন হয়?’
‘দারুণ! কিন্তু কেন?’
আর্মচেয়ারে হেলান দিয়ে, পকেট থেকে নোটবই বের করল হোমস।
‘পৃথিবীর সবচেয়ে বিপজ্জনক মানুষদের মধ্যে একটি শ্রেণি হলো,’ বলল সে, ‘একা একা ঘুরে বেড়ানো বন্ধুহীন মেয়েগুলো। নিজেরা এরা নিরীহ হলেও প্রায়ই এদের কারণে অপরাধে জড়িয়ে পড়ে অনেকে। এ-ধরনের মেয়ের পকেটে যথেষ্ট পরিমাণ টাকা-পয়সা থাকে। কাজেই এদেশ থেকে ওদেশ, এই হোটেল থেকে সেই হোটেলে ঘুরে বেড়ায় সে। একদল শেয়ালের মাঝে স্রেফ অসহায় একটা মুরগির সাথে কেবল তুলনা চলে তার। কাজেই সে যখন হারিয়ে যায়, কেউ টেরটিও পায় না। আমার ধারণা, লেডি ফ্রান্সিস কারফ্যাক্সও তেমন কোন বিপদে পড়েছেন।’
অবশেষে ওর বক্তৃতার সারমর্ম বুঝতে পেরে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললাম আমি। নোটবই দেখে নিল হোমস। তারপর আবার বলতে শুরু করল, ‘মৃত আর্ল অভ রুফটনের একমাত্র জীবিত বংশধর এই লেডি ফ্রান্সিস। তোমার হয়তো মনে আছে, আর্লের সম্পত্তি পেয়েছে এক পুরুষ আত্মীয়। ভদ্রমহিলা সামান্য টাকা পেয়েছেন। তবে সেই সাথে পেয়েছেন খুব দামি রুপা ও হীরে দিয়ে বানানো কিছু প্রাচীন স্প্যানিশ গয়না। গয়নাগুলো তাঁর খুব প্রিয়। তাই ওগুলো ব্যাঙ্কে রাখতে রাজি হননিÍনিজের সঙ্গে নিয়েই ঘুরে বেড়ান। লেডি ফ্রান্সিস সুন্দরী, মধ্যবয়সী।’
‘তো তাঁর হয়েছেটা কী?’
‘আহ্, সেটাই তো লাখ টাকার প্রশ্ন, বন্ধু? লেডি ফ্রান্সিসের কী হয়েছে? বেঁচে আছেন, না মরে গেছেন? তিনি খুব আচারনিষ্ঠ মানুষ। গত চার বছর ধরে এক হপ্তা পর-পর চিঠি লিখতেন তাঁর সাবেক গভর্নেস, মিস ডবনির কাছে। মিস ডবনি অনেকদিন হলো অবসর নিয়েছেন, থাকেন ক্যাম্বারওয়েল-এ। তিনি এসেছিলেন আমার সঙ্গে দেখা করতে। গত পাঁচ হপ্তায় একটা চিঠিও আসেনি লেডি ফ্রান্সিসের কাছ থেকে। শেষ চিঠিটা এসেছে লুযানের হোটেল ন্যাশনাল থেকে। ভদ্রমহিলা হোটেল ছেড়ে চলে গেছেন। কিন্তু কোন ঠিকানা দিয়ে যাননি। মহিলার পরিবার বিরাট পয়সাঅলা। কাজেই তাঁর খোঁজ জানার জন্যে যে-কোন পরিমাণ টাকা খরচ করতে রাজি তাঁরা।’
‘মিস ডবনির কাছেই চিঠি লিখতেন শুধু? আর কারও সঙ্গে যোগাযোগ ছিল না?’
‘খবর পাওয়ার আর একটা মাত্র উৎস আছেÍব্যাঙ্ক। অবিবাহিত মহিলাদেরও খেয়ে-পরে বেঁচে থাকতে হয়। আর পাসবইগুলোই তাদের সংক্ষিপ্ত ডায়েরি। সিলভেস্টার’স-এ টাকার লেনদেন করেন উনি। তাঁর হিসেবে চোখ বুলিয়েছি আমি। সর্বশেষ চেকের আগের চেকটা ভাঙিয়েছেন লুযানের বিল চুকাতে। তবে টাকাটা মোটা অঙ্কের। বিল চুকানোর পরও বেশ ভাল অঙ্কের টাকা তাঁর হাতে থেকে যাবার কথা। এরপর মাত্র একটাই চেক কাটা হয়েছে।’
‘কার নামে? কোথায়?’
‘মিস মেরি ডিভাইনের নামে। কোথায় কাটা হয়েছে, তা জানা যায়নি। ওটা ভাঙানো হয়েছে ক্রেডিট লিয়োনেস-এ, হপ্তা তিনেক আগে। চেকটা পঞ্চাশ পাউণ্ডের।’
‘এই মেরি ডিভাইনটা কে?’
‘সেটাও জানা গেছে। মিস মেরি ডিভাইন ছিল লেডি ফ্রান্সিস কারফ্যাক্সের পরিচারিকা। তাকে এই চেক দিলেন কেন, তা এখনও জানা যায়নি। তবে এই রহস্যের সমাধান হবে তোমার গবেষণায়।’
‘আমার গবেষণা!’
‘সেজন্যেই তো লুযান যাচ্ছ, স্বাস্থ্যোদ্ধার করতে। জানোই তো বুড়ো আব্রাহামকে বিপদে ফেলে, লণ্ডন ছেড়ে নড়তে পারব না আমি। তাছাড়া, এখন আমার দেশ ছেড়ে বেরোনো উচিত না। আমি না থাকলে স্কটল্যাণ্ড ইয়ার্ড এতিম হয়ে যায়। তাছাড়া আমি আশপাশে না থাকলে অপরাধীরাও খুশি হয়ে ওঠে। তাহলে রওনা হয়ে যাও, বন্ধু। গুরুত্বপূর্ণ কিছু জানতে পারলে দয়া করে দুটো পেনি খরচ করে তার করে দিয়ো।’

দু’দিন পরের কথা। লুযানের হোটেল ন্যাশনালে আস্তানা গেড়েছি। হোটেল ম্যানেজার মি. মোযার আমার সুবিধা-অসুবিধার দিকে কড়া নজর রাখছেন। তার কাছেই জেনেছি, কয়েক হপ্তা এখানে ছিলেন লেডি ফ্রান্সিস। সবাই খুব পছন্দ করত তাঁকে। মহিলার বয়েস চল্লিশের বেশি হবে না। এখনও দেখতে সুন্দরী; আভিজাত্যের ছটা চলনে-বলনে। দেখেই বোঝা যায়, যৌবনে দারুণ রূপসী ছিলেন। মূল্যবান অলঙ্কারের কথা কিছু জানেন না মি. মোযার। তবে চাকর-বাকররা বলাবলি করে যে, মহিলার বেডরুমের ভারী ট্রাঙ্কটা সবসময় তালা মেরে রাখা হত। মালকিনের মতই পরিচারিকা মেরি ডিভাইনও খুব জনপ্রিয় ছিল এখানে। সত্যি বলতে কী, হোটেলের এক হেড ওয়েটারের সঙ্গে তার বিয়েও ঠিক হয়ে গেছে। কাজেই ওর ঠিকানা পেতে কোন অসুবিধেই হলো না। ১১, রু দ্য ত্রাজাঁ, মণ্টপেলিয়ের-এ থাকে মেয়েটা। যা-যা জানলাম সবই টুকে নিলাম। তারপর তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলতে তুলতে ভাবলাম, হোমসও এরচেয়ে নিখুঁতভাবে তথ্য জোগাড় করতে পারত না।
তবে একটা ব্যাপার এখনও ধোঁয়াশার মধ্যে আছে। ভদ্রমহিলার আচমকা নিখোঁজ হয়ে যাবার কারণ বের করতে পারলাম না কিছুতেই। লুযানে তো বেশ ভালই ছিলেন তিনি। তাঁর বিলাসবহুল ঘরটা থেকে হ্রদের মনোরম দৃশ্য দেখা যায়। তার মানে, পুরো ঋতুটা এখানে কাটানোর ইচ্ছে ছিল লেডি ফ্রান্সিসের। তবুও মাত্র একদিনের নোটিসে ছেড়ে দিয়েছেন হোটেল। অথচ ভাড়া দিয়েছেন পুরো হপ্তার। মেরি ডিভাইনের প্রেমিক, জুলস ভাইবার্ট জানাল, হোটেল ছেড়ে দেবার দু’-একদিন আগে কালো দাড়িঅলা, দীর্ঘদেহী এক লোকের সঙ্গে দেখা হয়েছিল লেডি ফ্রান্সিসের। লোকটার বর্ণনা দিতে গিয়ে তিনটে শব্দ উচ্চারণ করল জুলস, ‘বর্বরÍআস্ত বর্বর।’ শহরেরই কোথাও থাকে লোকটা। লেকের পাড়ে মাদামের সঙ্গে কথা বলতে দেখা গেছে তাকে। তারপর হোটেলেও আসে সে মাদামের সঙ্গে দেখা করতে। কিন্তু লেডি ফ্রান্সিস দেখা করেননি। লোকটা ইংরেজ, তবে তার নাম জানা যায়নি। এই ঘটনার পর-পরই হোটেল ছেড়ে চলে যান মাদাম। জুলস ভাইবার্ট ও তার প্রেমিকার বিশ্বাস, লোকটার কারণেই উধাও হয়ে গেছেন লেডি ফ্রান্সিস। কেবল একটা ব্যাপার নিয়েই কথা বলল না জুলসÍমেরি কেন তার মালকিনের চাকরি ছেড়ে দিল? এ-ব্যাপারে সে কিছু বলবে না, বলতে পারবেও না। বলে দিল, জানার ইচ্ছে থাকলে, মণ্টপেলিয়েরে গিয়ে মেরির কাছ থেকে জেনে নিই যেন।
