নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মারুফ হোসেন

Tsundoku

মারুফ হোসেন › বিস্তারিত পোস্টঃ

ঠগির জবানবন্দি—পর্ব ৭

১৬ ই মার্চ, ২০১৯ সকাল ৮:০০


[ভারতবর্ষের কুখ্যাত দস্যু সম্প্রদায় ঠগিদের কার্যকলাপ নিয়ে সত্য ঘটনার ওপর ভিত্তি করে ফিলিপ মিডোয টেলর, ১৮৩৯ সালে, লিখেছিলেন ‘কনফেশন্স অভ আ থাগ’ উপন্যাসটি। সেই বইটির বাংলা অনুবাদ—ঠগির জবানবন্দি—শীঘ্রই প্রকাশিত হচ্ছে সেবা প্রকাশনী থেকে, আমার অনুবাদে। চমৎকার এই বইটির বেশ কিছু পরিমার্জিত অধ্যায় (মূল অনুবাদ বই থেকে কিছুটা কাটছাঁট করে) প্রকাশ করার ইচ্ছে আছে এই ব্লগে। আজ, সপ্তম পর্বে, প্রকাশ করা হলো পঞ্চম অধ্যায়ের প্রথম অর্ধাংশ।]
(ষষ্ঠ পর্ব পড়ুন এখানে)

