নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ব্লগার মাসুদ

ব্লগার মাসুদ

ব্লগার মাসুদ

ব্লগার মাসুদ

ব্লগার মাসুদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

স্বাধীনতা দিবসে স্বাধীনতার বিভিন্ন তথ্য ।

২৫ শে মার্চ, ২০১৫ বিকাল ৩:৫৪


বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ ছিল ১৯৭১ সালের সংঘটিত তৎকালীন সময় পশ্চিম পাকিস্তানের বিরুদ্ধে পূর্ব পাকিস্তানের এক সশস্ত্র সংগ্রাম যার ভেতরে বাংলাদেশ নতুন একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসাবে পৃথিবীর মানচিত্র আত্মপ্রকাশ পায় । ১৯৭১ সালের ২৫ শে মার্চ রাতের অন্ধকারে পাকিস্তানী সামরিক বাহিনী পূর্ব পাকিস্তানে বাঙ্গালী নিধনে ঝাঁপিয়ে পড়লে একটি জনযুদ্ধের আদলে মুক্তিযুদ্ধ তথ কালিন সময় স্বাধীনতা যুদ্ধের সূচনা ঘটে। ২৫শে মার্চের সেই কালো রাতে পাকিস্তানী সামরিক জান্তা ঢাকায় অজস্র সাধারণ (নাগরিক' ছাত্র' শিক্ষক'বুদ্ধিজীবী' পুলিশ সহ নানান পেশাজীবি বাঙ্গালীদের ওপরে ঝাপিয়ে পরে ও হত্যা চালায়)। গ্রেফতার করা হয় ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনের নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতাপ্রাপ্ত দল আওয়ামী লীগের প্রধান বাঙ্গালীর তৎকালীন প্রিয় নেতা বাঙালি জাতির প্রিয় নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে । গ্রেফতারের পূর্বে ২৬শে মার্চের প্রথম প্রহরে তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা দেন ।

পরিকল্গপিত ভাবে গণহত্যার মুখে সারা বাংলাদেশে শুরু হয়ে যায় প্রতিরোধযুদ্ধ' 'জীবন বাঁচাতে প্রায় ১ কোটি মানুষ পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে আশ্রয় গ্রহণ করেন । পাকিস্তানী সামরিক বাহিনীর ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট ইস্ট পাকিস্তান রাইফেলস (ইপিআর) ইস্ট পাকিস্তান পুলিশ' 'সামরিক বাহিনীর বাঙ্গালী সদস্য এবং সর্বোপরি বাংলাদেশের স্বাধীনতাকামী সাধারণ মানুষ দেশকে পাকিস্তানী সামরিক বাহিনীর হাত থেকে মুক্ত করতে কয়েক মাসের মধ্যে গড়ে তোলে মুক্তিবাহিনী । গেরিলা পদ্ধতিতে যুদ্ধ চালিয়ে মুক্তিবাহিনী সারাদেশে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীকে ব্যতিব্যস্ত করে তোলে । মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে বাংলাদেশ ভারতের কাছ থেকে অর্থনৈতিক' সামরিক ও কূটনৈতিক সাহায্য লাভ করে । ডিসেম্বরের শুরুর দিকে যখন পাকিস্তানী সামরিক বাহিনীর পতন আনিবার্য হয়ে ওঠলো তখন পরিস্থিতিকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে পাকিস্তান ভারতের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন ।

অত:পর ভারত বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে সরাসরিভাবে জড়িয়ে পড়ে । মুক্তিবাহিনী ও ভারতীয় সামরিক বাহিনীর সম্মিলিত আক্রমণের মুখে ইতোমধ্যে পর্যদুস্ত ও হতোদ্যম পাকিস্তানী সামরিক বাহিনী আত্মসমর্পণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে । ১৬ই ডিসেম্বর ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে পাকিস্তান ৯৩,০০০ হাজার সৈন্যসহ আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মসমর্পণ করে । এরই মাধ্যমে নয় মাস ব্যাপী রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের অবসান হয় । প্রতিষ্ঠিত হয় বাঙ্গালী জাতির প্রথম স্বাধীন রাষ্ট্র বাংলাদেশ ।

পূর্ব পাকিস্তান ছিল পশ্চিম পাকিস্তানের পূর্ব অঙ্গ যা ১৯৭১-এ মুক্তি যুদ্ধে স্বাধীনতা লাভের পর স্বাধীন রাষ্ট্র বাংলাদেশ হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হয় । ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ ভারত বিভক্ত করে দুটি স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা হয় যথা ভারত ও পাকিস্তান। মুসলিম আধিক্যের ভিত্তিতে পাকিস্তানের সীমানা চিহ্নিত করা হয় যার ফলে পাকিস্তানের মানচিত্রে দুটি পৃথক অঞ্চল অনিবার্য হয়ে ওঠে। তৎকালীন পূর্ব বঙ্গ তথা বর্তমান বাংলাদেশ নিয়ে গঠিত যার একটি পূর্ব পাকিস্তান এবং অপরটি পশ্চিম পাকিস্তান। পূর্ব পাকিস্তান গঠিত হয়েছিল প্রধানত পূর্ব বঙ্গ নিয়ে যা বর্তমানের বাংলাদেশ। বাংলাদেশের মানুষ ১৯৪৭-১৯৭১ এই সময়কে পাকিস্তান আমল হিসাবে উল্লেখ করে থাকে ।