তদন্তের প্রথম অধ্যায় শেষ হলো। এবার জানতে হবে লুযান ছেড়ে কোথায় গেছেন লেডি ফ্রান্সিস কারফ্যাক্স। কিন্তু মহিলা খুব সম্ভবত চাননি যে জায়গাটার কথা সবাই জেনে ফেলুক। নইলে লাগেজে বাডেন-এর লেবেল সাঁটাননি কেন? তিনি নিজে এবং তাঁর মালসামান কিছুটা ঘুরপথে গিয়ে পৌঁছেছে রেনিশ-এ। এসব তথ্য জোগাড় করলাম কুক-এর স্থানীয় অফিসের ম্যানেজারের কাছ থেকে। যা-যা জেনেছি, তার করে জানিয়ে দিলাম হোমসকে। জবাবে রসিকতাপূর্ণ একটা বার্তা পাঠাল ও। এরপর চলে গেলাম বাডেনে।
এখানে খবর পেতে অসুবিধে হলো না। এংলিশার হফ-এ পনেরো দিন ছিলেন লেডি ফ্রান্সিস। সেখানে দক্ষিণ আমেরিকান ধর্মপ্রচারক ডা. শ্লেসিঞ্জার আর তাঁর স্ত্রীর সঙ্গে পরিচয় হয় মহিলার। বেশিরভাগ নিঃসঙ্গ মহিলার মত, ধর্মীয় কাজ-কর্মে আনন্দ পেতেন লেডি ফ্রান্সিসও। ডা. শ্লেসিঞ্জারের প্রবল ব্যক্তিত্ব, ধর্মের প্রতি তাঁর তীব্র অনুরাগ প্রভাব ফেলে ভদ্রমহিলার ওপর। তার ওপরে যখন শুনলেন ধর্ম-প্রচার করতে গিয়েই অসুখে পড়েছেন ভদ্রলোক, তখন তো একেবারে গলে গেলেন। ভগ্ন-স্বাস্থ্য পুনরুদ্ধারের জন্যেই বাডেনে এসেছিলেন ডা. শ্লেসিঞ্জার। স্বাস্থ্য পুনরুদ্ধারের কাজে মিসেস শ্লেসিঞ্জারকে যথাসাধ্য সাহায্য করতেন লেডি ফ্রান্সিস। বাড়িঅলার কাছ থেকে জানতে পারলাম, বারান্দার একটা লাউঞ্জ-চেয়ারে শুয়ে থাকতেন ডা. শ্লেসিঞ্জার। আর তাঁর দু’পাশে থাকত দু’জন মহিলা। সেরে উঠে সস্ত্রীক লণ্ডন রওনা হন ভদ্রলোক। লেডি ফ্রান্সিসও গেছেন তাঁদের সঙ্গে। এসব তিন হপ্তা আগের ঘটনা। এরপর আর কিছু জানে না ম্যানেজার। আর মেরি তার কয়েকদিন আগেই চলে যায়। যাবার সময় হোটেলের পরিচারিকাদের কাঁদতে-কাঁদতে বলে গিয়েছিল যে, চিরতরে চাকরি ছেড়ে দিয়েছে ও। যাবার আগে সবার বিল চুকিয়ে দেন ডা. শ্লেসিঞ্জার।
‘তবে লেডি ফ্রান্সিসের বন্ধুদের মধ্যে আপনি একাই কিন্তু তাঁর খোঁজ নিতে আসেননি,’ কথা শেষ করে জানাল বাড়িঅলা। ‘হপ্তাখানেক আগে আরও একজন এসেছিল তাঁর খোঁজে।’
‘নিজের নাম বলেছে লোকটা?’ উৎসুক কণ্ঠে জিজ্ঞেস করলাম।
‘না। তবে লোকটা ইংরেজ, যদিও একটু অদ্ভুত ধরনের।’
‘বর্বরের মত?’ বলে উঠলাম আমি।
‘ঠিক। একদম বর্বরের মত দেখতে। বিশালদেহী, দাড়িঅলা, রোদে-পোড়া গায়ের চামড়া। দেখে মনে হয় শহরের কেতাদুরস্ত হোটেলের চেয়ে চাষিদের সরাইখানায়ই বেশি মানাবে তাকে। লোকটা কেমন যেন হিংস্র স্বভাবের। এ-ধরনের মানুষকে সহজে চটাতে চায় না কেউ।’
রহস্যটা যেন অবশেষে ধীরে-ধীরে কুয়াশার চাদর ভেদ করে একটা আকার নিতে শুরু করেছে। একজন ভাল, সাদাসিধে ধার্মিক মহিলার পিছু নিয়েছে এক নিষ্ঠুর লোক। তার ভয়েই লুযান ছেড়ে পালিয়েছেন লেডি কারফ্যাক্স। আজ হোক বা কাল, শিগগিরই ভদ্রমহিলাকে ধরে ফেলবে সে। নাকি ইতিমধ্যে ধরে ফেলেছে? সেজন্যেই কোন খোঁজ-খবর পাওয়া যাচ্ছে না ভদ্রমহিলার? কোন্ কুমতলবে তাঁর পিছু ছুটছে লোকটা? সমস্যাটার সমাধান করতে হবে।
কত দ্রুত ও নির্ভুলভাবে রহস্যের সমাধান করে ফেলেছি, তা জানাতে তার করলাম হোমসকে। জবাবে ও জানতে চাইল, ডা. শ্লেসিঞ্জারের বাম কানটা দেখতে কেমন। মাঝে-মাঝে হোমসের রসিকতা মাত্রা ছাড়িয়ে যায়। তাই ওর তারবার্তায় পাত্তাই দিলাম। সত্যি বলতে কী, ওটা আসার আগেই আমি মণ্টপেলিয়েরে চলে এসেছি, লেডি কারফ্যাক্সের পরিচারিকা মেরির খোঁজে।
মেয়েটার ঠিকানা খুঁজে পেতে কোন অসুবিধে হলো না। ওর সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, লেডির প্রতি খুবই বিশ্বস্ত ছিল সে। লেডি ভালমানুষের সঙ্গ পেয়েছেন এবং ওর নিজের বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে বলে কর্ত্রীকে ছেড়ে চলে এসেছে। মেয়েটা বিষণ্ন মনে জানাল, বাডেনে থাকার সময় শেষ ক’টা দিন ওর সঙ্গে ভীষণ দুর্ব্যবহার করেছেন লেডি কারফ্যাক্স। এমনকী ওর সততা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন। এতে অবশ্য চাকরি ছাড়তে সুবিধেই হয়ে গিয়েছিল মেয়েটার জন্যে। চলে আসার সময় বিয়ের উপহার হিসেবে পঞ্চাশ পাউণ্ড দিয়েছেন ওকে লেডি কারফ্যাক্স।
আমার মতই মেরিরও বিশ্বাস, সেই বর্বর লোকটার কারণেই পালিয়ে বেড়াচ্ছিলেন ওর কর্ত্রী। ও নিজের চোখে লোকটাকে লেকের ধারে, সবার সামনে লেডির হাত ধরে টানাটানি করতে দেখেছে। লোকটা ভীষণ হিংস্র স্বভাবের। মেরি নিশ্চিত, তার কারণেই শ্লেসিঞ্জার দ¤পতির সঙ্গে লণ্ডন চলে যাবার সিদ্ধান্ত নেন লেডি কারফ্যাক্স। কথা বলতে বলতে আচমকা চেয়ার থেকে লাফিয়ে উঠে দাঁড়াল মেয়েটা। চিৎকার করে উঠল, ‘ওই দেখুন! বদমাশটা এখনও পিছু ছাড়েনি! এই লোকের কথাই বলছিলাম আমি এতক্ষণ।’
সিটিং রুমের খোলা জানালা দিয়ে বিশালদেহী, কালো দাড়িঅলা এক লোককে দেখতে পেলাম। হাঁটতে-হাঁটতে রাস্তার পাশের বাড়ির নম্বরগুলো দেখছে আগ্রহভরে। নিশ্চয়ই মেরির খোঁজ করছে। সিদ্ধান্ত নিতে এক মুহূর্ত দেরি হলো না। ঝড়ের বেগে ছুটে গিয়ে তার সামনে দাঁড়ালাম।
বললাম, ‘আপনি ইংরেজ।’
‘হ্যাঁ, তো?’ গর্জে লোকটা।
‘আপনার নামটা জানতে পারি?’