পাঁচ
০২

‘“ভেবেছিলাম, আজই বুঝি আমার শেষ দিন,” একটু আত্মস্থ হয়ে বলল বাবা। “অভিশাপ দিলাম, এসবের ফল শয়তানটাকে পেতেই হবে।”
‘“বাবা, আপনার সঙ্গে লোকটার কী নিয়ে বিরোধ?” জিজ্ঞেস করলাম আমি।
‘“বছর কয়েক আগের কথা—তুমি তখন নেহাত শিশু। আমাদের গ্রামের ধনী সওদাগর জয়সুখদাস হঠাৎ মারা যায়। মারা যাবার আগে আমাকে ডেকে পাঠায় সে। তার পরিবারকে ব্রিজলালের হাত থেকে রক্ষা করার দায়িত্ব দিয়ে যায় আমার হাতে। নাগপুর দরবারে জয়সুখদাসের নামে মিথ্যে বদনাম রটানোর জন্যে ব্রিজলালকে দরবারেই জুতোপেটা করেছিল সে। সেই থেকে ওর পিছে লেগে ছিল শয়তানটা। জয়সুখদাস আমাদের ও আরও কয়েকটা গ্রামের খাজনা আদায় করে পৌঁছে দিত রাজদরবারে। ব্রিজলাল রাজার কাছে নালিশ করেছিল, খাজনার টাকায় নাকি গড়বড় করেছে জয়সুখদাস। তবে জয়সুখের সততার ব্যাপারে সবাই-ই জানত; তাই ব্রিজলালের অভিযোগ ধোপে টিকল না। কিন্তু প্রকাশ্য দরবার জুতোপেটা হয়ে যে অপমানের শিকার হয়েছিল, তা কখনও ভোলেনি ব্রিজলাল। তাই সারাক্ষণই সুযোগ খুঁজত, কী করে প্রতিশোধ নেয়া যায় সেই অপমানের। দরবারে জয়সুখের আরও কিছু ক্ষমতাধর শত্রু ছিল। তাই বন্ধু আমার সবসময়ই ভয়ে-ভয়ে থাকত, না জানি কখন এরা ওর পিছে লেগে যায়। মৃত্যুর সময়ে এসব ভেবে আমাকে বলে যায়, ওর বউ-বাচ্চাদের যেন শিগগিরই সব টাকাপয়সা, গয়নাগাটি-সহ ওর জন্মভূমি, মাড়ওয়ার-এ পাঠিয়ে দিই। ওর মৃত্যুর পর আমি তা-ই করলাম। সঙ্গে নিজের লোকও দিয়ে দিলাম, যাতে পথে ঠগিদের হাতে না পড়ে।
‘“ওদেরকে পাঠানোর পর এক হপ্তা না পেরোতেই মনিব, পেশকার নারায়ণ পণ্ডিতের ফরমান নিয়ে গ্রামে হাজির হলো ব্রিজলাল ও আরেকজন মুৎসুদ্দি। জয়সুখদাসের পরিবারকে বন্দি করবে। কিন্তু ওদের সঙ্গে কোন লিখিত পরোয়ানা ছিল না। আমি রেগে গিয়ে জয়সুখের পরিবারের ঠিকানা দিতে অস্বীকার করলাম। ব্রিজলাল প্রথমে অমাকে নানারকম হুমকি-ধমকি দিল। তাতেও কাজ না হওয়াতে গাল পাড়তে লাগল। শেষতক আর সহ্য করতে না পেরে আমিও জুতোপেটা করলাম ওকে। গাঁয়ের লোকেরা পাথর ছুঁড়তে-ছুঁড়তে তাড়িয়ে দিল শয়তানটাকে।
‘“তারপর অনেকদিন ওর কোন খবর পাইনি। শুধু জানতাম, রাজদরবারে ও আমার ঘোর শত্রু। এক প্রতিবেশী খুব জ্বালাচ্ছিল আমাকে। আমার জমি জবরদখল করল, ফসল কেটে নিল বেশ কয়েকবার। শেষমেশ আর সইতে না পেরে রাজদরবারে নালিশ জানালাম প্রতিকার চেয়ে। কিন্তু ফায়দা হলো না কোন। এরপর লোকও পাঠালাম। কিন্তু প্রকাশ্যে আমার লোকেদের বিরোধিতা করল ব্রিজলাল। অভিযোগ করল, আমি নাকি অবৈধ প্যাটেল। জোচ্চুরি করে প্যাটেল হয়েছি। অন্য এক লোককে প্রকৃত প্যাটেলের উত্তরাধিকারী বলে দাঁড় করিয়ে দিল সে। কাজের কাজ তো কিছু হলোই না, উল্টো আতঙ্কিত হয়ে ফিরে এল আমার লোকেরা।