১৯৫০ সালে ভূমি সংস্কারের অধীনে ব্রিটিশ আমলে প্রবর্তিত জমিদার ব্যবস্থা রদ করা হয় । কিন্তু পূর্ব পাকিস্তানের অর্থনৈতিক ও জনসংখ্যাগত গুরুত্ব সত্ত্বেও পাকিস্তান সরকার ও সেনাবাহিনী পশ্চিম পাকিস্তানীদের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে ছিল । ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন পাকিস্তানের দুই অংশের মধ্যে সংঘাতের প্রথম লক্ষণ হিসাবে প্রকাশ পেয়েছিল । পরবর্তী দশক জুড়ে কেন্দ্রীয় সরকারের অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক বিষয়ে নেয়া নানা পদক্ষেপের ভেতর দিয়ে পূর্ব পাকিস্তানের সাধারণ মানুষের মনে বিক্ষোভের দানা বাঁধতে থাকে ।

পশ্চিম পাকিস্তানের প্রভাব ও স্বৈর দৃষ্টিভঙ্গীর বিরূদ্ধে প্রথম পদক্ষেপ ছিল মাওলানা ভাসানীর নেতৃত্বে আওয়ামী মুসলিম লীগের প্রতিষ্ঠা । ১৯৪৯ সালে এই দলটি প্রতিষ্ঠিত লাভ করে । ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট নিবার্চনে বিজয় এবং ১৯৬৫ সালে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে পাকিস্তানের সামরিক প্রশাসক জেনারেল আইয়ুব খানকে পরাজিত করার লক্ষ্য নিয়ে সম্মিলিত বিরোধী দল বা (কপ-প্রতিষ্ঠা) ছিল পাকিস্তানী সামরিক শাসনের বিরূদ্ধে পূর্ব পাকিস্তানীর রাজনীতিবিদদের নেতৃত্বমূলক আন্দলোনের মাইলফলক । পূর্ব পাকিস্তানের স্বাধিকারের প্রশ্ন ১৯৫০-এর মধ্যভাগ থেকে উচ্চারিত হতে থাকে । ১৯৬০ দশকের মাঝামাঝি থেকে বাঙালি জাতীয়তাবাদ ধারণাটি প্রকৃষ্ট হতে শুরু করে। ১৯৬৯ সালে পূর্ব পাকাস্তানকে বিচ্চিন্ন করার অভিযোগে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় দায়ের করা হয়। ১৯৬৯-এ আইয়ুব খানের পতন হয় তবে তখন সামরিক শাসন অব্যাহত থাকে । তাদের অধীনের ১৯৭০-এ সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় । আওয়ামী লীগ এ নির্বাচনেঅংশ গ্রহণ করেন এবং পাকিস্তানে একক সংখ্যা গরিষ্ঠতা অর্জ্জন করে। কিন্তু পশ্চিম পাকিস্তানী রাজনৈতিকদের ষড়যন্ত্রের কারণে প্রেসিডেন্ট জেনারেল ইয়াহিয়া খান শেখ মুজিবের নিকট ক্ষমতা হস্তান্তর থেকে বিরত থাকন ।


বাংলা ভাষা আন্দোলন ছিল তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তানে (বর্তমান বাংলাদেশ) সংঘটিত একটি সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক আন্দোলন । মৌলিক অধিকার রক্ষাকল্পে বাংলা ভাষাকে ঘিরে সৃষ্ট এ আন্দোলনের মাধ্যমে তৎকালীন পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে গণ দাবীর বহিঃপ্রকাশ ঘটে। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারিতে এ আন্দোলন চূড়ান্ত রূপ ধারণ করলেও বস্তুত এর বীজ বপিত হয়েছিল বহু আগে, অন্যদিকে এর প্রতিক্রিয়া এবং ফলাফল ছিল সুদূরপ্রসারী ।

১৯৪৭ সালে দ্বিজাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে ব্রিটিশ ভারত ভাগ হয়ে পাকিস্তানের উদ্ভব হয়। কিন্তু পাকিস্তানের দু’টি অংশ - পূর্ব পাকিস্তান এবং পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে সাংস্কৃতিক, ভৌগোলিক ও ভাষাগত দিক থেকে অনেক মৌলিক পার্থক্য বিরাজ করে । ১৯৪৮ সালে পাকিস্তান সরকার ঘোষণা করে যে, উর্দুই হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা । এ ঘোষণার প্রেক্ষাপটে পূর্ব পাকিস্তানে অবস্থানকারী বাংলাভাষী সাধারণ জনগণের মধ্যে গভীর ক্ষোভের জন্ম হয় ও বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে ।

কার্যতঃ পূর্ব পাকিস্তান অংশের বাংলাভাষী মানুষ আকস্মিক ও অন্যায্য এ সিদ্ধান্তকে মেনে নিতে পারেনি এবং মানসিকভাবে মোটেও প্রস্তুত ছিল না । ফলস্বরূপ বাংলাভাষার সম-মর্যাদার দাবিতে পূর্ব পাকিস্তানে আন্দোলন দ্রুত দানা বেধে ওঠে। আন্দোলন দমনে পুলিশ ১৪৪ ধারা জারি করে ঢাকা শহরে সমাবেশ-মিছিল ইত্যাদি বে-আইনী ও নিষিদ্ধ ঘোষণা করে ।

