নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ব্লগার মাসুদ

ব্লগার মাসুদ

ব্লগার মাসুদ

ব্লগার মাসুদ

ব্লগার মাসুদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

সুকান্ত ভট্টাচার্যের কবিতার সঙ্কলন । ( পর্ব-২ )

২৩ শে জুলাই, ২০১৫ দুপুর ২:৩৫

সুকান্ত ভট্টাচার্যের কবিতার সঙ্কলন । ( পর্ব-১ )

১। কবিতাঃ আমরা এসেছি
কারা যেন আজ দুহাতে খুলেছে ভেঙেছে খিল
মিছিলে আমারা নিমগ্ন তাই দোলে মিছিল ।
দুঃখ যুগের দারায় দারায়
যারা আনে প্রাণ যারা তা হারায়
তারাই ভরিয়ে তুলেছে সাড়ায় হৃদয় বিল ।
তারাই এসেছে মিছিলে আজকে চলে মিছিল

কে যেন ক্ষুব্ধ ভোমরার চাকে ছুড়েছে ঢিল
তাইতো দগ্ধ ভগ্ন পুরনো পথ বাতিল ।
আশ্বিন থেকে বৈশাখে যারা
হাওয়ার মতন ছুটে দিশেহারা
হাতের স্পর্শে কাজ হয় সারা কাঁপে নিখিল
তারা এল আজ দুর্বারগতি চলে মিছিল

আজকে হালকা হাওয়ায় উড়ুক একক চিল
জনতরঙ্গে আমরা ক্ষিপ্ত ঢেউ ফেনিল ।
উধাও আলোর নিচে সমারোহ
মিলিত প্রাণের একী বিদ্রোহ ।
ফিরে তাকানোর নেই ভীরু মোহ, কী গতিশীল ।
সবাই এসেছে, তুমি আসোনিকো, ডাকে মিছিল
একটি কথায় ব্যক্ত চেতনাঃ আকাশে নীল
দৃষ্টি সেখানে তাইতো পদধ্বনিতে মিল ।
সামনে মৃত্যুকবলিত দ্বার
থাক অরণ্য, থাক না পাহাড়
ব্যর্থ নোঙর, নদী হব পার, খুঁটি শিথিল ।
আমরা এসেছি মিছিলে, গর্জে ওঠে মিছিল ।


২। কবিতাঃ একুশে নভেম্বরঃ ১৯৪৬
আবার এবার দুর্বার সেই একুশে নভেম্বর
আকাশের কোণে বিদ্যুৎ হেনে তুলে দিয়ে গেল
মুত্যুকাঁপানো ঝড় ।
আবার এদেশে মাঠে ময়দানে
সুদূর গ্রামেও জনতার প্রাণে
হাসানাবাদের ইঙ্গিত হানে
প্রত্যাঘাতের স্বপ্ন ভয়ঙ্কর ।
আবার এসেছে অবাধ্য এক একুশে নভেম্বর ।
পিছনে রয়েছে একটি বছর একটি পুরনো সাল
ধর্মঘট আর চরম আঘাতে উদ্দাম উত্তাল
বার বার জিতে, জানি অবশেষে একবার গেছি হেরে
বিদেশী! তোদের যাদুদণ্ডকে এবার নেবই কেড়ে ।
শোন্ রে বিদেশী শোন্
আবার এসেছে লড়াই জেতার চরম শুভক্ষণ ।
আমরা সবাই অসভ্য বুনো
বৃথা রক্তের শোধ নেব দুনো
একপা পিছিয়ে দু'পা এগোনোর
আমরা করেছি পণ
ঠ'কে শিখলাম
তাই তুলে ধরি দুর্জয় গর্জন ।
আহ্বান আসে অনেক দূরের
হায়দ্রাবাদ আর ত্রিবাঙ্কুরের
আজ প্রয়োজন একটি সুরের
একটি কঠোর স্বর
দেশী কুকুর
আবার এসেছে একুশে নভেম্বর ।
ডাক ওঠে ডাক ওঠে
আবার কঠোর বহু হরতালে
আসে মিল্লাত বিপ্লবী ডালে
এখানে সেখানে রক্তের ফুল ফোটে ।
এ নভেম্বরে আবারো তো ডাক ওঠে ।