‘না, পারেন না,’ নিজের সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিল লোকটা।
অদ্ভুত একটা পরিস্থিতি। কিন্তু সোজা পথ ধরাই সবচেয়ে ভাল।
কোনরকম ভনিতায় না গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম, ‘লেডি কারফ্যাক্স কোথায়?’
বিস্ময়ে হতবাক হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে রইল সে।
‘কী করেছেন তাঁর? ওনার পিছু নিয়েছেন কেন? বলুন!’
রাগে গর্জে উঠে বাঘের মত লাফিয়ে পড়ল লোকটা আমার ওপর। জীবনে অনেকের সাথে মারামারি করেছি, কিন্তু এরকম লোকের পাল্লায় পড়িনি কখনও। লোহার মত শক্ত আঙুল দিয়ে আমার গলা টিপে ধরল লোকটা। দম নিতে না পেরে হাঁসফাঁস করছি; আর একটু হলেই জ্ঞান হারিয়ে ফেলব। ঠিক তখনই রাস্তার বিপরীত পাশের একটা সরাইখানা থেকে নীল আলখাল্লা পরা এক ফ্রেঞ্চ মজুর মুগুর হাতে তীরের মত ছুটে এল আমাদের দিকে । ওটা দিয়ে ধাঁই করে বাড়ি মারল আক্রমণকারীর বাহুতে। মুগুরের বাড়ি খেয়ে আমার গলা ছেড়ে দিতে বাধ্য হলো লোকটা। রাগে গজরাতে গজরাতে ভাবতে লাগল, নতুন করে আবার ঝাঁপিয়ে পড়বে কিনা। খানিকক্ষণ ভেবে-চিন্তে আমি এইমাত্র যে-কটেজটা থেকে বেরিয়েছি, সেটার দিকে চলে গেল। আমার ত্রাতার দিকে ফিরলাম ধন্যবাদ দিতে।
সে বলল, ‘বেশ তদন্ত করেছ হে, ওয়াটসন! অনেক হয়েছে, আজ রাতের ট্রেনেই লণ্ডন ফিরে চলো আমার সঙ্গে।’

এক ঘণ্টা বাদে, ছদ্মবেশ ছেড়ে হোটেলে আমার কামরায় বসে আছে শার্লক হোমস। নীরস কণ্ঠে জানাল, ওর লণ্ডনের কাজ শেষ হয়ে গিয়েছিল। তাই চলে এসেছে আমার সঙ্গে যোগ দিতে। মজুরের ছদ্মবেশে, সরাইখানায় এসে বসে ছিল আমার অপেক্ষায়।
‘দুর্দান্ত তদন্ত করেছ, ওয়াটসন,’ ও বলল। ‘একের পর এক ভুল করে গেছ নিখুঁতভাবে। যেখানেই গেছ, সেখানেই সতর্ক করে দিয়েছ সবাইকে। কিন্তু কাজের কাজ হয়নি কিচ্ছুটি।’
‘তুমিও বোধহয় এরচেয়ে ভাল কিছু করতে পারতে না,’ গোমড়া-মুখে জবাব দিলাম আমি।
‘এ-ব্যাপারে æবোধহয়” বলে কিছু নেই। তোমার চেয়ে ভাল কাজ ইতিমধ্যে করে ফেলেছি আমি। মি. ফিলিপ গ্রিন তোমার সঙ্গে এই হোটেলেই উঠেছেন। তদন্তের সাফল্য তো তাঁকে দিয়ে শুরু।’
ঠিক তখনই থালায় করে একটা কার্ড নিয়ে ঘরে ঢুকল চাকর। তার পিছু-পিছু ঢুকল দাড়িঅলা সেই বদমাশটা। চমকে উঠল লোকটা আমাকে দেখে।
‘এসব কী হচ্ছে, মি. হোমস?’ বলল সে। ‘আপনার চিঠি পেয়ে এখানে এসেছি আমি। এ-লোক কী করছে এখানে?’
‘ও আমার পুরনো বন্ধু এবং সহকারী ডা. ওয়াটসন। আমাকে তদন্তে সাহায্য করছে ও।’
ক্ষমা চেয়ে বিশাল, রোদে-পোড়া একটা হাত বাড়িয়ে দিল আগন্তুক।
‘আশা করি আপনার খুব একটা লাগেনি। আসলে আপনি যখন অভিযোগ করলেন আমি ওর ক্ষতি করেছি, তখন আর মাথা ঠিক রাখতে পারিনি। বলতে কী, আজকাল আর নিজের ওপর নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারি না ঠিকমত। এই পরিস্থিতি আর সহ্য করতে পারছি না। মি. হোমস, আপনি আমার খবর পেলেন কোত্থেকে?’
‘লেডি ফ্রান্সিসের গভর্নেস, মিস ডবনির সঙ্গে যোগাযোগ আছে আমার।’
‘সেই টুপিওয়ালী বৃদ্ধা সুযান ডবনি! তার কথা আমার খুব ভাল করেই মনে আছে।’
‘উনিও আপনার কথা ভোলেননি। ওসব তো আপনার দক্ষিণ আফ্রিকা যাবারও আগেকার কথা।’
‘আহ্, আপনি দেখছি আমার সম্পর্কে সবই জানেন। আপনার কাছে তাহলে কোনকিছু লুকোনোর প্রয়োজন নেই। একটা কথা শপথ করে বলতে পারি, মি. হোমসÍফ্রান্সিসকে আমি যেরকম মনে-প্রাণে ভালবাসতাম, পৃথিবীর আর কোন পুরুষকে কোন নারীকে এভাবে ভালবাসেনি। আমি তখন বাউণ্ডুলে যুবক। কিন্তু ওর মনটা ছিল তুষারের মত শুভ্র, পবিত্র। রুক্ষতার ছায়া পর্যন্ত সহ্য করতে পারত না। কাজেই আমার উড়নচণ্ডী মার্কা বুনো, উচ্ছৃঙ্খল জীবনের কথা জানতে পেরে সম্পর্কই ছিন্ন করে দিল আমার সঙ্গে। সবচেয়ে আশ্চর্যের কথা হচ্ছে এরপরও আমাকে ভালবাসত ও। সেই ভালবাসা এতটাই গভীর ছিল যে সারাজীবন কুমারীই থেকে গেল।
‘এরপর বহু বছর কেটে গেল। বার্বারটন গিয়ে ভালই টাকা-পয়সা কামালাম আমি। তারপর ভাবলাম, এবার হয়তো ওর মন গলাতে পারব। শুনেছিলাম, ও এখনও বিয়ে করেনি। খুঁজতে-খুঁজতে লুযানে এসে পেলাম ওকে। নানাভাবে চেষ্টা করলাম ওর মন গলাতে। একটু যেন নরমও হলো। কিন্তু তারপরই লুযান ছেড়ে চলে গেল ও। খুঁজতে-খুঁজতে চলে এলাম বাডেনে। এসেই খবর পেলাম, ওর পরিচারিকাটি এখানেই থাকে। আমি অসভ্য, বর্বর লোক। সবে বুনো জীবন ছেড়ে সভ্য জগতে প্রবেশ করেছি। সেজন্যে ডা. ওয়াটসনের অভিযোগ শুনে আর মাথা ঠিক রাখতে পারিনি। ঈশ্বরের দোহাই, লেডি ফ্রান্সিসের কী হয়েছে বলুন আমাকে।’
‘সেটাই তো জানতে হবে আমাদের,’ গম্ভীর স্বরে বলল শার্লক হোমস। ‘লণ্ডনে আপনি কোথায় থাকেন, মি. গ্রিন?’
