নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মারুফ হোসেন

Tsundoku

মারুফ হোসেন › বিস্তারিত পোস্টঃ

ঠগির জবানবন্দি—পর্ব ০৮

১৭ ই মার্চ, ২০১৯ সকাল ১১:৫৯


[ভারতবর্ষের কুখ্যাত দস্যু সম্প্রদায় ঠগিদের কার্যকলাপ নিয়ে সত্য ঘটনার ওপর ভিত্তি করে ফিলিপ মিডোয টেলর, ১৮৩৯ সালে, লিখেছিলেন ‘কনফেশন্স অভ আ থাগ’ উপন্যাসটি। সেই বইটির বাংলা অনুবাদ—ঠগির জবানবন্দি—প্রকাশিত হয়েছে সেবা প্রকাশনী থেকে, আমার অনুবাদে। চমৎকার এই বইটির বেশ কিছু পরিমার্জিত অধ্যায় (মূল অনুবাদ বই থেকে কিছুটা কাটছাঁট করে) প্রকাশ করার ইচ্ছে আছে এই ব্লগে। আজ, অষ্টম পর্বে, প্রকাশ করা হলো পঞ্চম অধ্যায়ের দ্বিতীয় অর্ধাংশ।]
(সপ্তম পর্ব পড়ুন এখানে)
পাঁচ
০২