১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি (৮ ফাল্গুন ১৩৫৮) এ আদেশ অমান্য করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বহু সংখ্যক ছাত্র ও প্রগতিশীল কিছু রাজনৈতিক কর্মী মিলে মিছিল শুরু করেন। মিছিলটি ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের কাছাকাছি এলে পুলিশ ১৪৪ ধারা অবমাননার অজুহাতে আন্দোলনকারীদের ওপর গুলিবর্ষণ করে। গুলিতে নিহত হন রফিক' সালাম, বরকত-রফিক সহ আরও অনেকে ভাষা সৈনিক । শহীদদের রক্তে রাজপথ রঞ্জিত হয়ে ওঠে । শোকাবহ এ ঘটনার অভিঘাতে সমগ্র পূর্ব পাকিস্তানে তীব্র ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে ।

ক্রমবর্ধমান গণআন্দোলনের মুখে পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকার শেষাবধি নতি স্বীকার করতে বাধ্য হয় এবং ১৯৫৬ সালে সংবিধান পরিবর্তনের মাধ্যমে বাংলা ভাষাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষার স্বীকৃতি প্রদান করে । ২০০০ সালে ইউনেস্কো বাংলা ভাষা আন্দোলন, মানুষের ভাষা এবং কৃষ্টির অধিকারের প্রতি সম্মান জানিয়ে ২১ ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণা করে যা বৈশ্বিক পর্যায়ে সাংবার্ষিকভাবে গভীর শ্রদ্ধা ও যথাযোগ্য মর্যাদার সাথে উদযাপন করা হয় ।
অপারেশন সার্চলাইট
অপারেশন সার্চলাইট (ইংরেজি: Operation Searchlight) ১৯৭১সালে ২৫ মার্চ থেকে শুরু হওয়া পাকিস্তানী সেনাবাহিনী কর্তৃক পরিচালিত পরিকল্পিত গণহত্যা' যার মধ্যমে তারা ১৯৭১ এর মার্চ ও এর পূর্ববর্তী সময়ে সংঘটিত বাঙালি জাতীয়তাবাদী আন্দোলনকে দমন করতে চেয়েছিল । এই গণহত্যা ছিল পশ্চিম পাকিস্তানী শাষকদের আদেশে পরিচালিত,যা ১৯৭০ এর নভেম্বরে সংঘটিত অপারেশন ব্লিটজ্ এর পরবর্তি অনুষঙ্গ । অপারেশনটির আসল উদ্দেশ্য ছিল ২৬ মার্চ এর মধ্যে সব বড় বড় শহর দখল করে নেয়া এবং রাজনৈতিক ও সামরিক বিরোধীদের এক মাসের ভেতর নিশ্চিহ্ন করে দেয়া । বাঙ্গালীরা তখন পাল্টা প্রতিরোধ সৃষ্টি করেন' যা পাকিস্তানী পরিকল্পনাকারীদের ধারণারও বাইরে ছিল । মে এর মাঝামাঝি সময়ে সকল বড় বড় শহরের পতন ঘটার মধ্যে দিয়ে অপারেশন সার্চলাইটের প্রধান অংশ শেষ হয় । এই সামরিক আক্রমণ ১৯৭১ সালের গণহত্যাকে তরান্বিত করে । এই গণহত্যা বাঙালিদের ক্রুদ্ধ করে তোলে যে কারণে পাকিস্তান সেনবাহিনীর বাঙ্গালী সেনাপতি ও সৈনিকেরা বিদ্রোহ ঘোষণা করে, বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষিত হয় এবং বহু মানুষকে শরণার্থী রূপে ভারতে আশ্রয় নিতে হয় । এই ভয়াবহ গণহত্যা ১৯৭১ এর বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সূত্রপাত ঘটায় এবং বাঙালিরা দখলদারী পাকিস্তানী বাহিনীকে বিতারিত করার সংগ্রামে লিপ্ত হয় । পরিণতিতে ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর ভারত ও বাংলাদেশের যৌথ কমান্ড ( মিত্র বাহিনী ) এর কাছে পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর বিনাশর্তে আত্মসমর্পণের মধ্য দিয়ে স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠি হয় ।
মুক্তিবাহিনী
মুক্তিবাহিনী হলো ১৯৭১ সালের বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশ নেয়া বাঙালি সেনা, ছাত্র, ও সাধারণ জনতার সমন্বয়ে গঠিত একটি সামরিক বাহিনী। ২৬শে মার্চ বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণার পর ধীরে ধীরে সাধারণ বাঙ্গালীদের এই বাহিনী গড়ে উঠে। পরবর্তীতে এপ্রিল মাসের মাঝামাঝি সময়ে পূর্ব পাকিস্থান সামরিক বাহিনীর সাবেক সদস্যরা ( বাংলাদেশ সামরিক বাহিনী ) গঠন করেন এবং জেনারেল আতাউল গণি ওসমানী সর্বাধিনায়কের পদ গ্রহণ করেন। সাধারণ জনতা যুদ্ধকালীন সময়ে নিরলসভাবে এই বাহিনীকে সাহায্য করে যায়। যুদ্ধের পর পশ্চিম পাকিস্থানী বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা বাংলাদেশের সকল সেনা ও জনতার বাহিনীকে মুক্তি বাহিনী হিসেবে সম্বোধন করা হয়। মুক্তিবাহিনী বেশিরভাগ সময়ই গেরিলা যুদ্ধের নীতি অবলম্বন করে শত্রু পক্ষকে ব্যাতিব্যস্ত রাখতো। মুক্তিবাহিনীর যুদ্ধকৌশল অনেকটা বিপ্লবী চে গুয়েভারার দ্বারা অনুপ্রাণিত ছিলো বলে মনে করা হয়'' এবং একে বিভিন্ন সময় ফরাসি মাকি বাহিনী'' ভিয়েত কং এবং মার্শাল টিটোর গেরিলা বাহিনীর তুলনা করা হতো এর রণকৌশল ও কার্যকারীতার কারণে ।