‘ল্যাংহাম হোটেলে পাবেন আমাকে।’
‘তাহলে আপনি ওখানেই ফিরে যান। হোটেল ছেড়ে বেরোবেন না, যাতে ডাকলেই পাই। মিথ্যে আশা দিতে চাই না; তবে নিশ্চিত থাকতে পারেন, লেডি ফ্রান্সিসের নিরাপত্তার জন্যে যা-যা দরকার সবই করব আমি। এই মুহূর্তে এর বেশি কিছু বলতে পারছি না। আর ওয়াটসন, তুমি মালসামান গুছিয়ে নাও। আমি মিসেস হাডসনের কাছে তার করে দিচ্ছি, কাল সাড়ে সাতটায় যেন দু’জন ক্ষুধার্ত মানুষের জন্যে খাবারের ব্যবস্থা করেন।’
বেকার স্ট্রিটে পৌঁছেই একটা তার পেলাম। সাগ্রহে ওটা পড়ল হোমস। তারপর ছুঁড়ে দিল আমার দিকে। স্রেফ তিনটে শব্দ লেখা ওতে: ‘খাঁজকাটা এবং ছেঁড়া।’ তারটা পাঠানো হয়েছে বাডেন থেকে।
‘এটা কী?’ জানতে চাইলাম বন্ধুর কাছে।
‘এটাই তো সবকিছু, বন্ধু,’ আমুদে গলায় জবাব দিল হোমস। ‘ওই যাজক ভদ্রলোকের কান সম্পর্কে আমার করা আপাত-অপ্রাসঙ্গিক প্রশ্নটা নিশ্চয়ই মনে আছে তোমার। প্রশ্নটার জবাব দাওনি তুমি।’
‘ততক্ষণে বাডেন ছেড়ে চলে গিয়েছিলাম আমি। তাই খোঁজ নিতে পারিনি।’
‘ঠিক তা-ই। এ-কারণেই এংলিশার হফ-এর ম্যানেজারের কাছে আরেকটা তার করেছিলাম আমি। ওটারই জবাব পাঠিয়েছে সে।’
‘তা এতে কী প্রমাণ হলো?’
‘প্রমাণ হলো যে ভীষণ চতুর এবং বিপজ্জনক এক লোকের মুখোমুখি হচ্ছি আমরা। আমাদের এই দক্ষিণ আমেরিকান রেভারেণ্ড, ডা. শ্লেসিঞ্জার আসলে কুখ্যাত অপরাধী হলি পিটার্স। অস্ট্রেলিয়ায় তার চেয়ে বিবেকহীন বদমাশ আর একজনও পাবে না। তার বিশেষত্ব হচ্ছে নিঃসঙ্গ মহিলাদের ধর্মীয় অনুভূতির সুযোগ নিয়ে তাদের সঙ্গে খাতির জমায়। এ-কাজে শয়তানটাকে সাহায্য করে তার তথাকথিত স্ত্রী, ফ্রেযার। মহিলা জাতে ইংরেজ। তার কাজ-কর্মের কথা আর শুনেই সন্দেহ হয় আমার। ঊননব্বইয়ে অ্যাডিলেডের এক স্যালুনে মারামারিতে প্রতিপক্ষ ওর কান কামড়ে দিয়েছিল। সেজন্যেই ওর কানের বিবরণ জানতে চেয়েছিলাম তোমার কাছে।
‘যাক গে, এই নিষ্ঠুর অপরাধী দু’জনের পাল্লায় পড়েছেন লেডি কারফ্যাক্স। ভদ্রমহিলা খুব সম্ভবত আর বেঁচে নেই। আর বেঁচে থাকলেও তাঁকে এমনভাবে আটকে রাখা হয়েছে যে মিস ডবনি বা অন্য কোন বন্ধু-বান্ধবের কাছে চিঠিও লিখতে পারছেন না। হয়তো লণ্ডনে পৌঁছুতেই পারেননি তিনি, অথবা লণ্ডন পেরিয়ে গেছেন। তবে প্রথম ধারণাটি অসঙ্গত। কেননা বিদেশিদের পক্ষে কণ্টিনেণ্টাল পুলিসের চোখে ধুলো দেয়া সহজ নয়। দ্বিতীয় ধারণাটিও যুক্তিসঙ্গত নয়। কারণ, শয়তানগুলোর পক্ষে লণ্ডনের বাইরে ভদ্রমহিলাকে আটকে রাখার মত জায়গা খুঁজে পাওয়া প্রায় অসম্ভব হবে। মন বলছে, লেডি কারফ্যাক্স লণ্ডনেই আছেন। কিন্তু কোথায়, তা বুঝতে পারছি না। কিছু করার যেহেতু নেই, কাজেই খেয়েদেয়ে ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করতে বসি। সন্ধ্যার দিকে স্কটল্যাণ্ড ইয়ার্ডে গিয়ে বন্ধু লেস্ট্রাডের সঙ্গে দেখা করে আসব।’
কিন্তু পুলিস বা হোমসÍকেউই রহস্যটার কোন কিনারা করতে পারল না। লণ্ডনের লাখ-লাখ মানুষের ভিড়ে হাওয়া হয়ে গেছে যেন মানুষ তিনজন। পত্রিকায় বিজ্ঞাপনও দেয়া হলো। কিন্তু কোন লাভ হলো না। বিভিন্ন সূত্র ধরে খোঁজ নেয়া হলোÍতাতেও কোন ফায়দা হলো না। ঢুঁ মারা হলো বিভিন্ন অপরাধীদের ডেরায়Íকিন্তু কিছুতেই কিছু হলো না। শ্লেসিঞ্জারের পুরনো সহযোগীদের ওপর নজর রাখা হলো। কিন্তু ওরাও লোকটার সঙ্গে যোগাযোগ করে না। তারপর, হঠাৎ এক হপ্তা পর, একেবারেই অপ্রত্যাশিতভাবে আশার আলো দেখা গেল। খবর এল, ওয়েস্টমিন্স্টার রোডের বোভিংটন-এ ¯প্যানিশ ডিজাইনের একটা প্রাচীন রুপার কানের-দুল বন্ধক রাখা হয়েছে। বন্ধকদাতার চেহারা যাজকের মত। লোকটা দীর্ঘদেহী, দাড়ি-গোঁফ পরিষ্কার করে কামানো। তার দেয়া নাম-ঠিকানা দুটোই ভুয়া। তবে লোকটার কানটা যে কেমন তা কেউ লক্ষ করেনি। কিন্তু সব শুনে-টুনে মনে হলো এই লোক শ্লেসিঞ্জার না হয়ে যায় না।
ল্যাংহাম থেকে এ-পর্যন্ত তিনবার এসেছেন মি. গ্রিন, খবর নিতে। দুশ্চিন্তায় দিন-দিন শুকিয়ে যাচ্ছেন ভদ্রলোক। গায়ের জামাটা ঢলঢলে হয়ে গেছে। তৃতীয়বার এসেছেন গয়নার খবরটা আসার প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই।
‘গয়নাগাটি বন্ধক রাখতে শুরু করেছে শয়তানটা। এবার ধরতে হবে ওকে,’ বলল হোমস।
‘কিন্তু গয়না বন্ধক দেয়ার মানে, লেডি ফ্রান্সিসের কোন ক্ষতি করে ফেলেছে বদমাশটা। তাই না, মি. হোমস?’
গম্ভীর মুখে মাথা নাড়ল হোমস।
‘আটকে যদি রাখেও, এখন তাঁকে ছেড়ে দিয়ে নিজেদের সর্বনাশ ডেকে আনবে না ওরা। কাজেই চূড়ান্ত ক্ষতির জন্যে মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকাটাই ভাল।’
‘এখন আমার করণীয় কী?’
‘ওই লোকগুলো আপনাকে চেনে?’
‘না।’
‘গয়না বন্ধক রাখতে অন্য কোন দোকানে যেতে পারে শ্লেসিঞ্জার। তাহলে আমাদেরও নতুন করে কাজ শুরু করতে হবে। তবে যেহেতু ভাল দাম পেয়েছে এবং কেউ কোন প্রশ্নও করেনি, তাই আবার টাকার দরকার হলে খুব সম্ভবত বোগিংটনেই যাবে সে। ওদের কাছে একটা চিঠি লিখে দিচ্ছি। আপনাকে দোকানে বসে অপেক্ষা করতে দেবে ওরা। লোকটা আবার এলে ওর পিছু নেবেন। কিন্তু ভুলেও আক্রমণ করবেন না। স্রেফ পিছু পিছু গিয়ে দেখে আসবেন কোথায় যায়। কথা দিন, আমাকে কিছু না জানিয়ে নিজে থেকে কিছু করতে যাবেন না।’
প্রথম দু’দিন কোন খবর পেলাম না ফিলিপ গ্রিনের কাছ থেকে (এখানে জানিয়ে রাখি, তিনি ছিলেন ক্রিমিয়ার যুদ্ধে অ্যাযফ সাগরের নৌবহরের বিখ্যাত সেনাপতির ছেলে)। তৃতীয় দিন সন্ধ্যায় ফ্যাকাসে চেহারায়, কাঁপতে-কাঁপতে ঝড়ের বেগে এসে ঢুকলেন আমাদের সিটিং রুমে। উত্তেজনায় থর-থর করে কাঁপছেন ভদ্রলোক।
‘পেয়েছি! পেয়েছি ওকে!’ ঘরে ঢুকেই চেঁচিয়ে উঠলেন।
উত্তেজনায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন মি. গ্রিন। হোমস তাঁকে কয়েক কথায় শান্ত করে একটা চেয়ারে বসিয়ে দিল। বলল, ‘এবার সবকিছু খুলে বলুন।’
‘লোকটার স্ত্রী এসেছিল এবারÍএক ঘণ্টা আগে। যে-দুলটা বন্ধক রেখেছে সেটা আগের দুলটার জোড়া। মহিলা বেশ লম্বা, চেহারা ফ্যাকাসে। চোখ দুটো বেজির মত।’
‘এই মহিলাই,’ মন্তব্য করল হোমস।
‘দোকান থেকে বেরোতেই তার পিছু নিলাম। কেনিংটন রোদ ধরে চলল সে। ওখানকার এক মুর্দাফরাশের দোকানে ঢুকল।’
চমকে উঠল হোমস। ‘তা-ই?’ কেঁপে উঠল ওর গলা।
‘কাউণ্টারের মহিলার সঙ্গে কথা বলছিল সে। আমিও ঢুকলাম ভেতরে। শুনতে পেলাম কাউণ্টারের মহিলা বলছেÍæদেরি হয়ে গেছে।” তারপর দুঃখ প্রকাশ করে বলল, æআরও আগেই পাঠানো উচিত ছিল। কিন্তু সাধারণ ব্যাপার নয় বলে সময় বেশি লেগে যাচ্ছে।” আমাকে দেখে ওদের কথা থেমে যায়। আমিও কয়েকটা প্রশ্ন করে বেরিয়ে এলাম।’
‘খুব ভাল কাজ করেছেন। তারপর কী হলো?’