‘“এই ছোকরা তো সেই লোক নয়,” একজন বলল।
‘এ-কথা শুনে আরেকজন এগিয়ে এল। “এটা ছোট শয়তান—লোকটার ছেলে। বড় শয়তান তাহলে ওটা। এসো তো দেখি।” তারপর আমাকে ছেড়ে বাবার দিকে এগিয়ে গেল ওরা। খানিক পর একজনের উল্লসিত চিৎকার ভেসে এল, “আলহামদুলিল্লা! কাজ হয়ে গেছে। অনেক জ্বালিয়েছে বুড়ো কুত্তাটা।”
‘আরেকজন বলল, “আমাকে ধন্যবাদ দাও। আখ-খেতে তো লোকটাকে আমিই খুঁজে বের করেছিলাম। যাক গে, এখন আর দেরি করা ঠিক হবে না। যত তাড়াতাড়ি কেটে পড়া যায় ততই মঙ্গল। আমাদের ধরার জন্যে কুত্তাপাগল হয়ে উঠবে এলাকাবাসী। নাগপুর যেতে মাধু সাহায্য করবে আমাদের। ঘোড়ায় জিন পরিয়ে রেখেছে ও।”
‘আর কিছু শুনতে পেলাম না আমি। অনেকক্ষণ ওভাবেই পড়ে রইলাম প্রায়-অচেতন হয়ে। ক্ষতস্থানের অসহ্য ব্যথায় কুঁকড়ে যাচ্ছিলাম। ঠাণ্ডাও পড়েছিল অসহ্য। হেঁচড়ে-হেঁচড়ে শরীরটাকে বাবার কাছে টেনে নিয়ে যেতে চাইলাম। তা-ও পারলাম না। অনেকক্ষণ পর কারও গলার আওয়াজ শুনতে পেলাম। প্রাণপণে চেঁচালাম আমি। কিন্তু শুনতে পেল না ওরা। আমাদের সাড়া পাবার জন্যে গুলি ছুঁড়ল ওরা, কিন্তু জবাব দিতে পারলাম না আমি। ক্ষণে-ক্ষণে জ্ঞান হারাচ্ছি আর ফিরে পাচ্ছি। অবশেষে মশাল হাতে খুঁজতে-খুঁজতে কয়েকজন লোক এসে আমাকে পড়ে থাকতে দেখল পথের মাঝে। দেখেই চিনতে পারলাম ওদের—আমাদের গ্রামের শ্রমিক। সব জায়গা ঢুঁড়ে, অবশেষে এ খানে এসে পেয়েছে আমাকে। বাবার নিথর দেহ দেখে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠল ওরা। কিছুক্ষণ পর, খানিকটা ধাতস্থ হয়ে একটা কম্বলে জড়িয়ে গ্রামে ফিরিয়ে নিয়ে চলল ওরা আমাকে। বাড়ির দরজার সামনে নিয়ে নামিয়ে রাখল আমাদের দু’জনকে। থমথমে পরিস্থিতি দেখে বুঝতে পারলাম, বাবা আর নেই।
‘কোন বাড়ির কর্তা মারা গেলে সাধারণত দেখা যায়, কান্নার রোল ওঠে গোটা বাড়িতে। কিন্তু বাবার লাশ নিয়ে আসাতক একফোঁটা অশ্রু বেরোল না কারও চোখ দিয়ে। শোকের আধিক্যে পাথর হয়ে গেছি বাড়ির প্রতিটা মানুষ। মা কেবল আরামকেদারায় বসে দোল খাচ্ছে আর একটু পর-পর বাবার নাম ধরে ডাকছে। আমার বোনটি অল্প-অল্প করে পানি খাওয়াচ্ছে আমাকে। গাঁয়ের মহিলারা মাকে ঘিরে বসেছে। কিছুক্ষণ পর বাবার লাশ নিয়ে আসা হলো বাড়ির ভেতরে। আস্তে করে নামিয়ে রাখা হলো দেহটা। মুহূর্তের জন্যে বন্ধ হয়ে গেল সবার ফিসফাস, ফুসুর-ফাসুর। পরক্ষণে বাঁধভাঙা ঢেউয়ের মত বাবার দেহের দিকে ছুটে গেল মা উন্মাদিনীর মত। তার বুক-ভাঙা আহাজারি শুনে মনে হলো, আমার কলজেটা যেন কেউ টান মেরে ছিঁড়ে নিতে চাইছে। মায়ের আহাজারি সংক্রমিত হলো সবার মাঝে।
‘আচমকা থেমে গেল সবার বিলাপ। গ্রামের কাজি এসেছেন। বাবার প্রাণহীন দেহটা একবার দেখলেন তিনি। তারপর আমার দিকে ফিরে জিজ্ঞেস করলেন, “কে করেছে এ-কাজ? কাকে সন্দেহ হয় তোমার? বলো, তোমার মন কী বলে? জলদি বলো, নইলে বড্ড দেরি হয়ে যাবে।”
‘“ইটারি-র প্যাটেল মাধু,” ক্ষীণ স্বরে বললাম আমি। “কিন্তু শয়তানগুলোর কাছে ঘোড়া আছে। এতক্ষণে ওরা ভেগে গেছে, লোক পাঠিয়ে আর লাভ নেই।”