আমাদের নেই মৃত্যু এবং আমাদের নেই ক্ষয়
অনেক রক্ত বৃথাই দিলুম
তবু বাঁচবার শপথ নিলুম
কেটে গেছে আজ রক্তদানের ভয়
ল'ড়ে মরি তাই আমরা অমর আমরাই অক্ষয় ।

আবার এসেছে তেরোই ফেব্রুয়ারী
দাঁতে দাঁত চেপে
হাতে হাত চেপে
উদ্যত সারি সারি
কিছু না হলেও আবার আমরা
রক্ত দিতে তো পারি ?
পতাকায় পতাকায় ফের মিল আনবে ফেব্রুয়ারি ।
এ নভেম্বরে সংকেত পাই তারি ।


৩। কবিতাঃ দিনবদলের পালা
আর এক যুদ্ধ শেষ
পৃথিবীতে তবু কিছু জিজ্ঞাসা উন্মুখ ।
উদ্দাম ঢাকের শব্দে
সে প্রশ্নের উত্তর কোথায় ?
বিজয়ী বিশ্বের চোখ মুদে আসে
নামে এক ক্লান্তির জড়তা ।
রক্তাক্ত প্রান্তর তার অদৃশ্য দুহাতে
নাড়া দেয় পৃথিবীকে
সে প্রশ্নের উত্তর কোথায় ?
তুষারখচিত মাঠে
ট্রেঞ্চে শূন্যে অরণ্যে পর্বতে
অস্থির বাতাস ঘোরে দুর্বোধ্য ধাঁধায়
ভাঙা কামানের মুখে
ধ্বংসস্তূপে উৎকীর্ণ জিজ্ঞাসা
কোথায় সে প্রশ্নের উত্তর ?

দিগ্বিজয়ী দুঃশাসন ।
বহু দীর্ঘ দীর্ঘতর দিন
তুমি আছ দৃঢ় সিংহাসনে সমাসীন
হাতে হিসেবের খাতা
উন্মুখর এই পৃথিবী
আজ তার শোধ করো ঋণ ।
অনেক নিয়েছ রক্ত, দিয়েছ অনেক অত্যাচার
আজ হোক তোমার বিচার ।
তুমি ভাব, তুমি শুধু নিতে পার প্রাণ
তোমার সহায় আছে নিষ্ঠুর কামান
জানো নাকি আমাদেরও উষ্ণ বুক, রক্ত গাঢ় লাল
পেছনে রয়েছে বিশ্ব, ইঙ্গিত দিয়েছে মহাকাল
স্পীডোমিটারের মতো আমাদের হৃৎপিণ্ড উদ্দাম
প্রাণে গতিবেগ আনে
ছেয়ে ফেলে জনপদ গ্রাম
বুঝেছি সবাই আমরা আমাদের কী দুঃখ নিঃসীম
দেখ ঘরে ঘরে আজ জেগে ওঠে এক এক ভীম।
তবুও যে তুমি আজো সিংহাসনে আছ
সে কেবল আমাদের বিরাট মায় ।
এখানে অরণ্য স্তব্ধ
প্রতীক্ষা-উৎকীর্ণ চারিদিক
গঙ্গায় প্লাবন নেই, হিমালয় ধৈর্যের প্রতীক ।
এ সুযোগে খুলে দাও ক্রূর শাসনের প্রদর্শনী
আমরা প্রহর শুধু গনি ।

পৃথিবীতে যুদ্ধ শেষ
বন্ধ সৈনিকের রক্ত ঢালা
ভেবেছ তোমার জয়
তোমার প্রাপ্য এ জয়মালা
জানো না এখানে যুদ্ধ শুরু দিনবদলের পালা ।