‘শ্লেসিঞ্জারের বউ বেরিয়ে এল দোকান থেকে। ততক্ষণে দরজার পাশে লুকিয়ে পড়েছিলাম আমি। মহিলার বোধহয় সন্দেহ হয়েছিল; তাই সন্দিগ্ধ চোখে এদিক-ওদিক তাকাল কয়েকবার। তারপর একটা ক্যারিজ ডেকে ওটাতে উঠে বসল। কপাল ভাল, আমিও একটা ক্যারিজ পেয়ে গেলাম। ওটাতে করে পিছু নিলাম মহিলার। ব্রিক্সটনের ছত্রিশ নাম্বার পোল্টনি স্কয়ারে নেমে গেল সে। তাকে পাশ কাটিয়ে গেলাম আমি। স্কয়ারের কোনায় গিয়ে নেমে পড়লাম ক্যারিজ থেকে। ওখান থেকেই লুকিয়ে নজর রাখতে শুরু করলাম বাড়িটার ওপর।’
‘কাউকে দেখলেন বাড়ির ভেতরে?’
‘নিচতলার একটা ছাড়া বাকি সব জানালা বন্ধ। খড়খড়িও নামানো ছিল; তাই কিছু দেখতে পাইনি। ওখানে দাঁড়িয়ে ভাবছিলাম কী করা যায়। ঠিক তখনই একটা ভ্যান এসে থামল বাড়িটার সামনে। দু’জন লোক নামল ওটা থেকে। ভ্যানের ভেতর থেকে কী যেন বের করল। তারপর বাড়ির ভেতরে ঢুকে গেল ওটা নিয়ে। মি. হোমস, জিনিসটা একটা কফিন!’
‘আহ্!’ অস্ফুটে বলে উঠল হোমস।
‘আরেকটু হলেই ভেতরে ঢুকে পড়তাম। দরজা খুলে দিয়েছিল সেই ডাইনিটাই। তখনই পলকের জন্যে আমাকে দেখে ফেলে সে। আমাকে বোধহয় চিনে ফেলেছে। চমকে উঠে তড়িঘড়ি করে দরজা বন্ধ করে দিল। আপনাকে কথা দিয়েছিলাম, আগ বাড়িয়ে কিছু করব না। তাই আপনার কাছেই ছুটে এসেছি খবরটা দিতে।’
‘খুব ভাল কাজ করেছেন,’ এক তা কাগজের ওপর কী যেন লিখতে-লিখতে বলল হোমস। ‘ওয়ারেণ্ট ছাড়া আইনসঙ্গত কিছু করতে পারব না আমরা। এই চিরকুটখানা কর্তৃপক্ষের কাছে নিয়ে গেলেই ওয়ারেণ্ট দিয়ে দেবে। একটু জটিলতা থাকতে পারেÍতবে আমার মনে হয় গয়না বিক্রির প্রমাণটাই ওয়ারেণ্ট আনবার জন্যে যথেষ্ট। লেস্ট্রাড আপনাকে সাহায্য করবে।’
‘কিন্তু ততক্ষণে তো শয়তানগুলো ওকে খুন করে ফেলতে পারে। কফিন আনার মানে কী? ও ছাড়া আর কার জন্যেই বা আনাবে?’
‘আমাদের পক্ষে যা-যা সম্ভব, তার সবই করব, মি. গ্রিন। একটা মুহূর্তও নষ্ট করব না। ওসব আমাদের হাতে ছেড়ে দিন। ওয়াটসন,’ মি. গ্রিন ঘর থেকে বেরিয়ে যেতে আমার দিকে ফিরল হোমস, ‘ভদ্রলোক তো গেলেন আইনি সাহায্য আনতে। তবে আমাদেরকে এখন নিজেদের মত করে এগোতে হবে। পুলিস কখন আসবে, সে-ভরসায় বসে থাকলে চলবে না। পরিস্থিতি ভীষণ খারাপ। এ-অবস্থায় যে-কোন চরম ব্যবস্থা নেয়াই অন্যায় হবে না। চলো, এক্ষুণি পোল্টনি স্কয়ারে যেতে হবে।’

পার্লামেণ্ট হাউস পেরিয়ে ওয়েস্টমিন্স্টার ব্রিজের ওপর দিয়ে ঝড়ের বেগে ছুটছে আমাদের ক্যারিজ। হোমস বলল, ‘চলো, গোটা পরিস্থিতিটা একবার খতিয়ে দেখা যাক। শয়তানগুলো ভদ্রমহিলাকে লণ্ডন নিয়ে এসেছে ভুলিয়ে-ভালিয়ে। তার আগে কায়দা করে বিদায় করে দিয়েছে তাঁর বিশ্বস্ত পরিচারিকাকে। ভদ্রমহিলা যদি কোন চিঠি লিখেও থাকেন, সেগুলো গাপ করে দিয়েছে বদমাশগুলো। কোন পুরনো বন্ধুর সাহায্যে বাড়ি ভাড়া নিয়েছে। বাড়িটায় ঢোকার সাথে সাথেই বন্দি করেছে লেডি কারফ্যাক্সকে; হাতিয়ে নিয়েছে তার সমস্ত মূল্যবান অলঙ্কারাদি। ইতিমধ্যে কিছু কিছু অলঙ্কার বিক্রিও শুরু করে দিয়েছে। এখন তাঁকে খুন করা ছাড়া আর কোন উপায় নেই।’
‘সেটা তো স্পষ্টই বোঝা যাচ্ছে।’
‘এবার এসো একটু অন্য লাইনে চিন্তা করি। কফিন থেকে শুরু করব এবার। কফিন কেনার ঘটনাটা প্রমাণ করে, লেডি কারফ্যাক্স খুব সম্ভবত মৃত। কেননা কফিন কেনার অর্থ হলোÍভদ্রমহিলাকে ধর্মীয় রীতি অনুযায়ী, মেডিক্যাল সার্টিফিকেট-সহ আনুষ্ঠানিকভাবে সমাহিত করা হবে। এখন ওঁকে যদি ওরা খুনই করবে, তাহলে বাগানে একটা গর্ত খুঁড়ে লাশটা পুঁতে দিলেই তো ল্যাঠা চুকে যায়। কিন্তু তা না করে আইনসঙ্গত উপায়ে এগোচ্ছে। তার মানে কী? নিশ্চয়ই ভদ্রমহিলাকে ওরা এমনভাবে খুন করেছে যে ডাক্তারও ধোঁকা খেয়ে তাঁর মৃত্যুকে স্বাভাবিক বলে সার্টিফিকেট দিয়েছেন। বিষ খাইয়েছে নিশ্চয়ই। কিন্তু ডাক্তার বিশ্বস্ত কেউ না হলে তো তাকে এ-অবস্থায় লাশের কাছে ঘেঁষতে দেয়ার কথা না শ্লেসিঞ্জারের। একজন ডাক্তার এসব শয়তানিতে যোগ দেবেন? উঁহু, তা-ও তো সম্ভব নয়।’
‘মেডিক্যাল সার্টিফিকেট জাল করেনি তো?’
‘সেটা আরও বিপজ্জনক, ওয়াটসন। ভীষণ বিপজ্জনক। না, ও-কাজ ওরা করবে না। এই তো মুর্দাফরাশের দোকানটা। তাহলে বন্ধকির দোকানটা ছাড়িয়ে এসেছি। মুর্দাফরাশের দোকানটা থেকে একটু ঘুরে আসবে, ওয়াটসন? তোমার চেহারা দেখে কেউ তোমাকে অবিশ্বাস করবে না। জিজ্ঞেস কোরো পোল্টনি স্কয়ারের শেষকৃত্যটা কাল ক’টায় হচ্ছে।’
দোকানের মহিলা নির্দ্বিধায় জবাব দিল সকাল আটটায় হবে শেষকৃত্য।
‘শয়তানের দল কোনভাবে আইনি কাগজপত্র জোগাড় করেছে। ওরা ধরেই নিয়েছে যে ভয়ের কিছু নেই। আর দেরি করা যায় না। সরাসরি আক্রমণ করতে হবে। অস্ত্র আছে তো তোমার সঙ্গে?’