‘নানাজনে নানা কথা বলতে লাগল। কেউ বলে এর কাজ, কেউ বলে ওর কাজ। শেষে আর থাকতে না পেরে প্রাণপণে চেঁচিয়ে উঠে চুপ করিয়ে দিলাম ওদের। বললাম, “এসব কার কাজ, তা জানি আমি। পাপিষ্ঠ ব্রিজলাল পাঠিয়েছিল খুনিগুলোকে।” কথাগুলো বলতে-বলতে হাঁপিয়ে উঠলাম আমি।
‘একজন-একজন করে চলে গেল প্রতিবেশীরা। ব্রিজলালের নাম স্তব্ধ করে দিয়েছে সবাইকে। একটা গুলি ঢুকেছিল আমার কাঁধে। নাপিত এসে সাঁড়াশি গরম করে, গুলিটা বের করে দিয়ে গেল। তারপর কবর দেয়া হলো বাবাকে।
‘বুড়ো কাজি কিছু করতে পারলেন না। একজন খুনিও ধরা পড়ল না। ধীরে-ধীরে মিইয়ে এল শোকের ধাক্কা। ছাইচাপা আগুনের মত কেবল আমার বুকে ধিকিধিকি জ্বলতে লাগল প্রতিশোধের আগুন। এক বছর কেটে গেল দেখতে-দেখতে। বাবার জায়গায় আমাকে পরবর্তী প্যাটেল হিসেবে মেনে নিতে রাজি সবাই। আচমকা একদিন ব্রিজলালের “বৈধ প্যাটেল” দাবি করা সেই লোক এসে হাজির গ্রামে। সঙ্গে একদল সশস্ত্র লোক। হাতে প্যাটেল হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্তির চিঠি। লোকটার সঙ্গে পেশিশক্তিতে কুলিয়ে ওঠা সম্ভব হলো না গ্রামবাসীদের পক্ষে। তাই প্যাটেল পদের ওপর নিজের সমস্ত দাবি-দাওয়া তুলে নিতে বাধ্য হলাম আমি। এ-সময় আমার বোন চলে গেল ওর শ্বশুরবাড়ি। মাকেও পাঠিয়ে দিলাম ওর সঙ্গে। আমি এখন গৃহহীন, পরিজনহীন মানুষ। ভগ্নহৃদয়ে গ্রাম ছাড়লাম। বাবার প্রভাবশালী বন্ধুদের ধরে দেখব রাজদরবারে তাঁরা আমার জন্যে কিছু করতে পারেন কিনা। কিন্তু ওঁরাও ততদিনে ভোল পাল্টে ফেলেছেন। কিছুই করলেন না ওঁরা আমার জন্যে। বললেন, ব্রিজলাল এখন আগের চেয়েও প্রভাবশালী। তাই নিরেট প্রমাণ ছাড়া রাজদরবারে ওর বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ নিয়ে গেলে কাজের কাজ কিছু তো হবেই না, উল্টো নিজের জীবন বাঁচানোই দায় হয়ে দাঁড়াবে আমার জন্যে। তাঁরা এমনকী আমাকে ন্যায্য দাবি-দাওয়া আদায়ে সাহায্য করতেও রাজি হলেন না।
‘বন্ধুহীন হয়ে আশ্রয়হারা পড়লাম। অগত্যা যোগ দিলাম ঠগিদলে। তারপর এভাবেই ডাকাতি করে চলছে আমার অভিশপ্ত জীবন। মা মারা গেছে অনেক আগেই। বোনটা এখনও বেঁচে আছে। কয়েকটা ছেলে-মেয়ে হয়েছে ওর। সুখেই আছে ও। মাঝে-মধ্যে গিয়ে দেখে আসি ওকে। পৃথিবীতে আমার আপনার বলতে এখন তোমরা আর বোনটি ছাড়া আর কেউ নেই। বোনটি জানে, আমি হোল্কারের রাজসৈনিক। আসল সত্যটা ও কোনদিন জানতে পারবে না। যাক গে, আমার প্রাণের শত্রু মারা পড়েছে আমার হাতে। আমি এখন তৃপ্ত। প্রতিশোধ নেয়া হয়ে গেছে আমার। আর বেশিদিন বাঁচব না আমি। এতদিন বেঁচে ছিলাম কেবল এই প্রতিশোধটা নেবার জন্যেই। জীবনের কাছ থেকে আর কোন চাওয়া-পাওয়া নেই আমার। ফুরিয়েছে বেঁচে থাকার প্রয়োজন। এ-ই তো আমার গল্প।’