১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনার জন্য অস্থায়ী বাংলাদেশ সরকার -এর আনুষ্ঠানিক প্রতিষ্ঠা হয় কুষ্টিয়া জেলার মেহেরপুর মহকুমা (বর্তমানে জেলা) বৈদ্যনাথতলার অন্তর্গত ভবেরপাড়া ( বর্তমান মুজিবনগর ) গ্রামে । শেখ মুজিবুর রহমান এর অনুপস্থিতিতে তাকে রাষ্ট্রপতি করে সরকার গঠন করা হয় । অস্থায়ী রাষ্ট্রপতির দ্বায়িত্ব নেন সৈয়দ নজরুল ইসলাম এবং প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব অর্পিত হয় তাজউদ্দীন আহমদ এর উপর। বাংলাদেশের প্রথম সরকার দেশী-বিদেশী সাংবাদিকের সামনে শপথ গ্রহণ করে আনুষ্ঠানিকভাবে দায়িত্ব পালন শুরু করে । এই শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র পাঠের মাধ্যমে ২৬ মার্চ হতে বাংলাদেশকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসাবে ঘোষণা করা হয় ।
স্বাধীনতা ঘোষণাপত্র
বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র প্রবাসী বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক ১৯৭১ সালের এপ্রিল ১৭ তারিখে আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষিত একটি ঘোষণাপত্র। যতদিন বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ চলেছে ততদিন মুজিবনগর সরকার পরিচালনার অন্তর্বর্তীকালীন সংবিধান হিসেবে এই ঘোষণাপত্র কার্যকর ছিল। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর স্বাধীন বাংলাদেশের জন্ম হওয়ার পরও এই ঘোষণাপত্র সংবিধান হিসেবে কার্যকর ছিল। ১৯৭২ সালের ডিসেম্বর ১৬ তারিখে যখন দেশের নতুন সংবিধান প্রণীত হয় তখন সংবিধান হিসেবে এর কার্যকারিতার সমাপ্তি ঘটে।

১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তান সামরিক বাহিনী ঢাকা এবং তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের অন্যান্য অংশে আক্রমণ চালিয়ে ব্যাপক গণহত্যা চালায়। এই গণগত্যার প্রাক্কালে তৎকালীন আওয়ামী লিগ নেতৃবৃন্দ, গণপরিষদ ও প্রাদেশিক পরিষদের সদস্যগণ নিরাপত্তার জন্য সীমান্ত অতিক্রম করে ভারতে গিয়ে আশ্রয় নেন। ৩০ মার্চের মধ্যেই তাদের অনেকে কলকাতায় সমবেত হন।প্রাদেশিক পরিষদের যে সকল সদস্য ১০ এপ্রিল এর মধ্যে কলকাতায় পৌছতে সক্ষম হন তাদের নিয়ে তাজউদ্দীন আহমদ মন্ত্রিপরিষদ গঠন করেন।তার নির্দেশেই অধ্যাপক রেহমান সোবহান আরো কয়েকজনের সাহায্য নিয়ে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রের একটি খসড়া প্রণয়ন করেন ।এরপর ব্যরিস্টার আমীর-উল-ইসলাম এই ঘোষণাপত্রের আইনগত দিক গুলো সংশোধন করে একে পূর্নতা দান করেন । এই ঘোষণাপত্রটি প্রথমে ১০ এপ্রিল মুজিবনগর থেকে প্রচার করা হয় ।এরপর আবার এপ্রিল ১৭ তারিখে মেহেরপুর জেলার সীমান্তবর্তী স্থান বৈদ্যনাথতলায় (পরবর্তী নাম মুজিবনগর) এক অনাড়ম্বর অনুষ্ঠানে গণপরিষদের সদস্য এম ইউসুফ আলী আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র পাঠ করেন । এই ঘোষণার মাধ্যমে নবগঠিত প্রবাসী আইন পরিষদ বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব ঘোষণা করে সাথে সাথে এ ঘোষণাপত্র প্রবাসী সরকারের অবস্থান ও যৌক্তিকতা দৃঢ় ভাবে প্রতিষ্ঠা করে । এদিনই ২৬ মার্চের স্বাধীনতার ঘোষণাকে আনুষ্ঠানিকভাবে অনুমোদন দেয়া হয় এবং একই সাথে ২৬ মার্চ থেকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা কার্যকর হয়েছে বলে ঘোষণা করা হয় । এর ফলে প্রবাসী মুজিবনগর সরকারও বৈধ বলে স্বীকৃত হয় । এ ঘোষণায় মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী সকলের মধ্যে চেইন অফ কমান্ড স্থাপনের নির্দেশ দেয়া হয় ।

