নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ব্লগার মাসুদ

ব্লগার মাসুদ

ব্লগার মাসুদ

ব্লগার মাসুদ

ব্লগার মাসুদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

সুকান্ত ভট্টাচার্যের কবিতার সঙ্কলন । ( পর্ব-১ )

২১ শে জুলাই, ২০১৫ রাত ১:২১

১।কবিতা বিক্ষোভঃ
দৃঢ় সত্যের দিতে হবে খাঁটি দাম,
হে স্বদেশ, ফের সেই কথা জানলাম ।
জানে না তো কেউ পৃথিবী উঠছে কেঁপে
ধরেছে মিথ্যা সত্যের টুঁটি চেপে,
কখনো কেউ কি ভূমিকম্পের আগে
হাতে শাঁখ নেয়, হঠাৎ সবাই জাগে ?
যারা আজ এত মিথ্যার দায়ভাগী,
আজকে তাদের ঘৃণার কামান দাগি ।
ইতিহাস, জানি নীরব সাক্ষী তুমি,
আমরা চেয়েছি স্বাধীন স্বদেশভূমি,
অনেকে বিরূপ, কানে দেয় হাত চাপা,
তাতেই কি হয় আসল নকল মাপা ?
বিদ্রোহী মন! আজকে ক'রো না মানা,
দেব প্রেম আর পাব কলসীর কণা,
দেব, প্রাণ দেব মুক্তির কোলাহলে,
জীন্ ডার্ক, যীশু, সোক্রোটিসের দলে ।
কুয়াশা কাটছে, কাটবে আজ কি কাল,
ধুয়ে ধুয়ে যাবে কুৎসার জঞ্জাল,
ততদিনে প্রাণ দেব শত্রুর হাতে
মুক্তির ফুল ফুটবে সে সংঘাতে ।
ইতিহাস! নেই অমরত্বের লোভ,
আজ রেখে যাই আজকের বিক্ষোভ ।।


২। কবিতা বিদ্রোহের গানঃ
বেজে উঠল কি সময়ের ঘড়ি ?
এসো তবে আজ বিদ্রোহ করি,
আমরা সবাই যে যার প্রহরী
উঠুক ডাক ।

উঠুক তুফান মাটিতে পাহাড়ে
জ্বলুক আগুন গরিবের হাড়ে
কোটি করাঘাত পৌঁছোক দ্বারে
ভীরুরা থাক ।

মানবো না বাধা, মানবো না ক্ষতি,
চোখে যুদ্ধের দৃঢ় সম্মতি
রুখবে কে আর এ অগ্রগতি,
সাধ্য কার ?

রুটি দেবে নাকো? দেবে না অন্ন ?
এ লড়াইয়ে তুমি নও প্রসন্ন?
চোখ-রাঙানিকে করি না গণ্য
ধারি না ধার ।

খ্যাতির মুখেতে পদাঘাত করি,
গড়ি, আমরা যে বিদ্রোহ গড়ি,
ছিঁড়ি দুহাতের শৃঙ্খলদড়ি,
মৃত্যুপণ ।

দিক থেকে দিকে বিদ্রোহ ছোটে,
বসে থাকবার বেলা নেই মোটে,
রক্তে রক্তে লাল হয়ে ওঠে
পূর্বকোণ ।

ছিঁড়ি, গোলামির দলিলকে ছিঁড়ি,
বেপরোয়াদের দলে গিয়ে ভিড়ি
খুঁজি কোনখানে স্বর্গের সিঁড়ি,
কোথায় প্রাণ !

দেখব, ওপারে আজো আছে কারা,
খসাব আঘাতে আকাশের তারা,
সারা দুনিয়াকে দেব শেষ নাড়া,
ছড়াব দান ।
জানি রক্তের পেছনে ডাকবে সুখের বান ।।


৩।কবিতা সব্যসাচীঃ
অভুক্ত শ্বাপদচক্ষু নিঃস্পন্দ আঁধারে
জ্বলে রাত্রিদিন ।
হে বন্ধু, পশ্চাতে ফেলি অন্ধ হিমগিরি
অনন্ত বাধ্যক্য তব ফেলুক নিঃশ্বাস
রক্তলিপ্ত যৌবনের অন্তিম পিপাসা
নিষ্ঠুর গর্জনে আজ অরণ্য ধোঁয়ায়
উঠুক প্রজ্বলি ।
সপ্তরথী শোনে নাকো পৃথিবীর শৈশবক্রন্দন,
দেখে নাই নির্বাকের অশ্রুহীন জ্বালা ।
দ্বিধাহীন চণ্ডালের নির্লিপ্ত আদেশে ।
আদিম কুক্কুর চাহে
ধরণীর বস্ত্র কেড়ে নিতে ।
উল্লাসে লেলিহ জিহ্‌ব লুব্ধ হায়েনারা-
তবু কেন কঠিন ইস্পাত
জরাগ্রস্ত সভ্যতার হৃদপিণ্ড জর্জর,
ক্ষুৎপিপাসা চক্ষু মেলে
মরণের উপসর্গ যেন ।
স্বপ্নলব্ধ উদ্যমের অদৃশ্য জোয়ারে
সংঘবদ্ধ বল্মীকের দল ।