চমকে গেলাম সবাই বুড়োর গল্প শুনে। খানিকক্ষণ বিমূঢ় হয়ে থাকার পর ওকে নানা কথায় সান্ত্বনা দিতে লাগল সবাই। তবে ঘটনাটা সুদূরপ্রসারী প্রভাব ফেলল আমার ওপর। আমার কাছে স্পষ্ট হয়ে উঠল, আমাদের সব কাজেই আল্লার হাত আছে। মনে দৃঢ় বিশ^াস জন্মাল যে, জাহান্নামের আগুনে পুড়বার আগে, ইহজীবনেই পাপের শাস্তি ভোগ করার জন্যে যার ওপর অত্যাচার চালিয়েছিল, তার হাতে এনে ফেলেছিলেন খোদা ব্রিজলালকে।
‘এখন থেকে,’ মনে-মনে প্রতিজ্ঞা করলাম আমি, ‘কেউ বলতে পারবে না, হাতে শিকার পেয়েও দায়িত্ব পালনে গড়িমসি করেছে আমির আলি। বাবার পথে হাঁটব আমি। গোটা দেশ জানবে পাপীদের সাজা দেবার জন্যে অতন্দ্র প্রহরী হয়ে জেগে আছে ঠগি আমির আলি। একজনও নিস্তার পাবে না আমার হাত থেকে। যে-শপথ আমি করেছি, অক্ষরে-অক্ষরে মেনে চলব তা।’
সেদিন থেকেই শিক্ষা নিতে শুরু করলাম গুরুর কাছ থেকে। গুরু একজন বয়স্ক ঠগি, কিন্তু তাঁর চেয়ে দক্ষ ভুট্টোটি বা ফাঁসুড়ে আর একটিও নেই। লোকটা একজন রাজপুত হিন্দু, নাম রুপ সিং। বয়েসের ভারে দেহ শীর্ণ হয়ে গেলেও, উচ্চতা আর দুই কাঁধের বিস্তার দেখেই বোঝা যায়, যৌবনে ডাকসাইটে, শক্তিশালী লোক ছিলেন ইনি। ফাঁস দিতে তাঁর জুড়ি নেই। তাঁর ফাঁস দেয়ার কাহিনী সবার মুখে-মুখে ঘুরে বেড়ায় রূপকথার গল্পের মত। এতদিন খুব একটা মিশিনি ওঁর সঙ্গে। মাঝেসাঝে দু’-একবার সৌজন্যমূলক কথাবার্তার আদান-প্রদান হয়েছে কেবল। তাই বাবাকে ধরলাম ওঁর অধীনে ফাঁসুড়ের কাজ শেখার সুযোগ করে দেবার জন্যে। আমার আগ্রহ দেখে বাবা তো যারপরনাই খুশি। রুপ সিং কাজ করেন হুসেনের দলে। সঙ্গে-সঙ্গে হুসেনের দলে ভিড়িয়ে দিল বাবা আমাকে। বলল, ‘আগামী কয়েকদিন তোর সঙ্গে আমার দেখা-সাক্ষাৎ বন্ধ। এই ক’টা দিন ওদের সঙ্গে থাকবি তুই সারাক্ষণ। আমার কাছে যেদিন ফিরবি, তোকে যেন পরবর্তী অভিযানে অংশ নেয়ার উপযুক্ত দেখতে পাই।’
পরদিন থেকে শুরু হলো আমার তালিম। কয়েকবার নানা মন্ত্র-তন্ত্র পড়ে ঝাড়লেন আমাকে রুপ সিং। মাংস খাওয়া বন্ধ। দুধ ছাড়া আর কিছু মুখে তুললাম না চার দিন। অসংখ্য বলি দেয়া হলো পবিত্র খন্তার উদ্দেশে। খুঁটিয়ে-খুঁটিয়ে পর্যবেক্ষণ হলো প্রতিটা চিহ্ন, ইঙ্গিত। সারাদিন পথচলার পর কোন গাছের ছায়ায় বসার পর, গাছের ডালে একটা পাখি দেখা গেলেই, পাখিটার বসার কারণ কী, পাখিটা শুভ না অশুভ—এসব ব্যাখ্যা করতে শুরু করেন গুরু। সকালে আবার যখন যাত্রা শুরু করি, তখন বিভিন্ন পশু-পাখির আগমনের অর্থ কী, তা বুঝিয়ে দেন। আমাকে নিয়ে ও আমার জন্যে যেসব আচার-অনুষ্ঠান করা হয়েছে, ওসবের মানে কী জানার জন্যে প্রশ্ন করতাম গুরুকে। কিন্তু তিনি কোন প্রশ্নের জবাব দিতেন না।
কেবল বলতেন, ‘বাছা, তোমার বয়েসে আমাকে নিয়ে এসব আচার-অনুষ্ঠান করা হত আমাকে সাহসী ও পাষাণহৃদয়, কর্মঠ ও চতুর করে তোলার জন্যে। যাতে আমার হাত থেকে কোন শিকার কখনও রেহাই না পায়, শত্রুর চোখে সহজে ফাঁকি দিতে পারি। এবং যাতে আমি সফল ও খ্যাতিমান হই। এসব আচার-অনুষ্ঠানের গুণে আমি কখনও কোন কাজে ব্যর্থ হইনি। আরও দু’জনকে এভাবে শিক্ষা দিয়েছি। ওরাও সফল হয়েছে—সাহসের প্রমাণ দিয়েছে কাজের সময়। শিগগিরই জমাদার হবে ওরা। তুমিও ওদের মতই সফল হবে। তাই আর কোন প্রশ্ন কোরো না। সবকিছু ঠিকমত এগোচ্ছে—এটুকু জেনেই সন্তুষ্ট থাকো। এখন অবধি আমি একটাও খারাপ ইঙ্গিত দেখিনি।’