ঘোষণাপত্রের পূর্ণ বিবরণ
যেহেতু ১৯৭০ সালের ৭ ডিসেম্বর থেকে ১৯৭১ সালের ১৭ জানুয়ারি পর্যন্ত বাংলাদেশে অবাধ নির্বাচনের মাধ্যমে শাসনতন্ত্র রচনার উদ্দেশ্যে প্রতিনিধি নির্বাচিত করা হয়েছিল এবং যেহেতু এই নির্বাচনে বাংলাদেশের জনগণ ১৬৯টি আসনের মধ্যে আওয়ামী লীগ দলীয় ১৬৭ জন প্রতিনিধি নির্বাচিত করেছিল এবং জেনারেল ইয়াহিয়া খান ১৯৭১ সনের ৩রা মার্চ তারিখে শাসনতন্ত্র রচনার উদ্দেশ্যে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের অধিবেশন আহ্বান করেন । আহূত এই অধিবেশন স্বেচ্ছার এবং বেআইনীভাবে অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেন ।
পাকিস্তান কর্তৃপক্ষ তাদের প্রতিশ্রুতি পালন করার পরিবর্তে বাংলাদেশের জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে পারষ্পরিক আলোচনাকালে ন্যায়নীতি বহির্ভূত এবং বিশ্বাসঘাতকতামূলক যুদ্ধ ঘোষণা করেন ।
উল্লিখিত বিশ্বাসঘাতকতামূলক কাজের জন্য উদ্ভূত পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশের সাড়ে সাত কোটি মানুষের অবিসংবাদিত নেতা শেখ মুজিবুর রহমান,, জনগণের আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার অর্জনের আইনানুগ অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য ১৯৭১ সালের ২৬শে মার্চ ঢাকায় যথাযথভাবে স্বাধীনতা ঘোষণা করেন । বাংলাদেশের অখণ্ডতা ও মর্যাদা রক্ষার জন্য বাংলাদেশের জনগণের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানান ।
পাকিস্তান কর্তৃপক্ষ বর্বর ও নৃশংস যুদ্ধ পরিচালনা করেছে এবং এখনও বাংলাদেশের বেসামরিক ও নিরস্ত্র জনগণের বিরুদ্ধে নজিরবিহীন গণহত্যা ও নির্যাতন চালায় ।
পাকিস্তান সরকার অন্যায় ভাবে যুদ্ধ ও গণহত্য এবং নানাবিধ নৃশংস অত্যাচার পরিচালনার দ্বারা বাংলাদেশের গণপ্রতিনিধিদের পক্ষে একত্রিত হয়ে শাসনতন্ত্র প্রণয়ন করে ।
বাংলাদেশের জনগণ তাদের বীরত্ব সাহসিকতা ও বিপ্লবী কার্যক্রমের মাধ্যমে বাংলাদেশের উপর তাদের কার্যকরি কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করে ।
সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী বাংলাদেশের জনগণ নির্বাচিত প্রতিনিধিদের প্রতি যে ম্যান্ডেট দিয়েছেন সে ম্যান্ডেট মোতাবেক আমরা, নির্বাচিত প্রতিনিধিরা, আমাদের সমবায়ে গণপরিষদ গঠন করে পারষ্পরিক আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশের জনগণের জন্য সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করার উদ্দেশ্যে
বাংলাদেশকে একটি সার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্র ঘোষণা করছি এবং এর দ্বারা পূর্বাহ্নে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বাধীনতা ঘোষণা অনুমোদন করছি; এবং

এতদ্বারা আমরা আরও সিদ্ধান্ত ঘোষণা করছি যে শাসনতন্ত্র প্রণীত না হওয়া পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রপ্রধান এবং সৈয়দ নজরুল ইসলাম উপ-রাষ্ট্রপ্রধান পদে অধিষ্ঠিত থাকবেন; এবং

রাষ্ট্রপ্রধান প্রজাতন্ত্রের সশস্ত্র বাহিনীসমূহের সর্বাধিনায়ক পদে অধিষ্ঠিত থাকবেন; ক্ষমা প্রদর্শনের ক্ষমতাসহ সর্বপ্রকার প্রশাসনিক ও আইন প্রণয়নের ক্ষমতার অধিকারী থাকবেন; এবং

তাঁর কর ধার্য ও অর্থব্যয়ের ক্ষমতা থাকবে; এবং

বাংলাদেশের জনসাধারণের জন্য আইনানুগ ও নিয়মতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠার জন্য অন্যান্য প্রয়োজনীয় সকল ক্ষমতারও তিনি অধিকারী হবেন।

বাংলাদেশের জনগণ দ্বারা নির্বাচিত প্রতিনিধি হিসাবে আমরা আরও সিদ্ধান্ত ঘোষণা করছি যে, কোন কারণে যদি রাষ্ট্রপ্রধান না থাকেন অথবা যদি রাষ্ট্রপ্রধান কাজে যোগদান করতে না পারেন অথবা তাঁর দায়িত্ব ও কর্তব্য পালনে যদি অক্ষম হন, তবে রাষ্ট্রপ্রধান প্রদত্ত সকল দায়িত্ব উপ-রাষ্ট্রপ্রধান পালন করবেন । আমরা আরও সিদ্ধান্ত ঘোষণা করছি যে, বিশ্বের একটি জাতি হিসাবে এবং জাতিসংঘের সনদ মোতাবেক আমাদের উপর যে দায়িত্ব ও কর্তব্য বর্তেছে তা যথাযথভাবে আমরা পালন করব । আমরা আরও সিদ্ধান্ত ঘোষণা করছি যে আমাদের এই স্বাধীনতার ঘোষণা ১৯৭১ সনের ২৬শে মার্চ থেকে কার্যকর বলে গণ্য হবে। আমরা আরও সিদ্ধান্ত ঘোষণা করছি যে, আমাদের এই সিদ্ধান্ত কার্যকর করার জন্য আমরা অধ্যাপক এম. ইউসুফ আলীকে যথাযথভাবে রাষ্ট্রপ্রধান ও উপ-রাষ্ট্রপ্রধানের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান পরিচালনার জন্য দায়িত্ব অর্পণ ও নিযুক্ত করলাম।