‘আমার লাঠিটা আছে!’
‘বেশ, বেশ, ওতেই চলবে। পুলিস আসার অপেক্ষায় বসে থেকে আর সময় নষ্ট করা যাবে না। তুমি চলে যাও, কোচোয়ান। চলো, ওয়াটসন।’
গাড়ি বিদায় করে দিয়ে, পোল্টনি স্কয়ারের মাঝখানের বিরাট কালো বাড়িটার ঘণ্টি বাজিয়ে দিল ও। সাথে সাথে দরজা খুলে লম্বা এক মহিলা উঁকি মারল।
‘কী চাই?’ তীক্ষ্ণ কণ্ঠে জানতে চাইল সে।
‘ডা. শ্লেসিঞ্জারের সঙ্গে কথা বলব,’ বলল হোমস।
‘ওই নামের কেউ থাকে না এখানে,’ কথাটা বলেই দরজা বন্ধ করে দেয়ার চেষ্টা করল মহিলা। সাথে সাথে দরজার ফাঁকে পা ঢুকিয়ে দিল হোমস।
‘বেশ, যে-নামের লোকই থাকুক না কেন, তার সঙ্গেই দেখা করব আমি,’ দৃঢ় কণ্ঠে বলল ও।
খানিকক্ষণ ইতস্তত করল মহিলা। তারপর দরজা খুলে দিল। ‘ঠিক আছে, ভেতরে আসুন! আমার স্বামী কাউকে ভয় পায় না।’ পিছনে দরজা বন্ধ করে, হল-এর ডান দিকের সিটিং রুমে ঢুকল সে আমাদের নিয়ে। প্রদীপটা একটু উস্কে দিয়ে বেরিয়ে গেল ঘর থেকে। যাবার আগে বলে গেল, ‘একটু বসুন। এখুনি আসছে মি. পিটার্স।’
খানিক বাদের দরজা খুলে গেল। বিশালদেহী, দাড়ি-গোঁফ কামানো টেকো এক লোক ঢুকল ভেতরে। মুখটা লাল, গাল দুটো ঝুলে পড়েছে, মুখে নিষ্ঠুরতার ছাপ।
‘আপনারা ভুল করছেন,’ সহজ গলায় বলল সে। ‘কেউ নিশ্চয়ই ভুল ঠিকানা দিয়েছে আপনাদের। রাস্তা ধরে আরেকটু এগোলেই কাক্সিক্ষত ঠিকানায়Í’
‘নষ্ট করার মত সময় আমাদের হাতে নেই,’ কঠোর গলায় বলল আমার বন্ধু। ‘তুমি অ্যাডিলেডের হেনরি পিটার্স, ওরফে রেভারেণ্ড ডা. শ্লেসিঞ্জার।’
লোকটা একদৃষ্টিতে চেয়ে রইল শত্রুর দিকে। ঠাণ্ডা গলায় বলল, ‘আপনার নাম শুনে ভয় পাবার লোক আমি নই, মি. হোমস। মানুষ যতক্ষণ নিজের বিবেকের কাছে সৎ থাকে, ততক্ষণ কাউকে ভয় পায় না সে। তা আমার বাড়িতে কেন এসেছেন আপনারা?’
‘লেডি ফ্রান্সিস কারফ্যাক্সকে নিয়ে কী করেছ, জানতে চাই। বাডেন থেকে ধরে এনেছ যাকে।’
‘ভদ্রমহিলা এখন কোথায় আছেন তা যদি জানাতে পারেন তাহলে আমি খুশিই হতাম,’ শান্ত কণ্ঠে বলল পিটার্স। ‘তাঁর কাছে প্রায় একশো পাউণ্ড পাই আমি। বাডেনে মিসেস পিটার্স আর আমার সঙ্গে খাতির জমান তিনি। এ-কথা সত্যি যে সে-সময় অন্য নাম ব্যবহার করছিলাম আমি। আমাদের সঙ্গেই লণ্ডনে ফিরেন মহিলা। তাঁর বিল আর টিকেটের দাম আমিই দিই। লণ্ডন পৌঁছেই সটকে পড়েছেন। যাওয়ার সময় তাঁর সেকেলে গয়নাগুলো ফেলে যান। মহিলার খোঁজ দিতে পারলে আপনার কাছে কৃতজ্ঞ থাকব, মি. হোমস।’
‘ওঁকে খুঁজে বের করব বলেই তো এ-বাড়িতে এসেছি,’ চিবিয়ে-চিবিয়ে বলল শার্লক হোমস।
‘ওয়ারেণ্ট আছে আপনার কাছে?’
পকেট থেকে রিভলভার বের করল হোমস। ‘এরচেয়ে ভাল জিনিসই আছে। ওয়ারেণ্ট আসার আগ পর্যন্ত আপাতত এটা দিয়েই কাজ চালাতে হবে।’
‘আরে, আপনি দেখছি ছিঁচকে চোর।’
‘তা বলতে পারো,’ খুশি খুশি গলায় বলল হোমস। ‘আমার বন্ধুটিও কিন্তু বিপজ্জনক লোক। তোমার বাড়িটা খুঁজে দেখব আমরা।’
অগত্যা দরজা খুলে দিল প্রতিপক্ষ।
‘পুলিস ডাকো তো, অ্যানি!’ চেঁচিয়ে উঠল সে। স্কার্টের ঘষা খাওয়ার খসখস শব্দ শোনা গেল প্যাসেজে। হলের দরজা খোলার শব্দ হলো খানিক বাদে, এক মুহূর্ত পর আবার বন্ধ হয়ে গেল।
‘হাতে সময় কম, ওয়াটসন,’ তাগাদা দিল হোমস। ‘আমাদের বাধা দেয়ার চেষ্টা করলে কপালে কিন্তু ঠ্যাঙানি জুটবে, পিটার্স। বাড়িতে যে-কফিনটা এনেছ, সেটা কোথায়?’
‘কফিন দিয়ে কী করবেন আপনারা? একটা মৃতদেহ আছে ওটাতে।’
‘লাশটা দেখব।’
‘সে-অনুমতি আমি দেব না।’
‘তাহলে কী আর করা, অনুমতি ছাড়াই দেখতে হবে।’ লোকটাকে ধাক্কা দিয়ে সামনে থেকে সরিয়ে হলে ঢুকল হোমস, ওর পিছু-পিছু আমি। আমাদের ঠিক সামনেই একটা আধ-খোলা দরজা। ঢুকে পড়লাম ভেতরে। ডাইনিং রুম। একটা ঝাড়বাতি মিটমিট করে জ্বলছে টেবিলের ওপর; পাশে একটা কফিন। প্রদীপের আলো উস্কে দিয়ে কফিনের ডালা খুলে ফেলল হোমস। জরাজীর্ণ এক বৃদ্ধার মৃতদেহ শুয়ে আছে ভেতরে। হাজার নিষ্ঠুরতা, অনাহার, কিংবা রোগে ভুগলেও এমন বিধ্বস্ত চেহারা হতে পারে না লেডি ফ্রান্সিসের। একইসাথে বিস্ময় ও স্বস্তির ছাপ ফুটে উঠল হোমসের চেহারায়।
‘ধন্যবাদ ঈশ্বর!’ বিড়বিড় করে বলল। ‘লাশটা লেডি ফ্রান্সিসের না।’
‘অন্তত এই একটিবার ভুল করলেন আপনি, মি. শার্লক হোমস,’ পিছন থেকে বলে উঠল পিটার্স।
‘এই মহিলা কে?’