পঞ্চম দিন সকালে রুমাল দেয়া হলে আমার হাতে। গোসল সেরে, গায়ে সুগন্ধি তেল মেখে, এবং কপালে সিঁদুরের ফোঁটা পরে—ভবানীর ভক্ত হিসেবে—আনুষ্ঠানিকভাবে ভুট্টোটি ঘোষিত হলাম আমি।
‘একটা কথা বলতে ভুলে গেছি,’ আমার হাতে কাপড় দেবার সময় হাসতে-হাসতে বললেন বৃদ্ধ। ‘ওটাই আসল ব্যাপার। এখন পর্যন্ত রুমাল কীভাবে ব্যবহার করতে হয়, তা দেখাইনি তোমাকে। এই রুমাল ব্যবহারে আমার একটা বিশেষ কায়দা আছে। কায়দাটা একটু চেষ্টা করলেই রপ্ত করা যায়। শিগগিরই ওটা শিখিয়ে দেব তোমাকে।’
এই বলে রুমালটা হাতে নিলেন। একপ্রান্তে একটা রুপার টুকরো ঢুকিয়ে বড় একটা গিঁট দিলেন ওতে। তারপর গিঁট-দেয়া প্রান্ত রইল গুরুর বাঁ-হাতে, অপর প্রান্তটা ডান হাতে। দুই হাতের মাঝখানে যতটুকু রুমাল খালি রইল, সেটুকু দিয়ে একজন মানুষের গলা অনায়াসে পেঁচিয়ে ধরা যায়। বৃদ্ধ তারপর হাত দুটো মুষ্টিবদ্ধ করে ওপরে ওঠালেন।
‘এবার,’ বললেন তিনি, ‘ভালমত দেখে রাখো। রুমালটা যখন পেছন থেকে গলায় জড়িয়ে দেবে, তখন শক্ত করে চাপ দিয়ে, অতর্কিতে ঘাড়ের পাশ দিয়ে আঙুলের গাঁট চালিয়ে দেবে। তারপর রুপা বাঁধা প্রান্তটা অন্যপাশে আটকে গেলে দেবে হ্যাঁচকা টান। কাজটা ঠিকমত করতে পারলে, সঙ্গে-সঙ্গে পটল তুলবে শিকার।’
গোটা পদ্ধতিটা ভালমত বুঝে নিলে, গুরুর মত করতে চেষ্টা করলাম। কিন্তু তাঁর মনমত হলো না।
তিনি বললেন, ‘রুমালটা আমার কাছে দাও, তোমার গলায় পেঁচিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছি।’
‘উহুঁ, তা হচ্ছে না,’ হাসতে-হাসতে বললাম আমি। ‘দেখাতে গিয়ে আমাকে নিরীহ পথিক ভেবে মেরে ফেলবেন আরকী। কায়দাটা আমি ভালমত বুঝে নিয়েছি।’
‘তাহলে আমার গলায় পেঁচিয়ে দেখ। তোমার হাতের অবস্থান দেখলেই বুঝতে পারব, কদ্দূর কী বুঝতে পেরেছ।’
তাঁর কথামত রুমাল পেঁচানোর চেষ্টা করলাম। মাথা নাড়তে-নাড়তে হাসলেন বৃদ্ধ। ‘ওভাবে হবে না। একটা বাচ্চাকেও মারতে পারবে না এভাবে। তোমার ঘাড়ে আমার রুমাল-পেঁচানো হাতের অবস্থান টের পেলেই, ভালমত বুঝতে পারবে।’
অগত্যা রাজি হলাম গুরুর প্রস্তাবে। ঘাড়ে বৃদ্ধের শীতল, চটচটে হাতের স্পর্শ পেয়ে রক্ত ঠাণ্ডা গেল। তবে তিনি আমাকে আঘাত করলেন না। কোথায় ভুল হয়েছে দেখিয়ে দিলেন কেবল। এবার বেশ কয়েকবার পরীক্ষা চালালাম তাঁর কাঁধের ওপর। অবশেষে গুরু ঘোষণা দিলেন, নিখুঁতভাবে ফাঁস দেয়া শিখতে পেরেছি আমি।
‘এখন তোমার শুধু চর্চা করা প্রয়োজন, আমির আলি,’ বললেন তিনি।
‘কসরত করার জন্যে বিস্তর সময় আছে,’ খোশমেজাজে জবাব দিলাম। ‘বাকিটুকু শিগগিরই শিখে ফেলব। বাঘ যেমন একবার মানব-রক্তের স্বাদ পেলে অন্য কিছু খেতে চায় না, আমার অবস্থাও এখন তেমন।’
কথাটা অন্তর থেকেই বললাম। আমার অবস্থা তখন মানুষখেকো বাঘের মতই।