স্বাক্ষর: অধ্যাপক এম. ইউসুফ আলী

বাংলাদেশ গণপরিষদের ক্ষমতা দ্বারা

এবং ক্ষমতাবলে যথাবিধি সর্বাধিক ক্ষমতাধিকারী।

মুক্তিবাহিনী

মুক্তিবাহিনী হলো ১৯৭১ সালের বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশ নেয়া বাঙালি সেনা, ছাত্র, ও সাধারণ জনতার সমন্বয়ে গঠিত একটি সামরিক বাহিনী। ২৬শে মার্চ বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণার পর ধীরে ধীরে সাধারণ বাঙ্গালীদের এই বাহিনী গড়ে উঠে। পরবর্তীতে এপ্রিল মাসের মাঝামাঝি সময়ে পূর্ব পাকিস্থান সামরিক বাহিনীর সাবেক সদস্যরা ( বাংলাদেশ সামরিক বাহিনী ) গঠন করেন এবং জেনারেল আতাউল গণি ওসমানী সর্বাধিনায়কের পদ গ্রহণ করেন । সাধারণ জনতা যুদ্ধকালীন সময়ে নিরলসভাবে এই বাহিনীকে সাহায্য করে যায় । যুদ্ধের পর পশ্চিম পাকিস্থানী বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা বাংলাদেশের সকল সেনা ও জনতার বাহিনীকে ( মুক্তি বাহিনী ) হিসেবে সম্বোধন করা হয়। মুক্তিবাহিনী বেশিরভাগ সময়ই গেরিলা যুদ্ধের নীতি অবলম্বন করে শত্রু পক্ষকে ব্যাতিব্যস্ত রাখতো। মুক্তিবাহিনীর যুদ্ধকৌশল অনেকটা বিপ্লবী চে গুয়েভারার দ্বারা অনুপ্রাণিত ছিলো বলে মনে করা হয় । এবং একে বিভিন্ন সময় ফরাসি মাকি বাহিনী' ভিয়েত কং এবং মার্শাল টিটোর গেরিলা বাহিনীর তুলনা করা হতো এর রণকৌশল ও কার্যকারীতার কারণে
মুক্তিবাহিনীর শুরু
পশ্চিম পাকিস্থানী সেনাবাহিনীর ২৫শে মার্চ ১৯৭১ এর গণহত্যার পর প্রতিরোধের জন্য মুক্তিবাহিনী গড়ে উঠে। কিন্তু এ ছিলো বাংলাদেশের মুক্তি সংগ্রামের চূড়ান্ত পর্যায়মাত্র। স্বাধীনতার সংগ্রাম এর আগেই দানা বাধতে শুরু করে ১৯৬৯ এর আইয়ুব বিরোধী আন্দোলনের মধ্য দিয়ে। ১৯৭০ এর শুরুর দিকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছয় দফা আন্দোলনের মাধ্যমে তা গণআন্দোলনে রূপ নিতে থাকে। ১৯৭১ এর মার্চে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্থানে (পরবর্তীতে বাংলাদেশ) ক্রমবর্ধমান রাজনৈতিক অসন্তোষ এবং সাংস্কৃতিক জাতীয়তাবাদের দাবী তৎকালীন পশ্চিমা শাসকগোষ্ঠী কঠোর হাতে দমন করার সিদ্ধান্ত নেয় এবং অপারেশন সার্চলাইটের নীল নকশা আঁটে ।

পশ্চিম পাকিস্থানী সেনাবাহিনীর নৃশংস হত্যাকাণ্ডের । মুখে অগণিত অসহায় মানুষ ভারতের পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলোতে আশ্রয়প্রার্থী হতে থাকে ( আনুমানিক ১ কোটি শরণার্থী ) যা পরবর্তীতে মুক্তিযুদ্ধের গতিপ্রকৃতিতে একটা নতুন মাত্রা দেয় । বাংলার মানুষের অসহনীয় মানবিক দূর্যোগের মুখে ভারত সরকার মুক্তিবাহিনীকে সর্বোতভাবে সহযোগিতা করা শুরু করে ।

শুরুর দিকে মুক্তিবাহিনী মুক্তিফৌজ নামে পরিচিত হয় (ফৌজ উর্দু শব্দ, ফার্সি হতে উৎপত্তি। ফৌজ শব্দটি মূলত আরবী বাহিনীর পরিপূরক যা পরে বিভিন্ন ভাষার মাধ্যমে বাংলা ভাষায় গৃহীত হয়েছে ) যা আগে বিভিন্ন শহরে ও গ্রামে সংগ্রাম পরিষদ নামে ছাত্র ও যুবকদের উদ্যোগে গঠিত হয় ১৯৭১ এর মার্চের শুরুর দিকে। এটা ঠিক পরিষ্কার নয় কিভাবে মুক্তিফৌজ মুক্তিবাহিনী নামে রূপান্তরিত হয় । তবে নাম যাই হোক না কেন এটা বাংলার মুক্তিকামী মানুষের সংগ্রামী বাহিনীকেই নির্দেশ করে ।