‘আমার স্ত্রীর নার্সÍরোয স্পেণ্ডার। ব্রিক্সটন ওয়ার্কহাউস ইনফার্মারি-তে ছিল সে। এখানে নিয়ে এসে, ডা. হর্সমকে দিয়ে চিকিৎসা করিয়েছি। বাড়িতে আনার তিন দিন পর মারা গেল বুড়ি। সার্টিফিকেট অনুসারে, বার্ধক্যজনিত কারণে মারা গেছে সে। শেষকৃত্যের ভার দিয়েছি কেনিংটন রোডের স্টিমসন অ্যাণ্ড কোম্পানির ওপর। কাল সকাল আটটায় বুড়িকে দাফন করবে ওরা। গল্পটায় কোন খুঁত খুঁজে পেলেন, মি. হোমস? গাধার মত ভুল করেছেন আপনি। কফিনের ডালা তোলার পর আপনার যে-চেহারা হয়েছিল ওটার একটা ছবি পেলে লাখ টাকা দিতেও রাজি আমি।’
শয়তানটার বিদ্রূপ শুনেও অবিচল রইল হোমস। তবে হাত দুটো মুষ্টিবদ্ধ হয়ে গেছে বিরক্তিতে।
‘তোমার বাড়িতে তল্লাশি চালাব,’ ও বলল।
এমন সময় একটা নারী-কণ্ঠ ও ভারী পদশব্দ শোনা গেল প্যাসেজে।
‘দাঁড়ান, দেখাচ্ছি,’ চেঁচিয়ে উঠল পিটার্স। ‘এদিকে আসুন, অফিসার। এই লোকগুলো জোর করে ঢুকে পড়েছে আমার বাড়িতে। কিছুতেই বের করতে পারছি না। দয়া করে এদের বের করুন আমার বাড়ি থেকে।’
একজন সার্জেণ্ট আর কনস্টেবল এসে দাঁড়াল দোরগোড়ায়। পকেট থেকে নিজের কার্ড বের করল হোমস।
‘এই নিন আমার নাম-ঠিকানা। ও আমার বন্ধু, ডা. ওয়াটসন।’
‘আপনাকে আমরা খুব ভাল করেই চিনি, স্যর,’ সার্জেণ্ট বলল। ‘তবে ওয়ারেণ্ট ছাড়া তো আপনাকে এখানে থাকতে দিতে পারব না।’
‘সেটা আমিও জানি, সার্জেণ্ট।’
‘লোকটাকে গ্রেফতার করুন!’ চেঁচিয়ে উঠল পিটার্স।
‘সেটা আমি বুঝব, আমাকে কাজ শেখাতে আসবেন না,’ ভারিক্কি চালে বলল সার্জেণ্ট। ‘দুঃখিত, আপনাদের এখানে থাকতে দিতে পারছি না, মি. হোমস।’
‘হ্যাঁ, ওয়াটসন, চলো যাই।’
এক মিনিট পর আবার রাস্তায় নেমে এলাম আমরা। হোমস বরাবরের মতই শান্ত, কিন্তু রাগে-অপমানে রীতিমত জ্বলছি আমি। সার্জেণ্ট লোকটাও এসেছে আমাদের পিছু-পিছু।
‘দুঃখিত, মি. হোমস, আইন না মেনে উপায় ছিল না আমার।’
‘ঠিক বলেছেন, সার্জেণ্ট। আপনার কিছু করার ছিল না।’
‘আশা করি, কারণ ছিল বলেই বাড়িটায় ঢুকেছিলেন আপনি। আমার যদি কিছু করার থাকেÍ’
‘এক নিখোঁজ ভদ্রমহিলাকে খুঁজছি আমরা, সার্জেণ্ট। আমার ধারণা, ভদ্রমহিলা ওই বাড়িতেই আছেন। আশা করছি, শিগগিরই ওয়ারেণ্ট এসে যাবে।’
‘তাহলে লোকগুলোর ওপর চোখ রাখছি আমি। কিছু জানতে পারলেই খবর দেব আপনাকে।’
সবে নয়টা বাজে। তদন্তের কাজ থামালাম না আমরা। প্রথমে গেলাম ব্রিক্সটন ওয়ার্কহাউস ইনফার্মারিতে। খোঁজ নিয়ে জানা গেল, কয়েক দিন আগে সত্যিই এক সহৃদয় দ¤পতি গিয়েছিল হাসপাতালটায়। এক বৃদ্ধাকে পুরনো চাকর দাবি করে তাকে সঙ্গে করে নিয়ে গেছে। বুড়ির মৃত্যুসংবাদ শুনে একটুও অবাক হলো না হাসপাতালের লোকজন।
এরপর গেলাম ডাক্তারের কাছে। তাঁকে যখন ডাকা হয়, বুড়ির প্রাণবায়ু ততক্ষণে প্রায় বেরিয়েই গেছে। তিনি শুধু ডেথ সার্টিফিকেটটা লিখে দিয়েছেন। বার্ধক্যজনিত কারণেই মারা গেছে বৃদ্ধা। ডাক্তার জানালেন, ‘সবকিছু স্বাভাবিকভাবেই ঘটেছে। কোন ধরনের নোংরা ষড়যন্ত্রের আভাসও পাইনি আমি।’ বাড়িটাতে সন্দেহজনক কিছু দেখেননি তিনি। তবে একটা ব্যাপারে খটকা লেগেছে তাঁর। ওরকম অবস্থাস¤পন্ন একটা বাড়িতে কাজ করার জন্যে কোন চাকর-বাকর নেই। আর কিছু বলতে পারলেন না ডাক্তার।
সবশেষে গেলাম স্কটল্যাণ্ড ইয়ার্ডে। ওয়ারেণ্ট নিতে একটু অসুবিধে হলো। অবশ্য অসুবিধে হওয়াই স্বাভাবিক। পরদিন সকালের আগে ম্যাজিস্ট্রেটের স্বাক্ষর পাওয়া যাবে না। সকাল নয়টার মধ্যে লেস্ট্রাডের সঙ্গে হোমস থানায় গেলে ম্যাজিস্ট্রেটের স্বাক্ষর পেয়ে যাবে। অগত্যা বেকার স্ট্রিটে ফিরে এলাম। মাঝরাতের দিকে এসে হাজির হলো সার্জেণ্ট। তার কাছ থেকে জানা গেল, বাড়িটার জানালাগুলোতে মাঝে-মধ্যে আলোর ঝলক দেখা গেছে। তবে ওখান থেকে কেউ বেরোয়নিÍভেতরেও ঢোকেনি কেউ।
মেজাজ খিঁচরে গেছে হোমসের। ঠিকমত কথাও বলছে না কারও সঙ্গে। চুরুট টেনে যাচ্ছে অবিরাম। ঘন কালো ভুরু-জোড়া কুঁচকে একটানা ধূমপান করে যাচ্ছে, আর আঙুল ঠুকছে চেয়ারের হাতলে। ঝড়ের গতিতে চিন্তা চলছে ওর মাথার ভেতরে। ওকে এ-অবস্থায় রেখেই ঘুমোতে গেলাম আমি। রাতে ঘুমের ঘোরেও টের পেলাম, বাড়িময় পায়চারি করে বেড়াচ্ছে ও। ভোর হতে-না-হতেই ঝড়ের বেগে ঘরে ঢুকে ডেকে তুলল আমাকে। ওর পরনে এখনও ড্রেসিং-গাউন। তবে বিবর্ণ, ফাঁকা চোখ দুটো দেখেই বলে দেয়া যায়, সারারাত ঘুমোয়নি।
‘শেষকৃত্য যেন ক’টায়? আটটায় না?’ সাগ্রহে জিজ্ঞেস করল ও। ‘সাতটা বিশ বেজে গেছে। হা ঈশ্বর, আমি একটা গাধা, ওয়াটসন। আমি একটা রামগাধা। জলদি চলো। জলদি! জীবন-মৃত্যুর প্রশ্নÍসরু সুতোর ওপর ঝুলছে একটা জীবন। আজ যদি দেরি হয়ে যায়, জীবনে কখনও নিজেকে ক্ষমা করতে পারব না আমি!’
পাঁচ মিনিটও পেরোল না; বেকার স্ট্রিট ধরে উড়ে চলেছে আমাদের ঘোড়ার গাড়ি। বিগ বেন পেরোলাম সাতটা পঁয়ত্রিশে। কাঁটায় কাঁটায় আটটায় পেরোলাম ব্রিক্সটন রোড। তবে আমাদের মতই দেরি হয়ে গেছে ওদেরও। আটটা দশে পিটার্সের বাড়ির সামনে পৌঁছে দেখি, তখনও দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে শবযান। মুখে ফেনা তুলে আমাদের ঘোড়া যখন থামল, তিনজন মানুষ উদয় হলো বাড়িটার চৌকাঠে। একটা কফিন ধরাধরি করে আনছে মানুষ তিনজন। তীরের মত ছুটে গিয়ে ওদের পথ আটকে দাঁড়াল হোমস।
‘ভেতরে ঢোকাও!’ সামনের লোকটার বুকে হাত ঠেকিয়ে চেঁচিয়ে উঠল ও। ‘এক্ষুণি ভেতরে ঢোকাও!’