‘“ওসব বছর পাঁচেক আগেকার কথা। সেই থেকে আমার ক্ষতি করার জন্যে উঠে-পড়ে লেগেছে ব্রিজলাল। নাগপুরের বন্ধুদের কাছ থেকে খবর পেলাম, আমাকে খুন করার চেষ্টা করতেও কসুর করছে না পিশাচটা। বন্ধুরা সাবধান করে দিল, গ্রামে যেন কোন নতুন লোককে ঢুকতে না দিই। আমিও যেন একা-একা কোথাও না বেরোই। যথাসম্ভব সতর্ক থাকতাম আমি। কিন্তু সতর্ক থাকতে গিয়ে ব্যবসার কাজে কোন ঢিল দিইনি। এত কিছু করেও বাঁচতে পারলাম না, বাছা। শেষ পর্যন্ত শয়তানটার হাতের মুঠোয় পড়তেই হলো আমাদেরকে।”
‘কথা শেষ করে হাঁপাতে লাগল বাবা। পরের কয়েকদিন আর চেহারা দেখাল না ব্রিজলাল। শেষে যেদিন এল, সেদিনও নানারকম অত্যাচার চালাল বাবার ওপর। কিন্তু একটা কথাও বের করতে পারল না তার মুখ থেকে।
‘মাস তিনেক কারারুদ্ধ হয়ে রইলাম আমরা। শেষে একদিন এক সৈনিক বকশিশের আশায় এবং এই অন্যায় অত্যাচার আর সহ্য করতে না পেরে, বাবার একখানা লিখিত আবেদন পৌঁছে দেয় নাগপুরের এক বিখ্যাত সওদাগরের কাছে। তিনিই তখন আমাদের গ্রামের খাজনার ব্যাপারটা সামলাতেন।
‘আমাদের দুরবস্থার কথা শুনে যারপরনাই অবাক হলেন ভদ্রলোক। সঙ্গে-সঙ্গে আমাদের মুক্ত করার জন্যে তৎপর হয়ে উঠলেন তিনি। কিন্তু কাজটা ভীষণ দুরূহ হয়ে উঠল। কেননা দরবারে মন্ত্রীর কানভারী করে রেখেছে ব্রিজলাল। আমাদের বন্ধুর সব প্রচেষ্টাই নস্যাৎ করে দিল সে। শেষে নাগপুরের প্রধান কোষাধ্যক্ষের শরণাপন্ন হলেন তিনি। কোষাধ্যক্ষও বেশ প্রভাবশালী লোক। তিনি নিজে মন্ত্রীর কাছে গিয়ে আমাদের হয়ে সুপারিশ করলেন। এবার কাজ হলো। পরদিন দরবারে ডেকে পাঠানো হলো আমাদের। আমাদের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ তোলা হয়েছে, সেসবের জবাব দেবার সুযোগ পাব। যথাসময়ে পেশকারের কাছে নিয়ে যাওয়া হলো আমাদের।
‘পেশকার নারায়ণ পণ্ডিতের বয়েস কম হলেও সবাই তাঁকে খুব সম্মান-শ্রদ্ধা করত। ন্যায়বিচারক বলে নামডাক ছিল তাঁর। রায় দেবার আগে দু’পক্ষের বক্তব্যই শুনতেন মন দিয়ে। কিন্তু ব্রিজলাল যে তাঁরই মুৎসুদ্দি। এমন বাকচাতুর্যে কাজ করত সে যে, ওর শয়তানি কখনও ধরা পড়ত না।
‘বাবার বিরুদ্ধে অভিযোগ পেশ করল ব্রিজলাল। বলল, রাজ্যের আইন অনুযায়ী, কোন সওদাগর বা ধনী লোক মৃত্যুর সময় ছেলে সন্তান রেখে মারা না গেলে, তার সম্পত্তির হিসেব-নিকেশ রাজদরবারে দাখিল করতে হয়। সবাই জানে, জয়সুখদাস ধনী লোক ছিল। তিনটে মেয়ে থাকলেও, তার কোন ছেলেসন্তান ছিল না। অতএবম সরকারের প্রাপ্য টাকার হিসেব যতক্ষণ অবধি পাওয়া না যাচ্ছে, ততক্ষণ ওই সম্পদের কানাকড়িও ছোঁবার অধিকার নেই জয়সুখের পরিবারের। দ্বিতীয় অভিযোগ হচ্ছে, আমার বাবা বোরি-র বৈধ প্যাটেল নয়। যে-লোক প্যাটেল পদের বৈধ উত্তরাধিকার, সে এখন তার পদ ও আমার বাবার জমিজমা দাবি করছে। অভিযোগ দাখিল শেষ করে ব্রিজলাল বলল, “হুজুর, এই লোকের কাছে আমি যেভাবে অপদস্থ হয়েছি, সেসবের বর্ণনা দিয়ে আপনার মূল্যবান সময় নষ্ট করলাম না। দু’বার এর গ্রামে গেছি আমি। দু’বারই এর হাতে এমন অন্যায় অপমানের শিকার হয়েছি যে, সে-কথা মনে করলেও রক্ত টগবগ করে ফুটতে শুরু করে। ওখানে আমি গিয়েছিলাম রাজকার্যে—ব্যক্তিগত স্বার্থে নয়। বার-বার তার কাছে লোক পাঠিয়েছি আমরা জয়সুখদাসের সম্পত্তির হিসেব জানতে চেয়ে। কিন্তু প্রতিবারই দরবারের আদেশ উপেক্ষা করেছে সে। শেষমেশ বাধ্য হয়ে তাকে গ্রেপ্তার করতে বাধ্য হই।”