নেমে এসো- হে ফাল্গুনী,
বৈশাখের খরতপ্ত তেজে
ক্লান্ত দু'বাহু তব লৌহময় হোক
বয়ে যাক শোণিতের মন্দাকিনী স্রোত;
মুমূর্ষু পৃথিবী উষ্ণ, নিত্য তৃষাতুরা,
নির্বাপিত আগ্নেয় পর্বত
ফিরে চায় অনর্গল বিলুপ্ত আতপ ।
আজ কেন সূবর্ণ শৃঙ্খলে
বাঁধা তব রিক্ত বজ্রপাণি,
তুষারের তলে সুপ্ত অবসন্ন প্রাণ ?
তুমি শুধু নহ সব্যসাচী,
বিস্মৃতির অন্ধকার পারে
ধূসর গৈরিক নিত্য প্রান্তহীন বেলাভুমি 'পরে
আত্মভোলা, তুমি ধনঞ্জয় ।।


৪।কবিতা ১লা মে-র কবিতা '৪৬
লাল আগুন ছড়িয়ে পড়েছে দিগন্ত থেকে দিগন্তে,
কী হবে আর কুকুরের মতো বেঁচে থাকায় ?
কতদিন তুষ্ট থাকবে আর
অপরের ফেলে দেওয়া উচ্ছিষ্ট হাড়ে ?
মনের কথা ব্যক্ত করবে
ক্ষীণ অস্পষ্ট কেঁউ-কেঁউ শব্দে ?
ক্ষুদিত পেটে ধুঁকে ধুঁকে চলবে কতদিন ?
ঝুলে পড়া তোমার জিভ,
শ্বাসে প্রশ্বাসে ক্লান্তি টেনে কাঁপতে থাকবে কত কাল ?
মাথায় মৃদু চাপড় আর পিঠে হাতের স্পর্শে
কতক্ষণ ভুলে থাকবে পেটের ক্ষুদা আর গলার শিকলকে ?
কতক্ষণ নাড়তে থাকবে লেজ ?
তার চেয়ে পোষমানাকে অস্বীকার করো,
অস্বীকার করো বশ্যতাকে ।
চলো, শুকনো হাড়ের বদলে
সন্ধান করি তাজা রক্তের,
তৈরী হোক লাল আগুনে ঝল্সানো আমাদের খাদ্য ।
শিকলের দাগ ঢেকে দিয়ে গজিয়ে উঠুক
সিংহের কেশর প্রত্যেকের ঘাড়ে ।।

৫। কবিতা পরিখাঃ
স্বচ্ছ রাত্রি এনেছে প্লাবন, উষ্ণ নিবিড়
ধুলিদাপটের মরুচ্ছায়ায় ঘনায় নীল ।
ক্লান্ত বুকের হৃৎস্পন্দন ক্রমেই ধীর
হয়ে আসে তাই শেষ সম্বল তোলো পাচিল ।
ক্ষণভঙ্গুর জীবনের এই নির্বিরোধ
হতাশা নিয়েই নিত্য তোমার দাদন শোধ ?

শ্রান্ত দেহ কি ভীরু বেদনার অন্ধকূপে
ডুবে যেতে কাঁদে মুক্তি মায়ায় ইতস্তত
কত শিখণ্ডী জন্ম নিয়েছে নূতন রূপে ?
দুঃস্বপ্নের প্রায়শ্চিত্ত চোরের মতো ।
মৃত ইতিহাস অশুচি ঘুচায় ফল্গু-স্নানে
গন্ধবিধুর রুধির তবুও জোয়ার আনে ।

পথবিভ্রম হয়েছে এবার, আসন্ন মেঘ ।
চলে ক্যারাভান ধূসর আঁধারে অন্ধগতি,
সরীসৃপের পথ চলা শুরু প্রমত্ত বেগ
জীবন্ত প্রাণ, বিবর্ণ চোখে অসম্মতি ।
অরণ্য মাঝে দাবদাহ কিছু যায় না রেখে ।
মনকে বাঁচাও বিপন্ন এই মৃত্যু থেকে ।