১৯৬৯ সালের আইয়ুব খান বিরোধী আন্দোলনের সময় থেকে শুরু করে এবং শেখ মুজিবের ছয় দফা আন্দোলনের চূড়ান্তলগ্ন থেকেই পুর্ব পাকিস্তানের বাঙ্গালিদের ভেতর স্বাধীন হবার আন্দোলন শুরু হয়, যার মূলে ছিলেন জাতীয়তাবাদী ,প্রগতিবাদী এবং বামপন্থিরা। ১৯৭০ সালের নির্বাচনের পরবর্তিকালের সংকট এই ভাবনাকে আরো দৃড় করে । শেখ মুজিব নিজে এ বিষয়ে অন্যান্য প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর চাপে ছিলেন। বিশেষ করে কট্টর-জাতীয়তাবাদী তরুণ ছাত্র নেতারা চাচ্ছিলেন যে শেখ মুজিব যেন অবিলম্বে স্বাধীনতা ঘোষণা করেন । কয়েকটি বামপন্থি এবং জাতীয়তাবাদী দল সশস্ত্র প্রস্তুতি নিচ্ছিলো, এবং বাঙ্গালি সেনা অফিসার ও সৈন্যরা পাকিস্তান সেনাবাহিনী ত্যাগ করতে প্রস্তুত ছিলো । শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে, ৩রা মার্চ হতে এবং ৭ই মার্চ পরবর্তি দিনগুলোতে, তৎকালিন পূর্ব পাকিস্তানের মানুষ একটি শান্তিপূর্ণ অসহযোগ আন্দলোনে যোগ দেয় যার ব্যাপ্তিকাল ছিলো ২৫-এ মার্চ ১৯৭১ এর মধ্যরাত পর্যন্ত।

সেইদিন-ই পাকিস্তানি সেনাবাহিনী প্রশাসনের নিয়ন্ত্রন নিতে নিরস্ত্র জনতার উপর হামলা চালায় । ২৫-এ মার্চ ১৯৭১ এর রাতে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর এই হামলার সময়, কিছু স্বল্প ক্ষমতার প্রতিরোধ প্রচেস্টার খবর পাওয়া যায়, বিশেষ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এর ইকবাল হল এবং রাজারবাগ পুলিশ হেডকোয়ার্টার-এ ( এখানকার প্রতিরোধের মাত্রা ছিলো তীব্র )। রাজনৈতিক ঘটনাপ্রবাহ বেগবান হয়ে ওঠার সাথে তাল মিলিয়ে, মুক্তিকামী বাঙ্গালি এবং পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীদের যুদ্ধের পরিবেশ গড়ে উঠল। সেনাবাহিনীর বাঙ্গালী সদস্যরাও পাকিস্তানের পক্ষ ছেড়ে দেশের নানান জায়গায় সমবেত হতে থাকলো ।

প্রথমদিককার সকল প্রতিরোধই ছিলো অপরিকল্পিত এবং দুর্বল কারণ পাকিস্তান সেনাবাহিনী সামরিক শক্তিতে অনেক এগিয়ে ছিলো। ঢাকার বাইরে প্রতিরোধগুলো ছিলো বেশি সফল । সর্বপ্রথম মুক্তি বাহিনী গঠনের উদ্যোগটি আসে যখন শেখ মুজিবুর রহমান-এর পক্ষে তৎকালীন ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের মেজর জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা দেন । ২৬শে মার্চ ১৯৭১ কালুরঘাট বেতারকেন্দ্র (চট্টগ্রাম) থেকে দেয়া ঘোষণায় জিয়া "বাংলাদেশ মুক্তিবাহিনীর সাময়িক সর্বাধিনায়ক" এর দায়িত্ব গ্রহণ করেন যদিও তার যুদ্ধ এলাকা চট্টগ্রাম এবং নোয়াখালীর মাঝে সীমিত ছিলো । শেখ মুজিবুর রহমানের পক্ষে মেজর জিয়াউর রহমানের ঘোষণাটি ছিলো পাকিস্তান সেনাবাহিনী হতে বাঙ্গালি ইউনিটগুলোর বিচ্ছিন্ন হয়ে আসার নির্দেশক ।