৪। কবিতাঃ মুক্ত বীরদের প্রতি
তোমরা এসেছ বিপ্লবী বীর অবাক অভ্যুদয় ।
যদিও রক্ত ছড়িয়ে রয়েছে সারা কলকাতাময় ।
তবু দেখ আজ রক্তে রক্তে সাড়া
আমরা এসেছি উদ্দাম ভয়হারা ।
আমরা এসেছি চারিদিক থেকে ভুলতে কখনো পারি
একসূত্রে যে বাঁধা হয়ে গেছে কবে কোন যুগে নাড়ী ।
আমরা যে বারে বারে
তোমাদের কথা পৌঁছে দিয়েছি এদেশের দ্বারে দ্বারে
মিছিলে মিছিলে সভায় সভায় উদাত্ত আহ্বানে
তোমাদের স্মৃতি জাগিয়ে রেখেছি জনতার উত্থানে ।
উদ্দাম ধ্বনি মুখরিত পথেঘাটে
পার্কের মোড়ে, ঘরে, ময়দানে, মাঠে ।
মুক্তির দাবি করেছি তীব্রতর
সারা কলকাতা শ্লোগানেই থরোথরো ।
এই সেই কলকাতা
একদিন যার ভয়ে দুরু দুরু বৃটিশ নোয়াত মাথা।
মনে পড়ে চব্বিশে
সেদিন দুপুরে সারা কলকাতা হারিয়ে ফেলেছে দিশে
হাজার হাজার জনসাধারণ ধেয়ে চলে সম্মুখে
পরিষদ-গেটে হাজির সকলে
শেষ প্রতিজ্ঞা বুকে ।
গর্জে উঠল হাজার হাজার ভাই
রক্তের বিনিময়ে হয় হোক আমরা ওদের চাই ।
সফল সফল সেদিনের কলকাতা
হেঁট হয়েছিল অত্যাচারী ও দাম্ভিকদের মাথা ।
জানি বিকৃত আজকের কলকাতা
বৃটিশ এখন এখানে জনতা ।

গৃহযুদ্ধের ঝড় বয়ে গেছে
ডেকেছে এখানে কালো রক্তের বান
সেদিনের কলকাতা এ আঘাতে ভেঙে চুরে খানখান ।
তোমারা এসেছ বীরের মতন আমরা চোরের মতো ।

তোমরা এসেছ
ভেঙেছ অন্ধকার
তোমরা এসেছ, ভয় করি নাকো আর ।
পায়ের স্পর্শে মেঘ কেটে যাবে
উজ্জ্বল রোদ্দুর
ছড়িয়ে পড়বে বহুদুর বহুদূর ।
তোমরা এসেছ জেনো এইবার নির্ভয় কলকাতা
অত্যাচারের হাত থেকে জানি তোমরা মুক্তিদাতা ।
তোমরা এসেছ
শিহরণ ঘাসে ঘাসে
পাখির কাকলি উদ্দাম উচ্ছ্বাসে ।
মর্মরধ্বনি তরুপল্লবে শাখায় শাখায় লাগে
হঠাৎ মৌন মহাসমুদ্র জাগে ।
অস্থির হাওয়া অরণ্যপর্বতে
গুঞ্জন ওঠে তোমরা যাও যে পথে ।

আজ তোমাদের মুক্তিসভায় তোমদের সম্মুখে
শপথ নিলাম আমরা হাজার মুখে ।
যতদিন আছে আমাদের প্রাণ আমাদের সম্মান
আমরা রুখব গৃহযুদ্ধের কালো রক্তের বান ।
অনেক রক্ত দিয়েছি আমরা
বুঝি আরো দিতে হবে
এগিয়ে চলার প্রত্যেক উৎসবে ।
তবুও আজকে ভরসা যেহেতু তোমরা রয়েছ পাশে
তোমরা রয়েছ এদেশের নিঃশ্বাসে ।

তোমাদের পথ যদিও কুয়াশাময়
উদ্দাম জয়যাত্রার পথে জেনো ও কিছুই নয় ।
তোমরা রয়েছ আমরা রয়েছি দুর্জয় দুর্বার
পদাঘাতে পদাঘাতেই ভাঙব মুক্তির শেষ দ্বার ।
আবার জ্বালাব বাতি
হাজার সেলাম তাই নাও আজ শেষযুদ্ধের সাথী ।