‘“হায় আল্লা!” মিথ্যে অভিযোগ শুনে বিলাপ করে উঠল বাবা। “হুজুর, এই লোকের প্রতিটা কথা মিথ্যে। খোদার কসম, কখনও বৈধভাবে পাঠানো রাজ-আদেশ অমান্য করিনি আমি। এই পাপিষ্ঠের জন্মের বহু আগে থেকেই আমি সরকারের নিমক খাচ্ছি। আর আজ রাজ্যের এত পুরনো এক ভৃত্যের ওপর এই দুর্বৃত্তের অকথ্য অত্যাচার হুজুর এভাবে সহ্য করবেন? এই শয়তান বিনাদোষে নির্যাতন চালিয়েছে আমার ওপর।”
‘পণ্ডিত বললেন, “তোমার বক্তব্য আমরা কাল শুনব। ততক্ষণে আত্মপক্ষ সমর্থন করে যা বলতে চাও, তা গুছিয়ে একটা কাগজে লিখে ফেলো। তাহলে সবকিছু সহজে বুঝিয়ে বলতে পারবে।”
‘বাবা তখন তাকে অমন ছিঁচকে চোর-বদমাশের মত কারাগারে না রাখার অনুরোধ করল। আবেদন করল, তাকে জামিনে খালাস দেয়া হোক। দু’জন কোষাধ্যক্ষ তার জামিন হতে রাজি আছেন। ব্রিজলালের প্রতিবাদ সত্ত্বেও তার আবেদন মঞ্জুর হলো। জামিন পেয়ে বন্ধুদের সঙ্গে চলে এলাম আমরা।
‘সন্ধ্যায় ব্রিজলালের কুকীর্তির কথা আদ্যোপান্ত ফার্সিতে একটা কাগজে লিখে ফেলা হলো। তারপর ওটা নিয়ে জমা দিলাম দরবারে। আশা করেছিলাম, শয়তানটার খুব খারাপ অবস্থা হবে। কিন্তু তেমন কিছু হলো না। আমাদের বক্তব্য পড়ে নারায়ণ পণ্ডিত রায় দিলেন, বাবাকে কয়েদ করে ক্ষমতার অপব্যবহার করেছে ব্রিজলাল। জয়সুখের পরিবারের সঙ্গেও অন্যায় আচরণ করেছে সে। সেজন্যে জয়সুখের সম্পত্তির ওপরও সরকারের কোন অধিকার নেই।
‘তবে বাবাও ব্রিজলালকে গ্রাম থেকে তাড়িয়ে দিয়ে খুব উদ্ধত আচরণ করেছে। জয়সুখদাসের সম্পত্তির হিসেব চাইবার অধিকার ছিল ব্রিজলালের। সেই হিসেব দাখিল না করে এবং পরবর্তীতে তার ফরমানে রাজদরবারে হাজিরা না দিয়ে অন্যায় করেছে বাবা।
‘এসবের উত্তর দিতে যাচ্ছিল বাবা, কিন্তু তখনই তার সওদাগর বন্ধুটি তাকে থামিয়ে দিলেন। বললেন, “ছাড়া যেহেতু পেয়ে যাচ্ছেন, আর কিছু না বলাই আপনার জন্যে ভাল হবে।” তাই আর কিছু বললাম না আমরা।
‘বিচারে ব্রিজলালের সঙ্গে উদ্ধত আচরণের জন্যে সামান্য জরিমানা হলো বাবার। ওটাকেই বাবা নিজের বিজয় হিসেবে দেখল। ভাবল, ব্যাপারটার বুঝি এখানেই নি®পত্তি হয়েছে।
‘গ্রামে ফিরে যাবার আগের দিন খানাপিনার আয়োজন করলেন সওদাগর। একপর্যায়ে তিনি বাবাকে বললেন, “প্যাটেলজি, ব্রিজলালকে আমি হাড়ে-হাড়ে চিনি। ওর মত বজ্জাত আর দুটি নেই। ও কিন্তু প্রতিশোধের আশা ছাড়বে না। আর দেখেছেনই তো লোকটা কেমন শেয়ালের মত চতুর। মনিবদের চোখের আড়াল হলেই নানারকম শয়তানি শুরু করে ও। অথচ সামনে গেলে একেবারে নিরীহ, হাবাগোবা মানুষটা হয়ে যায়। অনেক জায়গায় লোক আছে ওর। শয়তানটার হাত থেকে আপাতত ছাড়া পেলেও, ব্যাপারটা কিন্তু শেষ হয়ে যায়নি। খুব সতর্ক থাকবেন। বন্ধু হিসেবে এটা আমার অনুরোধ। সতর্ক না থাকলে পরে কিন্তু পস্তাবেন।”
