নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

পৃথিবীর পথে পথে আমি একা অনভিজ্ঞ এক নাবিক।

মারুফ তারেক

পৃথিবীর পথে পথে আমি একা অনভিজ্ঞ এক নাবিক।

মারুফ তারেক › বিস্তারিত পোস্টঃ

মুসলমানদের একাল ও সেকাল

২৬ শে ডিসেম্বর, ২০২৩ ভোর ৬:৪৮



ভারতীয় উপমহাদেশে যখন প্রদোষকাল বা খারাপ সময় চলছিল, তখন আগমন ঘটল মুসলমানদের। অন্যদিকে পাশ্চাত্য যখন তার ভালো সময় পার করছে, তখন তারই দেয়া আগুনে পুড়ে পাশ্চাত্যে পাড়ি জমাচ্ছে ঘরহারা মুসলমান। আরব থেকে পূর্ব ও পশ্চিমে যাওয়া এই দুই সময়ের মুসলমানদের পার্থক্য জানা জরুরি।
বর্তমান সময়ে ওয়েস্টে যেসব মুসলিমরা আসছে, তারা সাধারণত ধর্ম প্রচারে নয়, জীবিকার তাগিদে আসছে। ওয়েস্ট বা মোটাদাগে আমেরিকা যার নাম দিয়েছে রেজিম চেইঞ্জ, সে মানুষকে বিশ্বাস করে না, বিশ্বাস করে রেজিমের ক্ষমতাকে। আদতে পৃথিবীতে কিন্তু তা-ই ঘটে। যাইহোক, এই লেখাটি মোটামুটি বড় হতে চলেছে, যদিও এই লেখার কিছু অংশ আমি পূর্বেও প্রকাশ করছিলাম।
বর্তমান সময়ে ওয়েস্টে আসা মুসলিমদের বেশিরভাগ নিজের ধর্ম নিয়ে কনসার্ন না বা নামে মুসলিম। অনেকটা ইকবালের কবিতার মতো:
“ইউ তো সাইয়্যাদ ভি হো, মীর্জা ভি হো, আফগান ভি হো
তুম সাভি কুছ হো, বাতাও তো মুসালমান ভি হো?”

পূর্বের কথা:
হিন্দু ধর্মের বাতাবরণ বৌদ্ধ ধর্মের স্বকিয়তাকে নষ্ট করে দিলো। মৌর্যরা নির্মাণ করেছিলো হাজার হাজার স্তুপ, যেই স্তুপ থেকে সৃষ্টি হয় তীর্থ যাত্রার। দ্বিতীয় শতাব্দীতে মৌর্য সাম্রাজ্যে বড় পরিবর্তন সাধনের ফলে অব্রাহ্মণ ধর্মকে খারাপ চোখে দেখা শুরু হলো৷ ব্রাহ্মণবাদের প্রভাবে বৌদ্ধ জনপদে বিরূপ পরিস্থিতির সৃষ্টি হওয়ার বৌদ্ধরা তাদের মূল জনপদ ছেড়ে চলে যেতে শুরু করলো।

সেন শাসনামলে শুধু বৌদ্ধরা নয়, ক্ষুদ্র বর্ণের হিন্দুরাও পড়েছিল চরম বিপাকে। শোষণে বিদ্রোহী হয়ে উঠে কখনও অন্তজেরা, কখনও বৌদ্ধেরা।