‘আবার কী শয়তানি শুরু করেছেন? আপনাকে আবার জিজ্ঞেস করছি, আপনার ওয়ারেণ্ট কোথায়?’ গর্জে উঠল পিটার্স। রাগে টকটকে লাল হয়ে গেছে তার চেহারা।
‘ওয়ারেণ্ট আসছে। ওটা যতক্ষণ না আসে, কফিনটা বাড়ি থেকে বেরোচ্ছে না।’
ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেল শব-বাহকরা হোমসের কর্তৃত্বপূর্ণ কণ্ঠস্বর শুনে। পিটার্স হঠাৎ বাড়ির ভেতরে অদৃশ্য হয়ে গেছে। হোমসের কথামত কফিনটা আবার বাড়ির ভেতরে ঢুকিয়ে দিল শব-বাহকরা। ‘ওয়াটসন, এই নাও স্ক্রু-ড্রাইভার।’ কফিনটা টেবিলে নামিয়ে রাখতেই কাঁপা গলায় চেঁচিয়ে উঠল ও। ‘আর এটা তুমি নাও, ভাই। এক মিনিটের মধ্যে ডালা খুলতে পারলে একটা স্বর্ণমুদ্রা পাবে। কোন কথা নয়Íকাজ শুরু করো। দারুণ! আরেকটা স্ক্রু! হ্যাঁ, আরেকটা! এবার টান মারো! খুলছে! খুলছে! আহ্, খুলে গেছে!’
আমাদের সম্মিলিত চেষ্টার কাছে হার মেনে খুলে গেল কফিনের ডালা। সাথে সাথে ভক করে নাকে এসে ধাক্কা মারল ক্লোরোফর্মের তীব্র গন্ধ। ভেতরে একটা দেহ শোয়ানো, সারা মুখ-মাথায় জড়িয়ে রাখা ক্লোরোফর্মে ভেজানো তুলো। একে-একে ওগুলো তুলে নিল হোমস। খানিক বাদে মাঝবয়সী আধ্যাত্মিক চেহারার এক নারীর মুখ দেখা দিল। সাথে সাথে নারীমূর্তিটিকে দুই হাতে জড়িয়ে ধরে বসিয়ে দিল হোমস।
‘বেঁচে আছেন, না মরে গেছেন, ওয়াটসন? আমাদের নিশ্চয়ই খুব বেশি দেরি হয়ে যায়নি!’
আধ-ঘণ্টা পর্যন্ত মনে হচ্ছিল, সত্যিই বুঝি বড্ড দেরি করে ফেলেছি। দমবন্ধ হয়ে হোক বা ক্লোরোফর্মের প্রভাবেই হোক, মনে হচ্ছিল জীবনের শেষ সীমারেখাটুকুও পেরিয়ে গেছেন লেডি ফ্রান্সিস। কৃত্রিম শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যবস্থা করলাম, ইথার ইনজেকশন দিলামÍমোদ্দা কথা বিজ্ঞানসম্মত প্রায় সব উপায়েই চিকিৎসা করলাম তাঁর। অবশেষে, একটু একটু করে যেন প্রাণের লক্ষণ দেখা যেতে শুরু করল ওঁর মধ্যে। চোখের পাতা একটু কেঁপে উঠল, ধীরে ধীরে রং ফিরতে শুরু করল মুখে। একটা ক্যারিজ এসে থামল দরজার সামনে। জানালার খড়খড়ি ফাঁক করে বাইরে তাকাল হোমস। তারপর বলল, ‘লেস্ট্রাড চলে এসেছে ওয়ারেণ্ট নিয়ে। এসে তো দেখবে ওর পাখি দুটো উড়াল মেরেছে।’
ভারী পায়ের আওয়াজ শোনা গেল প্যাসেজে। শব্দটা শুনেই হোমস বলল, ‘ভদ্রমহিলার সেবা-যত্ন করার অধিকার যাঁর সবচেয়ে বেশি, তিনি এসে পড়েছেন। শুভ সকাল, মি. গ্রিন। লেডি ফ্রান্সিসকে এখান থেকে যত তাড়াতাড়ি সরানো যায়, ততই ভাল। আর হ্যাঁ, কফিনটা নিয়ে যাও। যে-হতভাগিনী বৃদ্ধা ওটার মধ্যে শুয়ে আছে, তাকে শান্তিতে চিরনিদ্রায় শুইয়ে দিয়ে এসো।’
‘ওয়াটসন, এই কেসের কাহিনি যদি কখনও লেখ,’ সেদিন সন্ধ্যায় বলল হোমস, ‘তবে তা হয়ে থাকবে সবচেয়ে ক্ষুরধার মস্তিষ্কের সাময়িক বুদ্ধু বনে যাবার নজির। এ-ধরনের ভুল সব মানুষই করে কখনও-না-কখনও। তবে ভুলটা যে শুধরে নিতে পারে, সে-ই তো শ্রেষ্ঠ মানুষ। এরকম কৃতিত্ব হয়তো কিছুটা দাবি করতে পারি আমি। অবচেতন মন ধরতে পেরেছিল, কোথাও একটা সূত্র, একটা বেখাপ্পা কথা অথবা ঘটনা আছে; কিন্তু আমি খেয়াল করিনি। সেটাই মনে করবার চেষ্টায় রাতের ঘুম হারাম হয়ে গিয়েছিল। তারপর, হঠাৎ করেই, ভোরের আলো ফোটার সঙ্গে সঙ্গে বিদ্যুৎচমকের মত মনে পড়ে গেল কথাটা। মুর্দাফরাশের দোকানের মহিলার কথা বলেছিলেন ফিলিপ গ্রিন। মহিলা বলেছিল, æদেরি হয়ে গেছে। আরও আগেই পাঠানো উচিত ছিল। কিন্তু সাধারণ ব্যাপার নয় বলে সময় বেশি লেগে যাচ্ছে।” কফিনের কথাই বলছিল মহিলা। সাধারণ কফিন নয় ওটা। কথাটার অর্থ একটাইÍবিশেষ মাপে বানাতে হচ্ছিল কফিনটা। কিন্তু কেন? কেন? ঠিক তখনই চকিতে মনে পড়ে গেল, কফিনটা একটু বেশিই গভীর। তার নিচে শুয়ে রয়েছে ছোট্ট একটা দেহ। অমন ছোট্ট একটা দেহের জন্যে এত বড় কফিন কেন? আরেকটা দেহ রাখবার জন্যে। এক সার্টিফিকেটে কবর দেয়া হবে দুটো দেহ। ভীষণ সোজা ব্যাপার। অথচ মাথা ঠিকমত কাজ করছিল না বলে ব্যাপারটা ধরতেই পারিনি। সকাল আটটায় বৃদ্ধার সঙ্গে সঙ্গে জ্যান্ত কবর দেয়া হত লেডি ফ্রান্সিসকেও। কাজেই কফিনটা বাড়ি থেকে বেরোবার আগে যে-করেই হোক থামাতে হত ওদেরকে।
‘ভদ্রমহিলাকে জীবিত পাওয়ার সম্ভাবনা ছিল না বললেই চলে। তবুও ছুটে গিয়েছিলাম ভাগ্যের ওপর নির্ভর করে। ভাগ্যদেবীও নিরাশ করেননি আমাদের। পিটার্সের দল, যদ্দূর জানি, কখনও খুনোখুনি করেনি। খুনোখুনির সম্ভাবনা দেখলেই সটকে পড়ে। ভেবেছিল, ভদ্রমহিলার মৃত্যু কেমন করে হয়েছিল, তার কোন চিহ্ন না রেখেই কবর দিয়ে দেবে। তাতে পরে কবর খুঁড়লেও তাঁর মৃত্যুর কারণ জানা যাবে না কোনদিন। আমার বিশ্বাস, এমনটা ভেবেই কাজে নেমেছিল ওরা। বাকি ঘটনা তো মনে মনে কল্পনা করে নিতে পারবেই। উপরতলার ঘরটায় এতদিন বন্দি করে রেখেছিল ওরা লেডি ফ্রান্সিসকে। আজ সকালে তাঁকে ক্লোরোফর্ম দিয়ে অজ্ঞান করে নিচে নিয়ে আসে। কফিনের ভেতরেও ক্লোরোফর্ম ঢেলে দেয়, যাতে কোনভাবেই জ্ঞান না ফেরে। তারপর মহিলাকে কফিনে পুরে ডালা বন্ধ করে দেয়। দারুণ বুদ্ধি বের করেছিল, ওয়াটসন। এত বছরের ক্যারিয়ারে ঘটনাটা একেবারেই নতুন আমার কাছে। আমাদের এই সাবেক যাজক বন্ধুটি যদি লেস্ট্রাডের হাত গলে পালাতে পারে, তাহলে শিগগিরই আরও কিছু চমকপ্রদ ঘটনার কথা শোনার জন্যে প্রস্তুত হয়ে থাকো হে, ওয়াটসন।’


রূপান্তর: মারুফ হোসেন

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ০২ রা নভেম্বর, ২০১৮ রাত ১০:০০

রাজীব নুর বলেছেন: অনুবাদ ভালো হয়েছে। মুন্সিয়ানা আছে।
গোয়েন্দা গল্প গুলো আমার ভীষন প্রিয়।
এই একটু আগে বোমকেশ এর মুভি দেখলাম।

২| ০২ রা নভেম্বর, ২০১৮ রাত ১০:৪৯

আর্কিওপটেরিক্স বলেছেন: হোমস কাকাবাবু বোমকেশ পোয়ারো অর্জুন মাসুদ রানা কুয়াশা.....

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.