‘“ঠিক আছে, বন্ধু, খুব সতর্ক থাকব আমি,” ভদ্রলোককে আশ্বস্ত করল বাবা। “তবে এই মোহাম্মদজি প্যাটেলতক পৌঁছুতে পারলে বুঝতে হবে, ওর হাত অনেক লম্বা ও শক্তিশালী।”
‘কয়েকদিন বাদে বাড়ি ফিরলাম আমরা। কিন্তু বাবার সওদাগর বন্ধুর ভবিষ্যদ্বাণীই সত্যি হলো শেষতক। কয়েক মাস পরই দেখি, নতুন-নতুন লোকের আনাগোনা শুরু হয়েছে গ্রামে। বাবাকে সতর্ক করে দিয়ে বললাম, সন্ধের পর যেন ঘর থেকে না বেরোয়। কিন্তু আমার কথায় কানই দিল না বাবা। উল্টো রাতেরবেলায় আরও বেশি-বেশি বাইরে ঘুরে বেড়াতে লাগল, বাহাদুরি দেখানোর জন্যে। এতে ভীষণ উদ্বিগ্ন ও উৎকণ্ঠিত হয়ে উঠল মা। প্রতিদিন সন্ধ্যায় বাবাকে মাঠ থেকে নিয়ে আসার ভার দেয়া হলো আমার ওপর। এভাবে চলল অনেকদিন। কিন্তু তারপরই এল সেই অভিশপ্ত রাতে।
‘সে-দিন সন্ধে গড়িয়ে রাত হয়ে এল আখ-খেতে আখ কাটতে-কাটতে। তাই বাড়ির উদ্দেশে রওনা দিতেও দেরি হয়ে গেল। পাশের গ্রামের কয়েকজন ছিল আমাদের সঙ্গে। কিন্তু বাড়ি থেকে আধ-ক্রোশমত দূরে থাকতে আমাদের থেকে আলাদা হয়ে গেল ওদের পথ। একটা সংক্ষিপ্ত পথ ধরে একটু তাড়াতাড়ি গ্রামে ফেরা যায়। কিন্তু ওই রাস্তাটুকু অত্যন্ত বিপদসংকুল। সন্ধে নামার পর ওদিকে কেউ যাতায়াত করে না। বাবা ওই পথ ধরেই গ্রামে ফিরবে বলে গোঁ ধরল। বার-বার অনুরোধ করলাম তাকে ও-পথে না যেতে। কিন্তু কিছুতেই রাজি করাতে পারলাম না। অগত্যা সংক্ষিপ্ত সেই পথ ধরেই চললাম।
‘পথের দু’ধারে ঘন ঝোপঝাড়। তার মধ্যে সরু পায়ে-চলা পথ। নিশুতির কালিগোলা আঁধার নেমে এসেছে। দু’হাতের বেশি দৃষ্টি চলে না। সেই বুনো পথ ধরে আন্দাজের ওপর চলেছি আমরা। আচমকা মনে হলো, বন্দুকের জন্যে ব্যবহৃত পলতের আলো জ্বলে উঠতে দেখলাম যেন রাস্তার ওপাশে।
‘বাবাকে ডাকলাম আমি, “বাবা, কেউ ওত পেতে আছে ওখানে। ওই ঝোপটার পিছনে। দেখুন, তিনটে পলতে জ্বলছে।”
‘“ধুর, বোকা,” বিরক্ত হয়ে জবাব দিল বাবা। “ওগুলো জোনাকিপোকা। ভয়ে পেয়েছ? আমার ছেলে হয়ে এমন ভীতু হতে পারলে?”
‘কথাগুলো তার মুখ দিয়ে বেরিয়েছে কি বেরোয়নি, পর-পর তিনবার গুড়ুম-গুড়ুম শব্দ হলো আমাদের কাছেই। টুঁ শব্দটা করতে পারল না বাবা; মুখ থুবড়ে পড়ে গেল মাটিতে। ভয়ে হাত-পা ঠাণ্ডা হয়ে এল আমার। তীক্ষè ব্যথা টের পেলাম পিঠে; পায়েও। টলতে-টলতে কয়েক কদম এগিয়ে মুখ থুবড়ে পড়ে গেলাম আমিও। তবে জ্ঞান হারালাম না। তিনজন লোক বেরিয়ে এল ঝোপ থেকে। কোষমুক্ত তলোয়ার হাতে ছুটে আসছে আমাদের দিকে। দু’জনের কেউই নড়াচড়া করছি না দেখে, আমাকে চিত করে শুইয়ে দিল একজন। সাথে-সাথে চোখ মুদে ফেললাম আমি।

(চলবে...)

পুনশ্চ ১: চূড়ান্ত সম্পাদিত অনুবাদটি এখানে প্রকাশ করা হয়নি, তাই কিঞ্চিৎ ভুল-ত্রুটি থাকতে পারে। সেজন্য আমি ক্ষমাপ্রার্থী।
পুনশ্চ ২: অনুবাদটি উৎসর্গ করা হয়েছে বাংলা থ্রিলার সাহিত্যের নক্ষত্র, কাজী আনোয়ার হোসেন-কে।

মন্তব্য ১ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ১৬ ই মার্চ, ২০১৯ রাত ৮:৩৮

রাজীব নুর বলেছেন: পড়ে বেশ মজা পাচ্ছি।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.