৫। কবিতাঃ প্রিয়তমাসু
সীমান্তে আজ আমি প্রহরী ।
অনেক রক্তাক্ত পথ অতিক্রম করে
আজ এখানে এসে থমকে দাড়িয়েছি
স্বদেশের সীমানায় ।
ধূসর তিউনিসিয়া থেকে স্নিগ্ধ ইতালী
স্নিগ্ধ ইতালী থেকে ছুটে গেছি বিপ্লবী ফ্রান্সে
নক্ষত্রনিয়ন্ত্রিত নিয়তির মতো
দুর্নিবার, অপরাহত রাইফেল হাতে ।
ফ্রান্স থেকে প্রতিবেশী বার্মাতেও ।
আজ দেহে আমার সৈনিকের কড়া পোশাক
হাতে এখনো দুর্জয় রাইফেল
রক্তে রক্তে তরঙ্গিত জয়ের আর শক্তির দুর্বহ দম্ভ
আজ এখন সীমান্তের প্রহরী আমি ।
আজ নীল আকাশ আমাকে পাঠিয়েছে নিমন্ত্রণ
স্বদেশের হাওয়া বয়ে এনেছে অনুরোধ
চোখের সামনে খুলে ধরেছে সবুজ চিঠি
কিছুতেই বুঝি না কী করে এড়াব তাকে ?
কী করে এড়াব এই সৈনিকের কড়া পোশাক ?
যুদ্ধ শেষ মাঠে মাঠে প্রসারিত শান্তি
চোখে এসে লাগছে তারই শীতল হাওয়া
প্রতি মুহূর্তে শ্লথ হয়ে আসে হাতের রাইফেল
গা থেকে খসে পড়তে চায় এই কড়া পোশাক
রাত্রে চাঁদ ওঠে আমার চোখে ঘুম নেই ।
তোমাকে ভেবেছি কতদিন
কত শত্রুর পদক্ষেপ শোনার প্রতীক্ষার অবসরে
কত গোলা ফাটার মুহূর্তে ।
কতবার অবাধ্য হয়েছে মন যুদ্ধজয়ের ফাঁকে ফাঁকে
কতবার হৃদয় জ্বলেছে অনুশোচনার অঙ্গারে
তোমার আর তোমাদের ভাবনায় ।
তোমাকে ফেলে এসেছি দারিদ্র্যের মধ্যে
ছুঁড়ে দিয়েছি দুর্ভিক্ষের আগুনে
ঝড়ে আর বন্যায় মারী আর মড়কের দুঃসহ আঘাতে
বাব বার বিপন্ন হয়েছে তোমাদের অস্তিত্ব ।
আর আমি ছুটে গেছি এক যুদ্ধক্ষেত্র থেকে আর এক যুদ্ধক্ষেত্রে ।
জানি না আজো আছ কি নেই
দুর্ভিক্ষে ফাঁকা আর বন্যায় তলিয়ে গেছে কিনা ভিটে
জানি না তাও ।

তবু লিখছি তোমাকে আজ
লিখছি আত্মম্ভর আশায়
ঘরে ফেরার সময় এসে গেছে ।
জানি আমার জন্যে কেউ প্রতীক্ষা করে নেই
মালায় আর পতাকায় প্রদীপে আর মঙ্গলঘটে
জানি সম্বর্ধনা রটবে না লোক মুখে
মিলিত খুসিতে মিলবে না বীরত্বের পুরস্কার ।
তবু একটি হৃদয় নেচে উঠবে আমার আবির্ভাবে
সে তোমার হৃদয় ।
যুদ্ধ চাই না আর যুদ্ধ তো থেমে গেছে
পদার্পণ করতে চায় না মন ইন্দোনেশিয়ায়
আর সামনে নয়
এবার পেছনে ফেরার পালা ।

পরের জন্যে যুদ্ধ করেছি অনেক
এবার যুদ্ধ তোমার আর আমার জন্যে ।
প্রশ্ন করো যদি এত যুদ্ধ ক'রে পেলাম কী ? উত্তর তার
তিউনিসিয়ায় পেয়েছি জয়
ইতালীতে জনগণের বন্ধুত্ব
ফ্রান্সে পেয়েছি মুক্তির মন্ত্র
আর নিষ্কণ্টক বার্মায় পেলাম ঘরে ফেরার তাগাদা ।

আমি যেন সেই বাতিওয়ালা
সে সন্ধ্যায় রাজপথে পথে বাতি জ্বালিয়ে ফেরে
অথচ নিজের ঘরে নেই যার বাতি জ্বালার সামর্থ্য
নিজের ঘরেই জমে থাকে দুঃসহ অন্ধকার ।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ২৪ শে জুলাই, ২০১৫ ভোর ৪:৫৬

আমি মিন্টু বলেছেন: কবিতা গুলো সুন্দর কিন্তু

৩১ শে জুলাই, ২০১৫ রাত ১১:১৮

ব্লগার মাসুদ বলেছেন: ধন্যবাদ । ভাল থাকুন মিন্টু ভাই ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.