প্রদোষে প্রাকৃতজন গ্রন্থের প্রারম্ভে শওকত আলী বলছেন, "উপন্যাসটি লেখার চিন্তাটা এ কারণেই এসেছিল যে দক্ষিণ এশিয়ার এই প্রান্তে মুসলমানের সংখ্যা এত বেশি হওয়ার কারণ কী? এটা ছিল আমার একটা প্রশ্ন। মুসলমান যারা দিগ্বিজয় করতে এসেছে তারা তো ওইদিক দিয়ে এসেছে। তারপর মোগল-পাঠানরাও ওইদিক দিয়ে এসেছে। এটা কিন্তু অবাস্তব কৌতূহলের কিছু নয়। একসময় মুসলমানরা এখানে আধিপত্য করছে, তারা শাসন করেছে ৪০০ বছর। তারা ক্ষমতায় থাকা সত্ত্বেও ওইসব অঞ্চলে মুসলমানের সংখ্যা বাড়েনি। এখানে মুসলমানের সংখ্যা বেশি। এ সম্পর্কে আমি অনেককে জিজ্ঞেস করেছি, বইপত্র পড়েছি। একসময় শেখ শুভদয়া নামে একটি সংস্কৃত বই হাতে আসে। কেউ বলেছে সেন রাজত্বের পরপরই ওটা লেখা হয়েছিল। শেখের শুভ উদয়_এই অর্থে। শেখ মানে মুসলমান। ওই বইয়ের মধ্যে কিছু কিছু গল্পের মতো পেয়েছি। যেমন একটা দৃশ্য ওখানে পেয়েছি যে অশ্ব বিক্রেতারা নৌকায় চড়ে অশ্ব বিক্রি করতে এসেছে। অশ্ব বিক্রি হয়ে গেছে। সন্ধ্যা সমাগত। তখন ছয়-সাতজনের মধ্যে বয়োজ্যেষ্ঠ যিনি, তিনি উন্মুক্ত প্রান্তরে দাঁড়িয়ে পশ্চিম দিকে মানে সূর্য অস্তের দিকে তাকিয়ে কানে হাত দিয়ে উচ্চৈঃস্বরে কাকে যেন ডাকছেন। তারপর এক জায়গায় গোল হয়ে বসে প্রভু-ভৃত্য সবাই আহার গ্রহণ করছেন এক পাত্র থেকে। আহার শেষে একজন সামনে দাঁড়িয়ে মন্ত্র পাঠ করছেন, তারপর উবু হয়ে থাকছেন, অবশেষে প্রণাম করছেন, তিনি যা যা করছেন পেছনের সবাই তাঁকে অনুসরণ করছে। সামনে যিনি ছিলেন তিনি কিন্তু প্রভু নন; ভৃত্য। তবু সবাই তাঁকে অনুসরণ করছে। আমি এই দৃশ্যটা আমার প্রদোষে প্রাকৃতজন'র মধ্যে ইচ্ছে করেই দিয়েছি। এ ঘটনাগুলো পড়ে আমার মনে হয়েছিল এ উপাদানগুলো নিয়ে একটা উপন্যাস লিখলে কেমন হয়। এ রকম একটা দৃশ্য যদি দেখে সাধারণ মানুষ, যে মন্দিরের ছায়ায় অচ্ছুত নিম্নবর্গের সাধারণ মানুষের পা যেন না পড়ে সে জন্য সকালে মন্দিরের পশ্চিম পাশের এবং বিকালে মন্দিরের পূর্ব দিকের রাস্তা দিয়ে নিম্নবর্গীয় মানুষের চলাচল বন্ধ, তাহলে তাদের মনে প্রতিক্রিয়া কী হবে? এ রকম একটা অবস্থা সেখানে ছিল। এরপর যখন যবনরা এল, তারা একসঙ্গে বসে, একসঙ্গে ওঠে, একসঙ্গে খায়, প্রভুর উপাসনা করে। আমার নিজের মনের থেকে ধারণা হলো এ অঞ্চলে নিম্নবর্গের মানুষ সবচেয়ে বেশি ছিল এবং এখানে সবাই যবন ধর্ম গ্রহণ করেছিল। এর কিন্তু কোনো ঐতিহাসিক প্রমাণ আমি দিতে পারব না। এটা আমার অনুমান। এই ভিত্তিতে আমি উপন্যাসে এই উপাদানগুলো ব্যবহার করেছি।"

সেন শাসনামলে যখন প্রদোষকাল চলছিল, তখন মহামতি বখতিয়ার খলজি বাংলা আক্রমণ করেন। আমরা তো সেই বাবার কথা জানি, ছেলের আকিকার জন্য গরু কাটার কারণে যার হাত কেটে নেওয়া হয়েছিল। বাংলায় যখন প্রদোষকাল চলছিল, তখন আবিভার্ব হয়ে প্রাকৃজনের; শুরু হলো মুসলমানদের শাসন।