সঙ্গীবিহনি দুর্জয় এই পরিভ্রমণ
রক্তনেশায় এনেছে কেবলই সুখাস্বাদ,
এইবারে করো মেরুদুর্গম পরিখা খনন
বাইরে চলুক অযথা অধীর মুক্তিবাদ ।
দুর্গম পথে যাত্রী সওয়ার ভ্রান্তিবিহীন
ফুরিয়ে এসেছে তন্দ্রানিঝুম ঘুমন্ত দিন ।

পালাবে বন্ধু? পিছনে তোমার ধূমন্ত ঝড়
পথ নির্জন, রাত্রি বিছানো অন্ধকারে ।
চলো, আরো দূরে? ক্ষুদিত মরণ নিরন্তর,
পুরনো পৃথিবী জেগেছে আবার মৃত্যুপারে,
অহেতুক তাই হয়নি তোমার পরিখা খনন,
থেমে আসে আজ বিড়ম্বনায় শ্রান্ত চরণ ।

মরণের আজ সর্পিল গতি বক্রবধির-
পিছনে ঝটিকা, সামনে মৃত্যু রক্তলোলুপ ।
বারুদের দুম কালো ছায়া আনে, - তিক্ত রুধির
পৃথিবী এখনো নির্জন নয়- জ্বলন্ত ধূপ ।
নৈঃশব্দ্যের তীরে তীরে আজ প্রতীক্ষাতে
সহস্র প্রাণ বসে আছে ঘিরে অস্ত্র হাতে ।।


৬। কবিতা উদ্বীক্ষণঃ
নগরে ও গ্রামে জমেছে ভিড়
ভগ্ননীড়,
ক্ষুদিত জনতা আজ নিবিড় ।
সমুদ্রে জাগে না বাড়বানল,
কী উচ্ছল,
তীরসন্ধানী ব্যাকুল জল ।
কখনো হিংস্র নিবিড় শোকে
দাঁতে ও নখে
জাগে প্রতিজ্ঞা অন্ধ চোখে ।
তবু সমুদ্র সীমানা রাখে,
দুর্বিপাকে
দিগন্তব্যাপী প্লাবন ঢাকে ।
আসন্ন ঝড়ো অরণ্যময়
যে বিস্ময়
ছড়াবে, তার কি অযথা ক্ষয় ?
দেশে ও বিদেশে লাগে জোয়ার,
ঘোড়সোয়ার
চিনে নেবে দৃঢ় লোহার,
যে পথে নিত্য সূর্যোদয়
আনে প্রলয়,
সেই সীমান্তে বাতাস বয়
তাই প্রতীক্ষা- ঘনায় দিন
স্বপ্নহীন ।


৭। কবিতাঃ অনন্যোপায়
অনেক গড়ার চেষ্টা ব্যর্থ হল, ব্যর্থ বহু উদ্যম আমার
নদীতে জেলেরা ব্যর্থ, তাতী ঘরে, নিঃশব্দ কামার
অর্ধেক প্রাসাদ তৈরী, বন্ধ ছাদ-পেটানোর গান
চাষীর লাঙল ব্যর্থ, মাঠে নেই পরিপূর্ণ ধান ।
যতবার গড়ে তুলি, ততবার চকিত বন্যায়।
উদ্যত সৃষ্টিকে ভাঙে পৃথিবীতে অবাধ অন্যায় ।
বার বার ব্যর্থ, তাই আজ মনে এসেছে বিদ্রোহ
নির্বিঘ্নে গড়ার স্বপ্ন ভেঙে গেছে ছিন্নভিন্ন মোহ ।
আজকে ভাঙার স্বপ্ন- অন্যায়ের দম্ভকে ভাঙার
বিপদ ধ্বংসেই মুক্তি, অন্য পথ দেখি নাকো আর ।
তাইতো তন্দ্রাকে ভাঙি, ভাঙি জীর্ণ সংস্কারের খিল
রুদ্ধ বন্দীকক্ষ ভেঙে মেলে দিই আকাশের নীল ।
নির্বিঘ্নে সৃষ্টিকে চাও ? তবে ভাঙো বিঘ্নের বেদীকে
উদ্দাম ভাঙার অস্ত্র ছুড়ে দাও চারিদিকে ।


৮। কবিতাঃঅভিবাদন
হে সাথী, আজকে স্বপ্নের দিন গোনা
ব্যর্থ নয় তো, বিপুল সম্ভাবনা
দিকে দিকে উদ্‌যাপন করছে লগ্ন
পৃথিবী সূর্য-তপস্যাতেই মগ্ন ।

আজকে সামনে নিরুচ্চারিত প্রশ্ন
মনের কোমল মহল ঘিরে কবোষ্ণ
ক্রমশ পুষ্ট মিলিত উন্মাদনা
ক্রমশ সফল স্বপ্নের দিন গোনা ।