মুক্তি বাহিনী ও ভারতীয় সেনাবাহিনীকে যৌথভাবে মিত্রবাহিনী বলা হয়। ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর পাকিস্তান সেনাবাহিনীর অধিনায়ক জেনারেল নিয়াজি ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে মিত্রবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করে।
যুদ্ধকালীন সংগঠন
যদিও অপারেশন সার্চলাইট[১৪] এর পাকিস্তানি পরিকল্পনাকারীরা বাঙ্গালিদের প্রতিরোধ দীর্ঘ হবে বলে প্রত্যাশা করেনি, পাকিস্তানি সেনাবাহিনী জনসাধারণের ওপর হামলা করার সময় থেকেই মুক্তিবাহিনী বারবার দৃশ্যপটে থাকলো । প্রথাগত গেরিলা রূপ ধারণ করার পূর্বে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর একজন অবসরপ্রাপ্ত অফিসার, কর্নেল (পরবর্তীকালে জেনারেল) আতাউল গণি ওসমানী-এর নেতৃত্বে এই বাহিনীকে গড়ে তোলা হয় মুজিব এর আন্দোলনের সাহায্যকারী এবং নিরাপত্তা বাহিনী হিসেবে। স্বাধীনতার ঘোষণার পর, পাকিস্তানি সেনাবাহিনী এদেরকে দমন করার চেষ্টা করলেও কিন্তু গোপনে বেড়ে ওঠা এই "বাংলাদেশ সেনাবাহিনী" তে বিদ্রোহী বাঙ্গালি সৈন্যদের সংখ্যা বেড়েই চলছিল। এই বাঙ্গালি সৈন্য ইউনিটগুলো ধীরে ধীরে মুক্তিবাহিনীতে যুক্ত হয় এবং তাদের অস্ত্রশস্ত্রের ভাণ্ডার আরো মজবুত করে।

১৯৭১ সালের ১২ই এপ্রিল কর্নেল আতাউল গণি ওসমানী তেলিয়াপাড়া ( সিলেট ) হেডকোয়ার্টারে সশস্ত্র বাহিনীর দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ১৯৭১ সালের ১২ই এপ্রিল ওসমানীকে সশস্ত্র বাহিনীর সর্বাধিনায়ক নিয়োগ করা হয়। ১১-১২ই জুলাই এর মধ্যে বাংলাদেশ মুক্তি বাহিনীকে সংঘটিত করবার গুরুতর পদক্ষেপ নেয়া হয়। কোলকাতাতে সেক্টর কমান্ডারদের একটি সভায় যুদ্ধের কৌশল , বিদ্যমান সমস্যা এবং ভবিষ্যৎ প্রতিরোধ পরিকল্পনার ওপর আলোকপাত করে চারটি সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। সেগুলো ছিলো :

যোদ্ধাদের গঠন এবং কৌশল হবে এরকম :
প্রতিটি গেরিলা দলে ৫ থেকে ১০ জন প্রশিক্ষিত যোদ্ধা থাকবে যাদের বাংলাদেশ এর নির্দিষ্ট কিছু জায়গায় কিছু নির্দিষ্ট দায়িত্ব দিয়ে পাঠানো হবে।
সাধারণ যোদ্ধারা শত্রুদের ওপর সম্মুখ হামলা চালাবে। এদের ৫০ থেকে ১০০ ভাগের কাছে অস্ত্র থাকবে। স্বেচ্ছাসেবক গোয়েন্দাদের নিয়োজিত করা হবে শত্রুদের সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করতে। এদের ৩০ ভাগ অস্ত্রে সজ্জিত থাকবে।

নিয়মিত বাহিনীকে ব্যটেলিয়ন এবং সেক্টর এ বিভক্ত করা হবে।

সামরিক অভিযানকালে নিম্নে বর্নিত কৌশলগুলো গ্রহণ করা হবে :
বিপুল সংখ্যক গেরিলাকে পাঠানো হবে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে আকস্মিক এবং ওঁৎ পেতে আক্রমণ চালাতে।
শিল্প কারখানাগুলিকে নিষ্ক্রিয় করতে হবে এবং বৈদ্যুতিক সরবরাহ ব্যহত করা হবে।
পাকিস্তানিদের কাঁচামাল এবং প্রস্তুতকৃত পন্য রপ্তানিতে বাধা দেয়া হবে ।
কৌশলগত সুবিধার জন্য শত্রুকে ছত্রভঙ্গ করতে হবে ।

পুরো বাংলাদেশ কে ১১টি সেক্টরে ভাগ করা হবে।

মূলত ভারতীয় সেনাবাহিনী দ্বারা প্রশিক্ষিত এবং অস্ত্রে সজ্জিত মুক্তিবাহিনী-এর বাইরেও পৃথক ( জাতীয়তাবাদী বা বামপন্থি ) নেতৃত্বে কিছু স্বতন্ত্র গেরিলা বাহিনী সফলভাবে কিছু জায়গা নিয়ন্ত্রণ করছিলেন ।
পোস্টের পরিপূর্ণতার সার্থে বিভিন্ন তর্থ্য (গুগল সার্চইঞ্জিন ও বাংলা উইকিপিডিয়া থেকে বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করেছে ।

আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানাই বাংলা উইকিপিডিয়া ও গুগল সার্চ ইঞ্জিন ।

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ২৫ শে মার্চ, ২০১৫ বিকাল ৩:৫৯

নাজমুল হাসান মজুমদার বলেছেন: শুভেচ্ছা লেখার জন্যে

২৮ শে মার্চ, ২০১৫ দুপুর ১:২৯

ব্লগার মাসুদ বলেছেন: : ধন্যবাদ ভাiই

২| ২৫ শে মার্চ, ২০১৫ বিকাল ৪:০১

মঞ্জু রানী সরকার বলেছেন: লিখে যান

২৮ শে মার্চ, ২০১৫ দুপুর ১:২৮

ব্লগার মাসুদ বলেছেন:
ধন্যবাদ ভাই

৩| ২৫ শে মার্চ, ২০১৫ বিকাল ৪:৩১

মামুন ইসলাম বলেছেন: ++++

২৮ শে মার্চ, ২০১৫ দুপুর ১:২৭

ব্লগার মাসুদ বলেছেন: ধন্যবাদ
মামুন ইসলাম ভাই

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.