পশ্চিমের কথা:
খিলাফতের সাথে দীর্ঘ সময় যুদ্ধ পাশ্চাত্যের। মোটাদাগে সেই যুদ্ধকে বলা হয় ক্রুসেড। পরস্পরের বন্ধুত্বের মাধ্যমে ধর্মীয় মতবিনিময়ে চেয়ে একে অপরের রাইভাল হিসেবে ওয়েস্ট ও মুসলিমরা পরস্পরের বিপক্ষে দাঁড়িয়েছে। তাই ওয়েস্টে মানুষ ইসলামকে না জানাই স্বাভাবিক। তবে মিডিয়া ওয়ারফেয়ারের যুগে পৌঁছে গেছে মিস ইনফরমেশন ও প্রপাগাণ্ডা।
ইউরোপের মূল ভূখণ্ডে প্রথম মসজিদ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল গ্রানাডায়। যদিও স্পেন বর্তমানে কেবলই ইতিহাস। যাইহোক, ফিরছি বর্তমানে পশ্চিমে আসা মুসলিমদের নিয়ে। ফ্রান্স কিংবা জার্মানিতে আলজেরিয়ান কিংবা তুর্কিরা নিজেদের সামাজিক বলয় সৃষ্টি করেছে একথা খুব সত্য। কিন্তু যারা মূলত পরিবারহীন কিংবা প্রাতিষ্ঠানিক মসজিদ কালচারের বাইরে বসবাস করেন, তাদের পারস্পেক্টিভ ভিন্ন। তারা ওয়েস্টের নন-ইসলামিক উপাদানগুলি আত্তীকরণ করতে শুরু করেছে, যেহেতু প্রকৃতি শূন্যস্থান পছন্দ করে না। পূর্বের প্রাকৃতজন নয়, বরং পশ্চিমের উটকো ঝামেলায় পরিণত হচ্ছে বিশাল সংখ্যক মুসলিম। আরব কিংবা আফগান থেকে আসা বিশাল অংশের মধ্যে নেই ধর্মীয়বোধ কিংবা সামাজিক শিষ্টাচার। ওয়েস্টের কেউ এদের থেকে ধর্ম শেখাতে চাইবে না, বরং মানুষ করতেই ব্যস্ত থাকবে। আর তাই কেউ ধর্মের অ্যাম্বাসেডরে পরিণত হতে পারছে না। বরং ধর্মহীন ও অজ্ঞরা আত্তীকরণ শুরু করেছে, যা কোন কোন ক্ষেত্রে সামগ্রিক মুসলিম সমাজের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। উদাহরণস্বরূপ বহু মুসলিম সমকামী পরিচয় দিয়ে থাকছে কিংবা উগ্রতা প্রদর্শন করছেন। আমি হিজাব পরিহিত মাতাল নারীদের পুরো ট্রেনের কামরা জুড়ে চিল্লাচিল্লি করতেও শুনেছি।

মন্তব্য ৫ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৫) মন্তব্য লিখুন

১| ২৬ শে ডিসেম্বর, ২০২৩ সকাল ১০:১২

বিজন রয় বলেছেন: শেষ প্যারায় আসল কতা বলে দিয়েছেন।
অবশ্য বিষয়টি অনেক আলোচনার বিষয়।

কিন্তু মানুষ তার প্রয়োজন অনুযায়ী সব বেছে নেয়, সেখানে কোনো নিয় খাটে না।

২| ২৬ শে ডিসেম্বর, ২০২৩ সকাল ১১:৩৭

বাকপ্রবাস বলেছেন: চিল্লাচিল্লি করে হলেও ভাল থাকুক, ফুর্তিতে থাকুক, দুষ্টামি করুক, নষ্টামি না হলেই হল।

২৭ শে ডিসেম্বর, ২০২৩ রাত ২:১৫

মারুফ তারেক বলেছেন: এখানে এসব আচরণ মানুষ ভালো চোখে দেখে, খুবই বিরক্ত হয়।

৩| ২৬ শে ডিসেম্বর, ২০২৩ বিকাল ৩:৪৬

মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন বলেছেন:

ঠিক।

৪| ২৬ শে ডিসেম্বর, ২০২৩ বিকাল ৪:৫৩

রাজীব নুর বলেছেন: মুসলিমদের আবার একাল সেকাল কি?
তারা চলবে ১৪০০ শ' বছর আগের নিয়মে। নইলে তাদের গুনাহ হবে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.