স্বপ্নের বীজ বপন করেছি সদ্য
বিদ্যুৎবেগে ফসল সংঘবদ্ধ ।
হে সাথী, ফসলে শুনেছো প্রাণের গান
দুরন্ত হাওয়া ছড়ায় ঐকতান ।।

বন্ধু, আজকে দোদুল্যমান পৃথ্বী
আমরা গঠন করব নতুন ভিত্তি
তারই সুত্রপাতকে করেছি সাধন
হে সাথী, আজকে রক্তিম অভিবাদন ।।

৯। কবিতাঃ জনতার মুখে ফোটে বিদ্যুৎবাণী
কত যুগ, কত বর্ষান্তের শেষে
জনতার মুখে ফোটে বিদ্যুৎবাণী
আকাশে মেঘের তাড়াহুড়ো দিকে দিকে
বজ্রের কানাকানি ।
সহসা ঘুমের তল্লাট ছেড়ে
শান্তি পালাল আজ ।
দিন ও রাত্রি হল অস্থির
কাজ, আর শুধু কাজ ।
জনসিংহের ক্ষুদ্ধ নখর
হয়েছে তীক্ষ্ণ, হয়েছে প্রখর ।
ওঠে তার গর্জন
প্রতিশোধ, প্রতিশোধ ।

হাজার হাজার শহীদ ও বীর
স্বপ্নে নিবিড় স্মরণে গভীর
ভুলি নি তাদের আত্মবিসর্জন ।
ঠোঁটে ঠোঁটে কাঁপে প্রতিজ্ঞা দুর্বোধ
কানে বাজে শুধু শিকলের ঝনঝন
প্রশ্ন নয়কো পারা না পারার
অত্যাচারীর রুদ্ধ কারার
দ্বার ভাঙা আজ পণ
এতদিন ধ'রে শুনেছি কেবল শিকলের ঝনঝন ।
ওরা বীর, ওরা আকাশে জাগাত ঝড়
ওদের কাহিনী বিদেশীর খুনে
গুলি, বন্দুক, বোমার আগুনে
আজো রোমাঞ্চকর
ওদের স্মৃতিরা শিরায় শিরায়
কে আছে আজকে ওদের ফিরায়
কে ভাবে ওদের পর ?
ওরা বীর, আকাশে জাগাত ঝড় ।
নিদ্রায় কাজকর্মের ফাকে
ওরা দিনরাত আমাদের ডাকে ।
ওদের ফিরাব কবে ?
কবে আমাদের বাহুর প্রতাপে
কোটি মানুষের দুর্বার চাপে
শৃঙ্খল গত হবে ?
কবে আমাদের প্রাণকোলাহলে
কোটি জনতার জোয়ারের জলে
ভেসে যাবে কারাগার ।
কবে হবে ওরা দুঃখসাগর পার ?
মহাজন ওরা, আমরা ওদের চিনি
ওরা আমাদের রক্ত দিয়েছে
বদলে দুহাতে শিকল নিয়েছে
গোপনে করেছে ঋণী ।
মহাজন ওরা, আমরা ওদের চিনি ।
হে খাতক নির্বোধ
রক্ত দিয়েই সব ঋণ করো শোধ ।
শোনো, পৃথিবীর মানুষেরা শোনো
শোনো স্বদেশের ভাই
রক্তের বিনিময় হয় হোক
আমরা ওদের চাই ।



১০। কবিতাঃ কবিতার খসড়া
আকাশে আকাশে ধ্রুবতারায়
কারা বিদ্রোহে পথ মাড়ায়
ভরে দিগন্ত দ্রুত সাড়ায়
জানে না কেউ ।
উদ্যমহীন মূঢ় কারায়
পুরনো বুলির মাছি তাড়ায়
যারা, তারা নিয়ে ঘোরে পাড়ায়
স্মৃতির ফেউ ।



মন্তব্য ৪ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ২১ শে জুলাই, ২০১৫ ভোর ৫:০২

ক্যাটম্যান বলেছেন: কম বয়সে মারা না গেলে অনেক কিছু করতে পারতেন

২৩ শে জুলাই, ২০১৫ সকাল ১০:০৫

ব্লগার মাসুদ বলেছেন: যার যখন মৃত্যু লেখা আছে তখনয়ই মরতে হবে । ধন্যবাদ

২| ২২ শে জুলাই, ২০১৫ দুপুর ১:১৮

হাসান মাহবুব বলেছেন: +++++

২৩ শে জুলাই, ২০১৫ সকাল ১০:০৬

ব্লগার মাসুদ বলেছেন: ধন্যবাদ মাহবুব ভাই ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.