(চলবে...)

মন্তব্য ৮ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ১৭ ই মার্চ, ২০১৯ দুপুর ১২:৩৪

রাজীব নুর বলেছেন: সুন্দর অনুবাদ হয়েছে। সহজ সরল।

১৭ ই মার্চ, ২০১৯ বিকাল ৫:৫১

মারুফ হোসেন বলেছেন: আপনি নিয়মিত সময় করে পড়ে যাচ্ছেন, ধন্যবাদ।

২| ১৭ ই মার্চ, ২০১৯ দুপুর ১:১৭

অভিজিৎ দাস বলেছেন: ভালো লাগলো । অনুবাদককে ধন্যবাদ ।

১৭ ই মার্চ, ২০১৯ বিকাল ৫:৫২

মারুফ হোসেন বলেছেন: আপনাকেও ধন্যবাদ।

৩| ১৭ ই মার্চ, ২০১৯ দুপুর ২:০২

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: আজকেই প্রথম পাঠ হলো!

বেশ বেশ

১৭ ই মার্চ, ২০১৯ বিকাল ৫:৫৩

মারুফ হোসেন বলেছেন: ধন্যবাদ।

৪| ১৭ ই মার্চ, ২০১৯ বিকাল ৪:৪৪

ব্লগার_প্রান্ত বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ মারুফ ভাই, চালিয়ে যান

১৭ ই মার্চ, ২০১৯ বিকাল ৫:৫৪

মারুফ হোসেন বলেছেন: আপনাকেও ধন্যবাদ, ভাই। :)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.